শিরক (ইসলাম)
শিরক ইসলামে একটি গুরুতর পাপ, যাকে প্রায়ই 'মূর্তিপূজা' বা 'বহুদেববাদ' বলে অনুবাদ করা হয়। তবে প্রকৃতপক্ষে এর অর্থ হলো আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে অংশীদার হিসেবে গ্রহণ করা।[১][২][ক] এই পাপের অর্থ হলো আল্লাহর পাশাপাশি অন্য কোনো দেবতা বা শক্তিকে অংশীদার হিসেবে গ্রহণ করা।[৪][৫]
অন্যদিকে ইসলাম শিক্ষা দেয় যে, আল্লাহ কারো সঙ্গে তাঁর গুণাবলি ভাগ করেন না, এবং এটি ইসলামের মৌলিক তাওহিদের বিরোধী।[৬][৭] ইসলামের কেন্দ্রীয় ধর্মগ্রন্থ কোরআনে বলা হয়েছে (সূরা নিসা ৪:৪৮) যে, কেউ যদি তওবা ছাড়া মারা যায়, তাহলে আল্লাহ তাকে শিরকের পাপ ক্ষমা করবেন না।[৭][৮][৯]
যে ব্যক্তি শিরক করে তাকে মুশরিক বলা হয়।[খ] শিরকের বিপরীত হলো তাওহিদ[গ] এবং মুশরিকের বিপরীত শব্দ হলো মুয়াহহিদ।[ঘ]
শব্দের উৎস
[সম্পাদনা]শিরক শব্দটি আরবি ত্রিমূল ধাতু শীন-র-ক (ش ر ك) থেকে উদ্ভূত, যার সাধারণ অর্থ হলো ‘ভাগ করা’ বা ‘অংশীদার করা’।[১০][ঙ]
কোরআনের প্রসঙ্গে, এই শব্দের বিশেষ অর্থ হলো ‘সমান অংশীদার হিসেবে ভাগ করে নেওয়া’। তাই বহুদেববাদ বোঝায়, ‘আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে অংশীদার করা’। কোরআনে শিরক এবং এর সংশ্লিষ্ট শব্দ মুশরিকূন (مشركون)—যারা শিরক করে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে—তাদের প্রায়ই ইসলামের শত্রু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে (যেমন আত-তাওবা সূরার ৯:১–১৫ আয়াতে)।[১২]:৯:১–১৫
কোরআন
[সম্পাদনা]এনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলাম অনুযায়ী, কোরআনে আন-নিসা সূরার ৪৮ ও ১১৬ নম্বর আয়াতে দুইবার বলা হয়েছে যে, আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করতে পারেন; তবে শিরক—তাঁর সঙ্গে কাউকে অংশীদার করা—ক্ষমার অযোগ্য।[১৩]
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে অংশীদার করা ক্ষমা করেন না, তবে তিনি যাকে ইচ্ছা অন্যান্য পাপ ক্ষমা করে দেন। আর যে আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার করে, সে এক গুরুতর পাপ করেছে।
কোরআনের ভাষ্যকারেরা ব্যাখ্যা করেছেন, ইসলাম-পূর্ব আরবে যেসব দেবতা ও জিন পূজিত হতো—বিশেষ করে মানাত, আল্লাত ও উজ্জা—তাদেরকে আল্লাহর অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এদের নাম আন-নাজম সূরায় উল্লেখ আছে।[১৫]
আল্লাহ ছাড়া যাদের পূজা করা হয়, তাদের বলা হয় শুরাকাʾ (আরবি: شُرَكَاء)।[১৬]:{{{১}}}[১৭]:{{{১}}} বিচার দিবসের পর এদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে শয়তান ও বিপথগামী জিনদের সঙ্গে।[১৬]:{{{১}}} বলা হয়, মুশরিকরা এই সত্ত্বাদের খুশি করতে তাদের জন্য কোরবানি দিত, যেন তারা সুরক্ষা পায়।
চার্লস অ্যাডামস লিখেছেন, কোরআনে আহলে কিতাবদের কুফর বা অবিশ্বাসের জন্য ভর্ৎসনা করা হয়েছে, কারণ তারা পূর্ববর্তী ঐশী গ্রন্থের ধারক হয়েও নবী মুহাম্মদের বাণী অস্বীকার করেছে। এতে খ্রিস্টানদের বিশেষভাবে লক্ষ্য করা হয়েছে, যারা আল্লাহর একত্বের প্রমাণ উপেক্ষা করেছে।[১৮] সূরা আল-মায়েদা ৫:৭৩ আয়াতে বলা হয়েছে: “তারা অবশ্যই কুফর করেছে যারা বলে, ‘আল্লাহ তিনের মধ্যে তৃতীয়।’”[১৯]:৫:৭৩ ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এটি ত্রিত্ববাদ প্রত্যাখ্যান বলে বোঝানো হয়েছে।[২০][note ১]
অন্যান্য কোরআনিক আয়াতে যিশুর ঈশ্বরত্ব স্পষ্টভাবে অস্বীকার করা হয়েছে এবং তাঁকে আল্লাহর সমান মনে করাকে কুফর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার শাস্তি চিরস্থায়ী জাহান্নাম।[২১][২২] কোরআনে যিশুকে ঈশ্বর বা ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে নয়, বরং এক মহান নবী ও ইসরায়েলীয় জাতির প্রতি প্রেরিত বার্তাবাহক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।[২৩]
কিছু মুসলিম চিন্তাবিদ যেমন মুহাম্মদ তালবি, ত্রিত্ববাদ ও যিশুর ঈশ্বরত্ব নিয়ে কোরআনের কিছু বক্তব্যকে এমন বিশ্বাসরূপ বলে দেখেছেন, যা প্রকৃত খ্রিস্টধর্ম নয়, বরং চার্চ কর্তৃক অস্বীকৃত।[২৪]
সিরিল গ্লাসে খ্রিস্টানদের জন্য কাফির (كافر) শব্দ ব্যবহারের প্রবণতাকে “ঢিলেঢালা ব্যবহার” বলে সমালোচনা করেছেন।টেমপ্লেট:Clarification needed[২৫] এনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলাম অনুসারে, ঐতিহ্যগত ইসলামী আইনব্যবস্থায় আহলে কিতাবদের সাধারণ কাফিরদের তুলনায় তুলনামূলকভাবে সহনশীলভাবে দেখা হয়। তত্ত্বগতভাবে, কোনো মুসলমান যদি একজন ইহুদি বা খ্রিস্টানকে “হে কাফির” বলে, তবে সেটি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ বিবেচিত হয়।[২৬]
ইতিহাসে, ইসলামি শাসনের অধীন স্থায়ীভাবে বসবাসকারী আহলে কিতাবদের ধিম্মি মর্যাদা দেওয়া হতো এবং অস্থায়ীভাবে আগতদের বলা হতো মুস্তা'মিন।[২৬] যদিও কোরআনে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের ঈশ্বরের অংশীদারিত্বে বিশ্বাসের (যেমন এজরা বা যিশুকে ঈশ্বরের পুত্র বলা) জন্য সমালোচনা করা হয়েছে, তাদেরকে মুশরিক বলা হয়নি।[২৭] এই শব্দটি প্রধানত ইসলাম-পূর্ব যুগের দেবতা-অংশীদারবাদীদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। তবে মধ্যযুগীয় মুসলিম দার্শনিকরা ত্রিত্ববাদকে শিরক বা ‘অংশীদারবাদ’ হিসেবে দেখেছেন, কারণ এতে ঈশ্বরের অসীমত্বকে খণ্ডিত করা হয় বলে মনে করা হয়েছে।[২৮]
ধর্মতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা
[সম্পাদনা]ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, কেউ শিরক করে যদি সে আল্লাহর সঙ্গে কোনো ক্ষুদ্রতর সত্তাকে অংশীদার মনে করে। এটি তখনই ঘটে যখন কেউ কল্পনা করে যে, আল্লাহ ছাড়াও অন্য কোনো শক্তি বা সত্তা তাঁর অংশীদার হিসেবে বিদ্যমান।[২৯] কোরআনে বলা হয়েছে: “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে অংশীদার করা ক্ষমা করেন না, তবে তিনি যাকে ইচ্ছা অন্যান্য পাপ ক্ষমা করেন; আর যিনি আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার করেন, তিনি এক মহাপাপ সৃষ্টি করেন” (সূরা আন-নিসা ৪:৪৮)।[৩০]:৪:৪৮[৩১]
এই শব্দটিকে প্রায়ই বহুদেববাদ (polytheism) হিসেবে অনূদিত করা হলেও এর অর্থ আরও জটিল।[২৯][৩২] শিরক অর্থ শুধু একাধিক উপাস্য মানাই নয়, বরং মানুষ যদি নিজেকে অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মনে করে অথবা ঐশ্বরিক মর্যাদা দাবি করে, তবুও এটি শিরকের অন্তর্ভুক্ত হয়।[৩৩]
একেশ্বরবাদ মানেই শুধু এক আল্লাহর উপাসনা নয়, বরং আল্লাহর সম্পূর্ণ বৈশিষ্ট্যকে অনন্য হিসেবে মেনে নেওয়া, এবং তাঁকে মানবীয় রূপ দেওয়াকে নাকচ করাও এর অংশ।[৩৪] শিরকের ধারণা আরও বলেছে যে, আল্লাহর গুণাবলি কোনো অন্য সত্তার সঙ্গে যুক্ত করা যায় না, বা এমন কোনো সত্তা নেই যা আল্লাহর কাছ থেকে স্বতন্ত্রভাবে বিদ্যমান।[৩৫] একইসঙ্গে, শিরক এমন কিছু ধারণাও অন্তর্ভুক্ত করে যা সাধারণ বহুদেববাদের ধারণায় অন্তর্ভুক্ত নয় এবং এটি কোনো বস্তু বা মূর্তির উপাসনার উপস্থিতি ছাড়াও হতে পারে।[৩৬]
শিরকের প্রকারভেদ
[সম্পাদনা]শিরককে দুইটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়:[৩৭]
- শিরক আল-আকবর (আরবি: شِرْك ٱلْأَكْبَر; আক্ষ. 'বড় শিরক'): প্রকাশ্য ও স্পষ্ট শিরক
- শিরক আল-আসগর বা আল-শিরক আল-খাফি (আরবি: شِرْك ٱلْأَصْغَر; আক্ষ. 'ক্ষুদ্র শিরক'): গোপন বা লুকায়িত শিরক। এটি তখন ঘটে যখন কেউ বাহ্যিকভাবে ধর্মীয় আচার পালন করে, কিন্তু তা আল্লাহর জন্য নয় বরং সমাজে সম্মান পাওয়ার উদ্দেশ্যে।[৩৮] লুকায়িত শিরক কখনও অজান্তেই ঘটে, তবে এটি তবুও শাস্তিযোগ্য, যদিও বড় শিরকের তুলনায় লঘু।[৩৯]
শিরক আল-আকবর
[সম্পাদনা]শিরক আল-আকবর হলো প্রকাশ্যভাবে আল্লাহর সঙ্গে অন্য কিছুকে অংশীদার করা এবং এর দুটি রূপ রয়েছে:[৪০]
- আল্লাহর সঙ্গে অন্য কিছু বা কাউকে অংশীদার করা
- আল্লাহর গুণাবলির সঙ্গে অন্য কিছুকে যুক্ত করা
শিরক আল-আসগর
[সম্পাদনা]শিরক আল-আসগর এমন কারো দ্বারাও সংঘটিত হতে পারে, যে তাওহিদের দাবি করে, কিন্তু তা অন্যদের সন্তুষ্ট করার জন্য করে।
যে ব্যক্তি নামাজ পড়ে লোক দেখানোর জন্য, সে মুশরিক। যে ব্যক্তি রোজা রাখে, দান করে, বা হজ করে কেবল লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে, সে-ও মুশরিক।
— সাইয়্যেদ কাসিম মুজতবা মুসাভি কামুনপুরি [৭]
মাহমুদ ইবনে লুবাইদ থেকে বর্ণিত,
আল্লাহর রাসূল বলেছেন: “তোমাদের সম্পর্কে যে জিনিসটি নিয়ে আমি সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা করি, তা হলো 'আল-শিরক আল-আসগর’।”
সহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল, সেটি কী?”
তিনি বললেন: “রিয়া (লোক দেখানো), কারণ কিয়ামতের দিনে আল্লাহ বলবেন, ‘যাদেরকে খুশি করার জন্য তোমরা ইবাদত করেছিলে, তাদের কাছে যাও এবং দেখো, তাদের কাছ থেকে কোনো প্রতিদান পাও কিনা।’”
তিনি আরও বলেন,
নবী (সা.) বের হয়ে বললেন, “হে লোকসকল, গোপন শিরক থেকে সাবধান!”
লোকেরা জিজ্ঞেস করল, “হে আল্লাহর রাসূল, গোপন শিরক কী?”
তিনি বললেন, “যখন কেউ নামাজ পড়তে দাঁড়ায় এবং মানুষ দেখছে ভেবে তা সুন্দর করে, এটাই গোপন শিরক।”
উমর ইবনে খাত্তাব বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে শপথ করে, সে কুফরি বা শিরকের কাজ করেছে।” (এটি তিরমিজি কর্তৃক হাসান এবং আল-হাকিম কর্তৃক সহীহ হিসেবে বর্ণিত)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন: “আমি যদি আল্লাহর নামে মিথ্যা বলি, তবে তা আমার কাছে সহনীয়, কিন্তু অন্য কিছুর নামে সত্য বলাও আমার কাছে অপছন্দনীয়।”[৪১]
সুফিবাদ
[সম্পাদনা]সুফি শিক্ষানুযায়ী, আল-শিরক আল-খাফি (গোপন শিরক) থেকে বাঁচতে হলে কেবলমাত্র আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করতে হবে এবং নিজের ইচ্ছাকে ত্যাগ করতে হবে।[৪২]
কিছু সুফি পণ্ডিত এতদূর পর্যন্ত বলেন যে, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি বা ফ্রি উইলে বিশ্বাস করাও এক ধরনের শিরক। তাদের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, যেসব বিশ্বাস সাধারণত একেশ্বরবাদ-এর আওতায় পড়ে, যেমন—শয়তানকে (আল্লাহর স্মরণহীন অবদমনহীন আত্মা বা নফস আল-আম্মারা নয়) মন্দের উৎস হিসেবে দেখা, কিংবা মানুষের স্বাধীন ইচ্ছায় বিশ্বাস করা—এইসবকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সৃষ্টিশীল শক্তিতে বিশ্বাস হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তাই এগুলোও শিরকের সমতুল্য।[৪৩]
আব্দুল্লাহ আনসারী মানবজীবনে তাওহিদ-এর সর্বোচ্চ স্তর হিসেবে সেই অবস্থা বর্ণনা করেন, যখন মন পুরোপুরি আল্লাহর উপস্থিতিতে নিমগ্ন হয় এবং বুঝতে পারে, কিভাবে সবকিছু যথাযথভাবে তাদের জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে।[৪৪]
সুফিবাদে, এমনকি এই দুনিয়া বা আখিরাতে পুরস্কারের প্রত্যাশা নিয়ে করা প্রতিটি কাজকেও শিরকের একটি রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও এই পর্যায়ের শিরককে অস্বীকৃতি বা কুফরের সমতুল্য ধরা হয় না এবং ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে ওই কাজ পুনরায় সম্পাদনেরও প্রয়োজন নেই, তথাপি সুফিরা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে কাজ করে যান, যতক্ষণ না তাদের চিন্তা ও কর্ম একমাত্র আল্লাহর নিখাদ প্রেমে পরিণত হয়, যা আল্লাহর প্রতি খাঁটি ইবাদতের রূপ লাভ করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
সালাফিবাদ ও ওহাবিবাদ
[সম্পাদনা]ওহাবি আন্দোলনের প্রবর্তক মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব শিরককে তিনটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করেন।[৪৫] তবে এই শ্রেণিবিন্যাসের আধ্যাত্মিক ভিত্তি ইবনে তাইমিয়ার চিন্তায় পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়।[২৮][৪৬](p106)
এই তিনটি বিভাগ হলো:
- তাওহিদ আর-রুবুবিয়্যাহ (আরবি: توحيد الربوبية; প্রভুত্ব): এটি সেই মৌখিক স্বীকারোক্তি যে আল্লাহই বিশ্বজগতের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ও শাসক।[৪৭]
- তাওহিদ আল-আস্মা ওয়া সিফাত (আরবি: توحيد الأسماء والصفات; নাম ও গুণাবলি): আল্লাহর গুণাবলিকে কোরআনে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, সেভাবেই গ্রহণ করা, ব্যাখ্যার মাধ্যমে কোনো পরিবর্তন না করা।[৪৮]
- তাওহিদ আল-ইবাদা (আরবি: توحيد العبادة; ইবাদতে একত্ব): আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠভাবে ইবাদত করা এবং তাতে কোনো মধ্যস্থতাকারীর ব্যবহার না করা। ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক চর্চাগুলো কেবল ইসলামী উৎস থেকে গ্রহণ করা উচিত।[৪৯][৫০]
আবদুল ওয়াহহাবের মতে, তাওহিদ আল-ইবাদা-ই ছিল প্রকৃত মুসলমানের পরিচয় নির্ধারণের মূল মানদণ্ড। কেউ যদি তাঁর এই ব্যাখ্যার বিরোধিতা করে, তবে তাকে মুশরিক (অংশীদারকারী) এবং কাফির (অবিশ্বাসী) হিসেবে গণ্য করা হতো।[৫১]
আবদুল ওয়াহহাবের চিন্তাধারার ওপর ভিত্তি করে, ইসলামপন্থী চিন্তাবিদ সাইয়্যেদ কুতুব, আবুল আ'লা মওদূদি এবং আবু মুহাম্মদ আল-মাকদিসি তাদের লেখায় এমন মত প্রকাশ করেন যে, মানবসৃষ্ট আইন মেনে চলাও শিরকের একটি রূপ।[৫২]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Nonbelief: An Islamic Perspective
- ↑ "Surah Luqman Verse 13 | 31:13 لقمان - Quran O"। qurano.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০২১।
- ↑ Sinai, Nicolai. "Key terms of the Qur'an: a critical dictionary." (2023): 1–840.
- ↑ Gimaret, D. (২০১২)। "S̲h̲irk"। Bearman, P.; Bianquis, Th.; Bosworth, C. E.; van Donzel, E.; Heinrichs, W. P. (সম্পাদকগণ)। Encyclopaedia of Islam (2nd সংস্করণ)। Brill। ডিওআই:10.1163/1573-3912_islam_SIM_6965।
- ↑ Glassé, Cyril; Smith, Huston (১ জানুয়ারি ২০০৩)। "shirk"। The New Encyclopedia of Islam (ইংরেজি ভাষায়)। Rowman Altamira। পৃ. ৪২৯। আইএসবিএন ৯৭৮০৭৫৯১০১৯০৬।
- ↑ "Shirk"। Encyclopædia Britannica।
- 1 2 3 Kamoonpuri, S: "Basic Beliefs of Islam" pages 42–58. Tanzania Printers Limited, 2001.
- ↑ "Forgiveness for Shirk"।
এই আয়াতের অর্থ হলো, যে ব্যক্তি মুশরিক অবস্থায় মারা যায়, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না এবং সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে। তবে যে ব্যক্তি তওবা করে, আল্লাহ তার পূর্ববর্তী শিরক ক্ষমা করেন।
- ↑ Cenap Çakmak. Islam: A Worldwide Encyclopedia. ABC-CLIO 2017. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৬১০-৬৯২১৭-৫ পৃষ্ঠা ১৪৫০।
- ↑ A. A. Nadwi, "Vocabulary of the Quran"
- ↑ Harper, Douglas। ""Shirk (verb)""। Online Etymology Dictionary। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০২৫।
- ↑ Ibn Kathir। "Tafsir Ibn Kathir (English): Surah Al Tawbah"। Quran 4 U। Tafsir। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০২০।
- ↑ Encyclopaedia of Islam, volume 9, 2nd edition, s.v. shirk
- ↑ "Surah An-Nisa - 1-176"। Quran.com।
- ↑ Pantić, Nikola. Sufism in Ottoman Damascus: Religion, Magic, and the Eighteenth-century Networks of the Holy. Taylor & Francis, 2023. অধ্যায় ৩
- 1 2 Magic and Divination in Early Islam. (2021). যুক্তরাজ্য: Taylor & Francis.
- ↑ Eichler, Paul Arno, 1928. Koran, Leipzig: Klein.
- ↑ Charles Adams; Kevin Reinhart (২০০৯)। "Kufr"। John L. Esposito (সম্পাদক)। The Oxford Encyclopedia of the Islamic World। Oxford University Press। আইএসবিএন ৯৭৮০১৯৫৩০৫১৩৫।
- ↑ Ibn Kathir। "Surah Al Ma'ida"। Quran 4 U। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০২০।
- ↑ Thomas, David (২০০৬)। "Trinity"। Jane Dammen McAuliffe (সম্পাদক)। Encyclopaedia of the Qurʾān। Brill।
- ↑ Joseph, Jojo, Qur’an-Gospel Convergence: The Qur’an’s Message To Christians ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে, Journal of Dharma, 1 (January–March 2010), পৃষ্ঠা ৫৫–৭৬
- ↑ Mazuz, Haggai (2012), Christians in the Qurʾān, *Journal of Dharma* 35, 1 (January–March 2010), ৫৫–৭৬
- ↑ Schirrmacher, Christine, The Islamic view of Christians: Qur’an and Hadith, http://www.worldevangelicals.org
- ↑ Carré, Olivier (২০০৩)। Mysticism and Politics: A Critical Reading of Fī Ẓilāl Al-Qurʼān by Sayyid Quṭb। Boston: Brill। পৃ. ৬৩–৬৪। আইএসবিএন ৯৭৮-৯০০৪১২৫৯০২।
- ↑ Glasse, Cyril (১৯৮৯)। The New Encyclopedia of Islam (Revised 2001 সংস্করণ)। Altamira Press। পৃ. ২৪৭। আইএসবিএন ৯৭৮-০৭৫৯১০১৮৯০।
- 1 2 Björkman, W. (২০১২)। "Kāfir"। P. Bearman; Th. Bianquis; C.E. Bosworth; E. van Donzel; W.P. Heinrichs (সম্পাদকগণ)। Encyclopaedia of Islam (2nd সংস্করণ)। Brill। ডিওআই:10.1163/1573-3912_islam_SIM_3775।
- ↑ Gimaret, D., “Tawḥīd”, in: Encyclopaedia of Islam, Second Edition, Brill, 2012.
- 1 2 Hermann Häring, Janet Martin Soskice, Felix Wilfred (২০০৩), Learning from other faiths, পৃষ্ঠা ১৪১
- 1 2 Mark, Durie. "Semantic decomposition of four Quranic words." Russian Journal of Linguistics 26.4 (2022): 937–969.
- ↑ Ibn Kathir। "Tafsir Ibn Kathir (English): Surah Al Nisa"। Quran 4 U। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০২০।
- ↑ Faruki, Kemal. "TAWḤĪD AND THE DOCTRINE OF 'IṢMAH." Islamic Studies 4.1 (1965): 31–43.
- ↑ Mulia, Siti Musdah. "Muslim Family Law Reform in Indonesia A Progressive Interpretation of The Qur’an." Al-Mawarid: Jurnal Hukum Islam (2015): 1–18.
- ↑ Mulia, Siti Musdah. ibid.
- ↑ Mulia, Siti Musdah. ibid.
- ↑ Faruki, Kemal. ibid.
- ↑ Sinai, N. (2018). Polytheism, Encyclopaedia of Islam Three Online, Brill.
- ↑ Winter, Timothy, ed. The Cambridge companion to classical Islamic theology. Cambridge University Press, 2008. পৃষ্ঠা ২৩৩
- ↑ Winter, Timothy, ibid.
- ↑ Faruki, Kemal. ibid.
- ↑ Winter, Timothy, ibid.
- ↑ মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব, কিতাব আত-তাওহিদ, অধ্যায় ৪০
- ↑ Sands, Kristin. Sufi Commentaries on the Qur'an in Classical Islam. Routledge, 2006. পৃষ্ঠা ২৯
- ↑ Awn, Peter J. (1983). Satan's Tragedy and Redemption: Iblīs in Sufi Psychology. Leiden: Brill Publishers. পৃষ্ঠা ১০৪. আইএসবিএন ৯৭৮-৯০০৪০৬৯০৬০
- ↑ Abdullah, Wan Suhaimi Wan. "Herawi's Concept of Tawhid: An Observation Based on His Manazil Al-Sa'irin." *Jurnal Usuluddin* 12 (2000): 95–104.
- ↑ Peskes, Esther এবং Ende, W., “Wahhābiyya”, in: Encyclopaedia of Islam, Second Edition, Brill. ডিওআই:10.1163/1573-3912_islam_COM_1329
- ↑ Ibrahim, Hassan Ahmed (২০০৬)। "Shaykh Muḥammad Ibn ʿAbd Al-Wahhāb and Shāh Walī Allāh: A Preliminary Comparison of Some Aspects of Their Lifes and Careers"। Asian Journal of Social Science। ৩৪ (1): ১০৩–১১৯। ডিওআই:10.1163/156853106776150126।
- ↑ Peskes, Esther এবং Ende, W., ibid.
- ↑ Peskes, Esther এবং Ende, W., ibid.
- ↑ Pall, Z. (2014). *Lebanese Salafis between the Gulf and Europe*. Amsterdam University Press. পৃষ্ঠা ২০
- ↑ Peskes, Esther এবং Ende, W., ibid.
- ↑ Peskes, Esther এবং Ende, W., ibid.
- ↑ Sinai, N. (2018). *Polytheism*. Encyclopaedia of Islam Three Online. Brill. https://doi.org/10.1163/1573-3912_ei3_COM_46230
টীকা
[সম্পাদনা]- ↑ এই অনুবাদগুলোকে নিকোলাই সিনাই ভুল বলে সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে, ‘মূর্তিপূজা’ ও ‘বহুদেববাদ’ শব্দগুলো কেবল প্রতিমা উপাসনার সংকীর্ণ ধারণা বহন করে, যা কোরআনের মূল বক্তব্যকে প্রতিফলিত করে না। কোরআনে যারা শিরকে লিপ্ত হয় তারা মূর্তি স্থাপন করতে পারে, তবে প্রকৃত পাপ হলো আল্লাহর সঙ্গে অন্য কিছুকে অংশীদার করা।[৩]
- ↑ আরবি: مُشْرِك; {{{1}}} {{{2}}} আরবি: مُشْرِكُون
- ↑ আরবি: تَوْحِيد
- ↑ আরবি: مُوَحِّد; {{{1}}} {{{2}}} আরবি: مُوَحِّدُون
- ↑ এই শব্দটির সঙ্গে ইংরেজি "to shirk" (অর্থাৎ এড়িয়ে যাওয়া) শব্দটি গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। ইংরেজি শব্দটি সম্পূর্ণ ভিন্ন উৎস থেকে উদ্ভূত, সম্ভবত জার্মান ভাষার Scharke (অর্থাৎ কপট বা প্রতারক) শব্দ থেকে আগত।[১১]
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Zebiri, Kate (১৯৯৫)। "Relations Between Muslims and Non-Muslims in the Thought of Western-Educated Muslim Intellectuals – Islam and Christian-Muslim Relations"। Islam and Christian–Muslim Relations। ৬ (2): ২৫৫–২৭৭। ডিওআই:10.1080/09596419508721055।
- আইনে শিরক ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ মে ২০১৫ তারিখে
- ↑ আধুনিক গবেষকরা মনে করেন এই আয়াতটি ত্রিত্ববাদের একটি বিকৃত রূপের সমালোচনা, যেখানে তিন ব্যক্তিত্বের পৃথকত্বকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে ঈশ্বরের একত্বকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। সিরিয়াক সাহিত্যে ‘তিনের মধ্যে তৃতীয়’ শব্দবন্ধটি প্রায়ই যিশুর বর্ণনায় ব্যবহৃত হতো।
<ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="note"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি