ঈদের নামাজ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ঈদের নামাজ
台北清真寺.JPG
আনুষ্ঠানিক নামصلاة العيد
পালনকারীমুসলিম বিশ্ব
ধরনইসলাম
শুরুসকাল
সমাপ্তিদুপুর (বেলা)
সম্পর্কিতঈদ, নামাজ, ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ

ঈদের নামাজ, এছাড়াও সালাতুল ঈদ (আরবি: صلاة العيد‎‎) এবং সালাতুল ঈদাইন (আরবি: صلاة العيدين‎‎ নামেও পরিচিত, হচ্ছে একটি বিশেষ নামাজ, যা মুসলমানরা মূলত তাদের দুটি ধর্মীয় উৎসবের দিন আদায় করে। সাধারণত এটি বরাদ্দকৃত কোন খোলা জায়গা (মুসল্লা বা ঈদগাহ) অথবা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।

মুসলমানদের যে দুটি উৎসবে বৃহৎ আকারে একত্রিত হয়ে এই নামাজ আদায় করা হয়, তা হলো:

২০১১ সালের ঈদুল আযহায় বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত দেবীদ্বার উপজেলার বড়শালঘর ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় জামাত।

স্থানীয় নামসমূহ[সম্পাদনা]

অঞ্চল / দেশ ভাষা স্থানীয় নাম
আরব বিশ্ব আরবি صلاة العيد
ইরান, আফগানিস্তান ফার্সি نماز عيد
পাকিস্তান, ভারত উর্দু, হিন্দি, পাঞ্জাবী نماز عيد, ईद नमाज़
তুরস্ক, আজারবাইজান তুর্কি, আজারবাইজানি Bayram namazı
বলকান অঞ্চল সার্বো-ক্রোয়েশীয়, বসনীয় Bajram-namaz
বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা ঈদের নামাজ
সুইডেন সুয়েডীয় Eidbön
ইন্দোনেশিয়া ইন্দোনেশিয়, জাভাই Salat Id
মালয়েশিয়া মালয় Solat Sunat Hari Raya
ইরাকি কুর্দিস্তান কুর্দি, সোরানি نوێژی جێژن
তামিলনাড়ু তামিল பெருநாள் தொழுகை

গুরুত্ব[সম্পাদনা]

ঈদের নামাজের গুরুত্বের ব্যাপারে ইসলামী চিন্তাবিদগণ বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন। হানাফী মাযহাব অনুসারে ঈদের নামাজ ওয়াজিব, মালিকি ও শাফেয়ী মাযহাব অনুসারে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এবং হাম্ববলী মাযহাব অনুসারে ঈদের নামাজ ফরজ। কোনো কোনো ইসলামী পণ্ডিতের মতে ঈদের নামাজ ফরজে আইন এবং কোনো কোনো ইসলামী পণ্ডিতের মতে ঈদের নামাজ ফরজে কেফায়া। কিন্তু কারো কারো মতে ঈদের দুই রাকায়াত নামাজ নফল

তবে বাস্তবে সকল দেশে মুসলিম সমাজে ঈদের নামাজ একটি ধর্মীয় উৎসব হিসেবে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ সহ বহু দেশে নামাজ তো পড়াই হয়, অধিকন্তু ঈদের দিনটি উৎসবের মধ্য দিয়ে উদ্‌যাপন করা হয়।

নামাজ[সম্পাদনা]

ঈদের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হয়। ঈদের নামাজ সাধারণত খোলা মাঠে তথা ঈদগাহে পড়া হয়। তবে এরূপ স্থানের অভাবে বা আপৎকালে মাসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করা যায়।

সময়[সম্পাদনা]

চোখের দেখায় সূর্য দিগন্ত থেকে আনুমানিক দুই মিটার উচ্চতায় পৌঁছালে ঈদের নামাজ পড়া হয়। জোহর নামাজের আগেই ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়। সুন্নাত হিসেবে ঈদুল ফিতরের নামাজ কিছুটা দেরি করে এবং ঈদুল আজহার নামাজ দ্রুত আদায় করা হয়। ঈদুল ফিতরে ফিতরা প্রদান করতে হয়। ঈদ সকালে কিছুটা সময় পাওয়া গেলে ফিতরা আদায়ে সুবিধা হবে। অন্যদিকে ঈদুল আজহায় ঈদের নামাজ সম্পন্ন করে আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কুরবানী করা হয়। সেজন্য ঈদের নামাজ যত দ্রুত সম্ভব আদায় করতে হবে। এই ব্যাপারে হাদিসে সুস্পষ্ট বিধান প্রদত্ব রয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

অতিরিক্ত তাকবির[সম্পাদনা]

ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয় কিংবা বারো তাক্ববির রয়েছে।

ছয় তাকবিরের ক্ষেত্রে প্রথম রাক্বাতের শুরুতে অতিরিক্ত তিন তাক্ববির এবং দ্বিতীয় রাক্বাতে অতিরিক্ত তিন তাক্ববির দিতে হয়। প্রথম রাক্বাতে সানা পাঠের পর কানের লতি পর্যন্ত হাত তুলে পর পর তিন তাক্ববির বলতে হয়। দ্বিতীয় রাক্বাতে সুরা পাঠান্তে রুকুতে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত তিন তাক্ববির বলতে হয়। অতিরিক্ত তাক্ববির বলার পর কানের লতি থেকে হাত নামিয়ে আনতে হয়।

বারো তাকবিরের ক্ষেত্রে প্রথম রাক্বাতের শুরুতে অতিরিক্ত সাত তাকবির এবং দ্বিতীয় রাক্বাতের শুরুতে অতিরিক্ত পাঁচ তাক্ববির দিতে হয়। প্রথম রাকাতে সানা পাঠের পর কানের লতি পর্যন্ত হাত তুলে পর পর সাতবার তাক্ববির বলতে হয়। দ্বিতীয় রাকাতে সুরা পাঠা শুরুর পূর্বে অতিরিক্ত পাঁচ তাকবির বলতে হয়।[১]

খুতবা[সম্পাদনা]

ঈদের নামাজে ইমাম কর্তৃক খুতবা পড়া সুন্নত এবং মুসুল্লিদের খুতবা শোনা ওয়াজিব। জুমার নামাজের ন্যায় প্রথমে বিষয় ভিত্তিক খুতবা এবং পরে সানি খুৎবা পাঠ করতে হয়। খুৎবার মাধ্যমে ঈদের নামাজের সমাপ্তি হয়। সাধারণত খুতবার পরে দোয়া করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে[সম্পাদনা]

শোলাকিয়া ঈদগাহ[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রামের ঈদের নামাজ পড়ার দৃশ্য।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। প্রতিবছর এ ময়দানে ঈদ-উল-ফিতরঈদুল আজহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। কালের স্রোতে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানটি পরিণত হয়ে উঠেছে একটি ঐতিহাসিক স্থানে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় এখানে। এ ময়দানের বিশাল জামাত গৌরবান্বিত ও ঐতিহ্যবাহী করেছে কিশোরগঞ্জকে। বর্তমানে এখানে একসঙ্গে তিন লক্ষাধিক মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শুরুর আগে শর্টগানের ফাঁকা গুলির শব্দে সবাইকে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সঙ্কেত দেওয়া হয়। কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্বে নরসুন্দা নদীর তীরে এর অবস্থান।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সুনানে ইবনে মাজাহ | হাদিস নং ১২৭৭, ১২৭৮, ১২৭৯, ১২৮০