সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ

স্থানাঙ্ক: ২৩°৩৬′১৫″ উত্তর ৮৯°৫০′৩১″ পূর্ব / ২৩.৬০৪০৮৭° উত্তর ৮৯.৮৪২০৩২° পূর্ব / 23.604087; 89.842032
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সরকারী রাজেন্দ্র কলেজ
ধরনসরকারী কলেজ
স্থাপিত১৯১৮
অধ্যক্ষপ্ৰফেসর শ্রী অসীম কুমার সাহা (২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১- বর্তমান)
অবস্থান,
বাংলাদেশ

২৩°৩৬′১৫″ উত্তর ৮৯°৫০′৩১″ পূর্ব / ২৩.৬০৪০৮৭° উত্তর ৮৯.৮৪২০৩২° পূর্ব / 23.604087; 89.842032
শিক্ষাঙ্গন২টি
সংক্ষিপ্ত নামস.রা.ক.
অধিভুক্তিবাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
ওয়েবসাইটhttp://www.rajendracollege.edu.bd/
মানচিত্র

সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ দক্ষিণ বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি ফরিদপুর জেলা শহরে অবস্থিত।

অবস্থান[সম্পাদনা]

ফরিদপুর শহর থেকে ২ কিলোমিটার পূর্বে রাজেন্দ্র কলেজের মূল ক্যাম্পাস অবস্থিত। শাখা পদ্মা নদীর পশ্চিম প্রান্তে মোট প্রায় ৫৪.০১ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের মূল ক্যাম্পাস। রাজধানী ঢাকা থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অবস্থান।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

অবিভক্ত বাংলার বিশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত বৃহত্তর ফরিদপুর ও সন্নিহিত অঞ্চলে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্যে কোনো বিদ্যাপীঠ ছিল না। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা লাভের মোটামুটি ভালো ব্যবস্থা থাকলেও উচ্চশিক্ষা ছিল মূলত কলকাতাকেন্দ্রিক । ফলে, মাধ্যমিক (ম্যাট্রিক) পাসের পর অধিকাংশের পক্ষেই, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও, আর্থিক অসচ্ছলতাসহ নানান কারণে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হতো না। বিশ শতকের গোড়ার দিক থেকেই ফরিদপুর শহরে একটি কলেজ স্থাপনের চিন্তাভাবনা শুরু করেন তখনকার শিক্ষিত মহল। এ নিয়ে তাঁরা জেলা কালেক্টরের সাথে বিভিন্ন সময়ে আলাপ আলোচনাও করেন। কিন্তু, তাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি । এমতাবস্থায়, ফরিদপুরের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, নিখিল ভারত কংগ্রেসের সভাপতি, কংগ্রেস নেতা খ্যাতনামা আইনজীবী ও সমাজসেবক অম্বিকাচরণ মজুমদার কলেজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে আসেন। বস্তুত, তাঁরই সক্রিয় উদ্যোগে, অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও সাহসী নেতৃত্বে ১৯১৮ সালে রাজেন্দ্র কলেজের যাত্রা শুরু হয়। তবে, এরও আগে ১৯১২ সালে গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ফরিদপুরে এলে তাঁর কাছে ফরিদপুর শহরে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপিত হয়। অথচ, তিনি বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ হন। অতঃপর ফরিদপুরে কলেজ প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব গ্রহণ করেন জেলার বিখ্যাত আইনজীবী এবং প্রখ্যাত কংগ্রেস নেতা অম্বিকাচরণ মজুমদার

১৯১৫ সালের ১৫ নভেম্বর অম্বিকাচরণ মজুমদার ফরিদপুরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সভা করেন। এ সভায় ফরিদপুর শহরে একটি দ্বিতীয় গ্রেডের কলেজ স্থাপনের রূপরেখা প্রণয়নের জন্যে তাঁর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয় । উক্ত কমিটি মাস দেড়েকের মধ্যেই ফরিদপুর শহরের পূর্বপার্শ্বে (বর্তমান শহর ক্যাম্পাস) খেলার মাঠ ও মাঠে অবস্থিত মেলাভবনটিকে আংশিক পরিবর্তন করে কলেজ ভবনে রূপান্তর করার পরিকল্পনা পেশ করেন। কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার জন্য ৮০ হাজার টাকার প্রাথমিক তহবিল গঠনেরও সুপারিশ করেন উক্ত কমিটি । ১৯১৬ সালের ৯ জানুয়ারি অম্বিকাচরণ মজুমদারকে সভাপতি করে কলেজ কমিটি গঠিত হয়। কমিটি শহরের ব্যবসায়ীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিকট থেকে ৪০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন। আরও টাকা কীভাবে সংগ্রহ করা যায়, সেটিই ছিলো অম্বিকাচরণের সারাক্ষণের চিন্তা। এ অবস্থায় একদিন তাঁর মক্কেল ফরিদপুর জেলার বাইশরশির জমিদার রমেশ চন্দ্র রায় চৌধুরীর নিকট আর্থিক সাহায্যের বিষয়টি উত্থাপন করেন । রমেশ চন্দ্র রায় চৌধুরী কলেজের নাম তার পিতা রাজেন্দ্র চন্দ্র রায় চৌধুরীর নামে করার শর্তে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেন। ১৩ আগস্টের সভায় কলেজ কমিটি উক্ত প্রস্তাবে সম্মত হয়ে কলেজের নাম ‘রাজেন্দ্র কলেজ' রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অতঃপর কলেজ কমিটির সভাপতি অম্বিকাচরণ মজুমদার খেলার মাঠ ও মেলা ভবন মাঠের জমি থেকে ৫.২০ একর খাস জমি বরাদ্দের জন্যে সরকারের কাছে এবং কলেজ অধিভুক্তির জন্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদন জানান ।

১৯১৬ সালের ৩০ আগস্ট জনশিক্ষা পরিচালক (ডিপিআই) ফরিদপুর সফরে এলে অম্বিকাচরণ মজুমদার তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর সহযোগিতা কামনা করেন। জনশিক্ষা পরিচালক কলেজ প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করবার পরামর্শ দেন। উল্লেখ্য, সে সময়ে কোথাও কোনো কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রথমেই ছাত্রাবাস তৈরি করতে হত। তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ও অধিভুক্তির জন্যে আবেদন করা যেত না। ১৯১৭ সালের ৮ মার্চ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের নির্দেশে দুজন পরিদর্শক ফরিদপুর সফরে আসেন। পরিদর্শন শেষে তাঁরা তাঁদের প্রতিবেদনে কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেন। এ সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজ কমিটি তাদের পরিকল্পনা ঢেলে সাজিয়ে কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজ চূড়ান্ত করবার কাজে হাত দেন। এমতাবস্থায়, বাংলা সরকারের সচিব প্রেরিত পত্রে মেলার মাঠের খাস জমি মঞ্জুর করতে সরকারের অস্বীকৃতির বিষয়টি জানানো হয়। এ সময়ে অম্বিকাচরণ মজুমদারকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন আইসিএস অফিসার মিস্টার জি. জে. ডানলপ। তিনি এক পত্রে সরকারের কাছে উক্ত খাস জমি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য বরাদ্দের আবেদন করেন। ডানলপের পত্রবলে কলেজ কমিটি ১৯১৭ সালের ৩০ জুলাই জেলা কালেক্টরের মাধ্যমে জমির জন্য পুনরায় আবেদন করেন। এর কয়েকদিন পরে বাংলার গভর্নর লর্ড রোনাল্ডসে ফরিদপুর সফরে এলে অম্বিকাচরণ মজুমদার তাঁকে কলেজ প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা তুলে ধরে মেলার মাঠের খাসজমি বরাদ্দ দেওয়ার আবেদন জানান। রোনাল্ডসে জানান যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কলেজ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা অনুমোদন করলে সরকার জমি প্রদানের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে। এ আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজ কমিটি পুরোদমে তাঁদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। অম্বিকাচরণ মজুমদারকে বাংলা সরকারের সচিব ডনমেলি এক তারবার্তায় জানান যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি কলেজ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা, তার আর্থিক ভিত্তি, ছাত্রদের আবাসিক ব্যবস্থা, শিক্ষা, নিয়োগ ইত্যাদি অনুমোদন করে তাহলে সরকার কলেজকে জমি প্রদানে প্রস্তুত আছে। তারপর কলেজ কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর নতুন করে আবেদন করেন।

ইতোমধ্যে কলেজ গভার্নিং বডি পুনর্গঠিত হয়। এ সময়েই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ইংরেজি সাহিত্যের অভিজ্ঞ অধ্যাপক কামাখ্যা নাথ মিত্রকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট-এর প্রস্তাবে জমি প্রদান সংক্রান্ত সরকারি আদেশ পেশ করতে বলে। কিন্তু, তখনও পর্যন্ত জমি বরাদ্দের আদেশ পাওয়া যায়নি। এদিকে ১৯১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পৌর চেয়ারম্যান মথুরা নাথ মিত্র তাঁর ওপর অর্পিত ক্ষমতা বলে দলিল সম্পাদন করে মেলাভবন কলেজ কমিটির কাছে এক হাজার টাকায় বিক্রয় করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট তা পেশ করেন। এ সময় বাংলা সরকারের পক্ষ থেকে কলেজকে বার্ষিক নামমাত্র এক টাকা খাজনার বিনিময়ে মেলার মাঠের ৫.২০ একর জমি মঞ্জুর করা হয়। এরপর অম্বিকাচরণ মজুমদার উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মঞ্জুরিপত্রটি প্রদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেটের সুপারিশসহ কলেজ কমিটির আবেদনপত্র ভারত সরকারের কাছে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করেন । প্রথমে কলেজটিকে মেলার মাঠের ৫.২০ একর জমি প্রদানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তা মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু, পরে দেখা গেল মেলাভবনের পূর্ব এবং উত্তরে এক ফালি জমি না পেলে কলেজ ভবনের জন্য সুবিধাজনক স্থান সংকুলান হয় না। বিষয়টি অনুধাবন করে মেলা ভবনসহ ৫.৫৫ একর জমির প্রদানের নকশা প্রণয়ন করে সরকারের নিকট পেশ করা হয়। পূর্বেই বলা হয়েছে, কলেজ প্রতিষ্ঠার অপরিহার্য শর্ত ছিল ছাত্র হোস্টেল প্রতিষ্ঠা। অম্বিকাচরণ মুজুমদারের অনুরোধ মনীন্দ্র চন্দ্ৰ নন্দী ৩০,০০০/-(ত্রিশ হাজার) টাকা হোস্টেল প্রতিষ্ঠার জন্য দান করে আর একটি মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এদিকে, কলেজ কমিটি ছাত্রাবাস নির্মাণের কাজ শুরু করে দেন এবং ১৯১৭ সালের মার্চের মধ্যে তা সমাপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। এ সময় কলেজ কমিটি কলেজভবন নির্মিত না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রাবাসে ক্লাস করবার অনুমতি চান। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রস্তাবে রাজি হলেও তখন পর্যন্ত ভারত সরকারের অনুমোদন পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যে বাংলা সরকার ১৯১৮ সালের ১২ মার্চ কলেজ কমিটির প্রস্তাব গ্রহণ করে ৫.৫৫ একর জমি মঞ্জুর করেন এবং কালেক্টরের মাধ্যমে তা কমিটির নিকট হস্তান্তর করেন। ১৯১৮ সালের ৮ এপ্রিল ফরিদপুর জেলার কালেক্টর মি. ডানলপ কলেজ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। অবশেষে দেনদরবারের মাধ্যমে ১৯১৮ সালের ১৩ মে কলেজকে বার্ষিক মাত্র এক টাকা খাজনার বিনিময়ে ৫.৫৫ একর জমি মঞ্জুর করেন।

এভাবে সকল বাধাবিপত্তি অপসারিত হওয়ায়, পূর্ণোদ্যমে শুরু হয় কলেজের কাজ। ইতোমধ্যে ১৯১৮ সালে ১ জুন কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কামাখ্যা নাথ মিত্র যোগদান করেন। এছাড়া, অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন শিরীষ চন্দ্র সেন (দর্শন), দেবেন্দ্র নাথ দত্ত (গণিত), দীনেশ চন্দ্র মজুমদার (সংস্কৃত), শিরীষ কুমার আচার্য (ইতিহাস)। এর কিছু পরে নিয়োগ পান ফজলুল হক (আরবিফারসি)। ১৯১৮ সালের ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে কলেজের কাজ শুরু হয় এবং ১০ জুলাই মাত্র ২৯ জন ছাত্র নিয়ে শ্রেণি-কার্যক্রম শুরু হয়। কলা বিভাগের ক্লাস দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও ১৯২১ সালে আই.এস.সি. এবং ডিগ্রি (পাস) কোর্স চালু হয়। ১৯২৩ সালের গভার্নিং বডির সহযোগিতায় এবং অধ্যক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ইংরেজি, দর্শন, গণিতসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে অনার্স কোর্স চালু করা হয়।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের অধিভুক্ত মফস্বলের কলেজসমূহে অনার্স কোর্স চালু রাখতে অসম্মতি জানালে ১৯৪৯ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৫৪ সালে কলেজের বিএসসি প্রথম ব্যাচ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এ সময় পর্যন্ত কলেজের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার মান, ফলাফল ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে রাজেন্দ্র কলেজকে এ গ্রেডের কলেজে উন্নীত করা হয়। এ সময় ফরিদপুরের অন্যতম জমিদার ইউসুফ আলী চৌধুরী (মোহন মিয়া) এবং তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এম. এ. গওহর বিজ্ঞান শিক্ষার উন্নয়নে ২৫ হাজার টাকা দান করেন। এ অর্থ দিয়ে একটি বিজ্ঞানভবন নির্মাণ ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়। ১৯৫৮ সালে নতুন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এম.এ. সিদ্দিকের প্রচেষ্টায় শহর ক্যাম্পাসে মূলভবনের দোতলা নির্মিত হয়। এ ভবন এক সময় অধ্যক্ষের অফিস, ছাত্রী মিলনায়তন ও লাইব্রেরি ছিল। শুধু পড়াশোনা নয়, শরীরচর্চার জন্য ১৯৫৭ সালে একটি জিমনেসিয়াম নির্মিত হয়। এক সময় রাজেন্দ্র কলেজ বলতে শহর ক্যাম্পাসকেই বোঝাতো । এখান থেকে পরিচালিত হত কলেজের প্রশাসনিক, অ্যাকাডেমিক ও অন্যান্য কার্যক্রম। বর্তমানে এ কলেজের ‘শহর ক্যাম্পাস’ ও ‘বায়তুল আমান ক্যাম্পাস' নামে দুটি ক্যাম্পাস রয়েছে। বায়তুল আমান ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠারও রয়েছে তাৎপর্যপূর্ণ ইতিহাস। ছয়-এর দশকের গোড়ার দিকে দেশজুড়ে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন ছাত্র-ছাত্রী বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় নতুন ভবন নির্মাণ ও পুরাতন ভবন সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সেজন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত জমি। ইতোমধ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কলেজের উন্নয়নের জন্য ২৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। এমতাবস্থায়, কলেজ গভার্নিং বডি শিক্ষাবিভাগের নীতিমালা অনুযায়ী শহরের বাইরে জমি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। এ প্রেক্ষাপটে কলেজের মূলভবন থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে চৌধুরী পরিবার প্রতিষ্ঠিত বায়তুল আমান কমপ্লেক্স থেকে ১৫ একর জমি ক্রয় করা হয়। এ জমির ওপর ছয়-এর দশকের শুরুতেই কলেজের বায়তুল আমান ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। ১৯৬৮ সালে এ ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এ বছরেই কলেজকে প্রাদেশিকীকরণ করা হয় এবং সরকারিভাবে অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন বিশিষ্ট গবেষক ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর শিব প্রসন্ন লাহিড়ী (পরবর্তীতে পিএসসি সদস্য)। ইতোমধ্যে ছাত্র আন্দোলন, গণ-আন্দোলনের তরঙ্গে সারাদেশ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে অনিবার্যভাবে এসে যায় বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রাম। '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালে এখানে পাকহানাদার বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে। পরে তাদের পরাভূত করে স্থাপিত হয় মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প।

মুক্তিযুদ্ধোত্তরকালে বায়তুল আমান ক্যাম্পেসে ডিগ্রি শাখা স্থানান্তর নিয়ে চলে দীর্ঘ টানাপোড়েন। এভাবে ভবনগুলো অব্যবহৃত থাকার ফলে প্রায় ধ্বংসোন্মুখ হয়ে পড়ে। ১৯৭৮-'৭৯ সাল থেকে নতুন ভবন নির্মাণ ও পুরাতন ভবনগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হয়। ১৯৮৩ সাল নাগাদ ভবনগুলো পুরোপুরি ক্লাসের উপযোগী করে তোলা হয়। অতঃপর ১৯৮৪ সালে ৬ টি অনার্স বিষয় ও ডিগ্রি (পাস) কোর্সের ক্লাসসমূহ বায়তুল আমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হলে ডিগ্রি (পাস) কোর্সের ক্লাসসমূহ শহর ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হয়।

অবকাঠামো[সম্পাদনা]

সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মূলত ২টি ক্যাম্পাসে বিভক্ত। এই ২টি ক্যাম্পাসের একটি ফরিদপুর শহরের মধ্যেই ফরিদপুর স্টেডিয়াম এর পাশে অবস্থিত। একে ডিগ্রী শাখা বা শহর শাখা বলা হয়ে থাকে। অন্যটি শহর থেকে কিছুটা দূরে বায়তুল-আমান এলাকায় অবস্থিত। এটিকে অনার্স শাখা বা বায়তুল-আমান শাখা বলা হয়ে থাকে।

শিক্ষা কার্যক্রম[সম্পাদনা]

১৯৭১-১৯৭২ সালে কলেজটি প্রথম ৬ টি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স চালু করে। বর্তমানে ১৯ টি বিষয় অনার্স ও মাস্টার্স চালু করা হয়। যেগুলো হচ্ছে:

বি.এ.

  • ১) বাংলা বিভাগ
  • ২) ইংরেজি বিভাগ
  • ৩) দর্শন বিভাগ
  • ৪) ইতিহাস বিভাগ
  • ৫) ইসলাম শিক্ষা বিভাগ
  • ৬) ইসলামের ইতিহাস সংস্কৃতি বিভাগ

বি.এস.এস.

  • ৭) ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ
  • ৮) অর্থনীতি বিভাগ
  • ৯) সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
  • ১০) সমাজকর্ম বিভাগ
  • ১১) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

বি.এসসি.

  • ১২) গণিত বিভাগ
  • ১৩) রসায়ন বিভাগ
  • ১৪) পদার্থ বিভাগ
  • ১৫) প্রাণিবিদ্যা বিভাগ
  • ১৬) উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ

বি.বি.এ.

  • ১৭) ফিন্যান্স ও ব্যাকিং
  • ১৮) হিসাববিজ্ঞান বিভাগ
  • ১৯) মার্কেটিং বিভাগ
  • ২০)ব্যবস্থাপনা বিভাগ

সহশিক্ষা ও আনুসঙ্গিক কার্যক্রম[সম্পাদনা]

পাঠাগার : জ্ঞান অর্জনের জন্য কলেজে দুটি সু-সজ্জিত ও সমৃদ্ধশালী পাঠাগার রয়েছে। শিক্ষার্থীর লাইব্ররি কার্ডের মাধ্যমে ১০ দিনের জন্য বই উত্তোলন করে নেওয়ার সুযোগ আছে এবং লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া পাঠাগারে দৈনিক খবরের কাগজ এবং শিক্ষামূলক ম্যাগাজিন রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞানাগার : বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহারিক ক্লাস নেওয়ার জন্য বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্যাদিতে সমৃদ্ধ প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা গবেষণাগার রয়েছে ।

ছাত্র-মিলনায়তন ও ছাত্রী মিলনায়তন : কলেজের ছাত্রছাত্রীদের আনন্দ বিনোদন ও অন্তঃক্রীড়ায় অংশগ্রহণের জন্য খেলাধুলার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি যেমন, লুডু, ক্যারাম, দাবা, টেবিল টেনিস ইত্যাদি খেলার সুযোগসহ ছাত্র মিলনায়তন ও ছাত্রী মিলনায়তন আছে।

আবাসিক ব্যবস্থা : কলেজে ছাত্রদের থাকার জন্য কবি নজরুল ইসলাম, কবি জসীমউদদীন, অম্বিকাচরণ মজুমদার, হাজী শরীয়তুল্লাহ ও নবনির্মিত ছাত্রাবাস এবং ছাত্রীদের জন্য শেখ হাসিনা, মমতাজ, জসীম উদদীন ও নবনির্মিত ছাত্রীনিবাস আছে।

রোভার স্কাউট : দেশ গঠন, সমাজসেবা ও জনকল্যাণমূলক কাজে উদ্বুদ্ধ ও আগ্রহ সৃষ্টির জন্য এবং দেহ ও মনের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য কলেজে গার্ল-ইন-রোভার ইউনিট গঠন করা হয়েছে। কলেজের রোভারদের জন্য সুসজ্জিত রোভার ডেন আছে।

বি.এন.সি.সি : শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, সুস্থতা ও দেশ গঠনে ভূমিকা রাখার জন্য বি.এন.সি.সি'র একটি সুসজ্জিত সেনা ইউনিট রয়েছে।

রেড ক্রিসেন্ট : আর্ত মানবতার সেবা ও বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমসহ প্রতিবছর নিরাপদ রক্তসংগ্রহের জন্য কলেজে রেড ক্রিসেন্টের একটি শক্তিশালী ইউনিট বিদ্যমান।

খেলাধুলা : কলেজের খেলাধুলার জন্য নিজস্ব ৫টি সুবিশাল মাঠ ও মানসিক উৎকর্ষতার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জামের ব্যবস্থা আছে। ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, হ্যান্ডবল, ভলিবল ইত্যাদি খেলায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করে থাকে। প্রতি বছর বার্ষিক অন্তঃকক্ষ ক্রীড়া ও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আকর্ষণীয় পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রায় বছরই আন্ত বিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।

সাহিত্য ও সংস্কৃতি : শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও সৃজনশীল প্রতিভার উন্মেষ ঘটাতে সহপাঠ্যক্রম বিষয় হিসেবে সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।

শিক্ষা সফর ও বনভোজন : ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা বিকাশ ও চিত্ত বিনোদনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন শিক্ষামূলক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ পরিদর্শনের জন্য প্রতি বছর শিক্ষা সফরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় ।

ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি : প্রতি বছর বার্ষিক মিলাদ মাহফিল ও সনাতনধর্মাবলম্বী শিক্ষিার্থীদের জন্য সরস্বতী পূজা যথাযথ ধর্মীয় গাম্ভীর্যসহকারে অনুষ্ঠিত হয়। বার্ষিক মিলাদে হামদ, নাত, কিরাত ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

আর্থিক সাহায্য প্রদান : প্রতি বছরই কলেজের গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে দরিদ্র তহবিল হতে আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়।

জাতীয় দিবস পালন : বছরের প্রতিটি জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়।

বাংলা নববর্ষ উদযাপন : প্রতি বছর বাংলা নববর্ষ (১লা বৈশাখ) অত্যন্ত সাড়ম্বরে পালন করা হয়।

বিতর্ক/ ডিবেটিং ক্লাব : প্রতি বৎসর বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী[সম্পাদনা]

ছবি[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]