সামবেদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
নকীব বট (আলোচনা | অবদান)
১৪২ নং লাইন: ১৪২ নং লাইন:
[[বিষয়শ্রেণী:সামবেদ]]
[[বিষয়শ্রেণী:সামবেদ]]
[[বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় কাব্যতত্ত্ব]]
[[বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় কাব্যতত্ত্ব]]
[[বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় সংগীত]]
[[বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় সঙ্গীত]]
[[বিষয়শ্রেণী:হিন্দু ধর্মগ্রন্থ]]
[[বিষয়শ্রেণী:হিন্দু ধর্মগ্রন্থ]]
[[বিষয়শ্রেণী:সংস্কৃত শব্দ ও শব্দবন্ধ]]
[[বিষয়শ্রেণী:সংস্কৃত শব্দ ও শব্দবন্ধ]]

০৫:৩২, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

সামবেদ (সংস্কৃত: सामवेद) (সামন্‌ বা গান ও বেদ বা জ্ঞান থেকে) হল সংগীতমন্ত্রের বেদ[১] সামবেদ হিন্দুধর্মের সর্বপ্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদের দ্বিতীয় ভাগ। এটি বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত। সামবেদে ১,৮৭৫টি মন্ত্র রয়েছে।[২] এই শ্লোকগুলি মূলত বেদের প্রথম ভাগ ঋগ্বেদ থেকে গৃহীত।[৩] এটি একটি প্রার্থনামূলক ধর্মগ্রন্থ। বর্তমানে সামবেদের তিনটি শাখার অস্তিত্ব রয়েছে। এই বেদের একাধিক পাণ্ডুলিপি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে।[৪][৫]

গবেষকেরা সামবেদের আদি অংশটিকে ঋগ্বৈদিক যুগের সমসাময়িক বলে মনে করেন। তবে এই বেদের যে অংশটির অস্তিত্ব এখনও পর্যন্ত রয়েছে, সেটি বৈদিক সংস্কৃত ভাষার পরবর্তী-ঋগ্বৈদিক মন্ত্র পর্যায়ে রচিত। এই অংশের রচনাকাল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ থেকে ১০০০ অব্দের মাঝামাঝি কোনো এক সময়। তবে সামবেদ যজুর্বেদঅথর্ববেদের সমসাময়িক কালে রচিত।[৬]

বহুপঠিত ছান্দোগ্যকেন উপনিষদ্‌ সামবেদের অন্তর্গত। এই দুই উপনিষদ্‌ প্রধান (মুখ্য) উপনিষদ্‌গুলির অন্যতম এবং হিন্দু দর্শনের (প্রধানত বেদান্ত দর্শন) ছয়টি শাখার উপর এই দুই উপনিষদের প্রভাব অপরিসীম।[৭] সামবেদকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতনৃত্যকলার মূল বলে মনে করা হয়।[৮]

ভগবদ্গীতায় কৃষ্ণ নিজেকে চার বেদের মধ্যে সামবেদ বলে বর্ণনা করেছেন।[৯] সামবেদকে সাম বেদ বানানেও অভিহিত করা হয়।[১০]

বৈশিষ্ট্য

বৈদিক সাহিত্যের ভৌগোলিক অবস্থান। সামবেদের কৌঠুম (উত্তর ভারত) ও জৈমিনীয় (মধ্যভারত) শাখাদুটির অস্তিত্ব এখনও রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই শাখাদুটির একাধিক পাণ্ডুলিপি আবিষ্কৃত হয়েছে।

সামবেদ হল ‘মন্ত্রবেদ’ বা ‘মন্ত্র-সংক্রান্ত জ্ঞানের ভাণ্ডার’।[১১] ফ্রিটস স্টাল সামবেদকে ‘সুরারোপিত ঋগ্বেদ’ বলে উল্লেখ করেছেন।[১২] এই বেদ প্রাচীনতম সংগীত (‘সামন্‌’) ও ঋগ্বৈদিক মন্ত্রগুলির সংমিশ্রণ।[১২] ঋগ্বেদের তুলনায় সামবেদে মন্ত্রের সংখ্যা অনেক কম।[৫] কিন্তু পাঠ-সংক্রান্ত দিক থেকে এই বেদ বৃহত্তর। কারণ, এই বেদে সকল মন্ত্র ও অনুষ্ঠান-সংক্রান্ত মন্ত্রগুলির সুরান্তর তালিকাভুক্ত হয়েছে।[১২]

সামবেদে স্বরলিপিভুক্ত সুর পাওয়া যায়। এগুলিই সম্ভবত বিশ্বের প্রাচীনতম স্বরলিপিভুক্ত সুর, যা আজও পাওয়া যায়।[১৩] স্বরলিপিগুলি সাধারণত মূল পাঠের ঠিক উপরে অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাঠের অভ্যন্তরে নিহিত রয়েছে। এই স্বরলিপি সামবেদের শাখা অনুসারে অক্ষর বা সংখ্যার আকারে নিবদ্ধ।[১৪]

শাখা

আর. টি. এইচ. গ্রিফিথের মতে, সামবেদ সংহিতার তিনটি শাখা রয়েছে:[৪]

বিন্যাস

সামবেদের আদি সংকলনটি বৈদিক দেবতা অগ্নিইন্দ্রের স্তোত্র দিয়ে শুরু হয়েছে।

সামবেদ দুটি প্রধান খণ্ডে বিভক্ত। প্রথম খণ্ডে চারটি ‘গান’ বা তান-সংকলন রয়েছে। দ্বিতীয় খণ্ডে রয়েছে তিনটি ‘আর্চিক’ বা মন্ত্র-সংকলন।[৩] ‘গান’ খণ্ডের এক-একটি তানের সঙ্গে ‘আর্চিক’ খণ্ডের এক-একটি মন্ত্র সংযুক্ত।[৩] ‘গান’ সংকলনটি আবার ‘গ্রামগেয়’ ও ‘অরণ্যগেয়’—এই দুই পর্বে বিভক্ত। অন্যদিকে ‘আর্চিক’ খণ্ডটি ‘পূর্বাচিক’ ও ‘উত্তরার্চিক’—এই দুই পর্বে বিভক্ত।[১৫] ‘পূর্বার্চিক’ নামক পর্বটিতে ৫৮৫টি একক মন্ত্র রয়েছে। এগুলি দেবতা অনুসারে বিন্যস্ত। অন্যদিকে ‘উত্তরার্চিক’ বিন্যস্ত হয়েছে ক্রিয়াকাণ্ড অনুসারে।[১৫] ‘গ্রামগেয়’ পর্বটি সাধারণের জন্য। অন্যদিকে ‘অরণ্যগেয়’ পর্বটি অরণ্যের নির্জনতায় ব্যক্তিগত ধ্যানের জন্য।[১৫] সাধারণভাবে, ‘পূর্বার্চিক’ সংকলনটি ‘গ্রাময়েগ-গান’ নির্ঘণ্টে বর্ণিত তানে গীত হত। পুষ্পসূত্র ইত্যাদি সংস্কৃত গ্রন্থে কিভাবে মন্ত্রের সঙ্গে মন্ত্র যুক্ত করা উচিত তার নিয়ম বর্ণিত হয়েছে।[১৫]

ঋগ্বেদের মতো সামবেদেও আদি সংকলনটি অগ্নিইন্দ্রের স্তোত্র দিয়ে শুরু হয়েছে। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে তাত্ত্বিক আলোচনা ও দর্শনতত্ত্বে উপনীত হয়েছে এবং শ্লোকের ছন্দ ধীরে ধীরে নিম্নগামী হয়েছে।[৩] উইটজেলের মতে, সামবেদের উত্তর সংকলনটি বিষয়বস্তু মূল ঋগ্বেদের থেকে খুব কম ক্ষেত্রেই দূরে সরে গিয়েছে। এগুলি ঋগ্বেদের স্তোত্রগুলিরই গীতিরূপ।[৩] সামবেদের উদ্দেশ্যটি আনুষ্ঠানিক। এই বেদের স্তোত্রগুলি ‘উদ্‌গাতৃ’ বা গায়ক পুরোহিতদের দ্বারা সংকলিত হয়।[৩]

অন্যান্য বেদের মতো সামবেদেরও কয়েকটি স্তর রয়েছে। সামবেদের সংহিতাটি প্রাচীনতম এবং উপনিষদগুলি নবীনতম স্তর।[১৬]

সামবেদ[১৬]
বৈদিক শাখা ব্রাহ্মণ উপনিষদ্‌ শ্রৌতসূত্র
কৌঠম-রাণায়নীয় পঞ্চবিংশ ষড়বিংশ ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ লাট্যায়ন দ্রাহ্যায়ন
জৈমিনীয় বা তলবকার জৈমিনীয় কেন উপনিষদ্‌
জৈমিনীয় উপনিষদ্‌
জৈমিনীয়

বিশ্লেষণ

সামবেদে ১,৫৪৯টি একক মন্ত্র রয়েছে। এগুলির মধ্যে ৭৫টি বাদে বাকি সবকটিই ঋগ্বেদ থেকে গৃহীত।[৩][১৭] ঋগ্বেদের ৯ম ও ৮ম মণ্ডল থেকেই প্রধানত এই মন্ত্রগুলি গ্রহণ করা হয়েছে।[১৮] কয়েকটি ঋগ্বৈদিক মন্ত্র সামবেদে একাধিকবার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। গ্রিফিথের অনুবাদে পুনরাবৃত্তি সহ সামবেদ শাখার মোট মন্ত্রসংখ্যা ১,৮৭৫।[১৯]

বিষয়বস্তু

সামবেদ সংহিতার মন্ত্রগুলি ‘পাঠ’ করার জন্য নয়। এগুলি সাংগীতিক স্বরলিপি, যা ‘শোনা’ অবশ্যকর্তব্য বলে মনে করা হয়।[১]

স্টালের মতে, প্রাচীন ভারতে মন্ত্ররচনার আগে থেকেই তানগুলির অস্তিত্ব ছিল। ঋগ্বেদের মন্ত্রগুলি এই প্রাচীন সুরেই নিবদ্ধ হয়। কারণ, প্রথম দিকের কিছু শব্দ সুরের সঙ্গে খাপ খেলেও, পরবর্তীকালের শব্দগুলি একই মন্ত্রের সুরে ঠিক খাপ খায় না।[১] সামবেদে ‘স্তোভ’ নামে একটি সৃজনশীল গঠনভঙ্গি ব্যবহৃত হয়েছে। এটির উদ্দেশ্য শব্দগুলিকে কাঙ্ক্ষিত সুরের সংগতে সজ্জিত, পরিবর্তিত বা চালনা করা।[২০][২১] কয়েকটি মন্ত্রের সঙ্গে ঘুমপাড়ানি গানের অর্থহীন শব্দ যুক্ত করা হয়েছে। স্টালের মতে, এর কারণও সম্ভবত একই।[১] সামবেদে সংগীত, শব্দ, অর্থবোধ ও আধ্যাত্মিকতার একটি প্রথা এক সৃজনশীল সামঞ্জস্যের প্রতীকে নিহিত। গ্রন্থটি হঠাৎ খেয়ালে রচিত হয়নি।[১]

কিভাবে একটি ঋগ্বৈদিক শ্লোকে সুরারোপ করা হয়েছে তার ছবি ধরা পড়ে সামবেদের প্রথম গানটির একাংশে:[১]

সামবেদে উল্লিখিত বাদ্যযন্ত্র বীণা।[২২]

अग्न आ याहि वीतये – ঋগ্বেদ
৬। ১৬। ১০[২৩]
অগ্ন আ যাহি বীতযে

সামবেদের রূপ (জৈমিনীয় পাণ্ডুলিপি):
অ গ্না ই / আ যা হি বা ই / তা যা ই তা যা ই /

অনুবাদ:
হে অগ্নি, যজ্ঞে আগমন করুন।

— সামবেদ ১। ১। ১।, [১]

উপনিষদ্‌

হিন্দুধর্মের দুটি প্রধান উপনিষদ্‌ সামবেদের অন্তর্গত। এদুটি হল ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌কেন উপনিষদ্‌। দুটি উপনিষদ্‌ই উচ্চমানের ছন্দোময় সাংগীতিক গড়নের জন্য বিখ্যাত। তবে ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন শাখার বিবর্তনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এই উপনিষদের মধ্যে অন্তর্হিত দার্শনিক গড়নটি হিন্দুধর্মের বেদান্ত দর্শনের ভিত্তি স্থাপন করেছে।[৭] হিন্দুধর্মের বিভিন্ন শাখার গবেষকদের ‘ভাষ্যে’ এই উপনিষদ্‌ থেকেই সর্বাধিক প্রমাণ দর্শিত হয়েছে। যেমন, আদি শঙ্কর তার বেদান্ত সূত্র ভাষ্য গ্রন্থে ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ থেকে ৮১০টি প্রমাণ উল্লেখ করেছেন। এই সংখ্যাটি অন্যান্য প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত প্রমাণ অপেক্ষা অনেক বেশি।[২৪]

ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌

ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ সামবেদের তাণ্ড্য শাখার অন্তর্গত।[২৫] বৃহদারণ্যক উপনিষদের মতো ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ও এমন একটি গ্রন্থ-সংকলন যার অস্তিত পূর্বে পৃথক গ্রন্থাকারে ছিল। পরবর্তীকালে এক বা একাধিক প্রাচীন ভারতীয় পণ্ডিত কর্তৃক সম্পাদিত হয়ে এটি বৃহত্তর গ্রন্থের আকার গ্রহণ করে।[২৫] ছান্দোগ্য উপনিষদের যথাযথ কালপঞ্জি অজ্ঞাত। তবে এটি সামবেদের নবীনতম স্তরের ধর্মগ্রন্থ। বিভিন্ন মত অনুসারে, ভারতে খ্রিস্টপূর্ব ৮ম থেকে ৬ষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে এটি রচিত হয়।[২৬][২৭]

ছান্দোগ্য উপনিষদের গড়নটি ছন্দোময় ও সাংগীতিক। এই উপনিষদে বিভিন্ন ধারার আনুমানিক ও দার্শনিক বিষয় আলোচিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১ম অধ্যায়ের ৮ম ও ৯ম খণ্ডে তিন ‘উদ্‌গীথজ্ঞ’ ব্যক্তির মধ্যে বিতর্কের বিবরণ রয়েছে। এই বিতর্কের বিষয়বস্তু ‘উদ্‌গীথ’ ও সকল লোকের উৎপত্তি ও আশ্রয়।[২৮]

“এই লোকের আশ্রয় কি?”[২৯]
(প্রবাহণ জৈবলি) বললেন, “আকাশ। স্থাবরজঙ্গমাদি এই নিখিল ভূতবর্গ আকাশ হতেই উৎপন্ন হয় এবং প্রলয়ে আকাশেই লীন হয়; কারণ আকাশই এই সকল লোক হতে মহত্তর; সুতরাং আকাশই পরম প্রতিষ্ঠা।
পূর্বোক্ত এই উত্তরোত্তর উৎকৃষ্টতর উদ্‌গীথ (পরমাত্মারূপে প্রতিপাদিত হলেন); অতএব উক্ত এই উদ্‌গীথ অনন্ত। যিনি শ্রেষ্ঠাতিশ্রেষ্ঠ উদ্‌গীথকে (ওঁ) এইরূপ জানিয়া উপাসনা করেন, তাঁহার উত্তরোত্তর উৎকৃষ্টতর জীবনলাভ হয়, এবং তিনি শ্রেষ্ঠাতিশ্রেষ্ঠ লোকসমূহ জয় করেন।

— ছান্দোগ্য উপনিষদ ১। ৯। ১-১। ৯। ২[২৮]

ম্যাক্স মুলারের মতে, উল্লিখিত এই ‘আকাশ’ শব্দটি পরে বেদান্ত সূত্রের ১। ১। ২২-সংখ্যক সূত্রে ব্রহ্মের বৈদিক ধারণাটির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।[২৯] পল ডুসেনের ব্যাখ্যা অনুসারে, ‘ব্রহ্ম’ শব্দের অর্থ “সমগ্র বিশ্বের চেতনায় উপস্থিত একটি সৃজনশীল তত্ত্ব”।[৩০] ছান্দোগ্য উপনিষদে ধর্ম ও অন্যান্য অনেক বিষয় আলোচিত হয়েছে:

ধর্মের বিভাগ তিনটি—যজ্ঞ, স্বাধ্যায়দান একটি ধর্মবিভাগ; তপস্যা দ্বিতীয় বিভাগ; এবং যাবজ্জীবন আচার্যগৃহে শরীরক্ষয়কারী গুরুগৃহবাসী ব্রহ্মচারীই তৃতীয় বিভাগ। এঁরা সকলেই পুণ্যলোকে গমন করেন। কিন্তু যিনি (প্রণবরূপ ব্রহ্মপ্রতীকে) ব্রহ্মোপাসনা করেন তিনি অমরত্ব প্রাপ্ত হন।

— ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ ২। ২৩। ১[৩১][৩২][৩৩]

কেন উপনিষদ্‌

সামবেদের তলবকার ব্রাহ্মণ শাখার শেষ পর্যায়ে কেন উপনিষদ্‌ নিহিত রয়েছে।[৩৪][৩৫] এই উপনিষদ্‌ আকারে অনেকটাই ছোটো। তবে দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক প্রশ্নগুলির বিচারের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব ছান্দোগ্য উপনিষদেরই মতো। উদাহরণস্বরূপ, কেন উপনিষদের চতুর্থ খণ্ডে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক জীবের অন্তরে আত্মজ্ঞানের জন্য আধ্যাত্মিক জ্ঞানের পিপাসা থাকে।[৩৬] এই আত্ম-ব্রহ্মজ্ঞান হল ‘তদ্বনম্‌’ বা তুরীয় আনন্দ।[৩৭] কেন উপনিষদের শেষ পংক্তিগুলিতে বলা হয়েছে, নৈতিক জীবন আত্মজ্ঞান ও আত্মব্রহ্মজ্ঞানের ভিত্তিস্বরূপ।

তপস্যা,[৩৮] দম,[৩৯] কর্ম – উক্ত উপনিষদের পাদসমূহ, বেদসমূহ তাঁর বিভিন্ন অঙ্গ, সত্য তাঁর নিবাসস্থল।

— কেন উপনিষদ্‌ ৪। ৮ (পংক্তি ৩৩)[৪০]

রচনাকাল ও ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ

মাইকেল উইটজেল বলেছেন, সামবেদ ও অন্যান্য বৈদিক গ্রন্থের কোনো সঠিক রচনাকাল নির্ধারন করা সম্ভব নয়।[৪১] তার মতে, সামবেদ সংহিতার রচিত হয়েছিল ঋগ্বেদের ঠিক পরেই। সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ থেকে ১০০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে এই অংশ রচিত হয়। সেই হিসেবে এই গ্রন্থ অথর্ববেদযজুর্বেদের সমসাময়িক।[৪১]

সামবেদ পাঠের প্রায় ১২টি ধরন রয়েছে। যে তিনটি সংস্করণের অস্তিত্ব এখনও রয়েছে, তার মধ্যে জৈমিনীয় ধারাটি সামবেদ পাঠের প্রাচীনতম অস্তিত্বমান ধারাটিকে রক্ষা করে চলেছে।[১৩]

পাণ্ডুলিপি ও অনুবাদ

সামবেদের কৌঠুম শাখার সংহিতা, ব্রাহ্মণ, শ্রৌতসূত্র ও অতিরিক্ত সূত্রগুলি মূলত বি. আর. শর্মা কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। জৈমিনীয় শাখার কিছু অংশ এখনও অপ্রকাশিত।[৪২] ডব্লিউ. ক্যালান্ড সামবেদ সংহিতার প্রথম অংশের একটি সংস্করণ প্রকাশ করেন।[৪৩] রঘু বীর ও লোকেশ চন্দ্র সামবেদ ব্রাহ্মণের কিছু অংশ প্রকাশ করেন।[৪৪] তারা সামবেদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্বল্প-পরিচিত উপনিষদগুলি[৪৫] প্রকাশ করলেও শ্রৌতসূত্রের সামান্য কিছু অংশ মাত্র প্রকাশ করেন। গীতিগ্রন্থগুলি এখনও অপ্রকাশিতই রয়ে গিয়েছে।[৪৬]

১৮৪৮ সালে থিওডোর বেনফি সামবেদের একটি জার্মান সংস্করণ প্রকাশ করেন।[৪৭] সত্যব্রত সামাশ্রমী ১৮৭৩ সালে একটি সম্পাদিত সংস্কৃত সংস্করণ প্রকাশ করেন।[৪৮] ১৮৯৩ সালে র্যা লফ গ্রিফিথ সামবেদের একটি ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন।[৪৯]

সামবেদ ঋগ্বেদের মতো গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি। কারণ, সাংগীতিক সৌন্দর্য ও সৃজনশীলতা এবং ৭৫টি শ্লোক ছাড়া এই গ্রন্থ মূলত ঋগ্বেদ থেকেই গৃহীত। সেই কারণে ঋগ্বেদ পাঠই যথেষ্ট মনে করা হয়।[৫০]

সাংস্কৃতিক প্রভাব

উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারতে প্রচলিত আমাদের সংগীত প্রথা [ভারতীয়] সামবেদে এর উৎসটিকে স্মরণ করে এবং মর্যাদা দেয়... [সামবেদ হল] ঋগ্বেদের সাংগীতিক সংস্করণ। - ভি. রাঘবন[ক]

গাই বেকের মতে, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত ও নৃত্যের মূল সামবেদ, উপনিষদ্‌ ও আগম শাস্ত্রের ধ্বনি ও সংগীত-সংক্রান্ত দিক্‌নির্দেশিকার মতে নিহিত।[৮] গান ও মন্ত্রপাঠ ছাড়াও সামবেদে বাদ্যযন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে। বাদ্যযন্ত্রগুলি বাজানোর নিয়ম ও নির্দেশিকা গন্ধর্ববেদ নামে পৃথক একটি সংকলনে পাওয়া যায়। এটি সামবেদের সঙ্গে যুক্ত একটি উপবেদ।[৮][৫১] সামবেদে বর্ণিত মন্ত্রপাঠের গড়ন ও তত্ত্ব ভারতীয় শাস্ত্রীয় শিল্পকলার গঠনগত আদর্শগুলিকে প্রভাবিত করেছে। ভারতীয় সংগীতের ইতিহাসে সামবেদের অবদান সংগীতজ্ঞরা বহুলভাবে স্বীকার করে থাকেন।[৮][৫২]

আরও দেখুন

পাদটীকা

  1. Our music tradition [Indian] in the North as well as in the South, remembers and cherishes its origin in the Samaveda... the musical version of the Rigveda.[৮]

তথ্যসূত্র

  1. Frits Staal (2009), Discovering the Vedas: Origins, Mantras, Rituals, Insights, Penguin, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৪৩০৯৯৮৬৪, pages 107-112
  2. সামবেদ-সংহিতা, অনুবাদ ও সম্পাদনা: পরিতোষ ঠাকুর, হরফ প্রকাশনী, কলকাতা, গ্রন্থকারের নিবেদন, পৃ. ঙ
  3. Michael Witzel (1997), "The Development of the Vedic Canon and its Schools : The Social and Political Milieu" in Inside the Texts, Beyond the Texts: New Approaches to the Study of the Vedas, Harvard University Press, pages = 269-270
  4. Griffith, R. T. H. The Sāmaveda Saṃhitā, আইএসবিএন ৯৭৮-১৪১৯১২৫০৯৬, page vi
  5. James Hastings, টেমপ্লেট:Google book, Vol. 7, Harvard Divinity School, TT Clark, pages 51-56
  6. Michael Witzel The Development of the Vedic Canon and its Schools : The Social and Political Milieu Harvard University
  7. Max Muller, Chandogya Upanishad, The Upanishads, Part I, Oxford University Press, pages LXXXVI-LXXXIX, 1-144 with footnotes
  8. Guy Beck (1993), Sonic Theology: Hinduism and Sacred Sound, University of South Carolina Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০৮৭২৪৯৮৫৫৬, pages 107-108
  9. ‘বেদানাং সামবেদোঽস্মি’, ভগবদ্গীতা, অনুবাদ: স্বামী জগদীশ্বরানন্দ, সম্পাদনা: স্বামী জগদানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৬১ সংস্করণ, বিভূতিযোগ, শ্লোক ২২
  10. John Stevenson, গুগল বইয়ে Translation of the Sanhita of the Sama Veda, পৃ. PR12,, page XII
  11. Frits Staal (2009), Discovering the Vedas: Origins, Mantras, Rituals, Insights, Penguin, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৪৩০৯৯৮৬৪, page xvi-xvii, Quote: "The Vedas are an Oral Tradition and that applies especially to two of the four: the Veda of the Verse (Rigveda) and the Veda of Chants (Samaveda). (...) The Vedas are not a religion in any of the many senses of that widespread term. They have always been regarded as storehouses of knowledge, that is: veda."
  12. Frits Staal (2009), Discovering the Vedas: Origins, Mantras, Rituals, Insights, Penguin, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৪৩০৯৯৮৬৪, pages 4-5
  13. Bruno Nettl, Ruth M. Stone, James Porter and Timothy Rice (1999), The Garland Encyclopedia of World Music, Routledge, আইএসবিএন ৯৭৮-০৮২৪০৪৯৪৬১, pages 242-245
  14. KR Norman (1979), Sāmavedic Chant by Wayne Howard (Book Review), Modern Asian Studies, Vol. 13, No. 3, page 524;
    Wayne Howard (1977), Samavedic Chant, Yale University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০৩০০০১৯৫৬৮
  15. Guy Beck (1993), Sonic Theology: Hinduism and Sacred Sound, University of South Carolina Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০৮৭২৪৯৮৫৫৬, page 230 note 85
  16. Frits Staal (2009), Discovering the Vedas: Origins, Mantras, Rituals, Insights, Penguin, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৪৩০৯৯৮৬৪, pages 80, 74-81
  17. Axel Michaels (2004), Hinduism: Past and Present, Princeton University Press, আইএসবিএন ০-৬৯১-০৮৯৫৩-১, page 51
  18. Michael Witzel (2003), "Vedas and Upaniṣads", in The Blackwell Companion to Hinduism (Editor: Gavin Flood), Blackwell, আইএসবিএন ০-৬৩১২১৫৩৫২, page 76
  19. For 1875 total verses, see numbering given in Ralph T. H. Griffith. Griffith's introduction mentions the recension history for his text. Repetitions may be found by consulting the cross-index in Griffith pp. 491-99.
  20. R Simon and JM van der Hoogt, Studies on the Samaveda North Holland Publishing Company, pages 47-54, 61-67
  21. Frits Staal (1996), Ritual and Mantras, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪১২৭, pages 209-221
  22. Guy Beck (1993), Sonic Theology: Hinduism and Sacred Sound, University of South Carolina Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০৮৭২৪৯৮৫৫৬, pages 107-109
  23. ६.१६ ॥१०॥ Wikisource, Rigveda 6.16.10;
    Sanskrit:
    अग्न आ याहि वीतये गृणानो हव्यदातये ।
    नि होता सत्सि बर्हिषि ॥१०॥
  24. Paul Deussen, The System of Vedanta, আইএসবিএন ৯৭৮-১৪৩২৫০৪৯৪৬, pages 30-31
  25. Patrick Olivelle (2014), The Early Upanishads, Oxford University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৯৫১২৪৩৫৪, page 166-169
  26. Patrick Olivelle (2014), The Early Upanishads, Oxford University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৯৫১২৪৩৫৪, page 12-13
  27. Stephen Phillips (2009), Yoga, Karma, and Rebirth: A Brief History and Philosophy, Columbia University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০২৩১১৪৪৮৫৮, Chapter 1
  28. Robert Hume, Chandogya Upanishad 1.8.7 - 1.8.8, The Thirteen Principal Upanishads, Oxford University Press, pages 185-186
  29. Max Muller, Chandogya Upanishad 1.9.1, The Upanishads, Part I, Oxford University Press, page 17 with footnote 1
  30. Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Volume 1, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৮৪, page 91
  31. Chandogya Upanishad with Shankara Bhashya Ganganath Jha (Translator), pages 103-116
  32. Max Muller, Chandogya Upanishad Twenty Third Khanda, The Upanishads, Part I, Oxford University Press, page 35 with footnote
  33. Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Volume 1, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৮৪, pages 97-98 with preface and footnotes
  34. Johnston, Charles (1920-1931), The Mukhya Upanishads, Kshetra Books, আইএসবিএন ৯৭৮১৪৯৫৯৪৬৫৩০ (Reprinted in 2014)
  35. Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Volume 1, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৮৪, pages 207-213
  36. Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Volume 1, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৮৪, page 208
  37. Kena Upanishad Mantra 6, G Prasadji (Translator), pages 32-33
  38. Meditation, Penance, Inner heat, See: WO Kaelber (1976), "Tapas", Birth, and Spiritual Rebirth in the Veda, History of Religions, 15(4), pages 343-386
  39. Self-restraint, see: M Heim (2005), Differentiations in Hindu ethics, in William Schweiker (Editor), The Blackwell companion to religious ethics, আইএসবিএন ০৬৩১২১৬৩৪০, pages 341-354
  40. Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Volume 1, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৮৪, pages 211-213
  41. Michael Witzel (2003), "Vedas and Upaniṣads", in The Blackwell Companion to Hinduism (Editor: Gavin Flood), Blackwell, আইএসবিএন ০-৬৩১২১৫৩৫২, pages 68-70
  42. A. Parpola. The literature and study of the Jaiminīya Sāmaveda. In retrospect and prospect. Studia Orientalia XLIII:6. Helsinki 1973
  43. W. Caland, Die Jaiminīya-Saṃhitā mit einer Einleitung über die Sāmaveda-literatur. Breslau 1907
  44. Raghu Vira and Lokesh Chandra. 1954. Jaiminīya-Brāhmaṇa of the Sāmaveda. (Sarasvati-Vihara Series 31.) Nagpur. 2nd revised ed., Delhi 1986
  45. H. Oertel. The Jaiminīya or Talavakāra Upaniṣad Brāhmaṇa. Text, translation, and notes. JAOS 16,1895, 79–260
  46. A. Parpola. The decipherment of the Samavedic notation of the Jaiminīyas. Finnish Oriental Society 1988
  47. Theodor Benfey, Die Hymnen des Samaveda FA Brockhaus, Leipzig
  48. Satyavrata Samashrami, গুগল বইয়ে Sama Veda Sanhita
  49. Griffith, Ralph T. H. The Sāmaveda Saṃhitā. Text, Translation, Commentary & Notes in English. Translated by Ralph T. H. Griffith. First published 1893; Revised and enlarged edition, enlarged by Nag Sharan Singh and Surendra Pratap, 1991 (Nag Publishers: Delhi, 1991) আইএসবিএন ৮১-৭০৮১-২৪৪-৫; This edition provides the text in Devanagari with full metrical marks needed for chanting.
  50. SW Jamison and M Witzel (1992), Vedic Hinduism, Harvard University, page 8
  51. H Falk (1992), Samaveda und Gandharva (German language), in Ritual, State, and History in South Asia (Editors: Heesterman et al), BRILL, আইএসবিএন ৯৭৮-৯০০৪০৯৪৬৭৩, pages 141-158
  52. SS Janaki (1985), The role of Sanskrit in the Development of Indian Music, Journal of the Music Academy, Vol. 56, pages 67, 66-97

বহিঃসংযোগ