রাজারহাট উপজেলা
| রাজারহাট | |
|---|---|
| উপজেলা | |
মানচিত্রে রাজারহাট উপজেলা | |
| স্থানাঙ্ক: ২৫°৪৬′৪৮.০০০″ উত্তর ৮৯°৩৩′৩৬.০০০″ পূর্ব / ২৫.৭৮০০০০০০° উত্তর ৮৯.৫৬০০০০০০° পূর্ব | |
| দেশ | বাংলাদেশ |
| বিভাগ | রংপুর বিভাগ |
| জেলা | কুড়িগ্রাম জেলা |
| আয়তন | |
| • মোট | ১৬৫.৫৯ বর্গকিমি (৬৩.৯৩ বর্গমাইল) |
| জনসংখ্যা (২০১১) | |
| • মোট | ১,৯২,৬৮৯[১] |
| সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
| পোস্ট কোড | ৫৬১০ |
| প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫৫ ৪৯ ৭৭ |
| ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
রাজারহাট উপজেলা বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। রাজারহাটের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা,ধরলা সহ অনেক নদী।
অবস্থান ও আয়তন
[সম্পাদনা]এই উপজেলার মোট আয়তন ১৬৫.৫৯ বর্গ কিলোমিটার।[২]এই উপজেলাটি জেলা সদর থেকে পশ্চিম দিকে ২৫’৩৮-২৫’৫৩ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯’২৭-৮৯’৩৮ পুর্ব দ্রাঘিমা অংশের মধ্যে অবস্থিত। এ উপজেলার উত্তরে ফুলবাড়ী উপজেলা ও লালমনিরহাট সদর উপজেলা, দক্ষিণে উলিপুর উপজেলা ও রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলা, পূর্বে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা, পশ্চিমে লালমনিরহাট সদর উপজেলা ও রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলা।
প্রশাসনিক এলাকা
[সম্পাদনা]রাজারহাট উপজেলা মোট ৭টি ইউনিয়ন এগুলো হলো :
ইতিহাস ও নামকরণ
[সম্পাদনা]রাজারহাটের নাম কেন রাজারহাট হলো, তা নিয়ে ব্যাপক মতভেদথাকা সত্বেও কেউই সঠিক কারণটি বের করতে পারেননি।১২শ শতকের প্রথম দিকে রংপুরে সেন বংশের শাসন শুরু হয় । সেন বংশের সর্বশেষ রাজা ছিলেন নীলধবজ চন্দ্র সেন ও নীলম্বর সেন । রাজা নীলাম্বর সেন ছিলেন খুব শক্তিশালী। তিনি অনেক যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন। তার রাজধানী ছিল চতরা নামক স্থানে। এ চতরা বর্তমানে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে অবস্থিত। এখানে ছিল শক্তিশালী রাজা নীলাম্বরের দুর্গ। [৩]১৪৯৮খ্রিষ্টাব্দে গৌড়ের সুলতান হোসেন শাহ আক্রমণ করেন নীলম্বরের রাজ্য। তিস্তানদীর পাড়ে উভয় পক্ষের তুমুল যুদ্ধ হয়েছিল। এ যুদ্ধে রাজা নীলাম্বর পরাজিত হয়ে চতুর্ভুজ দূর্গে অবস্থান নেন,চতুর্ভুজ দূর্গ ছিল চারদিক নদী বেষ্টিত। সেনই নদী,সাতবোন নদী এবং ধরলার মোহনায় অবস্থিত। নীলম্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন সুলতান হোসেন শাহের পুত্র নাসিরউদ্দিন আবুল মোজাফফর নশরত শাহ্। স্থানীয় লোকজন রাজার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য এ এলাকার নাম করণ করেছেন রাজারহাট। পূর্বে রাজারহাট ছিল একটি ইউনিয়ন মাত্র। তদানিন্তন সময়ে পুলিশ প্রশাসনের প্রয়োজন হেতু পাকিস্তান সরকার এখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করে। সত্তরের আন্দোলনের সময়ে সেটি উঠিয়ে দেয়া হয়।পরে উলিপুর থানার অধীনস্থ ৪টি ইউনিয়ন ও লালমনিরহাট থানার ৩টি ইউনিয়নসহ মোট ৭টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে রাজারহাট থানা ঘোষণা হয়। পরবর্তী সময়ে রাজারহাট উপজেলা ঘোষণা হয় এবং ১৯৮৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রাজারহাট উপজেলা কার্যক্রম শুরু হয় ও একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়।[৪]
জনসংখ্যার উপাত্ত
[সম্পাদনা]- জনসংখ্যা : মোট- ১,৯২,৬৮৯ জন । পুরুষ- ১,০০২,২৪ জন, মহিলা- ৯০,৪৬৫ জন ।
- জনসংখ্যার ঘনত্ব : ৯৪৫জন/বর্গ কি.মি.।
- ভোটার সংখ্যা : মোট- ১,০৪,২২৮ জন । পুরুষ- ৫২,০১৫ জন, মহিলা- ৫২,২১৩ জন ।
ভাষা ও ভাষাগত বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]বর্তমান কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের(বিভাগ) একটি উপজেলা। উপজেলা হিসেবে রাজারহাটে আত্মপ্রকাশ অধুনা হলেও এ অঞ্চলের ভাষার ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন ৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে রচিত চর্যাপদ। এর ভাষা-ভঙ্গি বিশ্লেষণে বলা হয়ে থাকে যে, বাংলা ভাষার উৎপত্তি ঘটেছে গৌড়ীয় প্রাকৃত থেকে গৌড়ীয় অপভ্রংশের মধ্যদিয়ে বঙ্গ-কামরূপী আদি স্তরহতে। চর্যাপদের ভাষায় রাজারহাট উপজেলার ভাষা-ভঙ্গির অনেক নিদর্শন লক্ষ্য করা যায়। ঘিন, আইস, পসরি প্রভৃতিসহ চর্যাপদে ব্যবহৃত আরও অনেক শব্দ কুড়িগ্রাম জেলার লোকসমাজে এখনও প্রচলিত রয়েছে।
রাজারহাট উপজেলার লোকসমাজে প্রচলিত ভাষার লক্ষণীয় কিছু বিশেষ দিক হলো-
- ক্রিয়াপদের আগে‘না’এর ব্যবহার। যেমন ; না খাওঁ (খাইনা), না যাওঁ (যাইনা)।
- ‘র’বর্ণের স্থলে‘অ’বর্ণ ব্যবহারের প্রবণতা। যেমন ; অং (রং), অসূণ (রসূণ)।
- ‘ল’বর্ণের স্থলে‘ন’বর্ণ ব্যবহারের প্রবণতা। যেমন ; নাল (লাল), নাউ (লাউ)।
- স্থানের নামের শেষের বর্ণে এ-কার থাকলে তা তুলে দিয়ে শব্দের শেষে‘ত’বর্ণ যুক্তকরণের প্রবণতা। যেমন; মাঠত (মাঠে),ঘাটত (ঘাটে), হাটত (হাটে)।
- ভবিষ্যতে স্বয়ং কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে ক্রিয়াপদের শেষে‘ম’বর্ণ ব্যবহারের প্রবণতা। যেমন ; যাইম, খাইম, দেখিম।
- সম্বোধনের ক্ষেত্রে ব্যবহুত কতিপয় শব্দের উদাহরণ হচ্ছে- মুঁই (আমি), হামরা (আমরা), তুঁই (তুমি), তোমরাগুলা (তোমরা), অঁয় (সে), ওমরা/ওমরাগুলা (তারা)।[৫]
সাহিত্য ও সংস্কৃতি
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের অন্য সব অঞ্চলের মত রাজারহাটেরও ছিল নিজস্ব সংস্কৃতি । লোকসমাজে প্রচলিত ছড়া, ছেল্লক (ধাঁধাঁ বা ছিল্কা), প্রবাদ-প্রবচন,গীত, মন্ত্র, লোকসঙ্গীত প্রভৃতি লোক সাহিত্যের মূল্যবান উপাদান। এগুলোর মধ্যদিয়ে আবহমানকাল ধরে চলে আসা এ অঞ্চলের মানুষের রুচি, বিশ্বাস, আচার-আচরণ, সংস্কার, রসবোধ, সুখ-দুঃখ, উপদেশ, নিষেধ ইত্যাদির পরিচয় ফুটে ওঠে। যদিও আগের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিক আসরগুলো দেখা যায়না ।
- লোকসঙ্গীত:
লোকসঙ্গীতের মধ্যে ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি এবং বাউল সঙ্গীতই প্রধান। এ ছাড়া লোকগান,কবিগান,পালাগান অনতম ।
এ ছাড়া মায়েদের ঘুমপাড়ানি গান, প্রবাদ প্রবচন ও লোককথা এই অঞ্চলের সমাজের প্রতিরূপ ।[৬]
শিক্ষা
[সম্পাদনা]- শিক্ষার হার: ৫৭%
- কলেজ: ১৪টি ।[৭]
- উচ্চবিদ্যালয়: ৩২টি ।[৮]
- মাদ্রাসা: ২৩টি ।[৯]
- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ৪৯টি ।[১০]
- বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ৬৭টি ।[১১]
অর্থনীতি
[সম্পাদনা]উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
[সম্পাদনা]- ভবানী পাঠক (১৮শ শতাব্দী) ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা।
- রাউফুন বসুনীয়া (১৯৬১-১৯৬৫) সৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ছাত্রনেতা।
- বাদল খন্দকার (১৯৬০-বর্তমান) বাংলা চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক।
- কছিম উদ্দিন (মৃত্যু: ২২ আগস্ট ১৯৯২) ভাওয়াইয়া গানের প্রখ্যাত শিল্পী। ভাওয়াইয়া গানের যুবরাজ হিসাবেও পরিচিত।
- তুহিন ওয়াদুদ (১৯৭৮-বর্তমান) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নদী ও পরিবেশ বিষয়ক সংগঠক, গবেষক ও লেখক।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান
[সম্পাদনা]- মসজিদ: ৩২০টি ।
- মন্দির: ৫৭টি ।
- পূজা মন্ডপ: ১১৫ টি ।
- ঈদগাহ: ১৩ টি।
বিবিধ
[সম্পাদনা]- সরকারী হাসপাতাল: ০১ টি।
- স্বাস্থ্য কেন্দ্র/ক্লিনিক: ০৬ টি।
- পোষ্ট অফিস: ০৮ টি (উপজেলাসহ)।
- নদ-নদী: ০২ টি (তিস্তা ও ধরলা) নদী।
- হাটবাজার: ১৬ টি।
- ব্যাংক: ০৫ টি।
দর্শনীয় স্থান
[সম্পাদনা]- ঠাঁটমারি বধ্যভূমি
- চান্দামারী মসজিদ
- মেকুরটারী মসজিদ
- ব্যাপারী পাড়া শাহী মসজিদ
- কোটেশ্বর শিব মন্দির
- চতুর্ভুজ শিব মন্দির
- পাঙ্গা জমিদার বাড়ি
- সিন্দুরমতি দিঘি
- চাকির পশার বিল
- ঘড়িয়ালডাঙ্গা জমিদার বাড়ি
- ঘড়িয়াল ডাঙ্গা বিল
- আমতলি সর্বজনীন দুর্গামন্দির
- অচিন গাছ
- বুড়িরহাট বাঁধ
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "এক নজরে রাজারহাট উপজেলা"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। জুন ২০১৪। ১৬ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ জেলা উন্নয়ন পরিক্রমা। ২০০১-২০০৫, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, তথ্য মন্ত্রণালয়, ডিসেম্বর ২০০৫
- ↑ "চতরা ইউনিয়ন"। http (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "রাজারহাট উপজেলার পটভূমি"। ১৬ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "রাজারহাট উপজেলা ভাষা ও সংস্কৃতি"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৬ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "রাজারহাট উপজেলার ভাষা ও সংষ্কৃতি"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৬ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "রাজারহাট উপজেলা কলেজের তালিকা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "রাজারহাট উপজেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তালিকা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "রাজারহাট উপজেলা মাদ্রাসার তালিকা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "রাজারহাট উপজেলা প্রথমিক বিদ্যালয়ের তালিকা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৬ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "রাজারহাট রাজারহাট উপজেলা প্রথমিক বিদ্যালয়ের তালিকা তালিকা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৬ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৪।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]| এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |