আজিজুল হক (শায়খুল হাদিস)

এটি একটি ভালো নিবন্ধ। আরও তথ্যের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(আজিজুল হক (পণ্ডিত) থেকে পুনর্নির্দেশিত)

শায়খুল হাদিস
আজিজুল হক
১ম আমীর, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
কাজের মেয়াদ
৮ ডিসেম্বর ১৯৮৯ – ৮ আগস্ট ২০১২
উত্তরসূরীহাবিবুর রহমান
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মআয়াতুল হক
জানুয়ারি ১৯১৯
ভিরিচ খাঁ, লৌহজং, বিক্রমপুর, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা
মৃত্যু৮ আগস্ট ২০১২(2012-08-08) (বয়স ৯২–৯৩)[১]
সমাধিস্থলকেরানীগঞ্জ
জাতীয়তা
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
অন্যান্য
রাজনৈতিক দল
দাম্পত্য সঙ্গী
সন্তান৫ ছেলে ও ৮ মেয়ে; মাহফুজুল হকমামুনুল হক সহ[২]
প্রাক্তন শিক্ষার্থী
ব্যক্তিগত তথ্য
পিতামাতা
  • এরশাদ আলী (পিতা)
  • হাজেরা বেগম (মাতা)
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
আন্দোলনদেওবন্দি
প্রধান আগ্রহ
উল্লেখযোগ্য কাজ
শিক্ষক
আত্মীয়আমিনুল ইসলাম (শ্যালক)
ঊর্ধ্বতন পদ
সাহিত্যকর্ম

আজিজুল হক (শায়খুল হাদিস নামে সমধিক পরিচিত[৩]; ১৯১৯ – ৮ আগস্ট ২০১২ খ্রিস্টাব্দ; ১৩৩৭ – ১৯ রমজান ১৪৩৩ হিজরি) ছিলেন একজন বাংলাদেশি ইসলামি পণ্ডিত ও রাজনীতিবিদ। তিনি একাধারে হাদিসশাস্ত্র বিশারদ, অনুবাদক, শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ, সংগঠক, বাগ্মী ও কবি ছিলেন।[৪] তিনি দীর্ঘ ৬৫ বছর হাদিসের পাঠদান করেন এবং প্রথম অনুবাদক হিসেবে সহীহ বুখারীর বঙ্গানুবাদ করেন। হাদিসশাস্ত্রে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য উপমহাদেশের দ্বিতীয় আলেম হিসেবে তিনি ‘শায়খুল হাদিস’ উপাধি পেয়েছিলেন।[৫] তার কাছে শুধুমাত্র সহীহ বুখারী পড়েছেন এরকম ছাত্রের সংখ্যা ৫ সহস্রাধিক।[৬] ধারণা করা হয়, তিনি ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব।[৭]

ছাত্রজীবন থেকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হন। তিনি তৎকালীন বাংলাদেশের আলেমদের একমাত্র রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর ছিলেন। মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর তিনি তার সমস্ত কর্মকাণ্ডের প্রধান মুখপাত্র ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের জ্যৈষ্ঠ নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। হাফেজ্জীর মৃত্যুর পর তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯৩ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদে তিনি অযোধ্যা অভিমুখে ৫ লক্ষ মানুষের এক ঐতিহাসিক লংমার্চে নেতৃত্ব দেন, যা বাংলাদেশের ইসলামি আন্দোলনের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ঘটনা।[৭] এছাড়াও তিনি ফতোয়া বিরোধী রায়, কওমি মাদ্রাসার সরকারি স্বীকৃতি আদায় সহ বহু আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং কারাবরণ করেন।[২] তিনি প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা খুবই কঠিন মনে করতেন। তার দল বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিলেও তিনি নিজে কোনোদিন প্রার্থী হননি। তার মতে খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থাই হচ্ছে মানুষের মুক্তি ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার একমাত্র পন্থা।[১] শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন।[৭] বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাসের এক ফাঁসকৃত তারবার্তায় বলা হয়, শেখ হাসিনা শৈশবে খুব শ্রদ্ধার সাথে তার বই পড়তেন এবং ভক্ত ছিলেন।[৮]

তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম সাধারণ সম্পাদক। তার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, ঢাকা। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন মাদ্রাসাঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে ৩ বছর হাদিসশাস্ত্রে পাঠদান করেছেন। তিনি আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শরিয়া বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। জাতীয় ঈদগাহেও কয়েক বছর ইমামতি করেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত পত্রিকার নাম মাসিক রাহমানী পয়গামদিওয়ানুল আজিজ তার একটি কাব্য সংকলন।

প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা[সম্পাদনা]

আজিজুল হক ১৯১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ব্রিটিশ ভারতের ঢাকা জেলার মুন্সীগঞ্জ মহকুমার বিক্রমপুর পরগনাস্ত লৌহজং থানার ভিরিচ খাঁ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[৯] শৈশবে তার নাম রাখা হয় আয়াতুল হক। তার পিতার নাম এরশাদ আলী ও মাতা হাজেরা বেগম। পাঁচ বছর বয়সে মাতৃহারা হওয়ায় তিনি মাতুতালয়ে পালিত হন। তিন ভাই ও এক বােনের মাঝে তিনি কনিষ্ঠ।[১০] পাঁচ বছর বয়সে গ্রামের মসজিদের মক্তবে তার শিক্ষাজীবনের সূচনা। মসজিদের ইমাম আব্দুল মজিদের কাছে তিনি সকালবেলা কুরআন এবং বিকালবেলা মাতৃভাষা বাংলা রপ্ত করার জন্য আদর্শ লিপি পড়তেন।[১১] সাত বছর বয়সে তার পিতা তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসায় শামসুল হক ফরিদপুরীর নিকট ইসলাম শিক্ষার জন্য নিয়ে যান, তখন ফরিদপুরী তার নাম আজিজুল হক রাখেন।[১০] এই নামেই তিনি সর্বাধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম, বড় কাটরায় চলে আসেন। এই মাদ্রাসায় মিযান জামাতে (মাধ্যমিক শ্রেণি) ভর্তি হয়ে তিনি দাওরায়ে হাদিস (ইসলামিক শিক্ষায় স্নাতকোত্তর সমমান) পর্যন্ত অধ্যয়ন করেছিলেন। মাঝখানে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দ যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কিন্তু শিক্ষক জাফর আহমদ উসমানির নির্দেশে তিনি যাত্রা বিরতি করেন।[১২] দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করে ১৯৪২ সালে তিনি জামিয়া ইসলামিয়া তালিমুদ্দিন ডাভেলে চলে যান এবং শাব্বির আহমদ উসমানির নিকট সহীহ বুখারী পড়েন।[১৩]

ভারতে যাওয়ার সময় সেখানখার শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে ফরিদপুরী তাকে একটি চিঠি লিখে দিয়েছিলেন। চিঠির বিষয়বস্তু তার সম্পর্কে হলেও তিনি এ ব্যাপারে অবগত ছিলেন না। ডাভেল যাওয়ার পথে তিনি মাজাহির উলুম সাহারানপুরে যাত্রা বিরতি করেন। ডাভেলের তালিমুদ্দিন মাদ্রাসা রমজানের পর খুলবে বিধায় তিনি মাজাহির উলুমে এক মাস সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন। তখন মাজাহির উলুমের একজন প্রসিদ্ধ শিক্ষক ছিলেন শাহ আসাদুল্লাহ সাহারানপুরী। আসাদুল্লাহকে তিনি ফরিদপুরীর দেওয়া চিঠি হস্তগত করেন। চিঠি পড়ে তিনি ছাত্র আজিজুল হক সম্পর্কে অবগত হন এবং একমাস তার সান্নিধ্যে রাখেন। এরই মধ্যে আসাদুল্লাহর সাথে তার ছাত্র—শিক্ষক সম্পর্ক গড়ে উঠে। আসাদুল্লাহ তাকে হাদিসে মুসালসালাতের (এক প্রকার হাদিস) পাঠ দিয়েছিলেন।[১৪]

অধ্যয়নের সময় শাব্বির আহমদ উসমানির ইচ্ছায় তিনি তার হাদিসের পাঠসমূহ লিপিবদ্ধ করেন। এই পাঠসমূহের পুনঃনিরীক্ষণ ও আরও একটি অনুলিপি তৈরি করার জন্য তিনি উসমানির বাড়িতে আরও এক বছর ছিলেন। উসমানির বাড়ি দারুল উলুম দেওবন্দের কাছে হওয়ায় তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের দাওরায়ে তাফসিরে (উচ্চতর তাফসির শিক্ষা কোর্স) ভর্তি হয়ে যান। তৎকালীন তাফসির বিভাগের প্রধান ছিলেন ইদ্রিস কান্ধলভি। কান্ধলভি তাকে প্রতিদিন 'মতন' পড়ার জন্য মনোনীত করেন। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে তাফসির চর্চা করেছিলেন কান্ধলভির সংস্পর্শে তা পূর্ণতা লাভ করে। তিনি দাওরায়ে তাফসিরের ছাত্র হলেও সময় পেলে দাওরায়ে হাদিসে ক্লাস করতেন। এভাবে তিনি হুসাইন আহমদ মাদানির পাঠ গ্রহণের সুযােগ লাভ করেন।[১৫]

তার উল্লেখযোগ্য শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন—শাব্বির আহমদ উসমানি, জাফর আহমদ উসমানি, হুসাইন আহমদ মাদানি, শামসুল হক ফরিদপুরী, মুহাম্মদ ইদ্রিস কান্ধলভি, শাহ আসাদুল্লাহ সাহারানপুরী, মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী, রফিক আহমদ কাশ্মীরি, আব্দুল আহাদ কাসেমি, সিরাজুল ইসলাম, আবদুল ওয়াহহাব পীরজী প্রমুখ।[১৬] সুফিবাদে তিনি শামসুল হক ফরিদপুরী, মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী ও মোয়াজ্জেম হোসেনের খলিফা।[১]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৪২ সালে বড় কাটরা মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যােগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়।[১৭] পরবর্তীতে মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী সহ অন্যান্যদের প্রচেষ্টায় ১৯৫২ সালে শামসুল হক ফরিদপুরী জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ প্রতিষ্ঠা করলে তিনিও সেখানে যােগদান করেন। ১৯৫৫ সালে সেখানে সহীহ বুখারীর পাঠদান শুরু করেন।[১৭] ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘসময় ধরে লালবাগ মাদ্রাসায় হাদিসের পাঠ দেওয়ার কারণে তাকে ‘শায়খুল হাদিস’ উপাধি দেওয়া হয়।[১৮]

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কিছু অস্থিরতার কারণে লালবাগ মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকায় সে সময় তিনি জামিয়া ইসলামিয়া মাহমুদিয়া বরিশালে দুই বছর অধ্যাপনা করেন। একই সময়ে জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, ইসলামপুরে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া হাফেজ্জীর প্রতিষ্ঠিত জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়ায় ১৯৮০ সালে দাওরায়ে হাদিস চালু করা হলে সেখানেও সহীহ বুখারী পড়ানাের জন্য শায়খুল হাদিস পদে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে ১৯৮৬ সালে লালবাগ ও নূরিয়া উভয় প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপনা ছেড়ে দিতে হয়। একই বছরে তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরে জামিয়া মোহাম্মদিয়া আরাবিয়া নামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সহীহ বুখারীর পাঠদান আরম্ভ করেন। দুই বছর পর মােহাম্মদপুরের সাত গম্বুজ মসজিদ সংলগ্ন নিজস্ব জমিতে মাদ্রাসা স্থানান্তর করে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া নামে কার্যক্রম চালু করেন। এটি ১৯৮৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তার শিক্ষকতার মূল কেন্দ্র ছিল।[১৯]

বিংশ শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকে পাঠদানের শেষ বিশ বছর ছাত্রদের আগ্রহের প্রেক্ষিতে জামিয়া রাহমানিয়া ছাড়াও কতিপয় প্রতিষ্ঠানে সহীহ বুখারীর পাঠদান করতেন। তার মধ্যে রয়েছে—দারুস সালাম মিরপুর, জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগ, জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া, জামেউল উলুম মিরপুর-১৪, জামিয়া মুহাম্মাদিয়া ইসলামিয়া বনানী, জামিয়া নিজামিয়া দারুল উলুম বেতুয়া, দারুল উলুম দত্তপাড়া মাদ্রাসা, নরসিংদী, জামিয়া কুরআনিয়া মেরাজুল উলুম বৌয়াকুড় নরসিংদী, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মদিনাতুল উলুম ব্যাংক কলোনী সাভার।[১৯]

তিনি ১৯৭৮ সালের এপ্রিলে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং বেফাকের প্রথম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[২০] তিনি আমৃত্যু হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।[২] ১৯৭৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি বিভাগে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করে ৩ বছর সহীহ বুখারীর অধ্যাপনা করেন।[২১] এছাড়াও তিনি লালবাগ শাহী মসজিদ, মালিবাগ শাহী মসজিদ ও আজিমপুর স্টেট জামে মসজিদে খতিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কয়েক বছর জাতীয় ঈদগাহেও ইমামতি করেছেন। তিনি আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শরিয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন[২২] ২০০৬ সালে কওমি মাদ্রাসার সরকারি স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে তিনি ঢাকার মুক্তাঙ্গণে অনশন কর্মসূচি পালন করেন।[২৩]

তার কাছে শুধুমাত্র সহীহ বুখারী পড়েছেন এরকম ছাত্রদের সংখ্যা ৫ সহস্রাধিক।[৬] তার উল্লেখযোগ্য ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন—ফজলুল হক আমিনী, মুফতি মনসুরুল হক, হিফজুর রহমান, আবদুল হাই পাহাড়পুরী, মাহফুজুল হক, মামুনুল হক, দিলাওয়ার হােসাইন, রুহুল আমিন প্রমুখ।[২৪]

জাফর আহমদ উসমানির মাধ্যমে তিনি আমিনুল ইসলামের বড় বােনের সাথে প্রথম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার মৃত্যুর পর তিনি বাগেরহাটের আলেম আজিজুর রহমানের ছােট কন্যাকে বিবাহ করেন। উভয় সংসারে তার ৫ ছেলে ও ৮ মেয়ে সহ মোট ১৩ সন্তান জন্মগ্রহণ করে।[২৫]

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

ছাত্রজীবনে ব্রিটিশ বিরােধী আন্দোলন থেকে তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ব্রিটিশ বিরােধী আন্দোলনের পাশাপাশি মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা করতেন। শামসুল হক ফরিদপুরীর সঙ্গে তিনি বিভিন্ন মঞ্চে বক্তৃতা করেছেন।[২৬] ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দেশের নেতৃবৃন্দ ইসলামের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়লে তিনি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করেন।[২৭] ১৯৬৯ সালে তখনকার নেজামে ইসলাম পার্টির কর্মী হিসেবে তিনি দেশব্যাপী বিভিন্ন জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন।[২৮] ছয় দফা ঘোষিত হওয়ার পর বাংলাদেশের মানুষের অধিকার বিষয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তার দীর্ঘ বৈঠক হয়। সেই সময় শেখ মুজিব তার চিন্তাধারার প্রশংসা করেন।[১] শামসুল হক ফরিদপুরীর শিষ্য হওয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেক ইসলামপন্থী পাকিস্তানের পক্ষে থাকলেও তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়।[১] স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি তৎকালীন বাংলাদেশের আলেম সমাজের একমাত্র রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের আমিরের দায়িত্বে নিয়ােজিত ছিলেন।[২৮][২৯] খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালে মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী রাজনীতিতে আসলে তিনি তার ডান হাত হিসেবে কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমীর এবং দলের সকল কর্মকান্ডে প্রধান মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করেন।[৬][২৮]

১৯৮২ সালে তিনি বিশ্ব মুসলিম শান্তি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হাফেজ্জীর সাথে মধ্যপ্রাচ্য সফর করেন এবং শান্তি মিশনে হাফেজ্জীর প্রধান মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন। ইরান সফরকালে তিনি সেখানকার কেন্দ্রীয় জুমার নামাজে ইমামতির দায়িত্ব পান এবং মুসলিম বিশ্বের শান্তি, ঐক্য, সংহতি ও খেলাফাত প্রতিষ্ঠায় জিহাদের আহ্বান জানিয়ে আরবিতে দীর্ঘ ভাষণ দেন।[৩০] ১৯৮৫ সালে তিনি লন্ডন মুসলিম ইনিস্টিটিউটের দাওয়াতে হাফেজ্জীর সফর সঙ্গী হিসেবে যুক্তরাজ্য গমন করেন এবং সারা বিশ্বের ইসলামি নেতৃবন্দের এক আন্তর্জাতিক মহাসমাবেশে হাফেজ্জীর পক্ষ থেকে ইসলামি খেলাফতের রূপরেখা নিয়ে ভাষণ দেন। লন্ডনের মুসলমানদের বিভিন্ন মসজিদে দাওয়াতে যেয়ে তিনি হাফেজ্জীর পক্ষ থেকে খেলাফত আন্দোলনের আহ্বান জানান ও শাখা গঠন করেন।[৩১] হাফেজ্জীর সাথে তিনি আলেমসমাজকে রাজনীতিতে যুক্ত করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।[২৭] ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের তিনি অন্যতম রূপকার ও মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করেন।[২৮] এসময়ে তিনি সামরিক শাসক এরশাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তােলেন এবং কারাবরণ করেন।[১] ১৯৮৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে যুদ্ধরত আফগান মুজাহিদীনদের প্রবাসী সরকারের আমন্ত্রণে তিনি আফগানিস্তান ভ্রমণ করেন।[৩০] ১৯৮৭ সালে হাফেজ্জীর মৃত্যুর পর ১৯৮৯ সালের ৮ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। আমৃত্যু তিনি এই দলের আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন।[২৮]

১৯৯১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি ১৫টি রাজনৈতিক মূলনীতি ঘোষণা দিয়েছিলেন।[২৮] তিনি ১৯৯১ সালে সমমনা কয়েকটি ইসলামি দলের সমন্বয়ে ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করেন এবং জোটের সভাপতি অধিষ্ঠিত হন। তার নেতৃত্বে ইসলামি ঐক্যজোট ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে ১টি আসনে জয়লাভ করে।[৩২] ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার প্রতিবাদে ১৯৯৩ সালের ২–৪ জানুয়ারি অযোধ্যা অভিমুখে এক ঐতিহাসিক লংমার্চে নেতৃত্ব দেন।[৩২][৩] লংমার্চে পুলিশের গুলিতে দুজন মৃত্যুবরণ করেন। তার এই লংমার্চে ৫ লক্ষ মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল।[৩৩] জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এই লংমার্চ ফলাও করে প্রচার করা হলে তিনি একজন মুজাহিদ আলেম হিসেবে খ্যাতি পান। লংমার্চ পরবর্তী সময়ে মদিনা সফরে গেলে তাকে লংমার্চের নেতা হিসেবে ব্যাপক সংবর্ধনা দেওয়া হয়।[৩৪] আরবের আলেম আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ তাকে ‘আল মুজাহিদুল কাবির’ আখ্যা দেন।[৬] বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পর নরসিংহ রাও বাংলাদেশ ভ্রমণে আসতে চাইলে তিনি নরসিংহকে অবাঞ্ছিত ঘােষণা করেন এবং বিমানবন্দর ঘেরাও কর্মসূচীর ডাক দেন। ফলে তৎকালীন সরকার ৯ এপ্রিল ১৯৯৩ তারিখে তাকে গ্রেফতার করে। এতে বিক্ষোভ হলে একই বছরের ৮ মে তিনি মুক্তি পান।[৩৪] বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পরদিন ৭ ডিসেম্বর ভারতীয় ক্রিকেট দল বাংলাদেশে খেলার সময় তিনি ভারত সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরুপ খেলা চলবে না ঘােষণা দিলে কর্তৃপক্ষ খেলা বন্ধ করতে বাধ্য হয়।[৩২] তিনি গঙ্গার পানি সংকট নিরসনে ১৯৯৪ সালে আন্দোলন গড়ে তােলেন।[৩২]

মুহাম্মদ (স.)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে ১৯৯৬ সালে তার আহ্বানে দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়।[৩৫] ১৯৯৬ সালের ১২ জুন তার নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে ১টি আসন লাভ করে।[৩২] তিনি ১৯৯৯ সালে চার দলীয় জোটে অংশ গ্রহণ করেন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর চার দলীয় ঐক্যজোটের শরিক দল হিসেবে তার নেতৃত্বে ইসলামি ঐক্যজোট সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে ৩টি আসনে বিজয়ী হয়।[৩২] ১ জানুয়ারি ২০০১ তারিখে হাইকোর্ট থেকে ফতোয়া বিরােধী রায় প্রদান করা হলে এর প্রতিবাদে তিনি ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তােলেন। তার নেতৃত্বে ২০০১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পল্টনে বিশাল সমাবেশ করা হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি রংপুর থেকে সমাবেশ করে ফেরার পথে গ্রেফতার হন এবং ৪ মাস পর মুক্তি পান।[১]

চার দলীয় জোট সরকার জয়লাভের পর থেকে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের সাথে জোট সরকারের মতানৈক্য হয়। অভিযোগ ছিল, চার দলীয় জোট হলেও কার্যক্ষেত্রে তা চারদলের সরকার না হয়ে বিএনপি-জামায়াতের সরকারে রূপ নিয়েছে। তিনি জোট থেকে বের হয়ে যান।[১] ২০০৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাথে আওয়ামী লীগের পাঁচ দফা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।[১] এই পাঁচ দফা হল—

  1. পবিত্র কুরআন, সুন্নাহ ও শরিয়তবিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করা হবে না।
  2. কওমি মাদ্রাসা সনদের সরকারি স্বীকৃতি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।
  3. হযরত মুহাম্মদ (স.) সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, তারপর আর কোনো নবী আসবেন না। যারা এর প্রতি বিশ্বাস রাখে না তারা নিজেদের মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে না—এই মর্মে আইন পাস করতে হবে।
  4. সনদপ্রাপ্ত হক্কানি আলেমরা ফতোয়ার অধিকার সংরক্ষণ করবেন। সনদবিহীন কোনো ব্যক্তি ফতোয়া প্রদান করতে পারবেন না—এই মর্মে আইন পাস করতে হবে।
  5. নবী-রাসূল এবং সাহাবায়ে কেরামের কুৎসা রটনা করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

বামপন্থীদের চাপে আওয়ামী লীগ এই সমঝোতা চুক্তি থেকে সরে আসে। তারপর তিনি একলা চলো নীতি অবলম্বন করেন। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে তার দলও দুর্বল হয়ে যায়।[১]

সাহিত্যকর্ম[সম্পাদনা]

ছাত্রজীবন থেকে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। নয় বছর বয়সে ‘আত তিবয়ান লি শরহিল মিযান’ নামে ফার্সি ভাষায় রচিত মিযান মুনশায়েবের একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা করেন।[৩৬] হাদিসশাস্ত্র পড়ার সময় হাদিসের দুই গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ সহীহ বুখারীসুনান আত-তিরমিজীর ব্যাখ্যা লিখেন।[৩৭] সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ হিসেবে ফজলুল বারীর খ্যাতি রয়েছে। তিনি ডাভেলে পড়ার সময় এটি সংকলন করেছিলেন।[৩৭] তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে:[২]

  • মুসলিম ও অন্যান্য হাদিসের ছয়টি কিতাব (২ খণ্ড)
  • পুঁজিবাদ, সমাজবাদ ও ইসলাম
  • মসনবীয়ে রুমি (অনুবাদ)
  • কাদিয়ানি মতবাদের খণ্ডন
  • মুনাজাতে মাকবুল
  • সত্যের পথে সংগ্রাম
  • সফল জীবনের পাথেয়

সহীহ বুখারীর বঙ্গানুবাদ[সম্পাদনা]

ইসলামি সাহিত্যে তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ সহীহ বুখারীর বঙ্গানুবাদ। ৭ খণ্ডে প্রকাশিত এই গ্রন্থটি সর্বস্তরে গ্রহণযােগ্যতা লাভ করেছে। বর্তমানে তা ১০ খণ্ডে প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালে তিনি গ্রন্থটির অনুবাদ সমাপ্ত করেন। তিনি গ্রন্থটির অনুবাদ করতে সময় নিয়েছেন ১৬ বছর। যার অধিকাংশই অনুবাদ করেছেন মুহাম্মদ (স.) এর রওজার পাশে। তিনিই সহীহ বুখারীর প্রথম ও স্বার্থক অনুবাদক।[২][৭][৩৮] তার এই অনুবাদ গ্রন্থকে হাদিস শাস্ত্রের বিশ্বকোষ বলা হয়।[৩৯] এই গ্রন্থ সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের শিশির দাস লিখেন,

কাব্যচর্চা[সম্পাদনা]

তিনি আরবি, উর্দু ও ফার্সি ভাষায় বহু কবিতা রচনা করেছেন। তারানায়ে জামিয়া নামে তিনি একটি কবিতা রচনা করেন যা জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার প্রতি আরবি বছরের শুরুতে সবক অনুষ্ঠানে পাঠ করা হত।[৪০] তিনি আরবি সাহিত্যের মাকামাতে হারীরীর একটি ব্যাখ্যা লিখলেও বর্তমানে তা সংরক্ষিত নেই।[৪১]

তিনি মদিনার বিভিন্ন মাহফিলে কবিতা পাঠের জন্য আমন্ত্রিত হতেন। তিনি প্রায় হজ্জের সফরে একটি করে আরবি কবিতা লিখতেন এবং মুহাম্মদ (স.) এর রওজার পাশে দাঁড়িয়ে আবৃত্তি করতেন। হজ্জ কার্য সম্পাদন করে দেশে এসে স্বীয় প্রতিষ্ঠানের সকল ছাত্র শিক্ষকের সম্মুখে এসব কবিতা পাঠ করে শুনাতেন। উক্ত কবিতাগুলি তিনি তার অনূদিত সহীহ বুখারীর প্রথম ভাগে সংযােজন করে দিয়েছেন।[৪২]

২০০৬ সালে প্রকাশিত মদিনার টানে কাব্যগ্রন্থটি তার উল্লেখযোগ্য রচনা।[৪০] তার আরেকটি কাব্য সংকলন দিওয়ানুল আজিজ[৪৩]

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

তিনি ২০১০ সালের রমজানের আগ পর্যন্ত পাঠদান অব্যাহত রেখেছিলেন, এরপর পাঠদান থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০১২ সালের ৮ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[৪৪] রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন।[৪৫] জাতীয় ঈদগাহে মাহফুজুল হকের ইমামতিতে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। তাকে কেরানীগঞ্জের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।[৪৬]

তার মৃত্যুর মাস খানিক পর, ২৭ সেপ্টেম্বর ‘আন্তর্জাতিক শায়খুল হাদিস কনফারেন্স’ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের উদ্যোগে আয়োজিত এ সম্মেলনে মুহাম্মদ নাঈম, এমাজউদ্দিন আহমদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাদেক হোসেন খোকা, নূর হুসাইন কাসেমী, সৈয়দ রেজাউল করিম সহ দেশ-বিদেশের প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ যোগদান করেন।[৪৭]

২০০৩ সালে তাকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়।[৪৮] এ উপলক্ষে প্রকাশিত হয় ‘৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গণসংবর্ধনা ও দস্তারবন্দী সম্মেলন স্মারক’[৪৯] ২০১২ সালে মাসিক রাহমানী পয়গামের ‘শায়খুল হাদিস স্মরণ সংখ্যা’ প্রকাশিত হয়।[৪৯] ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘হাদিস চর্চায় শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক ও মুফতি আমিমুল এহসানের অবদান’ শীর্ষক একটি এমফিল গবেষণা সম্পন্ন হয়।[৫০] ১৩ নভেম্বর ২০২০ তারিখে ‘বরেণ্যদের চোখে শায়খুল হাদিস’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।[৫১] তার অন্যান্য জীবনীগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ২০১২ সালে প্রকাশিত মুহাম্মদ এহসানুল হকের ‘ছেলে বেলায় শায়খুল হাদিস’ ও বাংলাদেশ কওমি কাউন্সিলের ‘শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর বরকতময় জীবন ও কর্ম’।[৪৯]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

উদ্ধৃতি[সম্পাদনা]

  1. মবনু, সৈয়দ (১১ আগস্ট ২০১২)। "শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (র.)-এর জীবন ও কর্ম"দৈনিক আমার দেশ। ১৩ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. জসিম, মুহাম্মদ আরিফুর রহমান (৮ আগস্ট ২০১৫)। "স্মরণ: শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.)"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ৭ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০২১ 
  3. আহসান, নাজমুল (৯ নভেম্বর ২০১৮)। "হোয়াট রক'স হেফাজত'স বোট?"ডেইলি স্টার। ২ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০২১ 
  4. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ১২৩।
  5. এরশাদ হোসেন আজাদ, মো. আলী (২৮ জুন ২০১৯)। "আলেমদের জীবন ও কর্মের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই!"কালের কণ্ঠ। ২ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০২১ 
  6. হক, মামুনুল (ডিসেম্বর ২০১২)। "শায়খুল হাদিস হযরত মাওলানা আজিজুল হক রাহ. : জীবন ও খেদমতের কয়েকটি দিক"মাসিক আল কাউসার। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০২১ 
  7. হুসাইন, বেলায়েত (২১ মার্চ ২০২১)। "বাংলা ভাষায় বুখারি শরিফের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অনুবাদক শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক"কালের কণ্ঠ। ৭ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০২১ 
  8. "হাসিনা ইন চাইল্ডহুড এডমাইরেড শায়খুল!"ডেইলি স্টার। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১১। ২১ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০২১ 
  9. আলম ২০১৪, পৃ. ২৫৭।
  10. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৫২।
  11. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৫৩।
  12. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৫৫।
  13. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৫৬।
  14. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৫৭।
  15. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৫৮।
  16. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৬০।
  17. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৬৩।
  18. আলম ২০১৪, পৃ. ২৫৮।
  19. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৬৪।
  20. নিজামপুরী ২০১৩, পৃ. ৩০৯।
  21. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৬৫।
  22. "শায়খুল হাদিস আজিজুল হকের ইন্তেকাল"কালের কণ্ঠ। ৯ আগস্ট ২০১২। ৭ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  23. আকবর হোসেন, চৌধুরী; শাকিল, সালমান তারেক (২০২০)। "সরকারি স্বীকৃতির তিন বছর: কতটা বদলেছে কওমি মাদ্রাসা?"বাংলা ট্রিবিউন। ৭ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০২১ 
  24. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৮৭।
  25. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৬১–৬২।
  26. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৮০।
  27. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৭৯।
  28. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৮১।
  29. পরিচিতি ও কর্মসূচি (পিডিএফ)। পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০: জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। ২০১৬। পৃষ্ঠা ৩৮। ১৯ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০২২ 
  30. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৭৬।
  31. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৭৭।
  32. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৮২।
  33. "শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক-এর ইন্তিকাল"দৈনিক সংগ্রাম। ৯ আগস্ট ২০১২। ৭ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০২১ 
  34. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৭৮।
  35. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৮২,১২৭।
  36. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৫৪।
  37. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৬৬।
  38. কাদির, সাঈদ (৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮)। "বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের অবদান"কালের কণ্ঠ। ৯ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  39. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৬৮।
  40. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৭০।
  41. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৭১।
  42. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৭২।
  43. ইকবাল, আমিন (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। "'দিওয়ানুল আজিজ' :নবীপ্রেমের নিদর্শন"দৈনিক সমকাল। ৭ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০২১ 
  44. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ৯২।
  45. "আজিজুল হক মারা গেছেন"ঢাকা মিরর। ৯ আগস্ট ২০১২। ১৫ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ 
  46. "শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের দাফন সম্পন্ন"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ১০ আগস্ট ২০১২। ৭ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  47. "আন্তর্জাতিক শায়খুল হাদীস কনফারেন্সে বক্তারা: দেশে-বিদেশে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলার আহবান"দৈনিক সংগ্রাম। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১২। ৭ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  48. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ১৫২।
  49. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ১৭৪।
  50. ওয়াদুদী ২০১৯, পৃ. ১৩।
  51. "ইসলামের পক্ষে কথা বলতে কাউকে ভয় পাননি শায়খুল হাদিস আজিজুল হক"দৈনিক যুগান্তর। ১৩ নভেম্বর ২০২০। ৭ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০২১ 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]