মাহমুদুল হাসান
মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান | |
---|---|
সভাপতি, আল হাইআতুল উলয়া | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ২০২০ | |
পূর্বসূরী | শাহ আহমদ শফী |
সভাপতি, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ২০২০ | |
পূর্বসূরী | শাহ আহমদ শফী |
আচার্য, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ১৯৮০ | |
পূর্বসূরী | তাজামমুল আলী |
প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, মাসিক আল জামিয়া | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ১৯৮৩ | |
ব্যক্তিগত | |
জন্ম | ৫ জুলাই ১৯৫০ চরখড়িচা, ময়মনসিংহ |
ধর্ম | ইসলাম |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
সন্তান |
|
পিতামাতা |
|
জাতিসত্তা | বাঙালি |
যুগ | আধুনিক |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
প্রধান আগ্রহ | হাদীস, ফিকহ, লেখালেখি, তাসাউফ |
উল্লেখযোগ্য কাজ |
|
যেখানের শিক্ষার্থী | |
স্বাক্ষর | ![]() |
ঊর্ধ্বতন পদ | |
যার দ্বারা প্রভাবিত
| |
যাদের প্রভাবিত করেন
|
দেওবন্দি আন্দোলন |
---|
সিরিজের অংশ |
![]() |
আদর্শ ও প্রভাব
|
প্রতিষ্ঠাতা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব
|
গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান |
তাবলিগের কেন্দ্র (মারকাজ) |
সহযোগী সংস্থা |
অন্যান্য |
আল্লামা মাহমুদুল হাসান (জন্ম: ১৯৫০) একজন বাংলাদেশি ইসলামি পণ্ডিত, হানাফি সুন্নি আলেম, শিক্ষাবিদ, ধর্মীয় লেখক ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব।[১][২] বর্তমানে তিনি কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ শিক্ষাবোর্ড আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি,[৩][৪][৫] জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়ার আচার্য, গুলশান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব,[৬] মাসিক আল জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক[৭] ও মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের আমীর।[৮][৯] তিনি তাফসীরে বুরহানুল কুরআনের রচয়িতা।
জন্ম ও বংশ[সম্পাদনা]
মাহমুদুল হাসান ১৯৫০ সালের ৫ জুলাই ময়মনসিংহ জেলার কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত চরখরিচা নামক গ্ৰামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা গালিমুদ্দিন আহমদ ও মাতা ফাতেমা রমজানী। [১০]
শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]
তিনি নিজ পরিবারেই শিক্ষাজীবনের সূচনা করেন।[১১] চরখরিচা বাজারের ক্বারী আব্দুর রশিদের কাছে কুরআন ও চরখরিচা স্কুলে প্রাথমিক বাংলা শিক্ষা গ্রহণ করেন।
তারপর ময়মনসিংহের জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তার পিতা মারা যান। পরবর্তী বছরের রমজান মাসে তার মা মারা যান। এরপর ময়মসিংহের জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়া মাদ্রাসায় ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যায়ন করেন।[১২]
১৯৬৭ সালে জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগে জালালাইন জামাতে অধ্যায়নকালে মাদ্রাসার মহাপরিচালক শামসুল হক ফরিদপুরী তাকে পাকিস্তানের মুহাম্মদ ইউসুফ বিন্নুরীর সান্নিধ্যে যাওয়ার পরামর্শ দেন।[১২]
১৯৬৮ সালে তিনি পাকিস্তানের জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় মেশকাত জামাতে ভর্তি হন। ১৯৬৯ সালে মুহাম্মদ ইউসুফ বিন্নুরীর তত্ত্বাবধানে সহীহ বুখারী অধ্যায়ন করেন।[১১]
তারপর বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন, যা ছিল পাকিস্তানের বেফাকের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ফলাফল। তারপর ২৮ দিনে তিনি কুরআন মুখস্থ করেন। [১০] স্বীয় ভাই নুরুদ্দীনের অসুস্থতার খবর শুনে তিনি দেশে ফিরে আসেন।[১১]
১৯৭০ সালে তিনি পুনরায় পাকিস্তানে চলে যান এবং জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় উচ্চতর পড়াশুনা করেন। মুহাম্মদ ইউসুফ বিন্নুরীর রচিত সুনান আত-তিরমিজীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ “মাআরেফুস সুনান” রচনায় তিনি সাহায্য করেন।[১১]
তিনি মুহাম্মদ ইউসুফ বিন্নুরীর নির্দেশে “আল ইমাম আবু ইউসুফ : মুহাদ্দিসান ওয়া ফকিহান” নামে ৩ খণ্ডের একটি কিতাব রচনা করেন।[১১]
তার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেঃ মুহাম্মদ ইউসুফ বিন্নুরী, ইদ্রিস মিরাঠী, ওয়ালী হাসান, হেদায়েতুল্লাহ, ওমর শানকীতী, সালিমুল্লাহ খান, জাফর আহমদ উসমানী, মুহাম্মদ যাকারিয়া কান্ধলভি সহ প্রমুখ।[১১]
কর্মজীবন[সম্পাদনা]
শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর যশোর রেলস্টেশন মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি কর্মজীবনের সূচনা করেন। একই সময় যাদবপুর মাদ্রাসায় খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। [১১]
যশোর থাকাকালে আব্দুল্লাহ দরখাস্তির মাধ্যমে যাত্রাবাড়ি মাদ্রাসার ভিত্তিস্থাপন হলে কাজী মুতাসিম বিল্লাহ মাহমুদুল হাসানকে যাত্ৰাবাড়ি নিয়ে আসেন। তিনি যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় ৬ মাস শিক্ষকতার পর পাকিস্তানে চলে যান। [১১]
তারপর বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের সদর দপ্তর জামিয়া ফারুকীয়া করাচিতে যোগদান করেন। [১১]
১৯৭৪ সালে তিনি পুনরায় যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় যোগদান করেন। ১৯৮০ সালে তিনি এই মাদ্রাসার মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। [১১]
বর্তমানে তিনি গুলশান সেন্ট্রাল আজাদ মসজিদ ও ঈদগাহ সোসাইটির খতীব। মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের আমীর। [১১]
২০০৯ সালে মক্কার “আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার” এর প্রধান ড. আহমদ আল গামেদী কর্মস্থল ও শিক্ষালয়সহ সর্বত্র নারী-পুরুষ অবাধে মেলামেশা করতে পারবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তার এই অভিমতকে ভুল আখ্যায়িত করে তিনি “আর রদ্দুল জামিল” নামে একটি কিতাব প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে গামেদী নিজ অভিমত প্রত্যাহার করে নেন। [১১]
২০২০ সালের ৩ অক্টোবর তিনি কওমি মাদ্রাসার সর্ববৃহৎ শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি নির্বাচিত হন। বিধি অনুযায়ী তিনি কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আল হাইআতুল উলয়ার সভাপতি। [১৩][১৪]
তাসাউফ[সম্পাদনা]
তিনি ভারতের আবরারুল হক হক্কী ও ইসহাক সিদ্দিকী, কুয়েতের সৈয়দ ইউসুফ রেফায়ী ও সৈয়দ মাহমুদ হাশেম, বাংলাদেশের দৌলত আলী, আব্দুল মান্নান কাশিয়ানী ও শাহ আহমদ শফীর সাথে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলেন এবং খেলাফত লাভ করেন।[১২]
তার শিষ্যদের মধ্যে রয়েছে : ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাসের খতীব শায়েখ আলী আব্বাসি, শায়েখ মুহাম্মদ জাকারিয়া, পাকিস্তানের নিজামুদ্দিন শামজাই, সৌদি আরবের হাফিজ লুকমান, শায়েখ হাসান মুসা, শায়েখ নাসির বিল্লাহ মক্কী, ভারতের আসআদ আজমী, মদিনার ক্বারী মুনিরুজ্জামান, থাইল্যান্ডের গুফরান আহমদ, মালয়েশিয়ার শহীদুল্লাহ ফারুকী, বাংলাদেশের রেজাউল করীম, মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দিন সহ প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ।[১২]
পারিবারিক জীবন[সম্পাদনা]
তিনি ২ ছেলেঃ মাইমুন হাসান ও মাসরুর হাসান এবং ৪ মেয়ের জনক। [১১]
প্রকাশনা[সম্পাদনা]
তিনি আরবি, বাংলা ও উর্দুতে শতাধিক কিতাব রচনা করেছেন। তিনি ১৯৮৩ সালে মাসিক আল জামিয়া নামে একটি সাময়িকী চালু করেন। “আল ইরশাদ ইলা সাবিলির রাশাদ” নামক বইয়ে আরব বিশ্বে তার প্রদত্ত বয়ান সমূহের সংকলন করা হয়েছে। তার অন্যান্য রচনার মধ্যে রয়েছেঃ[১২]
- তাফসীরে বুরহানুল কুরআন (৪ খণ্ড)
- আল ইমাম আবু ইউসুফ : মুহাদ্দিসান ওয়া ফকিহান
- আর রদ্দুল জামিল
- দাওয়াতুল হক এবং দাওয়াত ও তাবলিগ
- ইসলামী রাষ্ট্রচিন্তা
- নবী পরিবারের প্রতি ভালবাসা
- হায়াতে আবরার
- হায়াতে উসমানি
- আল বুরহানুল মুআইয়াদ
- তোহফায়ে আবরার
- তোহফায়ে সুন্নাহ
- আদর্শ মতবাদ
- মাওয়েজে হাসানাহ
- সিরাতে মুস্তাকিমের সন্ধানে ইত্যাদি।
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ "ওয়াজ নিয়ে সরকারি নির্দেশনা : কী ভাবছে আলেমসমাজ"। কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০৪।
- ↑ "দরদি দিল নিয়ে তাবলিগের কাজ করতে হবে, আল্লামা মাহমুদুল হাসান"। দৈনিক আমাদের সময়। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০৪।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "কওমি মাদ্রাসা বোর্ডের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, মহাসচিব মাহফুজুল হক"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০৪।
- ↑ "যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মওলানা মাহমুদুল বেফাকের নতুন চেয়ারম্যান"। দ্য ডেইলি স্টার বাংলা। ২০২০-১০-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০৪।
- ↑ "যেভাবে আল্লামা শফীর চেয়ারে বসলেন মাওলানা মাহমুদুল হাসান"। যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০৪।
- ↑ "কওমি সনদের স্বীকৃতি : শীর্ষ আলেমদের প্রতিক্রিয়া"। কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০৪।
- ↑ "বাংলা চর্চায় এগিয়ে যাচ্ছেন কওমি আলেমরা"। banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০৪।
- ↑ ডেস্ক, নিজস্ব (১৯ নভেম্বর ২০১৬)। "ইসলামি তৎপরতা – মজলিসে দাওয়াতুল হক"। দৈনিক ইনকিলাব।
- ↑ "শীর্ষস্থানীয় আলেম ও সুধীজনের প্রতিক্রিয়া"। কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০৪।
- ↑ ক খ "আল্লামা শফীর স্থলাভিষিক্ত কে এই মাওলানা মাহমুদুল হাসান"। যুগান্তর (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০৬।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড আমীন, নেয়ামতুল্লাহ (৩০ জানুয়ারি ২০২০)। "আল্লামা মাহমুদুল হাসান: জাতির এক অনন্য রাহাবর"। দৈনিক যুবকণ্ঠ।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ আহমদ কবীর খলীল, মাওলানা (২০১৯-১০-১৯)। "শাইখুল হাদীস মাওলানা শায়খ মাহমুদুল হাসান যাত্রাবাড়ি দা. বা.- এর সংক্ষিপ্ত জীবন ও কর্ম"। কওমিপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০৪।
- ↑ "কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের নতুন সভাপতি মাহমুদুল হাসান"। bangla.bdnews24.com। ২০২০-১০-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০৪।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (৩ অক্টোবর ২০২০)। "বেফাকে আহমদ শফীর পদে মাহমুদুল হাসান"। দৈনিক সমকাল।
গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]
- গাজালি, তোফায়েল (৫ অক্টোবর ২০২০)। "আল্লামা শফীর স্থলাভিষিক্ত কে এই মাওলানা মাহমুদুল হাসান"। দৈনিক যুগান্তর।
- আহমদ কবীর খলীল, মাওলানা (২০১৯)। "শাইখুল হাদীস মাওলানা শায়খ মাহমুদুল হাসান যাত্রাবাড়ি দা. বা.- এর সংক্ষিপ্ত জীবন ও কর্ম"। কওমিপিডিয়া।
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]
- ১৯৫০-এ জন্ম
- দেওবন্দী আলেম
- দেওবন্দি উলামা
- বাংলাদেশের ইসলামী চিন্তাবিদ
- বাংলাদেশী মুফতি
- ময়মনসিংহ জেলার ব্যক্তি
- জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ার প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- সুন্নি ইসলামের পণ্ডিত
- হানাফি ফিকহ পণ্ডিত
- জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়ার আচার্য
- ২০শ শতাব্দীর ইসলামের মুসলিম পণ্ডিত
- আল হাইআতুল উলয়ার সভাপতি
- বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি
- আল হাইআতুল উলয়ার স্থায়ী কমিটির সদস্য