জমিরুদ্দিন আহমদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শায়খুল মাশায়েখ, মাওলানা

জমিরুদ্দিন আহমদ
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম১৮৭৮
মৃত্যু৬ জুলাই ১৯৪০(1940-07-06) (বয়স ৬১–৬২)
সমাধিস্থলমাকবারায়ে হাবিবী, নূর মসজিদ, হাটহাজারী
ধর্মইসলাম
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারত
পিতামাতা
  • নুরুদ্দিন (পিতা)
জাতিসত্তাবাঙালি
যুগআধুনিক
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
আন্দোলনদেওবন্দি
প্রধান আগ্রহহাদিস[১], ফিকহ, তাসাউফ
যেখানের শিক্ষার্থীদারুল উলুম দেওবন্দ
মুসলিম নেতা
যার দ্বারা প্রভাবিত

জমিরুদ্দিন আহমদ (১৮৭৮ — ১৯৪০) ছিলেন একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে দীর্ঘ ৩৫ বছর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি রশিদ আহমদ গাঙ্গুহির শিষ্য হিসেবে বঙ্গ অঞ্চলে ধর্মীয় সংস্কার করেছিলেন। তার নির্দেশে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়। তার শিষ্যদের মধ্যে আজিজুল হক, মুহাম্মদ ইউনুস উল্লেখযোগ্য। তার প্রসিদ্ধ উপাধি ছিল ‘শায়খুল মাশায়েখ’।[২]

জীবনী[সম্পাদনা]

জমিরুদ্দিন আহমদ ১৮৭৮ সালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সুয়াবিল গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নুরুদ্দিন। পিতার মৃত্যুর পর আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় কুরআন ও অল্প প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করে জীবিকার তাগিদে তিনি রেঙ্গুনে চলে যান এবং কারখানায় চাকরি নেন। অবসর সময়ে তিনি স্থানীয় মসজিদের ইমামের নিকট ‘রাহে নাজাত’ কিতাবটি পড়তেন।[৩][৪][৫][৬]

এসময় তিনি নানারকম স্বপ্ন দেখেন এবং তার বিবরণ স্বীয় শিক্ষক ইমামের কাছে উপস্থাপন করেন। ইমাম স্বপ্নের বিবরণ শুনে তাকে ভারতের গাঙ্গুহ নগরে অবস্থানরত রশিদ আহমদ গাঙ্গুহির কাছে যাওয়ার উপদেশ দেন। গাঙ্গুহির নিকট গেলে তিনি প্রথমে তাকে শরিয়তের জ্ঞান অর্জন করতে নির্দেশ দেন। নির্দেশ মোতাবেক তিনি দারুল উলুম দেওবন্দ চলে যান।[৭]

দেওবন্দের মুহতামিম হাফেজ মুহাম্মদ আহমদ এই নবাগত ছাত্রের খাওয়া-দাওয়ার ভার গ্রহণ করেন। চট্টগ্রামের ছাত্র আফাজ উদ্দিনের নিকট প্রাথমিক কিতাবাদী অধ্যয়ন করে তিনি মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং ৬ বছর পর দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সমাপ্ত করেন। পাশাপাশি তিনি আজিজুর রহমান উসমানির কাছে ফিকহ অধ্যয়ন করতেন। দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করে তিনি রশিদ আহমদ গাঙ্গুহির নিকটও ফিকহ অধ্যয়ন করেন। ফলে তিনি ফিকহ শাস্ত্রে অধিক পারদর্শী হয়ে উঠেন।[৮]

প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা সমাপ্তির পর তিনি গাঙ্গুহির হাতে বায়আত গ্রহণ করেন। তিন বছর পর গাঙ্গুহি তাকে খেলাফত প্রদান করেন। এরপর তিনি বাড়িতে চলে আসেন এবং ধর্মীয় সংস্কারে নিয়োজিত হন। দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়ে দ্রুত উন্নতির দিকে ধাবিত হলে একজন পৃষ্ঠপোষকের প্রয়োজন দেখা যায়। এজন্য হাবিবুল্লাহ কুরাইশি আশরাফ আলী থানভীর কাছে একটি চিঠি লিখেন। থানভীর নির্দেশে জমিরুদ্দিনকে মাদ্রাসার প্রধান পৃষ্ঠপোষক নিয়োগ করা হয়।[৯]

মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ তার ফার্সি কাব্যগ্রন্থ কান্দে খাকিতে লিখেছেন,

،سرپرستش قطب عالم اور ضمیر

،فیضیاب ازوئے صغیر وہم کبیر ،اولیا را سرور و نیم پیشوا ! اتقارابادی و نام مقتدا
অর্থঃ এই প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপােষক সেই মহান বুযুর্গ কুতুবে আলম মাওলানা জমিরুদ্দিন সাহেব রহ., যার থেকে ছােট-বড় সকলে উপকৃত হচ্ছে, যিনি আউলিয়াদের সর্দার ও ইমাম, মুত্তাকীনদের দিশারী ও আদর্শ।

তার উল্লেখযোগ্য শিষ্যদের মধ্যে রয়েছেন: আজিজুল হক, মুহাম্মদ ইউনুস, ইমাম আহমদ, আব্দুল কাইয়ুম প্রমুখ। তিনি প্রথমে সুফি আজিজুর রহমানের ভাতিজির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।

১৯৪০ সালের ৬ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।[১০]

তার জীবনীগ্রন্থের মধ্যে ফয়েজ আহমদ ইসলামাবাদী রচিত ‘তাজকেরায়ে জমির’ এবং ২০১০ সালে মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ রচিত ‘ইবতিকার ফউন্ডেশন বাংলাদেশ’ প্রকাশিত “কুতবে যমান আল্লামা শাহ জমিরুদ্দিন রহ.” অন্যতম।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. আহসান সাইয়েদ, ড. (২০০৬)। বাংলাদেশে হাদিস চর্চা উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ। ১৯ সেগুনবাগিচা, ঢাকা-১০০০: অ্যাডর্ন পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা ১৮৫। আইএসবিএন 9789842005602 
  2. ইসলামাবাদী, আব্দুর রহিম (১৯৯৬)। যামীরুদ্দীন আহমাদইসলামী বিশ্বকোষ। ঢাকা: ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা ৫২৩–৫২৪। 
  3. উদ্দিন, মুহাম্মদ জসিম (২০১৬)। "মাওলানা জমির উদ্দিন রহ."। ফিক্হশাস্ত্রে মুফতী মুহাম্মদ ফয়যুল্লাহ-এর অবদান :একটি পর্যালোচনা (পিএইচডি)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৫৩ – ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ-এর মাধ্যমে। 
  4. এস এম আমিনুল ইসলাম, মাওলানা; ইসলাম, সমর (জানুয়ারি ২০১৪)। (মাওলানা জমিরুদ্দিন রহঃ)বাংলার শত আলেমের জীবনকথাবাংলাবাজার,ঢাকা-১১০০: বইঘর। পৃষ্ঠা ৬২—৬৭, ৫৭। 
  5. বাবুনগরী, জুনায়েদ (২০০৩)। (শায়খুল মাশায়েখ মাওলানা জমিরুদ্দিন রহ.)দারুল উলুম হাটহাজারীর কতিপয় উজ্জ্বল নক্ষত্র (১ম সংস্করণ)। হাটহাজারী, চট্টগ্রাম: বুখারী একাডেমি। পৃষ্ঠা ৮। 
  6. নূরুর রহমান, মাওলানা (২০১০)। তাযকেরাতুল আওলিয়া-৬ঢাকা, বাংলাদেশ: এমদাদিয়া পুস্তকালয় (প্রাঃ) লিমিটেড। পৃষ্ঠা ১১২—১১৬। 
  7. হাফেজ আহমদুল্লাহ, মুফতি; হাসান, আহমদ (মে ২০১৬)। (মাওলানা জমিরুদ্দিন রহ. - এর সংক্ষিপ্ত জীবনী)মাশায়েখে চাটগাম — ১ম খণ্ড (৩য় সংস্করণ)। ১১/১, ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০: আহমদ প্রকাশন। পৃষ্ঠা ১৪০—১৫৭। আইএসবিএন 978-984-92106-4-1 
  8. নিজামপুরী, আশরাফ আলী (২০১৩)। (শায়খুল মাশায়েখ মাওলানা জমিরুদ্দিন রহ.)দ্যা হান্ড্রেড (বাংলা মায়ের একশ কৃতিসন্তান) (১ম সংস্করণ)। হাটহাজারী, চট্টগ্রাম: সালমান প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ২৪ — ২৮। আইএসবিএন 112009250-7 
  9. জাহাঙ্গীর, সালাউদ্দিন (২০১৭)। (নিভৃতচারী দরবেশ আলেম মাওলানা জমিরুদ্দিন রহমতুল্লাহি আলাইহি)বাংলার বরেণ্য আলেম — ১ম খণ্ড (১ম সংস্করণ)। মধ্য বাড্ডা, আদর্শ নগর, ঢাকা: মাকতাবাতুল আযহার। পৃষ্ঠা ১০৫। 
  10. জাফর, আবু (২০১৭)। ভারতীয় উপমহাদেশের সুফি-সাধক ও ওলামা মাশায়েখ। বাংলাবাজার, ঢাকা: মীনা বুক হাউস। পৃষ্ঠা ৯২। আইএসবিএন 9789849115465 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]