বিষয়বস্তুতে চলুন

ব্রিটিশ ভারত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(ব্রিটিশ রাজশক্তি থেকে পুনর্নির্দেশিত)
ভারতীয় সাম্রাজ্য
ব্রিটিশ রাজ
ব্রিটিশ ভারত

১৮৫৮–১৯৪৭
ভারতের জাতীয় পতাকা
পতাকা
ভারতের
জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
জাতীয় সঙ্গীত: God Save the King/Queen
গড সেইভ দ্য কিং/কুইন
(বাংলা: ঈশ্বর আমাদের রাজা/রাণীকে রক্ষা করো)
ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য, ১৯০৯
ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য, ১৯০৯
অবস্থাব্রিটিশ রাজশক্তি-শাসিত উপনিবেশ
রাজধানীকলকাতা
(১৮৫৮-১৯১২)

নতুন দিল্লি
(১৯১২-১৯৪৭)
শিমলা (গ্রীষ্মকালীন রাজধানী)
(১৮৬৪-১৯৪৭)
প্রচলিত ভাষাবাংলা ভাষা, ইংরেজি ও ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত ২১ টি অন্যান্য তফসিলভুক্ত সরকারী ভাষা
সরকারদেশীয় করদ রাজ্য, প্রদেশ, এজেন্সি ও প্রেসিডেন্সিসমূহ নিয়ে গঠিত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পূর্ণ রাজতন্ত্র
সম্রাট/সম্রাজ্ঞী 
 ১৮৫৮-১৯০১
ভিক্টোরিয়া (সর্বপ্রথম)
 ১৯৩৭-১৯৪৭
ষষ্ঠ জর্জ (সর্বশেষ)
ভাইসরয় 
 ১৮৫৮-১৮৬২
দ্য ভিসকাউন্ট ক্যানিং (সর্বপ্রথম)
 ১৯৪৭
দ্য ভিসকাউন্ট মাউন্টব্যাটেন অফ বার্মা (সর্বশেষ)
ইতিহাস 
২ আগস্ট ১৮৫৮
১৪১৫ আগস্ট ১৯৪৭
মুদ্রাব্রিটিশ ভারতীয় রুপি
আইএসও ৩১৬৬ কোডIN
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
১৮৫৭:
মুঘল সাম্রাজ্য

১৮৫৮:
কোম্পানি-শাসিত ভারত
১৯৩৭:
ব্রিটিশ ব্রহ্মদেশ
১৯৪৭:
পাকিস্তান অধিরাজ্য
ভারতীয় অধিরাজ্য
১. ১ মে ১৮৭৬ সাল থেকে ভারতের সম্রাজ্ঞী হিসাবে, এর পূর্বে গ্রেট ব্রিটেনের রাণী হিসাবে শাসন করেছিলেন।
২. পূর্ণনাম: গভর্নর-জেনারেল অ্যান্ড ভাইসরয় অফ ইন্ডিয়া

ব্রিটিশ ভারত ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ঔপনিবেশিক শাসন, যা ভারতীয় উপমহাদেশে ১৮৫৮ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।[][][][] একে ভারতীয় সাম্রাজ্য বা ব্রিটিশ রাজ নামেও ডাকা হয়। ব্রিটিশ শাসনের অধীন যে অঞ্চল ছিল, তাকে তখন সাধারণত কেবল ভারত বলা হতো। এই অঞ্চলে দুই ধরনের এলাকা অন্তর্ভুক্ত ছিল—প্রথমত, যেসব এলাকা সরাসরি যুক্তরাজ্যের দ্বারা পরিচালিত হতো, যেগুলোকে একত্রে বলা হতো ব্রিটিশ ভারত;[] দ্বিতীয়ত, ব্রিটিশ আধিপত্যের অধীনে দেশীয় শাসকদের দ্বারা শাসিত ছিল কিছু অঞ্চল ছিল, যেগুলোকে বলা হতো দেশীয় রাজ্য বা প্রিন্সলি স্টেটস। এই অঞ্চলকে কখনও কখনও ভারতীয় সাম্রাজ্য নামেও অভিহিত করা হতো। ভারত হিসেবেই এই অঞ্চল সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে যোগদান করেছিল এবং ১৯৪৫ সালে সান ফ্রান্সিস্কোতে গঠিত জাতিসংঘেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লাভ করে। ভারত ১৯০০, ১৯২০, ১৯২৮, ১৯৩২১৯৩৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেছিল।[]

১৮৫৭ এর সিপাহী বিদ্রোহের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের পতন হলে ভারতকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে রানী ভিক্টোরিয়ার নামে (যিনি ১৮৭৬ সালে ভারতের সম্রাজ্ঞী হিসেবে ঘোষিত হন) হস্তান্তর করা হয়।[] ১৮৫৮ সালের ২৮ জুন এই শাসনব্যবস্থা চালু হয়। এই শাসনব্যবস্থা ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের আগ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। তখন ব্রিটিশ ভারতকে ভারতীয় ইউনিয়ন (পরবর্তিতে ভারত প্রজাতন্ত্র) এবং পাকিস্তান অধিরাজ্য (যা পরবর্তীতে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তান ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়) নামের দুটি সার্বভৌম অধিরাজ্যে পরিণত করা হয়। ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ ভারতের সূচনাকালে, নিম্ন বার্মা ইতোমধ্যে ব্রিটিশ ভারতের অংশ ছিল; ১৮৮৬ সালে উচ্চ বার্মা যুক্ত হলে, উভয় অঞ্চল মিলিয়ে বার্মা গঠিত হয়। বার্মাকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ হিসেবে শাসন করা হয়, এরপর সেটিকে একটি পৃথক ব্রিটিশ উপনিবেশ ঘোষণা করা হয় এবং ১৯৪৮ সালে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৮৯ সালে বার্মার নাম পরিবর্তন করে মিয়ানমার রাখা হয়। ব্রিটিশ ভারতের সূচনাকালে "অ্যাডেন" ছিল ব্রিটিশ ভারতের প্রধান কমিশনারের একটি প্রদেশ এবং এটিকেও ১৯৩৭ সালে একটি পৃথক উপনিবেশে পরিণত করা হয়, যার নাম দেওয়া হয়েছিল অ্যাডেন কলোনি।

ভৌগোলিক পরিসর

[সম্পাদনা]

অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তির অধীনস্ত গোয়া এবং পুদুচেরির (পন্ডিচেরি) মতো কয়েকটি ছোট এলাকা ছাড়া বর্তমানের প্রায় পুরো ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার জুড়ে ব্রিটিশ ভারত বিস্তৃত ছিল।[] এই অঞ্চলটি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়, যাতে রয়েছে হিমালয় পর্বতমালা, উর্বর প্লাবনভূমি, সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমি, দীর্ঘ উপকূলরেখা, উষ্ণমণ্ডলীয় শুষ্ক বনাঞ্চল, শুষ্ক উঁচু ভূমি, এবং থর মরুভূমি[] এর পাশাপাশি, বিভিন্ন সময়ে এর অন্তর্ভুক্ত ছিল অ্যাডেন (১৮৫৮ থেকে ১৯৩৭ পর্যন্ত),[১০] নিম্ন বার্মা (১৮৫৮ থেকে ১৯৩৭ পর্যন্ত), উচ্চ বার্মা (১৮৮৬ থেকে ১৯৩৭ পর্যন্ত), ব্রিটিশ সোমালিল্যান্ড (১৮৮৪ থেকে ১৮৯৮ পর্যন্ত), এবং প্রণালী উপনিবেশ (১৮৫৮ থেকে ১৮৬৭ পর্যন্ত)। ১৯৩৭ সালে বার্মাকে ভারত থেকে আলাদা করা হয় এবং ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা অর্জনের আগ পর্যন্ত এটি ব্রিটিশ ক্রাউনের দ্বারা সরাসরি শাসিত হয়। পারস্য উপসাগরের ট্রুশিয়াল প্রণালী এবং পারস্য উপসাগর রেসিডেন্সির অধীন অন্যান্য রাজ্যগুলো তত্ত্বগতভাবে ব্রিটিশ ভারতের প্রেসিডেন্সি ও প্রদেশের মতো দেশীয় রাজ্য ছিল এবং তারা মুদ্রা হিসেবে রুপি ব্যবহার করত।[১১]

এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মধ্যে সিলন (বর্তমানে শ্রীলঙ্কা), যার মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপটির উত্তরাংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল, ১৮০২ সালে অ্যামিয়েন্স চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটেনের অধীনে নিয়ে আসা হয়। এই উপকূলীয় অঞ্চলগুলো ১৭৯৩ থেকে ১৭৯৮ সাল পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অধীনে পরিচালিত ছিল।[১২] তবে পরবর্তী সময়ে সেখানের ব্রিটিশ গভর্নররা সরাসরি লন্ডনের কাছে জবাবদিহি করতেন, এবং এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ ছিল না। নেপাল এবং ভূটান রাজ্যগুলো ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধ করার পর তাদের সঙ্গে চুক্তি করে এবং ব্রিটিশ কর্তৃক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।[১৩][১৪] সিকিম রাজ্য ১৮৬১ সালের অ্যাংলো-সিকিম চুক্তির পর একটি দেশীয় রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও সার্বভৌমত্বের বিষয়টি অস্পষ্ট ছিল।[১৫] মালদ্বীপ ১৮৮৭ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত একটি ব্রিটিশ আশ্রিত রাজ্য ছিল, কিন্তু এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ ছিল না।[১৬]

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. Oxford English Dictionary, 2nd edition, 1989. "b. spec. the British dominion or rule in the Indian sub-continent (before 1947). In full, British raj.
  2. Stein, Burton (৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০)। A History of India (ইংরেজি ভাষায়)। John Wiley & Sons। পৃ. ১০৭। আইএসবিএন ৯৭৮-১-৪৪৪৩-২৩৫১-১
  3. Lowe, Lisa (২৭ জুন ২০১৫)। The Intimacies of Four Continents (ইংরেজি ভাষায়)। Duke University Press। পৃ. ৭১। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮২২৩-৭৫৬৪-৭
  4. Wright, Thomas Edmund Farnsworth; Kerr, Anne; Wright, Edmund (২০১৫)। A Dictionary of World History (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। পৃ. ৫৩৭। আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৯৬৮৫৬৯-১
  5. First the United Kingdom of Great Britain and Ireland then, after 1927, the United Kingdom of Great Britain and Northern Ireland
  6. Mansergh, Nicholas। Constitutional relations between Britain and India (ইংরেজি ভাষায়)। H.M.S.O। পৃ. xxx।
  7. Kaul, Chandrika (৩ মার্চ ২০১১)। "From Empire to Independence: The British Raj in India 1858–1947"History। BBC। ১৭ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৪
  8. Smith, George (১৮৮২)। The Geography of British India, Political & Physical। London: John Murray। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৪
  9. Baten, Jörg (২০১৬)। A History of the Global Economy. From 1500 to the Present। Cambridge University Press। পৃ. ২৪৭। আইএসবিএন ৯৭৮-১-১০৭-৫০৭১৮-০
  10. Marshall (2001), p. 384
  11. Subodh Kapoor (জানুয়ারি ২০০২)। The Indian encyclopaedia: biographical, historical, religious ..., Volume 6। Cosmo Publications। পৃ. ১৫৯৯। আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৭৫৫-২৫৭-৭
  12. Codrington, 1926, Chapter X:Transition to British administration
  13. "Nepal: Cultural life"Encyclopædia Britannica Online। ২০০৮। ২৪ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
  14. "Bhutan"Encyclopædia Britannica Online। ২০০৮। ২ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০২২
  15. "Sikkim | History, Map, Capital, & Population"Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। ১ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০২২
  16. "Maldives | History, Points of Interest, Location, & Tourism"Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। ২ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০২২

তথ্যসূত্র ও অতিরিক্ত পাঠ

[সম্পাদনা]

আধুনিক সাধারণ পাঠ্যপুস্তক

মনোগ্রাফ ও সংগ্রহ

পত্রিকা নিবন্ধ ও সংগ্রহ

ধ্রুপদি ইতিহাস ও গেজেট

  • Imperial Gazetteer of India vol. II (১৯০৮), The Indian Empire, Historical, Published under the authority of His Majesty's Secretary of State for India in Council, Oxford at the Clarendon Press. Pp. xxxv, 1 map, 573.
  • Imperial Gazetteer of India vol. III (১৯০৭), The Indian Empire, Economic (Chapter X: Famine, pp. 475–502, Published under the authority of His Majesty's Secretary of State for India in Council, Oxford at the Clarendon Press. Pp. xxxvi, 1 map, 520.

তৃতীয় সূত্র

সম্পর্কিত রচনাবলি

  • Bairoch, Paul, Economics and World History, University of Chicago Press, 1995
  • Bhatia, B. M., Famines in India: A study in Some Aspects of the Economic History of India with Special Reference to Food Problem, Delhi: Konark Publishers Pvt. Ltd, 1985

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]