দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ

অ্যাসায়ের যুদ্ধ, জে সি স্ট্যাডলারের একটি চিত্রকর্ম
তারিখ১১ সেপ্টেম্বর ১৮০৩ – ২৪ ডিসেম্বর ১৮০৫
অবস্থান
ফলাফল

ব্রিটিশ-পেশোয়ার জয়

  • দেওগাঁও চুক্তি (১৮০৩)
  • সুরজি-অঞ্জনগাঁও চুক্তি (১৮০৩)
  • রাজঘাটের সন্ধি (১৮০৫)
  • দ্বিতীয় বাজিরাও মারাঠা সংঘের নেতা হিসেবে বহাল থাকেন
বিবাদমান পক্ষ

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
মারাঠা সংঘ

সমর্থক:
মুঘল সাম্রাজ্য

মারাঠা সংঘ

সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
লর্ড মর্নিংটন
জেমস স্টিভেনসন গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য জেরার্ড লেক
গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য আর্থার ওয়েলেসলি
Bajirao II
আনন্দ রাও গায়কোদ্বিতীয় বাজিরাওয়াড়
দ্বিতীয় শাহ আলম

দৌলত রাও সিন্ধিয়া
পিয়ের কুইলিয়ার-পেরন
দ্বিতীয় রঘুজি
সর্দার বেনি সিং রাজপুত
যশবন্তরাও হোলকার

শিব সিং রানা, নারনালা
জড়িত ইউনিট

Lake & Wellesley:[১]

  • ৪ রেজিমেন্ট ইউরোপীয় অশ্বারোহী
  • ৮ রেজিমেন্ট ভারতীয় অশ্বারোহী
  • ২ রেজিমেন্ট ব্রিটিশ পদাতিক
  • ১৭ সিপাহী ব্যাটালিয়ন
  • আর্টিলারি
শক ইনফ্যান্ট্রি ফোর্স
১৭৯২ সালে ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্র, ১৭০০ সালের হলুদ সীমান্তের তুলনায়।

দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ (১৮০৩-১৮০৫) ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং মারাঠা সাম্রাজ্যের মধ্যে সংঘটিত হওয়া দ্বিতীয় যুদ্ধ। এর ফলে দিল্লির আশেপাশের অঞ্চল এবং বর্তমান গুজরাট কোম্পানির প্রত্যক্ষ শাসনে চলে আসে এবং মারাঠাদের বড় ধরনের ভূখণ্ডের ক্ষতি হয়।

পটভূমি[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় অ্যাংলো-মারাঠা যুদ্ধের পরে ভারতের মানচিত্র, ১৮০৫

ভোঁসলে রাজবংশের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ ১৬৭৪ সালে মারাঠা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।[২] শিবাজী মহারাজের রাজধানী ছিল রায়গড়ে। শিবাজি মহারাজ সফলভাবে মুঘল সাম্রাজ্যের আক্রমণ থেকে তার রাজ্যকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়। তার প্রতিষ্ঠিত মারাঠা রাজ্য পরবর্তীতে কয়েক দশকের মধ্যে মারাঠা সাম্রাজ্য হিসেবে মুঘলদের ছাড়িয়ে গিয়ে ভারতে প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়।

সেই সময়ে মারাঠা সাম্রাজ্য ছিল পাঁচজন "প্রধান"-এর সমন্বয়ে গঠিত একটি কনফেডারেসি বা সংঘ। রাজধানী শহর পুণেতে পেশোয়া (প্রধানমন্ত্রী) শাসন করতেন। পেশোয়ার অধীনে মারাঠা সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের মূল উপাদান ছিল আটজন মন্ত্রীর সমন্বয়ে গঠিত একটি কেন্দ্রীয় পরিষদ। এর নাম ছিল অষ্ট প্রধান (আটজনের পরিষদ)। অষ্ট প্রধানের প্রবীণতম সদস্যকে বলা হত পেশোয়া বাপান্ত প্রধান (প্রধানমন্ত্রী)। পেশোয়া ব্যতীত কনফেডারেসির অন্য চারজন নেতা ছিলেন বরোদার গায়কোয়াড় প্রধান, গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া প্রধান, ইন্দোরের হোলকার প্রধান এবং নাগপুরের ভোঁসালে প্রধান।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ক্রমবর্ধমান ব্রিটিশ শক্তি[সম্পাদনা]

১৮ শতকের গোড়ার দিকে মারাঠারা যখন মুঘলদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত, তখন ব্রিটিশরা মুম্বাই, মাদ্রাজকলকাতায় ছোট ব্যবসায়িক কেন্দ্রগুলো দখল করে। ১৭৩৯ সালের মে মাসে মারাঠাদের হাতে প্রতিবেশী বাসাইতে পর্তুগিজদের পরাজিত হতে দেখে ব্রিটিশরা মুম্বাইয়ের নৌ-চৌকি শক্তিশালী করে। মারাঠাদের মুম্বাই থেকে দূরে রাখার প্রয়াসে ব্রিটিশরা মারাঠাদের কাছে একটি চুক্তির প্রস্তাব দিয়ে দূত পাঠায়। দূতরা সফল হয়। ১৭৩৯ সালের ১২ জুলাইয়ে দুপক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে মারাঠা অঞ্চলে মুক্ত বাণিজ্যের অধিকার দেওয়া হয়।[৩] দক্ষিণে তখন হায়দ্রাবাদের নিজাম মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ফরাসিদের সমর্থন নিশ্চিত করে।[note ১] এর প্রতিক্রিয়ায় পেশোয়া ব্রিটিশদের কাছে সমর্থনের অনুরোধ করেন। কিন্তু ব্রিটিশেরা তা প্রত্যাখ্যান করে। ব্রিটিশদের ক্রমবর্ধমান শক্তি দেখতে না পেরে পেশোয়া অভ্যন্তরীণ মারাঠা দ্বন্দ্ব সমাধানের জন্য তাদের সাহায্য চেয়ে একটি নজির স্থাপন করেছিলেন।[৪] তবে ব্রিটিশ সমর্থনের অভাব থাকা সত্ত্বেও মারাঠারা পাঁচ বছরের মধ্যে নিজামকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিল।[৪]ব্যর্থ যাচাই

১৭৫০-১৭৬১ সময়কালে ব্রিটিশরা ভারতে ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে পরাজিত করে এবং ১৭৯৩ সাল নাগাদ তারা পূর্বে বাংলায় এবং দক্ষিণে মাদ্রাজে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পশ্চিমে মারাঠারা বেশ প্রভাবশালী হওয়ায়, সেখানে তারা দৃঢ়ভাবে বিস্তার লাভ করতে পারেনি। কিন্তু তারা সমুদ্রপথে পশ্চিম উপকূলে সুরাটে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়।[৫]

মারাঠারা তাদের সাম্রাজ্য বিস্তারের ধারা অব্যহত রেখে সিন্ধু পর্যন্ত অগ্রসর হয়।[৫] উত্তরে বিস্তৃত মারাঠা সাম্রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব দুই মারাঠা নেতা সিন্ধিয়া বা শিন্ডে এবং হোলকারের উপর অর্পণ করা হয়। পেশোয়া তখন দক্ষিণে ব্যস্ত ছিল।[৬] তবে দুই নেতা একত্রে সমন্বয় করে কাজ করেননি। দুজনেই ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং আর্থিক চাহিদা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। তাদের গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ফলে অন্যান্য হিন্দু শাসক যেমন রাজপুত, জাঠ ও রোহিলাদের সাথে মিত্রতা নষ্ট বা তৈরি না হওয়ায় পাশাপাশি তারা অন্যান্য মুসলিম নেতাদের উপর কূটনৈতিকভাবে জয়লাভ করতেও ব্যর্থ হয়।[৬] ১৭৬১ সালের ১৪ জানুয়ারিতে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে আফগান দুররানি শাসক আহমদ শাহ আবদালির নেতৃত্বে অযোধ্যা, মুঘল, অম্ব, কালাত, রোহিলাখণ্ডের সম্মিলিত মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে মারাঠাদের পরাজয় সাম্রাজ্যের জন্যে একটি বিশাল আঘাত হিসেবে আবির্ভূত হয়। সেই সংঘর্ষের ফলে মারাঠা নেতাদের একটি পুরো প্রজন্ম যুদ্ধের ময়দানে মারা গিয়েছিল।[৬] তবে ১৭৬১ থেকে ১৭৭৩ সালের মধ্যে মারাঠারা উত্তরে হারানো জমি ফিরে পেতে সক্ষম হয়।[৭]

ইঙ্গ-মারাঠা সম্পর্ক[সম্পাদনা]

হোলকার ও সিন্ধিয়ার পরস্পর বিরোধী নীতি এবং পেশোয়া পরিবারের অভ্যন্তরীণ বিবাদের কারণে উত্তরে মারাঠাদের জয় করা এলাকাগুলো আবারও হাতছাড়া যায়। ১৭৭৩ সালে পেশোয়া নারায়ণ রাওকে হত্যার মাধ্যমে তা চূড়ান্ত পরিণতি পায়।[৮] ক্রমাগত অভ্যন্তরীণ মারাঠা দ্বন্দ্বের কারণে রঘুনাথ রাও পেশোয়ার আসন থেকে ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি ব্রিটিশদের কাছে সাহায্য চান। ১৭৭৫ সালের মার্চ মাসে রঘুনাথরাওয়ের সাথে ব্রিটিশরা সুরাট চুক্তি স্বাক্ষর করে।[৯] এই চুক্তি অনুসারে ব্রিটিশরা সালসেট দ্বীপ ও বাসেন দুর্গের নিয়ন্ত্রণের বিনিময়ে সামরিক সহায়তা দেয়।[১০]

শক্তিশালী মারাঠাদের সাথে সংঘর্ষের গুরুতর প্রভাবের কারণে চুক্তিটি ভারতে ও ইউরোপে ব্রিটিশদের মধ্যে বিস্তর আলোচনার জন্ম দেয়। এই বিষয়ে উদ্বেগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল, বোম্বে কাউন্সিল এই চুক্তি স্বাক্ষর করার মাধ্যমে তার সাংবিধানিক কর্তৃত্বের সীমা অতিক্রম করে যাওয়া।[১১] এই চুক্তিটিই ছিল প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ শুরুর কারণ। এই যুদ্ধে মারাঠারা মোটাদাগে বিজয় অর্জন করলেও প্রায় একটি অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। যুদ্ধে কোনো পক্ষই অপরকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করতে সক্ষম হয়নি।[১২] মহাদজি সিন্ধিয়ার মধ্যস্থতায় ১৭৮২ সালের মে মাসে সালাবাই চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হয়। যুদ্ধে ব্রিটিশদের সাফল্যের প্রধান কারণ ছিল ওয়ারেন হেস্টিংসের দূরদর্শিতা। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী জোটকে ধ্বংস করার পাশাপাশি সিন্ধিয়া, ভোঁসলে এবং পেশোয়াদের মধ্যে একটি বিভাজন তৈরি করতে সক্ষম হন।

১৭৮৬ সালে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের নতুন গভর্নর জেনারেল কর্নওয়ালিস যখন ভারতে আসেন, তখনও মারাঠারা বেশ শক্তিশালী অবস্থানে ছিল,[১৩] সালাবাই চুক্তির পর ব্রিটিশরা উত্তরে সহাবস্থানের নীতি অনুসরণ করে। ১১ বছর বয়সী পেশোয়া সওয়াই মাধবরাওয়ের দরবারের মন্ত্রী নানা ফড়নবিশের কূটনীতির জন্য ব্রিটিশ এবং মারাঠারা দুই দশকেরও বেশি সময় শান্তি উপভোগ করে। ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর-জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি বারবার পেশওয়া ও সিন্ধিয়াকে একটি সহায়ক চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু নানা ফড়নবিস সেসময় দৃঢ়ভাবে যেকোনো চুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ১৮০০ সালে নানা ফড়নবিশের মৃত্যুর পরপরই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়। হোলকার ও সিন্ধিয়ার মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ের ফলে হোলকার পুনেতে পেশোয়ার বাহিনীর উপরে আক্রমণ করে। পেশোয়া তখন সিন্ধিয়ার পক্ষে ছিলেন। ১৮০২ সালের অক্টোবরে দ্বিতীয় পেশওয়া বাজি রাও এবং সিন্ধিয়ার সম্মিলিত বাহিনী পুণের যুদ্ধে ইন্দোরের শাসক যশবন্তরাও হোলকারের কাছে পরাজিত হয়। দ্বিতীয় পেশোয়া বাজি রাও ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজে নিরাপদে পুনে থেকে পালিয়ে যান। বাজি রাও তার নিজের ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কায় ব্রিটিশদের সাথে বাসেইনের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এটি পেশোয়াকে কার্যত একটি সহযোগী মিত্রে পরিণত করেছিল। এই চুক্তিটি ভবিষ্যতে "মারাঠা সাম্রাজ্যের মৃত্যুঘণ্টা" হয়ে উঠে।[১৪]

পেশোয়ার এই চুক্তি অন্যান্য মারাঠা সরদারদের বেশ আতঙ্কিত ও বিরক্ত করে তুলে। চুক্তির জবাবে গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া ও এবং নাগপুর ও বেরারের ভোঁসলে ব্রিটিশদের উপর সম্মিলিত আক্রমণ শুরু করে। তারা পেশোয়া কর্তৃক ব্রিটিশদের কাছে তাদের সার্বভৌমত্বের বিশ্বাসঘাতকতা মেনে নিতে অস্বীকার করে। এটি ছিল ১৮০৩ সালে দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের সূচনা। উভয়ই ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হয় এবং সমস্ত মারাঠা নেতারা ব্রিটিশদের কাছে তাদের শাসনাধীন অঞ্চলের বড় অংশ হারায়।[১২]

যুদ্ধ[সম্পাদনা]

অ্যাসেয়ের যুদ্ধ, ক্যাপ্টেন হিউ ম্যাকিনটোশের নেতৃত্বে কামানে নেটিভ ইনফ্যান্ট্রি চার্জের ১ম ব্যাটালিয়ন ৮ম রেজিমেন্ট

ব্রিটিশ কৌশলের মধ্যে ছিল মেজর জেনারেল আর্থার ওয়েলেসলি দাক্ষিণাত্যের মালভূমি সুরক্ষিত করা, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জেরার্ড লেককে প্রথমে দোয়াবে এবং তারপর দিল্লিতে নেওয়া, পাওয়েলের বুন্দেলখণ্ডে প্রবেশ করা, মারে বাদোচকে গ্রহণ করা এবং হারকোর্ট বিহারকে নিরপেক্ষ করা। ব্রিটিশরা তাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার জন্য ৫৩,০০০ এরও বেশি সৈন্য প্রস্তুত করেছিল।[১৪] :৬৬–৬৭

১৮০৩ সালের ৮ আগস্ট ওয়েলেসলি তার সেনাবাহিনীর রসদ সমাবেশ শেষ করে মোট ২৪,০০০ সৈন্যকে শিবির ভেঙে নিকটতম মারাঠা দুর্গ আক্রমণ করার নির্দেশ দেন।[১৫] একই দিনে তিনি এস্কেলেড ব্যবহার করে আহমেদনগরের প্রাচীর ঘেরা পেট্টা (দুর্গ সংলগ্ন শহর) দখল করেন।[১৬][১৭]

কামানের গোলার আঘাতে প্রাচীরের দেওয়ালে তৈরি হওয়া ফাটলকে কাজে লাগিয়ে পদাতিক আক্রমণের পরে ১২ আগস্ট আহমেদনগর দুর্গ আত্মসমর্পণ করে। পেট্টা এবং দুর্গটি তখন ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় ওয়েলেসলি দক্ষিণে গোদাবরী নদী পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ প্রসারিত করতে সক্ষম হন।[১৮]

১৮০৩ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে সিন্ধিয়া বাহিনী দিল্লি হ্রদের কাছে এবং ওয়েলেসলির কাছে অ্যাসায়েতে পরাজিত হয়। ১৮ অক্টোবরে ব্রিটিশ বাহিনী আসিরগড় দুর্গের পেট্টা দখল করে। এই লড়াইয়ে দুজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়। আক্রমণকারীরা একটি ব্যাটারি স্থাপনের পর ২১ তারিখে দুর্গের গ্যারিসন আত্মসমর্পণ করে। ব্রিটিশ আর্টিলারি সিন্ধিয়া বাহিনীর অগ্রবর্তী অপারেটিং ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহৃত প্রাচীন ধ্বংসাবশেষকে আঘাত করে তাদের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করে। নভেম্বরে লেক লাসোয়ারিতে আরেকটি সিন্ধিয়া বাহিনীকে পরাজিত করেন। তারপরে ১৮০৩ সালের ২৯ নভেম্বর আরগাঁওয়ে (বর্তমানে আদগাঁও) ভোঁসলে বাহিনীর বিরুদ্ধে ওয়েলেসলির বিজয় ঘটে।[১৯]

উপসংহার[সম্পাদনা]

১৮০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বরে নাগপুরের দ্বিতীয় রঘুজি ভোঁসলে দেওগাঁর চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।[১৪] :৭৩ আরগাঁও যুদ্ধের পর মারাঠারা ব্রিটিশদের ওড়িশা ও কটক প্রদেশ ছেড়ে দেয়। এর মধ্যে মুঘল এবং ওড়িশার উপকূলীয় অংশ গার্জাত/ওড়িশার রাজন্য রাজ্য, বালেশ্বর বন্দর, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার কিছু অংশ অন্তর্ভূক্ত ছিল।

১৮০৩ সালের:৭৩ ডিসেম্বরে দৌলত রাও সিন্ধিয়া:৭৩ অ্যাসায়ের যুদ্ধ এবং লাসোয়ারির যুদ্ধের পর ব্রিটিশদের সাথে সুরজি-অঞ্জনগাঁও চুক্তি স্বাক্ষর করেন।[১৪] চুক্ত অনুযায়ী ব্রিটিশদের কাছে হিসার, পানিপথ, রোহতক, রেওয়ারি, গুরগাঁও, গঙ্গা-যমুনা দোয়াব, দিল্লি-আগ্রা অঞ্চল, বুন্দেলখণ্ডের কিছু অংশ, ব্রোচ, গুজরাটের কিছু জেলা এবং আহম্মদনগরের দুর্গের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ব্রিটিশরা ১৮০৪ সালের ৬ এপ্রিল যশবন্তরাও হোলকরের বিরুদ্ধে শত্রুতা শুরু করে। গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে ব্রিটিশ বাহিনীকে হয়রানি করায় যশবন্ত রাও কিছুটা সফল হয়েছিলেন। তবে তিনি সিন্ধিয়ার কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাহায্য পাননি। কারণ সিন্ধিয়া ইতিমধ্যেই ব্রিটিশদের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। তিনি পাঞ্জাবে গিয়ে রঞ্জিত সিং-এর সাহায্যও চাননি। সর্বোপরি সম্পদের অভাব তাকে ব্রিটিশদের সাথে চুক্তিতে আসতে বাধ্য করেছিল।

১৮০৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত রাজঘাটের চুক্তি হোলকারকে টঙ্ক, রামপুরা এবং বুন্দি ব্রিটিশদের কাছে ছেড়ে দিতে বাধ্য করে।[১৪] :৯০–৯৬

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. Meaning "Administrator of the Realm", the title of Nizam was specific to the native sovereigns of Hyderabad State, India, since 1719.[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Cooper, Randolf G. S. (২০০৩)। The Anglo-Maratha Campaigns and the Contest for India: The Struggle for Control of the South Asian Military Economy। Cambridge: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 315–318। আইএসবিএন 0-521-82444-3 }
  2. Subburaj 2000, পৃ. 13।
  3. Sen 1994, পৃ. 1।
  4. Sen 1994, পৃ. 2।
  5. Sen 1994, পৃ. 3।
  6. Sen 1994, পৃ. 4।
  7. Sen 1994, পৃ. 4–9।
  8. Sen 1994, পৃ. 9।
  9. Sen 1994, পৃ. 10।
  10. Sen 1994, পৃ. 10–11।
  11. Sen 1994, পৃ. 11।
  12. Schmidt 1995, পৃ. 64।
  13. Sen 1994, পৃ. 17।
  14. Naravane, M.S. (২০১৪)। Battles of the Honorourable East India Company। A.P.H. Publishing Corporation। পৃষ্ঠা 65–66। আইএসবিএন 978-81-313-0034-3 
  15. Holmes, Richard (২০০২)। Wellington: The Iron Duke। London: Harper Collins Publishers। পৃষ্ঠা 69, 73। আইএসবিএন 978-0-00-713750-3 
  16. Fitchett, William Henry (১৯১১)। Wellington, Arthur Wellesley, Duke of, 1769–1852। G. Bell। পৃষ্ঠা 102–104 
  17. Duke of Wellington (১৮৫৯)। "Camp at Ahmednuggur, 17th Aug., 1803"। Supplementary despatches and memoranda of field marshal Arthur duke of Wellington 1797–1819 with a map of India। J. Murray। পৃষ্ঠা 151 
  18. Holmes 2002, পৃ. 74।
  19. Wolpert, Stanley (২০০৯)। A New History of India (8th সংস্করণ)। Oxford UP। পৃষ্ঠা 410–411। আইএসবিএন 978-0-19-533756-3 

আরও পড়া[সম্পাদনা]

পূর্বসূরী
{{{before}}}
{{{title}}}
{{{years}}}
উত্তরসূরী
{{{after}}}
পূর্বসূরী
{{{before}}}
{{{title}}}
{{{years}}}
উত্তরসূরী
{{{after}}}