গান্ধী-আরউইন চুক্তি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

গান্ধী-আরউইন চুক্তি হলো একটি রাজনৈতিক চুক্তি, যা ১৯৩১ সালের ৫ই মে স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৩০ সালের ২৭শে মে সাইমন কমিশনের একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হলে ব্রিটিশ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী র‍্যাম্সে ম্যাক্ডোনাল্ড সাইমন কমিশনের রিপোর্ট বিবেচনার জন্যে ১৯৩০[১] খ্রিস্টাব্দের ১২ ই নভেম্বর ভারতের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের একটি বৈঠকের আহ্বান করেন। জাতীয় কংগ্রেসের কোনো প্রতিনিধি এ বৈঠকে যোগদান করে নি। তবে ভারতের বৃহত্তম জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করা দল কংগ্রেসের অনুপস্থিতিতে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী ম্যাক্ডোনাল্ড আশা প্রকাশ করেন যে, কংগ্রেস পরবর্তী বৈঠকসমূহে যোগ দেবে এবং এই কারণে সরকার বিনা শর্তে গান্ধীজিকে মুক্তি দিলেন। এরপর গান্ধীজি গভর্নর জেনারেল এবং ভাইসরয় লর্ড আর্উইনের সঙ্গে একটি সুদীর্ঘ বৈঠকে মিলিত হলেন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ৫ই মার্চ গান্ধী-আর্উইন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।[১] এই চুক্তির শর্তানুসারে ঠিক হল, গান্ধীজি আইনবিরোধী আন্দোলন আংশিক প্রত্যাহার করে নেবেন এবং দ্বিতীয় গোল টেবিল বৈঠকে যোগ দেবেন।[২][৩][৪]

চুক্তির বিষয়বস্তু[সম্পাদনা]

গান্ধী-আর্উইন চুক্তি মধ্যে উল্লেখযোগ্য শর্ত গুলো হলঃ

  • সমস্ত রাজনৈতিক রাজবন্দিকে গভর্নর জেনারেল লর্ড আর্উইনের অনুমতি সাপেক্ষে প্যারেলে মুক্তি দেওয়া।
  • দমননিপীড়নমূলক আইন ও অর্ডিন্যান্স সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করে নেওয়া। জনকল্যাণমূলক আইন ও জনস্বার্থের উন্নতিকল্পে সংশ্লিষ্ট অর্ডিন্যান্স চিরতরে জন্য বহাল রাখা।
  • আইন অমান্য আন্দোলনের কারণে যাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তাদের অধিকতর পরিমাণে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
  • সরকারের লবণের একচেটিয়া ব্যবসা আংশিক বন্ধ করা এবং লবণ তৈরির অনুকূল-প্রতিকূল পরিবেশ থাকলে সেখান থেকে নিজেদের ব্যবহারের জন্য সুপ্রিম কাউন্সিল অব ইস্ট ইন্ডিয়ার প্রধান গভর্নর জেনারেল লর্ড আর্উইনের অনুমতি সাপেক্ষে লবণ তৈরি করতে পারা ইত্যাদি ।

চুক্তির ফলাফল[সম্পাদনা]

আরউইন গান্ধীর দেওয়া সকল শর্ত পুরোপুরিভাবে না মেনে আংশিকভাবে মেনে নেয়। আর্উইন রাজবন্দিদের উপর নির্যাতন বন্ধ করা এবং বাজেয়াপ্ত বিষয় সম্পত্তি আন্দোলনকারীদের ফিরিয়ে দেওয়া সেই সাথে সমুদ্র তীর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে বসবাসকারী ব্যক্তিদের বিনা শুল্কে লবণ উৎপাদনের অনুমতি দিতে স্বীকৃতি দেন। তবে ভগৎ সিং, রাজগুরু, সুখদেব এবং বটুকেশ্বরের মৃত্যুদন্ড দেন এবং এ ব্যাপারে গান্ধীজির সাথে কোনো আলোচনা না করায় জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ নেতা গান্ধীর সমালোচনা ও নানা দোষারোপ করেন। জনগণের সামগ্রিক স্বার্থের পরিপন্থী এ গান্ধী- আরউইন চুক্তি কংগ্রেসের মাঝে ব্যাপক সমালোচিত হয়। সমালোচকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। আইন অমান্য আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে কংগ্রেসের পক্ষে মুখ রক্ষার উপায় হিসাবে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করার সিদ্ধান্তসহ গান্ধী- আরউইন চুক্তি কংগ্রেসে অনুমোদিত হয়। [৫]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "এই দিনে"দৈনিক আজাদী। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "Gandhi Irwin Pact Event List"। Gandhi Heritage Portal। ২০১৪-০৯-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  3. Ruhe, Peter. Gandhi. London: Phaidon Press Limited, 2001. 75.
  4. "Gandhi-Irwin Pact"GANDHI - A Pictorial Biography। Bombay Sarvodaya Mandal / Gandhi Book Centre। 
  5. "সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য"দৈনিক যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]