বক্সারের যুদ্ধ
বক্সারের যুদ্ধ ও এর পরিণতি | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধ ছিল এটি | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
বাংলা অযোধ্যা মুঘল সাম্রাজ্য[১] | ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
মীর কাশিম সুজাউদ্দৌলা দ্বিতীয় শাহ আলম | হেক্টর মুনরো | ||||||
শক্তি | |||||||
৪০,০০০ পদাতিক সৈন্য পরম্পরা অস্ত্র | ১৮,০০০ পদাতিক সৈন্য আধুনিক অস্ত | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
৪০০০ আহত[২] | কম |
বক্সারের যুদ্ধ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে সম্মিলিত ভাবে মীর কাশিম-এর মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল।[৩] ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জয়ের ফলে ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সূচিত হয়।
পটভূমি
[সম্পাদনা]১৭৬০ সালে ক্লাইভ ব্রিটেনে চলে যান। ক্লাইভের মতো পৃষ্ঠপোষক ও অভিভাবক হারিয়ে মীরজাফর অসহায় হয়ে পড়েন। তা ছাড়া খড়কুটো ধরে বাঁচার লক্ষ্যে ওলন্দাজদের সাথে ষড়যন্ত্র করার পর তিনি ইংরেজদের বিশ্বাস ও সমর্থন হারিয়েছিলেন। অধিকন্তু ইংরেজদের পুনঃপুন টাকার দাবি মেটাতে পারছিলেন না। সে জন্য ইংরেজ কর্তৃপক্ষ হলওয়েল ও ভেনসিটার্ট মীরজাফরকে সরিয়ে তার জামাতা মীর কাসিমকে মসনদে বসানোর পরিকল্পনা করে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৭৬০ সালের অক্টোবরে মীর কাসিমকে মসনদে বসায়। নবাবীর বিনিময়ে মীর কাসিম ইংরেজ প্রধানদের বহু অর্থ উপঢৌকন দেন। তা ছাড়া বর্ধমান, মেদেনীপুর ও চট্টগ্রাম জেলা কোম্পানিকে দান করে দিতে বাধ্য হন।
মীর কাসিম অনেকটা স্বাধীনচেতা ছিলেন। ইংরেজ আশ্রিত অবস্থান থেকে নবাবের শাসনক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেছিলেন। নবাব এ সময় কয়েকজন হিন্দু কর্মচারী, জমিদার ও ব্যবসায়ীর অবাধ্যতায় বিরক্ত হয়ে ওঠেন। এ জন্য আজিমাবাদের নায়েম নাযিম রামনারায়ণ, গুপ্ত পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা রাজা মুরলী ধর এবং রাজবল্লভ, জগৎশেঠ ও অন্যদের গ্রেফতার করেন। ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্র করার অপরাধে রামনারায়ণ, রাজবল্লভ, উমেদরায়, জগৎশেঠ এবং আরো কয়েকজনের প্রাণদণ্ড হয়। ইংরেজদের প্রভাব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য মীর কাসিম তার রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে মুঙ্গের এ স্থানান্তর করেন। বিলম্বিত বোধোদয়ের কারণে তিনি ইংরেজদের বিনাশুল্কে বে-আইনি ব্যবসায় নিষিদ্ধ করে আদেশ জারি করেন। কোম্পানির কর্মকর্তারা এর বিরোধিতা করায় তিনি সব বণিকের পণ্যদ্রব্যের ওপর হতে শুল্ক রহিত করে দেন। এই ব্যবস্থার ফলে বাণিজ্যে ইংরেজদের একচেটিয়া ও বিশেষ সুবিধা নষ্ট হয়। কারণ এর ফলে তাদের অন্য বণিকদের সাথে সমপর্যায়ে ব্যবসায়ে প্রতিযোগিতা করতে হতো। এ সব কারণে মীর কাসিমের সাথে ইংরেজদের স্বার্থের সংঘাত দেখা দেয়। ১৭৬৩ সালে ইংরেজদের সাথে তার সংঘর্ষ বেধে যায়। কাটোয়া, মুর্শিদাবাদ, গিরিয়া, সুতি, উদয়নালা ও মুঙ্গেরের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মীর কাসিম ক্ষমতাহারা অবস্থায় অযোধ্যায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। ১৭৬৩ সালে কোম্পানির কর্মকর্তারা দ্বিতীয়বার ক্লাইভের গর্দভ খ্যাত মীরজাফরকে বাংলার সিংহাসনে বসায়।
যুদ্ধ
[সম্পাদনা]মীর কাসিম অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও মোগল সম্রাট শাহ্ আলম সাথে মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে তোলেন।[৪] ১৭৬৪ সালের ২২ অক্টোবর তাদের সম্মিলিত সৈন্যবাহিনীর সাথে বিহারের বক্সার নামক স্থানে ইংরেজ সৈন্যদের ঘোরতর যুদ্ধ হয়।
যুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সংখ্যা ছিল ১৭,০৭২ জন,[৫] যার মধ্যে ১,৮৫৯ জন ব্রিটিশ নিয়মিত, ৫,২৯৭ জন ভারতীয় সিপাহী এবং ৯,১৮৯ জন ভারতীয় অশ্বারোহী ছিলেন। জোট সেনাবাহিনীর সংখ্যা ৪০,০০০ এরও বেশি বলে অনুমান করা হয়েছিল। অন্যান্য সূত্র অনুসারে, মুঘল, আওধ এবং মীর কাসিমের সম্মিলিত সেনাবাহিনী ১০,০০০ সৈন্য নিয়ে গঠিত ছিল।[৬]
প্রধান তিনটি ভিন্ন মিত্রদের মধ্যে মৌলিক সমন্বয়ের অভাব তাদের চূড়ান্ত পরাজয়ের জন্য দায়ী ছিল।বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজেরা জয়লাভ করে। মীর কাসিম কয়েক বছর অজ্ঞাত অবস্থায় ঘুরে বেড়ান। ১৭৭৭ সালে দিল্লির কাছে এক জায়গায় তার মৃত্যু হয়। বক্সার যুদ্ধের পর ইংরেজেরা অযোধ্যাও দখল করে নেয়। সুজাউদ্দীন রোহিলাখণ্ডে আশ্রয় নেন। এমন প্রেক্ষাপটে সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ইংরেজদের সাথে সন্ধি করতে বাধ্য হন।[৭]
পরাজয়ের কারণ ও প্রভাব
[সম্পাদনা]‘স্বাধীনতার অস্তমিত সূর্য’খ্যাত মীর কাসিম বাঁক ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। তত দিনে ইংরেজেরা অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি অর্জন করে নেয়। অন্য দিকে দুর্বল সামরিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক অসচ্ছলতাই মীর কাসিমের পরাজয়ের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইংরেজদের টাকার দাবি মেটাতে মীর জাফর রাজকোষ শূন্য করে ফেলেছিলেন। বহু টাকা ঋণগ্রস্ত ছিলেন। মীর কাসিমকে এই ঋণ পরিশোধ করতে হয়। তা ছাড়া তিনি মসনদে বসার জন্য কোম্পানির কর্মকর্তাদের দুই লাখ পাউন্ড দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাতে রাজকোষ আরো শূন্য হয়ে পড়েছিল। এ জন্যই তার অর্থাভাব ছিল বেশুমার। অর্থাভাবের কারণে তিনি ভালোভাবে সৈন্যবাহিনী গঠন করতে পারেননি। দ্বিতীয়ত, নবাবের কয়েকজন হিন্দু কর্মচারী ও জমিদার বিশ্বস্ত ছিল না। তারা ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্রে মেতে থাকত। জমিদারেরা নিয়মিত খাজনা দিত না। তা ছাড়া বক্সারের যুদ্ধে অযোধ্যার নবাবের মন্ত্রী মহারাজ বেণী বাহাদুর পলাশীর যুদ্ধে মীরজাফর-জগৎশেঠদের মতোই বিশ্বাসঘাতকতা করে ইংরেজদের সাহায্য করে। সম্রাটের দিওয়ান সেতাব রায়ও কূটকৌশল অবলম্বন করে ইংরেজদের সাফল্যের পথ সহজ করে দিয়েছিল। তৃতীয়ত, মীর কাসিমের গোলন্দাজ বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা মর্কা ও আরাটোন দুইজনই আর্মেনিয়ান খ্রিস্টান ছিল। তারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিশ্বস্ততার পরিচয় দেয়নি। সামরিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতায় নবাবের সৈন্যরা ইংরেজ সৈন্যদের সমান ছিল না। রণকৌশল ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে ইংরেজদের শ্রেষ্ঠত্ব ছিল। নবাবের অনিয়ন্ত্রিত সৈন্যরা স্বভাবতই সুনিয়ন্ত্রিত ইংরেজ সৈন্যদের সাথে ভালো দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। সর্বোপরি বিশ্বাসঘাতকতা চারদিক থেকে নবাবকে ঘিরে ধরেছিল। তাই পলাশীর মতো বক্সারের যুদ্ধেও বিশ্বাসঘাতকতার জয় হয়ে থাকে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Sen, Sailendra Nath (২০০৯)। History Of The Freedom Movement In India (1857-1947) (ইংরেজি ভাষায়)। New Age International। পৃষ্ঠা ২। আইএসবিএন 978-81-224-2576-5।
- ↑ Fortescue, The J. W. (২০১৫-১০-১৫)। Fortescue's History of the British Army: Volume III (ইংরেজি ভাষায়)। Naval & Military Press। আইএসবিএন 978-1-84342-715-5।
- ↑ "বক্সারের যুদ্ধ"।
- ↑ Mehra, Parshotam (১৯৮৭)। A dictionary of modern Indian history, 1707-1947। Delhi। আইএসবিএন 0-19-561552-2। ওসিএলসি 17342844।
- ↑ Cust, Sir Edward (১৮৫৮)। Annals of the Wars of the Eighteenth Century: Compiled from the Most Authentic Histories of the Period (ইংরেজি ভাষায়)। Mitchell's military library। পৃষ্ঠা ১১৩।
- ↑ Cadell, P. R. (১৯৪১)। "560. THE BATTLE OF BUXAR, 1764"। Journal of the Society for Army Historical Research। 20 (78): 113–113। আইএসএসএন 0037-9700।
- ↑ Keay, John (২০১০-০৭-০৮)। The Honourable Company (ইংরেজি ভাষায়)। HarperCollins UK। আইএসবিএন 978-0-00-739554-5।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |