বল্লভভাই পটেল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সরদার বল্লভভাই প্যাটেল
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে নিজ দপ্তরে মন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ
জন্মঅক্টোবর ৩১, ১৮৭৫
মৃত্যুডিসেম্বর ১৫, ১৯৫০
রাজনৈতিক দলভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
আন্দোলনভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন
ভারত ছাড় আন্দোলন
পুরস্কারভারতরত্ন (১৯৯১)

বল্লভভাই প্যাটেল (গুজরাটি: વલ્લભભાઈ પટેલ; [səɾd̪aːɾ ʋəlləbʰbʰai pʌʈeːl]) (৩১ অক্টোবর ১৮৭৫ – ১৫ ডিসেম্বর ১৯৫০) ছিলেন একজন ভারতীয় পণ্ডিত ও জাতীয়তাবাদী নেতা। তিনি সরদার প্যাটেল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। তাকে ভারতের লৌহমানব বলা হয়। তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম উপ প্রধানমন্ত্রী।[১]

জন্ম ও পরিবার[সম্পাদনা]

গুজরাতের কুর্মী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্যাটেল। তার পিতা-মাতা ছিলেন জাভেরভাই ও লাডবাই। তার বাবা ঝাঁসির রানির সেনাবাহিনীতে কাজ করেছিলেন। তার মা ছিলেন একজন খুব আধ্যাত্মিক মহিলা।১৮৯১ সালে তিনি জাভেরবেনকে বিয়ে করেন ।এই দম্পতির দুটি সন্তান হয়। একজন হলেন মণিবেন প্যাটেল (১৯০৩-১৯৯০) নামে এক মেয়ে এবং এক ছেলে দহিয়াভাই প্যাটেল (১৯০৬-১৯৭৩)। সর্দার প্যাটেলের কন্যা ছিলেন একজন কর্মী এবং তার পুত্র ভারতের সংসদ সদস্য ছিলেন।

শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

গুজরাতি মিডিয়াম স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু করে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল পরবর্তীকালে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে স্থানান্তরিত হন।১৮৯৭ সালে তিনি উচ্চ বিদ্যালয় পাস করেন এবং আইন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন।তিনি তুলনায় বেশি বয়েসে ম্যাট্রিক পাশ করেন (২২ বছর)।[২] তিনি আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করতে ১৯১০ সালে ইংল্যান্ডে যান। তিনি ১৯৩৩ সালে ইনস অফ কোর্ট থেকে আইন বিভাগে ডিগ্রী সম্পন্ন করেন ।ভারতে ফিরে এসে তিনি গুজরাতের গোধরায় তাঁর আইন অনুশীলন শুরু করেন। আইনি দক্ষতার জন্য তাকে ব্রিটিশ সরকার অনেক লাভজনক পদে প্রস্তাব দিয়েছিল তবে তিনি সব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি ব্রিটিশ সরকার এবং তাদের আইনের কট্টর বিরোধী ছিলেন । তাই ব্রিটিশদের পক্ষে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

শিক্ষা সম্পন্ন করার পর, তিনি আইন পড়তে আগ্রহী হন এবং ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য লন্ডনে যান। ভারতে ফিরে এসে একজন আইনজীবী হিসেবে কাজে যোগ দান করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তিনি প্রথম উপ- প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন।

ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯১৭ সালে সর্দা‌র বল্লভভাই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের গুজরাত শাখার সেক্রেটারি হিসাবে নির্বাচিত হন । ১৯১৮ সালে কায়রায় বন্যার পরে ব্রিটিশরা জোর করে কর চাপিয়ে দিলে তিনি কৃষকদের কর প্রদান না করার জন্য একটি বিশাল "কর শুল্ক অভিযান" পরিচালনা করেছিলেন। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে কৃষকদের কাছ থেকে নেওয়া জমি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করেছিল। তাঁর এলাকার কৃষকদের একত্রিত করার প্রচেষ্টা তাঁকে 'সর্দার' উপাধি দিয়েছিল। তিনি গান্ধী দ্বারা চালিত অসহযোগ আন্দোলনকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেছিলেন। তিনি তার সাথে জাতি সফর করেছিলেন।এতে তিনি ৩০০,০০০ সদস্য নিয়োগ করেছিলেন এবং ১.৫ মিলিয়নের ও বেশি সংগ্রহ করতে সহায়তা করেছিলেন।

১৯২৮ সালে বারদোলির কৃষকরা আবার "ট্যাক্স-বৃদ্ধির" সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। দীর্ঘ সময় তলব করার পরে কৃষকরা অতিরিক্ত শুল্ক দিতে অস্বীকৃতি জানালে সরকার প্রতিশোধ নেওয়ার সাথে সাথে তাদের জমি দখল করে। এই আন্দোলনটি ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরেছিল। বিভিন্ন দফায় আলোচনার পরে সরকার ও কৃষকদের প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি চুক্তি হওয়ার পরে জমিগুলি কৃষকদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

১৯৩০ সালে মহাত্মা গান্ধীর উদ্যোগে বিখ্যাত লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য কারাবন্দী নেতাদের মধ্যে সর্দা‌র বল্লভভাই পটেল ছিলেন। "লবণ আন্দোলন" চলাকালীন তার অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য অসংখ্য লোকের দৃষ্টিভঙ্গিকে অনুপ্রাণিত করেছিল যারা পরবর্তীকালে এই আন্দোলনকে সফল করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। কংগ্রেস সদস্যদের অনুরোধে গান্ধী কারাগারে বন্দী থাকাকালীন তিনি গুজরাত জুড়ে সত্যগ্রহ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

১৯৩১ সালে সর্দার প্যাটেলকে ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড আরউইন এবং মহাত্মা গান্ধীর মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির পরে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এই চুক্তিটি গান্ধি-আরউইন চুক্তি হিসাবে পরিচিতি পায়। একই বছর তিনি করাচি অধিবেশনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ।যেখানে দলটি তার ভবিষ্যতের পথ নির্ধারণ করেছিল। কংগ্রেস মৌলিক অধিকার এবং মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল।

১৯৩৪ সালের আইনসভা নির্বাচনের সময় সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষে প্রচার করেছিলেন। যদিও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি কিন্তু নির্বাচনের সময় তিনি তার সহকর্মী সাথীদের সহায়তা করেছিলেন।

১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তিনি গান্ধীর প্রতি তার অটল সমর্থন অব্যাহত রেখেছিলেন যখন বেশ কয়েকজন সমসাময়িক নেতা পরবর্তীকালের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন। তিনি ধারাবাহিকভাবে হৃদয় অনুভূত বক্তৃতায় এই আন্দোলনের এজেন্ডা প্রচারে সারাদেশে ভ্রমণ চালিয়ে যান। ১৯৪২ সালে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং কংগ্রেসের অন্যান্য নেতাদের সাথে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি আহমেদনগর দুর্গে বন্দী ছিলেন।

সরদার প্যাটেলের সাথে প্রায়শই কংগ্রেসের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের প্রচুর দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। ১৯৩৬ সালে পরবর্তীকালে কংগ্রেসে সমাজতন্ত্র গ্রহণ করা হলে তিনি প্রকাশ্যে জওহরলাল নেহেরুর উপর তার বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। প্যাটেলের নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর সম্পর্কে ভাল ধারণা ছিল না এবং তাকে " ক্ষমতালোভী" বলে মনে করতেন।

সর্দার পটেল ও ভারত ভাগ[সম্পাদনা]

দ্বিজাতি তত্ত্বের জনক ছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। মুসলিম লীগ নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও কংগ্রেস এর বল্লভভাই প্যাটেল সহ তার একাধিক অনুসারীর নেতৃত্বে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন স্বাধীনতার ঠিক আগে দেশজুড়ে একের পর এক হিংস্র হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সূত্রপাত করেছিল। আবার অন্যদিকে সর্দার প্যাটেল বুঝতে পারেন ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পরও প্রকাশ্য সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বের ফলে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রে একটি দুর্বল সরকার প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা রয়েছে। যা একটি গণতান্ত্রিক দেশকে সুসংহত করার জন্য বিপর্যয়কর হত। প্যাটেল ভি.পি.মেননের সাথে এর সমাধান নিয়ে কাজ করেন । ১৯৪৬ সালের ডিসেম্বরে একজন সরকারী কর্মচারী এবং রাষ্ট্রের ধর্মীয় প্রবণতার উপর ভিত্তি করে একটি পৃথক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার যে পরামর্শ ভি.পি.মেনন দেন তা গ্রহণ করেছিলেন। পার্টিশন কাউন্সিলে তিনি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।

স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে অবদান[সম্পাদনা]

ভারত স্বাধীনতা অর্জনের পরে পটেল প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। পটেল স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতবর্ষে প্রায় ৫২২ টি রাজ্যকে ভারতের অধীনে এনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ব্রিটিশ সরকার এই শাসকদের দুটি বিকল্প দিয়েছিল - তারা ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারে; বা তারা স্বাধীন থাকতে পারে। এই ধারা অসুবিধা বাড়িয়ে তোলে। কংগ্রেস এই ভয়ঙ্কর কাজটি সর্দার প্যাটেলকে অর্পণ করেছিলেন যিনি ১৯৪৭ সালের তিনি রাজ্যগুলোর সংহতকরণের জন্য তদারকি শুরু করেছিলেন। জম্মু ও কাশ্মীর, জুনাগড় ও হায়দরাবাদ বাদে সকল রাজ্যকে সংহত করতে তিনি সফল হয়েছিলেন। অবশেষে তিনি তার তীব্র রাজনৈতিক বুদ্ধির সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছিলেন এবং জম্মু ও কাশ্মীর, জুনাগড় ও হায়দরাবাদ কে ভারতের অধীন করেছিলেন। আমরা যে ভারতকে আজ দেখতে পাচ্ছি তা হল সরদার বল্লভভাই পটেল যে প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন তার ফল।

পটেল ছিলেন ভারতের গণপরিষদের শীর্ষস্থানীয় সদস্য এবং ডাঃ বি.আর. আম্বেদকরকে তার পরামর্শে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি ভারতীয় প্রশাসনিক পরিষেবা এবং ভারতীয় পুলিশ পরিষেবা প্রতিষ্ঠার মূল শক্তি ছিলেন। গুজরাতের সৌরাষ্ট্রের সোমনাথ মন্দির পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা শুরু করার জন্য তিনি ব্যক্তিগত আগ্রহ নিয়েছিলেন। পটেল ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে কাশ্মীরে আক্রমণ করার জন্য পাকিস্তানের প্রচেষ্টার কড়া জবাব দিয়েছিলেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সেনাবাহিনীর সম্প্রসারণ করেছিলেন এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত দিকগুলির উন্নতি করেছিলেন। তিনি নেহরুর শরণার্থী ইস্যুতে পাকিস্তানের সাথে আচরণ সম্পর্কে একমত ছিলেন না। তিনি পাঞ্জাব , দিল্লিতে এবং পরে পশ্চিমবঙ্গে একাধিক শরণার্থী শিবির তৈরি করেছিলেন।

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের উপর নিষেধাজ্ঞা[সম্পাদনা]

অপরটি হল আর.এস.এস.। আমি তাদের কাছে একটি খোলা প্রস্তাব রেখেছিলাম। তোমাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন কর, গোপনীয়তা ত্যাগ করো, ভারতের সংবিধানকে সম্মান কর, (জাতীয়) পতাকার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন কর এবং আমরা যে তোমাদের কথায় আস্থা রাখতে পারি সে কথা আমাদের বিশ্বাস করাও। তারা বন্ধুই হোক বা শত্রুই হোক, এমনকি তারা আমাদের প্রিয় সন্তান হলেও, আমরা তাদের সেই আগুন নিয়ে খেলতে দেব না যা বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিতে পারে। যুবকদের সহিংস ও ধ্বংসাত্মক কাজকর্মে লিপ্ত করতে দেওয়াটা অপরাধ।

সর্দার বল্লভভাই পটেল, একটি জনসভায় আর.এস.এস. প্রসঙ্গে[৩][৪][৫]

১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সদস্য নাথুরাম গডসের হাতে মহাত্মা গান্ধী নিহত হয়েছিলেন[৬] এই হত্যাকাণ্ডের পর আরএসএস-এর অনেক বিশিষ্ট নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং সেই বছরই ৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই পটেল সংগঠন হিসেবে আরএসএস-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের বিচার চলাকালীন গডসে দাবি করেছিল যে, সে ১৯৪৬ সালেই সংগঠনের সদস্যপদ ত্যাগ করেছিল।[৭] কিন্তু প্যাটেল মন্তব্য করেছিলেন যে, "গান্ধীর মৃত্যুর পর আরএসএস-এর লোকজন উল্লাসে মেতে ওঠে ও মিষ্টি বিতরণ করে।"[৮]

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট অভিযুক্ত আরএসএস নেতাদের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়। ১৯৪৮ সালের অগস্ট মাসে মুক্তিলাভের পর গোলওয়ালকর প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুকে আরএসএস-এর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লেখে। নেহেরু জানান, সেই ব্যাপারটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এরপর গোলওয়ালকর বিষয়টি নিয়ে বল্লভভাই পটেলের সঙ্গে আলোচনা করে। তখন পটেল নিষেধাজ্ঞা তোলার চূড়ান্ত প্রাক্-শর্ত হিসেবে দাবি করেন যে, আরএসএস-কে একটি আনুষ্ঠানিক লিখিত সংবিধান গ্রহণ করতে হবে[৯] ও তা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। পটেল এই সংবিধানে আরএসএস-কে যে কয়েকটি বিষয় উল্লেখের নির্দেশ দেন সেগুলি ছিল ভারতের সংবিধানের প্রতি আনুগত্য, ভারতের জাতীয় পতাকা হিসেবে ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকাকে মেনে নেওয়া, সংগঠনের সভাপতির ক্ষমতা নির্দিষ্ট করে দেওয়া, অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের ব্যবস্থার মাধ্যমে সংগঠনটিকে গণতান্ত্রিক করে তোলা, শিশুদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার আগে তাদের বাবা-মায়ের অনুমতি নেওয়া এবং সহিংসতা ও গোপনীয়তা বর্জন করা।[১০][১১][১২]

এই দাবিগুলির বিরুদ্ধে গোলওয়ালকর এক বিরাট বিক্ষোভের আয়োজন করে। সেই সময় আবার তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। পরে আরএসএস একটি সংবিধানের খসড়া প্রস্তুত করে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে সেই সংবিধানে পটেলের কোনও দাবিই মানা হয়নি। আরেকবার বিক্ষোভ সংগঠনের একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর সংগঠনের পরিচালক নির্বাচন এবং শিশুদের সদস্যপদ দানের বিষয় দু’টি ছাড়া বাকি সব দাবিই আরএসএস-এর সংবিধানের একটি সংশোধনীর মাধ্যমে মেনে নেওয়া হয়। যদিও সংগঠনের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের বিষয়টি যা এই সংবিধানে লিপিবদ্ধ হয়েছিল তা একটি ‘নির্লক্ষ্য পত্র’ই থেকে যায়।[১৩]

১৯৪৯ সালের ১১ জুলাই ভারত সরকার একটি বিবৃতি প্রকাশ করে আরএসএস-এর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। সেই বিবৃতিতে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল যে, গোলওয়ালকর অঙ্গীকার করেছে যে সংগঠনটি ভারতের সংবিধানের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখবে এবং আরএসএস-এর সংবিধানে ভারতের জাতীয় পতাকাকে মেনে নেওয়া ও সম্মান জানানোর বিষয়টি আরও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করবে। সেই সঙ্গে সংগঠনের কাজকর্মও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলবে।[১৪][১২]

গান্ধীর প্রভাব[সম্পাদনা]

গান্ধীর সাথে পটেল

পটেলের রাজনীতি এবং চিন্তাভাবনার উপর গান্ধীর গভীর প্রভাব ছিল । তিনি গান্ধীর প্রতি অটল সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং সারা জীবন তার নীতির পাশে ছিলেন। জওহরলাল নেহেরু, চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী এবং মাওলানা আজাদ সহ নেতারা আইন অমান্য আন্দোলন ব্রিটিশদের দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করবে মহাত্মা গান্ধীর এই ধারণার সমালোচনা করেছিলেন।কিন্তু পটেল গান্ধীর এ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন। কংগ্রেস হাই কমান্ডের অনীহা সত্ত্বেও, মহাত্মা গান্ধী এবং সরদার বল্লভভাই পটেল অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটিকে নাগরিক অবাধ্যতা আন্দোলনকে অনুমোদনের জন্য বাধ্য করেছিলেন। গান্ধীর অনুরোধে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থিতা ছেড়ে দেন। গান্ধীর মৃত্যুর পরে তিনি এক বড় হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন, যদিও পরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন।

সম্মাননা[সম্পাদনা]

স্ট্যাচু অফ ইউনিটি বা ঐক্যের মূর্তি

তার সম্মাননায় ভারতের গুজরাতে তার জন্মস্থানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্য তৈরি করা হয়। যার নাম দেওয়া হয় "ঐক্যের মূর্তি।" যা গত ৩১শে অক্টোবর ২০১৮ইং সালে উদ্ভোধন করা হয়। এইছাড়াও তার নামে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে।২০১৪ সালে তার জন্মদিবস ৩১ অক্টোবরকে রাষ্ট্রীয় একতা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

পুরস্কার ও সম্মান[সম্পাদনা]

  • ভারত-রত্ন, (১৯৯১)
  • লৌহ-মানব (উপাধি)

মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৯৫০ সালের ১৫ ডিসেম্বর মুম্বাইতে সৰ্দার বল্লভভাই পটেলের পরলোকপ্রাপ্তি ঘটে।

স্মৃতিচারণ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ভারতে বিশ্বের সর্বোচ্চ ভাস্কর্য"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-৩০ 
  2. "Biography of Sardar Vallabhbhai Patel - History of Sardar Vallabhbhai Patel, Sardar Patel" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-৩১ 
  3. Patel, Vallabhbhai (১৯৭৫)। Sardar Patel, in Tune with the Millions (ইংরেজি ভাষায়)। Sardar Vallabhbhai Patel Smarak Bhavan। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২১ 
  4. Nandurkar, G M (১৯৬৫)। "This Was Sardar The Commemorative Volume Vol 3"। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২১ 
  5. মূল ইংরেজি: The other is the R.S.S. I have made them an open offer. Change your plans, give up secrecy, respect the Constitution of India, show your loyalty to the (National) Flag and make us believe that we can trust your words. Whether they are friends or foes, and even if they are our own dear children, we are not going to allow them to play with fire so that the house may be set on fire. It would be criminal to allow young men to indulge in acts of violence and destruction..
  6. Jha, Dhirendra K. (১ জানুয়ারি ২০২০)। "Historical records expose the lie that Nathuram Godse left the RSS"The Caravan 
  7. Gerald James Larson (১৯৯৫)। India's Agony Over ReligionState University of New York Press। পৃষ্ঠা 132আইএসবিএন 0-7914-2412-X 
  8. Singh 2015, পৃ. 82।
  9. Panicker, P L John। Gandhian approach to communalism in contemporary India (পিডিএফ)। পৃষ্ঠা 100। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  10. Jaffrelot 1996, পৃ. 88, 89।
  11. Graham 2007, পৃ. 14।
  12. Abdul Gafoor Abdul Majeed Noorani (২০০০)। The RSS and the BJP: A Division of Labour। LeftWord Books। পৃষ্ঠা 28–। আইএসবিএন 978-81-87496-13-7 
  13. Jaffrelot 1996, পৃ. 89।
  14. Curran, Jean A. (১৭ মে ১৯৫০)। "The RSS: Militant Hinduism"। Far Eastern Survey19 (10): 93–98। জেস্টোর 3023941ডিওআই:10.2307/3023941 

বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]