পুলিশ সুপার (বাংলাদেশ)
পুলিশ সুপার বা এসপি জেলা পুলিশের সবচেয়ে সিনিয়র অফিসার। তিনি জেলা পুলিশের প্রধান। তিনি বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের পঞ্চম গ্রেডের সদস্য। বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী পুলিশ সুপারের পদমর্যাদা ২৫। পুলিশ সুপার দায়েরকৃত মামলার যথাযথ তদন্ত নিশ্চিত করে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক নির্ধারিত আমলী আদালতের অধিক্ষেত্রের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের ব্যবস্থা করেন। তিনি অপরাধ প্রতিরোধ, উদঘাটন এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে সচেষ্ট থাকেন। তিনি আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ওয়ারেন্ট, সমন, তদন্তের আদেশ ইত্যাদি তামিল ও বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আদালত কর্তৃক সুষ্ঠু বিচারকার্য সম্পাদনার স্বার্থে তিনি প্রসিকিউশন বিভাগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদালতের সাথে সমন্বয় ও সম্পর্ক রক্ষা করেন। জেলা পুলিশের পক্ষে পুলিশ সুপার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধের তদন্ত ও আইনের প্রয়োগ সহ যাবতীয় কার্যকলাপের জন্য চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট জবাবদিহি করেন।[১] [২]
বাংলাদেশের সংবিধান এর ৩৩(২) অনুচ্ছেদ এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারা অনুযায়ী পুলিশ সুপার কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের সময় হতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে জেলার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা তার কর্তৃক নির্ধারিত একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে উপস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পুলিশ তদন্ত সহ আইনের প্রয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যকলাপের বিবরণ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা তার দ্বারা নির্ধারিত আমলী আদালতের অধিক্ষেত্রের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট দাখিল করে। পুলিশ গুরুতর বা সূত্রবিহীন (Clueless) অপরাধের ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোনো আসামীকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭(১) ধারা মোতাবেক চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা তার দ্বারা নির্ধারিত প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট রিমান্ডের আবেদন করেন। পুলিশ সুপার উক্ত রিমান্ডের আবেদন অগ্রগামী করেন। প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট অনুমতি দিলে পুলিশ আসামীকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। জেলার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও পুলিশ বিভাগের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয়ের জন্য ক্রিমিনাল রুলস এন্ড অর্ডারস, ২০০৯ এর বিধান মোতাবেক প্রতি মাসে একবার পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয় যেখানে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদাধিকার বলে সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উক্ত কনফারেন্সের সদস্য।
দায়িত্ব ও কর্তব্য
[সম্পাদনা]পুলিশ সুপার অধস্তন পুলিশ সদস্যদের কল্যাণ, প্রশিক্ষণ, ব্রিফিং, শৃঙ্খলা ও পদায়নসহ সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পাদন ও তদারকি করেন। তিনি তার অধিক্ষেত্রে সর্বসাধারণের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, খেলাধুলা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন সংক্রান্তে আবেদনপত্র প্রয়োজনীয় যাচাই বাছাই করত: অনুমতি প্রদান সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি রাষ্ট্র বিরোধী, সমাজ বিরোধী, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন কার্যকলাপ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেন যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন এবং সকল ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ নির্মূলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা তথা অপরাধ দমন ও নিবারণের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। জেলায় কোন অপ্রীতিকর, অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। পাশাপাশি প্রতি মাসে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং সিভিল সার্জন একটি সমন্বয়ক সভার আয়োজন করেন। মাসিক সভাটিতে জেলার সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং স্বাস্থ্যখাত নিয়ে আলোচনা হয়।
পদমর্যাদা
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী পুলিশ সুপারের অবস্থান ২৫ নম্বরে। উল্লেখ্য, জেলার উল্লেখযোগ্য শীর্ষ কর্মকর্তাগণের মধ্যে জেলা ও দায়রা জজের পদক্রম ১৬, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদক্রম ১৭, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদক্রম ২১, জেলা প্রশাসকের পদক্রম ২৪ এবং সিভিল সার্জনের পদক্রম ২৫ নম্বর।