শাহাদত
| আকীদা ইসলাম বিষয়ক ধারাবাহিক রচনার একটি অংশ |
|---|
|
১ আহমাদিয়া, কুতুববাদ ও ওয়াহাবিবাদ সহ ২ আলাওয়ি, আসাসিন ও দ্রুজ সহ ৩ আলেভি, বাক্তাশি, কিযিবাশ ও কালান্দারিয়া সহ ৪ আযারিকা, আজারদি, হারুবিয়া, নাজদাত এবং সুফ্রিয়া সহ |

শাহাদাত (আরবি: شهادة ) একটি মুসলিম বিশ্বাস। আরবীতে এর অর্থ "সাক্ষ্য দেয়া"। ইসলামে শাহাদাত বা শাহাদা বলতে আল্লাহ্র একত্ব ও মুহম্মদ যে তার শেষ নবী তার শপথ নেয়াকে বোঝায়। শাহাদাত বা শাহাদা আবৃত্তি করাকে মুসলিমরা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি মনে করেন।
মূলবাক্য
[সম্পাদনা]আরবি:
- أشهد أن لا إله إلاَّ لله ، وأشهد أن محمد رسول الله
বাংলা অনুবাদ: "আমি সাক্ষ্যি দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত খোদা নাই, আর আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহম্মদ আল্লাহর পয়গম্বর।"
সাক্ষ্যসমূহ
[সম্পাদনা]ঘোষণাগুলি নিম্নরূপ:[১][২][৩][৪]
- لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ
- লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্হু
- আইপিএ: [laː ʔi.laː.ha ʔil.la‿ɫ.ɫaː.hu]
- আল্লাহ ছাড়া কোনো খোদা নাই।
উপরের বিবৃতি দুটি সাধারণ আশহাদু আন (“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে”) বাক্যাংশ দ্বারা শুরু হয়, ফলে পূর্ণরূপ দাঁড়ায়:
- أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ ٱللَّٰهِ
- আশ্হাদু আল-লাইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার্ রসূলুল্লাহ্
- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ বিনে কোনো খোদা নাই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহম্মদ আল্লাহর পয়গম্বর।
শিয়া ইসলামে এর সাথে তৃতীয় সাক্ষ্য (শাহাদত আস-সলাসা) যোগ করা হতে পারে:
- عَلِيٌّ وَلِيُّ ٱللَّٰهِ
- ʿআলিয়্যুন ওয়ালিউল্লাহ
- আইপিএ: [ʕa.liː.jun wa.liː.ju‿ɫ.ɫaː.h]
- আলী আল্লাহর ওলী।
ফলস্বরূপ:
- أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ ٱللَّٰهِ وَأَشْهَدُ أَنَّ عَلِيًّا وَلِيُّ ٱللَّٰهِ
- আশ্হাদু আল-লাইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার্ রসূলুল্লাহি ওয়া আশ্হাদু আন্না ʿআলিয়্যুন ওয়ালিউল্লাহ
- আমি সাক্ষ্যি দিচ্ছি যে, আল্লাহ বিনে খোদা নাই। আমি আরও সাক্ষ্যি দিচ্ছি যে, মুহম্মদ আল্লাহর রসূল। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী আল্লাহর ওলী।
পতাকায় ব্যবহার
[সম্পাদনা]
কিছু ইসলামিক পতাকায় শাহাদাহ দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ওয়াহাবিরা আঠারো শতক থেকে তাদের পতাকায় শাহাদাহ ব্যবহার করে আসছে।[৫] উসমানীয় সেনাবাহিনী প্রায়শই তাদের পতাকায় কুরআনের আয়াত এবং শাহাদাহ ব্যবহার করত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ও এই ঐতিহ্য অব্যাহত ছিল। ১৯১৪ সালে উসমানীয় তুর্কি যখন কেন্দ্রীয় শক্তিগুলোর পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়, তখন তারা এন্টেন্তে রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে। আধুনিক উসমানীয় তুর্কি সেনাবাহিনী তাদের নিয়মিত রেজিমেন্টের পতাকার একপাশে উসমানীয় রাষ্ট্রের প্রতীক এবং অন্যপাশে শাহাদাহ ব্যবহার করত। উসমানীয় রেজিমেন্টের পতাকাগুলো লাল পটভূমিতে সোনালি লেখা এবং রাষ্ট্রের প্রতীক নিয়ে গঠিত ছিল। ১৯২২ সালে সাম্রাজ্য বিলুপ্ত হওয়ার পরও আধুনিক তুরস্কে কিছুদিন এই প্রথা চালু ছিল।[৬]
শাহাদাহ্ সহ সামরিক পতাকাসমূহ
[সম্পাদনা]- ভিয়েনার যুদ্ধে (১৬৮৩) উসমানীয় সেনাবাহিনীর শাহাদাহ্ পতাকা
- মোরিয়ায় (১৬৯০) উসমানীয় সেনাবাহিনীর শাহাদাহ্ পতাকা
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধে (১৯১৪) ব্যবহৃত উসমানীয় সেনাবাহিনীর একটি রেজিমেন্টাল মানের পতাকার একপাশ, যাতে শাহাদাহ্ ছিল
শাহাদাহ্ সহ জাতীয় পতাকাসমূহ
[সম্পাদনা]- সোমালিল্যান্ড প্রজাতন্ত্র (অস্বীকৃত)
- ইয়েমেনের রাজত্ব (১৯২৩–২৭)
- আফগানিস্তানের ইসলামিক প্রজাতন্ত্র (২০০৪–২১)
গ্যালারি
[সম্পাদনা]| মার্সিয়ার রাজা ওফা-এর একটি সোনার মানকুস দিনার, যা আব্বাসীয় খিলাফতের দিনার অনুকরণে তৈরি (৭৭৪); এতে আরবি লেখায় রয়েছে: "মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল"। | |
| কায়রোর ইবনে তুলুন মসজিদের ফাতেমীয় খলিফা আল-মুস্তানসির বিল্লাহ-এর কিবলা, যেখানে শিয়া শাহাদা দেখা যায়, যা "'আলীয়্যুন ওয়ালীয়্যুল্লাহ" ("আলী আল্লাহর প্রতিনিধি") বাক্যে শেষ হয়। | |
| কুফিক অঙ্কনে শাহাদাহ্-এর প্রথম অংশ (১৩০৯), কাশান, ইরান | |
| ইরানের আত্তার নিশাপুরির সমাধিতে লেখা শিয়া শাহাদাহ্। প্রথম অংশটি সাদা রঙে, বাকিটা নীল রঙে লেখা। | |
| পাকিস্তানের লাহোরে অবস্থিত ওয়াজির খান মসজিদের টাইল প্যানেল। উপরের অংশে শাহাদাহ্ লেখা রয়েছে। | |
| মামলুক রাজবংশের তুঘরা শৈলীতে লেখা শাহাদাহ্, নিচের ডান পাশে স্বাভাবিক ও বাম পাশে প্রতিচ্ছবি আকারে। | |
| বর্গাকার কুফিক লিপিতে লেখা শাহাদাহ্, যেখানে ভবনের মাথায় গম্বুজ ও মিনার দেখা যায়, বাম পাশে এর প্রতিচ্ছবি রয়েছে। | |
| ফাতেমীয় কায়রোর বাব আল-ফুতুহ/বাব আল-নাসর-এ খোদাইকৃত শিয়া শাহাদাহ্, শেষে লেখা আছে ʿআলীয়্যুন ওয়ালীয়্যুল্লাহ ("আলী আল্লাহর প্রতিনিধি")। |
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Malise Ruthven (জানুয়ারি ২০০৪)। Historical Atlas of Islam। Harvard University Press। পৃ. ১৪। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৬৭৪-০১৩৮৫-৮। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ Richard C. Martín। Encyclopedia of Islam & the Muslim World। Granite Hill Publishers। পৃ. ৭২৩। আইএসবিএন ৯৭৮-০-০২-৮৬৫৬০৩-৮।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Frederick Mathewson Denny (২০০৬)। An Introduction to Islam। Pearson Prentice Hall। পৃ. ৪০৯। আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৩-১৮৩৫৬৩-৪। ৫ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭।
- ↑ Mohammad, Noor (১৯৮৫)। "The Doctrine of Jihad: An Introduction"। Journal of Law and Religion। ৩ (2): ৩৮১–৩৯৭। ডিওআই:10.2307/1051182। জেস্টোর 1051182।
- ↑ Firefly Books (২০০৩)। ফায়ারফ্লাই গাইড টু ফ্ল্যাগস অব দ্য ওয়ার্ল্ড। ফায়ারফ্লাই বুকস। আইএসবিএন ৯৭৮-১-৫৫২৯৭-৮১৩-৯। ১৮ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১৮।
- ↑ "দমাস্কাসের কাছে ১৯১৮ সালে দখলকৃত ৪৬তম তুর্কি ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের রেজিমেন্টাল মানদণ্ড" (ইংরেজি ভাষায়)। অস্ট্রেলিয়ান যুদ্ধ স্মারক। ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০২৪।
মানদণ্ডটির অপর পাশেও সোনালি সুতোয় সূচিকর্ম করা হয়েছে এবং এতে আরবি লিপিতে কুরআনের দুটি পাঠ রয়েছে। এগুলোর অনুবাদ হচ্ছে 'আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই' এবং 'মুহাম্মদ, আল্লাহর রাসূল'। মানদণ্ডটি মূলত একটি খুঁটির সঙ্গে সংযুক্ত ছিল যার শীর্ষে নিকেল ধাতু দ্বারা তৈরি এক খণ্ড অর্ধচন্দ্র এবং পিতলের একটি তারা ছিল। খুঁটির সঙ্গে দুটি সোনালি বুলিয়ন এবং টকটকে রেশমি দড়ি ও ঝালরও যুক্ত ছিল। মানদণ্ডের যে পাশে সুলতানের তুঘরা ছিল, তা অতিরিক্ত আলোতে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- "শাহাদাহ" সত্য ও পথ হিসাবে। ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে।
- "আরবি বাক্যাংশ ও ইসলাম সম্পর্কে"। Essaouira। ৬ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৪।







