পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি
পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি | |
---|---|
সংক্ষেপে | পূবাসপা/পিপিইবি |
প্রতিষ্ঠা | ৩ জুন ১৯৭১ |
পূর্ববর্তী | মাও সেতুং চিন্তাধারা গবেষণা কেন্দ্র পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন |
সংবাদপত্র | লাল ঝান্ডা |
ভাবাদর্শ | সাম্যবাদ, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ, মাওবাদ |
রাজনৈতিক অবস্থান | কমিউনিস্ট, বামপন্থী |
আন্তর্জাতিক অধিভুক্তি | বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলন |
আনুষ্ঠানিক রঙ | লাল |
স্লোগান | দুনিয়ার মজদুর, এক হও! |
সংগীত | কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল |
দলীয় পতাকা | |
বাংলাদেশের রাজনীতি রাজনৈতিক দল নির্বাচন |
বাংলাদেশে সাম্যবাদ |
---|
সিরিজের অংশ |
সাম্যবাদ প্রবেশদ্বার |
পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি হচ্ছে বাংলাদেশের একটি কমিউনিস্ট দল। এই দলটি দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে একটি ভূমিকা পালন করে। ১৯৭০-এর প্রথম দিকে এটি নতুন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সমর্থনে সশস্ত্র গণযুদ্ধের সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকেই এর রাজনৈতিক ভাগ্য দুলতে থাকে, কয়েকটি অভ্যন্তরীণ বিভক্তিতে আক্রান্ত হয়। গ্রুপটি এখনো কার্যকর এবং তাদের শত্রুপক্ষ দ্বারা তীব্র আক্রমণের শিকার হয়।
উৎপত্তি
[সম্পাদনা]গ্রুপটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চীনমুখী প্রবণতা থেকে গড়ে ওঠে। ১৯৬৭ সালে ঢাকায় সিরাজ সিকদার মাও সেতুং চিন্তাধারা গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। এই কেন্দ্রটি পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামির ক্যাডার দ্বারা দৈহিকভাবে কয়েকবার আক্রান্ত হয়। ৮ জানুয়ারি, ১৯৬৮ সালে এই গ্রুপটি পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন গঠন করেন। গঠনের সম্মেলনটি একদিনের কার্যক্রমে ঢাকার একটি পাটকলে শেষ হয়। সম্মেলনটি কেন্দ্রের ৪৫-৫০ জন অনুসারীর উপস্থিতিতে শেষ হয়।[১]
খসড়া থিসিস
[সম্পাদনা]পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন উপস্থিত করে 'পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের খসড়া থিসিস'। এই থিসিসে সিরাজ সিকদার পূর্ব বাংলাকে পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ বলে অভিহিত করেন। প্রধান দ্বন্দ্ব নির্ধারণ করেন বর্তমান সামাজিক বিকাশের প্রক্রিয়ায় পূর্ব বাংলার জনগণের সাথে পাকিস্তানি উপনিবেশবাদীদের জাতীয় দ্বন্দ্ব। থিসিসে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার আহ্বান জানানো হয়। থিসিসে বলা হয়, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ বর্তমান বিশ্ব প্রতিক্রিয়ার কেন্দ্র। ঘটনাবলী প্রমাণ করেছে যে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ দুনিয়ার জনগণের প্রধান শত্রু।[২]
পার্টির প্রথম কংগ্রেস
[সম্পাদনা]১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সিরাজ সিকদারকে সভাপতি করে একটি অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত হয়।[২]
সিরাজ সিকদারের মৃত্যু
[সম্পাদনা]সিরাজ সিকদারের মৃত্যু সম্পর্কে অ্যান্থনি মাসকারেনহাস বলেছেন সিরাজ সিকদার ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ডিসেম্বরের শেষ দিকে চট্টগ্রামের কাছাকাছি এক এলাকা থেকে (টেকনাফ) পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হন। জাকারিয়া চৌধুরীর[৩] মতে, সিরাজ সিকদারকে হাতকড়া লাগিয়ে চোখ-বাঁধা অবস্থায় ঢাকাস্থ রমনা রেসকোর্সের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে নিয়ে আসা হয়। তারপর ২ জানুয়ারি ১৯৭৫ গভীর রাতে এক নির্জন রাস্তায় নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।[৪] অনেকের মতে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের হালিশহরে সরকারী গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তাকে গ্রেপ্তার করেন। আবার অন্য তথ্য মতে তিনি দলের নেতৃস্থানীয় কর্মীদের এক বৈঠক শেষে দলের কেন্দ্রীয় হিসাবরক্ষক আকবরকে সঙ্গে নিয়ে বেবী ট্যাক্সিযোগে ফিরছিলেন। পথে চট্টগ্রামের নিউ মার্কেটের সামনে সাদা পোশাকের পুলিশ ঘেরাও করে তাকে গ্রেপ্তার করে। ওই দিনই তাকে বিমানে ঢাকায় আনা হয়। পরদিন শেরেবাংলা নগর থেকে সাভারে রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্পে যাওয়ার পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে হত্যা করে।[৫]
পার্টির বর্তমান অবস্থা
[সম্পাদনা]বর্তমানে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির উত্তরাধিকার হিসেবে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টিকে (সিসি বা কেন্দ্রীয় কমিটি) উল্লেখ করা হয়। এখনো পার্টি আন্ডারগ্রাউন্ড গ্রুপ হিসেবে ক্রিয়াশীল এবং সশস্ত্র বিপ্লবের কর্মসূচি আছে। এদের যেসব এলাকায় কর্মসূচি আছে সেগুলো হচ্ছে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, রাজশাহী এবং খুলনায়।[৬][৭] পার্টি বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলন এবং কম্পোসার সদস্য।[৮]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Amin, Md. Nurul. Maoism in Bangladesh: The Case of the East Bengal Sarbohara Party in Asian Survey, Vol. 26, No. 7. (Jul., 1986), pp. 759-773.
- ↑ ক খ জয়নাল আবেদীন, উপমহাদেশের জাতীয়তাবাদী ও বামধারার রাজনীতি, প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, বাংলাপ্রকাশ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, পৃষ্ঠা- ২৪৫-২৪৭
- ↑ জাকারিয়া চৌধুরী হলেন সিরাজ সিকদারের ছোটবোন ভাস্কর শামীম সিকদারের স্বামী
- ↑ অ্যান্থনী মাসকেরেনহাস, বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ, মোহাম্মাদ শাজাহান অনূদিত, হাক্কানী পাবলিশার্স, চতুর্থ মূদ্রণ-জুলাই ২০০৬।
- ↑ আশরাফ কায়সার, বাংলাদেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, দ্বিতীয় মুদ্রণ, জুলাই ১৯৯৮, পৃষ্ঠা ৫৬-৫৭।
- ↑ "নাটোরে পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টির পোস্টারিং ও ফাকাগুলি বর্ষণ"। dailynayadiganta.com। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ মে ৮, ২০২০।
- ↑ Alam, M.J. 10 outlawed parties active in half of Bangladesh ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে Ittefaq. 30 May 2004.
- ↑ আকবর হোসেন (৯ এপ্রিল ২০১৯)। "যেভাবে চরমপন্থায় রূপ নিল বাংলাদেশের উগ্র বাম আন্দোলন"। বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ মে ৮, ২০২০।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- মুনীর মোরশেদ (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭)। সিরাজ সিকদার ও পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি, ১৯৬৭-১৯৯২। ঢাকা: ঘাস ফুল নদী। আইএসবিএন 984-8215-04-2।