১৯৭২–১৯৭৫ বাংলাদেশে কমিউনিস্ট বিদ্রোহ
১৯৭২–১৯৭৫ বাংলাদেশে কমিউনিস্ট বিদ্রোহ | ||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
| ||||||||
বিবাদমান পক্ষ | ||||||||
বাংলাদেশ সরকার সমর্থন: ভারত |
মার্কসবাদী বিদ্রোহী: জাসদ |
মাওবাদী বিদ্রোহী: পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | ||||||||
শেখ মুজিবুর রহমান এ. এন. এম. নূরুজ্জামান কাজী মুহাম্মদ শফিউল্লাহ |
আবু তাহের মোহম্মদ আব্দুল জলিল আ. স. ম. আবদুর রব হাসানুল হক ইনু | সিরাজ সিকদার | ||||||
জড়িত ইউনিট | ||||||||
গণবাহিনী | পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট | |||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | ||||||||
অজ্ঞাত |
৬০,০০০ নিহত (জাসদের দাবি) ২,০০০ নিহত (নিরপেক্ষ দাবি) | অজ্ঞাত |
বাংলাদেশে সাম্যবাদ |
---|
সিরিজের অংশ |
সাম্যবাদ প্রবেশদ্বার |
১৯৭২–১৯৭৫ বাংলাদেশে কমিউনিস্ট বিদ্রোহ বলতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরবর্তী ১৯৭২-১৯৭৫ সময়কে বোঝায় যখন বামপন্থী বিদ্রোহী বিশেষত গণবাহিনী শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।[১][২][৩]
সরকার জাতীয় রক্ষী বাহিনী গঠনের মাধ্যমে এতে সাড়া দেয়, যা সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন শুরু করে।[১] এই বাহিনী রাজনৈতিক হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য অভিযোগে জড়িত হয়ে পড়ে, যার মধ্যে[৪][৫][৬] ডেথ স্কোয়াডদের দ্বারা গুলি চালানো,[৭] জোরপূর্বক গুম[৮] এবং ধর্ষণ ইত্যাদি বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডও জড়িত ছিল।[৬]
পটভূমি
[সম্পাদনা]১৯৭২ সালে, সিরাজুল আলম খান, এম এ জলিল, আ. স. ম. আবদুর রব এবং শাহজাহান সিরাজের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে বিভক্ত হয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠিত হয়। এর সশস্ত্র শাখা গণবাহিনী, কর্নেল আবু তাহের এবং হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র এবং একটি মার্কসবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান শুরু করে।[৯]
রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড
[সম্পাদনা]অ্যান্থনি মাসকারেনহাস বলেছেন যে ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যার সংখ্যা ২০০০ জনের বেশি ছিল। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন সংসদ সদস্যও ছিলেন এবং অনেক হত্যাকাণ্ড আওয়ামী লীগের অন্তর্দলীয় কোন্দলের কারণে সংঘটিত হয়েছিল।[১০] গণবাহিনী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অসংখ্য সদস্যকেও হত্যা করেছিল।[২]
অন্যদিকে, পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির সিরাজ সিকদার এবং আব্দুল হকের মতো মাওবাদীরা সরকার ও জনগণকে আক্রমণ করতে শুরু করে যাদেরকে তারা "শ্রেণি শত্রু" বলে মনে করত।[১১][১২]
সরকার জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠন করে সাড়া দেয়। অ্যান্থনি মাসকারেনহাস দাবি করেন যে তিন বছরের মধ্যে, বেশিরভাগ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্যদের মৃত্যুর সংখ্যা ৩০,০০০ অতিক্রম করেছিল, যাদের সবাই জাতীয় রক্ষীবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে।[১০]
বিদ্রোহের অবসান
[সম্পাদনা]রাষ্ট্রের কার্যত শাসক হওয়ার পর জিয়াউর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন যে সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে সৈনিকদের বিদ্রোহের ফলে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল তা দৃঢ়ভাবে দমন করতে হবে। জিয়াউর রহমান সামরিক শাসন জারি করেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন করেন, আবু তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং দলের অন্যান্য ব্যক্তিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।[১২]
উত্তরাধিকার
[সম্পাদনা]হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে বিদ্রোহের সময় জাতীয় রক্ষীবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত প্রাতিষ্ঠানিক সহিংসতা, স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক দায়মুক্তির সংস্কৃতি এবং ব্যাপকভাবে নির্যাতনের প্রচলন ধারাবাহিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে।[৪]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Ahamed, Emajuddin (২০০৪)। "The Military and Democracy in Bangladesh" (পিডিএফ)। May, R. J.; Selochan, Viberto। The Military and Democracy in Asia and the Pacific। Sydney: Australian National University Press। পৃষ্ঠা 108–110। আইএসবিএন 1-9209420-0-9।
- ↑ ক খ "JS sees debate over role of Gono Bahini"। The Daily Star। ৪ জুলাই ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৫।
- ↑ "Rizvi now blasts Inu at press briefing"। The Daily Star। UNB। ১৫ জুন ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৬।
- ↑ ক খ "Ignoring Executions and Torture : Impunity for Bangladesh's Security Forces" (পিডিএফ)। Human Rights Watch। ১৮ মার্চ ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৩।
- ↑ রক্ষীবাহিনীর নৃশংসতা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছিল। Amar Desh। ১৬ জানুয়ারি ২০১১। ১৭ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ক খ Fair, Christine C.; Riaz, Ali (২০১০)। Political Islam and Governance in Bangladesh। Routledge। পৃষ্ঠা 30–31। আইএসবিএন 1-136-92624-0।
- ↑ Chowdhury, Atif (১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)। "Bangladesh: Baptism By Fire"। Huffington Post। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৬।
- ↑ Ahmed, Moudud (২০১৫) [First published 1983]। Bangladesh, Era of Sheikh Mujibur Rahman। Dhaka: The University Press Limited। পৃষ্ঠা 69। আইএসবিএন 978-984-506-226-8।
- ↑ Hossain, Kazi Mobarak (১৩ মার্চ ২০১৬)। "Hasanul Haq Inu's JaSoD splits as he names Shirin general secretary"। Dhaka Tribune। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০১৬।
- ↑ ক খ Mascarenhas, Anthony (১৯৮৬)। Bangladesh: A Legacy of Blood। London: Hodder and Stoughton। পৃষ্ঠা 37। আইএসবিএন 978-0-340-39420-5।
- ↑ Alim, Syed Fattahul (১ ফেব্রুয়ারি ২০১২)। "Has Left Politics any Future?"। Forum। 6 (2)। The Daily Star। ২৩ জুলাই ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৬।
- ↑ ক খ Ahsan, Syed Badrul (৭ জুলাই ২০১৫)। "Bourgeois dreams of socialist revolution"। The Daily Observer। ১৮ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৬।