আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেলপথ
আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেলপথ হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল অধীনস্থ বাংলাদেশের একটি মিটার-গেজ রেলপথ যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া জংশন থেকে হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ জংশন হয়ে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া জংশন এবং সেখান থেকে সিলেট জেলার সিলেট স্টেশন হয়ে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক বাজার স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত।
ইতিহাস[সম্পাদনা]
চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে একটি রেলপথ সংযোগের জন্য আসামের চা উৎপাদনকারীদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে, আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে ১৮৯১ সালে বঙ্গের পূর্বাঞ্চলে একটি রেলওয়ে ট্রাক নির্মাণ শুরু করে। চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লায় ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মা)-এর একটি পথ ১৮৯৫ সালে চালু করা হয়।
কুমিল্লা–আখাউড়া–কুলাউড়া–বদরপুর রেলপথ অংশ ১৮৯৬–৯৮-এ চালু করা হয় এবং ১৯০৩ সালে লামডিং পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়।[১][২][৩]
কুলাউড়া–সিলেট রেলপথ অংশটি ১৯১২–১৫ সালে উদ্বোধন করা হয়।
হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথটি ১৯২৮ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার হবিগঞ্জ জেলা সদর শহর থেকে শায়েস্তাগঞ্জ জংশন হয়ে বাল্লা সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৪৫[৪] অথবা ৫২ কিলোমিটার[৫] দীর্ঘ রেলপথ চালু করে।[৬][৭] এর মধ্যে ১৯২৮ সালে শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ (১৫[৪] অথবা ১৬ কিমি[৫]) এবং ১৯২৯ সালে শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা (৩০[৫] অথবা ৩৬ কিমি[৪]) রেলপথ উদ্বোধন করা হয়। সে সময় হবিগঞ্জের চুনারঘাট উপজেলার ১৩টি বাগানের চা পাতা রপ্তানি ও বাগানের রেশনসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র আমদানী করার একমাত্র মাধ্যম ছিল এ রেলপথ। শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ রেলপথে মোট ৪টি স্টেশন রয়েছে (শায়েস্তাগঞ্জ জংশন বাদে), যথা: হবিগঞ্জ বাজার, হবিগঞ্জ কোর্ট, ধুলিয়াখাল এবং পাইকপাড়া। শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথে মোট ৭টি স্টেশন রয়েছে (শায়েস্তাগঞ্জ জংশন বাদে), যথা: বারকোটা, শাকির মোহাম্মদ, সুতাং বাজার, চুনারুঘাট, আমু রোড, আসামপারা এবং বাল্লা।[৫] বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরবর্তীতে এরশাদ সরকারের প্রথম দিকে হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথটি সর্বপ্রথম অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়, তবে জনসাধারণের প্রতিবাদ আন্দোলনের চাপে পরে আবার চালু হয়। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে অনুরূপ বন্ধ হয় এবং ২০০০ সালে রেলপথটি উন্নত সংস্কার করে ট্রেন চলাচল চালু হয়েও সর্বশেষ ২০০৩ সালে হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথে ট্রেন চলাচল আবারো অঘোষিতভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।[৪] ২০০৫ সালে হবিগঞ্জ বাজার এর নিকট হইতে শায়েস্তাগঞ্জ জংশন এর কাছাকাছি পর্যন্ত রেলপথ লাইনটি উপড়ে তুলে ফেলা হয় তথাকথিত বাইপাস সড়ক নির্মানের অজুহাতে এবং পরবর্তীতে বিতর্কিত বাইপাস সড়ক নির্মান করা হয়। (বর্তমানে হবিগঞ্জ বাজার স্টেশনের স্থাবর-অস্থাবর বাংলাদেশ রেলওয়ে সম্পত্তিগুলো আদালত মামলাধীন)[৪][৫]
সিলেট–ছাতক বাজার রেলপথ ১৯৫৪ সালে প্রবর্তন করা হয়।[৮]
কুলাউড়া–শাহবাজপুর রেলপথটির দৈর্ঘ্য ৪২ কিলোমিটার।[৯] এর মধ্যে জুড়ী, দক্ষিণভাগ, কাঁঠালতলী, বড়লেখা ও মুড়াউল রেলওয়ে স্টেশন অন্তর্ভুক্ত।[৯] পূর্বে শাহবাজপুর রেলওয়ে স্টেশনের সাথে ভারতের মহিশাষণ রেলওয়ে স্টেশনের সংযোগ ছিল।[১০] ১৯৮৮ সালে রেলপথটি ট্রেন চলাচলের অনুপযোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়।[৯] এর ১৪ বছর পর ২০০২ সালের ৮ জুলাই এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।[৯]
রেলব্যবস্থা[সম্পাদনা]
ঢাকা এবং সিলেটের মধ্যে সরাসরি কিছু রেল সেবা রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ঢাকা–সিলেট রেলপথে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস, মেইল ট্রেন সুরমা এক্সপ্রেস। এই পথে ওয়ান-ওয়ে ভ্রমণে সাত ঘণ্টার কিছু বেশি সময় লাগে।[১১] সিলেট থেকে চট্টগ্রামেও এই পথে ট্রেন চলাচল করে,[১২] তার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম–সিলেট রেলপথে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেন পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ও উদয়ন এক্সপ্রেস,[৯]মেইল ট্রেন জালালাবাদ এক্সপ্রেস এবং আখাউড়া–সিলেট রেলপথে চলাচলকারী লোকাল ট্রেন কুশিয়ারা এক্সপ্রেস। এখানে উল্লেখ্য যে, ২০০৩ সাল থেকে পূর্ববর্তী বিগত বছর গুলোতে হবিগঞ্জ বাজার-শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথে লোকাল ট্রেন চলাচল করতো, ২০০৩ সালে অঘোষিত ভাবে হবিগঞ্জ বাজার-শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় সেই লোকাল ট্রেন এখন সিলেট-আখাউড়া রুটে চলে।[১৩]
সিলেটের নতুন রেলওয়ে স্টেশন ২০০৪ সালে উদ্বোধন করা হয়। এ.কে. রফিক উদ্দিন আহমেদ, এই প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে প্রকৌশল এবং প্ল্যানিং কনসাল্টেন্ট লিমিটেডের প্রতিনিধিত্ব করেন।[১৪]
কাছাকাছি স্থান[সম্পাদনা]
মাধবকুণ্ড দক্ষিণবাগ রেলস্টেশন থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে, যা রিক্সায় চড়ে যাওয়া যায়। সিলেট এবং শ্রীমঙ্গল থেকেও এখানে যাওয়া যায়।[১২]
বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তের তামাবিল-ডাউকি স্থল সীমান্ত-ক্রসিং সিলেট থেক ৫৫ কিলোমিটার উত্তরদিকে অবস্থিত।[১২]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ফিদা, কাজী আবুল (২০১২)। "রেলওয়ে"। ইসলাম, সিরাজুল; জামাল, আহমেদ এ.। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (দ্বিতীয় সংস্করণ)। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি।
- ↑ "Report on the administration of North East India (1921–22)"। পৃ- ৪৬। গুগোল বই/ মিত্তাল পাবলিশার্স ডিস্ট্রিবিউশন। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-১৬।
- ↑ এস.এন.সিংহ, অমরেন্দ্র নারায়ণ, পূর্ণেন্দু কুমার। "Socio Economic and Political Problems of Tea Garden Workers: A Study of Assam, Published 2006, ISBN 81-8324-098-4"। পৃ- ১০৫। মিত্তাল পাবলিকেশন্স, নয়া দিল্লী। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-১৬।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "১৪ বছরেও চালু হয়নি শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথ"। দৈনিক সমকাল। ২০১৭-০২-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২২।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "কোটি কোটি টাকার মালামাল লুটপাট : ১৬ বছর ধরে বন্ধ হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ বাল্লা রেলপথ"। দৈনিক জালালাবাদ। ২০২০-০১-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২২।
- ↑ "সংক্ষিপ্ত ইতিহাস"। বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২০ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-১৬।
- ↑ "১৪ বছরেও চালু হয়নি শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথ"। দৈনিক সমকাল। ২০১৭-০২-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২২।
- ↑ "সংক্ষিপ্ত ইতিহাস"। বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২০ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-১৬।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "সংস্কারে প্রকল্প নেওয়া হলেও আটকে আছে অনুমোদন"। প্রথম আলো। ২০১৫-০২-১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২১।
- ↑ "ভূগোল– আন্তর্জাতিক"। IRFCA। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-১৬।
- ↑ "নাজিমগড় রিসোর্ট"। ২০ নভেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-১৬।
- ↑ ক খ গ স্টুয়ার্ট বাটলার। "বাংলাদেশ"। পৃ- ১৫০। লোনলি প্ল্যানেট/ গুগোল বই। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-১৬।
- ↑ "কোটি কোটি টাকার মালামাল লুটপাট : ১৬ বছর ধরে বন্ধ হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ বাল্লা রেলপথ"। dailyjalalabad.com। ৩১ জানুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৬।
- ↑ "New Sylhet Railway Station will provide modern amenities"। নিউজ ফ্রম বাংলাদেশ, ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-১৬।