ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পরিবহন ব্যবস্থা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মানচিত্র, বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গের সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পরিবহন উভয় দেশের জন্য অনেক ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক তাৎপর্য বহন করে। ১৯৪৭ সালে বাংলা এবং ভারত ভাগ হয়ে যাওয়ার পর ৪৩ বছর ধরে এই দুই বাংলার মধ্যে সড়কপথে কোনো যোগাযোগ ছিল না। ১৯৯৯ সালে কলকাতা-ঢাকা বাস দুই বাংলাকে আবার সড়কপথে সংযুক্ত করে। তারপর ২০০১ সালে ঢাকা-আগরতলা বাসরুট চালু হয়।  এই রুট দুটি ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রধান যোগাযোগ হিসেবে ধরা যেতে পারে। বর্তমানে উভয় দেশের সরকার একটি বাসরুট শুরু করার কথা ভাবছেন যেটি ক্ল্কাতা থেকে ঢাকা হয়ে আগরতলা পর্যন্ত যাবে। বর্তমানে দুটি ট্রেন চলছে কলকাতা ও বাংলাদেশের মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং বন্ধন এক্সপ্রেস

পূর্বকথা[সম্পাদনা]

১৫ আগস্ট ১৯৪৭ তারিখে বাংলা দুই ভাগ হয়ে পশ্চিম অংশটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জন্ম দেয়। পূর্ব অংশটি ভারত ভাগের ফলে জন্ম নেওয়া পাকিস্তান রাষ্ট্রের একটি প্রদেশ হয়ে ওঠে। পশ্চিম ও পূর্ব বাংলার মধ্যে সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিকূল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কগুলি পরিবহন সংযোগের ক্ষেত্রে খুব একটা ভাল প্রভাব ফেলতে পারে নি। ১৯৬৫-এর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের প্রাদুর্ভাবে ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে একমাত্র রেল যোগাযোগ যেটি ছিল সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৮ সালে মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু হওয়ার আগে পর্যন্ত রেল যোগাযোগ বন্ধই ছিল।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুসংহত হয়। কিন্তু আন্তর্দেশীয় পরিবহন সংযোগ উন্নয়নের ব্যাপারে দুই সরকার খুবই গড়িমসি করতে থাকে। নব্বইএর দশকে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার, কলকাতাঢাকার মধ্যে একটি বাস পরিষেবা শুরু করে। ২০০১ সালে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে ঢাকা পর্যন্ত আর একটি বাস পরিষেবা চালু হয়।

কলকাতা–আগরতলা রোড লিঙ্ক[সম্পাদনা]

১৯৮০ সাল থেকে, বাণিজ্যিক যানবাহন চলাচলের জন্যে "বাংলা করিডোর" ব্যাবহারের উদ্দেশ্যে দুদেশের সরকারই আলাপ আলোচনার মধ্যে দিয়ে এক সমঝোতায় আসতে চেস্টা করছে। মুলত ভারতের সূদুর পুর্বের রাজ্যগুলিতে বাণিজ্যিক যানবাহন পৌঁছানোর জন্যে এই বাংলা করিডোর অত্যন্ত জরুরি।

এই ধরনের ব্যবস্থার সুবিধাগুলি হল,

  • উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের উন্নতিসাধন
  • ভারতীয় ব্যবসাগুলির জন্য পরিবহন খরচ হ্রাস
  • বাংলাদেশের জন্য অতিরিক্ত রাজস্বের উপায়

২০০৬ সালে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা এবং কলকাতাকে আরো কাছাকাছি পৌঁছে দেওয়ার জন্যে ঢাকার মধ্যে দিয়ে কলকাতা-আগরতলা রাস্তা বানানোর একটি প্রস্তাব রাখা হয়, এই প্রস্তাবিত রাস্তাটি পুরাতন রুটের তুলনায় প্রায় ৪০০কিমি কম। উল্লেখযোগ্য় ভাবে এটি পরিবহন খরচ কমাতে অনেক সাহায্য করবে।

তবে এই ধরনের ব্যবস্থা বাংলাদেশের পক্ষে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল।

২০১৫ সালের দোসরা জুন পরীক্ষামুলক ভাবে একটি বাস কলকাতা থেকে আগরতলা রুটে চালানো হয়। বাসটি ঢাকা হয়ে পাঁচশ কিমি পাড়ি দিয়ে আগরতলা পৌঁছায়। ৭ই জুন থেকে জনসাধারনের জন্যে বাস পরিষেবাটি চালু হয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম যাত্রীবাহী বাসটির উদ্বোধন করেন।

কলকাতা–ঢাকা বাস[সম্পাদনা]

দৌলতদিয়া ফেরিঘাট – পদ্মা নদী – গোয়ালন্দ বাংলাদেশ

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৯৯ সালের ১৯শে জুন ঢাকা কলকাতা বাস চালু করা হয়। উদ্বোধনী বাসটিকে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে স্বাগত জানান। এই বাসটি ভারত পাকিস্তানের দিল্লি - লাহোর রুটের উদ্বোধনের কয়েক মাসের মধ্যেই চালু করা হয়। যদিও মিডিয়া এই রুটের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয় নি, তবুও উচ্চ চাহিদা পূরণের জন্য বাসটির পরিষেবা আরো বাড়ানো হয়েছে।

শুধু বাণিজ্যিক সমৃদ্ধিই নয়, এই বাসরুটটি অসংখ্য ভাঙা হ্রদয় জুড়তে সাহায্য করেছে। দেশভাগের সময় যাদের পরিবার ভেঙে যায়, সেই অসংখ্য বিচ্ছিন্ন পরিবার তাদের আত্মীয়দের সাথে মিলিত হতে পারছে, নিজের শিকড় চিনতে দেখতে পারছে।

বাসটি এখনো নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিষেবা প্রদান করে চলছে।

কলকাতা-ঢাকা বাস্রুটটি পশ্চিমবঙ্গ সারফেস ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (বিআরটিসি) দ্বারা যৌথভাবে পরিচালিত হয়। ঢাকা থেকে সোমবার, বুধবার এবং শুক্রবার সকাল ৭ টা এবং সাড়ে ৭টায় বাসগুলি ছাড়ে। কলকাতা থেকে বাস ছাড়ে মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার এবং শনিবার সকাল সাড়ে৫টা, সাড়ে৮টা এবং দুপুর সাড়ে ৮টায়। রবিবার বাস বন্ধ। যাত্রাপথ মোট ৩৮০ কিমি(সাড়ে ১২ ঘণ্টার যাত্রাপথ)। ভারতের মধ্যে ৮০ কিমি এবং বাংলাদেশের মধ্যে ৩০০ কিমি।

ভারত বাংলাদেশের মধ্যে সরকারী বাসগুলি ছাড়াও বেসরকারি কিছু বাস চলে(ভলভো এবং অন্যান্য বাস)। বেনাপোল সীমান্তে বাসগুলি বর্ডার ক্রস করে। বেসরকারি বাংলাদেশি বাস কোম্পানি 'সোহাগ', 'গ্রীন লাইন', 'শ্যামলী' ইত্যাদি কোম্পানি গুলি বেনাপোল থেকে ঢাকা পর্যন্ত দৈনিক বাস পরিষেবা দেয়। একদিকে যাওয়া বা আসার ভাড়া মোটামুটি বাংলাদেশী টাকায় ৬০০-৮০০টাকা(প্রায় ৮- ১২ ডলার)।

ঢাকা–আগরতলা বাস[সম্পাদনা]

দীর্ঘ কয়েক বছরের আলোচনার পর ১১ই জুলাই ২০০১ সালে ঢাকা-আগরতলা বাস প্রথম চালু হয়। বাংলাদেশ এবং তার পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ ব্যবস্থা এটি। ত্রিপুরায় প্রচুর বাংলাভাষী লোকের বাস, এবং কিছু আদিবাসী জনগোষ্ঠীও ত্রিপুরায় বাস করে যাদের সাথে পূর্ব বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক বন্ধন বিদ্যমান। আগরতলা থেকে আখাউড়া সীমান্তের চেকপোস্টের মাধ্যমে যাওয়া আসা করা যায়। ঢাকা ও আগরতলা সড়কের বাসযাত্রার সময় প্রায় ৪ (চার) ঘণ্টা

রেল যোগাযোগ[সম্পাদনা]

রেল যোগাযোগ সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরন নিচে দেওয়া হলোঃ

ভারতীয় পারাপার বাংলাদেশী পারাপার সীমান্ত[rail-note ১] হাল বর্তমান রেল সেবা ঐতিহাসিক রেল সেবা
গেদে দর্শনা পশ্চিম বর্তমান মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং বিভিন্ন মালগাড়ি ইস্ট বেঙ্গল এক্সপ্রেস, ইস্ট বেঙ্গল মেল[১]
পেট্রাপোল বেনাপোল পশ্চিম বর্তমান বন্ধন এক্সপ্রেস এবং বিভিন্ন মালগাড়ি বরিশাল এক্সপ্রেস
সিংহবাদ রহনপুর পশ্চিম বর্তমান মালগাড়ি
রাধিকাপুর বিরল পশ্চিম বর্তমান মালগাড়ি
হলদিবাড়ি চিলাহাটি উত্তর পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে [rail-note ২]
চাংড়াবাঁধা বুড়িমারি উত্তর বন্ধ [rail-note ৩]
মহিষাশন শাহবাজপুর পূর্ব পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে[rail-note ৪]
আগরতলা আখাউড়া পূর্ব পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে[rail-note ৫]
  1. Based on the Bangladeshi frontier
  2. The rail tracks have been removed on BD side, but is currently being rebuilt with freight service restoration expected by 2020.
  3. Currently inactive but slated for restoration.
  4. A meter gauge line existed but was discontinued. Slated to be restored.
  5. A new line being is developed by IRCON, cost to be borne by India. Land acquisition for the ongoing Agartala-Akhaura new railway connectivity project was complete in both countries in October 2017 and laying of tracks will be completed in 2018.

আকাশপথে (বিমান) যোগাযোগ[সম্পাদনা]

ঢাকা, দিল্লী ও কলকাতার মধ্যে সরকারী বিমানসংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিমান যোগাযোগ রয়েছে। বেসরকারী বিমানসংস্থা জেট এয়ারওয়েজ ভারতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শহরকে(মুম্বাই, কলকাতা, দিল্লীর) বাংলাদেশের সাথে যুক্ত করে। বাংলাদেশের বেসরকারী বিমানসংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ঢাকার সাথে কলকাতা এবং চিটাগংকে সংযুক্ত করে।

অন্যান্য সূত্র[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Thapliyal, Sangeeta। "India-Bangladesh Transportation Links: A Move for Closer Cooperation"Institute for Defence Studies and Analyses। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১৭