বিনোবা ভাবে

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বিনোবা ভাবে
বিনোবা ভাব,১৯৮৩ সালে প্রকাশিত ভারতীয় স্ট্যাম্পে
জন্ম
বিনায়ক রাও ভাবে

(১৮৯৫-০৯-১১)১১ সেপ্টেম্বর ১৮৯৫
গাগোদে, পেন, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু১৫ নভেম্বর ১৯৮২(1982-11-15) (বয়স ৮৭)
পাবনার, ওয়ারধা, ভারত
অন্যান্য নামআচার্য বিনোবা ভাবে
মাতৃশিক্ষায়তনমহারাজা শিবাজীরাও ইউনিভার্সিটি অফ বরোদা[১]
পরিচিতির কারণভূদান আন্দোলন
পুরস্কারআন্তর্জাতিক র‍্যামন পুরস্কার(১৯৫৮)
সম্মাননাভারতরত্ন (১৯৮৩)
ওয়েবসাইটhttp://vinoba.in http://www.vinobabhave.org

বিনায়ক নরহরি "বিনোবা ভাবে" ভাবে (উচ্চারণ; ১১ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৫ সাল– ১৫ই নভেম্বর, ১৯৮২ সাল) ভারতে অহিংসা ও মানবাধিকারের প্রবক্তা ও সমর্থক। প্রায়শই তিনি আচার্য (সংস্কৃতে অর্থ শিক্ষক) নামে পরিচিত হতেন, ও তিনি বিশেষভাবে ভূদান আন্দোলনের জন্য পরিচিত ছিলেন। তাঁকে ভারতের জাতীয় শিক্ষক বলে মানা হয় এবং তাঁকে গান্ধীজীর অধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারীও বলা হয়। তিনি মারাঠি ভাষাতে শ্রীমদ ভগবদ্গীতা অনুবাদ করেছেন যার নাম "গীতাঈ" অর্থাৎ মা গীতা। [২]

প্রাথমিক জীবন ও পটভূমি[সম্পাদনা]

বিনায়ক নরহরি ভাবে ১৮৯৫ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর কোঙ্কণের, অধুনা যা মহারাষ্ট্র নামে পরিচিত, কোলাবার গাগোজি (বর্তমানে গাগোদে বুদরুক) নামে ছোটো একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শম্ভু রাও ও রুক্মিণী দেবীর জ্যেষ্ঠপুত্র ছিলেন বিনায়ক। তাঁদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে চারিটি ছেলে, যথাক্রমে বিনায়ক (স্নেহ করে ডাকা হত বিন্যা), বালকৃষ্ণ, শিবাজী ও দত্তাত্রেয় এবং একটি মেয়ে। তার বাবা ছিলেন একজন আধুনিক যুক্তিবাদী প্রশিক্ষিত বয়নশিল্পী। তিনি বরোদায় কাজ করতেন। তিনি তার ঠাকুরদা শম্ভুরাও ভাবের কাছে বড় হয়ে ওঠেন। তার ওপর তার মা রুক্মিণী দেবীর গভীর প্রভাব পড়ে, যিনি কর্ণাটকের একজন ধার্মিক মহিলা ছিলেন। খুব কম বয়সেই তিনি ভগবদ্গীতা পাঠে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠেছিলেন।[৩]

নব প্রতিষ্ঠিত কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে গান্ধীজীর বক্তৃতার কথা একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হলে সেটি তার নজরে আসে। ১৯১৮ সালে, ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিতে যখন তিনি বম্বে যাচ্ছিলেন, তখন বিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয়ের শংসাপত্রগুলি আগুনে আহুতি দিয়ে দেন। দৈনিক পত্রিকায় মহাত্মা গান্ধীর কয়েকটি লেখা পড়ে, ভাবে এই নির্ণয় নেন। তিনি গান্ধীজীকে একটি চিঠি লেখেন এবং গান্ধীজীও তার উত্তর দেন, এভাবে চিঠি আদান প্রদানের পর গান্ধীজী তাঁকে আহমেদাবাদের কোচরাব আশ্রমে এসে তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করার পরামর্শ দেন। এরপর, ভাবে, ৭ই জুন,১৯১৬ সালে গান্ধীজীর সাথে দেখা করেন এবং পরবর্তীকালে তিনি লেখাপড়া ছেড়ে দেন। ভাবে গান্ধীজীর আশ্রমে অতি উৎসাহের সঙ্গে শিক্ষাদান, অধ্যয়ন, চরকা কাটা, যৌথ জীবনের মানোন্নয়ন ইত্যাদি কাজে যোগদান করেন। এভাবে গান্ধীজীর নানা ধরনের গঠনমূলক কার্যাবলী যেমন, খাদি সংক্রান্ত, গ্রামীণ শিল্প, নতুন শিক্ষা পদ্ধতি (নঈ তালিম), স্বাস্থব্যবস্থা ও স্বাস্থবিধি ইত্যাদির সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িয়ে পড়েন।

ভাবে, গান্ধীজীর ইচ্ছানুসারে ৮ই এপ্রিল, ১৯২১ সালে, ওয়ারধা আশ্রমের ভার নেন। ১৯২৩ সালে, তিনি মহারাষ্ট্র ধর্ম নামে একটি মারাঠি মাসিক পত্রিকা বার করেন যাতে তিনি উপনিষদ নির্ভর কিছু রচনা লেখেন। এরপর এই মাসিক পত্রিকাটি সাপ্তাহিক হয় এবং তা প্রায় তিন বছর চলে। ১৯২৫ সালে, মন্দিরে দলিতদের প্রবেশের বিষয়টি দেখভাল করার জন্য ভাবেকে গান্ধীজী কেরালার বাইকমে পাঠান।

ভাবে, ১৯২০ এবং ১৯৩০ এর দশকে বহুবার বন্দী হয়েছেন। ১৯৪০ এর দশকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য তার পাঁচ বছরের কারাবাস হয়। কারাবাসের জীবন ভাবের কাছে লেখা এবং পড়ার অবসর ছিল। তিনি এই কারাবাসকালীন সময়েই লিখেছিলেন দুটি বই, ইশাভাস্যাবৃত্তি এবং স্থিতপ্রাজ্ঞ দর্শন। তিনি চারটি দক্ষিণ ভারতীয় ভাষা শিখেছিলেন। ভেলোর জেলে থাকাকালীন "লোক নাগরী" লিপি তৈরী করেন। কারাবাস কালে তিনি সহবন্দীদের ধারাবাহিক ভাবে মারাঠিতে ভগবদ্গীতার বাণী শোনাতেন। সারা দেশব্যাপী পর্যায়ক্রমে চলা ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে ভাবে যোগ দেন ও অন্যান্য স্বদেশী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কারাবরণ করেন। এরকম নানা কার্যাবলী সত্বেও তিনি জনমানসে ততটা পরিচিত হননি। ১৯৪০ সালে যখন গান্ধীজী তাঁকে দিয়ে প্রথম শুরু হওয়া অহিংস আন্দোলনের প্রচার শুরু করালেন তখন থেকেই তিনি বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেন। সবাই তাঁকে তার ডাকনাম বিনোবা নামেই ডাকত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ভাবের ছোটোভাই বালকৃষ্ণও গান্ধীবাদী ছিলেন। গান্ধীজী তার ও মণিভাই দেশাইয়ের ওপর আস্থা রেখেউরালি কাঞ্চনে একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা আশ্রম তৈরী করেন, এবং সেখানেই বালকৃষ্ণ সারা জীবন কাটান। [৪][৫][৬][৭]

বৃত্তি[সম্পাদনা]

স্বাধীনতা সংগ্রাম[সম্পাদনা]

বিনোবা কুটীর সবরমতী আশ্রম

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি গান্ধীজীর সহযোগী ছিলেন। তিনি কিছু দিন সবরমতী আশ্রমে কাটিয়েছেন যে কুটীরে, তার নামেই সেটির নাম "বিনোবা কুটীর"। সেখানে তিনি তার সহ আশ্রমিকদের মারাঠিতে ভগবদ গীতা প্রসঙ্গ শোনাতেন।

পরবর্তীকালে এই আলোচনা ও ব্যাখ্যাগুলি "টকস্ অন দ্য গীতা" নামে একটি বই আকারে প্রকাশিত হয় এবং দেশ ও দেশের বাইরে নানা ভাষায় তার অনুবাদ হয়। ভাবে অনুভব করেছিলেন, ঈশ্বরের নির্দেশই তার এই ব্যাখ্যা বা আলোচনাকে প্রণোদিত করে এবং বিশ্বাস করতেন তার অন্যান্য কাজও যদি মানুষ ভুলে যায় কিন্তু এর প্রভাব স্থায়ী হবে।

১৯৪০ সালে ভাবেকে গান্ধীজী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে একক সত্যাগ্রহী (একক ব্যক্তি যিনি সম্মিলিত পদক্ষেপের পরিবর্তে) হিসাবে মনোনীত করেন। [৮] এটা শোনা যায় যে, ভাবের কৌমার্যকে, যা তিনি তার কৈশোরে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, গান্ধীজী ঈর্ষা করতেন এবং যা গান্ধীজীর ব্রহ্মচর্য নীতির সাথে খাপ খায়। ভাবে ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও যোগ দেন।

ধার্মিক ও সামাজিক কর্ম[সম্পাদনা]

গান্ধীজী ও ভাবে

ভাবের ধর্ম সম্বন্ধীয় দৃষ্টিভঙ্গি খুব উদার ছিল এবং অন্যান্য ধর্মের সত্যগুলির সঙ্গে সংশ্লেষিত ছিল। বিষয়টি প্রত্যক্ষ করা যায় তার রচিত একটি মন্ত্র "ওঁম তৎ সৎ" এ, যেখানে সব ধর্মের চিহ্ন ব্যবহৃত হয়েছে। তার তোলা স্লোগান ছিল "জয় জগত" অর্থাৎ "সারা বিশ্বের জয়"। তিনি যে বিশ্বের সামগ্রিক জয় চাইতেন, সেই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলিত হয়েছে এতে।

ভাবে, ভারতের গ্রামের সাধারণ মানুষদের জীবনযাত্রা আন্তরিকভাবে লক্ষ্য করেছেন এবং গভীর অধ্যাত্মিকতার ভিত্তিতে তিনি যেমন অসুবিধাগুলি অনুভব করেছেন তেমন তার সুরাহা করবার চেষ্টা করেছেন। এটিই তার সর্বোদয় আন্দোলনের মূল ভিত্তি। এর আর একটি উদাহরণ হল ভূদান (জমি দান) আন্দোলন, যা শুরু হয়েছিল ১৯৫১ সালের ১৮ই এপ্রিল পোচামপল্লীতে, ৮০ টি হরিজন পরিবারের সঙ্গে কথা বলে। তিনি সারা ভারত পায়ে হেঁটে সম্পন্ন ভূস্বামীদের কাছে এই আবেদন করছিলেন, যাতে তারা তাঁকে তাদের পরিবারের এক সন্তান মনে করে জমির এক ষষ্ঠাংশ দেন, যা তিনি ভূমিহীন গরীব মানুষদের দান করেন। অহিংসা এবং সমবেদনা তার দর্শনের বিশেষত্ব ছিল। তিনি গোহত্যা বিরোধী প্রচারও করেছিলেন।

ভাবে বলেছিলেন,"আমি ১৩ বছর সারা ভারত পায়ে হেঁটে ঘুরেছি। আমার জীবনের বিরামহীন স্থায়ী কাজের প্রেক্ষাপটে আমি ৬টি আশ্রম গড়ে তুলেছি।

ব্রহ্ম বিদ্যা মন্দির[সম্পাদনা]

ব্রহ্ম বিদ্যা মন্দির, ভাবের প্রতিষ্ঠিত আশ্রমগুলির মধ্যে একটি। এটি ভাবে প্রতিষ্ঠিত ছোটো মহিলা গোষ্ঠী, যার উদ্দেশ্য মহিলাদের গোষ্ঠীর মধ্যে স্বনির্ভরতা ও অহিংসা অভ্যাস করা। এই গোষ্ঠী নিজেদের খাদ্যের প্রয়োজন নিজেরাই চাষাবাদ করে মেটাত, কিন্তু তা গান্ধীজীর আদর্শ, দীর্ঘস্থায়িত্বসামাজিক ন্যায় মেনে। গান্ধীজী এবং ভাবের মতোই এই সংঘও "ভগবদ গীতা"র বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে, তাদের কাজের মধ্যেও তার স্বাক্ষর রাখত। প্রতিদিন ভোরে ঈশোপনিষদ্ থেকে, বিষ্ণু সহস্রনাম থেকে সকালের মধ্যভাগে, এবং ভগবদ গীতা থেকে রাত্রিবেলা, তারা সংঘবদ্ধভাবে প্রার্থনা করে। এখন সেখানে প্রায় ২৫ জন মহিলা সেখানকার সদস্য এবং অনেক পুরুষও এই সংঘের সদস্য। [৯]

১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠানটির সূচনা থেকে, ব্রহ্ম বিদ্যা মন্দির (বি.ভি.এম.), মহারাষ্ট্রের পাউনারে অবস্থিত একটি আন্তর্জাতিক মহিলা সংগঠন, যার সদস্যরা খাদ্য উৎপাদন ও তার ব্যবহার বিষয়ে গান্ধীবাদী নৈতিকতা যেমন আত্ম-নির্ভরশীলতা, অহিংসা, জনসেবামূলক কাজ ইত্যাদিকে প্রয়োগ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বি.ভি.এম. এর অস্তিত্ব ও এর আবাসিকদের অভ্যাসের পালটা ঘটনাবলীতে এটা প্রদর্শিত হয় যে, একটি সংঘ বিতর্কের মধ্য দিয়ে, আত্মনির্ভরশীলতা, অহিংসা, কঠোর গণতন্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে তাদের চর্চা ও প্রয়োগের ব্যাপারে, তাদের সামাজিক ও ভৌগোলিক প্রেক্ষিতে কি ভাবে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে পারে। একটি মূলধারার আলোচনায়, বি.ভি.এম. ও তার সঙ্গে যুক্ত চাষীরা বর্ণনা করেছে যে, সারা বিশ্বের খাদ্যের যোগান দিতে বিপুল আকারের চাষাবাদ সম্ভব, প্রয়োজন ও তা অনিবার্য। বরং বি.ভি.এম. এর আলোচনায় চাষাবাদের সফলতা একমাত্র খরচ সাপেক্ষ প্রযুক্তি ব্যবহারেই সম্ভব, এই ধারণাকে বর্জন করা হয়েছে। বি.ভি.এম. ভারতের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী, তাই তাদের ক্ষমতাও সীমিত, তাই তাদের বিশ্বাস ও চর্চা মূলধারায় ছড়িয়ে দিতে পারে না। ইতিমধ্যে, ভারত তার ক্রমবর্ধমান বিরাট মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে এই ধারণা প্রচারে সক্ষম হয়েছে। যদিও কিছু মানুষ গান্ধীজীকে নায়ক হিসেবে মানেন, তবুও কিছু মানুষ তার দৃষ্টিভঙ্গীর বিপরীতে মার্কিনী ভোগবাদকে সমর্থন করেন ও কৃষিকাজে প্রযুক্তির প্রয়োগ দ্বারা বিকল্পের সমর্থন করেন। এখনও বি.ভি.এম. এর অস্তিত্ব থাকা ও অন্য ধরনের বিকল্প চাষাবাদ ও সামাজিক ব্যবহার, যা তার সদস্যরা ১৯৬০ এর দশক থেকে অনুসরণ করে,একটা ধারণা প্রতিষ্ঠা করে। [১০]

সাহিত্য সংক্রান্ত পেশা[সম্পাদনা]

বিনোবা ভাবে একজন বিদ্যান, চিন্তাশীল ব্যক্তি ও একজন বিশিষ্ট লেখক যিনি অনেক বই লিখেছেন। তিনি সংস্কৃত বইগুলি অনুবাদ করে সাধারণ মানুষের নাগালে এনে দিয়েছিলেন। তিনি একজন বাগ্মী ও ভাষাবিদ ছিলেন, নানা ভাষার (মারাঠি, কন্নড়, গুজরাটী, হিন্দী, উর্দু, ইংরাজী, সংস্কৃত) ওপরে তার দখল ছিল। ভাবে একজন উদ্ভাবনী শক্তি যুক্ত সমাজ সংস্কারকও ছিলেন। তিনি "কন্নড়" লিপিকে "বিশ্ব লিপির রাণী" বলতেন(বিশ্ব লিপিগালা রাণী)।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তিনি নানা ধর্মীয় বই ও দর্শনের বইয়ের ভূমিকা ও সমালোচনা লিখেছেন, যেমন ভগবদ্গীতা, আদি শঙ্করাচার্যের লেখা বই, বাইবেল, কুরআন ইত্যাদির। দ্যানেশ্বরের লেখা কবিতা ও অন্যান্য মারাঠি সন্তদের লেখার বিষয়ে তার মতামত, তার অসীম জ্ঞানের পরিধির সাক্ষ্য দেয়। ভাবে ভগবদ্গীতাকে মারাঠিতে অনুবাদ করেছেন। তিনি গীতার বাণী ও শিক্ষায় অত্যন্ত প্রভাবিত ছিলেন এবং তা নিজের জীবনে আত্তিকরণ করতে চেয়েছেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, "গীতা আমার জীবনের শ্বাস প্রশ্বাস"।[১১]

তার লেখা কিছু বই:

  • দ্য এসেন্স অফ কুরআন
  • দ্য এসেন্স অফ ক্রিশ্চান টিচিংস
  • থটস্ অফ এডুকেশান
  • স্বরাজ্য শাস্ত্র

ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগে বিনোবা ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়, তারই নামাঙ্কিত।

বিনোবা ভাবে ও ভূদান আন্দোলন[সম্পাদনা]

১৯৫১ সালের ১৮ই এপ্রিল,[১২] তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার পোচামপল্লীতে ভাবে ভূদান আন্দোলন শুরু করেন। [১৩] তিনি ভূস্বামী ভারতীয়দের কাছ থেকে জমি দান হিসেবে গ্রহণ করেন এবং তা চাষাবাদের জন্য ভূমিহীন দরিদ্রদের দান করেন। ১৯৫৪ সালের পর, "গ্রাম দান" কার্যক্রমে পুরো গ্রামকেই দান হিসেবে চেয়েছিলেন। তিনি প্রায় ১০০০ এর ওপর গ্রাম দান হিসেবে পেয়েছিলেন। এর মধ্যে ১৭৫ টি গ্রাম শুধু তামিলনাড়ুতেই পেয়েছিলেন। প্রখ্যাত গান্ধীবাদী ও নিরীশ্বরবাদী লাভানাম ভাবের অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশার কিছু অংশে এই আন্দোলনের জন্য ঘোরার সময় তার অনুবাদকের কাজ করেছিলেন।[১৪]

জীবনের শেষভাগ ও মৃত্যু[সম্পাদনা]

পাউনার আশ্রমের ভবন

ভাবে তার জীবনের শেষদিক মহারাষ্টের ওয়ার্ধা জেলার পাউনার এ তার ব্রাহ্ম বিদ্যা মন্দির আশ্রমে কাটিয়েছেন। তিনি জীবনের শেষ কয়েকটি দিন জৈন ধর্ম বর্ণিত জৈন সন্তদের মতো "সমাধী মরণ" / "সান্থারা" গ্রহণ করে খাদ্য ও ওষুধ গ্রহণ পরিহার করে ১৯৮২ সালের ১৫ই নভেম্বর ইহলোক ত্যাগ করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] সেই সময়ের ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, যিনি সেইসময় সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভের শেষকৃত্যের কারণে মস্কোতে ছিলেন, ভাবের শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকার জন্য সফর আংশিক বাতিল করে দেশে ফিরে আসেন।

সমালোচনা[সম্পাদনা]

বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল তার প্রবন্ধ সংগ্রহে ভাবেকে যুক্তিহীনতা ও অতিরিক্ত গান্ধীজীকে অনুকরণের জন্য সমাচলোচনা করেছেন। এমনকি তার গুণগ্রাহী কিছু মানুষও তার অতিরিক্ত গান্ধী ভক্তির সমালোচনা করেছেন। ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার যখন জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে, তখনও খোলাখুলিভাবে বা গুপ্তভাবে তার কংগ্রেসকে সমর্থন খুবই বিতর্কিত ছিল। ইন্দিরা গান্ধী দ্বারা আরোপিত ভারতে জরুরি অবস্থা (১৯৭৫-১৯৭৭) কে তিনি "অনুশাসন পর্ব" (টাইম অফ ডিসিপ্লিন) বলে সমর্থন করেন, যা অত্যন্ত বিতর্কিত। এই জরুরি অবস্থা চলাকালীন জয়প্রকাশ নারায়ণ তার কারাবাসকালীন ডায়েরীতে ব্যাঙ্গ করে অনুশাষণ পর্বের অর্থ লিখেছিলেন। [১৫] সেই সময় কংগ্রেস বিরোধীরা তাঁকে হীনভাবে "সরকারী সন্ত" ( গভর্নমেন্ট সেন্ট ) বলে উল্লেখ করতেন। প্রখ্যাত মারাঠি লেখক পুরুষোত্তম লক্ষ্মণ দেশপান্ডে জনসমক্ষে তার লেখায় ভাবেকে "ভানারোবা", যা "বিনোবা"র দ্ব্যর্থক হিসেবে ব্যবহার করতেন, মারাঠিতে যার আক্ষরিক অর্থ বানর

পুরস্কার[সম্পাদনা]

১৯৫৮ সালে গোষ্ঠী নেতৃত্বের জন্য তিনিই প্রথম আন্তর্জাতিক রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার পান।[১৬] He was awarded the Bharat Ratna posthumously in 1983.[১৭]

গ্রন্থপঞ্জী[সম্পাদনা]

  • গীতাঈ [২]
  • গীতা প্রচানে (সমস্ত ভারতীয় ভাষায়)
  • বিচার পথী (মারাঠি, হিন্দী, গুজরাটী ও ইংরাজীতে)
  • স্থিতপ্রাজ্ঞ দর্শন (মারাঠি, হিন্দী,গুজরাটি ও ইংরাজীতেও অনুদিত)
  • মধুকর (স্বাধীনতার আগে লিখিত তার সংগ্রহিত ও সংকলিত প্রবন্ধ সংকলন)
  • ক্রান্ত দর্শন
  • তিসরী শক্তি বা দ্য থার্ড পাওয়ার (জাতির রাজনৈতিক জীবন সম্বন্ধে তার দৃষ্টিভঙ্গি)
  • স্বরাজ্য শাস্ত্র (তার রাজনৈতিক গ্রন্থ)
  • ভূদান গঙ্গা – ৯/১০ খন্ড, (মারাঠি ও হিন্দীতে) ১৮ই এপ্রিল, ১৯৫১ থেকে তার বক্তৃতা সমূহের সংগ্রহ ও সংকলন)
  • নির্বাচিত কাজ (হিন্দীতে ২১ খন্ড, সম্পাদনা করেছেন গৌতন বাজাজ)
  • প্রেম দ্বারা চালিত (তার নিজের কথায় নিজের জীবন)

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Umarji, Vinay (১৩ জুন ২০১৬), "Know Your Smart City: Gujarat", Business Standard 
  2. Geetai
  3. Narayanaswamy, K.S. (২০০০)। Acharya Vinoba Bhave – A biography (Immortal Lights series)। Bangalore: Sapna Book House। আইএসবিএন 9788128017506 
  4. Kumarappa B. ed. (1954) Gandhi M. Nature cure. Navajivan Publishing House.
  5. "The Nisargopachar Ashram – Naturopathic Centre Urulikanchan, Pune"aarogya.com 
  6. "Desai, Manibhai Bhimbhai"rmaf.org.ph [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. Mehta, Jayshree; Usha, Thakkar, সম্পাদকগণ (২০১১)। Understanding Gandhi : Gandhians in conversation with Fred J. Blum। Los Angeles: Sage Publications। পৃষ্ঠা 6। আইএসবিএন 978-8132105572 
  8. Rühe, Peter (২০০১)। Gandhi। Phaidon। পৃষ্ঠা 152। আইএসবিএন 978-0-7148-4103-8 
  9. Sanford, A. Whitney (৩ এপ্রিল ২০১৩)। "Gandhi's Agrarian Legacy: Practicing Food, Justice, and Sustainability in India"Journal for the Study of Religion, Nature and Culture7 (1): 65–87। ডিওআই:10.1558/jsrnc.v7i1.65। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০১৪ 
  10. Sanford, Whitney (২০১৩)। "Gandhi's agrarian legacy: practicing food, justice, and I love Jawad sustainability in India Gandhi's agrarian legacy: practicing food, justice, and sustainability in India" (20140825)। ডিওআই:10.1558/jsrnc.v7i1.65 
  11. Minor, Robert (1986) Modern Indian Interpreters of the Bhagavad Gita. State University of NY press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮৮৭০৬-২৯৮-৮
  12. www.mkgandhi.org
  13. The Un-Gandhian Gandhi : The Life and Afterlife of Mahatma – By Claude Markovits
  14. "The King of Kindness: Vinoba Bhave and His Nonviolent Revolution"। Markshep.com। ১৪ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১২ 
  15. Dandavate, Madhu (২০০২)। Jayaprakash Narayan : struggle with values : a centenary tribute। New Delhi: Allied Publishers। পৃষ্ঠা 224–225। আইএসবিএন 9788177643411 
  16. Biography of Vinoba Bhave. rmaf.org.ph
  17. List of Bharat Ratna Awardees recipients accessed in January 2010

বাড়তি পাঠ্য[সম্পাদনা]

  • বিনোবা ভাবে: দ্য ম্যান এন্ড হিস মিশান, লেখক প.ডি.ট্যান্ডন, প্রকাশক ভোরা, ১৯৫৪
  • ইন্ডিয়াস ওয়াকিং সেন্ট: দ্য স্টোরি অফ বিনোবা ভাবে, লেখক হ্যাল্লাম টেনিসন, প্রকাশক ডাবলডে, ১৯৫৫
  • আচার্য বিনোবা ভাবে, লেখক ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক, প্রকাশক ভারত সরকারের প্রকাশনা দপ্তর, ১৯৫৫
  • ইন্ডিয়াস সোশাল মিরাকল: দ্য স্টোরি অফ আচার্য বিনোবা ভাবে এন্ড হিস মুভমেন্ট ফর সোশাল জাস্টিস এন্ড কোঅপারেশান, অ্যালং উইথ এ কি টু আমেরিকাস ফিউচার এন্ড দ্য ওয়ে ফর হারমনি বিটুইন ম্যান,
   নেচার, এন্ড গড, লেখক ড্যানিয়েল পি. হফম্যান, প্রকাশক নেচারগ্রাফ কোং, ১৯৬১
  • সর্বোদয় ইডিওলজি এন্ড আচার্য বিনোবা ভাবে, লেখক ভি. নারায়ণ করণ রেড্ডি, প্রকাশক অন্ধ্রপ্রদেশ সর্বোদয় মন্ডল, ১৯৬৩
  • বিনোবা ভাবে অন সেলফ-রুল এন্ড রিপ্রেসেন্টেটিভ ডেমোক্রেসি, লেখক মাইকেল সনলেইন্টার, প্রকাশক প্রমীলা এন্ড কোং, ১৯৮৮আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৮৫০০২-১০-১.
  • স্ট্রাগল ফর ইন্ডিপেনডেন্স: বিনোবা ভাবে, লেখক শ্রী রাম বক্সী, প্রকাশক আনমোল পাবলিকেশান, ১৯৮৯
  • ফিলোসফি অফ বিনোবা ভাবে : এ নিউ পারসপেক্টিভ ইন গান্ধীয়ান থট, লেখক গীতা এস. মেহতা। প্রকাশক হিমালয়া পাব. হাউস, ১৯৯৫।আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৪৯৩-০৫৪-৫.
  • বিনোবা ভাবে – ব্যক্তি আনি বিচার (মারাঠিতে লেখা বই) লেখক অনন্ত ডি. আদাওয়ারকার, প্রকাশক জয়শ্রী প্রকাশন, নাগপুর।
  • বিনোবা দর্শন – দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি সহযোগে ছবিসহ জীবনী

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:Mohandas K. Gandhi

টেমপ্লেট:Ramon Magsaysay Award Winners