শম্ভু মিত্র
শম্ভু মিত্র | |
---|---|
জন্ম | ২২ আগস্ট ১৯১৫ |
মৃত্যু | ১৯ মে ১৯৯৭ |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() |
পেশা | অভিনেতা, নাট্য লেখক, পরিচালক |
প্রতিষ্ঠান | বহুরূপী, ভারতীয় গণনাট্য সংঘ |
পরিচিতির কারণ | নবান্ন |
দাম্পত্য সঙ্গী | তৃপ্তি মিত্র |
সন্তান | শাঁওলি মিত্র |
পিতা-মাতা |
|
পুরস্কার | পদ্মভূষণ ১৯৭০ |
শম্ভু মিত্র (২২ অগস্ট, ১৯১৫ – ১৯ মে, ১৯৯৭) ছিলেন বাংলা তথা ভারতীয় নাট্যজগতের এক কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব, স্বনামধন্য আবৃত্তিশিল্পী ও চলচ্চিত্র অভিনেতা। ১৯৩৯ সালে বাণিজ্যিক নাট্যমঞ্চে যোগ দেন। পরে ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সদস্য হন। ১৯৪৮ সালে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গড়ে তোলেন নাট্যসংস্থা বহুরূপী। ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বহুরূপীর প্রযোজনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সফোক্লিস, হেনরিক ইবসেন, তুলসী লাহিড়ী এবং অন্যান্য বিশিষ্ট নাট্যকারের রচনা তাঁর পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয়। শম্ভু মিত্রের স্ত্রী তৃপ্তি মিত্র ও কন্যা শাঁওলী মিত্রও স্বনামধন্য মঞ্চাভিনেত্রী। শাঁওলি মিত্রের নাট্যসংস্থা পঞ্চম বৈদিকের সঙ্গে আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন শম্ভু মিত্র। তাঁর পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য নাটকগুলি হল নবান্ন, দশচক্র, রক্তকরবী, রাজা অয়দিপাউস ইত্যাদি। তাঁর রচিত নাটকের মধ্যে চাঁদ বণিকের পালা সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য। ১৯৭৬ সালে নাটক ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে ম্যাগসেসে পুরস্কার ও ভারত সরকারের পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয়।
জীবন[সম্পাদনা]
শম্ভু মিত্রের জন্ম কলকাতার ভবানীপুর অঞ্চলে মাতামহ ডাঃ আদিনাথ বসুর গৃহে। তার পিতার নাম শরৎকুমার বসু ও মাতার নাম শতদলবাসিনী দেবী। শম্ভু মিত্রের পৈতৃক নিবাস ছিল হুগলি জেলার কলাছাড়া গ্রামে। বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে বিদ্যালয় শিক্ষা সমাপ্ত করে ভরতি হন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। তবে কলেজের পাঠ সমাপ্ত করেননি। ১৯৩৯ সালে রংমহলে যোগদানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক নাট্যমঞ্চে তার পদার্পণ। পরে যোগ দিয়েছিলেন মিনার্ভায়। নাট্যনিকেতনে কালিন্দী নাটকে অভিনয়ের সূত্রে সেযুগের কিংবদন্তি নাট্যব্যক্তিত্ব শিশিরকুমার ভাদুড়ীর সঙ্গে আলাপ হয়। পরবর্তীকালে শিশিরকুমার ভাদুড়ীর প্রযোজনায় আলমগীর নাটকে অভিনয়ও করেছিলেন। কিন্তু এই সময় থেকেই শিশিরকুমারের থেকে আলাদা সম্পূর্ণ নিজস্ব এক নাট্যঘরানা তৈরিতে উদ্যোগী হন শম্ভু মিত্র।
১৯৪২ সালে ফ্যাসিবিরোধী সংঘের সঙ্গে পরিচিত হন শম্ভু মিত্র। ১৯৪৩ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক পি. সি. যোশির অনুপ্রেরণায় যোগ দেন ভারতীয় গণনাট্য সংঘে। ১৯৪৫ সালের ১০ ডিসেম্বর গণনাট্য সংঘে কাজ করার সময়ই প্রখ্যাত মঞ্চাভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্রের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন শম্ভু মিত্র।
১৯৪৮ সালে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠন করেন বহুরূপী নাট্যগোষ্ঠী। ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বহুরূপীর প্রযোজনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সফোক্লিস, হেনরিক ইবসেন, তুলসী লাহিড়ী এবং অন্যান্য বিশিষ্ট নাট্যকারের রচনা তার পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয়। তার এই পরিচালনাগুলি ভারতীয় নাটকের ইতিহাসে এক একটি মাইলফলক হিসেবে পরিগণিত হয়। ১৯৭০ সালে একটি আর্ট কমপ্লেক্স নির্মাণে উদ্দেশ্যে গঠন করেন বঙ্গীয় নাট্যমঞ্চ সমিতি। অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সমিতির প্রযোজনায় ও অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় মঞ্চস্থ মুদ্রারাক্ষস নাটকে অভিনয়ও করেন। কিন্তু রাজ্য সরকারের অসহযোগিতায় প্রয়োজনীয় জমি না পাওয়া গেলে পরিকল্পনাটি পরিত্যক্ত হয়। ১৯৭৬ সালে নাটক ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ম্যাগসেসে পুরস্কার ও ভারত সরকারের পদ্মভূষণ সম্মান লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে এক বছরের জন্য বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং ফেলো হয়েছিলেন। ১৯৭৮ সালের ১৬ জুন অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে দশচক্র নাটকে অভিনয় করেন। বহুরূপীর প্রযোজনায় এটিই তার শেষ নাটক। এই বছরই ১৫ অগস্ট অ্যাকাডেমিতে স্বরচিত চাঁদ বনিকের পালা নাটকটি পাঠ করেন তিনি। এরপর বহুরূপীর আর কোনো প্রযোজনায় তাকে দেখা যায়নি।
১৯৭৯ সালে প্রায় দৃষ্টিহীন অবস্থায় নান্দীকার প্রযোজিত মুদ্রারাক্ষস নাটকে চাণক্যের ভূমিকায় তার অভিনয় বিশেষ সাড়া ফেলেছিল। ১৯৮০-৮১ সালে ফ্রিৎজ বেনেভিৎজের পরিচালনায় ক্যালকাটা রিপোর্টারির প্রযোজনায় গ্যালিলিওর জীবন নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৮৩ সালে নিজের প্রযোজনায় কন্যা শাঁওলী মিত্র পরিচালিত নাথবতী অনাথবৎ নাটকে কন্যার সঙ্গে অভিনয় করেন শম্ভু মিত্র। শাঁওলী মিত্রের পরবর্তী নাটক কথা অমৃতসমান-এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন শম্ভু মিত্র। কন্যার নাট্যসংস্থা পঞ্চম বৈদিকের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ও আমৃত্যু কর্মসমিতি সদস্য ছিলেন। ১৯৮৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রবীন্দ্রসদনে পঞ্চম বৈদিকের প্রযোজনায় ও তার পরিচালনায় দশচক্র নাটকটির পরপর ছয়টি অভিনয় পাঁচ দিনে মঞ্চস্থ হয়। অভিনেতা রূপে এর পর আর কোনোদিন মঞ্চে অবতীর্ণ হননি তিনি।
১৯৮৩ সালে বিশ্বভারতী তাকে দেশিকোত্তম উপাধিতে সম্মানিত করে। যাদবপুর ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডি.লিট. উপাধিতেও ভূষিত করেছিল।
১৯৯৭ সালের ১৯ মে কলকাতার বাসভবনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শম্ভু মিত্র। ইচ্ছাপত্র-এ তিনি লিখেছিলেন, “মোট কথা আমি সামান্য মানুষ, জীবনের অনেক জিনিস এড়িয়ে চলেছি, তাই মরবার পরেও আমার দেহটা যেন তেমনই নীরবে, একটু ভদ্রতার সঙ্গে, সামান্য বেশে, বেশ একটু নির্লিপ্তির সঙ্গে গিয়ে পুড়ে যেতে পারে।” এই কারণে সৎকার সমাধা হওয়ার পূর্বে সংবাদমাধ্যমে শম্ভু মিত্রের মৃত্যুসংবাদ প্রচার করা হয়নি।
নাটক[সম্পাদনা]
বহুরূপীর প্রযোজনায় শম্ভু মিত্র পরিচালিত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলি হল: নবান্ন, 'বিভাব' ,ছেঁড়া তার, পথিক, দশচক্র, চার অধ্যায়, রক্তকরবী, পুতুল খেলা, মুক্তধারা, কাঞ্চনরঙ্গ, বিসর্জন, রাজা অয়দিপাউস, রাজা, বাকি ইতিহাস, পাগলা ঘোড়া, চোপ আদালত চলছে ইত্যাদি। চাঁদ বণিকের পালা তার রচিত একটি কালজয়ী নাটক। এই নাটকের প্রযোজনা করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে একাধিক অনুষ্ঠানে তিনি এই নাটক পাঠ করেছেন এবং রেকর্ডও করেছেন। তার রচিত অন্যান্য নাটকগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য: উলুখাগড়া, বিভাব, ঘূর্ণি, কাঞ্চনরঙ্গ ইত্যাদি। এছাড়া গর্ভবতী বর্তমান ও অতুলনীয় সংবাদ নামে দুটি একাঙ্ক নাটকও রচনা করেন। নাট্যরচনা ছাড়াও শম্ভু মিত্র পাঁচটি ছোটোগল্প ও একাধিক নাট্যবিষয়ক প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। তার রচিত কাকে বলে নাট্যকলা ও প্রসঙ্গ: নাট্য দুটি বিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ।
আবৃত্তি[সম্পাদনা]
শম্ভু মিত্র ছিলেন বাংলার এক স্বনামধন্য আবৃত্তিশিল্পী। জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের মধুবংশীর গলি কবিতাটি আবৃত্তি করে তিনি জনসমাজে বিশেষ সাড়া ফেলেছিলেন। রক্তকরবী, চার অধ্যায়, রাজা অয়দিপাউস, তাহার নামটি রঞ্জনা, ডাকঘর, চাঁদ বণিকের পালা ও অয়দিপাউসের গল্প তার স্বকণ্ঠে রেকর্ড করা নাট্যপাঠ। এছাড়া শম্ভু মিত্র (কবিতা আবৃত্তি), রবীন্দ্রনাথের কবিতাপাঠ, দিনান্তের প্রণাম তার প্রসিদ্ধ বাংলা কবিতা আবৃত্তির রেকর্ড।
চলচ্চিত্র[সম্পাদনা]
নাট্যাভিনয়ের সূত্রে চলচ্চিত্র জগতেও পা রেখেছিলেন শম্ভু মিত্র। খাজা আহমেদ আব্বাসের পরিচালনায় নির্মিত হিন্দি ছবি ধরতি কে লাল-এর সহকারী পরিচালক ছিলেন তিনি। অভিনয় করেছেন মানিক, শুভবিবাহ, ৪২, কাঞ্চনরঙ্গ, পথিক, বউ-ঠাকুরাণীর হাট প্রভৃতি চলচ্চিত্রে। অমিত মিত্রের সঙ্গে একদিন রাত্রে ও তার হিন্দি জাগতে রহো-র কাহিনি, চিত্রনাট্য ও পরিচালনার কাজ করেন। রাজ কাপুর প্রয়োজিত ও অভিনীত জাগতে রহো ছবিটি গ্রাঁ পিঁ সম্মানে ভূষিত হয়েছিল।
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড (পরিমার্জিত তৃতীয় সংস্করণ), অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০০৪, পৃ. ৩২১-২৩
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]
- শম্ভু মিত্র - অভিনীত নাটকের তালিকা।
- দ্বন্দ্বমূলক প্যারামিটারসহ তথ্যছক ব্যক্তি ব্যবহার করা পাতা
- বাঙালি নাট্যকার
- বাঙালি নাট্য পরিচালক
- ভারতীয় নাট্যকার
- ভারতীয় নাট্য পরিচালক
- পশ্চিমবঙ্গের নাট্যকার
- পশ্চিমবঙ্গের নাট্য পরিচালক
- পশ্চিমবঙ্গের ব্যক্তি
- কলকাতার ব্যক্তি
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- পদ্মভূষণ প্রাপক
- কলকাতার চলচ্চিত্র পরিচালক
- বাংলা নাটক
- বাংলা সাহিত্য
- ১৯১৫-এ জন্ম
- ১৯৯৭-এ মৃত্যু
- রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার বিজয়ী
- ভারতীয় গণনাট্য সংঘের মানুষ
- কলকাতার চিত্রনাট্যকার