বিষয়বস্তুতে চলুন

কারবালার যুদ্ধ

কারবালার যুদ্ধ
দ্বিতীয় ফিতনার অংশ

আব্বাস আল-মুসাভির কারবালার যুদ্ধ, ব্রুকলিন মিউজিয়াম
তারিখ১০ অক্টোবর ৬৮০ খ্রিস্টাব্দ (১০ মুহররম ৬১ হিজরি)
অবস্থান
কারবালা, ইরাক
৩২°৩৬′৫৫″ উত্তর ৪৪°০১′৫৩″ পূর্ব / ৩২.৬১৫২৮° উত্তর ৪৪.০৩১৩৯° পূর্ব / 32.61528; 44.03139
ফলাফল
বিবাদমান পক্ষ
উমাইয়া খিলাফত হুসাইন ইবনে আলী এবং তার অনুসারীরা
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ
উমর ইবনে সাদ
সিমার
হুসাইন ইবনে আলী 
আব্বাস ইবনে আলী 
হাবিব ইবনে মাজোয়াহির আল-আসাদি 
জুহাইর ইবনে আল-কাইন 
আল-হুর ইবনে ইয়াজিদ আল-তামিমি 
শক্তি
৪,০০০–৫,০০০[][][][][][] ৭০–১৪৫
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
৮৮ ৭২ জনের অধিক
কারবালার যুদ্ধ ইরাক-এ অবস্থিত
কারবালার যুদ্ধ
ইরাক-এ অবস্থান

কারবালার যুদ্ধ (আরবি: مَعْرَكَة كَرْبَلَاء) সংঘটিত হয় ৬৮০ সালের ১০ অক্টোবর (ইসলামি বর্ষপঞ্জির ৬১ হিজরির ১০ মহররম তারিখে), ইসলামের নবী মুহাম্মদের নাতী হুসাইন ইবনে আলী নেতৃত্বাধীন অল্প কিছু সমর্থক-আত্মীয় এবং উমাইয়া খলিফা প্রথম ইয়াজিদ (রাজত্বকাল: ৬৮০–৬৮৩) এর সেনাবাহিনীর মধ্যে। এ যুদ্ধ সংঘটিত হয় কারবালায়, যেটি সেই সময় সাওয়াদ নামে পরিচিত ছিল (আধুনিক দক্ষিণ ইরাকে অবস্থিত)।

মৃত্যুর পূর্বে উমাইয়া খলিফা প্রথম মুয়াবিয়া (রাজত্বকাল: ৬৬১–৬৮০) তার পুত্র ইয়াজিদকে উত্তরসূরি হিসেবে মনোনীত করেন। ইয়াজিদের মনোনয়ন নিয়ে মুহাম্মদের কয়েকজন বিশিষ্ট সাহাবির পুত্ররা আপত্তি জানান, যাদের মধ্যে ছিলেন চতুর্থ খলিফা আলির পুত্র হুসাইন এবং জুবাইর ইবনুল আওয়ামের পুত্র আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের।৬৮০ সালে মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর, ইয়াজিদ হুসাইন ও অন্যান্য বিরোধীদের কাছ থেকে আনুগত্য দাবি করে। হুসাইন আনুগত্য করেননি এবং মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।ইরাকের সৈন্যঘাঁটি শহর কুফা, যা একসময় খলিফা আলির শাসনকেন্দ্র ছিল, সেখানকার জনগণ সিরিয়া-ভিত্তিক উমাইয়া খলিফাদের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল এবং দীর্ঘদিন ধরে তারা আলির বংশধরদের প্রতি গভীর আনুগত্য ও ভালোবাসা প্রদর্শন করে আসছিল।তারা হুসাইনকে উমাইয়াদের উৎখাত করার প্রস্তাব দেয়। কুফার পথে প্রায় ৭০ জন অনুসারী নিয়ে হুসাইন যখন যাত্রা করছিলেন, তখন কুফা থেকে কিছুটা দূরে খলিফার ১,০০০ সৈন্যের একটি বাহিনী তার কাফেলাকে বাধা দেয়। তাকে উত্তরে যেতে বাধ্য করা হয় এবং ২ অক্টোবর কারবালার সমভূমিতে শিবির স্থাপন করতে হয়, যেখানে শীঘ্রই ৪,০০০ সৈন্যের একটি বিশাল উমাইয়া বাহিনী এসে পৌঁছায়।[] আলোচনা ব্যর্থ হয়ে যায়, কারণ উমাইয়া গভর্নর উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ হুসাইনকে নিরাপদে চলে যাওয়ার অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন, যদি না তিনি তার (উবায়দুল্লাহর) কর্তৃত্ব স্বীকার করেন। কিন্তু হুসাইন এই শর্ত প্রত্যাখ্যান করেন। ১০ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হয় এবং এই যুদ্ধে হুসাইন তার অধিকাংশ আত্মীয় ও অনুসারীসহ নিহত হন। তার পরিবারের যারা বেঁচে ছিলেন, তাদের বন্দী করা হয়। এই যুদ্ধ ছিল দ্বিতীয় ফিতনার সূচনা, যেখানে ইরাকিরা হুসাইনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে দুটি পৃথক অভিযান পরিচালনা করে; প্রথমটি তাওয়াবিন (অনুতাপকারীগণ) কর্তৃক এবং দ্বিতীয়টি মুখতার আল সাকাফি ও তার সমর্থকদের দ্বারা।

কারবালার যুদ্ধ ‘আলিপন্থী দল’ (শীয়াতে আলি)-এর বিকাশকে একটি স্বতন্ত্র ধর্মীয় সম্প্রদায়ে রূপান্তরিত করতে প্রেরণা জোগায়, যাদের নিজস্ব আচার-অনুষ্ঠান এবং সম্মিলিত স্মৃতিচর্চা গড়ে ওঠে।[] এটি শিয়া ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ধর্মতত্ত্বে একটি কেন্দ্রীয় স্থান অধিকার করে আছে এবং শিয়া সাহিত্যে এটি বারবার বর্ণিত হয়েছে। শিয়াদের কাছে হুসাইনের কষ্টভোগ ও মৃত্যু, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে এবং মিথ্যা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের এক প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এটি শিয়া বিশ্বাসের অনুসারীদের জন্য বীরত্বপূর্ণ আদর্শগুলোর একটি নির্দেশনাসূচীও প্রদান করে। শিয়ারা প্রতি বছর ইসলামি বর্ষপঞ্জির মুহাররম মাসে দশ দিনব্যাপী শোকানুষ্ঠানের মাধ্যমে কারবালার যুদ্ধকে স্মরণ করেন, যার পরিসমাপ্তি ঘটে মাসের দশম দিনে যা আশুরা নামে পরিচিত। এই দিনে শিয়ারা শোক পালন করেন, প্রকাশ্য মিছিল বের করেন, ধর্মীয় সমাবেশের আয়োজন করেন, বুক চাপড়ায় এবং কিছু ক্ষেত্রে আত্ম-পীড়ন করেন। সুন্নি মুসলমানরাও এই ঘটনাকে একটি ঐতিহাসিক মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করেন; হুসাইন ও তার সাথীদের উভয় পক্ষকে সুন্নি ও শিয়া মুসলমানদের কাছে শহীদ হিসেবে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।

রাজনৈতিক পটভূমি

[সম্পাদনা]
প্রথম ইয়াজিদ কর্তৃক সাসানীয় নকশার অনুকরণে প্রস্তুতকৃত একটি মুদ্রা, যা বসরা টাঁকশাল থেকে জারি করা হয়; এই মুদ্রাটি ইসলামি বর্ষ ৬১ হিজরীর (৬৮০/৮১ খ্রিস্টাব্দ), যে বছর কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল

তৃতীয় খলিফা উসমানের ৬৫৬ সালের বিদ্রোহীদের হাতে হত্যার পর, বিদ্রোহীরা এবং মদিনার নগরবাসীরা আলীকে, যিনি ইসলামের নবী মুহাম্মদের চাচাতো ভাই এবং জামাতা, খলিফা ঘোষণা করে। মুহাম্মদের কয়েকজন সাহাবী, যাদের মধ্যে তালহা ইবনে উবায়দিল্লাহ, জুবায়ের ইবনে আল-আওয়াম এবং মুয়াবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ান (তখনকার সিরিয়ার গভর্নর) এবং মুহাম্মদের স্ত্রী আয়িশা, আলীকেও স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানান। তারা উসমানের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের আহ্বান জানান এবং শূরার (পরামর্শসভা) মাধ্যমে নতুন খলিফার নির্বাচনের দাবি করেন। এই ঘটনারা প্রথম ফিতনার সূচনা করে।[] যখন ৬৬১ সালে আলীকে আবদাল-রাহমান ইবন মুলজাম, নামে একজন খারিজী হত্যা করলে, তার বড় ছেলে হাসান তার জায়গায় উত্তরাধিকারী হয় কিন্তু আরও রক্তপাত এড়াতে মুয়াবিয়ার সাথে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে।[] চুক্তিতে, হাসান মুয়াবিয়া কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার শর্তে রাজি হন যে মুয়াবিয়া একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক হবেন এবং তিনি কোনো রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন না।[১০][১১][১২]

কারবালার যুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ

[সম্পাদনা]

প্রাথমিক উৎস

[সম্পাদনা]

আবু মিকনাফ (মৃত্যু: ১৫৭ হি./৭৭৪ খ্রি.) তারঁ কিতাব মাকতাল আল-হোসাইন গ্রন্থে সর্বপ্রথম নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা সংগ্রহ করে সেই বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন।[১৩]

আবু মিকনাফ-এর মূল পুস্তকটি এখন আর পাওয়া যায়না, যেটি পাওয়া যায় সেটি হচ্ছে তার ছাত্র হিশাম ইবন আল-কালবী (মৃত্যু: ২০৪ হি.) কর্তৃক বর্ণিত। গোথা (নং: ১৮৩৬), বার্লিন (স্পেরেঞ্জার, নং ১৫৯-১৬০), লিডেন (নং: ৭৯২) এবং সেন্ট পিটার্সবার্গ (এম নং: ৭৮) লাইব্রেরীতে মাকতাল-এর চারটি পান্ডুলিপি বর্তমানে সংরক্ষিত রয়েছে।[১৪]

শিয়া লেখনীতে

[সম্পাদনা]

ইতিহাস বিকৃতির দাবি

[সম্পাদনা]

সাহিত্যে প্রভাব

[সম্পাদনা]

ফার্সী সাহিত্য

[সম্পাদনা]

আজেরি ও তুর্কি সাহিত্য

[সম্পাদনা]

সিন্ধি সাহিত্য

[সম্পাদনা]

উর্দু সাহিত্য

[সম্পাদনা]

বাংলা সাহিত্য

[সম্পাদনা]

মীর মোশার্‌রফ হোসেন বিষাদ সিন্ধু নামক একটি উপন্যাস রচনা করেছেন এবং কাজী নজরুল ইসলাম প্রচুর কবিতা লিখেছেন এই বিয়োগাত্মক ঘটনার প্রেক্ষিতে। ১০ মুহররম তারিখে মার্সিয়া গাওয়া হয়।

শিয়া দর্শনানুসারে

[সম্পাদনা]
চল্লিশার সময় ইমাম হোসেনের মাজার

শিয়া মুসলমানরা প্রতিবছর মুহররম মাসে কারবালার যুদ্ধকে স্মরণ করে। পয়লা মুহররমের দিন থেকে এর শুরু হয় এবং ১০ মুহররমের দিন (আশুরা) তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে।

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে, কারবালার যুদ্ধের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে প্রচুর সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রচলন ঘটেছে, যেমন: মার্সিয়া, নোহা এবং সোয়াজ।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. Wellhausen 1901, পৃ. 65।
  2. Vaglieri 1971, পৃ. 609।
  3. 1 2 Madelung 2004, পৃ. 493–498।
  4. Ayoub 1978, পৃ. 109।
  5. Halm 1997, পৃ. 9।
  6. Munson 1988, পৃ. 23।
  7. Donner 2010, পৃ. 178।
  8. Kennedy 2004, পৃ. 89।
  9. Donner 2010, পৃ. 157–160।
  10. Donaldson 1933, পৃ. 70–71।
  11. Jafri 1979, পৃ. 149–151।
  12. Madelung 1997, পৃ. 322–323।
  13. "Kitab Maqtal al-Husayn.doc" (পিডিএফ)। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে (পিডিএফ) আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১৩
  14. Syed Husayn M. Jafri, "The Origins and Early Development of Shi'a Islam", Oxford University Press, USA (April 4, 2002), আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৫৭৯৩৮৭-১

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

শিয়া তথ্যসংযোগ

[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:Martyrs of Karbala

  1. 1 2 The Shi'a sources assert that the army was 30,000 strong.[]
  2. Political supporters of Ali and his descendants (Alids).[][]
উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="lower-alpha"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি