জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি
মাওলানা জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বালখী مولانا جلالالدین محمد بلخی জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি | |
---|---|
উপাধি | মাওলানা, মৌলভী |
জন্ম | ওয়াখশ অথবা বাল্খ,[১][২][৩][৪] খোয়ারিজমীয় সাম্রাজ্য | ৩০ সেপ্টেম্বর ১২০৭
মৃত্যু | ডিসেম্বর ১৭, ১২৭৩ কোনিয়া, রুম সালতানাত |
সমাধি স্থান | কোনিয়া, রুম সালতানাত |
জাতিভুক্ত | ফারসি |
যুগ | ইসলামি স্বর্ণযুগ |
অঞ্চল | খোয়ারিজমীয় সাম্রাজ্য (বাল্খ: ১২০৭-১২১২, ১২১৩-১২১৭; সমরখন্ডঃ ১২১২-১২১৩)[৫][৬] রুম সালতানাত(মালাত্তাঃ১২১৭-১২১৯; আঁকশিরঃ১২১৯-১২২২; লারেন্ডেঃ ১২২২-১২২৮; কোনিয়াঃ ১২২৮-১২৭৩)[৫] |
শাখা | সুন্নি ইসলাম, সুফিবাদ, তাঁর অনুগামিগণ মৌলভী তরিকা অনুসরণ করেন। |
মূল আগ্রহ | সুফি সাহিত্য, হানাফি আইনশাস্ত্র |
উল্লেখযোগ্য ধারণা | সুফি উপাবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ |
লক্ষণীয় কাজ | মসনবি শরীফ, দেওয়ান-এ-শামস্-এ-তাবরিজি, ফিহি মা ফিহি |
যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন
| |
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেন
|
জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি (ফার্সি: جلالالدین محمد رومی; ৩০ সেপ্টেম্বর ১২০৭ – ১৭ ডিসেম্বর ১২৭৩), যিনি জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বালখী, মাওলানা রুমি, মৌলভি রুমি নামে তবে শুধু মাত্র রুমি নামেও পরিচিত, ১৩শ শতাব্দীর একজন ফার্সি[৭][৮] সুন্নি[৯] মুসলিম কবি, আইনজ্ঞ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রিয়বাদী এবং সুফী ছিলেন।[১০] রুমির প্রভাব দেশের সীমানা এবং জাতিগত পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে বিশ্বদরবারে ছড়িয়ে পড়েছে; ফার্সি, তাজাকিস্তানি, তুর্কি, গ্রিক, পশতুন, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানরা বিগত সাত শতক ধরে বেশ ভালভাবেই তার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে যথাযথভাবে সমাদৃত করে আসছে।[১১]
তার কবিতা সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বিভিন্ন ধারায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। রুমিকে যুক্তরাষ্ট্রের “সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি” [১২] এবং “সর্বাধিক বিক্রীত কবি” হিসেবে উল্লেখ করা হয়।[১৩][১৪]
রুমির সাহিত্যকর্ম বেশিরভাগই ফার্সি ভাষায় রচিত হলেও তিনি অনেক স্তবক তুর্কি, আরবি এবং গ্রিক ভাষায়ও[১৫][১৬][১৭] রচনা করেছেন। [১৮][১৯] তার লেখা মসনবী-কে ফার্সি ভাষায় লেখা সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হয়।[২০][২১] বৃহত্তর ইরান এবং বিশ্বের ফার্সি ভাষী জনগোষ্ঠী এখনও তার লেখাগুলো মূল ভাষায় ব্যাপকভাবে পড়ে থাকে।[২২][২৩] অনুবাদসমূহও খুব জনপ্রিয়, বিশেষ করে তুরস্ক, আজারবাইজান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ এশিয়ায়।[২৪] তার কবিতা ফার্সি সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে, শুধু তাই নয় তুর্কি সাহিত্য, উসমানীয় তুর্কি সাহিত্য, আজারবাইজানি সাহিত্য, পাঞ্জাবের কবিতা, হিন্দী সাহিত্য, উর্দু সাহিত্যকেও অনেক প্রভাবিত করেছে। এছাড়াও অন্যান্য ভাষার সাহিত্য যেমন তুর্কীয়, ইরানীয়, ইন্দো-আর্য, চাগাতাই, পশতু এবং বাংলা সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে। তার জীবনদর্শনের উপর শিবলী নোমানীর রচিত সাওয়ানেহে মাওলানা রূম অন্যতম।
নাম[সম্পাদনা]
তাকে ইংরেজিতে “রুমি” নামে সবচেয়ে বেশি ডাকা হয়। তার পুরো নাম “জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ বালখি” বা “জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ রুমি”। বালখি এবং রুমি দুটো তার জাতিগত নাম, যথাক্রমে অর্থ “বালখ্” থেকে এবং “রুম” থেকে (রুম আনাতোলিয়ার ফার্সি এবং তুর্কি নাম)। রুমির নির্ভরযোগ্য জীবনীলেখক শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রাঙ্কলিন লুইসের মতে, আনাতোলিয়া উপদ্বীপ বাইজেন্টাইন বা রুম সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল যেটি পরবর্তীতে তুর্কির মুসলিমদের দখলে আসে, যেটি এখন পর্যন্ত আরব, পারস্য এবং তুর্ক নামে পরিচিত, যেটি ছিল রুম এর ভৌগোলিক এলাকা। যেখানে অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব জন্মগ্রহণ করেছেন রুমি ছিলেন তাদেরই একজন। “রুমি” শব্দটি মূলত আরবিক যার অর্থ রোমান।"[২৫]
তিনি "মোল্লা-ই রুম (রুমের মোল্লা) নামেও পরিচিত ছিলেন।[২৬] তবে তিনি ইরানে তার উপনাম “মাওলানা” নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত এবং তুরস্কে মেভলানা" নামে পরিচিত।[৫][৭] মাওলানা একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে শিক্ষক। মৌলভী (ফার্সি) ও মেভলানা (তুর্কি) শব্দ দুটিও আরবি থেকে এসেছে, যার অর্থও শিক্ষক। এই দুটি উপনাম তার নামের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।[২৭]
জীবনী[সম্পাদনা]
রুমি ফার্সি ভাষী মাতাপিতার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।[১৮][১৯][২৮] তারা বর্তমান আফগানিস্থানের বালখের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি হয় ওয়ালখ্স [২] যা বৃহৎ বালখ্ সাম্রাজ্যের বালখ্স নদীর কাছে একটি গ্রাম যেটি বর্তমানে তাজাকিস্তান,[২] অথবা বর্তমান আফগানিস্থানের বালখ্ শহরে জন্মগ্রহণ করেন।[৩][৪] বৃহৎ বালখ্ তখন ছিল ফার্সি সংস্কৃতি[২১][২৮][২৯] সুফি চর্চার কেন্দ্রবিন্দু, যা বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। রুমির পিতা ছাড়াও রুমির উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছেন তখনকার ফার্সি কবি আত্তার এবং সানাই।[৩০] রুমি তাদের গুণগ্রাহিতা করেছেনঃ “আত্তার হচ্ছে আত্মা, সানাই হচ্ছেন তাঁর দু’চোখ, এবং এরপরে আমরা তাঁদের লাইনে এসেছিলাম”[৩১] এবং আরেকটি কবিতাতে স্মৃতিচারণ করেছেন “আত্তার ভালবাসার সাতটি নগরই ভ্রমণ করেছেন আর আমি এখনও একটি গলির প্রান্তে অবস্থান করছি”।[৩২] তার পৈতৃক দিক থেকে তিনি নাজিম উদ্দিন কুবরা এর বংশধর ছিলেন।[১১] তিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় রুম সালাতানাত এর পারস্যতে কাটিয়েছেন।[৩৩][৩৪][৩৫] যেখানে তিনি তার কাজ রচনা করেছেন[৩৬] এবং ১২৭৩ ঈসায়ীতে ইন্তেকাল করেছেন। তাকে কোনিয়ায় সমাহিত করা হয় [৩৭] এবং সেটি এখন একটি তীর্থস্থান হয়ে উঠেছে। রুমির মৃত্যুর পর তার ছেলে সুলতান ওয়ালাদ এবং তার অনুসারীরা “মৌলভী ক্রম” স্থাপন করে, এটিকে ঘূর্ণায়মান দরবেশও বলা হয়, যেটি সুফী নৃত্যে “সামা” এর জন্য বিখ্যাত। তাকে তার পিতার কাছে শায়িত করা হয় এবং তার দেহাবশেষ এ একটি জমকাল দরগাহ নির্মাণ করা হয়। শামস উদ্দিন আহমদ আফলাকী এর “মানকিব উল-আরিফিন”(১৩১৮ এবং ১৩৫৩ এর মধ্যে লেখা)তে এর বিস্তারিত রয়েছে। এই ঐতিহাসিক জীবনীগ্রন্থকে অত্যন্ত মূল্যবান বলা হয় কারণ এতে রুমি সম্পর্কে কিংবদন্তি এবং সত্য রয়েছে।[৩৮] উদাহরণস্বরূপ, ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো এর প্রফেসর ফ্রাঙ্কলিন লুইস এর লেখা রুমি এর জীবনী গ্রন্থে ইহা সম্পর্কে আলাদা একটি অধ্যায় রয়েছে।[৩৯]
রুমির পিতা বাহা উদ্দিন ওয়ালাদ ছিলেন বালখ্ এর একজন ধর্মতাত্ত্বিক, আইনজ্ঞ, এবং একজন অতীন্দ্রিয়বাদী, যিনি রুমি এর অনুসারীদের কাছে “সুলতান আল-উলামা” নামে পরিচিত। সবচেয়ে জনপ্রিয় জীবনীগ্রন্থ লেখকদের মতে তিনি ছিলেন খলীফা আবু বক্কর এর বংশধর, যদিও আধুনিক গবেষক-পণ্ডিতরা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।[৩৯][৪০][৪১] মায়ের দিক থেকে খোয়ারিজমীয় বংশধর দাবি করা হয়েছিল রাজবংশের সাথে যুক্ত করার জন্য কিন্তু এ দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয় কালানুক্রমিক এবং ঐতিহাসিক কারণে।[৩৯][৪০][৪১] সবচেয়ে সম্পূর্ণ বংশতালিকা করা হয়েছে তার পরবিরারে যা ছয় থেকে সাত প্রজন্ম পর্যন্ত বিস্তৃত যেটি যুক্ত হয়েছে হানাফি ফকীহগণের সাথে।[৩৯][৪০][৪১] আমরা বাহা উদ্দিন এর মায়ের দিক থেকে নামের উৎস জানতে পারিনা, কিন্তু শুধুমাত্র তিনি তাকে “মামি”(ফার্সি ভাষায় মা এর চলিতরূপ)বলে উল্লেখ করেছেন[৪২] এবং তিনি ছিলেন খুবই সাধারণ একজন মহিলা যিনি ১৩ শতকে বাস করেছেন। রুমি এর মা ছিলেন মুইমিনা খাতুন। তার পারিবারিক কাজ ছিল কয়েক প্রজন্ম ধরে ইসলাম ধর্মের হানাফী মাজহাবের প্রচারণা করা এবং পরিবারের এই ঐতিহ্যকে রুমি এবং সুলতান ওয়ালাদ অব্যাহত রেখেছেন। যখন মঙ্গোল মধ্য এশিয়া দ্বারা আক্রান্ত ১২১৫ এবং ১২২০ সাল এর মধ্যে, বাহা উদ্দিন ওয়ালাদ তার পুরো পরিবার এবং একদল শিষ্যসহ পশ্চিমাভিমুখে রওনা হন। ঐতিহাসিকদের মতে যেটি রুমির শিষ্যদের দ্বারা একমত না, রুমির সাথে তখন পারস্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় রহস্য কবি আত্তার এর দেখা হয় ইরানিয়ান শহর “নিশাপুর” এ। আত্তার সাথে সাথেই রুমির আধ্যাত্নিক বৈশিষ্ট্য চিনতে পেরেছিলেন। তিনি দেখতে পেলেন রুমি তার পিতার পিছনে হেঁটে যাচ্ছেন এবং বললেন, “একটি হ্রদের পিছনে একটি সমুদ্র যাচ্ছে”। তিনি বালককে একটি বই প্রদান করলেন “আসরারনামা” নামে যেটি ইহজগতে আত্মাকে জড়িয়ে ফেলা সম্বন্ধে। এই সাক্ষাত আঠারো বছরের রুমির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং পরবর্তিতে তার কাজের উৎসাহ হিসাবে কাজ করেছে। নিশাপুর থেকে ওয়ালাদ এবং তার লোকজন বাগদাদ এর দিকে রওনা হন এবং অনেক পণ্ডিত ও সুফীদের সাথে সাক্ষাত করেন।[৪৩] বাগদাদ থেকে হজ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং মক্কায় হজ্জ পালন করেন। এরপর অভিযাত্রী কাফেলার দলটি দামেস্ক, মালাত্যেয়া, এরজিকান, শিবাস, কায়সেরি এবং নিগদি পাড়ি দেয়। এরপর তারা কারামান এ সাত বছর থাকে। রুমির মা এবং ভাই উভয়েই সেখানে মারা যায়। ১২২৫ সালে,কারামানে রুমি বিবাহ করেন গওহর খাতুনকে। তাদের দুটো ছেলেঃ সুলতাম ওয়ালাদ এবং আলাউদ্দিন চালাবী। যখন তার স্ত্রী মারা যান রুমি পুনরায় বিবাহ করেন এবং তার এক ছেলে, আমির আলিম চালাবী ও এক মেয়ে মালাখী খাতুন। ১২২৮ সালের ১ মে, আনাতোলিয়া শাসক আলাউদ্দিন কায়কোবাদ তাদেরকে আমন্ত্রণ জানান, বাহা উদ্দিন আনাতোলিয়া আসেন এবং আনাতোলিয়া এর কোনিয়াতে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন যেটি রুম সালাতানাত এর পশ্চিমাঞ্চল। বাহা উদ্দিন মাদ্রাসা এর প্রধান শিক্ষক হন এবং যখন তিনি মারা যান রুমির বয়স পঁচিশ বছর, উত্তরাধিকারসূত্রে তিনি তার পিতার পদ পান একজন ইসলামিক মৌলভি হিসাবে। বাহা উদ্দিন এর একজন ছাত্র, সৈয়দ বুরহান উদ্দিন মোহাক্কিক তীরমিযি, রুমিকে শরীয়াহ এবং তরীকা সম্পর্কে শিক্ষা দিতে থাকেন বিশেষ করে তার পিতার দিকগুলো। নয় বছর ধরে তিনি সুফীবাদ শিক্ষা গ্রহণ করেন বুরহান উদ্দিন এর শিষ্য হিসাবে যতদিন না তিনি মারা যান ১২৪০ বা ১২৪১ সালে। এরপর রুমির জনজীবন শুরু হয়ঃ তিনি একজন ইসলামী ফকিহ্ বা আইনজ্ঞ হন, ফতওয়া প্রকাশ করেন এবং কোনিয়ার মসজিদে নৈতিকতা সম্পর্কে বক্তৃতা দিতে থাকেন। তিনি মাদ্রাসাতে একজন মৌলভি হিসাবে কাজ করেন এবং তার অনুগামীদের শিক্ষা দেন। এই সময়কালে রুমি দামেস্ক ভ্রমণ করেন এবং বলা হয়ে থাকে তিনি সেখানে চার বছর অতিবাহিত করেন। দরবেশ শামস তাবরিজি এর সাথে সাক্ষাৎ হয় ১৫ নবেম্ভর ১২৪৪ সালে যেটি তার জীবন সম্পূর্ণরুপে বদলে দেয়। একজন সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষক এবং আইনজ্ঞ থেকে রুমি একজন সাধুতে রূপান্তরিত হন। শামস মধ্যপ্রাচ্যের সর্বত্র ভ্রমণ করে খুঁজছেন এবং বলছেন “কে আমার সঙ্গ সহ্য করিবে”। একটি কন্ঠ তাকে বলিল, “বিনিময়ে তুমি কি দিবে?” শামস উত্তর দিলেন, “আমার শির!!” কন্ঠটি আবার বলল, “তাহলে তুমি যাকে খুঁজছ সে কোনিয়ার জালাল উদ্দিন”। ১২৪৮ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে রুমি এবং শামস কথা বলছিলেন, এমন সময় কেউ শামসকে পিছনের দরজায় ডাকে। তিনি বের হয়ে যান এবং এরপর আর কোথাও কখনো দেখা যায়নি। গুজব শোনা যায় যে রুমির পুত্র আলাউদ্দিন এর মৌনসম্মতিতে শামসকে হত্যা করা হয়, যদি তাই হয় তাহলে শামস এই রহস্যময় বন্ধুত্তের জন্য তার মাথা দিয়েছেন।[৪৪]
শামস এর জন্য রুমির ভালবাসা এবং তার মৃত্যুতে শোকের প্রকাশ তিনি করেছেন “দেওয়ান-এ শামস-এ তাবরিজী” কাব্যগ্রন্থে। তিনি নিজে শামসের খোঁজে বের হয়ে গেছেন এবং দামেস্ক ভ্রমণ করেছেন। সেখানে তিনি বুঝতে পারলেনঃ
আমি কেন তাকে খুঁজব?
সে আর আমি তো একই
তাঁর অস্তিত্ব আমার মাঝে বিরাজ করে
আমি নিজেকেই খুঁজছি![৪৫]
রুমি অনায়াসে গজল রচনা করতে শুরু করলেন এবং সেগুলো “দেওয়ান-ই কবির” বা দেওয়ান শামস তাবরিজীতে সংগৃহীত করা হয়। রুমি আরেকজন সঙ্গী খোঁজে পান সালাউদ্দিন-ই জারকুব, একজন স্বর্ণকার। সালাউদ্দিন এর মৃত্যুর পর রুমির কেরাণী এবং প্রিয় ছাত্র হুসাম-এ চালাবি রুমির সঙ্গীর ভূমিকা পালন করেন। একদিন তারা কোনিয়ার বাইরে একটি আঙুরক্ষেতে বিচরণ করছিলেন তখন হুসাম রুমিকে একটা ধারণা বললেনঃ “যদি আপনি একটি বই লিখেন যেমন সানাই এর “এলাহিনামা” বা আত্তার এর “মাতিক উত-তাইর” এর মত, যেটি অনেকের সঙ্গ দেবে। তারা আপনার কাজ থেকে হৃদয়পূর্ণ করবে এবং সংগীত রচনা করবে এটিকে সহবর্তমান থাকতে। রুমি মুচকি হাসলেন এবং এক টুকরো কাগজ বের করে তার “মসনবী” এর প্রথম আঠারো লাইন লিখলেন,
বাঁশের বাঁশি যখন বাজে, তখন তোমরা মন দিয়া শোন, সে কী বলে,
সে তাহার বিরহ বেদনায় অনুতপ্ত হইয়া ক্রন্দন করিতেছে…
[৪৬]
হুসাম রুমিকে মিনতি করতে লাগলেন আরো লিখার জন্য। রুমি তার পরের বারটি বছর আনাতোলিয়ায় তার সেরা কাজ “মসনবী” এর ছয়টি খন্ডের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। ১২৭৩ সালের ডিসেম্বর এ রুমি অসুস্থবোধ করতে লাগলেন। তিনি তার নিজের মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এবং অনেক জনপ্রিয় হওয়া একটি গজল রচনা করেন যার শুরু হয়ঃ
কীভাবে জানব কোন ধরনের রাজা আমার মধ্যে আছে আমার সহচর হিসাবে?
আমার উজ্জ্বল মুখে দৃষ্টি দিও না আমার বদ্ধ পাগুলোর জন্য।[৪৭]
১৭ ডিসেম্বর ১২৭৩ সালে রুমি কোনিয়ায় মারা যান। তাকে তার পিতার কাছে সমাহিত করা হয় এবং যেটি একটি চমকপ্রদ ঘর, “ইয়াসিল তুর্ব”(সবুজ সমাধি, قبه الخضراء; যা বর্তমানে মাওলানা মিউজিয়াম), তার কবরের উপর দাঁড়িয়ে আছে। তার সমাধিফলকে লেখাঃ
যখন আমি মৃত, পৃথিবীতে আমার সমাধি না খুঁজে, আমাকে মানুষের হৃদয়ে খুঁজে নাও। [৪৮]
জর্জিয়ার রাণী গুরসু খাতুন ছিলেন রুমির উৎসাহদাতা এবং কাছের বন্ধু। তিনি কোনিয়াতে রুমির সমাধি নির্মানে তহবিল প্রদান করেন।[৪৯] ১৩ শতকের মাওলানা মিউজিয়ামসহ তার মসজিদ, থাকার জায়গা, বিদ্যালয় এবং মৌলভি তরীকার অন্যান্য ব্যক্তিদের সমাধি দেখতে আজকেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম-অমুসলিমরা ছুটে যান। জালাল উদ্দিন যিনি রুমি নামে পরিচিত, তিনি ছিলেন ইসলামের একজন দার্শনিক এবং মরমী। তার উপদেশ সমর্থন করে ভালবাসার মাধ্যমে অসীম পরমতসহিষ্ণুতা, ইতিবাচক যুক্তি, ধার্মিকতা, দানশীলতা এবং সচেতনতা। তিনি এবং তার শিষ্যদের কাছে সকল ধর্মই অধিক বা কম সত্য। মুসলিম, খৃষ্টান এবং ইহুদীকে একই দৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন, তার শান্তিপূর্ণ এবং সহিষ্ণু শিক্ষাদান বা উপদেশ সকল ধর্মের মানুষের অন্তর স্পর্শ করেছে।
শিক্ষাদান[সম্পাদনা]
রুমি এর শিক্ষার সাধারণ বিষয়বস্তু ছিল অন্যান্য ফার্সি সাহিত্যের মরমী এবং সুফী কবিদের মত তাওহিদ শিক্ষা। তার সাধনা অর্জনের ইচ্ছা এবং আকাঙ্ক্ষা প্রতীয়মান হয়ে উঠে তার বই মসনবী-এর নিম্নোক্ত কবিতায়ঃ[৫০]
|
|
মসনবী রচিত হয় প্রতিদিনের দৃশ্য, কোরানের আয়াত এবং ব্যাখ্যা, জটিল এবং বিশাল আধ্যাত্মবাদ থেকে।[৫১] প্রাচ্যে তার সম্পর্কে বলা হয় যে সে “একজন নবী নয় কিন্তু এটা নিশ্চিত যে সে একটি ধর্মশাস্ত্র নিয়ে এসেছে”। রুমি প্রচন্ডভাবে বিশ্বাস করতেন যে সৃষ্টিকর্তার কাছে পৌছানোর রাস্তা হচ্ছে সঙ্গীত, কবিতা, এবং নৃত্য। রুমির কাছে, সঙ্গীত সাহায্য করে সমস্ত সত্তাকে পবিত্র করতে কেন্দ্রীভূত করে এবং এতই তীব্রভাবে যে আত্মা একই সাথে ধ্বংস এবং পুনরুত্থিত হয়। এই ধারণা থেকে সুফী নৃত্য গড়ে উঠে। তার শিক্ষা মৌলভি তরিকার ভিত্তি হয়ে উঠে, যেটি তার ছেলে সুলতান ওয়ালাদ পূর্ণাঙ্গ করেছিলেন। রুমি “সামা” এর পৃষ্ঠপোষক, এটি সঙ্গীত শোনার মাধ্যেমে পবিত্র ভাবে নর্তন করা। মৌলভি ঐতিহ্যের মধ্যে “সামা” প্রতিনিধিত্ব করে মন এবং ভালবাসার মাধ্যমে একের নিকট আধ্যাত্মিক আরোহণের এক রহস্যময় ভ্রমণ। এই ভ্রমণে অন্বেষক প্রতীকীভাবে সত্যের দিকে ফিরে, ভালবাসা বৃদ্ধি, অহং পরিত্যাগ, সত্যের সন্ধান পায় এবং নির্ভুল একের নিকট পৌছায়। এরপর অন্বেষক আধ্যাত্মিক ভ্রমণ থেকে ফেরে, পরিপক্কতা লাভের মাধ্যমে সৃষ্টিকে ভালবাসতে এবং সেবা করতে।
মসনবীর অন্য একটি স্তবকে রুমি বর্ণনা করেছেন সার্বজনীন ভালবাসার বার্তাঃ
ভালোবাসার উদ্দেশ্য অন্য সব উদ্দেশ্য থেকে ভিন্ন
ভালোবাসা হলো ঈশ্বরের রহস্যপুঞ্জের জ্যোতির্বিজ্ঞান।[৫২]
রুমির প্রিয় বাদ্যযন্ত্র ছিল “নে”(এক ধরনের বাঁশি)।[১২]
প্রধান কাজসমূহ[সম্পাদনা]
রুমির কাব্যকে মাঝেমধ্যে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়ঃ চতুষ্পদী শ্লোক এবং গজল। গদ্যসমূহকে ভাগ করা হয় প্রবন্ধ, পত্র, এবং “সাতটি ধর্মাপদেশ” এ।
কাব্য[সম্পাদনা]
- রুমির প্রধান কাজ হচ্ছে “মাতনাওয়ে মানাউয়ি” (আধ্যাত্মিক দ্বিপদী; مثنوی معنوی), একটি ছয় খন্ডের কবিতা কয়েকজন সূফী এটিকে বিবেচনা করেন[৫৩] ফার্সি ভাষার কুরআন হিসাবে। অনেকে একে তুলনা করেন যে সেরা অতীন্দ্রি়বাদী কবিতার কাজগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে।[৫৪] এতে প্রায় ২৭,০০০ লাইনের ফার্সী কবিতা রয়েছে। [৫৫]
- রুমির আরেকটি প্রধান কাজ হচ্ছে “দেওয়ান-এ-কবির” (“প্রধান কাজ”) বা “দেওয়ান-এ শামস তাবরিজী” (শামস তাবরিজী এর কাজ); دیوان شمس تبریزی), যেটি নামকরণ করা হয় রুমির শিক্ষক শামস তাবরিজীর নামে। এছাড়া এতে ৩৫০০০ ফার্সী দ্বিপদী এবং ২০০০ ফার্সী শ্লোক আছে,[৫৬] এতে ৯০টি গজল এবং ১৯টি শ্লোক আছে আরবি ভাষায়,[৫৭] এছাড়া প্রায় চব্বিশটি দ্বিপদী তুর্কি ভাষায় [৫৮][৫৯] এবং ১৪টি দ্বিপদী গ্রীক ভাষায়।[৬০][৬১][৬২]
গদ্য[সম্পাদনা]
- ফি মা ফি (এর মধ্যে যা আছে তাই আছে ফার্সীঃ فیه ما فیه) এটি একাত্তরটি আলোচনা এবং বক্তৃতার সংগ্রহ যেটি রুমি তার ছাত্রদের দিয়েছিলেন। এটি প্রণীত হয়েছিল রুমির ছাত্রদের টীকা থেকে তাই রুমি এই বইয়ের সরাসরি লেখক নন।[৬৩] এর ফার্সি থেকে ইংরেজি একটি অনুবাদ প্রথম প্রকাশ করেন এজে আরেবেরি “ডিসকোর্স অব রুমি” নামে ১৯৭২ সালে, দ্বিতীয় অনুবাদ বের করেন হুইলার থাকসন “সাইন অব আনসিন” নামে ১৯৯৪ সালে। ফি মা ফির রচনার ধরন ছিল চলিত ভাষায় এবং এটি ছিল মধ্যভিত্ত পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য এবং বাস্তবধর্মী শব্দের অভাব ছিল।[৬৪]
- মজলিস-এ সভা (সাতটি সভা, ফার্সি: مجالس سبعه) এর মধ্যে সাতটি ফার্সি ধর্মাপদেশ বা বক্তৃতা ছিল যেটি সাতটি ভিন্ন সমাবেশে এ দেয়া হয়েছিল। এই ধর্মাপদেশগুলো ব্যাখ্যা করে কোরআন এবং হাদীসের গভীর অর্থ। এতে আরো বিভিন্ন কবির কবিতা থেকে উক্তি রয়েছে যার মধ্যে আছে সানাই, আত্তার এবং আরো অনেক কবি ও রুমি নিজে। আফলাকি বর্ণনা করেন, শামস এ-তাবরিজী এর পর, রুমি এই ধর্মাপদেশগুলো দেন বিশিষ্টদের অনুরোধে বিশেষ করে সালাহ উদ্দিন জারকুভ। ফার্সি এর ধরন একদম সাধারণ কিন্তু আরবী উক্তি এবং ইতিহাসের জ্ঞান ও হাদীসসমূহ প্রদর্শন করে ইসলামী বিজ্ঞানের প্রতি রুমির জ্ঞানকে।[৬৫]
- মাকাতিব (চিঠিসমূহ, ফার্সি: مکاتیب) এই মধ্যে রুমির চিঠি ফার্সিতে যেগুলো তিনি তার ছাত্রদের, পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিবর্গ এবং অন্যান্য প্রভাবশালীদের কাছে দিয়েছিলেন। চিঠিগুলো সাক্ষ্য দেয় যে রুমি বেশ ব্যাস্ত ছিলেন তার পরিবারে সদস্যদের সাহায্যে এবং তদারিক করেছেন তার আশে পাশে বেড়ে উঠা শিষ্যদের। তার পূর্বের দুটি কাজের সাথে এটি অসদৃশ, চিঠিগুলো সজ্ঞানে বাস্তবধর্মী এবং পত্রসম্বন্ধীয়, যেগুলো সাধারণত সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ, কূটনীতিবিদ এবং রাজাদের কাছে লেখা।[৬৬]
ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি[সম্পাদনা]
এটা অনস্বীকার্য যে রুমি ছিলেন একজন মুসলিম পণ্ডিত এবং ইসলামকে তিনি গম্ভীরভাবে নিয়েছেন। তবুও, তার আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গির গভীরতা সম্প্রসারিত হয়েছে সীমিত সাম্প্রদায়িক সংস্পর্শে। তার একটি কবিতায়ঃ
|
|
পবিত্র কোরআন অনুযায়ী, হযরত মোহাম্মদ সাল্লালাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সৃষ্টিকর্তা পাঠিয়েছেন সকল সৃষ্টির জন্য, যার মধ্যে সমগ্র মানবাজাতি রয়েছে।[৬৮] এ সম্পর্কে রুমি বলেনঃ
"মুহাম্মদের আলো কোন অগ্নিপুজারি বা ইহুদিকে পরিত্যাগ করে না। তাঁর সৌভাগ্যের ছায়া যেন সবার উপর উজ্জ্বল হয়! তিনি সুপথে নিয়ে আসেন যারা পথভ্রষ্ট হয়েছিল মরুভূমিতে।"[৬৯]
সুফিবাদ এবং তরিকা |
---|
প্রবেশদ্বার |
রুমির অনেক কবিতায় সুপারিশ করে বাহ্যিক ধর্মীয় রীতি এবং কোরাআনের প্রধান স্থানের গুরুত্বকে।[৭০]
আল্লাহর কোরআনের কাছে যাও, তাতে আশ্রয় নাও
সেখানে নবীর আত্নার সাথে মিশ
বইটি বহন করে নবীর বিভিন্ন অবস্থার কথা
সমুদ্রের ন্যায় তাঁর পবিত্র মহিমা প্রকাশ কর।[৭১]
রুমি বলেন
যতক্ষণ পর্যন্ত আমার প্রাণ আছে আমি কোরআনের দাস।
আমি মোহাম্মদের রাস্তার ধূলিকণা, নির্বাচিত ব্যক্তি।
যদি কেউ আমার বলা বাণী ছাড়া অন্য কিছু আমার নামে চালায়,
আমি তাকে ত্যাগ করব সেসকল শব্দের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে। [৭২]
রুমি আরও বলেনঃ
“আমি আমার দুই চোখকে “বিরত” রেখেছি
এই পৃথিবী আর আখিরাতের অভিলাষ থেকে
যা আমি মুহাম্মদ থেকে শিখেছি।”[৭৩]
মসনবীর প্রথম পৃষ্ঠায় রুমি বলেনঃ
"হাধা কিতাবুল- মসনবী ওয়া হুয়া উসুলু উসুলি উসুলিদ-দ্বীন ওয়া কাশুশাফুল –কোরআন"
"এই হচ্ছে মসনবী বই, এবং এটি (ইসলাম)ধর্মের মূলের মূলের মূল এবং এটি কোরআনের বর্ণনাকারী।"[৭৪]
সাঈদ হুসাইন নাসের বলেনঃ
রুমির সময়কার একজন মহান জীবিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন হাজি হাজরী, তিনি রুমির দেওয়ান এবং মসনবীতে অপ্রকাশিত প্রায় ৬০০০ এর মত পদ্য দেখান, যেগুলো কোরআনের আয়াতের সরাসরি ফার্সী কবিতাতে অনুবাদ।[৭৫]
রুমি দেওয়ান এ বলেন
রুমি আরো বলেনঃ
“মোহাম্মদের আলো আরো এক হাজার প্রশাখা হল(জ্ঞানের), এক হাজার, যাতে এখনকার জীবন এবং এর পরবর্তী জীবনে এটি সর্বশেষ সীমা পর্যন্ত কবলিত হয়। যদি মোহাম্মদের চেরা থেকে এরকম একটি শাখা খুলে, হাজারও ভিক্ষু এবং যাজক তাদের মিথ্যা বিশ্বাসের দড়িকে তাদের কোমর থেকে ছিঁড়ে ফেলবে।”[৭৭]
তার মসনবীতে রয়েছে কোরআন এবং হাদিসে বর্ণিত উপাখ্যান এবং গল্প, পাশাপাশি প্রতিদিনকার উপকথা।
প্রভাব[সম্পাদনা]
রুমির কবিতা ভিত্তি গঠন করে ইরান এবং আফগান সংগীতের। তার কবিতার সমসাময়িক সর্বোত্তম অনুবাদ করেন মোহাম্মদ রেজা সাজারিয়ান, শাহরাম নাজেরি, দাবুদ আজাদ(এই তিন জন ইরানের) এবং উস্তাদ মোহাম্মদ হাশেম চিশতী(আফগানিস্তান)। অনেক আধুনিক পাশ্চ্যাতের লোকদের কাছে সুফিবাদ দর্শন এবং ব্যবহার পরিচিতিতে তার শিক্ষা হচ্ছে সর্বোত্তম। পশ্চিমা বিশ্বে শাহরাম শিবা প্রায় বিশ বছর ধরে রুমির কবিতা শিক্ষা, প্রতিপাদন, পরিবেশন এবং অনুবাদ করে আসছেন এবং যেটি রুমির ইংরেজি ভাষী দেশসমূহে রুমির তাৎপর্য বিস্তারে সহয়তা করে আসছে। পাকিস্তানের জাতীয় কবি মোহাম্মদ ইকবাল রুমির কাজ দ্বারাই অনুপ্রাণিত, এবং তাকে আত্নিক পথ পদর্শক হিসাবে দেখেন এবং তাকে “পীর রুমি” বলে সম্বোধন করেন তার কবিতাগুলোতে(সম্মানার্থে পীর শব্দটি ব্যবহৃত হয় যার অর্থ প্রতিষ্ঠাকারী, শিক্ষক কিংবা পথ পদর্শক)[৭৮] শাহরিন শিবা দাবি করেন, “রুমি উচ্চ ব্যক্তিসত্তা সম্পন্ন এবং মাঝেমধ্যে ব্যক্তিগত বৃদ্ধি এবং উন্নতির জগতকে গুলিয়ে ফেলেন একটি স্পষ্ট এবং সরাসরি ছন্দে। তিনি কখনো কারো উপর ক্ষুব্ধ হন না এবং তিনি সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করেন... আজকে রুমির কবিতা গীর্জা, সিনাগগ(ইহুদী ধর্মস্থান), মঠ এ শুনা যায় পাশাপাশি নিউ ইয়র্কের সংগীত অনুষ্ঠানেও।” প্রফেসর মজিদ এম. নাইনি এর মতে,[৭৯] “রুমির জীবন এবং রুপান্তর সত্যিকারের সাক্ষ্য এবং প্রমাণ যে সকল ধর্মের লোক একসাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারবে। রুমির দৃষ্টিভঙ্গি, শব্দসমূহ, এবং জীবন আমাদের শিক্ষা দেয় কীভাবে আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ শান্তি এবং সুখ পাব যাতে করে আমরা ক্রমাগত শত্রুতা এবং ঘৃণার প্রবাহ বন্ধ করতে পারি এবং সত্যিকারের বিশ্ব শান্তি এবং ঐক্য অর্জন করতে পারি।” রুমির কবিতা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে যার মধ্যে রুশ, জার্মান, উর্দু, তুর্কি, আরবী, বাংলা, ফরাসী, ইতালীয়, এবং স্প্যানিশ, এবং উপস্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের উপর যার মধ্যে সঙ্গীতানুষ্ঠান, কর্মশালা, অধ্যায়ন, নৃত্যানুষ্ঠান এবং অন্যান্য শৈল্পিক সৃষ্টিতে।[৮০] সোলেমান বার্খসের করা রুমির কবিতার ইংরেজি অনুবাদ সারা বিশ্বব্যাপী পাঁচ লক্ষেরও বেশি কবি বিক্রিত হয়েছে,[৮১] এবং যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে পঠিত কবির মধ্যে রুমি অন্যতম।[৮২] শাহরাম শিবার বই “রেন্ডিং দ্য ভেইলঃ লিটারাল এন্ড পয়েটিক ট্রান্সলেশন অব রুমি”(১৯৯৫) বইটি বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন পুরস্কার লাভ করে। রুমির কবিতার রেকর্ডিং যুক্তরাষ্ট্রের বিলবোর্ডের সেরা ২০ এর তালিকায় প্রবেশ করে। মার্কিন লেখকদের বাছাই করা দীপক চোপড়ার সম্পাদনা করা ফেরুদন কিয়া অব রুমি অনুবাদ করা প্রেমের কবিতাগুলো মঞ্চায়ন করেন হলিউড ব্যক্তিত্বরা যেমন ম্যাডোনা, গোল্ডি হওন, ফিলিপ গ্লাস এবং ডেমি মুর।
ভারতে উত্তরাঞ্চলে দর্শনীয় স্থান আছে যেটি রুমি দরজা বা রুমি গেইট নামে পরিচিত, এটি লাখনাও(উত্তর প্রদেশ এর রাজধানী)তে অবস্থিত যেটি রুমির নামে নামকরণ করা হয়।
রুমি এবং তার সমাধিস্তম্ভ চিত্রিত করা হয় তুরস্কের ৫০০০ লিরা নোটের পিছনে ১৯৮১-১৯৯৪ সাল পর্যন্ত।[৮৩]
ইরানি বিশ্ব[সম্পাদনা]
پارسی گو گرچه تازی خوشتر است — عشق را خود صد زبان دیگر است
সকল পারশ্যের লোক যদি বলে আরবি ভাষা উত্তম — প্রেম তার পথ খুজে নেবে সকল ভাষার মধ্যে নিজস্ব ভাষায়।
এসকল সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং ভাষাগতভাবে রুমির সাথে ইরানের বন্ধন রুমিকে ইরানের একজন তারকা কবি হিসাবে সৃষ্টি করেছে, গুরুত্বপূর্ণ রুমি পণ্ডিতরা যার মধ্যে আছেন ফরুজানফার, নাইনি, শাবজেওয়ারি প্রমুখ এসেছেন আধুনিক ইরান থেকে।[৮৪] রুমির কবিতা চিত্রিত করা হয়েছে ইরানের বিভিন্ন শহরের দেয়ালে, গাওয়া হয়েছে ফার্সি সংগীত হিসাবে,[৮৪] এবং বিদ্যালয়ের পাঠ্যবইয়ে পড়া হয়।[৮৫]
মৌলভি সুফী ক্রম[সম্পাদনা]
মৌলভী সুফি ক্রম প্রতিষ্ঠা করেছে রুমির শিষ্যরা ১২৭৩ সালে তার মৃত্যুর পর।[৮৬] তার প্রথম সফলকারী এই ক্রমের ছিলেন “হুসাম চালাবি” নিজে, রুমির ছোট এবং একমাত্র ছেলে সুলতান ওয়ালাদ(মৃত্যু ১৩১২সালে) এর মৃত্যুর পর যিনি “মসনবী রবনামা” বইয়ের জন্য পরিচিত এবং তাকে এই ক্রমের প্রধান করা হয়।[৮৭] তখন থেকে এই ক্রমের নেতৃত্ব কোনিয়ার রুমির পরিবারের মধ্যে রাখা হয় অবিচ্ছেদ্ধ ভাবে।[৮৮] মৌলভী সুফিরা ঘূর্ণায়মান দরবেশ নামে পরিচিত, যারা সামার মাধ্যমে জিকির করে। রুমির সময়ে(“মানকিবুল আরেফিন” কর্তৃক সত্যায়িত) তার শিষ্যরা জমা হতেন সুরেলার জন্য এবং অনুশীলন করত। ঐতিহ্যমতে রুমি নিজে একজন গুরুত্বপূর্ণ সুরকার ছিলেন যিনি রভাব বাজিয়েছেন, যদিও তার প্রিয় বাদ্যযন্ত্র ছিল বাঁশি।[৮৯] সামার সময় যে সুর সহচর হয় তা হচ্ছে “মসনবী” এবং “দেওয়ান-এ কবির” এর কবিতা বা সুলতান ওয়ালাদের কবিতা।[৮৯] উসমানীয় সম্রাজ্যের সময় মৌলভী ক্রম সু-প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং ক্রমের অনেক সদস্যরাই বিভিন্ন সরকারী পদে খেলাফতের সময় দায়িত্ব পালন করেন। মৌলভী ক্রমের কেন্দ্র হচ্ছে কোনিয়ায়। সেখানে একটি মৌলভী আশ্রমও আছে(درگاه, দরগাহ) ইস্তানবুলে গালাতা টাওয়ারের পাশে যেখানে সামা সম্পাদন করা হয় এবং এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। মৌলভী ক্রম সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে আমন্ত্রণ করেঃ
“ | আসো, আসো তুমি যেই হউনা কেন |
” |
উসমানীয় সম্রাজ্যের সময় মৌলভী ক্রম থেকে উদ্ভূত হয় উল্লেখযোগ্য কবি এবং শিল্পীর যার মধ্যে আছে শেখ গালিব, আনকারার ইসমাইল রুশি দেদে, ইসরার দেদে, হালেত ইফান্দী, এবং গাভসী দেদে, যাদেরকে ইস্তানবুলের গালাতা মৌলভী খানায় সমাহিত করা হয়।[৯১] সুর, বিশেষ করে বাঁশি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মৌলভী ক্রমে। আধুনিক ভিত্তির সাথে, ধর্মনিরপেক্ষ তুর্কি প্রজাতন্ত্রতে মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক জনগণের নীতি থেকে ধর্ম সরিয়ে ফেলেন এবং এটিকে সীমাবদ্ধ করেন ব্যক্তিগত ইচ্ছা, আচরণ এবং বিশ্বাসের মধ্যে। ১৯২৫ সালের ডিসেম্বরের ১৩ তারিখে একটি আইন চালু হয় যেটি সকল খানকা(দরবেশদের থাকার জায়গা) এবং যাওয়াইস(প্রধান দরবেশের থাকার জায়গা)বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শ্রদ্ধার জন্য একটি কেন্দ্র গড়া হয় যেখানে “জিয়ারতের” জন্য যাওয়া হয়। শুধুমাত্র ইস্তানবুলেই ছিল ২৫০টিরও বেশি “টেক্কে” এবং ছোট ছোট কেন্দ্র ছিল বিভিন্ন সমিতির জমায়েতের জন্য। এই আইনটি সুফি ক্রম ভেঙ্গে ফেলে এবং রহস্যময় বা দুর্বোধ্য নাম, উপাধি এবং উপাধি সংক্রান্ত পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়, ক্রমের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়, এবং তাদের উৎসব ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। আইনটিতে শাস্তির বিধানও রাখা হয় যদি কেউ ক্রমটি পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। দুই বছর পর, ১৯২৭ সালে, মাওলানা জাদুঘর নামে একটি জাদুঘর খোলার অনুমতি দেয়া হয় কোনিয়ায়।[৯২] ১৯৫০ দশকে, তুরস্ক সরকার কোনিয়ায় প্রতি বছর একবার ঘূর্ণয়মান দরবেশ পালন করার অনুমতি দেয়। মাওলানা উৎসব প্রতি বছর ডিসেম্বরের দুই সপ্তাহব্যাপী পালিত হয়, এটি তুঙ্গী পায় ১৭ই ডিসেম্বর, মাওলানার উরসে(রুমির মৃত্যু বার্ষিকী), যেটিকে বলা হয় “শবে উরস” (شب عروس) (ফার্সি অর্থ “তরুণ রাত্রি”), যে রাতে রুমি সৃষ্টিকর্তা কাছে পৌছান।[৯৩] ১৯৭৪ সালে, ঘূর্ণয়মান দরবেশদের অনুমতি দেয়া হয় প্রথমবারের পশ্চিমে ভ্রমণ করার। ২০০৫ সালে ইউনেস্কো ঘোষণা করে তুরস্কের “মৌলভী সামা উৎসব” “মৌখিক এবং স্পর্শাতীত সেরা শিল্পকর্মের মানুষের ঐতিহ্য”।[৯৪] ধর্মীয় আখ্যা[সম্পাদনা]এডওয়ার্ড জি. ব্রাউনির মতে তিনজন সবচেয়ে নিগূঢ় ফার্সি কবি হচ্ছেন রুমি, সানাই এবং আত্তার যারা ছিলেন সুন্নি মুসলমান এবং তাদের কবিতা প্রথম দুই খলিফা আবু বকর এবং উমর ইবনুল খাত্তাব এর প্রচুর প্রশংসা করা হয়।[৯৫] আন্নেমারি সিমেল এর মতে, শিয়া কবিদের প্রবণতার মধ্যে অগ্রবর্তী হচ্ছেন নিগূঢ় কবি রুমি এবং আত্তার তাদের নিজস্ব পদে, ১৫০১ সালে সাফাভি সম্রাজ্যের সময় দ্বাদশবাদি শিয়া প্রদেশের ধর্ম হিসাবে পরিচিতির লাভের পরেই শক্তিশালী হয়ে উঠেন।[৯৬] আটশতম জন্মদিন পালন[সম্পাদনা]আফগানিস্তানে রুমি “মাওলানা” নামে পরিচিত, তুরস্কে “মওলানা” এবং ইরানে “মৌলভী” নামে পরিচিত। ২০০৭ সালে রুমির জন্মদিন ইউনেস্কোর সহযোগিতায় “শান্তিতে মানুষের মন গঠনের” লক্ষে কার্যনির্বাহী সমিতি এবং সাধারণ সভায় আফগানিস্তান, ইরান এবং তুরুস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি প্রস্তাব করা হয় এবং অনুমোদন দেয়া হয়।[৯৭] ইউনেস্কো এর মধ্যে ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ এ স্মৃতিরক্ষা উৎসব পালন করে।[৩] ইউনেস্কো একটি পদক ঘোষণা দেয় রুমির নামে যাতে করে এটি উৎসাহিত করে রুমির উপর গবেষণা এবং যারা রুমির চিন্তা এবং আদর্শ প্রচারণা করছে যেটি ইউনেস্কোর আদর্শিক দায়িত্ব বাড়াতে সহায়তা করে।[৪] আফগানিস্তানের সংস্কৃতি এবং যুব মন্ত্রণালয় একটি জাতীয় পরিষদ গঠন করে, যেটি আন্তর্জাতিক দার্শনিক এবং কবিদের জন্মদিন পালন করে সেমিনারের আয়োজন করে এবং জীবনী নিয়ে আলোচনা করে। এতে বুদ্ধিজীবী, কূটনীতিবিদ এবং মাওলানার অনুসারীদের মহাসমাবেশ ঘটে মাওলানার জন্মস্থান বালখ এ এবং এটি অনুষ্ঠিত হয়কাবুলে।[৯৮] ২০০৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ইরানে স্কুল বেল বাজানো হয় সারাদেশজুড়ে মাওলানাকে সম্মান প্রদর্শনের লক্ষে।[৯৯] একই বছর, ইরানে ২৬ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত রুমি সপ্তাহ পালন করা হয়। একটি অনুষ্ঠান এবং সম্মেলন তেহরানে অনুষ্ঠিত হয়, এটি উদ্বোধন করেন ইরানের রাষ্ট্রপতি এবং ইরানের সংসদের চেয়ারম্যান। ঊনত্রিশটি দেশ থেকে পণ্ডিতরা সেখানে যান এবং সম্মেলন ৪৫০টি নিবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।[১০০] ইরানি শিল্পী শাহরাম নাজেরিকে “লিজিওন ডি’অনার” দেয়া হয় এবং ২০০৭ সালে ইরানের জাতীয় সংগীত পুরস্কার দেয়া হয় রুমির মাষ্টারপিসের উপর তার খ্যাতনামা কাজের জন্য।[১০১] ইউনেস্কো ২০০৭ সালকে ঘোষণা দেয় “আন্তর্জাতিক রুমি বর্ষ” হিসাবে।[১০২][১০৩] ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ এ, তুরস্কে পালন করা হয় রুমির আটশতম জন্মবার্ষিকী একটি বিশাল ঘূর্ণয়মান দরবেশদের সামার মাধ্যমে যেটি আটচল্লিশটি ক্যামেরা দ্বারা টেলিভিশনে প্রচার করা হয় সরাসরি আটটি দেশে। তুরস্কের সংস্কৃতি এবং পর্যটন মন্ত্রী ইর্তুগাল গুয়ানী বলেন, “তিনশরও বেশি দরবেশ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে বলে ঠিক করা হয়েছে, এটি সামা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান হবে।”[১০৪] মাওলানা রুমি পর্যালোচনা[সম্পাদনা]“মাওলানা রুমি রিভিউ”[১০৫] (আইএসএসএন ২০৪২-৩৩৫৭)বার্ষিকভাবে প্রকাশিত হয় এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি এবং ইরানি চর্চা কেন্দ্র থেকে সাইপ্রাসের নিকোশিয়ার রুমি ইনস্টিটিউট এবং ক্যামব্রিজের আর্কেটাইপ বুকস এর সহযোগিতায়।[১০৬][১০৬] প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে এবং এরপর থেকে প্রতি বছর এটি প্রকাশ করা হয়। সাময়িকীটির প্রধান সম্পাদক লিউনার্দ লিওশিন এর মতেঃ “গুরুত্ব এবং ফলাফল এ দান্তে, শেকসপিয়র এবং মিল্টন এর যদিও কয়েকজন মুসলিম কবি সহজ প্রতিদ্ধন্ধী, পশ্চিমে তারা সাহিত্য খ্যাতি উপভোগ করে কারণ আরবি এবং ফার্সি দার্শনিক, লেখক এবং কবিদের নগণ্য, তুচ্ছ এবং রুচিহীন হিসাবে দেখে ওয়েস্টার্ন ক্যাননের মহা আখ্যানের কাছে। মাওলানা রুমি রিভিউ এর লক্ষ হচ্ছে বিশ্ব সাহিত্যে এসব তাচ্ছিল্যপূর্ণতার অবসান ঘটানো, যেটি পশ্চিমা সাহিত্যের ভুল কল্পনার চেয়েও আরও গভীর।”[১০৭] গ্যালারী[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
আরো পড়ুন[সম্পাদনা]ইংরেজি অনূবাদ[সম্পাদনা]
জীবন ও কর্ম[সম্পাদনা]
ফার্সী সাহিত্য[সম্পাদনা]
বাংলা[সম্পাদনা]
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]* জালালুদ্দিন রুমি জীবনী ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ জুলাই ২০২১ তারিখে
|