বিষয়বস্তুতে চলুন

আলি

(Ali থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ʿআলী ইবন ʾআবী ত়ালিব
علي ابن أبي طالب

তালিকা
আলীর নাম সংবলিত আরবি চারুলিপি
৪র্থ খলিফা
সুন্নি ইসলাম
খিলাফত৬৫৬–৬৬১
পূর্বসূরিউসমান ইবন আফফান
উত্তরসূরিহাসান ইবন আলী
১ম ইমাম
শিয়া ইসলাম
ইমামত৬৩২–৬৬১
উত্তরসূরিহাসান ইবন আলী
জন্মআনু. ১৫ই সেপ্টেম্বর ৬০১ (১৩ই রজব ২১ হিজরি)
মক্কা, হেজাজ, আরব উপদ্বীপ[]
মৃত্যুআনু. ২৯শে জানুয়ারি ৬৬১ (২১শে রমজান ৪০ হিজরি)
(বয়স ৫৯)[][][]
কুফা, ইরাক, রাশিদুন খিলাফত
সমাধি
দাম্পত্য সঙ্গিনী
সন্তানাদি
পূর্ণ নাম
ʿআলী ইবন ʾআবী ত়ালিব ইবন ʾআব্দুল মুত্তালিব
আরবি: عَلِيّ ٱبْن أَبِي طَالِب ٱبْن عَبْد ٱلْمُطَّلِب
স্থানীয় নামعَلِيّ ٱبْن أَبِي طَالِب
বংশআহল আল-বাইত
বংশবনু হাশিম
রাজবংশকুরাইশ
পিতাআবী তালিব ইবন আব্দুল মুত্তালিব
মাতাফাতিমা বিন্ত আসাদ
ধর্মইসলাম
মৃত্যুর কারণআলীর গুপ্তহত্যা
সমাধিইমাম আলীর মাজার, নজফ, ইরাক
৩১°৫৯′৪৬″ উত্তর ৪৪°১৮′৫১″ পূর্ব / ৩১.৯৯৬১১১° উত্তর ৪৪.৩১৪১৬৭° পূর্ব / 31.996111; 44.314167
স্মৃতিস্তম্ভইমাম আলী মসজিদ, নজফ প্রদেশ, ইরাক
অন্যান্য নাম
  • আবুল হাসান
  • আবু তুরাব
পরিচিতির কারণজ্ঞান, প্রজ্ঞা, বীরত্ব, সাহসিকতা, নেতৃত্ব, আধ্যাত্মিকতা, দার্শনিকতা, বাগ্মিতা, ন্যায়বিচার
উল্লেখযোগ্য কর্ম
মুসহাফ আলী, আল-জাফর, নহজুল বলাগা, গুরারুল হিকাম ওয়া দুরারুল কালিম, দীওয়ান আল-ইমাম আলী ইবন আবী তালিব, সহীফাল আলবিয়া
প্রতিদ্বন্দ্বী
আত্মীয়মুহম্মদ ﷺ (চাচাতো ভাই ও শ্বশুর)
সামরিক কর্মজীবন
আনুগত্য
কার্যকাল৬২৩–৬৩২
৬৫৬–৬৬১
যুদ্ধ/সংগ্রাম
আরবি নাম
ব্যক্তিগত (ইসম)আলী
পৈত্রিক (নাসাব)ʿআলী ইবন ʾআবী ত়ালিব ইবন আব্দুল মুত্তালিব ইবন হাশিম ইবন আব্দ মনাফ ইবন কুসাই ইবন কিলাব
ডাকনাম (কুনিয়া)আবুল হাসান
উপাধি (লাক্বাব)আবু তুরাব

আলী ইবন আবী তালিব ( আরবি: علي ابن أبي طالب, প্রতিবর্ণীকৃত: ʿAlī ibn ʾAbī Ṭālib; আনু. ১৩ই সেপ্টেম্বর ৬০১ – ২৯শে জানুয়ারি ৬৬১) ছিলেন ইসলামের নবী মুহম্মদের ﷺ চাচাতো ভাই, জামাতা ও সহচর, যিনি ৬৫৬ থেকে ৬৬১ সাল পর্যন্ত খলিফা হিসেবে মুসলিম বিশ্ব শাসন করেছিলেন। সুন্নি ইসলাম অনুসারে তিনি চতুর্থ রাশিদুন খলিফা। পক্ষান্তরে, শিয়া ইসলাম অনুসারে তিনি মুহম্মদের ন্যায্য স্থলাভিষিক্ত ও প্রথম ইমাম[][][১০][১১][১২] আবী তালিব ইবন আব্দুল মুত্তালিবফাতিমা বিন্ত আসাদের পুত্র আলী ছোটবেলা থেকেই তাঁর ভাই মুহম্মদের কাছে বড় হন এবং তিনি ছিলেন প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম।[১৩] তিনি আহলুল কিসাআহলুল বাইতের একজন সদস্য হিসেবে শিয়া ও সুফিবাদী সুন্নি মুসলমানদের কাছে সম্মানিত।[১৪][১৫]

ইসলামের সূচনালগ্নে যখন মক্কায় মুসলমানদের উপর প্রচণ্ড নির্যাতন চলছিল, তখন আলী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।[১৬] ৬২২ সালে মদিনায় হিজরতের পর মুহম্মদ তাঁর কন্যা ফাতিমাকে আলীর সঙ্গে বিয়ে দেন এবং তাঁর সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের অঙ্গীকার করেন। এই সময় আলী মুহম্মদের সচিব ও প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন এবং তাঁর সেনাবাহিনীর পতাকাবাহক ছিলেন। মুহম্মদের অসংখ্য বাণীতে আলীর প্রশংসা করা হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিতটি হল ৬৩২ সালে গাদীর খুমে উচ্চারিত, আমি যার মওলা, এই আলীও তার মওলা।” বহু-অর্থবোধক আরবি শব্দ মওলার ব্যাখ্যা নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে: শিয়াদের মতে, মুহম্মদ এর মাধ্যমে আলীকে তাঁর ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব অর্পণ করেছিলেন; অপরদিকে, সুন্নিরা এটিকে কেবল বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যের একটি বিবৃতি হিসেবে দেখে।[১৭]

একই বছর মুহম্মদ যখন মারা যান, তখন আলীর অনুপস্থিতিতে একদল মুসলমান সকীফায় সমবেত হয়ে আবু বকরকে (শা. ৬৩২–৬৩৪) তাদের নেতা নিযুক্ত করেন।[১৮] আলী ও তাঁর স্ত্রী ফাতিমা আবু বকরের কর্তৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান।[১৯][২০] ফাতিমা আমৃত্যু আবু বকরের প্রতি আনুগত্য প্রদান থেকে বিরত থাকলেও আলী পরবর্তীতে তাঁর নেতৃত্বের দাবি থেকে সরে দাঁড়ান এবং আবু বকর ও তাঁর উত্তরসূরি উমরের (শা. ৬৩৪–৬৪৪) শাসনামলে রাজনৈতিক ও সামরিক জনজীবন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন।[২১] যদিও তাঁর পরামর্শ কখনও কখনও চাওয়া হত, তবু আলীর সঙ্গে প্রথম দুই খলিফার দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন তিনি তাঁদের অনেক কার্যপদ্ধতি মানতে অস্বীকার করেন। এই প্রত্যাখ্যানই তাঁকে খিলাফত থেকে বঞ্চিত করে, যার ফলে উসমান (শা. ৬৪৪–৬৫৬) নির্বাচনী পরিষদ কর্তৃক উমরের উত্তরসূরি নিযুক্ত হন। আলী উসমানেরও তীব্র সমালোচক ছিলেন, যাঁকে ব্যাপক স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তথাপি তিনি খলিফা ও তার নীতিতে ক্ষুব্ধ প্রাদেশিক বিদ্রোহীদের মধ্যে একাধিকবার মধ্যস্থতা করেছিলেন।

৬৫৬ সালের জুন মাসে উসমান হত্যাকাণ্ডের পর আলীকে মদিনায় খলিফা নির্বাচিত করা হয়। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে দুটি পৃথক বিদ্রোহের মুখোমুখি হন, যেগুলো বাহ্যত উসমানহত্যার প্রতিশোধের দাবি নিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল। মুহাম্মদের স্ত্রী আয়িশা এবং সাহাবি তালহাজুবাইর ত্রয়ী ইরাকের বসরা দখল করে নেন, কিন্তু আলী ৬৫৬ সালে উটের যুদ্ধে তাঁদের পরাজিত করেন। অন্যদিকে, আলী কর্তৃক শামের গভর্নর পদ থেকে সদ্য অপসারিত মুয়াবিয়া ৬৫৭ সালে সিফফিনের যুদ্ধে আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধটি নিষ্পত্তিহীন অবস্থায় শেষ হয় এবং মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, যার ফলে আলীর কিছু অনুসারী ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। এই গোষ্ঠী থেকেই খারিজি সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে, যারা পরে জনমনে ত্রাস সৃষ্টি করে এবং ৬৫৮ সালে নাহরাওয়ানের যুদ্ধে আলী এদের দমন করেন। ৬৬১ সালে খারিজি বিদ্রোহী ইবন মুলজাম আলীকে গুপ্তহত্যা করে, যা মুয়াবিয়ার ক্ষমতা দখলের পথ সুগম করে এবং রাজতান্ত্রিক উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়।

আলী তাঁর প্রজ্ঞা, সাহসিকতা, সততা, আধ্যাত্মিকতা, দার্শনিকতা, বাগ্মিতা, ইসলামের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা, মহানুভবতা এবং সকল মুসলমানের প্রতি সমান আচরণের জন্য শ্রদ্ধেয়। তাঁর অনুরাগীদের কাছে তিনি অবিকৃত ইসলাম এবং প্রাগৈসলামিক বীরত্বের আদর্শরূপ। সুন্নি মুসলমানেরা তাঁকে শেষ রাশিদুন খলিফা গণ্য করে, অন্যদিকে শিয়া মুসলমানেরা তাঁকে তাদের প্রথম ইমাম হিসেবে মান্য করে। শিয়া মুসলিম সংস্কৃতিতে মুহম্মদের পরেই আলীর স্থান। ইরাকের নজফে অবস্থিত আলীর মাজার শিয়া মুসলমানদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। আলীর জ্ঞানমূলক উত্তরদায় বহু গ্রন্থে সংরক্ষিত ও অধীত হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল নহজুল বলাগা

জন্ম ও বংশপরিচয়

[সম্পাদনা]

হযরত আলি (রা.) মক্কা নগরীতে একটি সম্মানিত কুরাইশ বংশে আনুমানিক ৬০১ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার কাবা শরিফের রক্ষণাবেক্ষণের গুরুদায়িত্ব পালন করত এবং মক্কার সমাজে অত্যন্ত মর্যাদাশীল অবস্থান ধারণ করত। তাঁর পিতা আবু তালিব কুরাইশ গোত্রের প্রভাবশালী শাখা বনু হাশিমের নেতৃত্ব দিতেন এবং কাবার রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। আলি (রা.)-এর দাদা হাশিম বংশের অন্যান্য সদস্যদের মতোই হানিফ ছিলেন, অর্থাৎ ইসলামপূর্ব যুগেই একেশ্বরবাদী বিশ্বাসে দীক্ষিত ছিলেন। বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হিসেবে আলি (রা.) ইসলামের পবিত্রতম স্থান কাবার অভ্যন্তরেই জন্মলাভ করেন।[২২] তাঁর মাতা ছিলেন ফাতিমা বিনতে আসাদ[১৩] আবু তালিবের পত্নী ফাতিমা বিনতে আসাদ ১৩ রজব, শুক্রবার কাবার সম্মুখে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট প্রসববেদনা থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করছিলেন। তখন অলৌকিকভাবে কাবার দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে উন্মুক্ত হয় এবং তিনি অনুভব করেন এক অদৃশ্য শক্তি তাকে কাবার অভ্যন্তরে প্রবেশ করায়। সেখানে তিনি আলি (রা.)-কে জন্ম দেন। ইতিহাসবিদদের মতে, আলি (রা.) সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি যিনি কাবার পবিত্র অভ্যন্তরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[২৩][২৪][২৫] জন্মের পর তিনি ও তাঁর মাতা তিন দিন পর্যন্ত কাবার অভ্যন্তরে অবস্থান করেন। বাহিরে আসার পর মহানবী মুহাম্মদ (সা.) তাদের অভ্যর্থনা জানান এবং নবজাতককে অন্নপ্রাশন করান। মহানবী (সা.) নিজেই শিশুটির নাম রাখেন 'আলি', যার অর্থ 'উন্নত ও মহান'। পরবর্তীতে মুহাম্মদ (সা.) আলি (রা.)-কে দত্তক নেন।

আবু তালিব তাঁর ভাতিজা মুহাম্মদ (সা.)-কে পিতৃ-মাতৃহীন হওয়ার পর লালন-পালন করেছিলেন। পরবর্তীতে যখন আবু তালিব আর্থিক সংকটে পড়েন, তখন প্রায় পাঁচ বছর বয়সে আলি (রা.)-কে মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর স্ত্রী খাদিজা (রা.) তাদের তত্ত্বাবধানে নিয়ে যান[২৩]ইসলামের ইতিহাসের সূচনালগ্নে তিনি সর্বপ্রথম নবুয়তের ডাকে সাড়া দিয়ে মাত্র ১০ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন।[২৬] মুহাম্মদ (সা.) আলি (রা.)-কে নিজ সন্তানের মতো লালন-পালন করেন। আলি (রা.) প্রথম পুরুষ হিসেবে শিশুকালেই ইসলাম গ্রহণ করেন।[২৭] তিনিই প্রথম পুরুষ যিনি মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথে নামাজ আদায় করেছিলেন।

মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আলি (রা.) তাঁর অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী ছিলেন। তিনি প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অকুতোভয় বীরত্ব প্রদর্শন করেন। বদরের যুদ্ধে তাঁর অসামান্য বীরত্বের জন্য মুহাম্মদ (সা.) তাঁকে জুলফিকার নামক ঐতিহাসিক তরবারি উপহার দেন।[২৮] খাইবারের যুদ্ধে তাঁর সাহসিকতার জন্য মুহাম্মদ (সা.) তাঁকে 'আসাদুল্লাহ' (আল্লাহর সিংহ) উপাধিতে ভূষিত করেন।[২৯] গাদীরে খুমের ঐতিহাসিক ভাষণে মুহাম্মদ (সা.) তাঁকে সমস্ত মুমিনের 'মওলা' (অভিভাবক) হিসেবে ঘোষণা দেন।[৩০][৩১]

শুরুর দিককার দিনগুলো

[সম্পাদনা]

হযরত আলি (রা.) এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মধ্যে এক গভীর আত্মিক বন্ধন গড়ে উঠেছিল, যা আলি (রা.)-এর শৈশবকাল থেকেই বিকশিত হয়েছিল। এই বিশেষ সম্পর্কের পটভূমিতে রয়েছে পারিবারিক বন্ধনের ইতিহাস। আলি (রা.)-এর পিতা আবু তালিব ছিলেন রাসূল (সা.)-এর চাচা এবং অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। রাসূল (সা.) যখন পিতৃ-মাতৃহীন হয়ে পড়েন এবং তাঁর দাদা আবদুল মুত্তালিব ইন্তেকাল করেন, তখন আবু তালিব তাঁকে নিজ সন্তানের মতো লালন-পালন করেন। ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, রাসূল (সা.) খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রা.)-কে বিয়ে করার প্রায় দুই-তিন বছর পর আলি (রা.)-এর জন্ম হয়। পরবর্তীতে আলি (রা.) শিশুকালে রাসূল (সা.)-এর তত্ত্বাবধানে আসেন এবং তিনি তাঁকে পুত্রস্নেহে লালন করেন। শৈশব থেকেই আলি (রা.) রাসূল (সা.)-এর সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিলেন। রাসূল (সা.) যেখানেই যেতেন, আলি (রা.) তাঁর ছায়াসঙ্গী হতেন। তাঁর সকল কাজে তিনি সহযোগিতা করতেন। হেরা পর্বতের গুহায় মুহাম্মদ (সা.) যখন ধ্যানমগ্ন থাকতেন, আলি (রা.) প্রায়ই তাঁর সাথে থাকতেন। কখনো কখনো তারা একসাথে ৩-৪ দিন পর্যন্ত পাহাড়ে অবস্থান করতেন। আলি (রা.) মাঝে মাঝে মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্য খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যেতেন। স্বীয় বর্ণনা নাহজুল বালাগায় আলি (রা.) নিজেই এই সম্পর্ক বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন: "আমি মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথে সেইভাবে থাকতাম, যেমন একটি বাচ্চা উট তার মায়ের অনুসরণ করে।"

ইসলাম গ্রহণ

[সম্পাদনা]

যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রথম ঐশী বাণী প্রাপ্ত হন, তখন মাত্র ১১ বছর বয়সী আলি (রা.) অকুণ্ঠ বিশ্বাস সহকারে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম পুরুষখাদিজা (রা.)-এর পর দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি ইসলামে দীক্ষিত হন। ইসলামের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ সৈয়দ আলি আসগর রাজউয়ী তাঁর গবেষণায় উল্লেখ করেছেন: "মুহাম্মদ (সা.) এবং খাদিজা (রা.)-এর গৃহে যমজ সন্তানের মতো কুরআন মজীদ ও আলি (রা.) একসাথে বেড়ে উঠেছেন।" অর্থাৎ, আলির জীবন ইসলামের জন্মের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিল। কাবায় নামাজ আদায়কারী প্রথম তিনজন ব্যক্তি ছিলেন মুহাম্মদ (সা.), খাদিজা (রা.) এবং আলি (রা.)। ইসলাম গ্রহণের পর থেকে রাসূল (সা.)-এর অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হিসেবে সকল কাজে সহযোগিতা করতেন। শিয়া মাযহাব অনুযায়ী, তিনি কোনো প্রাক-ইসলামিক মক্কান ধর্মীয় রীতিতে অংশগ্রহণ করেননি। অল্প বয়সেই আলি (রা.)-এর মধ্যে গভীর ধর্মীয় বোধের প্রকাশ ঘটে।তিনি হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আদর্শ অনুসরণ করতেন।মূর্তি ভাঙ্গার মতো সাহসী কাজে অংশ নিতেন। লোকজনকে মূর্তিপূজার অসারতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। এটি প্রমাণ করে যে, খুব কম বয়সেই আলি ধর্মীয় বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে বুঝতেন এবং সাহসের সাথে নিজের বিশ্বাসের পক্ষে দাঁড়াতেন।

জুল আশিরার ভোজনোৎসব

[সম্পাদনা]

ইসলামের ইতিহাসে নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রথম প্রকাশ্য দাওয়াত 'দাওয়াত দুল-আশিরাহ' (দশজনের দাওয়াত) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। কুরআনের সূরা আশ-শুআরা ২১৪ নং আয়াতের নির্দেশনা অনুসারে, আল্লাহ তাআলা নবীকে প্রথমে নিজ আত্মীয়-স্বজনকে ইসলামের দিকে আহ্বান জানাতে বলেছিলেন। এই নির্দেশনা পালনে নবী মুহাম্মাদ (সা.) প্রায় তিন বছর গোপনে ইসলাম প্রচারের পর বনু হাশিম গোত্রের সকল সদস্যকে একত্রিত করে একটি বিশেষ সমাবেশের আয়োজন করেন। এই ঐতিহাসিক সমাবেশে নবী (সা.) ইসলামের মৌলিক নীতিমালা উপস্থাপন করে একটি আবেগময় আহ্বান জানান:

"আমি আল্লাহর অশেষ রহমতের জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমি তাঁর প্রশংসা করি এবং তাঁর হিদায়াত কামনা করি। আমি তাঁর উপর ঈমান রাখি এবং তাঁরই উপর ভরসা করি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আমি তাঁর প্রেরিত রাসূল। আল্লাহ আমাকে আদেশ দিয়েছেন: 'তোমার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক কর' (সূরা আশ-শুআরা: ২১৪)। তাই আমি আপনাদের সতর্ক করছি এবং ঘোষণা করছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি তাঁর রাসূল।

হে আবদুল মুত্তালিবের সন্তানগণ! আমি এমন এক বস্তু নিয়ে এসেছি যা আগে কেউ আনেনি। এটি গ্রহণ করলে তোমাদের পার্থিব ও পরকালীন কল্যাণ নিশ্চিত হবে। এখন বলো, তোমাদের মধ্যে কে আমাকে এই মহান কাজে সাহায্য করবে? কে আমার পাশে দাঁড়াবে? কে এই দায়িত্বভার আমার সাথে বহন করবে? কে আমার ডাকে সাড়া দিয়ে আমার উত্তরাধিকারী হবে? আল্লাহর পথে কে আমার সঙ্গী হবে?"[৩২]

সমাবেশে উপস্থিত সকলের মধ্যে থেকে কেবল তরুণ আলি (রা.)ই দৃঢ়চিত্তে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন: "হে আল্লাহর রাসূল! আমি সবচেয়ে কম বয়সী হলেও আপনার পাশে দাঁড়াব।" নবী (সা.) তিনবার একই প্রশ্ন করলেও কেবল আলিই সাড়া দেন। এইভাবে আলি (রা.) প্রথম যুবক হিসেবে ইসলামের পথে অগ্রসর হন এবং নবীর ঘনিষ্ঠ সহচরে পরিণত হন।

এই ঘটনার পর আবু লাহাব বিদ্রূপ করে আবু তালিবকে বলেন: "যাও, এখন তোমার ছেলের আনুগত্য কর।" বনু হাশিমের অধিকাংশ সদস্য নবীর বক্তব্য উপহাস করে সমাবেশ ত্যাগ করলেও আলি (রা.) তার প্রতিশ্রুতি অক্ষুণ্ণ রাখেন। পরবর্তীতে তিনি সারা জীবন নবী (সা.)-কে সহযোগিতা করে ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য ভূমিকা রাখেন। এই ঘটনা ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসে বিশ্বাস ও সাহসিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

মুসলমানদের ওপর নীপিড়ন

[সম্পাদনা]

মক্কায় মুসলমানদের ওপর অত্যাচার এবং বনু হাশিম গোত্রের প্রতি অর্থনৈতিক ও সামাজিক বর্জন চলাকালীন আলি (রা.) অবিচলভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি নিরলসভাবে ইসলামের শত্রুদের হাত থেকে নবীজিকে রক্ষা করতেন। এক স্মরণীয় ঘটনায়, যখন নবী (সা.) তায়েফ শহরে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে গিয়েছিলেন, তখন তায়েফের কিশোররা তাঁকে পাথর নিক্ষেপ করে আঘাত করতে শুরু করে। সেই কঠিন মুহূর্তে আলি (রা.) নিজের জীবন বিপন্ন করে নবীজিকে রক্ষা করেন এবং আক্রমণকারীদের সরিয়ে দেন। তাঁর যৌবনকাল থেকেই আলি (রা.)-এর শারীরিক শক্তি, মানসিক দৃঢ়তা এবং অপরিমেয় সাহসিকতা তাঁকে বিশেষভাবে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছিল। তাঁর প্রশস্ত বক্ষ, বলিষ্ঠ বাহু এবং আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিত্ব সবার মধ্যে তাঁকে অনন্য স্থান দিয়েছিল। এমনকি বয়সে বড়রাও তাঁর সামনে সতর্ক থাকত। নবীজিকে কেউ অপমান করার চেষ্টা করলেই তারা আলি (রা.)-এর উপস্থিতি টের পেয়ে পলায়ন করত, কারণ সবাই জানত আলিই নবীজির প্রধান রক্ষক।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে আলি (রা.) ছিলেন নবীজির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য সহচর। যখন বহু লোক নবীর বিরোধিতা করছিল, আলি (রা.) কখনই তাঁর চাচাতো ভাইয়ের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে দ্বিধা করেননি। প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে তিনি নবীজির জন্য মানবঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এক সময়ে নবীজি ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে শত্রুদের বর্জন এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে তাদের জীবনই বিপন্ন হয়ে পড়ে। এই ক্রান্তিকালে নবী মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নির্দেশে মক্কা ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। ঐতিহাসিক লাইলাতুল মবিত-এ নবীজি আলি (রা.)-কে নিজের বিছানায় শুয়ে থাকার নির্দেশ দেন, যা আলি (রা.) অকুণ্ঠচিত্তে মেনে নেন। এ সময় আলি (রা.) নবীজির আমানতগুলো প্রকৃত মালিকদের কাছে ফেরত দেওয়ার দায়িত্বও গ্রহণ করেন। সেই রাতে আলি (রা.) নিজ জীবনকে বিপন্ন করে নবীজির বিছানায় শুয়ে থাকেন, যেখানে কাফিররা নবীজিকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। আলি (রা.)-এর এই অসাধারণ সাহসিকতার কারণে তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় এবং নবীজি আবু বকর (রা.)-এর সাথে নিরাপদে মদিনায় হিজরত করতে সক্ষম হন।

আলি (রা.) নিজ জীবনের মায়া ত্যাগ করে নবীজির সেবায় সর্বদা নিবেদিত ছিলেন। তিনি সফলভাবে সকল আমানত ফেরত দিয়ে নবী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মদিনার পথে রওনা হন। এই কাফেলায় ছিলেন তাঁর মাতা ফাতিমা বিনতে আসাদ, খালা, হামজা (রা.)-এর স্ত্রী, নবীজির কন্যা ফাতিমা (রা.) সহ অন্যান্য মহিলারা। মক্কার কাফিররা আলি (রা.)-কে থামানোর চেষ্টা করলে তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সাথে লড়াই করে পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। অবশেষে তারা মদিনায় পৌঁছলে নবীজি শহরের বাইরে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। নবীজি আলি (রা.) ও পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে মদিনায় প্রবেশ করেন। অনেক ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী, আলি (রা.) ছিলেন মদিনায় পৌঁছানো প্রথম মক্কাবাসীদের মধ্যে অন্যতম, যা ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।

মুহাম্মদের সাহচর্য

[সম্পাদনা]

৬২২ খ্রিস্টাব্দে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্রের খবর পাওয়ার পর তিনি নিরাপত্তার জন্য ইয়াসরিবে (পরবর্তীতে মদিনা নামে পরিচিত) হিজরত করেন। কিন্তু আলি (রা.) নবীজির জীবন রক্ষার্থে মক্কায় থেকে যান এবং নবীজির ছদ্মবেশ ধারণ করে শত্রুদের বিভ্রান্ত করেন।[২৩][৩৩] আলি (রা.)-এর এই আত্মত্যাগের ঘটনা সম্পর্কে কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে: "আর কিছু লোক এমন আছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে।"[৩৪][৩৫][২৪] এই হিজরতের মাধ্যমেই ইসলামি হিজরি সন গণনা শুরু হয়। আলি (রা.) নবীজির আমানতসমূহ যথাযথভাবে মালিকদের ফেরত দিয়ে পরবর্তীতে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন।[৩৬]

মদিনায় পৌঁছানোর পর নবীজি (সা.) মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপনকালে আলি (রা.)-কে নিজের ভাই হিসেবে মনোনীত করেন।[৩৭] আনুমানিক ৬২৩ থেকে ৬২৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মুহাম্মদ (স.) তাঁর কন্যা ফাতিমাকে আলি (রা.)-এর সাথে বিবাহ দেন।[৩৮][৩৯] এ সময় আলি (রা.)-এর বয়স ছিল প্রায় বাইশ বছর। উল্লেখ্য, এর পূর্বে নবীজি আবু বকরউমর ইবনুল খাত্তাব সহ কয়েকজন বিশিষ্ট সাহাবির ফাতিমা (রা.)-কে বিবাহের প্রস্তাব গ্রহণ করেননি।[৪০][৪১]

মুবাহালার ঘটনা

[সম্পাদনা]
মুহাম্মদ এবং আলি, পনেরো শতকের ইরানি মহাকাব্য খাওয়ারনামা থেকে একটি ফোলিও।

৬৩২ খ্রিস্টাব্দে নজরান অঞ্চল থেকে একদল খ্রিস্টান প্রতিনিধি মদিনায় এসে মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথে একটি শান্তিচুক্তি সম্পাদন করে।[৪২][৪৩] আলোচনাকালে তারা ঈসা (আ.)-এর স্বরূপ নিয়ে প্রশ্ন তোলে - তিনি মানব না ঐশ্বরিক সত্তা?[৪৪][৪৫]

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কুরআন মজীদে সূরা আলে ইমরানের ৬১ নং আয়াত নাজিল হয়,[৪৬] যাতে মুহাম্মদ (সা.)-কে নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁর বিরোধীদের মুবাহালা (পারস্পরিক অভিশাপের মাধ্যমে সত্য নির্ণয়) করার আহ্বান জানাতে, বিশেষ করে যখন বিতর্ক অচলাবস্থায় পৌঁছায়।[৪৭] যদিও শেষপর্যন্ত খ্রিস্টান প্রতিনিধিদল এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ থেকে বিরত থাকে, তবুও মুহাম্মদ (সা.) মুবাহালার জন্য নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আলি (রা.), তাঁর কন্যা ফাতিমা এবং তাঁদের দুই পুত্র হাসানহুসাইন[৩৭]

মুহাম্মদ (সা.)-এর এই বিশেষ চারজনকে মুবাহালার সাক্ষী ও প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করা ইসলামের ইতিহাসে তাদের মর্যাদাকে বিশেষভাবে উন্নীত করে।[৪৮][১৯][৪৯] শিয়া ইসলামের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, কুরআনের এই আয়াতে 'আমাদের নিজেদের' শব্দগুচ্ছ দ্বারা যদি আলি (রা.) ও মুহাম্মদ (সা.)-কে নির্দেশ করা হয়ে থাকে, তবে তা প্রমাণ করে যে আলি (রা.) কুরআনের দৃষ্টিতে নবীজির সমতুল্য ধর্মীয় মর্যাদার অধিকারী ছিলেন।[৫০][৫১]

আরবি ক্যালিগ্রাফিতে খোদাইকৃত শিলালিপি: "আলির চেয়ে বীর যুবক আর নেই, জুলফিকারের চেয়ে উৎকৃষ্ট তরবারিও নেই"

রাজনৈতিক জীবন

[সম্পাদনা]

মদিনায় আলি (রা.) মুহাম্মদ (সা.)-এর ব্যক্তিগত সচিব ও বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।[৫২][৩৬] তিনি কুরআনের আয়াতসমূহ লিপিবদ্ধকারী বিশেষ লেখকদের অন্যতম ছিলেন।[২৩]

৬২৮ খ্রিস্টাব্দে আলি (রা.) হুদায়বিয়ার ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তির শর্তাবলি লিপিবদ্ধ করেন, যা মুসলিম ও মক্কার মুশরিকদের মধ্যে সম্পাদিত হয়েছিল। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে একটি গুরুত্বপূর্ণ কুরআনিক ঘোষণা প্রচারের জন্য মুহাম্মদ (সা.) আবু বকর (রা.)-কে প্রত্যাহার করে আলি (রা.)-কে নিয়োগ দেন। সুন্নি হাদিস সংকলন সুনান আন-নাসাঈ অনুসারে এটি ছিল একটি ঐশ্বরিক নির্দেশ।[৫৩][৫৪][২৪] ৬৩০ খ্রিস্টাব্দের মক্কা বিজয়ে আলি (রা.)-এর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কৌশলী ভূমিকার ফলে এটি একটি রক্তপাতহীন বিজয় হিসেবে ইতিহাসে স্থান পায়। বিজয়ের পর তিনি কাবা শরিফের ভেতরে অবস্থিত সমস্ত মূর্তি অপসারণ করেন।

৬৩১ খ্রিস্টাব্দে আলি (রা.) ইয়েমেনে ইসলাম প্রচারের বিশেষ দূত হিসেবে প্রেরিত হন। তাঁর সফল প্রচারণার ফলে হামদান গোত্র শান্তিপূর্ণভাবে ইসলাম গ্রহণ করে।[৩৩] এছাড়াও তিনি বানু জাধিমা গোত্রের সাথে মুসলমানদের সম্ভাব্য রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঠেকিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত করেন।

সামরিক জীবন

[সম্পাদনা]

আলি (রা.) মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রায় সকল সামরিক অভিযানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবে ৬৩০ সালে তাবুকের যুদ্ধ চলাকালে তিনি মদিনায় অবস্থান করে নগরীর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন।[৩৩] এই ঘটনার সাথে সম্পর্কিত একটি প্রসিদ্ধ হাদিসে মুহাম্মদ (সা.) আলি (রা.)-কে বলেন: "হে আলি, তুমি কি সন্তুষ্ট নও যে, আমার সাথে তোমার সম্পর্ক হারুনমুসা-এর মতো, শুধু এই পার্থক্য যে, আমার পরে আর কোনো নবী আসবে না?" এই হাদিসটি সুন্নি ইসলামের প্রামাণিক গ্রন্থ সহীহ বুখারীসহীহ মুসলিম-এ বর্ণিত হয়েছে।[৫৫]

শিয়া মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই হাদীসটি আলি (রা.)-এর নবীজির প্রকৃত উত্তরসূরি হওয়ার অধিকারের স্পষ্ট প্রমাণ, যা পরবর্তীতে অস্বীকার করা হয়।[৫৬] নবীজির অনুপস্থিতিতে ৬২৮ সালে আলি (রা.) ফাদাকের যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।[৩৬][২৩]

খায়বারের যুদ্ধে আলি (রা.)-এর বীরত্ব

আলি (রা.)-এর অসামান্য বীরত্ব ও সাহসিকতা ইসলামের ইতিহাসে প্রবাদপ্রতিম।<[৩৭] পরাজিত শত্রুদের প্রতি তাঁর উদারতা ও মানবিক আচরণও সমানভাবে প্রসিদ্ধ ছিল।[৫৭] তিনি বদরের যুদ্ধ (৬২৪) এবং খায়বারের যুদ্ধ (৬২৮)-এ মুসলিম বাহিনীর পতাকা বহন করেছিলেন।[৫২]

আলি (রা.) উহুদের যুদ্ধ (৬২৫) এবং হুনাইনের যুদ্ধ (৬৩০)-এ নবীজির জীবন রক্ষার্থে অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করেন। খায়বারের বিজয় মূলত আলি (রা.)-এর অসীম সাহসিকতার ফল ছিল। ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি শত্রু দুর্গের বিশাল লোহার দরজা নিজ হাতে উপড়ে ফেলেছিলেন। ৬২৭ সালে খন্দকের যুদ্ধে আলি (রা.) আমর ইবনে আবদে ওদ নামক প্রসিদ্ধ আরব যোদ্ধাকে পরাজিত করেন।[২৪] আত-তাবারির বর্ণনা অনুসারে, উহুদের প্রান্তরে মুহাম্মদ (সা.) একটি ঐশ্বরিক কণ্ঠস্বর শুনতে পান যা বলছিল: "জুলফিকার ছাড়া কোনো প্রকৃত তরবারি নেই এবং আলি ছাড়া কোনো প্রকৃত বীর নেই।"[৫৪] ৬২৬-৬২৭ সালের দিকে, আলি (রা.) এবং তাঁর সহযোদ্ধা যুবাইর ইবনে আল-আওয়াম বনু কুরাইজা গোত্রের বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তিস্বরূপ তাদের পুরুষ সদস্যদের শাস্তি প্রদানের তত্ত্বাবধান করেন। তবে ঐতিহাসিকদের মধ্যে এই ঘটনার সত্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।[৫৮][৫৯][৬০]

গাদীর খুম

[সম্পাদনা]

৬৩২ খ্রিস্টাব্দে বিদায় হজ্জ থেকে ফিরার পথে ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) গাদীরে খুম নামক স্থানে বিশাল হজ্জযাত্রীদের কাফেলা থামান এবং জামাত নামাযের পর তাদের উদ্দেশ্যে একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।[৬১] নামায সমাপ্তির পর,[৬২] মুহাম্মদ (সা.) বিপুল সংখ্যক মুসলিমের সমাবেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা প্রদান করেন, যেখানে তিনি পবিত্র কুরআনের মর্যাদা এবং তাঁর আহলে বাইতের (আক্ষ.'গৃহের লোকজন', অর্থাৎ তাঁর পবিত্র পরিবার) বিশেষ অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।[৬৩][৬৪][৬৫][৬৬]

আলি (রা.)-এর হাত ধরে উঠিয়ে মুহাম্মদ (সা.) উপস্থিত মুসলমানদের জিজ্ঞাসা করেন: "আমি কি মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের প্রাণের চেয়েও বেশি আউলা (আক্ষ.'অধিক কর্তৃত্বশীল ও নিকটতর') নই?"[৬৬][৬৭] এই প্রশ্নটি সরাসরি কুরআনের ৩৩:৬ নং আয়াতের ইঙ্গিতবাহী ছিল।[৬৮][৬৯] সমবেত মুসলিমগণ একবাক্যে এতে সম্মতি জানালে,[৬৬] মুহাম্মদ (সা.) মহান ঘোষণা দেন: "আমি যার মাওলা, আলিও তার মাওলা।"[৭০][৬৬]

সুন্নি প্রামাণিক গ্রন্থ মুসনাদ ইবনে হাম্বল-এ বর্ণিত হয়েছে যে, মুহাম্মদ (সা.) এই ঘোষণাটি তিন থেকে চারবার পুনরাবৃত্তি করেন এবং খলিফা উমর (রা.) আলিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন: "হে আলি! আজ থেকে তুমি প্রতিটি মুমিন পুরুষ ও নারীর মাওলা হয়েছ।"[৭১][৬৫] এই ঘটনার অব্যবহিত পূর্বেই মুহাম্মদ (সা.) মুসলিম উম্মাহকে তাঁর সন্নিকটে মৃত্যুর বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।[৭২][৬৩][৭৩] শিয়া সূত্রসমূহ এই ঘটনাকে কুরআনের ৫:৩ ও ৫:৬৭ নং আয়াতের সাথে স্পষ্টভাবে সম্পৃক্ত করে আরও বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান করে।[৭২]

ইসলামী ইতিহাসে গাদীরে খুমের ঐতিহাসিক সত্যতা প্রায় সর্বজনস্বীকৃত,[৬৬][৭৪][৭৫][৬৩] কারণ এটি প্রাথমিক ইসলামী সূত্রাবলীতে সর্বাধিক প্রমাণিত ও বর্ণিত ঘটনাগুলির মধ্যে অন্যতম।[৭৬] তবে মাওলা শব্দটি একটি বহুমাত্রিক অর্থবোধক আরবি পরিভাষা হওয়ায়, গাদীরে খুমের প্রেক্ষাপটে এর ব্যাখ্যা ইসলামের বিভিন্ন মাযহাবে ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। শিয়া পণ্ডিতগণ মাওলা শব্দের অর্থ 'নেতা', 'প্রভু' ও 'পৃষ্ঠপোষক' হিসেবে ব্যাখ্যা করেন,[৭৭] অন্যদিকে সুন্নি আলিমগণ এটিকে আলির প্রতি মহব্বত ও আনুগত্য প্রকাশক শব্দ হিসেবে বিবেচনা করেন।[২৩][৭৮]

এজন্য শিয়া মুসলিমগণ গাদীরে খুমের ঘটনাকে মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক আলি (রা.)-কে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নিযুক্ত করার স্পষ্ট ঘোষণা হিসেবে গণ্য করেন,[৭৯][৮০][২৪] পক্ষান্তরে সুন্নি আলিমগণ এটিকে নবীজির প্রতি আলির গভীর ভালোবাসা ও আনুগত্যের প্রকাশ কিংবা নবীজির নির্দেশনাবলী বাস্তবায়নে আলির ভূমিকা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।[২৩][৬৩][৮১] শিয়া পণ্ডিতগণ এই ঘোষণার অসাধারণ তাৎপর্যের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন এবং কুরআন-হাদীসের দলীল উপস্থাপনপূর্বক মাওলা শব্দের একমাত্র সঠিক অর্থ 'নেতৃত্ব' ও 'কর্তৃত্ব' বলে দাবি করেন।[৭৮][৮২][৭২][৬৩][৮৩] অপরদিকে সুন্নি গবেষকগণ গাদীরে খুমের ঘটনাকে আলি (রা.) সম্পর্কিত পূর্ববর্তী কিছু প্রশ্নের জবাব হিসেবে বিবেচনা করেন।[৮৪]

আলি (রা.)-এর খিলাফতকালে তিনি মুসলিম উম্মাহকে গাদীরে খুমের সাক্ষ্য প্রদানে আহ্বান করেছিলেন,[৮৫][৮৬][৮৭] যা সম্ভবত তাঁর নেতৃত্বের বৈধতা প্রতিষ্ঠার জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ ছিল।[৮৮]

মুহাম্মাদ (সাঃ) এর যুগ

[সম্পাদনা]

আলি যখন মদিনায় হিজরত করেছিলেন তখন তার বয়স ২২ বা ২৩ বছর ছিল। মুহাম্মদ(সা) যখন তার সাহাবীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করছিলেন, তখন তিনি আলিকে তার ভাই হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যে, "আলি ও আমি একই গাছের যখন মানুষ বিভিন্ন গাছের অন্তর্গত হয়।" দশ বছর ধরে মুহাম্মদ(সা) মদীনাতে সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে ছিলেন, আলি তার সম্পাদক এবং প্রতিনিধি হিসাবে ছিলেন,প্রতিটি যুদ্ধে ইসলামের পতাকার আদর্শ বাহক ছিলেন, আক্রমণে যোদ্ধাদের দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং বার্তা এবং আদেশ বহন করেছিলেন। মুহম্মদ(সা)র একজন প্রতিনিধি হিসাবে এবং পরে তার ছেলে আইন অনুসারে, আলি মুসলিম সম্প্রদায়ের একজন কর্তৃত্বের অধিকারী ব্যক্তি ছিলেন৷

ফাতিমার সাথে বিবাহ

[সম্পাদনা]

মদিনায় হিজরতের দ্বিতীয় বছরে মুহাম্মাদ(সা) তার কন্যা ফাতিমার জন্য বহু বৈবাহিক প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহর আদেশে তাকে আলির সাথে বিবাহের সিদ্ধান্ত নেন। বদরের যুদ্ধের বেশ কয়েকদিন আগে তার সাথে তার বিয়ে হয়েছিল। তবে তিন মাস পরে এই বিবাহ উদ্‌যাপিত হয়েছিল। আলির বয়স প্রায় ২৩ বছর এবং ফাতেমার বয়স ১৮ বছর। এটি সবচেয়ে আনন্দময় এবং উদযাপিত বিবাহ ছিল। তারা ছিলেন আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট দম্পতি। তাদের দুই পুত্র সন্তানের নাম যথাক্রমে হাসান (আল-হ়াসান ইবনে ʿআলি ইবনে ʾআবী ত়ালিব) এবং হুসাইন (হোসাইন ইবনে আলি )।

ইসলামের জন্য আত্মোৎসর্গ

[সম্পাদনা]

মুহম্মদ(সা) আলিকে কুরআনের পাঠ্য রচনাকারীদের একজন হিসাবে মনোনীত করেছিলেন, যা পূর্ববর্তী দুই দশকে মুহাম্মদ(সা)র প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল। ইসলাম যেভাবে আরব জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল, আলি নতুন ইসলামিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছিলেন। ৬২৮ সালে তাকে হুদায়বিয়ার সন্ধি, মুহাম্মদ(সা) ও কুরাইশের মধ্যে সন্ধি রচনা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আলি এতটাই বিশ্বাসযোগ্য ছিলেন যে মুহাম্মদ(সা) তাকে বার্তা বহন করতে ও আদেশগুলি ঘোষণা করতে বলেছিলেন। ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে আলি মক্কায় তীর্থযাত্রীদের বিশাল সমাবেশে কুরআনের একটি অংশ আবৃত্তি করেছিলেন যা মুহাম্মদ(সা) এবং ইসলামী সম্প্রদায়কে আরব মুশরিকদের সাথে পূর্ববর্তী চুক্তি দ্বারা আবদ্ধ ঘোষণা করে না। ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা বিজয়ের সময় মুহাম্মদ (সা)আলিকে নিশ্চয়তা দিতে বলেছিলেন যে এই বিজয় রক্তহীন হবে। তিনি আলিকে বনু আউস, বানু খাজরাজ, তায়ে এবং কাবা'র সমস্ত পূজা মূর্তি ভাঙার আদেশ দিয়েছিলেন যা পুরাতন কালের শিরক দ্বারা এটি অশুচি হওয়ার পরে এটিকে পবিত্র করা হয়েছিল। ইসলামের শিক্ষার প্রচারের জন্য এক বছর পর আলিকে ইয়েমেনে প্রেরণ করা হয়েছিল। তিনি বিভিন্ন বিবাদ নিষ্পত্তি এবং বিভিন্ন উপজাতির বিদ্রোহ রোধের দায়িত্ব পালন করেন।

খুলাফায়ে রাশেদীনদের সময় জীবন

[সম্পাদনা]

মুহাম্মদের (সা.) উত্তরাধিকার

[সম্পাদনা]
অ্যামবিগ্রাম -একক শব্দে লেখা মুহাম্মদ (ডানে) এবং আলি (বামে)। ১৮০ ডিগ্রি উল্টালে উভয় শব্দই প্রতিফলিত হয়।

সাকিফা

[সম্পাদনা]

নবী মুহাম্মদ (সা.) ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন, সেই সময় হযরত আলি (রা.)-এর বয়স ছিল তিরিশ বছরের কাছাকাছি।[৮৯] ইন্তেকালের পর হযরত আলি (রা.) এবং নবীর অন্যান্য ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা তাঁর দাফন-কাফনের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত ছিলেন।[৯০][৯১] এদিকে আনসারদের (মদিনার স্থানীয় মুসলিম বাসিন্দা, আক্ষ.''সাহায্যকারী'') একটি দল সাকিফা বনু সায়িদা নামক স্থানে সমবেত হন। তাদের এই সমাবেশের উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম উম্মাহর ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করা অথবা মদিনার নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করা।[৯২] এই সভায় মুহাজিরদের (মক্কা থেকে হিজরতকারী মুসলমান, আক্ষ.''অভিবাসী'') পক্ষ থেকে আবু বকর (রা.) এবং উমর (রা.) কয়েকজন প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

যদিও সাকিফার সভায় হযরত আলি (রা.)-এর নাম নেতৃত্বের প্রসঙ্গে উত্থাপিত হয়েছিল, কিন্তু তিনি স্বয়ং সেখানে উপস্থিত না থাকায় এই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি।[৯৩][৯৪] পরবর্তীতে সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে তীব্র বিতর্কের পর আবু বকর (রা.)-কে মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা নির্বাচিত করা হয়। ঐতিহাসিক সূত্রে এই বিতর্ককে অনেকাংশে উত্তপ্ত ও সহিংস বলে বর্ণনা করা হয়েছে।[৯৫]

এই সিদ্ধান্তে গোত্রীয় রাজনীতি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।[৯০][৯৬] ঐতিহাসিকদের মতে, যদি এই সিদ্ধান্ত একটি বৃহত্তর পরিষদে (শুরা) নেওয়া হতো এবং হযরত আলি (রা.)-কে প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করা হতো, তাহলে ফলাফল ভিন্ন হতে পারত।[৯৭][৯৮] বিশেষ করে কুরাইশ গোত্রের বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকারের প্রথা হযরত আলি (রা.)-এর পক্ষে ছিল,[৯৯][১০০][১০১] কেননা তিনি নবী পরিবারের সদস্য এবং নবীর নিকটাত্মীয় ছিলেন। তবে তাঁর অপেক্ষাকৃত যুবক বয়স এই অবস্থানকে কিছুটা দুর্বল করে দিয়েছিল।[৩৬][৮৯] অন্যদিকে, আবু বকর (রা.)-এর খিলাফতের সমর্থনে যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয় যে, নবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর অসুস্থতার শেষ দিনগুলোতে কিছু নামাজের ইমামতি করার দায়িত্ব আবু বকরকে দিয়েছিলেন।[৯০][১০২] তবে এই প্রতিবেদনের ঐতিহাসিক সত্যতা এবং এগুলোর রাজনৈতিক তাৎপর্য নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে।[৯০][১০৩][১০৪]

ফাতিমার ঘরে আক্রমণ

[সম্পাদনা]

যদিও আবু বকরের খিলাফত মদিনার সাধারণ জনগণের মধ্যে তেমন কোনো বড় ধরনের বিরোধিতার সম্মুখীন হয়নি,[১০২] কিন্তু বনু হাশিম গোত্র এবং নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কয়েকজন বিশিষ্ট সাহাবি দ্রুত আলি (রা.)-এর বাসভবনে একত্রিত হয়ে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।[১০৫][১০৬] এই প্রতিবাদকারীদের মধ্যে হযরত জুবায়ের (রা.) এবং নবীর চাচা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা.)-এর মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।[১০৬] তারা গাদিরে খুমের ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণ করে হযরত আলি (রা.)-কেই নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রকৃত ও যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করতেন।[৩৯][১০৭][৬৩] প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ইবনে জারির তাবারী তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন যে, হযরত উমর (রা.) একটি সশস্ত্র দল নিয়ে হযরত আলি (রা.)-এর বাসভবনে উপস্থিত হন এবং স্পষ্ট ভাষায় হুমকি দেন যে, যদি আলি (রা.) ও তাঁর অনুসারীরা আবু বকর (রা.)-এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ না করেন, তবে তিনি বাড়িটি জ্বালিয়ে দেবেন।[১০৮][৩৯][১০৯][১১০] এই পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠলে,[১১১][১১২] হযরত ফাতিমা (রা.)-এর হস্তক্ষেপ ও অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে উমর (রা.) ও তাঁর দল সেখান থেকে ফিরে যান।[১০৮]

পরবর্তীতে আবু বকর (রা.) বনু হাশিম গোত্রের উপর একটি কার্যকর অর্থনৈতিক ও সামাজিক বয়কট আরোপ করতে সক্ষম হন,[১১৩] যার ফলে তারা শেষ পর্যন্ত হযরত আলি (রা.)-কে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হন।[১১৩][১১৪] ঐতিহাসিকদের মতে, হযরত ফাতিমা (রা.)-এর মৃত্যু পর্যন্ত হযরত আলি (রা.) আবু বকর (রা.)-এর আনুগত্য স্বীকার করেননি। উল্লেখ্য যে, নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ইন্তেকালের মাত্র ছয় মাস পরেই হযরত ফাতিমা (রা.) ইন্তেকাল করেন।[১১৫] শিয়া সূত্রসমূহে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত ফাতিমা (রা.)-এর মৃত্যু (এবং তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের গর্ভপাত) তাঁর বাসভবনে সংঘটিত হামলার ফলশ্রুতি ছিল, যা মূলত আবু বকর (রা.)-এর নির্দেশনায় হযরত আলি (রা.)-এর বিরোধিতা দমনের জন্য সংঘটিত হয়েছিল বলে তারা দাবি করে।[১১৬][৩৯][১০৭] অন্যদিকে সুন্নি পণ্ডিতরা এই দাবির সত্যতা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেন,[১১৭] তবে তাদেরই কিছু প্রাচীন সূত্রে হযরত ফাতিমা (রা.)-এর গৃহে জোরপূর্বক প্রবেশ এবং হযরত আলি (রা.)-কে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ রয়েছে।[১১৮][১১৯][১২০] মজার ব্যাপার হলো, সুন্নি সূত্রেই বর্ণিত আছে যে, আবু বকর (রা.) তাঁর মৃত্যুশয্যায় এই ঘটনার জন্য গভীর অনুশোচনা প্রকাশ করেছিলেন।[১২১][১২২]

ঐতিহাসিকদের মতে, সম্ভবত বানু হাশিম গোত্রকে দুর্বল করার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে,[১২৩][১২৪][১২৫][১২৬] আবু বকর (রা.) ফাতিমার ফাদাকের উর্বর কৃষিজমি হযরত ফাতিমা (রা.)-এর কাছ থেকে জব্দ করে নেন। হযরত ফাতিমা (রা.) এই সম্পত্তিকে তাঁর পিতার উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত (অথবা বিশেষ উপহার হিসেবে প্রাপ্ত) সম্পত্তি বলে দাবি করেছিলেন।[১২৭][১২৮] ফাদাক বাজেয়াপ্তকরণের এই সিদ্ধান্তকে সুন্নি সূত্রসমূহে একটি হাদিসের মাধ্যমে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তবে এই হাদিসের সত্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে গুরুতর সন্দেহ রয়েছে, বিশেষত যখন এটি কুরআনে বর্ণিত উত্তরাধিকার সংক্রান্ত স্পষ্ট বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।[১২৭][১২৯]

আবু বকরের খিলাফতকাল (৬৩২–৬৩৪)

[সম্পাদনা]

জনসমর্থনের অভাবে এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য রক্ষার স্বার্থে হযরত আলি (রা.) শেষ পর্যন্ত আবু বকর (রা.)-এর খিলাফত মেনে নিতে বাধ্য হন।[১৩০][১৩১][১৩২] তবে তিনি বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের যে কোনো প্রস্তাবকে স্পষ্ট ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।[১৩৩][৩৬] হযরত আলি (রা.) নিজেকে নেতৃত্বের জন্য সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করতেন, কারণ তিনি ব্যক্তিগত গুণাবলি, জ্ঞান-প্রজ্ঞা এবং সর্বোপরি নবী পরিবারের সদস্য হওয়ার অনন্য যোগ্যতা রাখতেন।[১৩৪][১৩৫][১৩৬] বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রমাণ থেকে স্পষ্ট যে, হযরত আলি (রা.) নিজেকে রাসূলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক মনোনীত প্রকৃত উত্তরসূরি হিসেবেও গণ্য করতেন।[১৩৭][৮৬][১৩৮]

যদিও নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবদ্দশায় হযরত আলি (রা.) ইসলামের প্রচার-প্রসার ও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন,[১৩৯][১৪০] আবু বকর (রা.) ও পরবর্তীতে হযরত উমর (রা.) এবং হযরত উসমান (রা.)-এর শাসনামলে তিনি স্বেচ্ছায় জনজীবন থেকে অনেকটা দূরে সরে যান।[২৩][১৩৯][৩৭] তিনি রিদ্দার যুদ্ধ এবং প্রাথমিক মুসলিম বিজয় অভিযানসমূহে সরাসরি অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন,[৩৭] যদিও তিনি আবু বকর (রা.) ও হযরত উমর (রা.)-কে প্রশাসনিক ও ধর্মীয় বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করতেন।[২৩][৩৭]

ঐতিহাসিক সূত্রসমূহে হযরত আলি (রা.) ও প্রথম দুই খলিফার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে উদ্ভূত মতবিরোধের উল্লেখ পাওয়া যায়,[১৪১][১৪২][১৪৩] যদিও সুন্নি ঐতিহাসিক সূত্রগুলোতে এই বিরোধের বিষয়টি তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বের সাথে উপস্থাপিত হয়েছে।[১৪৪][১৪৫] এই মতপার্থক্য বিশেষভাবে প্রকট হয়ে উঠে ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় খলিফা নির্বাচনের সময়, যখন হযরত আলি (রা.) প্রথম দুই খলিফার প্রতিষ্ঠিত দৃষ্টান্ত ও পদ্ধতি অনুসরণ করতে অস্বীকৃতি জানান।[১৪০][১৩৯] অন্যদিকে শিয়া ঐতিহাসিক সূত্রসমূহে দাবি করা হয় যে, হযরত আলি (রা.)-এর আবু বকর (রা.)-এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ ছিল একটি রাজনৈতিক কৌশলমাত্র (তাকিয়া), যা তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে ও অনুসারীদের রক্ষার জন্য প্রয়োগ করেছিলেন।[১৪৬] তবে কিছু গবেষক মনে করেন যে শিয়া সূত্রগুলোতে হযরত আলি (রা.)-এর বিরোধের বিষয়টি কিছুটা অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপিত হতে পারে।[১৪৪]

উমরের খিলাফতকাল (৬৩৪–৬৪৪)

[সম্পাদনা]

৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে আবু বকর (রা.)-এর মৃত্যুর পূর্বে তিনি উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-কে তার উত্তরসূরি হিসেবে মনোনীত করেন।[১৪৭] তবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হযরত আলি (রা.)-এর সাথে কোনো ধরনের পরামর্শ করা হয়নি এবং প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্ত কয়েকজন প্রবীণ সাহাবি কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।[১৪৮]

এই সময়কালে হযরত আলি (রা.) নিজে থেকে কোনো নেতৃত্বের দাবি উত্থাপন না করে উমর (রা.)-এর শাসনামলে সাধারণ জনজীবন থেকে নিজেকে কিছুটা দূরে রাখেন।[১৪৯] তবে উমর (রা.) গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলি (রা.)-এর পরামর্শ গ্রহণ করতেন বলে জানা যায়।[২৩][১৫০] ইসলামি বর্ষপঞ্জির সূচনা হিসেবে মদিনায় হিজরতকে নির্ধারণ করার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তটি হযরত আলি (রা.)-এরই প্রস্তাব বলে বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখ পাওয়া যায়।[৩৩]

অনেক ক্ষেত্রে হযরত আলি (রা.)-এর রাজনৈতিক পরামর্শ উপেক্ষিত হয়েছে বলে ইতিহাসবিদরা উল্লেখ করেন।[৩৬] বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, যখন উমর (রা.) রাষ্ট্রীয় রাজস্ব বণ্টনের জন্য ইসলামে অবদানের ভিত্তিতে একটি বিশেষ ব্যবস্থা (দেওয়ান) প্রবর্তন করেন,[১৫১] তখন আলি (রা.) স্পষ্টভাবে মত প্রকাশ করেন যে নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং আবু বকর (রা.)-এর নীতি অনুসরণ করে এই সম্পদ সমানভাবে বিতরণ করা উচিত ছিল।[১৫২][৩৬]

হযরত আলি (রা.) দামেস্কের নিকটবর্তী গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সভাসমূহে সাধারণত অনুপস্থিত থাকতেন।[৩৬] তিনি উমর (রা.)-এর সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন সামরিক অভিযানেও সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি,[১৫৩][২৫] যদিও তিনি কখনো প্রকাশ্যে এসব অভিযানের বিরোধিতা করেননি।[২৫]

ঐতিহাসিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, হযরত উমর (রা.) সম্ভবত মনে করতেন যে নবুয়তখিলাফত উভয়ই বনু হাশিম গোত্রের হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়া উচিত নয়।[১৫৪][১৫৫] এই বিশ্বাসই তাকে নবীজির মৃত্যুশয্যায় ওসিয়্যাহ (উইল) লিখতে বাধা দিতে প্ররোচিত করেছিল,[৬৪][১৫৬][১৫৭] বিশেষত এই আশঙ্কায় যে নবীজি স্পষ্টভাবে হযরত আলি (রা.)-কে তার উত্তরসূরি মনোনীত করবেন।[১৫৮]

তবে শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য হযরত আলি (রা.) ও বনু হাশিম গোত্রের সহযোগিতা অপরিহার্য বিবেচনা করে উমর (রা.) তাদের প্রতি কিছুটা নমনীয় নীতি গ্রহণ করেছিলেন।[১৫৯] উদাহরণস্বরূপ, তিনি মদিনায় অবস্থিত নবীজির ব্যক্তিগত সম্পত্তি হযরত আলি (রা.)-এর নিকট ফিরিয়ে দেন, যদিও ফাদাকখায়বার এর মত গুরুত্বপূর্ণ সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণেই রাখেন।[১৬০]

কিছু ঐতিহাসিক সূত্রে উল্লেখ পাওয়া যায় যে হযরত উমর (রা.) হযরত আলি (রা.)-এর কন্যা উম্মে কুলসুমের সাথে বিবাহের ব্যাপারে জোর প্রয়াস চালান। প্রথমে হযরত আলি (রা.) এই প্রস্তাবে অসম্মতি জানালেও, পরবর্তীতে যখন উমর (রা.) জনসমর্থন নিয়ে তার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন, তখন তিনি অনিচ্ছাসত্ত্বেও সম্মতি দেন।[১৬১]

উসমানের নির্বাচন (৬৪৪)

[সম্পাদনা]
তারিখনামা গ্রন্থে বর্ণিত উসমানের খলিফা নির্বাচনের দৃশ্য

৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে হযরত উমর (রা.)-এর মৃত্যুর পূর্বে,[১৬২] তিনি একটি ছয় সদস্যবিশিষ্ট শুরা কমিটি গঠন করেন যাদের দায়িত্ব ছিল নিজেদের মধ্য থেকে পরবর্তী খলিফা নির্বাচন করা।[১৬৩] এই কমিটিতে হযরত আলি (রা.) এবং হযরত উসমান (রা.) ছিলেন প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী।[১৬৪][১৬৫] কমিটির সকল সদস্যই কুরাইশ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং তারা মহানবী (সা.)-এর প্রথম দিকের সাহাবাদের মধ্যে গণ্য হতেন।[১৬৩]

শুরা কমিটির সদস্য আবদুর রহমান ইবনে আউফকে হয় কমিটি অথবা স্বয়ং উমর (রা.) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন।[১৬৬][১৬৭][১৬৮] দীর্ঘ আলোচনার পর, ইবন আওফ (রা.) তার ভগ্নিপতি হযরত উসমান (রা.)-কে খলিফা হিসেবে মনোনীত করেন।[১৬৯][১৭০] উসমান (রা.) এই সময় প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি আবু বকর (রা.) ও উমর (রা.)-এর নীতিমালা অনুসরণ করে শাসনকার্য পরিচালনা করবেন।[১৬৯]

অন্যদিকে, হযরত আলি (রা.) এই শর্তে সম্মত হতে অস্বীকৃতি জানান,[১৬৯][১৬৮] অথবা কৌশলগতভাবে অস্পষ্ট উত্তর প্রদান করেন বলে কিছু সূত্রে উল্লেখ রয়েছে।[১৭১] এই শুরা কমিটিতে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো আনসার সম্প্রদায়ের কোনো প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত ছিল না,[১৭২][১৬৭] এবং ঐতিহাসিকদের মতে এটি স্পষ্টতই উসমান (রা.)-এর পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট ছিল।[১৭৩][১৭৪][১৬৮]

এই দুটি কারণই হযরত আলি (রা.)-এর বিরুদ্ধে কাজ করেছিল।[১৬৭][১৭৫][১৭৬] তবে, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তাকে সরাসরি নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়াও সম্ভব ছিল না।[১৭৭]

উসমানের খিলাফতকাল (৬৪৪–৬৫৬)

[সম্পাদনা]

হযরত উসমান (রা.)-এর শাসনামলে তার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি,[১৭৮] প্রশাসনিক দুর্নীতি[১৭৯][১৮০] এবং ন্যায়বিচার থেকে বিচ্যুতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়।[১৮১] হযরত আলি (রা.)ও উসমান (রা.)-এর বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করেন,[৩৬][২৫][১৮২] বিশেষ করে তার আত্মীয়-স্বজনদের জন্য অত্যধিক অর্থ বিতরণের নীতির বিরোধিতা করেন।[১৮৩][১৮৪]

হযরত আলি (রা.) সত্যবাদী সাহাবিদের যেমন আবু যার (রা.)আম্মার (রা.)-কে রক্ষা করেছিলেন[১৮৫][১৮৬] এবং সামগ্রিকভাবে উসমান (রা.)-এর শাসনকে সংযত রাখার চেষ্টা করেছিলেন।[১৮৫] আলি (রা.)-এর কিছু অনুসারী এই বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন,[১৮৭][১৮৮] যাদের সাথে যোগ দেন তালহা (রা.), জুবাইর (রা.)—যারা উভয়েই নবীজির ঘনিষ্ঠ সাহাবি ছিলেন—এবং নবীজির স্ত্রী আয়িশা (রা.)[১৮৯][১৯০][১৮৭]

আলি (রা.) এর এসব সমর্থকদের মধ্যে মালিক আল-আশতার (রা.) এবং অন্যান্য ধর্মীয়ভাবে শিক্ষিত কুররাআ (আক্ষ.'কুরআন পাঠক') ব্যক্তিত্বরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।[১৯১][১৮৪] যদিও তারা আলি (রা.)-কে পরবর্তী খলিফা হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাদের সাথে আলি (রা.)-এর কোনো প্রকার সমন্বয়ের প্রমাণ পাওয়া যায় না।[১৯২]

বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিতে আলি (রা.)-কে অনুরোধ করা হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন,[৩৬][১৯৩] যদিও তাদের অভিযোগের প্রতি তিনি সহানুভূতিশীল ছিলেন বলে মনে করা হয়।[১৯৪][১৯৩] নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীদের জন্য একটি কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন।[১৯৫][৩৬]

উসমানের হত্যাকাণ্ড (৬৫৬)

[সম্পাদনা]

৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে, বিভিন্ন প্রদেশ থেকে অসন্তুষ্ট জনগণ মদিনায় সমবেত হয়।[৩৭] মিশরীয় বিদ্রোহীরা আলি (রা.)-এর পরামর্শ চাইলে তিনি তাদেরকে উসমান (রা.)-এর সাথে আলোচনার পরামর্শ দেন।[১৯৬][১৯৭] একইভাবে, ইরাকের বিদ্রোহীদেরকে তিনি সহিংসতা পরিহার করার উপদেশ দেন, যা তারা মেনে নেয়।[১৯৮]

আলি (রা.) বারবার উসমান (রা.) ও বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন,[৩৭][১৯৯][২০০] যাতে তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অভিযোগের সমাধান করা যায়।[২০১][৩৭] বিশেষ করে, প্রথম অবরোধের অবসানে চুক্তি সম্পাদনে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন এবং এর বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেন।[২০২][৩৭]

পরবর্তীতে, আলি (রা.) উসমান (রা.)-কে প্রকাশ্যে অনুতপ্ত হওয়ার জন্য রাজি করান,[২০৩] কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই উসমান (রা.) তার ঘোষণা প্রত্যাহার করে নেন। এটি সম্ভবত তার সচিব মারওয়ান ইবন আল-হাকাম-এর চাপে ঘটেছিল।[২০৪] মিশরীয় বিদ্রোহীরা পুনরায় উসমান (রা.)-এর বাড়ি অবরোধ করে, যখন তারা একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি আটকায় যাতে তাদের শাস্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বিদ্রোহীরা উসমান (রা.)-এর পদত্যাগ দাবি করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং চিঠির ব্যাপারে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।[২০৫]

প্রাথমিক সূত্রগুলোতে এই চিঠির জন্য সাধারণত মারওয়ানকেই দায়ী করা হয়।[২০৬][২০৭] আলি (রা.)ও উসমান (রা.)-এর পক্ষ নেন,[২০৫] কিন্তু উসমান (রা.) সম্ভবত চিঠির ব্যাপারে তাকে দায়ী করেন।[২০৮] সম্ভবত এই ঘটনার পরেই আলি (রা.) আর উসমান (রা.)-এর পক্ষে কোনো মধ্যস্থতা করতে অস্বীকার করেন।[২০৫][১৯৫]

এর অল্পদিন পরেই, মিশরীয় বিদ্রোহীরা উসমান (রা.)-কে হত্যা করে।[২০৬][২০৯][২১০] আলি (রা.) এই হত্যাকাণ্ডে কোনো ভূমিকা রাখেননি,[৩৬][২১১] বরং তার পুত্র হাসান (রা.) বিদ্রোহীদের অবরোধকালে উসমান (রা.)-এর বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন এবং এতে আহত হন।[২৩][২১২][১৮৭] অবরোধের সময় আলি (রা.) বিদ্রোহীদেরকে উসমান (রা.)-এর বাড়িতে পানি সরবরাহের অনুমতি দিতে রাজি করিয়েছিলেন।[২০৫][১৮৫]

খিলাফত

[সম্পাদনা]

আলির খিলাফত নির্বাচন (৬৫৬)

[সম্পাদনা]
হযরত আলি (রা.) বাইআত গ্রহণ করছেন, ষোড়শ শতকের শেষভাগে অঙ্কিত চিত্র

৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে হযরত উসমান (রা.) মিশরীয় বিদ্রোহীদের হাতে শাহাদাত বরণ করলে, খিলাফতের জন্য প্রধান দুই দাবিদার হিসেবে হযরত আলি (রা.) এবং হযরত তালহা (রা.)-এর নাম উঠে আসে। উমাইয়ারা মদিনা ত্যাগ করলে নগরীর নিয়ন্ত্রণ প্রাদেশিক বিদ্রোহী ও আনসারদের হাতে চলে যায়। মিশরীয়দের মধ্যে তালহার কিছু সমর্থন থাকলেও, ইরাকের অধিবাসী ও অধিকাংশ আনসার আলির পক্ষে ছিলেন।[১৩০] বেশিরভাগ মুহাজির সাহাবি,[৩৭][১৯৩][২১৩] এবং কিছু প্রভাবশালী গোত্রীয় নেতা তখন আলিকে সমর্থন করছিলেন।[২১৪] এই গোষ্ঠীগুলো আলিকে খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য জোরালো আহ্বান জানায়। কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পর,[১৯৩][৩৭][২৫] আলি সর্বসমক্ষে এই দায়িত্ব গ্রহণে সম্মত হন।[২১৫][২১৬][২১৭] ধারণা করা হয়, মালিক আল-আশতার (রা.) প্রথম ব্যক্তি যিনি আলির হাতে আনুষ্ঠানিক বাইয়াত দান করেন।[২১৭]

হযরত তালহা ও জুবাইর, যারা নিজেরাও খিলাফতের দাবিদার ছিলেন,[২১৮][২১৯] প্রথমে স্বেচ্ছায় বাইয়াত দান করেছিলেন,[২৫][২২০][২১২] কিন্তু পরবর্তীতে তারা তাদের শপথ ভঙ্গ করেন।[২২১][২৫][২২২] আলি সম্ভবত কাউকে জোরপূর্বক বাইয়াত করতে বাধ্য করেননি,[২১৫] যদিও কিছু লোক পরবর্তীতে দাবি করেছিল যে তারা চাপে পড়ে বাইয়াত দান করেছিল।[২২৩] তবে এটা সত্য যে, মদিনায় আলির সমর্থকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় অন্যদের উপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করেছিল।[২২৪]

খিলাফতের বৈধতা

[সম্পাদনা]
হযরত আলি (রা.)-এর বাইআত গ্রহণের আরেকটি চিত্রণ

হযরত উসমান (রা.)-এর শাহাদাতের পর সৃষ্ট শূন্যতা পূরণের জন্য হযরত আলি (রা.) খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[২২৫][১৯৯][২২৬] যদিও তার নির্বাচন আনুষ্ঠানিক শুরা পদ্ধতিতে হয়নি,[১৩০] তবুও মদিনায় এর বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো প্রতিবাদ গড়ে ওঠেনি।[২১১][২২৭][২২৫] তবে বিদ্রোহীদের সমর্থন লাভের কারণে তাকে উসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগের সম্মুখীন হতে হয়।[৩৬] যদিও সাধারণ ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী সহজেই আলির পাশে দাঁড়ায়,[২২৮][২১৮] কিন্তু কুরাইশ গোত্রের প্রভাবশালী অংশের মধ্যে তার সমর্থন সীমিত ছিল, কারণ তাদের অনেকেই নিজেরা খিলাফতের দাবিদার ছিলেন।[২২৯][১৩০]

কুরাইশদের মধ্যে প্রধানত দুটি গোষ্ঠী আলির বিরোধিতা করেছিল: একদিকে উমাইয়া বংশ, যারা উসমান (রা.)-এর পর খিলাফতকে নিজেদের অধিকার মনে করত; অন্যদিকে, যারা আবু বকর (রা.)উমর (রা.)-এর সময়কার নীতির ভিত্তিতে কুরাইশদের নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। এই দ্বিতীয় গোষ্ঠীই কুরাইশদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল।[২২১][২১১] হযরত আলি (রা.) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে নবী পরিবারের সদস্যরা নেতৃত্বের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত অধিকারী,[২৩০][২৩১] যা কুরাইশদের অন্যান্য গোত্রের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে বাধাগ্রস্ত করছিল।[২৩২]

প্রশাসনিক নীতিমালা

[সম্পাদনা]
আরব-সাসানীয় মুদ্রা যা বিশাপুর-এ হযরত আলি (রা.)-এর শাসনকালে মুদ্রিত হয়েছিল। মুদ্রাটিতে আরবিসাসানীয় প্রতীক সংমিশ্রণ দেখা যায়, যেখানে মুকুটধারী দ্বিতীয় খসরু-এর চিত্র, পবিত্র অগ্নিকুণ্ড কেন্দ্রস্থলে, অর্ধচন্দ্র-তারার প্রতীক এবং বিসমিল্লাহ আরবি লিপিতে প্রান্তে খোদাই করা রয়েছে।[২৩৩]

বিচার ব্যবস্থা

[সম্পাদনা]

হযরত আলি (রা.)-এর খিলাফতকাল কঠোর ন্যায়নীতি বাস্তবায়নের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছে।[২৩৪][২৩৫][৩৭] তিনি নবুয়তী যুগের শাসনাদর্শ পুনরুজ্জীবিত করতে গিয়ে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেন,[২৩৬][২৩৭][২৩৮] এবং হযরত উসমান (রা.)-এর নিয়োগকৃত প্রায় সকল প্রাদেশিক শাসককে অপসারণ করেন,[২২৯] যাদেরকে তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত বিবেচনা করতেন।[২৩৯]

রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রাপ্ত সম্পদ হযরত আলি (রা.) মুসলিম জনগণের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন করতেন, যা সরাসরি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসৃত নীতির প্রতিফলন ছিল।[২৪০] তিনি প্রশাসনের সকল স্তরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করেন।[২৪১][২৪২] এই সাম্যবাদী নীতি কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠীকে অসন্তুষ্ট করে, যারা উসমান (রা.)-এর হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার অজুহাতে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।[২৪৩] এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মুয়াবিয়া, যিনি তখন সিরিয়ার প্রাদেশিক শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।[১৮৮]

কিছু ঐতিহাসিক হযরত আলি (রা.)-কে রাজনৈতিক কূটকৌশলের অভাব এবং অতিমাত্রায় অনমনীয়তার জন্য সমালোচনা করেন,[৩৬][২৪৪] অন্যদিকে অনেকে তাকে সত্য ও ন্যায়ের প্রতি অটুট অবস্থানের জন্য প্রশংসা করেন।[২৪৩][২৩৮] তার সমর্থকরা যুক্তি দেখান যে, নবী (সা.)-এর যুগেও অনুরূপ কঠোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল,[২৪৫][২৪৬] এবং ইসলামী ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপস-মীমাংসার সুযোগ নেই। তারা কুরআনের ৬৮:৯ নং আয়াত উদ্ধৃত করেন, যেখানে বলা হয়েছে: "তারা তো এ কামনায় রয়েছে যে আপনি নমনীয় হোন, অতঃপর তারাও নমনীয় হয়ে যাবে।"[২৪৬][২৪৭]

সমসাময়িক গবেষকদের একটি অংশ মনে করেন, হযরত আলি (রা.)-এর গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ কেবল নীতিগত দিক থেকেই নয়, বাস্তব পরিস্থিতির নিরিখেও সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত ছিল।[২১৬][২৪৮][৩৭] বিশেষত জনগণের ন্যায়বিচারের দাবি পূরণের জন্য অজনপ্রিয় গভর্নরদের অপসারণ তার জন্য একমাত্র সম্ভাব্য পথ ছিল।[২১৬]

ধর্মীয় কর্তৃত্ব

[সম্পাদনা]

হযরত আলি (রা.) তাঁর বিভিন্ন জনসভায় প্রদত্ত বক্তৃতায় স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি কেবল মুসলিম উম্মাহর রাজনৈতিক নেতাই নন, বরং একমাত্র বৈধ ধর্মীয় কর্তৃত্বও বটে।[২৪৯] তিনি কুরআন ও সুন্নাহর ব্যাখ্যার একচ্ছত্র অধিকার দাবি করতেন।[২৫০][২৫১] তাঁর একনিষ্ঠ অনুসারীরা তাঁকে ঐশী-নির্দেশিত নেতা হিসেবে বিবেচনা করতেন, যিনি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ন্যায় পূর্ণ আনুগত্য পাওয়ার যোগ্য।[২৫২] তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, আলির প্রতি তাঁদের আধ্যাত্মিক আনুগত্য (উয়ালায়া) সর্বাত্মক ও সর্বব্যাপী, যা কেবল রাজনৈতিক আনুগত্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়।[২৫৩]

প্রায় ৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে আলির একদল অনুসারী প্রকাশ্যে তাঁর প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন ঘোষণা করেন।[২৫৪][২৫৫] তাঁরা আলির প্রতি তাঁদের পূর্ণ আনুগত্যকে ন্যায্যতা প্রদানের জন্য নিম্নোক্ত যুক্তিগুলো উপস্থাপন করতেন: আলির ব্যক্তিগত গুণাবলি ও ইসলামে তাঁর অগ্রগণ্যতা[২৫৬], নবী পরিবারের সদস্য হিসেবে তাঁর মর্যাদা[২৫৭], গাদির খুমের ঐতিহাসিক ঘোষণা[২৫৩]

এই অনুসারীদের অনেকেই নবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর থেকেই আলিকে তাঁর প্রকৃত উত্তরসূরি মনে করতেন,[২৫৮] যা সে সময়কার আরবি কবিতায়ও প্রতিফলিত হয়েছে।[২৫৯][২৬০]

অর্থনৈতিক নীতি

[সম্পাদনা]

হযরত আলি (রা.) প্রাদেশিক রাজস্বের ওপর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ জারির বিরোধিতা করেছিলেন।[২১৪] তিনি অতিরিক্ত কর আদায় বন্ধ করে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ ও রাজস্ব মুসলিম জনগণের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন করতেন,[২১৪][৩৬] যা সরাসরি নবী (সা.) ও হযরত আবু বকর (রা.)-এর নীতির অনুরূপ ছিল।[২৬১][২৪০]

অন্যদিকে, হযরত উমর (রা.) ইসলামে অবদানের ভিত্তিতে রাজস্ব বণ্টন করতেন,[২৬২][২৬৩] আর হযরত উসমান (রা.) স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির জন্য ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন।[১৭৮][২৬৪][১৭৯]

আলির (রা.) এই সাম্যবাদী নীতি তাঁকে নিম্নবিত্ত ও সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির ব্যাপক সমর্থন এনে দেয়, বিশেষত আনসার, কুররাআ (কুরআন বিশেষজ্ঞ) এবং ইরাকের নতুন মুসলিমদের।[২২৮] কিন্তু হযরত তালহা (রা.) ও হযরত যুবাইর (রা.)-এর মতো কুরাইশ বংশীয় ধনী সাহাবিগণ, যারা উসমান (রা.)-এর শাসনামলে প্রচুর সম্পদ অর্জন করেছিলেন,[২৬৫] আলির কঠোর নীতিতে অসন্তুষ্ট হয়ে বিদ্রোহ করেন।[২৬৬][২৪০]

আলি (রা.) এমনকি নিজ আত্মীয়-স্বজনদের জন্যও সরকারি তহবিল থেকে বিশেষ সুবিধা দিতে অস্বীকার করায়[২৬৭][২৬৮] আরও কিছু কুরাইশ নেতা তাঁর বিরোধিতা শুরু করেন।[২৬৯][২৭০] অন্যদিকে, তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মুয়াবিয়া (রা.) সহজেই ঘুষ ও অর্থের বিনিময়ে সমর্থন কিনে নিতেন।[২৭০][২৭১]

হযরত আলি (রা.) তাঁর প্রশাসকদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছিলেন যে কর আদায়ে জনগণের ওপর কোনো প্রকার জবরদস্তি না করা[২৭২], সরকারি তহবিল বণ্টনে দরিদ্রদের অগ্রাধিকার দেওয়া[২৭২], কর আদায়ের চেয়ে কৃষি উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া[২৭৩][২৭৪]

যুদ্ধের নীতি

[সম্পাদনা]

মুসলিম গৃহযুদ্ধের সময় হযরত আলি (রা.) তাঁর সৈন্যদের জন্য কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করেছিলেন। তিনি সৈন্যদের যুদ্ধক্ষেত্রে লুটপাট করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছিলেন[২৭৫], পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তাদের নিয়মিত বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করেছিলেন[২৭৫]। যুদ্ধে বিজয়ের পর তিনি পরাজিত শত্রুদের ক্ষমা প্রদর্শনে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন[২৭৬][২৭৭]। এই দুটি নীতিমালা পরবর্তীতে ইসলামি আইনশাস্ত্রে গৃহীত হয়[২৭৬]

হযরত আলি (রা.) তাঁর সেনাপতি মালিক আল-আশতারকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছিলেন: শান্তির প্রস্তাব অবহেলা না করতে, কোনো চুক্তি লঙ্ঘন না করতে[২৭৮], প্রথমে আক্রমণ না করার নীতি মেনে চলতে[২৭৯]

তিনি সৈন্যদের জন্য বিশেষ আচরণবিধি প্রণয়ন করেছিলেন: বেসামরিক জনগণকে হয়রানি না করতে[২৮০], আহত ও পলায়নপর শত্রুসৈন্য হত্যা না করতে, মৃতদেহ বিকৃত না করতে, অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত বাসস্থানে প্রবেশ না করতে, কোনো প্রকার লুটতরাজ না করতে, নারীদের প্রতি কোনো প্রকার অত্যাচার না করতে।[২৮১]

একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে তিনি বিজয়ের পর নারীদের দাসে পরিণত করার প্রথা নিষিদ্ধ করেছিলেন, যদিও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কিছু অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল[৩৬]সিফফিনের যুদ্ধের সময় মুয়াবিয়ার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় তিনি প্রতিশোধপরায়ণতা থেকে বিরত থাকেন এবং কৌশলগত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও শত্রুদের পানির উৎস ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন[২৮২][২৮৩]

উটের যুদ্ধ

[সম্পাদনা]
Siyer-i nebi পাণ্ডুলিপি থেকে উটের যুদ্ধের চিত্র

হযরত আলি (রা.)-এর খিলাফত গ্রহণের অব্যবহিত পরেই হযরত আয়িশা (রা.) প্রকাশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেন।[২৮৪][২২৯] তিনি মক্কায় গিয়ে হযরত তালহা (রা.) ও হযরত যুবায়ের (রা.)-এর সাথে মিলিত হন,[২৮৫] যারা পূর্বে আলির হাতে বাইআত করলেও পরে তা ভঙ্গ করেন।[২২১][২৫][২২২] এই বিরোধী পক্ষ হযরত উসমান (রা.)-এর হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি তোলে[২৮৬][১৯৯] এবং আলিকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত বলে অভিযুক্ত করে।[৩৭] তারা আলিকে পদত্যাগের দাবি জানায় এবং কুরাইশ নেতাদের একটি পরিষদ গঠন করে নতুন খলিফা নির্বাচনের প্রস্তাব করে।[২৮৭]

ঐতিহাসিকদের মতে, তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্ভবত উসমানের হত্যার প্রতিশোধ নয়, বরং আলিকে ক্ষমতাচ্যুত করাই ছিল।[২৮৮][২৮৯] অথচ এই ব্যক্তিরাই পূর্বে উসমানের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন।[২১২][১৮৯][২৯০][২৯১][২৯২] হেজাজ অঞ্চলে তারা পর্যাপ্ত সমর্থন না পেয়ে[৩৬] বাসরা শহর দখল করে নেয় এবং সেখানে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়।

হযরত আলি (রা.) কুফা থেকে এক বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করেন,[২৯৩] যা পরবর্তীতে তাঁর প্রধান সামরিক শক্তিতে পরিণত হয়। উভয় পক্ষ বাসরার নিকটবর্তী এলাকায় শিবির স্থাপন করে,[২৯৪] এবং প্রতিটি বাহিনীতে প্রায় দশ হাজার সৈন্য ছিল বলে অনুমান করা হয়।[২৯৫] তিন দিনব্যাপী আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর,[২৯৬] উভয় পক্ষ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

যুদ্ধের বিবরণ

[সম্পাদনা]

এই ঐতিহাসিক যুদ্ধটি ৬৫৬ সালের ডিসেম্বর মাসে সংঘটিত হয়েছিল।[২৯৭][২৯৮] বিদ্রোহী বাহিনী প্রথমে আক্রমণ শুরু করে,[২১২][২৯৯] যেখানে আয়িশা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একটি বর্ম দ্বারা সুরক্ষিত বিশেষ হাওদায় (পালকী) অবস্থান করছিলেন, যা একটি লাল বর্ণের উটের পিঠে স্থাপন করা হয়েছিল।[৩০০][৩০১] এই অনন্য দৃশ্যের কারণেই পরবর্তীতে এই যুদ্ধটি "উটের যুদ্ধ" নামে পরিচিতি লাভ করে।

যুদ্ধের সময় খলিফা উসমান (রা.)-এর সচিব মারওয়ান ইবনে হাকাম বিদ্রোহী বাহিনীর মধ্যেই অবস্থান করছিলেন এবং তিনিই তালহা (রা.)-কে হত্যা করেন।[৩০২][৩০৩] অন্যদিকে, প্রখ্যাত সাহাবী ও অভিজ্ঞ যোদ্ধা জুবাইর (রা.) যুদ্ধ শুরুর অল্প সময় পরেই রণক্ষেত্র ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন,[২৯৯][২১২] কিন্তু পরবর্তীতে তাকে ধাওয়া করে হত্যা করা হয়। ইতিহাসবিদগণ মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত থেকে বোঝা যায় যে তিনি এই সংঘর্ষের নৈতিক ভিত্তি নিয়ে গভীরভাবে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন।[২৯৯][২১২]

যুদ্ধের চূড়ান্ত ফলাফল ছিল আলি (রা.)-এর বিজয়।[৩০৪][২১২] বিজয়ের পর তিনি আয়িশাকে পূর্ণ সম্মান[২১২][৩০৫][২১৬] ও নিরাপত্তার সাথে হেজাজে প্রেরণ করেন।[৩০৬][২১২][২৯৭] আলি (রা.) একটি সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা প্রদান করেন[৩০৭], যার মাধ্যমে সমস্ত যুদ্ধবন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয় - এমনকি মারওয়ানকেও এই ক্ষমার আওতায় আনা হয়।[৩০৮][৩০৬] এছাড়াও তিনি নারীদের দাসত্বে নেওয়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং যুদ্ধকালীন সময়ে বাজেয়াপ্তকৃত সকল সম্পত্তি তাদের প্রকৃত মালিকদের ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন।[৩০৯] পরবর্তীতে আলি কুফা শহরে স্থায়ীভাবে অবস্থান নেন,[৩১০] যা ধীরে ধীরে তাঁর শাসনামলের কার্যকর রাজধানীতে পরিণত হয়।[২৯৭][২৮৯]

সিফফিনের যুদ্ধ

[সম্পাদনা]
প্রথম ফিতনার মানচিত্র; সবুজ রঙে আলির নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল; গোলাপি রঙে মুয়াবিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল
তারিখনামা গ্রন্থে চিত্রিত সিফফিনের যুদ্ধে আলি ও মুয়াবিয়ার বাহিনীর মধ্যকার সংঘর্ষ

সিরিয়ার তৎকালীন গভর্নর মুয়াবিয়াকে খলিফা আলি (রা.) প্রশাসনিক দুর্নীতিতে জড়িত ও পদে অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন।[২৩৯] এ কারণে আলি (রা.) তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি মারফত গভর্নর পদ থেকে অপসারণের নির্দেশ দেন।[৩১১][৩১২][৩১৩] এর প্রতিক্রিয়ায় মুয়াবিয়া, যিনি খলিফা উসমান (রা.)-এর চাচাতো ভাইও ছিলেন, সিরিয়া জুড়ে একটি ব্যাপক প্রচারণা চালু করেন। এই প্রচারণায় তিনি আলি (রা.)-কে উসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করেন এবং এজন্য প্রতিশোধ গ্রহণের আহ্বান জানান।[৩১৪][৩১৫][৩১৬]

রাজনৈতিক সমর্থন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মুয়াবিয়া প্রখ্যাত সেনানায়ক আমর ইবনুল আসের সাথে একটি জোট গড়ে তোলেন।[৩১৭] আমর ইবনুল আস ছিলেন একজন সুপরিচিত রণকৌশলবিদ।[৩১৮] তিনি মিশরের গভর্নর পদ আজীবনের জন্য লাভের শর্তে উমাইয়া বাহিনীতে যোগ দেন।[৩১৯] অবশ্য মুয়াবিয়া গোপনে আলি (রা.)-এর কাছে একটি প্রস্তাব পেশ করেছিলেন যে, আলি (রা.) যদি তাকে সিরিয়া ও মিশরের শাসনভার ছেড়ে দেন তবে তিনি আলি (রা.)-এর খিলাফত মেনে নেবেন।[৩২০] কিন্তু আলি (রা.) এই শর্তসাপেক্ষ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।[৩২১]

এ অবস্থায় মুয়াবিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি আলি (রা.)-কে খলিফা উসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে তার পদত্যাগ দাবি করেন। পাশাপাশি তিনি পরবর্তী খলিফা নির্বাচনের জন্য সিরিয়ায় একটি শুরা পরিষদ গঠনের প্রস্তাব দেন।[৩২২] আধুনিক ইতিহাসবিদদের মতে, মুয়াবিয়ার এই প্রতিশোধের দাবি প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতা দখলের একটি কৌশলমাত্র ছিল।[৩২৩][৩২৪][৩২৫][৩২৬][৩২৭][৩২৮]

যুদ্ধের বিবরণ

[সম্পাদনা]

৬৫৭ খ্রিস্টাব্দের গ্রীষ্মকালে আলি (রা.) ও মুয়াবিয়ার বাহিনী ফোরাত নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত সিফফিন নামক স্থানে তাদের সামরিক শিবির স্থাপন করে।[৩২৯] আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, আলি (রা.)-এর বাহিনীতে প্রায় এক লক্ষ সৈন্য ছিল, অন্যদিকে মুয়াবিয়ার বাহিনীর সংখ্যা ছিল প্রায় এক লক্ষ ত্রিশ হাজার।[৩৩০] এই যুদ্ধে আলি (রা.)-এর পক্ষে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর বহুসংখ্যক সাহাবী অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিপরীতে মুয়াবিয়ার বাহিনীতে সাহাবীদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য।[২৩৫][৩৩০]

উভয় পক্ষ কয়েকদিন ধরে শান্তিপূর্ণ আলোচনা চালিয়েও কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি।[১৯৯][৩৩১][৩৭][৩৩২][৩৩৩] অবশেষে ৬৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই, বুধবার মূল যুদ্ধ শুরু হয়[৩২৮][৩২৩] যা টানা তিন দিন ধরে চলতে থাকে এবং শুক্রবার অথবা শনিবার সকালে এর সমাপ্তি ঘটে।[৩৩৪][৩৩১]

ঐতিহাসিকদের মতে, আলি (রা.) প্রথমে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিতে চাননি।[২১৬] কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সামনের কাতারে থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। অন্যদিকে মুয়াবিয়া নিরাপদ দূরত্বে তার তাবু থেকে সেনা পরিচালনা করছিলেন।[৩৩৫][৩৩৬] মুয়াবিয়া আলি (রা.)-এর প্রস্তাবিত দ্বৈত যুদ্ধের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেন।[৩৩৭][৩২৮][৩৩৮]

এই যুদ্ধে আলি (রা.)-এর পক্ষে যুদ্ধরত অবস্থায় বর্ষীয়ান সাহাবী আম্মার ইবনে ইয়াসির শহিদ হন।[৩৩৬] সুন্নি হাদিস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত একটি হাদিসে নবী মুহাম্মদ (সা.) আম্মারের মৃত্যু সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, তাকে al-fi'a al-baghiya (অর্থাৎ বিদ্রোহী ও সত্যবিমুখ গোষ্ঠী) হত্যা করবে, যারা মানুষকে জাহান্নামের দিকে আহ্বান করে।[৩৩৯][৩৩০][৩৩১]

প্রথম ফিতনা

[সম্পাদনা]
রাশিদুন খিলাফতে চার রাশিদুন খলিফার অধীনস্থ এলাকাসমূহ। উক্ত বিভক্ত এলাকাগুলো খলিফা আলির খিলাফতকালীন সময়ের প্রথম ফিতনার সাথে সম্পর্কিত।
  প্রথম ফিতনার সময় রাশিদুন খলিফা আলি ইবনে আবি তালিবের অধীনস্থ এলাকা
  প্রথম ফিতনার সময় মুয়াবিয়ার অধীনস্থ এলাকা
  প্রথম ফিতনার সময় আমর ইবনুল আসের অধীনস্থ এলাকা

উসমান ঘাতক কর্তৃক নিহত হলে অনেক ব্যক্তিবর্গ আলিকে হত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট, একথা বলাবলি করতে থাকে। আলি সরাসরি এ কথা অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে জনগণ তাকে খলিফা নিযুক্ত করতে চাইলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। তবুও জণগণ জোরপূর্বক তাকে খলিফা মনোনীত করে। এরপরেও হত্যার সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে আলির সম্পর্ক বিষয়ে তর্ক বিতর্ক চলতে থাকে। একপর্যায়ে তা চরম আকার ধারণ করতে থাকে এবং আয়িশা ও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। হত্যার প্রতিশোধ নেওবার উদ্দেশ্যে তিনি জনগণের সাথে এক হন এবং বসরার ময়দানে আলির বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজনে শরিক হন। আলির বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে তিনি পেছন থেকে নির্দেশনা ও নেতৃত্ব দেন। ইসলামের ইতিহাসে এ যুদ্ধটি বসরার যুদ্ধ বা উটের যুদ্ধ নামে পরিচিত। যুদ্ধে আলির বিরুদ্ধবাহিনী পরাজিত হয় কিন্তু পরবর্তী ইতিহাসে এ যুদ্ধের প্রভাব ছিল ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী।[৩৪০][যাচাই প্রয়োজন]

কুফায় গুপ্তহত্যা

[সম্পাদনা]
আলি ইবনে আবি তালিবের সমাধি

৪০ হিজরীর ১৯শে রমজান বা ৬৬১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে জানুয়ারি মসজিদে কুফায় নামাজ পড়ার সময় তিনি, খারেজী আব্দুর রহমান ইবনে মুলজাম কর্তৃক হামলার শিকার হন। তিনি নামাজে সেজদা দেওয়ার সময় ইবনে মুলজামের বিষ-মাখানো তরবারী দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হন।Tabatabaei 1979, পৃ. 192 আলি তার পুত্রকে নির্দেশ দেন কেউ যেন খারেজীদের আক্রমণ না করে, তার বদলে তিনি নির্দেশ দেন যে, যদি তিনি বেঁচে যান, তবে যেন ইবনে মুলজামকে ক্ষমা করে দেয়া হয়; আর যদি তিনি মারা যান, তবে ইবনে মুলজামকে যেন নিজ আঘাতের সমতুল্য একটি আঘাত করা হয় (তাতে ইবনে মুলজামের মৃত্যু হোক বা না হোক।)।Kelsay 1993, পৃ. 92 আলি হামলার দুদিন পর ২৯শে জানুয়ারি ৬৬১ খ্রিষ্টাব্দে (২১শে রমজান ৪০ হিজরী) মৃত্যুবরণ করেন। আল-হাসান তার নির্দেশনা অনুযায়ী কিসাস পূর্ণ করেন এবং আলির মৃত্যুর পর ইবনে মুলজামকে সমপরিমাণ শাস্তি প্রদান করেন।

জ্ঞান সাধনা

[সম্পাদনা]

হযরত আলি (রা.) অসাধারণ মেধার অধিকারী ছিলেন। ছোট বেলা থেকেই তিনি ছিলেন জ্ঞান তাপস ও জ্ঞান সাধক। তিনি সর্বদা জ্ঞানচর্চা করতেন। হাদিস, তাফসির,আরবি সাহিত্য ও আরবি ব্যাকরণে তিনি তাঁর যুগের সেরা ব্যাক্তিত্ব ছিলেন। কথিত আছে যে, 'হযরত মুহাম্মদ (স.) হলেন জ্ঞানের শহর, আর আলি হলেন তার দরজা '। তার রচিত 'দিওয়ানে আলি' নামক কাব্য গ্রন্থটি আরবি সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

পারিবারিক জীবন

[সম্পাদনা]

আলির নয়টি স্ত্রী এবং বেশ কিছু উপপত্নীর থেকে চৌদ্দোটি পুত্র ও উনিশটি কন্যা ছিল, তাদের মধ্যে হাসান, হুসাইন এবং মুহাম্মদ ইবনে আল হানাফিয়াহ ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে এবং তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচজন বংশধর রেখে গেছেন।[৩৪১] আলি, মুহাম্মদ(সা)র ছোট মেয়ে ফাতিমার কাছ থেকে চারটি সন্তান ছিলঃ হাসান, হুসাইন, জায়নব এবং উম্মে কুলসুম।

দৃষ্টিভঙ্গি

[সম্পাদনা]

কোরআনে আলির উল্লেখ

[সম্পাদনা]

হযরত আলির রাঃ শানে পবিত্র কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে বলে উলামা কেরাম মনে করেন। ইবনে আসাকির হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে,কোন ব্যক্তির গুণ বর্ণনায় এত অধিক কুরআনের বাণী অবতীর্ণ হয়নি যা হযরত আলি সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস আরও বলেছেন যে,হযরত আলির শানে অনেক ’ আয়াত নাযিল হয়েছে এবং তাঁর গুণাবলি অত্যধিক ও প্রসিদ্ধ। পবিত্র কুরআনের নাযিলকৃত আয়াতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হল :

১. সূরা বাকারার ২০৭ নং আয়াত

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ

"এবং মানুষের মধ্যে এমনও আছে,যে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বিক্রয় করে দেয় এবং আল্লাহ (এরূপ) বান্দাদের প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল।"

সালাবী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার প্রস্তুতি নিলেন সেই সময় হযরত আলিকে তাঁর বিছানায় শুয়ে থাকার নির্দেশ দেন যাতে কাফির-মুশরিকরা মনে করে যে,রাসূল তাঁর নিজ ঘরেই রয়েছেন। আলি (আ.) নির্দ্বিধায় এ নির্দেশ পালন করলে মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন।

সূরা শূরার ২৩ নং আয়াত

قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى

"বল,আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট থেকে আমার নিকটাত্মীয়দের প্রতি ভালবাসা ছাড়া আর কোন প্রতিদান চাই না।"

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকটাত্মীয় আহলে বাইতের সদস্যদের প্রতি ভালবাসা পোষণকে এ আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য ফরয বলে ঘোষণা করেন।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন : যখন এ আয়াত নাযিল হল তখন সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন,হে রাসূলুল্লাহ! আপনার নিকটাত্মীয়,যাদেরকে ভালবাসা আমাদের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে তারা কারা? রাসূল (সা.) বললেন : আলি,ফাতেমা,হাসান ও হুসাইন।

সূরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াত

إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ

"(হে বিশ্বাসিগণ!) তোমাদের অভিভাবক তো কেবল আল্লাহ,তাঁর রাসূল এবং সেই বিশ্বাসীরা যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং রুকু অবস্থায় যাকাত প্রদান করে।"

শীয়া-সুন্নি উভয় মাযহাবের তফসীরকাররা একমত যে,আয়াতটি হযরত আলি (আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে। যেমন ইবনে মারদুইয়া এবং খাতীব বাগদাদী ইবনে আব্বাস সূত্রে এবং তাবরানী ও ইবনে মারদুইয়া আম্মার ইবনে ইয়াসির ও আলি ইবনে আবি তালিব সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি আলি ইবনে আবি তালিব (আ.) সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে যখন তিনি রুকু অবস্থায় যাকাত দেন।

ঘটনাটি এরূপ : একদিন হযরত আলি (আ.) মদীনার মসজিদে নামায পড়ছিলেন। এমন সময় একজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইল। কিন্তু কোন ভিক্ষা না পাওয়ায় সে ফরিয়াদ করল যে,রাসূলের মসজিদ থেকে সে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। এ সময় হযরত আলি রুকু অবস্থায় ছিলেন। তিনি সেই অবস্থায় তাঁর ডান হাতের আঙ্গুল থেকে আংটি খুলে নেওয়ার জন্য ভিক্ষুকের প্রতি ইশারা করেন। ভিক্ষুক তাঁর হাত থেকে আংটি খুলে নেয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে উপরিউক্ত আয়াত নাযিল হয়।

শিয়া দৃষ্টিভঙ্গি

[সম্পাদনা]

আলি রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিকভাবে শিয়া সম্প্রদায়ের নিকট গুরুত্বপূর্ণ। আলি সম্পর্কিত অসংখ্য আত্মজৈবনিক সূত্র প্রায়শই সাম্প্রদায়িক ধারায় পক্ষপাতদুষ্ট, তবে তারা একমত যে তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান, ইসলামের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এবং কোরআনসুন্নাহর অনুসারী ন্যায়পরায়ণ শাসক। আলি ইসলামের চতুর্থ খলিফা হলেও শিয়ারা তাঁকে নবীপরবর্তী প্রথম খলিফা ও ইমাম হিসেবে গণ্য করে। শিয়া মুসলমানেরা আরও বিশ্বাস করে যে, আলি ও অন্য ইমামগণ—যাদের সকলেই মুহাম্মদ(সা)এর পরিবার তথা আহল আল-বাইতের অন্তর্ভুক্ত—হলেন মুহম্মদ(সা)র ন্যায্য উত্তরাধিকারী।

সূফী দৃষ্টিভঙ্গি

[সম্পাদনা]

مظهر العجائب مولى المؤمنين كرم الله وجهه

ইতিহাসলিখনধারা

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

উদ্ধৃতি

[সম্পাদনা]
  1. https://sunnah.com/bukhari:4947
  2. https://www.islamweb.net/ar/fatwa/10967/
  3. https://sunnah.com/nasai:5627
  4. Rahim, Husein A.; Sheriff, Ali Mohamedjaffer (১৯৯৩)। Guidance From Qur'an (ইংরেজি ভাষায়)। Khoja Shia Ithna-asheri Supreme Council। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৭
  5. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Al-Islam নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  6. Shad, Abdur Rahman. Ali Al-Murtaza. Kazi Publications; 1978 1st Edition. Mohiyuddin, Dr. Ata. Ali The Superman. Sh. Muhammad Ashraf Publishers; 1980 1st Edition. Lalljee, Yousuf N. Ali The Magnificent. Ansariyan Publications; January 1981 1st Edition.
  7. Sallaabee, Ali Muhammad। Ali ibn Abi Talib (volume 2)। পৃ. ৬২১। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫
  8. Madelung, Wilferd (১৯৯৭)। The Succession to Muhammad: A Study of the Early CaliphateCambridge University Pressআইএসবিএন ০-৫২১-৬৪৬৯৬-০
  9. Nasr 2006, পৃ. 38
  10. Campo 2009, পৃ. 676
  11. Tabataba'ei 1975, পৃ. 34
  12. Nasr, পৃ. 143–144
  13. 1 2 Sallabi, Dr Ali M (২০১১)। Ali ibn Abi Talib (volume 1)। পৃ. ৫২–৫৩।
  14. Algar, H.। "Al-E Aba"Encyclopædia Iranica। খণ্ড I/৭। পৃ. ৭৪২। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০১৪
  15. Ahl al-Bayt, Encyclopedia of Islam
  16. Momen, Moojan (১৯৮৫)। An Introduction to Shiʻi Islam: The History and Doctrines of Twelver Shiʻism (ইংরেজি ভাষায়)। Yale University Press। পৃ. ১২। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৩০০-০৩৫৩১-৫
  17. Al-Tabataba'i, Muhammad H.; Ṭabāṭabāʼī, Muḥammad Ḥusayn; Tabataba'i, Muhammad Husayn; Al-Taba-Tabai, Muhammad-Husayn; Ṭabāṭabā'ī, Muḥammad Ḥusain al-; al-Ṭabāṭabāʼī, Muḥammad Ḥusayn; Ṭabāṭabā'ī, Sayyid Muḥammad Ḥusayn; Tabatabai, Seyyed Muhammad Husayn (১৯৭৫)। Shiʻite Islam (ইংরেজি ভাষায়)। State University of New York Press। পৃ. ৪০। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮৭৩৯৫-২৭২-৯
  18. Madelung, Wilferd (১৯৯৭)। The Succession to Muhammad: A Study of the Early Caliphate (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। পৃ. ২৬–২৭, ৩০–৪৩, ৩৫৬–৩৬০। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৫২১-৬৪৬৯৬-৩
  19. 1 2 Fedele 2018, পৃ. 56।
  20. Fitzpatrick ও Walker 2014, পৃ. 3।
  21. The encyclopaedia of Islam. Volume I, Volume I, (English ভাষায়)। Leiden; London: E. J. Brill ; Luzac। ১৯৫৪। পৃ. ৩৮১–৩৮৬। আইএসবিএন ৯৭৮-৯০-০৪-০৮১১৪-৭ওসিএলসি 495469456 {{বই উদ্ধৃতি}}: আইএসবিএন / তারিখের অসামঞ্জস্যতা (সাহায্য)উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অচেনা ভাষা (লিঙ্ক)
  22. Biographies of the Prophet's companions and their successors, Ṭabarī, translated by Ella Landau-Tasseron, pp. 37–40, Vol:XXXIX.
  23. 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 Afsaruddin ও Nasr 2023
  24. 1 2 3 4 5 Shah-Kazemi 2015b
  25. 1 2 3 4 5 6 7 8 Gleave 2008
  26. ফয়সাল, ফেরদৌস (৮ মে ২০২৩)। "হজরত আলী (রা.)–র সাহসে এসে মিশেছে পাণ্ডিত্ব"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  27. "পুরুষদের মধ্যে প্রথম মুসলমান আলী ইবনে আবু তালিব (রা.)"দৈনিক প্রথম আলো। ১১ মে ২০২১।
  28. "ইসলাম ধর্ম প্রচারে চার খলিফা"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ৪ ডিসেম্বর ২০২০।
  29. "শত্রুদের প্রতি আলী (রা.)-র সংযত প্রতিবাদ"। ২১ ডিসেম্বর ২০২৩। {{ওয়েব উদ্ধৃতি}}: অজানা প্যারামিটার |ওয়েবস이트= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  30. Razwy, Sayed Ali Asgher। A Restatement of the History of Islam and Muslims। পৃ. ২৭৪–২৭৬।
  31. Tahir-ul-Quadri, Muhammad। The Ghadir Declaration
  32. রাজউই, সৈয়দ আলী আসগর। A Restatement of the History of Islam & Muslims। পৃ. ৫৪–৫৫।
  33. 1 2 3 4 Huart 2012a
  34. Mavani 2013, পৃ. 71, 98।
  35. Abbas 2021, পৃ. 46, 206।
  36. 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 Veccia Vaglieri 2012a
  37. 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 Poonawala 1982
  38. Kassam ও Blomfield 2015
  39. 1 2 3 4 Buehler 2014, পৃ. 186।
  40. Klemm 2005, পৃ. 186।
  41. Qutbuddin 2006, পৃ. 248।
  42. Momen 1985, পৃ. 13–14।
  43. Schmucker 2012
  44. Madelung 1997, পৃ. 16।
  45. Osman 2015, পৃ. 110।
  46. Nasr এবং অন্যান্য 2015, পৃ. 379।
  47. Haider 2014, পৃ. 35।
  48. McAuliffe 2023
  49. Lalani 2006, পৃ. 29।
  50. Mavani 2013, পৃ. 72।
  51. Bill ও Williams 2002, পৃ. 29।
  52. 1 2 Momen 1985, পৃ. 13।
  53. Momen 1985, পৃ. 14।
  54. 1 2 Shah-Kazemi 2014
  55. Miskinzoda 2015, পৃ. 69।
  56. Miskinzoda 2015, পৃ. 76–7।
  57. Shah-Kazemi 2019, পৃ. 46।
  58. Faizer 2006
  59. Donner 2010, পৃ. 72–3।
  60. Arafat 1976
  61. Dakake 2007, পৃ. 34–9।
  62. Mavani 2013, পৃ. 79।
  63. 1 2 3 4 5 6 Amir-Moezzi 2014
  64. 1 2 Momen 1985, পৃ. 16।
  65. 1 2 Mavani 2013, পৃ. 80।
  66. 1 2 3 4 5 Veccia Vaglieri 2012b
  67. Lalani 2000, পৃ. 70–71।
  68. Dakake 2007, পৃ. 34।
  69. Lalani 2000, পৃ. 71।
  70. Dakake 2007, পৃ. 34–7।
  71. Momen 1985, পৃ. 15।
  72. 1 2 3 Veccia Vaglieri 2012d
  73. Jones 2009
  74. Mavani 2013, পৃ. 20।
  75. Dakake 2007, পৃ. 35।
  76. Lalani 2011
  77. Jafri 1979, পৃ. 20।
  78. 1 2 Dakake 2007, পৃ. 45।
  79. Mavani 2013, পৃ. 2।
  80. Dakake 2007, পৃ. 47।
  81. Jafri 1979, পৃ. 21।
  82. Mavani 2013, পৃ. 70।
  83. Dakake 2007, পৃ. 46।
  84. Dakake 2007, পৃ. 44–5।
  85. Lalani 2006, পৃ. 590।
  86. 1 2 Madelung 1997, পৃ. 253।
  87. McHugo 2017, §2.IV।
  88. Dakake 2007, পৃ. 41।
  89. 1 2 Afsaruddin 2013, পৃ. 51।
  90. 1 2 3 4 Jafri 1979, পৃ. 39।
  91. Momen 1985, পৃ. 18।
  92. Madelung 1997, পৃ. 30–2।
  93. Jafri 1979, পৃ. 37।
  94. Madelung 1997, পৃ. 35।
  95. Madelung 1997, পৃ. 31–33।
  96. Momen 1985, পৃ. 18–9।
  97. Madelung 1997, পৃ. 36, 40।
  98. McHugo 2017, §1.III।
  99. Madelung 1997, পৃ. 5।
  100. Mavani 2013, পৃ. 34।
  101. Keaney 2021, §3.1।
  102. 1 2 Walker 2014, পৃ. 3।
  103. Lecomte 2012
  104. Shaban 1971, পৃ. 16।
  105. Khetia 2013, পৃ. 31–2।
  106. 1 2 Madelung 1997, পৃ. 32।
  107. 1 2 Fedele 2018
  108. 1 2 Jafri 1979, পৃ. 40।
  109. Qutbuddin 2006, পৃ. 249।
  110. Cortese ও Calderini 2006, পৃ. 8।
  111. Madelung 1997, পৃ. 43।
  112. Jafri 1979, পৃ. 41।
  113. 1 2 Madelung 1997, পৃ. 43–4।
  114. Jafri 1979, পৃ. 40–1।
  115. Soufi 1997, পৃ. 86।
  116. Khetia 2013, পৃ. 78।
  117. Abbas 2021, পৃ. 98।
  118. Soufi 1997, পৃ. 84–5।
  119. Ayoub 2014, পৃ. 17–20।
  120. Khetia 2013, পৃ. 35।
  121. Soufi 1997, পৃ. 84।
  122. Khetia 2013, পৃ. 38।
  123. Jafri 1979, পৃ. 47।
  124. Madelung 1997, পৃ. 50।
  125. Mavani 2013, পৃ. 116।
  126. Soufi 1997, পৃ. 104–105।
  127. 1 2 Sajjadi 2018
  128. Veccia Vaglieri 2012c
  129. Soufi 1997, পৃ. 100।
  130. 1 2 3 4 Madelung 1997, পৃ. 141।
  131. Momen 1985, পৃ. 19–20।
  132. McHugo 2017, পৃ. 40।
  133. Jafri 1979, পৃ. 44।
  134. Madelung 1997, পৃ. 141, 253।
  135. Mavani 2013, পৃ. 113–114।
  136. Momen 1985, পৃ. 62।
  137. Mavani 2013, পৃ. 114, 117।
  138. Shah-Kazemi 2019, পৃ. 79।
  139. 1 2 3 Anthony 2013
  140. 1 2 Mavani 2013, পৃ. 117।
  141. Aslan 2005, পৃ. 122।
  142. Madelung 1997, পৃ. 42, 52–54, 213–4।
  143. Abbas 2021, পৃ. 94।
  144. 1 2 Jafri 1979, পৃ. 45।
  145. Shah-Kazemi 2019, পৃ. 78।
  146. Shah-Kazemi 2019, পৃ. 81।
  147. Dakake 2007, পৃ. 50।
  148. Jafri 1979, পৃ. 47–48।
  149. Momen 1985, পৃ. 20।
  150. Veccia Vaglieri 2012a, পৃ. 382।
  151. Afsaruddin 2013, পৃ. 32।
  152. Ayoub 2014, পৃ. 32।
  153. Jafri 1979, পৃ. 46।
  154. Glassé 2001, পৃ. 40।
  155. Tabatabai 1975, পৃ. 158।
  156. Abbas 2021, পৃ. 89।
  157. Madelung 1997, পৃ. 22।
  158. Madelung 1997, পৃ. 66–67।
  159. Madelung 1997, পৃ. 62, 65।
  160. Madelung 1997, পৃ. 62–64।
  161. Madelung 1997, পৃ. 67।
  162. Pellat 1983
  163. 1 2 Jafri 1979, পৃ. 50।
  164. Jafri 1979, পৃ. 52।
  165. Ayoub 2014, পৃ. 43।
  166. Madelung 1997, পৃ. 71।
  167. 1 2 3 Jafri 1979, পৃ. 51।
  168. 1 2 3 Momen 1985, পৃ. 21।
  169. 1 2 3 Jafri 1979, পৃ. 54।
  170. Kennedy 2016, পৃ. 60।
  171. Keaney 2021, §3.4।
  172. Shaban 1971, পৃ. 62–63।
  173. Madelung 1997, পৃ. 71–72।
  174. Jafri 1979, পৃ. 52–53।
  175. Abbas 2021, পৃ. 116।
  176. Madelung 1997, পৃ. 68।
  177. Jafri 1979, পৃ. 52–53, 55।
  178. 1 2 Madelung 1997, পৃ. 87।
  179. 1 2 Veccia Vaglieri 1970, পৃ. 67।
  180. Shah-Kazemi 2019, পৃ. 84।
  181. Dakake 2007, পৃ. 52।
  182. Madelung 1997, পৃ. 108, 113।
  183. Jafri 1979, পৃ. 53।
  184. 1 2 Madelung 1997, পৃ. 108।
  185. 1 2 3 Hinds 1972a, পৃ. 467।
  186. Madelung 1997, পৃ. 109।
  187. 1 2 3 Jafri 1979, পৃ. 63।
  188. 1 2 Daftary 2014, পৃ. 30।
  189. 1 2 Madelung 1997, পৃ. 98।
  190. Madelung 1997, পৃ. 100–2।
  191. Jafri 1979, পৃ. 59।
  192. Madelung 1997, পৃ. 107–8।
  193. 1 2 3 4 Momen 1985, পৃ. 22।
  194. Jafri 1979, পৃ. 62।
  195. 1 2 McHugo 2017, পৃ. 49।
  196. Madelung 1997, পৃ. 121।
  197. Madelung 1997, পৃ. 118–9।
  198. Madelung 1997, পৃ. 128।
  199. 1 2 3 4 Anthony 2013, পৃ. 31।
  200. Madelung 1997, পৃ. 111।
  201. Veccia Vaglieri 1970, পৃ. 68।
  202. Madelung 1997, পৃ. 111, 119।
  203. Madelung 1997, পৃ. 122।
  204. Madelung 1997, পৃ. 123।
  205. 1 2 3 4 Madelung 1997, পৃ. 112।
  206. 1 2 Madelung 1997, পৃ. 127।
  207. Levi Della Vida ও Khoury 2012
  208. Madelung 1997, পৃ. 126।
  209. Hinds 1972a
  210. Donner 2010, পৃ. 152।
  211. 1 2 3 Kennedy 2016, পৃ. 65।
  212. 1 2 3 4 5 6 7 8 9 Veccia Vaglieri 2012f
  213. Donner 2010, পৃ. 157।
  214. 1 2 3 Lapidus 2002, পৃ. 56।
  215. 1 2 Ayoub 2014, পৃ. 81।
  216. 1 2 3 4 5 Bahramian 2015
  217. 1 2 Madelung 1997, পৃ. 142–3।
  218. 1 2 Momen 1985, পৃ. 24।
  219. Ayoub 2014, পৃ. 70।
  220. Madelung 1997, পৃ. 143।
  221. 1 2 3 Madelung 1997, পৃ. 147।
  222. 1 2 Jafri 1979, পৃ. 64।
  223. Madelung 1997, পৃ. 144–5।
  224. Madelung 1997, পৃ. 144।
  225. 1 2 Shaban 1971, পৃ. 71।
  226. Ayoub 2014, পৃ. 85।
  227. Veccia Vaglieri 1970, পৃ. 69।
  228. 1 2 Shaban 1971, পৃ. 72।
  229. 1 2 3 Donner 2010, পৃ. 158।
  230. Keaney 2021, §3.5।
  231. Madelung 1997, পৃ. 72।
  232. Abbas 2021, পৃ. 115।
  233. এই মুদ্রা ইয়াজদেগার্দের মৃত্যুর পর (৬৫১ খ্রিস্টাব্দ) প্রচলিত হয়। মুদ্রায় আরব আধিপত্যের চিহ্ন হিসেবে সংক্ষিপ্ত আরবি ধর্মীয় শিলালিপি (বিসমিল্লাহ) যোগ করা হয়, যদিও সাসানীয় সম্রাট দ্বিতীয় খসরুর নাম সংরক্ষিত থাকে। দক্ষিণ ও পূর্ব ইরানের গভর্নর আবদুল্লাহ ইবন আমেরের নামযুক্ত কিছু মুদ্রাও পাওয়া যায়। https://www.iranicaonline.org/articles/arab-sasanian-coins
  234. Madelung 1997, পৃ. 309–10।
  235. 1 2 Momen 1985, পৃ. 25।
  236. Tabatabai 1975, পৃ. 43।
  237. McHugo 2017, পৃ. 53।
  238. 1 2 Ayoub 2014, পৃ. 91।
  239. 1 2 Madelung 1997, পৃ. 148।
  240. 1 2 3 Tabatabai 1975, পৃ. 45।
  241. Shah-Kazemi 2019, পৃ. 105।
  242. Madelung 1997, পৃ. 272।
  243. 1 2 Tabatabai 1975, পৃ. 44।
  244. Madelung 1997, পৃ. 149–50।
  245. Shah-Kazemi 2019, পৃ. 89।
  246. 1 2 Tabatabai 1975, পৃ. 46।
  247. Nasr এবং অন্যান্য 2015, পৃ. 3203।
  248. Shah-Kazemi 2019, পৃ. 89–90।
  249. Madelung 1997, পৃ. 150।
  250. Shaban 1971, পৃ. 72–73।
  251. Mavani 2013, পৃ. 67–68।
  252. Dakake 2007, পৃ. 57।
  253. 1 2 Haider 2014, পৃ. 34।
  254. Dakake 2007, পৃ. 60।
  255. Madelung 1997, পৃ. 251  252।
  256. Dakake 2007, পৃ. 59।
  257. Jafri 1979, পৃ. 71।
  258. Dakake 2007, পৃ. 58–59।
  259. Dakake 2007, পৃ. 262n30।
  260. Jafri 1979, পৃ. 67।
  261. Abbas 2021, পৃ. 133।
  262. Shah-Kazemi 2019, পৃ. 90।
  263. Ayoub 2014, পৃ. 83।
  264. Shah-Kazemi 2019, পৃ. 84, 90।
  265. Jafri 1979, পৃ. 55–6।
  266. Ayoub 2014, পৃ. 94।
  267. Madelung 1997, পৃ. 264।
  268. Shah-Kazemi 2019, পৃ. 105–6।
  269. Ayoub 2014, পৃ. 95।
  270. 1 2 McHugo 2017, পৃ. 64।
  271. Madelung 1997, পৃ. 276।
  272. 1 2 Abbas 2021, পৃ. 153।
  273. Lambton 1991, পৃ. xix, xx।
  274. Abbas 2021, পৃ. 156।
  275. 1 2 Heck 2023
  276. 1 2 Shah-Kazemi 2019, পৃ. 94।
  277. Ayoub 2014, পৃ. 84।
  278. Shah-Kazemi 2019, পৃ. 115।
  279. Ayoub 2014, পৃ. 109।
  280. Ayoub 2014, পৃ. 108।
  281. Ayoub 2014, পৃ. 109–110।
  282. Madelung 1997, পৃ. 227।
  283. Ayoub 2014, পৃ. 111–112।
  284. Ayoub 2014, পৃ. 89।
  285. Madelung 1997, পৃ. 133।
  286. Cappucci 2014, পৃ. 19।
  287. Madelung 1997, পৃ. 157।
  288. Aslan 2005, পৃ. 132।
  289. 1 2 McHugo 2017, §2.II।
  290. Madelung 1997, পৃ. 101।
  291. Madelung 1997, পৃ. 107।
  292. Ayoub 2014, পৃ. 88।
  293. Hinds 1971, পৃ. 361।
  294. Madelung 1997, পৃ. 166।
  295. Hazleton 2009, পৃ. 107।
  296. Madelung 1997, পৃ. 169।
  297. 1 2 3 Donner 2010, পৃ. 159।
  298. Madelung 1997, পৃ. 169–70।
  299. 1 2 3 Madelung 1997, পৃ. 170।
  300. Hazleton 2009, পৃ. 113।
  301. Abbas 2021, পৃ. 139।
  302. Madelung 1997, পৃ. 171–2।
  303. Abbas 2021, পৃ. 140।
  304. Madelung 1997, পৃ. 171।
  305. Madelung 1997, পৃ. 172।
  306. 1 2 Abbas 2021, পৃ. 141।
  307. Hazleton 2009, পৃ. 121।
  308. Madelung 1997, পৃ. 180-1।
  309. Hazleton 2009, পৃ. 122।
  310. Madelung 1997, পৃ. 182।
  311. Madelung 1997, পৃ. 194।
  312. Petersen 1958, পৃ. 165।
  313. Ayoub 2014, পৃ. 97।
  314. Madelung 1997, পৃ. 190।
  315. Abbas 2021, পৃ. 144।
  316. Rahman 1995, পৃ. 58।
  317. Donner 2010, পৃ. 160।
  318. Ayoub 2014, পৃ. 99।
  319. Madelung 1997, পৃ. 196।
  320. Madelung 1997, পৃ. 203।
  321. Madelung 1997, পৃ. 204।
  322. Madelung 1997, পৃ. 204–205।
  323. 1 2 Shah-Kazemi 2014, পৃ. 23।
  324. Shaban 1971, পৃ. 73।
  325. Shah-Kazemi 2019, পৃ. 95–6।
  326. Madelung 1997, পৃ. 186।
  327. Kennedy 2016, পৃ. 66।
  328. 1 2 3 McHugo 2017, 2.III।
  329. Madelung 1997, পৃ. 226।
  330. 1 2 3 Lecker 2012
  331. 1 2 3 Donner 2010, পৃ. 161।
  332. Shaban 1971, পৃ. 75।
  333. Kennedy 2016, পৃ. 67।
  334. Madelung 1997, পৃ. 232।
  335. Hazleton 2009, পৃ. 198।
  336. 1 2 Madelung 1997, পৃ. 234।
  337. Madelung 1997, পৃ. 235।
  338. Ayoub 2014, পৃ. 119।
  339. Abbas 2021, পৃ. 149।
  340. Black 1994, পৃ. 34 ( ইংরেজি ভাষায়)
  341. The encyclopaedia of Islam. Volume I, Volume I, (English ভাষায়)। Leiden; London: E. J. Brill ; Luzac। ১৯৫৪। পৃ. ৩৮৫। আইএসবিএন ৯৭৮-৯০-০৪-০৮১১৪-৭ওসিএলসি 495469456 {{বই উদ্ধৃতি}}: আইএসবিএন / তারিখের অসামঞ্জস্যতা (সাহায্য)উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অচেনা ভাষা (লিঙ্ক)

গ্রন্থসমূহ

[সম্পাদনা]

এনসাইক্লোপিডিয়া

[সম্পাদনা]

এনসাইক্লোপিডিয়া ইরানিকা

[সম্পাদনা]

ইসলামের বিশ্বকোষ

[সম্পাদনা]

এনসাইক্লোপিডিয়া ইসলামা

[সম্পাদনা]

অন্যান্য

[সম্পাদনা]

জার্নাল এবং থিসিস

[সম্পাদনা]

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
আলী
কুরাইশ এর ক্যাডেট শাখা
জন্ম: আনু. ৬০০ মৃত্যু: আনু. ২৮ জানুয়ারি ৬৬১
সুন্নি ইসলাম পদবীসমূহ
পূর্বসূরী
উসমান ইবন আফফান
ইসলামের খলিফা
৪র্থ রাশেদীন

৬৫৬
উত্তরসূরী
হাসান ইবনে আলী
শিয়া ইসলামী পদবীসমূহ
পূর্বসূরী
মুহাম্মাদ
শেষ নবী হিসেবে
বারো ইমাম
জায়েদি ইমাম
কায়সানাইটস ইমাম
বাতিনিয়া ইসমাইলি ইমামগণ

৬৩২–৬৬১
উত্তরসূরী
হাসান ইবনে আলী
ইমাম হিসেবে
Asās/Wāsih
in মুস্তালি ইসমাইলিজম ইসমাইলি

৬৩২–৬৬১
নিজারি ইসমাইলি ইসমাইলি ইমামগণ
৬৩২–৬৬১
উত্তরসূরী
হাসান ইবনে আলী
মুস্তাউদা হিসেবে
উত্তরসূরী
হোসাইন ইবনে আলী
ইমাম হিসেবে
রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
মুহাম্মদ
 TITULAR 
মুহাম্মাদের স্থলাভিষেক
৬৩২–৬৫৬
খেলাফতের নির্বাচন
পূর্বসূরী
উসমান ইবন আফফান
খুলাফায়ে রাশেদীন
৬৫৬–৬৬১
উত্তরসূরী
হাসান ইবনে আলী
উপজাতীয় উপাধি
পূর্বসূরী
আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব
বনু হাশিমের প্রধান
৬৫৩–৬৬১
উত্তরসূরী
?