গাদীর খুমের ভাষণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গাদীর খুমের ভাষণ
Mosque at Johfa.JPG
সৌদি আরবের হেজাজে রাবিগের নিকটবর্তী জহফাতে একটি মসজিদ। এর পার্শ্ববর্তী স্থানে ভাষণটি দেওয়া হয়।
অন্য নামঈদুল গাদীর
পালনকারীশিয়া মুসলিম (এছাড়া কিছু সুফিপন্থী সুন্নি মুসলিম)
ধরনইসলাম
তাৎপর্যমুহম্মদের স্থলাভিষিক্ত হিসাবে আলীর মনোনয়ন; ইসলামের বাণীর পরিপূর্ণতা (শিয়া দৃষ্টিভঙ্গি)
পালননামাজ, উপহার প্রদান, উৎসবমুখর ভোজন, দোয়া নুদবা পাঠ

গাদীর খুমের ভাষণ (আরবি: حَدِيْث ٱلْغَدِيْر‎, প্রতিবর্ণী. Ḥadīth Al-Ghadīr‎; ফার্সি: رویداد غدیر خم‎‎) বলতে নবী মুহাম্মাদ কর্তৃক খুম নামক পুকুরের (আরবি: غَدِيْر خُمّ‎, প্রতিবর্ণী. Ghadīr Khumm‎) পাশে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর অনতিবিলম্ব পূর্বে প্রদত্ত একটি ভাষণকে বোঝানো হয়। শিয়া ঐতিহ্যমতে এই ভাষণে মুহম্মদ আলী ইবনে আবী তালিবকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করেন এবং এর ঠিক পরপরই পবিত্র কুরআনের সর্বশেষ আয়াত [কুরআন ৫:৩] নাজিল হয় যার মাধ্যমে ইসলামকে পরিপূর্ণ দ্বীন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

ঘটনা[সম্পাদনা]

মুসলমানেরা বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পথে গাদীর খুমের ঘটনাটি সংঘটিত হয়। শিয়া বিশ্বাসমতে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পরিবেশনের জন্য নবি মুহাম্মাদের নিকট কুরআনের একটি আয়াত নাজিল হয়। ফলে সবাইকে একত্র করে তিনি একটি দীর্ঘ ভাষণ দেন। ভাষণের এক পর্যায়ে তিনি সেই বিখ্যাত বিবৃতি “মান কুনতু মওলা ফাহাজা আলীউন মওলা”, অর্থাৎ, আমি যার মওলা ছিলাম, আলীও তার মওলা— প্রদান করেন। শিয়ারা এই বাক্যকে মুহম্মদ কর্তৃক আলীকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত মনোনয়ন বলে ব্যাখ্যা করেন, যদিও সুন্নিরা এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন।[২] ধ্রুপদী আরবিতে "মওলা" অর্থ দুইটি, "মিত্র" অথবা "প্রভু"। সুন্নিরা মনে করে, মুহাম্মাদের এই ঘোষণায় শব্দটি "মিত্র" বা "বন্ধু" অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, অর্থাৎ ভাষণটির অর্থ "আমি যার মিত্র ছিলাম, আলীও তার মিত্র"। কিন্তু শিয়া ঐতিহ্যমতে, এখানে শব্দটির অর্থ "প্রভু" বা "নেতা"। সে হিসাবে বক্তব্যটির অর্থ দাঁড়ায়, "আমি যার প্রভু (মুসলমানদের), আলীও তার প্রভু", অর্থাৎ আলী মুসলমানদের নেতা। শিয়ারা মনে করে, মুহাম্মাদ এই বক্তব্যে ভবিষ্যতে মুসলিমদের নেতা বা তার মৃত্যুত্তোর আলীকে খলিফা হিসাবে মনোনীত করেছেন। শিয়া হাদিস অনুসারে এই ভাষণের অনতিবিলম্ব পরে কুরআনের সর্বশেষ আয়াত, অর্থাৎ সূরা আল-মায়িদাহর তৃতীয় আয়াত, নাজিল হয়:

“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার কৃপাকে পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম।”[৩][৪]

গুরুত্ব[সম্পাদনা]

সুন্নি মুসলমানদের নিকট গাদীর খুমের ভাষণের গুরত্ব সামান্যই।[৫] অন্যদিকে শিয়া মুসলমানদের কাছে এটি ইসলামের পরিপূর্ণতা[৬] এবং মহানবী কর্তৃক সরাসরি আলীর স্থলাভিষেক নির্দেশ করে।[৪]হিজরি সন অনুযায়ী প্রতি বছর এই দিনটিকে (১৮ জিলহজ্জ) শিয়া মুসলমানেরা ঈদুল গাদীর হিসেবে উদ্‌যাপন করে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Badruddīn, Amir al-Hussein bin (20th Dhul Hijjah 1429 AH)। The Precious Necklace Regarding Gnosis of the Lord of the Worlds। Imam Rassi Society।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. Tahir-ul-Quadri, Muhammad। The Ghadir Declaration 
  3. [কুরআন ৫:৩]
  4. Razwy, Sayed Ali Asgher। A Restatement of the History of Islam and Muslims। পৃষ্ঠা 274–276। 
  5. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; CampoP257-58 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  6. "Imam Khomeini defined Ghadir as most magnificent feast"। ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮