ইসমাইলি ইমামগণ
ইসমাইলি ইমামগণ (আরবি: أئمة الإسماعيلية; ফার্সি: امامان اسماعیلیه) হলেন শিয়া ইসলামের ইসমাইলি শাখার বিভিন্ন দল-উপদল কর্তৃক স্বীকৃত আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক নেতাগণ। ইসমাইলিদের বিশ্বাসমতে ইমামদের অবশ্যই আহলে বাইতের (নবীপরিবার) সদস্য এবং ফাতেমীয় হতে হবে।[১][২][৩]
প্রারম্ভিক ইমামগণ
[সম্পাদনা]সকল ইসমাইলি উপদল মোটামুটিভাবে জায়েদিদের সাথে প্রথম চার ইমাম এবং দ্বাদশীদের সাথে প্রথম ছয় ইমামকে অভিন্নভাবে স্বীকৃতি দেয়। নিজারি ইসমাইলি এবং মুস্তালি ইসমাইলিদের সপ্তমীদের বিপরীতে সামগ্রিকভাবে ফাতেমীয় ইসমাইলি হিসাবে অবিহিত করা হয়।[৩][৪]
আলী ইবনে হোসেন জয়নুল আবিদীনের পর জায়েদিরা জায়েদ ইবনে আলীকে পরবর্তী ইমাম গণ্য করে, অন্যদিকে ইসমাইলি ও দ্বাদশীরা জায়েদের বড় ভাই মুহম্মদ আল-বাকিরকে পরবর্তী ইমাম বলে বিশ্বাস করে। জাফর আস-সাদিকের পর দ্বাদশীরা মুসা ইবনে জাফরকে পরবর্তী ইমাম হিসাবে বিবেচনা করে, পক্ষান্তরে ইসমাইলিরা জাফরের বড় পুত্র ইসমাইল ইবনে জাফরকে পরবর্তী ইমাম গণ্য করে। সপ্তমী ইসমাইলিরা ইসমাইল বা তাঁর পুত্র মুহম্মদ ইবনে ইসমাইলকে সর্বশেষ ইমাম ও প্রতীক্ষিত মাহদী বলে বিশ্বাস করে।[৫]
সপ্তমী | ফাতিমীয় | ||||
---|---|---|---|---|---|
ওয়াকিফি | করামিতা | মুস্তালি | নিজারি | ব্যক্তি | সময়কাল |
১ | ১ | আসাস | ১ | আলী ইবনে আবী তালিব | (৬৩২–৬৬১) |
২ | ২ | ১ | মুস্তওদা | হাসান ইবনে আলী | (৬৬১–৬৬৯) মুস্তালি |
৩ | ৩ | ২ | ২ | হোসাইন ইবনে আলী | (৬৬৯–৬৮০) (মুস্তালি) (৬৬১–৬৮০) নিজারি |
৪ | ৪ | ৩ | ৩ | আলী ইবনে হোসেন জয়নুল আবিদীন | (৬৮০–৭১৩) |
৫ | ৫ | ৪ | ৪ | মুহম্মদ আল-বাকির | (৭১৩–৭৩৩) |
৬ | ৬ | ৫ | ৫ | জাফর আস-সাদিক | (৭৩৩–৭৫৬) |
৭ (মাহদী) | — | ৬ | ৬ | ইসমাইল ইবনে জাফর | (৭৬৫–৭৭৫) |
— | ৭ (মাহদী) | ৭ | ৭ | মুহম্মদ ইবনে ইসমাইল | (৭৭৫–৮১৩) |
সপ্তমীরা সিরিয়ায় তাদের ঘাঁটি থেকে দাʿঈদের মাধ্যমে তাদের বিশ্বাস প্রচার করেছিল। ৮৯৯ সালে আবদুল্লাহ আল-মাহদী বিল্লাহ নিজেকে “জমানার ইমাম”, মুহম্মদ ইবনে ইসমাইলের চতুর্থ প্রত্যক্ষ বংশধর এবং তাঁর বংশীয় পূর্ববর্তী তিন দাʿঈকে লুক্কায়িত ইমাম হিসাবে ঘোষণা করেন। এর ফলে তাঁর সপ্তমী অনুসারীদের মধ্যে একটি বিভাজন তৈরি হয়। একজন তাঁকে ইমাম হিসাবে স্বীকৃতি দেয়, অন্যদিকে করামিতারা তাঁকে অস্বীকার করে মুহম্মদ ইবনে ইসমাইলকেই অন্তর্হিত ইমাম বলে বিশ্বাস করে। অবশেষে আবদুল্লাহ আল-মাহদী বিল্লাহ মিশর ও পূর্ব মাগরেব অঞ্চল জুড়ে তাঁর সাম্রাজ্য নিয়ে প্রথম ফাতিমীয় খলিফা হয়েছিলেন।[৬] পূর্ব আরব এবং সিরিয়ায় সপ্তমী এবং কিছুকালের জন্য উত্তর ইরানে সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ছিল, কিন্তু সেখানে ধীরে ধীরে ফাতিমীয় ইসমাইলি এবং অন্যান্য শীʿঈ সম্প্রদায়ের দ্বারা তারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল।[৭]
ফাতিমীয়
[সম্পাদনা]ফাতিমীয় এবং এর উত্তরাধিকারী ইসমাইলি রীতিতে ইমামতের নিম্নলিখিত দ্বারা গৃহীত হয়েছিল। তালিকাভুক্ত প্রত্যেক ইমাম মূলধারার বিবরণীতে পূর্ববর্তী ইমামের পুত্র হিসাবে বিবেচিত হন।
- আহমদ আল-ওয়াফী, মৃত্যু ৮২৯, “লুক্কায়িত ইমাম”, ফাতিমীয় ইসমাইলি ঐতিহ্য মোতাবেক মুহম্মদ ইবনে ইসমাইলের পুত্র
- মুহম্মদ আত-তকী, মৃত্যু ৮৪০, “লুক্কায়িত ইমাম”
- রাদী আব্দুল্লাহ, মৃত্যু ৮৮১, “লুক্কায়িত ইমাম”
- আব্দুল্লাহ আল-মাহদী বিল্লাহ, মৃত্যু ৯৩৪, প্রকাশ্যে ইমামতের দাবি করেন, ১ম ফাতিমীয় খলিফা
- আল-কাঈম বি আমরুল্লাহ, মৃত্যু ৯৪৬, ২য় ফাতিমীয় খলিফা
- আল-মনসুর বি নসরুল্লাহ, মৃত্যু ৯৫৩, ৩য় ফাতিমীয় খলিফা
- আল-মুইজ লি দ্বীন উল্লাহ, মৃত্যু ৯৭৫, ৪র্থ ফাতিমীয় খলিফা
- আল-আজিজ বিল্লাহ, মৃত্যু ৯৯৬, ৫ম ফাতিমীয় খলিফা
- আল-হাকিম বি আমরুল্লাহ, ১০২১ সালে অন্তর্ধান, ৬ষ্ঠ ফাতিমীয় খলিফা। দ্রুজ মতাবলম্বীরা সকল ইমামের দৈবতায় বিশ্বাস করে এবং আল-হাকিমের অন্তর্ধানের (দ্রুজ বিশ্বাসমতে অন্তর্হিত মাহদী) পর ইসমাইলিদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
- আজ-জাহির লি ইজাজ দ্বীন উল্লাহ, মৃত্যু ১০৩৬, ৭ম ফাতিমীয় খলিফা
- আল-মুস্তানসির বিল্লাহ, মৃত্যু ১০৯৪, ৮ম ফাতিমীয় খলিফা।
তাঁর মৃত্যুর পরে উত্তরাধিকার নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। রাজপ্রতিনিধি মালিক আল-আফদাল মুস্তানসিরের ছোট ছেলে আল-মুস্তালি বিল্লাহকে সিংহাসনে বসান। মুস্তানসিরের বড় ছেলে নিজার ইবনে আল-মুস্তানসির এতে আপত্তি তোলেন এবং মুস্তালির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু তিনি পরাজিত হয়ে কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। এই বিবাদের ফলে ফাতিমীয় ইসমাইলিরা দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে যা আজ অবধি বিদ্যমান রয়েছে: নিজারি ইসমাইলি ও মুস্তালি ইসমাইলি।[৮]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Ismaʿili". Random House Webster's Unabridged Dictionary.
- ↑ "ISMAʿILISM"।
- ↑ ক খ "Religion of My Ancestors"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২৫।
- ↑ "Early Philosophical Shiism"। Cambridge University Press। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-০১।
- ↑ Daftary, Farhad (২০০৭)। Cambridge University, সম্পাদক। The Isma'ilis: Their History and Doctrines। Cambridge: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 90। আইএসবিএন 978-0-521-42974-0।
- ↑ Halm 1991, পৃ. 23–24, 62–63।
- ↑ Daftary, Farhad (১৯৯৮)। A Short History of the Ismailis। Edinburgh, UK: Edinburgh University Press। পৃষ্ঠা 1–4। আইএসবিএন 0-7486-0687-4।
- ↑ Aga Khan IV ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ নভেম্বর ২০১১ তারিখে
- টেমপ্লেট:Daftary-The Ismailis
- Halm, Heinz (১৯৮৮)। Die Schia। Darmstadt, Germany: Wissenschaftliche Buchgesellschaft। পৃষ্ঠা 193–243। আইএসবিএন 3-534-03136-9।