উটের যুদ্ধ

স্থানাঙ্ক: ৩০°৩০′০০″ উত্তর ৪৭°৪৯′০০″ পূর্ব / ৩০.৫০০০° উত্তর ৪৭.৮১৬৭° পূর্ব / 30.5000; 47.8167
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
উটের যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: প্রথম ফিতনা
তারিখ৭ নভেম্বর ৬৫৬ (13 Jumada Al-Awwal 36 AH)
অবস্থান
ফলাফল খিলাফতে রাশিদা victory
বিবাদমান পক্ষ

খিলাফতে রাশিদা

Aisha's forces and বনু উমাইয়া

সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
Ali ibn Abi Talib
Hasan ibn Ali
Hussein ibn Ali
Malik al-Ashtar
Ammar ibn Yasir
Muhammad ibn Abu Bakr
Abdul-Rahman ibn Abi Bakr
Muslim ibn Aqeel
Harith ibn Rab'i
Jabir ibn Abd-Allah
Muhammad ibn al-Hanafiyyah
Abu Ayyub al-Ansari
Abu Qatada bin Rabyee
Qays ibn Sa'd
Qathm bin Abbas
Abd Allah ibn Abbas
Khuzaima ibn Thabit
Jondab-e-Asadi
Aisha
Talhah 
Muhammad ibn Talha 
Zubayr ibn al-Awam 
Kaab ibn Sur 
Abd Allah ibn al-Zubayr
Marwan I যু. বন্দী
Waleed ibn Uqba যু. বন্দী
Abdullah ibn Safwan ibn Umayya ibn Khalaf
শক্তি
~২০,০০০[৬] ~৩০,০০০[৬]
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি

>৪০০-৫০০[৭]

~৫,০০০[৮][৯]

>২,৫০০[৭]

~১৩,০০০[৮][৯]

৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ যা উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা (Arabic জামালের যুদ্ধ) (জঙ্গে জামাল) বা (English: Battle of the Camel) নামে পরিচিত। এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রাঃ) এর বিরুদ্ধে তালহা-হযরত জুবায়ের (রাঃ)আয়েশা (রাঃ) সম্মলিত যুদ্ধ।[১০]

উসমান হত্যা[সম্পাদনা]

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনে খাত্তাব মৃত্যুবরণ করার পরে ইসলামের তৃতীয় খলিফার দায়িত্ব গ্রহণ করেন উসমান। উসমান এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে। উসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে উসমান অপসারণের দাবী করতে থাকে। উসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।

আলী খেলাফত[সম্পাদনা]

উসমান মৃত্যুবরণের পর ইসলামের চতুর্থ খলিফার দায়িত্ব গ্রহণ করেন আলী ইবনে তালিব। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পরেই সারা মহল থেকে উসমান হত্যার বিচারের দাবী আসে। তালহা ও জুবায়ের আলী এর খিলাফত সমর্থন করেছিল মূলত উসমান হত্যা বিচারের জন্য। এমনকি কিছু কিছু মহল থেকে দাবী উঠে উসমান হত্যাকারীদের দ্রুত মৃত্যুদণ্ড প্রদানের জন্য।

আয়েশা তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহযুবাইর ইবনুল আওয়ামকে সমর্থন করে উসমান হত্যা বিচারের দাবী জানায়। কিছু ঐতিহাসিকের মতে আলীর বিরুদ্ধে আয়েশার কিছু ব্যক্তিগত বিদ্বেষ ছিল যা এই সমর্থনকে প্রান জুগিয়েছিল। কিন্তু আরব বেদুইন ও কৃতদাসরা ইসলামী সাম্রাজ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করতে বিধায় আলী আন্দোলনকারীদের কিছু দিন অপেক্ষা ও শান্ত হতে বলে। এভাবে ধীর্ঘ ৪ মাস অপেক্ষা করার পরেও উসমান হত্যার বিচার হচ্ছিলো না।

যুদ্ধ পূর্ব ঘটনা[সম্পাদনা]

এদিকে আলী খলিফার দায়িত্ব গ্রহণ করেই বিভিন্ন প্রদেশে নতুন নতুন প্রাদেশিক কর্মকর্তা নিয়োগ দান করেন এবং পুরাতন সাহাবাদের পদত্যাগ করতে অনুরোধ করেন।অনেকে আলীর অনুরোধে পদত্যাগ করলেও সিরিয়ার প্রাদেশিক শাসনকর্তা মুয়াবিয়া তার নির্দেশ অমান্য করে এবং পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেন।

উসমান হত্যা বিচারের বিলম্বতা সহ্য না করতে পেরে আয়েশা, তালহা ও জুবায়ের ইরাক মক্কা ও মদিনা থেকে ৩০০০ সৈন্য সংগ্রহ করে বসরার দিকে অগ্রসর হন। ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ অক্টোবর বসরা আক্রমণ করে বসরার শাসক হানিফা বন্দি করেন। হযরত আলী বিদ্রোহকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে না চাইলেও আয়েশা এর বসরা আক্রমণ তাকে অস্ত্রধারন করতে বাধ্য করে। তিনি তখন কাফেলা নিয়ে মুয়াবিয়াকে দমন করতে যাচ্ছিলেন। বসরা আক্রমণের খবর শুনে তিনি যুদ্ধ কাফেলা ঘুরিয়ে বসরার দিকে অগ্রসর হন। তার সাথে পর্যাপ্ত সৈন্য না থাকার কারণে কুফাতে অবস্থান করেন। তিনি কুফাকে রাজধানী করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কুফার জনগণ আলীর পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে আলীর পুত্র হাসানের সহযোগিতায় ১০ হাজার সৈন্য নিয়ে বসরার অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। খলিফা হিসাবে আলী আবারো আয়েশা, তালহা-জুবায়ের কে প্রস্তাব করেন যে, খিলাফতের প্রাথমিক সংকট কেটে গেলেই তিনি উসমান হত্যার বিচার করবেন। এই মর্মে তিনি আয়েশার নিকট "শান্তি প্রস্তাব" করেন।তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা আলী এর প্রস্তাব মেনে নিয়ে শান্তি চুক্তিতে রাজি হন।[১১]

মূল যুদ্ধ ঘটনা[সম্পাদনা]

এদিকে প্রাথমিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন হয়ে গেলে দুষ্কৃতিকারী "ইবনে সাবাহ" এর সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তারা ধারণা করে বসে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে উসমান হত্যা বিচারে তারাই প্রথম শিকার হবে। তাই ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর আশতার, নাখয়ী ইবনে সাওদা সহ তাদের দলের আরো কয়েকজন আলী ও আয়েশা উভয় শিবিরেই আক্রমণ করে। তৃতীয় পক্ষ আক্রমণ করার ফলে দুই পক্ষের মধ্যেই ভুল বোঝাবুঝি হয়। তাদের আঁধারে আক্রমণ হলে ভোর হতেই দুই দলের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। আর এটাই সর্বপ্রথম মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুসলমানের অস্ত্র ধারণ। দুই দলের মধ্যে তুমুলভাবে যুদ্ধ চললেও কোন দলই এই যুদ্ধ চায়নি। বরঞ্চ এটি ছিল তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্রের ফলে একটি ভুল বোঝাবুঝি।

এই যুদ্ধ চলাকালীন সময়েই পুনরায় আলী তালহাজুবায়েরকে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান ও যুদ্ধ বন্ধ করতে অনুরোধ করেন। তারা আলী এর কথা মেনে নিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্র ত্যাগ করে ফেরত যাওয়ার পথে উভয়ই হত্যার স্বীকার হন। যুবায়ের কে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করে আমর বিন জুরমূয।[১২][১৩] আর তালহা জনৈক ব্যক্তির তীরের আঘাতে নিহত হয়। (আল-বিদায়াহ ৭/২৪৭)। ফলে যুদ্ধ সমাপ্ত ঘটে না যুদ্ধ পুনরায় আবারো আয়েশার নেতৃত্বে পুরোদমে চলতে থাকে। এই যুদ্ধে আয়েশা উটের উপরে থেকে পরিচালনা করছিলেন বিধায় এই যুদ্ধ উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ নামে পরিচিত।

ফলাফল[সম্পাদনা]

প্রচণ্ড যুদ্ধের এক পর্যায়ে আয়েশা এর দল পরাজয় বরণ করেন। উভয় দলেই প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আলী মুহাম্মদ সাঃ এর স্ত্রী আয়েশাকে সসন্মানে তার ভাই মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের নিকট মদিনায় পাঠিয়ে দেন। এবং শত্রু পক্ষ এতে খুশি হয়, এবং মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ফাটল তৈরি করে।

ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিকোণ[সম্পাদনা]

ইসলামের প্রথম গৃহ যুদ্ধ হিসাবে এই যুদ্ধের তাৎপর্যতা অনেক বেশি। ঐতিহাসিক মুর বলেন, এই যুদ্ধে প্রায় ১০ হাজারের মত মুসলিম প্রান হারান। এটাই প্রথম যুদ্ধ যেখানে মুসলমান মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে। এর মাধ্যমেই ইসলামের প্রথম গৃহ যুদ্ধ বা ইসলামের প্রথম ফিতনা শুরু হয়। ঐতিহাসিক পি.কে হিট্টি বলেন, এই যুদ্ধের সুদূরপ্রসারী ফলাফল হিসাবে এই যুদ্ধ মুসলমানদের খিলাফতকে দুর্বল করে দিয়েছিল। এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে উসমান হত্যার বিচারের মধ্য দিয়ে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Madelung 1997, pg. 168
  2. Madelung ১৯৯৭, pg. 166
  3. Madelung 1997, pg. ১৭৬-১৭৭
  4. Madelung 1997, pg. 167-8
  5. Crone 1980, pg. 108
  6. https://books.google.com/books?id=axL0Akjxr-YC&pg=PT472
  7. Madelung ১৯৯৭, pg. ১৭৭
  8. Jibouri, Yasin T. Kerbalā and Beyond. Bloomington, IN: Authorhouse, ২০১১. Print. আইএসবিএন ১৪৬৭০২৬১৩১ Pgs. ৩০
  9. Muraj al-Thahab Vol. ৫, Pg. ১৭৭
  10. "উটের যুদ্ধ | বাংলাদেশ প্রতিদিন"Bangladesh Pratidin (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৬ 
  11. রাসুল এই বিপ্লবী জীবন -উটের যুদ্ধ অংশ 
  12. হাকেম হাদিস নং (৫৫৮০) 
  13. আহমাদ হা/৭৯৯ - (সনদ হাসান) 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

পূর্বসূরী
লেভান্তে মুসলমানদের বিজয়
মুসলিম যুদ্ধ
বছরঃ ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দ
উত্তরসূরী
সিফফিনের যুদ্ধ