শিয়া ইসলামের ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শিয়া ইসলাম বা শিয়াবাদ (আরবি: شيعة‎, প্রতিবর্ণীকৃত: Shīʿah‎) হল ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখা। শিয়ারা নবী মুহাম্মাদের শিক্ষা এবং তাঁর পরিবার (যাদের আহলে বাইত বলা হয়) বা বংশধরদের (শিয়া ইমামগণ) ধর্মীয় নির্দেশনা মেনে চলে। মুহাম্মাদের বংশধারা শুধু তাঁর মেয়ে ফাতিমা ও চাচাতো ভাই আলীর মাধ্যমে অব্যাহত রয়েছে। এই দম্পতি এবং তাঁদের দুই পুত্র হাসানহোসেন হলেন আহলে বাইত ও আহলে কিসার অন্তর্ভুক্ত। এতদনুসারে শিয়া মুসলমানরা মুহম্মদের শিক্ষার পাশাপাশি তাঁর বংশধরদেরও হেদায়তের প্রকৃত উৎস বিবেচনা করে। সুন্নি ইসলামের মতো শিয়া ইসলামও নানান সময় নানান শাখায় বিভক্ত হয়েছে; তথাপি বর্তমানে এদের মধ্যে মাত্র তিনটিরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুসারী বিদ্যমান এবং প্রত্যেকটির পৃথক গতিপথ রয়েছে।

রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে শিয়াদের ইতিহাস বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত। প্রথম পর্যায়টি ছিল শিয়াদের উত্থান, যা ৬৩২ সালে মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর শুরু হয় এবং ৬৮০ সালে কারবালার যুদ্ধ অবধি অব্যহত থাকে। এই অংশটি আলী, হাসান ও হোসেনের ইমামতের সঙ্গে সমাপতিত হয়। দ্বিতীয় পর্যায়টি হল মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শিয়াদের একটি আলাদা গোষ্ঠী হিসেবে পৃথকীভবন ও বিভেদ এবং সুন্নি খলিফাদের বিরোধিতা। এই অংশটি কারবালার যুদ্ধের পর থেকে শুরু হয় এবং প্রায় ৯০০ সালের দিকে শিয়া রাষ্ট্রগুলো গঠনের আগ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই অংশে শিয়া মতবাদ বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। তৃতীয় পর্যায়টি হল শিয়া রাষ্ট্রগুলোর সময়কাল। প্রথম শিয়া রাষ্ট্র ছিল মাগরেবের ইদ্রিসীয় রাজবংশ (৭৮০–৯৭৪)। পরবর্তীতে ইরানের উত্তরাঞ্চলে মজান্দারনে (তাবারিস্তান) আলবীয় রাজবংশ (৮৬৪–৯২৮) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই রাজবংশগুলো ছিল স্থানীয়, তবে এদের পর দুটি মহান ও শক্তিশালী রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়। ৯০৯ সালে ইফ্রিকিয়াতে ফাতিমীয় রাজবংশ গঠিত হয়েছিল এবং ১১৭১ সাল পর্যন্ত মাগরেব, মিশরলেভান্তের বিভিন্ন অঞ্চল শাসন করেছিল। ৯৩০ সালে ইরানের উত্তরে দেলমানে বুঈ রাজবংশের আবির্ভাব ঘটেছিল যারা ১০৪৮ সাল পর্যন্ত ইরান ও ইরাকের মধ্য ও পশ্চিম অংশ শাসন করেছিল। ফলস্বরূপ, ১০ম শতকের মাঝামাঝি থেকে ১১শ শতকের মাঝামাঝি সময়কালকে প্রায়শই ইসলামের “শিয়া শতাব্দী” বলা হয়। ইয়েমেনে সাধারণত জায়েদি শাখার বিভিন্ন রাজবংশের ইমামেরা একটি দিব্যতান্ত্রিক রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা ৮৯৭ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল। ইরান, একটি প্রাক্তন সুন্নিগরিষ্ঠ অঞ্চল, ১৬শ ও ১৮শ শতাব্দীর মধ্যে সফবীয় রাজবংশের অধীনে জোরপূর্বক শিয়া ইসলামে ধর্মান্তরকরণের একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল। এই প্রক্রিয়াটি আজকের দিনে শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে জায়েদি ও ইসমাইলি শাখার উপর ইসনা আশারিয়া শাখার আধিপত্যও নিশ্চিত করেছে।[২][৩][৪][৫]

সাকিফা থেকে কারবালা (মুহাম্মাদের উত্তরাধিকারি নির্বাচন)[সম্পাদনা]

মুহাম্মাদ মদিনায় হিজরতের পূর্বে মক্কায় ইসলাম প্রচার করতেন এবং সেখানে আরবের গোত্রগুলোকে একত্রিত করে আরব মুসলিমদের একটি সুসংগঠিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। ৬৩২ সালে মুহাম্মদের মৃত্যুর পর মুসলিম সম্প্রদায়ের পরবর্তী খলিফা বা নেতা কে হবেন এ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। মুহাম্মদের চাচাতো ভাই ও জামাতা আলী ইবনে আবু তালিব এবং নিকটবর্তী পরিবারবর্গ যখন তাঁকে দাফনের জন্য আগে গোসল দিচ্ছিলেন তখন মক্কা ও মদিনার গোত্রীয় নেতারা সাকিফায় এক গোপন সভায় মিলিত হয়েছিলেন মুহাম্মদের পর কে রাষ্ট্রের উত্তরাধিকার হবেন তা নির্ধারণের জন্য। অনেক মোহাজের তথা হিজরতকারিদের ধারণা ছিল মুহাম্মদ আলীকে উত্তরসূরি নির্বাচন করে গেছেন। এ বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করেই সাকিফার গোপন সভাটি অনুুুষ্ঠিত হয়েছিল।

মুহাম্মদে সাহাবী ওমর ইবনে আল-খাত্তব প্রথম ব্যক্তি ছিলেন যিনি আবু বকরকে খলিফা হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন। অন্যান্যরা এ প্রস্তাবে একমত না হলেও অবশেষ আবু বকরকে প্রথম খলিফা হিসেবে মেনে নেয়া হয়।[৬]  

এভাবে মুহাম্মদের উত্তরাধিকার নির্বাচন একটি অত্যন্ত বিতর্কিত বিষয়ে পরিণত হয়। মুসলিমরা এই ইস্যুতে তাদের রাজনৈতিক মনোভাবের ভিত্তিতে শেষ পর্যন্ত দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়, যেখানে শিয়া সম্প্রদায় কর্তৃক আলীকে মুহাম্মদের উত্তরসূরি হিসেবে অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে মুসলিমদের দুটি প্রধান বিভাগ সুন্নি ও শিয়াদের মাঝে প্রথম রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি হয়েছিল। দুটি দলই আবু বকর ও তাঁর পরবর্তী দুজন খলিফা: উমর (বা উমর ইবনুল খাত্তাব) ও উসমান বা ( উসমান ইবনে আফ্ফান) সম্পর্কে আলীর মনোভাব বিষয়ে একমত নন। সুন্নিরা জোর দিয়ে বলেন যে, আলী তাঁদের শাসনের প্রতি স্বীকৃতি ও সমর্থন জানিয়েছিলেন অন্যদিকে শিয়ারা দাবি করেন যে, আলী তাঁদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন এবং তাঁকে মুহাম্মদ কর্তৃক অর্পিত ধর্মীয় দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। সুন্নি মুসলিমরা বলছেন যে, আলী যদি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত যথাযথ উত্তরাধিকারী হতেন, তবে মুসলিম জাতির নেতা হিসেবে আলী কোন ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত এঁদের (আবু বকর, উমর এবং উসমান) সঙ্গে যুদ্ধ করতেন।  তবে শিয়াগণ দাবি করেছেন যে, আলী আবু বকর, উমর বা উসমানের সাথে লড়াই করেন নি, কারণ প্রথমদিকে তাঁর সামরিক শক্তি ছিল না এবং যদি তিনি এ সিদ্ধান্ত নিতেন, তবে তা মুসলিমদের মধ্যে একটি গৃহযুদ্ধের কারণ হয়ে উঠত যারা তখনও পর্যন্ত আরব বিশ্বের একটি নব্য সম্প্রদায়মাত্রই ছিল।[৭]

ভিন্নতা ও স্বাতন্ত্র্য[সম্পাদনা]

শিয়া ও অন্যান্য শাখার বিস্তারভিত্তিক সারণি

মুহাম্মদের মৃত্যুর পরপর খলিফা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত রাজনীতির ফলে শিয়া ইসলাম ও সুন্নি মতবাদ পরস্পর বিভক্ত হয়ে পড়ে। আলীই প্রথম খলিফা হওয়া উচিত ছিল এই বিশ্বাসের কারণে তাঁর পূর্বের তিন খলিফা আবু বকর, উমর এবং উসমানকে শিয়া মতবাদীগণ অবৈধ দখলকারী হিসেবে বিবেচনা করত। এ কারণে এই তিনজন খলিফা (বা তাদের সমর্থকদের) দ্বারা বর্ণিত কোন হাদীস শিয়া হাদীস সংগ্রাহকরা গ্রহণ করেননি। ফলে শিয়াদের গৃহীত হাদীসের সংখ্যা সুন্নী গৃহীত হাদীসের তুলনায় অনেক কম যার মধ্যে অনেকগুলো অগ্রহণযোগ্য হাদিস রয়েছে; যেমন- প্রার্থনা ও বিবাহ সম্পর্কিত হাদিসগুলো ইসলামের অবিচ্ছেদ্য বিষয়াদির আলোকে আলোচনার প্রয়োজন ছিল। 

বিশুদ্ধ হাদিসের বিরোধীতা শিয়াদের ধর্মীয় অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রেখেছে। এছাড়া কোন অবস্থার সুস্পষ্ট হাদীসের অনুপস্থিতিতে শিয়া অনুসারীগণ ইমামদের (নবী পরিবারের সদস্য) বক্তব্য ও আমলকে অন্যান্য পন্থার চেয়ে নবীর হাদীসের মতোই একই মর্যাদা দেন যা ইমামদের আধ্যাত্মিক উত্থানের বিষয়টিকে আরো অকাট্য করে তোলে।[৮][৯]

শিয়া মতবাদ যা ছিল মূলত একটি রাজনৈতিক বিষয় পরবর্তীকালে একটি ধর্মমতে রূপ নেয়। আববাসী যুগে এর স্বাতন্ত্র্য স্বীকৃত হয়। এ সময় প্রকাশ্যে এ মতের চর্চা করারও অনুমতি দেওয়া হয়। ৯৬২ খ্রিস্টাব্দে সার্বজনীনভাবে হোসেনের শাহাদাতবরণ উপলক্ষে শোক প্রকাশ করা হয়। ষোড়শ শতকে যখন সফভি বংশ পারস্যের ক্ষমতায় আসে তখন শিয়া মতবাদ প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনায় প্রচারিত হতে থাকে। সফভি শাসকগণ শিয়া মতবাদকে পারস্যের তথা ইরানের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেন।

বিভিন্ন শাখায় বিভাজন[সম্পাদনা]

পূর্বসূরি ও পারিবারিক বিন্যাস[সম্পাদনা]

কুরাইশ গোত্র
আব্দ মানাফ ইবনে কোয়াসিআতিকাহ বিনতে মুররাহ
আব্দ শামসবাররাহালামুত্তালিবহাশিম
উমাইয়া ইবনে আব্দ শামসআব্দ- আল মুত্তালিব
হার্বআবু আল আসʿআমিনাআবদুল্লাহআবূ তালিবহামযাআল আব্বাস
আবু সুফিয়ান ইবনে হারবআল হাকামআফফান ইবনে আবু আল আসমুহাম্মদ
(পরিবার বিন্যাস)
খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদআলী আল মুর্তজাখাওলাহ বিনতে জাফরআবদুল্লাহ
মুয়াবিয়াহপ্রথম মারওয়ানউসমান ইবনে আফফামরুকাইয়াফাতিমা জাহরামুহাম্মদ ইবনে আল হানাফিয়াহআলী বিন আব্দুল্লাহ
উমাইয়া খিলাফতউসমান ইবনে আবু আল আস হাসান আল মুজতাবাহুসাইন ইবনে আলী
(পরিবার বিন্যাস)
আল মুখতার ইবনে আবু উবায়েদ আল সাকাফি
(আবু আমরাকায়সানি’য়াহ)
মুহাম্মদ "আল ইমাম" (আব্বাসীয়)

বিভাগ ও মাযহাবসমূহ[সম্পাদনা]


কুরাইশ
আব্দ মানাফ
আব্দ শামসহাশিম
উমাইয়াআব্দু আল মুত্তালিব
হারবআব্দুল আসআব্দুল্লাহআবু তালিবআল আব্বাস
মুহাম্মদ
আবু সুফিয়ানআল হাকামআফফানফাতিমাআলীআব্বাসীয় খলিফাগণ
মুয়াবিয়ামারওয়ানউসমানহাসানহুসেইনমুহাম্মদ
ইবনে হানাফিয়া
প্রথম
উমাইয়া খলিফাগণ
পরবর্তী
উমাইয়া খলিফাগণ
উত্তর আফ্রিকার ইদ্রিসিয়গণ,
কিছু জায়েদি ইমাম
'আলী
জয়নুল আবেদিন
কায়সানীয়া শাখা
মুহাম্মদ,
আল বকর
জায়েদ
জাফর,
আস সাদিক
জায়েদী
ইসমাইলমূসা,
আল কাযিম
মিশরে ইসমাইলি ফাতেমীয়
খিলাফত
'আলী,
আর রিদা
ইসমাইলিয় শিয়ামুহাম্মদ,
আল তাকী
'আলী,
আল হাদি
হাসান
আল আশকারি
ইমাম মাহাদি
ইযনাআশারি
(বারো ইমাম)

বারো ইমামের ইতিহাস[সম্পাদনা]

বারো ইমাম বা ইমামিয়াহ নামেও পরিচিত। এটি ৮৫% শিয়া মুসলিমের সমন্বয়ে শিয়া ইসলামের সর্ববৃহৎ শাখা। বারো জন ইমামকে ঐশ্বরিকভাবে নির্ধারিত ধর্মীয় নেতা হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। সেই সাথে সর্বশেষ ইমাম মাহাদী সম্পর্কে বিশ্বাস আছে যে তিনি গুপ্তবাসে আছেন এবং স্বীয় প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পুরায় ফিরে আসবেন। শিয়া ঐতিহ্য অনুযায়ী মাহদীর আগমন ঈসার দ্বিতীয়বার আগমনের সময়কালে ঘটবে এবং তাঁরা দুজনেই দাজ্জালের বিরুদ্ধে পরস্পরকে সহযোগীতা করবেন।

ক্রম ইসলামি চারুলিপি নাম
কুনিয়া
আরবি উপাধি
তুর্কি উপাধি[১০]
জীবনকাল (খ্রিস্টাব্দ)
জীবনকাল (হিজরি)[১১]
জন্মস্থান
ইমামত গ্রহণকালে বয়স মৃত্যুকালে বয়স ইমামতকাল গুরুত্ব মৃত্যুর কারণ ও মৃত্যুস্থল
সমাধি[১২]
ʿআলী ʾইবনে ʾআবী ত়ালিব
ٱلْإِمَام عَلِيّ ٱبْن أَبِي طَالِب عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবুল হ়াসান
أَبُو ٱلْحَسَن
  • আমীরুল মুʾমিনীন
    (أَمِير ٱلْمُؤْمِنِين)
    (বিশ্বাসীদের নেতা)[১৩]
  • আল-মুর্তজ়া
    (ٱلْمُرْتَضَىٰ)
    (প্রিয়জন)
  • আল-ওয়াস়ী
    (ٱلْوَصِيّ)
    (স্থলাভিষিক্ত)
  • আল-ওয়ালী[১৪]
    (ٱلْوَلِيّ)
    (ওয়ালি)
  • আবু তুরাব
    (أَبُو تُرَاب)
    (মাটির পিতা)
  • আসাদুল্লাহ
    (أَسَد الله)
    (আল্লাহর সিংহ)
  • ওয়ালীউল্লাহ[১৫]
    (وَلِيّ الله)
    (আল্লাহর ওয়ালি)
  • মওলা
    (مَوْلَاه)
    (সর্দার, কর্তা, বন্ধু)
  • হয়দর
    (حَيّدَر)
    (সিংহ)
  • উলিল আমর[১৬]
    (أُولِي الْأَمْرِ‌)
    (কর্তৃত্বের অধিকারী)
  • মুশকিল কুশা
    (مُشْکِل کُشَاہ)
    (কষ্ট দূরকারী)
  • নফসে নবী[১৭]
    (نَفْسِ نَبِيّ)
    (নবীর নফস)
  • বাব আল-মদীনাতুল ʿইলম
    (بَابِ ٱلْمَدِيْنَةُ ٱلْعِلْمِ)
    (জ্ঞানের শহরের দরজা)
  • আন-নাসি মাইয়াশরিয়ুন নফসাহুব তিগাআ মরদাতিল্লাহ[১৮]
    (النَّاسِ مَنۡ يَّشۡرِىۡ نَفۡسَهُ ابۡتِغَآءَ مَرۡضَاتِ اللّٰهِ​)
    (যে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজেকে বিকিয়ে দেয়)

  • বিরিঞ্জি আলী
    (Birinci Ali)
    (প্রথম আলী)[১৯]
৬০০–৬৬১[১৩]
২৩ হিজরতপূর্ব–৪০[২০]
মক্কা, হেজাজ[১৩]
৩৩ বছর ৬১ বছর ২৮ বছর মুহম্মদের ﷺ চাচাতো ভাই ও জামাতা। শিয়া বিশ্বাসমতে তিনি ইসলামের পবিত্রতম স্থান কাবার অভ্যন্তরে জন্মগ্রহণকারী একমাত্র ব্যক্তি এবং প্রথম ইসলামগ্রহণকারী পুরুষ। শিয়া মুসলমানেরা তাঁকে মুহম্মদের ﷺ একমাত্র ন্যায্য স্থলাভিষিক্ত এবং প্রথম ইমাম হিসেবে বিবেচনা করে। সুন্নি মুসলমানেরা তাঁকে চতুর্থ রাশিদুন খলিফা হিসেবে গণ্য করে। সুফিবাদের প্রায় সকল তরিকায় তাঁকে উচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়; তরিকাসমূহের সদস্যগণ মুহম্মদ ﷺ পর্যন্ত তাদের সিলসিলা আলীর মাধ্যমে জারি রাখেন।[১৩] রমজান মাসে মসজিদ আল-কুফায় নামাজে সেজদারত অবস্থায় আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিম নামক এক খারিজি গুপ্তঘাতকের বিষাক্ত তরবারির আঘাতে আহত হয়ে বিষক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন।[১৩][২১]
শিয়া বিশ্বাসমতে তাঁকে ইরাকের নাজাফ শহরের ইমাম আলী মসজিদে দাফন করা হয়।
হ়াসান ʾইবনে ʿআলী
ٱلْإِمَام ٱلْحَسَن ٱبْن عَلِيّ عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবু মুহ়ম্মদ
أَبُو مُحَمَّد
  • আল-মুজতবা
    (ٱلْمُجْتَبَىٰ)
    (মনোনীত)
  • আস-সৈয়দ
    (ٱلْسَّيِّد)
    (সর্দার)
  • সৈয়দু শবাবি আহলিল জান্নাহ[২২][২৩]
    (سَيِّدُ شَبَابِ أهْلِ ٱلْجَنَّةِ)
    (জান্নাতি যুবকদের সর্দার)
  • সিবত় আন-নবী
    (سِبْط ٱلنَّبِيّ)
    (নবীর বংশ)

  • ইকিঞ্জি আলী
    (İkinci Ali)
    (দ্বিতীয় আলী)[১৯]
৬২৫–৬৭০[২৪]
৩–৫০[২৫]
মদীনা, হেজাজ[২৪]
৩৯ বছর ৪৭ বছর ৮ বছর তিনি ছিলেন মুহম্মদের ﷺ কন্যা ফাতিমার গর্ভজাত দৌহিত্রদের মধ্যে সবার বড়। হাসান কুফায় তাঁর পিতা আলীর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে নিযুক্ত হন। সাত মাস খলিফা হিসেবে দায়িত্বপালনের পর মুয়াবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ানের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তির ভিত্তিতে তিনি পদত্যাগ করেন।[২৪] মুয়াবিয়ার প্ররোচনায় স্বীয় স্ত্রীর মাধ্যমে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়।[২৬]
তাঁকে মদীনার জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়।
হ়োসাইন ʾইবনে ʿআলী
ٱلْإِمَام ٱلْحُسَيْن ٱبْن عَلِيّ عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবু ʿআব্দুল্লাহ
أَبُو عَبْد ٱللَّٰه
  • আশ-শহীদ[২২]
    (ٱلشّهِيْد)
    (শহীদ)
  • সৈয়দ আশ-শুহাদাʾ[২৭][২৮][২৯]
    (سَيِّد ٱلشُّهَدَاء)
    (শহীদদের সর্দার)
  • সৈয়দু শবাবি আহলিল জান্নাহ[২২][৩০]
    (سَيِّدُ شَبَابِ أَهْلِ ٱلْجَنَّةِ)
    (জান্নাতি যুবকদের সর্দার)
  • আর-রশীদ[২২]
    (ٱلرَّشِيْد)
    (ন্যায়নিষ্ঠ)
  • আত-তাবিঈ লি মর্দাতিল্লাহ[২২]
    (ٱلتَّابِعّ لِي مَرۡضَاتِ اللّٰهِ)
    (দৈব ইচ্ছার অনুসারী)
  • আল-মুবারক[২২]
    (ٱلْمُبَارَك)
    (মহিমান্বিত)
  • আত়-ত়ৈয়িব[২২]
    (ٱلطَّيِّب)
    (বিশুদ্ধ)
  • আল-মজ়লুম
    (ٱلْمَظْلُوم)
    (নিপীড়িত)
  • আল-ওয়াফী[২২]
    (ٱلْوَافِيّ)
    (বিশ্বস্ত)
  • সিবত় আন-নবী
    (سِبْط ٱلنَّبِيّ)
    (নবীর বংশ)

  • উচুঞ্জু আলী
    (Üçüncü Ali)
    (তৃতীয় আলী)[১৯]
৬২৬–৬৮০[৩১]
৪–৬১[৩২]
মদীনা, হেজাজ[৩১]
৪৬ বছর ৫৭ বছর ১১ বছর তিনি ছিলেন মুহম্মদের ﷺ দৌহিত্র, আলীর পুত্র এবং হাসানের ভাই। হোসাইন উমাইয়া শাসক ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার দুঃশাসনের বিরোধিতা করেন। ফলস্রুতিতে তিনি, তাঁর পরিবার ও সহচারীরা কারবালার যুদ্ধে ইয়াজিদের সৈন্যবাহিনী কর্তৃক নির্মমভাবে শহীদ হন। এই ঘটনার পর থেকে হোসাইনের শাহাদতের স্মৃতিচারণ শিয়া আত্মপরিচয়ের একটি কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে ওঠে।[৩১] কারবালার যুদ্ধে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করা হয়।
তাঁকে ইরাকের কারবালার ইমাম হোসেনের মাজারে দাফন করা হয়।[৩১]
ʿআলী ʾইবনে হ়োসাইন
ٱلْإِمَام عَلِيّ ٱبْن ٱلْحُسَيْن ٱلسَّجَّاد عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবু মুহ়ম্মদ
أَبُو مُحَمَّد
  • আস-সাজ্জাদ
    (ٱلسَّجَّاد)
    (অবিচল সেজদাকারী)
  • জ়য়নুল ʿআবেদীন
    (زَيْن ٱلْعَابِدِين)
    (উপাসকদের অলঙ্কার)[৩৩]

  • দর্দুঞ্জু আলী
    (Dördüncü Ali)
    (চতুর্থ আলী)[১৯]
৬৫৮/৬৫৯[৩৩] – ৭১২[৩৪]
৩৮[৩৩]–৯৫[৩৪]
মদীনা, হেজাজ[৩৩]
২৩ বছর ৫৭ বছর ৩৪ বছর সহিফা আস-সাজ্জাদিয়ার রচয়িতা, যা আহল আল-বাইতের স্তোত্র হিসেবে পরিচিত।[৩৪] দুর্বলতাজনিত অসুস্থতার কারণে কারবালার যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। উমাইয়া খলিফা প্রথম আল-ওয়াহিদের নির্দেশে তাঁকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করা হয়।[৩৪]
মদীনার জান্নাতুল বাকিতে তাঁকে দাফন করা হয়।
মুহ়ম্মদ ʾইবনে ʿআলী
ٱلْإِمَام مُحَمَّد ٱبْن عَلِيّ ٱلْبَاقِر عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবু জাʿফর
أَبُو جَعْفَر
  • আল-বাক়ির
    (ٱلبَاقِر)
    (উন্মোচনকারী)[৩৫]

  • বেশিঞ্জি আলী
    (Beşinci Ali)
    (পঞ্চম আলী)[১৯]
৬৭৭–৭৩২[৩৫]
৫৭–১১৪[৩৫]
মদীনা, হেজাজ[৩৫]
৩৮ বছর ৫৭ বছর ১৯ বছর সুন্নিশিয়া উভয় সূত্রমতে তিনি অন্যতম প্রাচীন ও বিশিষ্ট ফিকহশাস্ত্রবিদ ছিলেন যিনি তাঁর জীবদ্দশায় অসংখ্য শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন।[৩৫][৩৬] উমাইয়া খলিফা হিশাম ইবনে আবদুল মালিকের নির্দেশে ইব্রাহীম ইবনে ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল্লাহ কর্তৃক বিষপ্রয়োগে তাঁকে হত্যা করা হয়।[৩৪]
মদীনার জান্নাতুল বাকিতে তাঁকে দাফন করা হয়।
জাʿফর ʾইবনে মুহ়ম্মদ
ٱلْإِمَام جَعْفَر ٱبْن مُحَمَّد ٱلصَّادِق عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবু ʿআব্দুল্লাহ[৩৭]
أَبُو عَبْد ٱللَّٰه
  • আস়-স়াদিক়[৩৮]
    (ٱلصَّادِق)
    (সজ্জন)

  • আলতিঞ্জি আলী
    (Altıncı Ali)
    (ষষ্ঠ আলী)[১৯]
৭০২–৭৬৫[৩৮]
৮৩–১৪৮[৩৮]
মদীনা, হেজাজ[৩৮]
৩১ বছর ৬৫ বছর ৩৪ বছর শিয়া বিশ্বাসমতে তিনি জাফরি মাজহাব এবং দ্বাদশী ধর্মতত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অসংখ্য পণ্ডিতদের শিক্ষাদান করেছিলেন। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে ফিকহশাস্ত্রে আবু হানিফামালিক ইবনে আনাস, কালামশাস্ত্রে ওয়াসিল ইবনে আতা ও হিশাম ইবনে হাকাম, এবং বিজ্ঞানআলকেমিতে জাবির ইবনে হাইয়ান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[৩৮] আব্বাসীয় খলিফা আল-মনসুরের নির্দেশে মদীনায় বিষপ্রয়োগ করে তাঁকে হত্যা করা হয়।[৩৮]
তাঁকে মদীনার জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়।
মুসা ʾইবনে জাʿফর
ٱلْإِمَام مُوسَىٰ ٱبْن جَعْفَر ٱلْكَاظِم عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবুল হ়াসান
أَبُو ٱلْحَسَن ٱلْأَوَّل[৩৯]
  • আল-কাজ়িম[৪০]
    (ٱلْكَاظِم)
    (কারারুদ্ধ)

  • ইয়েদিঞ্জি আলী
    (Yedinci Ali)
    (সপ্তম আলী)[১৯]
৭৪৪–৭৯৯[৪০]
১২৮–১৮৩[৪০]
আল-আবওয়াʿ, হেজাজ[৪০]
২০ বছর ৫৫ বছর ৩৫ বছর তিনি জাফর আস-সাদিকের মৃত্যুর পর ইসমাইলি ও ওয়াকিফি বিচ্ছেদকালীন শিয়া সম্প্রদায়ের নেতা ছিলেন।[৪১] তিনি মধ্যপ্রাচ্যবৃহত্তর খোরাসানের শিয়া মতাবলম্বীদের কাছ থেকে খুমুস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে প্রতিনিধিদের একটি অন্তর্জাল গড়ে তোলেন। তিনি মাহদবী তরিকায় উচ্চ সম্মানে ভূষিত যারা তাঁর মাধ্যমে মুহম্মদ ﷺ অবধি সিলসিলা চিহ্নিত করে থাকে।[৪২] আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশিদের নির্দেশে বাগদাদে তাঁকে কারাবন্দী করা হয় এবং বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করা হয়।
ইরাকের বাগদাদ শহরের কাজিমিয়া শহরতলীর আল-কাজিমিয়া মসজিদের তাঁকে দাফন করা হয়।[৪০]

ʿআলী ʾইবনে মুসা
ٱلْإِمَام عَلِيّ ٱبْن مُوسَىٰ ٱلرِّضَا عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
দ্বিতীয় আবুল হ়াসান
أَبُو ٱلْحَسَن ٱلثَّانِي[৩৯]
  • আর-রিদ়া[৪৩]
    (ٱلرِّضَا)
    (মনোরম)

  • সেকিজ়িঞ্জি আলী
    (Sekizinci Ali)
    (অষ্টম আলী)[১৯]
৭৬৫–৮১৭[৪৩]
১৪৮–২০৩[৪৩]
মদীনা, হেজাজ[৪৩]
৩৫ বছর ৫৫ বছর ২০ বছর আব্বাসীয় খলিফা আল-মামুন তাঁকে যুবরাজ ঘোষণা করেন। তিনি মুসলিম ও অমুসলিম ধর্মীয় পণ্ডিতদের সাথে তাঁর আলোচনার জন্য বিখ্যাত।[৪৩] শিয়া সূত্রমতে আল-মামুনের নির্দেশে পারস্যের মাশহাদে তাঁকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করা হয়৷
তাঁকে ইরানের মাশহাদের ইমাম রেজার মাজারে দাফন করা হয়।[৪৩]
মুহ়ম্মদ ʾইবনে ʿআলী
ٱلْإِمَام مُحَمَّد ٱبْن عَلِيّ ٱلْجَوَّاد عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবু জাʿফর
أَبُو جَعْفَر
  • আল-জওয়াদ[৪৪]
    (ٱلْجَوَّاد)
    (উদার)
  • আত-তক়ী[৪৪]
    (ٱلتَّقِيّ)
    (খোদাভীরু)

  • দোকুজ়ুঞ্জু আলী
    (Dokuzuncu Ali)
    (নবম আলী)[১৯]
৮১০–৮৩৫[৪৪]
১৯৫–২২০[৪৪]
মদীনা, হেজাজ[৪৪]
৮ বছর ২৫ বছর ১৭ বছর আব্বাসীয় খলিফাদের নিপীড়নের মুখেও তাঁর উদারতা ও ধার্মিকতার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। খলিফা আল-মুতাসিমের নির্দেশে আল-মামুনের কন্যা ও স্বীয় স্ত্রীর মাধ্যমে বিষপ্রয়োগ করে তাঁকে হত্যা করা হয়।
তাঁকে ইরাকের বাগদাদ শহরের কাজিমিয়া শহরতলীর আল কাজিমিয়া মসজিদে দাফন করা হয়।[৪৪]
১০ ʿআলী ʾইবনে মুহ়ম্মদ
ٱلْإِمَام عَلِيّ ٱبْن مُحَمَّد ٱلْهَادِي عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
তৃতীয় আবুল হ়াসান
أَبُو ٱلْحَسَن ٱلثَّالِث[৪৫]
  • আল-হাদী[৪৫]
    (ٱلْهَادِي)
    (পথপ্রদর্শক)
  • আন-নক়ী[৪৫]
    (ٱلنَّقِيّ)
    (পবিত্র)

  • ওনুঞ্জু আলী
    (Onuncu Ali)
    (দশম আলী)[১৯]
৮২৭–৮৬৮[৪৫]
২১২–২৫৪[৪৫]
মদীনার নিকটস্থ সুরাইয়া গ্রাম, হেজাজ[৪৫]
৮ বছর ৪২ বছর ৩৪ বছর তিনি শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতিনিধিদের অন্তর্জালকে জোরদার করেন। তিনি তাঁদের নির্দেশনা প্রদান করেন এবং বিনিময়ে বিশ্বাসীদের কাছ থেকে খুমুস জাতীয় আর্থিক অনুদান ও ধর্মীয় প্রতিশ্রুতি লাভ করেন।[৪৫] খলিফা আল-মুতাজের নির্দেশে ইরাকের সামাররায় তাঁকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করা হয়।[৪৬]
তাঁকে ইরাকের সামাররা শহরের আল-আসকারী মসজিদে দাফন করা হয়।
১১ হ়াসান ʾইবনে ʿআলী
ٱلْإِمَام ٱلْحَسَن ٱبْن عَلِيّ ٱلْعَسْكَرِيّ عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবুল মাহদী
أَبُو ٱلْمَهْدِيّ
  • আল-ʿআসকারী[৪৭]
    (ٱلْعَسْكَرِيّ)
    (সামরিক ঘাঁটির নাগরিক)

  • ওনবিরিঞ্জি আলী
    (Onbirinci Ali)
    (একাদশ আলী)[১৯]
৮৪৬–৮৭৪[৪৭]
২৩২–২৬০[৪৭]
মদীনা, হেজাজ[৪৭]
২২ বছর ২৮ বছর ৬ বছর তাঁর পিতার মৃত্যুর পর তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময়ই খলিফা আল-মুতামিদের নজরদারিতে গৃহবন্দী অবস্থায় কাটে। এই সময় শিয়া মুসলমানেরা সংখ্যায় ও শক্তিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের ওপর নিপীড়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়।[৪৮] ইরাকের সামাররায় খলিফা আল-মুতামিদের নির্দেশে বিষপ্রয়োগ করে তাঁকে হত্যা করা হয়।[৪৯]
তাঁকে ইরাকের সামাররা শহরের আল-আসকারী মসজিদে দাফন করা হয়।
১২ মুহ়ম্মদ ʾইবনে হ়াসান
مُحَمَّد ٱبْن ٱلْحَسَن
আবুল ক়াসিম
أَبُو ٱلْقَاسِم

  • ওনিকিঞ্জি আলী
    (Onikinci Ali)
    (দ্বাদশ আলী)[১৯]
৮৬৯–বর্তমান[৫৩]
২৫৫–বর্তমান[৫৩]
সামাররা, ইরাক[৫৩]
৫ বছর অজানা বর্তমান দ্বাদশী শিয়া বিশ্বাসমতে তিনি হলেন বর্তমান ইমাম এবং প্রতীক্ষিত মাহদী, একজন মসীহীয় ব্যক্তিত্ব যিনি নবী ঈসা ইবনে মরিয়মের সঙ্গে শেষ জমানায় আবির্ভূত হবেন। তিনি ইসলামের ন্যায়ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন এবং সমগ্র পৃথিবীতে ন্যায়বিচার ও বিশ্বশান্তি কায়েম করবেন।[৫৪] দ্বাদশী শিয়া তত্ত্বমতে তিনি ৮৭৪ সাল থেকে গয়বত বা সমাবরণে চলে গিয়েছেন এবং আল্লাহর নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এ অবস্থাতেই থাকবেন।[৫৩]

ইসমাইলীয় ইতিহাস[সম্পাদনা]

( দ্রষ্টব্য: কায়সানির ইমাম হানাফিয়াহ আলীর অন্য স্ত্রীর বংশধর ছিলেন ফাতিমাহর নয় ) ইসমাইলীয় শিয়া ইসলামের শাখা এবং এর উপ-বিভাগ: আজ দ্বীন ইসলামের মধ্যে সামগ্রিক জনসংখ্যার প্রায় ১% ইসমাইলীয় শিয়া ইসলামের অনুসারী (১৪-১৮) মিলিয়ন।[৫৫] শিয়া ইসলামের সমগ্র জনসংখ্যার প্রায় ১০% ইসমাইলীয় মাযহাব থেকে তৈরি হয়েছে। ইসমালা-মুস্তালি শাখাগুলি পুরো দ্বীন ইসলামের ০.১% এরও কম এবং সমগ্র ইসমাইলীয় জনসংখ্যার প্রায় ৫% গঠন করেছে। (মুস্তালি-তাইয়বি শাখাগুলো হল দাউদি বোহরা, জাফারি বোহরা, মাকরামী, আলাভি বোহরা, হেবতিয়াহস বোহরা, আতবা-ই-মালাক বোহরা (আতবা-ই-মালেক বদর ও প্রগতিশীল দাউদি)। অন্যদিকে নিজারি ইসমাইলী মাযহাবের জনসংখ্যা মোট ইসমাইলীয় জনসংখ্যার ৯০% এরও বেশি সংখ্যক গঠন করেছে। ইসলামের পুরো দ্বীনের মাঝে দ্রুজদের শতকরা হার মাত্র ০.১%% ফাথাইটস, হাফিজি, কারমতিয়ান এবং সেভেনার্স ইতোমধ্যে বিলুপ্ত ইসমাইলীয় সম্প্রদায় হিসেবে পরিগণিত ।[৫৬][৫৭]

জায়েদিয়াদের ইতিহাস[সম্পাদনা]

জায়েদিয়া বা জায়েদি ইমাম জায়েদ ইবনে আলীর নামে প্রতিষ্ঠিত একটি শিয়া মাজহাব (উপসম্প্রদায়,সমধর্মী দার্শনিক গোষ্ঠী)। জায়েদ ইবন আলী হুসেইন ইবনে আলীর দৌহিত্র এবং চতুর্থ ইমাম আলী ইবনে হুসেনের পুত্র।[৫৮] জায়েদিরা বিশ্বাস করেন যে উম্মাহ বা মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা অবশ্যই ফাতেমীয় হতে হবে: মুহাম্মদের একমাত্র বেঁচে থাকা কন্যা ফাতেমার বংশধরদের মাধ্যমে, যাঁর পুত্ররা ছিলেন হাসান ইবনে আলীহুসেন ইবনে আলী। এই শিয়া গোষ্ঠী নিজেদের জায়েদি হিসেবে পরিচয় দেয় এবং যারা জায়েদ ইবনে আলীর সাথে অস্ত্র নিতে অস্বীকার করেছিল সেসকল শিয়াদের থেকে নিজেদের পৃথক বিবেচনা করে।

অন্যান্য শাখা[সম্পাদনা]

আলাভি[সম্পাদনা]

আলাভি মতবাদ স্থানীয় ইসলামী ঐতিহ্য যার মূল বিশ্বাস হাজী বেখতাশ ভেলির বাতেনি[৫৯] শিক্ষার অনুসরণ করে। হাজী বেখতাশ আলী ও বারো ইমামের শিক্ষা অনুসারে তাঁর শিক্ষার প্রসার করেছিলেন। সুন্নী ও বারো ইমামে বিশ্বাসী শিয়াদের মতো আলাভিদের কোন বিধিবদ্ধ ধর্মীয় মতবাদ নেই এবং এর শিক্ষাও একজন আধ্যাত্মিক গুরু দ্বারা প্রচারিত হয়েছে। আলাভি শিক্ষা অনেকটাই তুর্কি বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সম্পৃক্ত যা প্রচলিত ধর্মমতের বিরুদ্ধে এর ব্যাখ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আলাভিদের বেশিরভাগ পাওয়া যায় তুর্কি কুর্দদের[৬০] মধ্যে যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ থেকে ৩০ শতাংশ।[৬১][৬২] হানাফী সুন্নীদের পরে তারাই তুর্কির দ্বিতীয় বৃহত্তম ইসলামী শাখা।[৬৩]

আলাওয়ী মতবাদ[সম্পাদনা]

শিয়া সাম্রাজ্য[সম্পাদনা]

নিম্নোক্ত চিত্রসমূহ ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য কিছু শিয়া ইসলামী সাম্রাজ্যের উদাহরণ:

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Badruddīn, Amir al-Hussein bin (20th Dhul Hijjah 1429 AH)। The Precious Necklace Regarding Gnosis of the Lord of the Worlds। Imam Rassi Society।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. Arshin Adib-Moghaddam (2017), Psycho-nationalism, Cambridge University Press, p. 40, আইএসবিএন ৯৭৮১১০৮৪২৩০৭৬, Shah Ismail pursued a relentless campaign of forced conversion of the majority Sunni population in Iran to (Twelver) Shia Islam...
  3. Conversion and Islam in the Early Modern Mediterranean: The Lure of the Other, Routledge, 2017, p. 92, আইএসবিএন ৯৭৮১৩১৭১৫৯৭৮০
  4. Islam: Art and Architecture, Könemann, 2004, p. 501, Shah persecuted the philosophers, mystics, and Sufis who had been promoted by his grandfather, and unleashed fanatical campaigns of forcible conversion on Sunnis, Jews, Christians and other religious minorities
  5. Melissa L. Rossi (2008), What Every American Should Know about the Middle East, Penguin, আইএসবিএন ৯৭৮০৪৫২২৮৯৫৯৮, Forced conversion in the Safavid Empire made Persia for the first time dominantly Shia and left a lasting mark: Persia, now Iran, has been dominantly Shia ever since, and for centuries the only country to have a ruling Shia majority.
  6. Chirri, Mohamad Jawad (©1979-©1982)। The brother of the prophet Mohammad (the Imam Ali) : a reconstruction of Islamic history and an extensive research of the Shi-ite school of thought। Detroit, Mich.: Islamic Center of Detroit। আইএসবিএন 0-942778-00-6ওসিএলসি 750822657  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  7. Bukhārī, Muḥammad ibn Ismāʿīl (২০১৯)। Sahih Bukhari। Syed Zainul-Aabideen Waliyyullah Shah। Farnham। আইএসবিএন 978-1-84880-409-8ওসিএলসি 1232084440 
  8. Alkhateeb, Firas (২০১৪)। Lost Islamic history : reclaiming Muslim civilisation from the past। London: Hurst। আইএসবিএন 978-1-84904-397-7ওসিএলসি 870284870 
  9. Fisher, Sydney Nettleton (২০০৪)। The Middle East : a history। William Ochsenwald (6th ed সংস্করণ)। Boston, Mass.: McGraw-Hill। আইএসবিএন 0-07-244233-6ওসিএলসি 51336562 
  10. The Imam's Arabic titles are used by the majority of Twelver Shia who use Arabic as a liturgical language, including the Usooli, Akhbari, Shaykhi, and to a lesser extent Alawi. Turkish titles are generally used by Alevi, a fringe Twelver group, who make up around 10% of the world Shia population. The titles for each Imam literally translate as "First Ali", "Second Ali", and so forth. Encyclopedia of the Modern Middle East and North Africa। Gale Group। ২০০৪। আইএসবিএন 978-0-02-865769-1 
  11. The abbreviation CE refers to the Common Era solar calendar, while AH refers to the Islamic Hijri lunar calendar.
  12. Except Twelfth Imam
  13. Nasr, Seyyed Hossein"Ali"Encyclopædia Britannica Online। ২০০৭-১০-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-১২ 
  14. [কুরআন ৫:৫৫]
  15. [কুরআন ৫:৫৫]
  16. [কুরআন ৪:৫৯]
  17. [কুরআন ৩:৬১]
  18. [কুরআন ২:২০৭]
  19. Encyclopedia of the Modern Middle East and North Africa। Gale Group। ২০০৪। আইএসবিএন 978-0-02-865769-1 
  20. Tabatabae (1979), pp.190–192
  21. Tabatabae (1979), p.192
  22. al-Qarashi, Baqir Shareef (২০০৭)। The life of Imam Husain। Qum: Ansariyan Publications। পৃষ্ঠা 58। 
  23. Tirmidhi, Vol. II, p. 221 ; تاريخ الخلفاء، ص189 [History of the Caliphs]
  24. Madelung, Wilferd"ḤASAN B. ʿALI B. ABI ṬĀLEB"Encyclopaedia Iranica। ২০১৪-০১-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৭-০৬ 
  25. Tabatabae (1979), pp.194–195
  26. Tabatabae (1979), p.195
  27. A Brief History of The Fourteen Infallibles। Qum: Ansariyan Publications। ২০০৪। পৃষ্ঠা 95। 
  28. Kitab al-Irshad। পৃষ্ঠা 198। 
  29. Nakash, Yitzhak (১ জানুয়ারি ১৯৯৩)। "An Attempt To Trace the Origin of the Rituals of Āshurā¸"। Die Welt des Islams33 (2): 161–181। ডিওআই:10.1163/157006093X00063 
  30. Tirmidhi, Vol. II, p. 221 ; تاريخ الخلفاء، ص189 [History of the Caliphs]
  31. Madelung, Wilferd। "ḤOSAYN B. ʿALI"Encyclopaedia Iranica। ২০১১-০৪-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-২৩ 
  32. Tabatabae (1979), pp.196–199
  33. Madelung, Wilferd"ʿALĪ B. ḤOSAYN B. ʿALĪ B. ABĪ ṬĀLEB, ZAYN-AL-ʿĀBEDĪN"Encyclopaedia Iranica। ২০১৭-০৮-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-০৮ 
  34. Tabatabae (1979), p.202
  35. Madelung, Wilferd"BĀQER, ABŪ JAʿFAR MOḤAMMAD"Encyclopaedia Iranica। ২০১১-০৪-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-০৮ 
  36. Tabatabae (1979), p.203
  37. "JAʿFAR AL-ṢĀDEQ, ABU ʿABD-ALLĀH"Encyclopaedia Iranica। ২০১৮-১০-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৭-০৭ 
  38. Tabatabae (1979), p.203–204
  39. Madelung, Wilferd"ʿALĪ AL-REŻĀ"Encyclopaedia Iranica। ২০১২-০৯-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-০৯ 
  40. Tabatabae (1979), p.205
  41. Tabatabae (1979) p. 78
  42. Sachedina 1988, পৃ. 53–54
  43. Tabatabae (1979), pp.205–207
  44. Tabatabae (1979), p. 207
  45. Madelung, Wilferd"ʿALĪ AL-HĀDĪ"Encyclopaedia Iranica। ২০১৫-১১-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-০৮ 
  46. Tabatabae (1979), pp.208–209
  47. Halm, H। "ʿASKARĪ"Encyclopaedia Iranica। ২০১১-০৪-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-০৮ 
  48. Tabatabae (1979) pp. 209–210
  49. Tabatabae (1979), pp.209–210
  50. "THE CONCEPT OF MAHDI IN TWELVER SHIʿISM"Encyclopaedia Iranica। ২০১১-০৪-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৭-০৭ 
  51. "ḠAYBA"Encyclopaedia Iranica। ২০১৪-০৮-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৭-০৭ 
  52. "Muhammad al-Mahdi al-Hujjah"Encyclopædia Britannica Online। ২০০৭-১০-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-০৮ 
  53. Tabatabae (1979), pp.210–211
  54. Tabatabae (1979), pp. 211–214
  55. publisher., Pew Forum on Religion & Public Life, issuing body. Pew Research Center,। Mapping the global Muslim population : a report on the size and distribution of the world's Muslim population। পৃষ্ঠা Of the total Muslim population, 11–12% are Shia Muslims and 87–88% are Sunni Muslim। ওসিএলসি 456086572 
  56. Podiotis, Panagiotis (২০২০)। "Sentiment Analysis of the CIA World Factbook"SSRN Electronic Journalআইএসএসএন 1556-5068ডিওআই:10.2139/ssrn.3721400 
  57. publisher., Pew Forum on Religion & Public Life, issuing body. Pew Research Center,। Mapping the global Muslim population : a report on the size and distribution of the world's Muslim populationওসিএলসি 456086572 
  58. The Middle East and North Africa, 2003.। London: Europa। ২০০২। আইএসবিএন 1-85743-132-4ওসিএলসি 59464608 
  59. "BĀṬEN"Encyclopaedia Iranica Online। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-২৫ 
  60. University, Harvard, সম্পাদক (২০১১-১২-৩১)। "General Catalogue of the Divinity School of Harvard University"ডিওআই:10.31826/9781463227975 
  61. Barkey, Henri J. (১৯৯৮)। Turkey's Kurdish question। Graham E. Fuller। Lanham, Md.: Rowman & Littlefield Publishers। আইএসবিএন 0-585-17773-2ওসিএলসি 44955496 
  62. Özyürek, Esra (2009-06)। ""The Light of the Alevi Fire Was Lit in Germany and then Spread to Turkey": A Transnational Debate on the Boundaries of Islam"Turkish Studies10 (2): 233–253। আইএসএসএন 1468-3849ডিওআই:10.1080/14683840902864028  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  63. The Alevis in Turkey and Europe। Routledge। ২০১২-১০-১২। পৃষ্ঠা 13–22। আইএসবিএন 978-0-203-11124-6 

গ্রন্থসূত্র[সম্পাদনা]

• Holt, P. M.; Bernard Lewis (1977a). Cambridge History of Islam, Vol. 1. Cambridge University Press. ISBN 0521291364

• Lapidus, Ira (2002). A History of Islamic Societies (2nd ed.). Cambridge University Press. ISBN 978-0521779333.

• Madelung, Wilferd (1996). The Succession to Muhammad: A Study of the Early Caliphate. Cambridge University Press. ISBN 0521646960.

• Tabatabae, Sayyid Mohammad Hosayn (1979). Shi'ite Islam. Seyyed Hossein Nasr (trans.). Suny press. ISBN 0-87395-272-3.