ইসমাইলি সপ্তস্তম্ভ

ইসমাঈলী শিয়াদের নিজারি,দ্রুজ এবং মুসতায়ালি গোত্রত্রয় মনে করে ইসলামের স্তম্ভ সাতটি । তারা শাহাদাহ বা সাক্ষ্য দেওয়া ইসলামের স্তম্ভ মনে করে না বরং তারা ভাবে এর ওপর ইসলামের বাকিসব স্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে । [১]
সাত স্তম্ভ
[সম্পাদনা]১) ওয়ালি বা অভিভাবকত্বঃ যা দ্বারা আল্লাহ,রাসূল,ধর্মগ্রন্থ,ইমাম এবং ধর্ম প্রচারকদের প্রতি প্রেম এবং আনুগত্য বুঝায় । ইসমাঈলী মতবাদ অনুসারে, আল্লাহ একক এবং অদ্বিতীয়। তিনিই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। আল্লাহর মনোনীত দূতগণ বিশ্বাসীদের সঠিক রাস্তায় নিয়ে যায় ।দ্রুজরা একে "তাসলিম" বলে।
২) তাহরা বা শুদ্ধতাঃ ইসমাঈলীরা সবচেয়ে বেশি জোর দেয় শুদ্ধতা এবং এ সম্পর্কীয় কাজের ওপর। নিজারিরা এই স্তম্ভকে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে মন, আত্মা এবং ধর্ম কাজের শুদ্ধতার জন্য চেষ্টা করে। মুসতায়ালিরা প্রার্থনা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য এটি ব্যবহার করে।
৩) নামাযঃ নিজারিরা মনে করেন নামযের পদ্ধতি নির্ভর করে যুগের ইমামের ওপর। এই কারণে তারা নামায কে বলে দুয়া এবং তারা এইভাবে দিনে তিনবার দুয়া করে। এই তিন সময় হলো সূর্যোদয়, সূর্যাস্তের পুর্বে এবং সূর্যাস্তের পরে। অন্যদিকে মুসতায়ালিরা দিনে পাঁচ বার নামায আদায় করে যেমনটা করে বারো ইমামীয়ারা। দ্রুজরা মনে করে নামযের অর্থ "sidqu l-lisān" এর মানে সত্য কথা বলা (আল্লাহ সম্পর্কে )। তারা পাঁচ বার নামাযে বিশ্বাসী না। তারা মাঝে মাঝে নামায পড়ে শেখার জন্য। এরকম ভাবে নামায পড়ার আর একটি কারণ হলো তাক্বিয়া।
৪) জাকাত বা দানঃ দ্রুজরা ব্যতীত সকল ইসমাঈলীরা জাকাত আদায় করে। দ্রুজরা বছর শেষে জমাকৃত সম্পদের এক অষ্টমাংশ তারা জাকাত হিসেবে দান করে দেয়। আর বাকি ইসমাঈলীরা মাসিক আয়ের ১২.৫% (আয়কর,খরচ ইত্যাদির পর অবশিষ্টাংশ ) সম্পদ তাদের ইমামকে জাকাত এবং খুমস হিসেবে দিয়ে দেয়। এই সম্পদ কেন্দ্রীয় অর্থভান্ডারে গিয়ে জমা হয় এবং বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে তা খরচ হয়। যেমন,এই অর্থ ''আগা খান বিশ্ববিদ্যালয়'',''আগা খান সাস্থ্য সংস্থা'' এবং ''আগা খান জাদুঘরে'' খরচ করা হয়। এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান ''আগা খান ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। যা পৃথিবীর অন্যতম বড় জনকল্যাণমূলক সংস্থা। ইসমাঈলী সংগঠন পৃথিবীর প্রায় ২৫ টি দেশে কাজ করে। তাদের পরস্পরের মধ্যে আর্থিক, ব্যবসায়িক এবং উন্নতিমূলক সহ-কার্যক্রম রয়েছে। তারা প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন ইউরো সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক খাতে খরচ করেছে।[২] তারা মনে করে যে মুহাম্মাদ অতীতে এইভাবেই জাকাত গ্রহণ করতেন। বর্তমানে যেহেতু নবি নেই, তাই এই দায়িত্ব এখন ইমামের ওপর বর্তায়।
৫) সিয়াম বা রোজা : নিজারি এবং মুসতায়ালি সিয়াম শব্দের রূপক এবং শাব্দিক-উভয় অর্থই গ্রহণ করে। শাব্দিক অর্থে তার বুঝে যে রোজা রাখা সবার জন্য বাধ্যতামূলক, বিশেষত রমাজান মাসে। আর রূপক অর্থে বুঝে ঐশ্যরিক সত্য নিজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করা এবং এই লক্ষ্য অর্জনে বা বাধা দেয় এমন কাজ থেকে দূরে থাকা। ইসমাঈলীরা মনে করে রোজার আসল এবং প্রকৃত অর্থ হলো সমস্ত খারাপ কাজ ত্যাগ করা এবং ভালো কাজে মনোনিবেশ করা।
৬) হজ্জ্ব বা তীর্থযাত্রা : ইসমাঈলীদের জন্য ইমাম অথবা তার প্রতিনিধিদের কাছে সফর করা অত্যন্ত আকাংখিত একটি ঘটনা। তাদের তীর্থযাত্রা দুইটি, হজ্জ্ব-এ-জাহিরি এবং হজ্জ্ব-এ-বাতিনি ।প্রথমটি প্রকাশ্য প্রথমতির জন্য মক্কায় যেতে হয় এবং অপরটির জন্য যেতে হয় যুগের ইমামের কাছে। এবং অপরটি গুপ্ত। মুসতায়ালিরাও মক্কায় যায় হজ্জ্ব করতে। তবে দ্রুজরা কমই যায় মক্কায়।[৩]
৭) জিহাদ বা সংগ্রাম: ইসমাঈলীরা জিহাদের দুইটি অর্থ মনে করে। একটি ছোট জিহাদ যা ধর্মের দুশমনদের সাথে করা হয়। অপরটি করা হয় নিজের মনের খারাপ বাসনার বিরুদ্ধে।
দ্রুজদের তালিকা
[সম্পাদনা]দ্রুজদের মতে স্তম্ভের ক্রমবিন্যাস নিম্নের মত হয় ।
১) তাসলিম বা আনুগত্য ।
৩)সত্য কথা বলা
৪) বিশ্বাসি ভাইকে রক্ষা করা
৫) সিয়াম বা রোজা রাখা
৬) হজ্জ্ব করা
৭) রিদা বা পাপকর্ম থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে শান্তি অর্জন করা ।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- Sunni Five Pillars of Islam and Six articles of belief and Sixth pillar of Islam.
- Shi'a twelvers Roots of Religion and Branches of Religion
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Ismāʿīlī fīqh (jurisprudence)
- ↑ [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ জুলাই ২০১৮ তারিখে)'
- ↑ "Isma'ilism"। ২০১৭-০১-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২৪।