দ্বিতীয় ফিতনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দ্বিতীয় ফিতনা
মূল যুদ্ধ: মুসলিম গৃহযুদ্ধ
Second Fitna Territorial Control Map ca 686.svg
যুদ্ধচলাকালীন নিয়ন্ত্রণ অঞ্চল
তারিখ৬৮০–৬৯২
অবস্থান
ফলাফল উমাইয়াদের বিজয়
বিবাদমান পক্ষ
উমাইয়া খিলাফত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের আলি বংশ
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
প্রথম ইয়াজিদ
উমর ইবনে সাদ
প্রথম মারওয়ান
আবদুল মালিক
উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ
হাজ্জাজ বিন ইউসুফ
আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের
মুসাব ইবনে জুবায়ের

হুসাইন ইবনে আলি
আব্বাস ইবনে আলি
আল মুখতার

দ্বিতীয় ফিতনা বা দ্বিতীয় মুসলিম গৃহযুদ্ধ ছিল উমাইয়া খিলাফতের প্রথমদিকে সংঘটিত রাজনৈতিক ও সামরিক বিশৃঙ্খলা। প্রথম উমাইয়া খলিফা প্রথম মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ইতিহাসবিদরা মতভেদে ৬৮০ বা ৬৮৩ সালকে এর সূচনা এবং ৬৮৫ থেকে ৬৯২ সালের মধ্যে এর সমাপ্তি বিবেচনা করেন। এসময় কারবালার যুদ্ধআবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়েরের বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।

বিস্তারিত[সম্পাদনা]

বিদ্রোহের শুরু ও শেষ হওয়ার সময় নিয়ে মতপার্থক্য আছে। কেউ কেউ ৬৮০ সালে প্রথম মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পরের সময় থেকে এর সূচনা ধরেন। অন্য মতে তার পুত্র খলিফা প্রথম ইয়াজিদের মৃত্যুর বছর ৬৮৩ কে সূচনা ধরা হয়। সমাপ্তিকাল ৬৮৫ (খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের অভিষেক) থেকে ৬৯২ (আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের মৃত্যু ও তার বিদ্রোহের সমাপ্তি) এর মধ্যে ধরা হয়। সাধারণভাবে ৬৮৩-৬৮৫ সময়কে ব্যবহার করা হয়।

দ্বিতীয় ফিতনার সময় মুসলিম বিশ্বে জটিল অবস্থা বিরাজ করছিল। এসময় বেশ কিছু ঘটনা ঘটে। এসবের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক ছিল বলে প্রতীয়মান হয় না। গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপে দেয়া যেতে পারে।

৬৮০ সালে প্রথম উমাইয়া খলিফা প্রথম মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর তার পুত্র প্রথম ইয়াজিদ খলিফা হন। মুহাম্মদ এর দৌহিত্র ও সাবেক খলিফা আলি ইবনে আবি তালিবের পুত্র হুসাইন ইবনে আলির সমর্থকদের কাছ থেকে প্রথম ইয়াজিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আসে। কারবালার যুদ্ধে হুসাইনসহ অনেকেই উমাইয়া সেনাদের হাতে নিহত হন। এই যুদ্ধকে প্রায়ই সুন্নিশিয়াদের মধ্যকার চূড়ান্ত ভাঙন হিসেবে ধরা হয়। কারবালার দিনকে শিয়ারা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

এসকল ঘটনার পর ইয়াজিদ আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের বিদ্রোহের মুখোমুখি হন। আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের ছিলেন সাহাবি জুবায়ের ইবনে আওয়ামআসমা বিনতে আবি বকরের পুত্র। বিভিন্ন কারণে উমাইয়া শাসনের প্রতি অসন্তুষ্ট ব্যক্তিরা তার বিদ্রোহকে সমর্থন করে। ৬৮৩ সালে প্রথম ইয়াজিদ ও তার পুত্র দ্বিতীয় মুয়াবিয়ার আকস্মিক মৃত্যুর পর আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের খলিফা হিসেবে ব্যাপক সমর্থন লাভ করেন। তিনি তার শাসনের বিরোধীদের প্রতিহত করতে সচেষ্ট হন। সিরিয়ায় প্রথম মুয়াবিয়ার এক ভাই সম্পর্কিত ব্যক্তি মারওয়ান ইবনে হাকিম নিজেকে খলিফা ঘোষণা করেন। সংক্ষিপ্তকাল শাসনের পর মারওয়ান ৬৮৫ সালে মৃত্যুবরণ করলে তার পুত্র আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান তার উত্তরসুরি হন। ৬৮৪ সালে মধ্য আরবে খারিজি বিদ্রোহীরা স্বাধীন রাষ্ট্র স্থাপন করলে আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের তিহামাহহেজাজ অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।[১]

ইরাক ও ইরানে এরপর অন্যান্য খারিজিদের উত্থান হয়। এসময় হুসাইন ইবনে আলির মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়া এবং আলির অন্য পুত্রদের মধ্যে কাউকে খলিফার পদে বসানোর জন্য শিয়ারা বিদ্রোহ করে। আবদুল মালিকের সমর্থক সিরিয়ান সেনারা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে। তিনি সব বিদ্রোহ দমনে সফল হন। তার সেনারা মক্কা অবরোধ করলে এরপর আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের সেনাদের হাতে নিহত হন।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Abū Ḥanīfa Dīnawarī, al-akhbâr al-tiwâl, vol. 1, p. 264