লক্ষণপুর ইউনিয়ন, মনোহরগঞ্জ
লক্ষণপুর | |
---|---|
ইউনিয়ন | |
![]() | |
বাংলাদেশে লক্ষণপুর ইউনিয়ন, মনোহরগঞ্জের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°৭′১০″ উত্তর ৯১°৪′১৭″ পূর্ব / ২৩.১১৯৪৪° উত্তর ৯১.০৭১৩৯° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | চট্টগ্রাম বিভাগ |
জেলা | কুমিল্লা জেলা |
উপজেলা | মনোহরগঞ্জ উপজেলা ![]() |
প্রতিষ্ঠা | 1943 |
সরকার | |
• বর্তমান চেয়ারম্যান | মহিউদ্দিন চৌধুরী (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) |
আয়তন | |
• মোট | ১,৫২৯ বর্গকিমি (৫৯০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা | |
• মোট | ১৭,৬৮২ |
• জনঘনত্ব | ১২/বর্গকিমি (৩০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৫৩.৪৬ |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৩৫৭১ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
লক্ষণপুর বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত মনোহরগঞ্জ উপজেলার একটি ইউনিয়ন। আনুমানিক ১৯৪৩ সালে প্রথম সদর মহকুমার অধীনে লক্ষনপুর ইউনিয়ন গঠিত হয়।[১] বর্তমান মনোহরগঞ্জও ছিল লক্ষণপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত। সে সময়ে ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যানকে গ্রাম প্রেসিডেন্ট বলা হত। ১৯৫০ সালে পাকিস্তান শাসনামলে গ্রাম প্রেসিডেন্ট এর পদকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদবী ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে লক্ষণপুর ইউনিয়নকে ভেঙে অনেকগুলো ইউনিয়ন গঠিত হয়। এবং সর্বশেষ ১৯৮৫ সালে লক্ষণপুর ইউনিয়নকে ভেঙে ডাকাতিয়া খালের উত্তর-পূর্ব পাড়ের অংশকে লক্ষণপুর ও দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ের অংশকে নিয়ে সরসপুর ইউনিয়ন গঠন করা হয়।
আয়তন[সম্পাদনা]
লক্ষণপুর ইউনিয়নের আয়তন ১৫,২৯ বর্গ কিলোমিটার মিটার বা ৫৯০ বর্গমাইল (প্রায় ৩৭৭৮২৪.১ একর)। মৌজার মৌজার সংখ্যা ১১টি এবং গ্রামের সংখ্যা ১৩টি।[২]
জনসংখ্যা[সম্পাদনা]
মোট জনসংখ্যা ১৭৬৮২জন। এর মধ্যে ৮০২৪ জন পুরুষ ও ৯৬৫৮ জন নারী।[৩]
অবস্থান ও সীমানা[সম্পাদনা]
মনোহরগঞ্জ উপজেলার মধ্যাংশে লক্ষণপুর ইউনিয়নের অবস্থান। এ ইউনিয়নের পশ্চিমে বাইশগাঁও ইউনিয়ন, উত্তরে খিলা ইউনিয়ন, পূর্বে উত্তর হাওলা ইউনিয়ন, দক্ষিণ-পূর্বে নাথেরপেটুয়া ইউনিয়ন ও বিপুলাসার ইউনিয়ন এবং দক্ষিণে সরসপুর ইউনিয়ন অবস্থিত।
প্রশাসনিক কাঠামো[সম্পাদনা]
লক্ষণপুর ইউনিয়ন মনোহরগঞ্জ উপজেলার আওতাধীন ৭নং ইউনিয়ন পরিষদ। এ ইউনিয়নের প্রশাসনিক কার্যক্রম মনোহরগঞ্জ থানার আওতাধীন। এটি জাতীয় সংসদের ২৫৭নং নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লা-৯ এর অংশ।
শিক্ষা ব্যবস্থা[সম্পাদনা]
লক্ষণপুর ইউনিয়নে ষোলটি তালিকাভূক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি গ্রামেই আরবী শিক্ষার জন্য রয়েছে মসজিদ ভিত্তিক মকতব। লক্ষণপুর ইউনিয়নের শিক্ষার হার ৫৩.৪৬%।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান[সম্পাদনা]
- লক্ষণপুর নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়
- লক্ষণপুর ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসা
- লক্ষণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- লক্ষণপুর ইসলামিয়া নূরানী তালীমুল কুরআন মাদ্রাসা।
- বানঘর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়
- কান্দিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- মান্দুয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যাল
- মড়হ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- বাটখোর কওমি মাদ্রাসা
- খরখরিয়া মাদ্রাসা
- বানঘর নূরাণী মাদ্রাসা
যোগাযোগ ব্যবস্থা[সম্পাদনা]
- সড়কপথে নাথেরপেটুয়া হয়ে অথবা মনোহরগঞ্জ হয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলা শহরের সাথে যোগাযো করা যায়। লক্ষণপুর ইউনিয়নে ৫.৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও ৩৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক রয়েছে।[৪]
খাল ও নদী[সম্পাদনা]
- ডাকাতিয়া খাল। এটি ডাকাতিয়া নদীর একটি শাখা যা বৃটিশ শাসনামলে খনন করা হয়েছিল। এটি ডাকাতিয়া নদী থেকে লক্ষণপুর ইউনিয়নের মড়হ গ্রামের দক্ষিণপাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে লক্ষণপুর গ্রাম ও বাজারের পশ্চিম পাশ হয়ে বানঘর গ্রামের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশ দিয়ে বাহিত হয়ে নদনা খালের সাথে মিলিত হয়ে নোয়াখালীর চৌমুহনী খালের সাথে মিলিত হয়েছে। পূর্বে এই খালের মাধ্যমে লাকসাম ও চৌমুহনী সহ অন্যান্য বাণিজ্য কেন্দ্রের সাথে নৌপথে মালপত্র আনা নেওয়া হতো।
হাট-বাজার[সম্পাদনা]
লক্ষণপুর ইউনিয়নে তিনটি প্রধান হাট-বাজার রয়েছে। সেগুলো হলো–
- লক্ষণপুর ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ আগস্ট ২০২১ তারিখে বাজার
- মড়হ পশ্চিম পাড়া বাজার
- নারায়নপুর বাজার
এছাড়া বানঘর চৌরাস্তা, শিংজোয়ারী (শিঙ্গিরী), মান্দুয়ারা, শোয়ারী ও সফুরাতে গ্রাম্যের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো গ্রামের লোকেদের নৈমিত্তিক চাহিদা পূরণে সহায়ক।
দর্শনীয় স্থান[সম্পাদনা]
- লক্ষণপুর কালীমন্দির। এটি মূলত লক্ষণপুর চৌধুরী বাড়ির পারিবারিক মন্দির, ভবনটি প্রাচীন নয়। তবে ভবনের পাশে একটি বটগাছ রয়েছে যা পথিককে আকৃষ্ট করে। এই মন্দিরের সামনে বৈশাখী মেলা হয়।
- বানঘর লেক। এটি বানঘর গ্রামের দক্ষিণপ্রান্তে অবস্থিত এবং ডাকাতিয়া খালের অংশবিশেষ। লেক বলে সুপরিচিত হলেও এটি মূলত কোন লেক বা হ্রদ নয়। বর্ষা মওসূমে থৈ থৈ পানির কারণে স্থানটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়। মানুষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য় অবলোকনের জন্য এখানে আসে।
- লক্ষণপুর চর। এটি লক্ষণপুর গ্রামের পশ্চিমপাশে ডাকাতিয়া খালের অংশ বিশেষ। সুবৃহৎ দীঘি সদৃশ জলাশয়। বর্ষার সময় এর থৈথৈ পানি এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব[সম্পাদনা]
- বরদামোহন চৌধুরী, গ্রাম লক্ষণপুর। তিনি সচরাচর বরদা মাষ্টার নামে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি যৌবনে বানঘর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছিলেন, পরবর্তীতে বানঘর প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে তিনি তার বাড়িতেই একটি টোল স্থাপন করেন। তার এই টোলে আশপাশের গ্রাম থেকে ছাত্রছাত্রীরা পড়তে আসতো। তার হাতেই অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তিত্বের হাতেখড়ি হয়েছে।
- দায়েম উল্লাহ পাটোয়ারী, মান্দুয়ারা গ্রাম। সাবেক জনহিতৈষী চেয়ারম্যান। তার সময়ে লক্ষণপুর ইউনিয়নের প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়। তিনি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে সরকারী অনুদানে নলকূপ প্রদান করেছিলেন, যা সেই সময়ের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কেননা, মানুষ তখন পুকুর বা খালের পানি পান করতো আর কলেরা, আমাশয় ও ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে ভুগতো। ব্যক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন সৎ ও সাদামাটা জীবন যাপন করতেন।
- তাহের আহমদ ভূঁঞা, বানঘর গ্রাম। তিনি দুই দফা লক্ষণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ব্যক্তি হিসেবে সৎ, এবং তার সময়ে ইউনিয়নের রাস্তা ঘাটের অনেক উন্নয়ন সাধিত হয়। তার সময়ে বানঘরের মধ্য দিয়ে হাসানাবাদ-বকশগঞ্জ সড়কের উন্নয়ন সাধিত হয় যার ফলে এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়। তিনি পানীয় জলের জন্য গ্রামের মানুষদের নলকূপ প্রদান করেছিলেন।
- মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব। উনি বাংলাদেশ জাতীয় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক পরিদর্শক ছিলেন ।
- মাওলানা আব্দুল জলিল সাহেব । উনি একজন বিখ্যাত শিক্ষানুবিদ । লক্ষণপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক প্রিন্সিপাল । বহু আলেমের ওস্তাদ তিনি ।
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ জাতীয় তথ্যবাতায়ন, লক্ষণপুর ইউনিয়নের ইতিহাস।
- ↑ জাতীয় তথ্যবাতায়ন, একনজরে লক্ষণপুর ইউনিয়ন।
- ↑ জাতীয় তথ্যবাতায়ন, লক্ষণপুর ইউনিয়ন।
- ↑ জাতীয় তথ্যবাতায়ন, লক্ষণপুর ইউনিয়ন।