আবদুল হাকিম (মুক্তিযোদ্ধা)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আবদুল হাকিম
মৃত্যু১৯৯৪
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক
একই নামের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের জন্য দেখুন আবদুল হাকিম (দ্ব্যর্থতা নিরসন)

আবদুল হাকিম (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৯৪) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১][২]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

আবদুল হাকিমের নিজ বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে। তার বাবার নাম ফয়েজউল্লাহ মোল্লা এবং মায়ের নাম অজুফা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম জোবেদা বেগম। তাদের এক মেয়ে, পাঁচ ছেলে।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

আবদুল হাকিম চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মিলিটারি পুলিশ ইউনিটে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন ঢাকা সেনানিবাসে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিল মাসে ঢাকা সেনানিবাস থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। পরে তাকে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গাজীপুর জেলায় পাঠানো হয়। কাপাসিয়া, কালিয়াকৈর এবং নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিবাহিনীর সেক্টর সদর থেকে গেরিলাযোদ্ধা (স্বল্প প্রশিক্ষিত) যাঁদের বাড়ি যে এলাকায়, তাদের সে এলাকায় পাঠানো হতো। তারা নিজ এলাকায় গোপনে স্থায়ীভাবে অবস্থান করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর নানা ধরনের প্রচলিত-অপ্রচলিত আক্রমণ পরিচালনা করতেন। এসব দলের সঙ্গে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর সদস্যদেরও সংযুক্ত করা হতো। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ নম্বর থেকে আবদুল হাকিমসহ একদল মুক্তিযোদ্ধাকে পাঠানো হয় নরসিংদীগাজীপুর জেলায়। তারা ছিলেন কয়েকটি দলে বিভক্ত। তারা নরসিংদী-গাজীপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে দুঃসাহসিক কিছু অপারেশন করেন। একের পর এক অপারেশনের মাধ্যমে তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চলাচল ব্যাহত ও অনিশ্চিত করে দেন। ১৯৭১ সালে কালিয়াকৈরের বিভিন্ন স্থানে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দলের অবস্থান ছিল পুরাতন থানা কমপ্লেক্সে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এর অবস্থান। তাদের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ছিল একদল রাজাকার। ২২ অক্টোবর সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা এক অপারেশন পরিচালনা করেন। সেদিন রাত আনুমানিক ১০টায় আবদুল হাকিমসহ মুক্তিযোদ্ধারা চাপাইর ব্যাপারিপাড়া হাইস্কুল থেকে তুরাগ নদ অতিক্রম করে পাকিস্তানি সেনা দলের ওপর আকস্মিক আক্রমণ চালান। এতে পাকিস্তানি সেনারা হকচকিত হয়ে পড়ে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই হকচকিত অবস্থা কাটিয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। এরপর দুই পক্ষে ব্যাপক গুলিবিনিময় হয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে সেখানে যুদ্ধ চলে। আবদুল হাকিম ও তার সহযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারী অস্ত্রশস্ত্রে ও বিপুল রসদে সজ্জিত ছিল। তুলনায় মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রের রসদ ছিল কম। রাত সাড়ে তিনটার দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি প্রায় শেষ হয়ে যায়। তখন পাকিস্তানিরা বেশ আধিপত্য বিস্তার করে। যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানিদের পক্ষে চলে যায়। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের পশ্চাৎপসরণ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। অবশেষে রাত চারটার দিকে তারা পিছে হটে যান। তবে তাদের আকস্মিক আক্রমণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এবং রাজাকার দলের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুক্তিযোদ্ধারা পরে খবর নিয়ে জানতে পারেন, তাদের আক্রমণে পাঁচজন রাজাকার ও ছয়জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। আক্রমণের শুরুতে মুক্তিযোদ্ধারা বাংকার লক্ষ্য করে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড সঠিক নিশানায় পড়ে। বিস্ফোরণে দুটি বাংকার সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা মাত্র দু-তিনজন আহত হন।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৮-১০-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449