খায়রুল বাশার খান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
খায়রুল বাশার খান
মৃত্যু২০০৭
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

খায়রুল বাশার খান (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২০০৭) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

খায়রুল বাশার খানের পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আমীর আলী খান এবং মায়ের নাম ফিরোজা বেগম। তার স্ত্রীর নাম জোবেদা বাশার। তাদের চার ছেলেমেয়ে।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

খায়রুল বাশার খান চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর সেক্টরের ৫ নম্বর উইংয়ে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর ভারতে যান। পরে ’জেড’ ফোর্সের অধীন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত হন। স্বাধীনতার পর ১৯৮৮ সালে বিজিবি থেকে উপপরিচালক হিসেবে অবসর নেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ২৮ জুলাই অন্ধকার রাত। অবস্থানটি ছিলো জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত কামালপুর গ্রামের মাঝামাঝি স্থানে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কামালপুর বিওপির অবস্থান। খায়রুল বাশার খানসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ভারত থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে নিঃশব্দে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাঁটির কাছে যান। দুই-তিন দিনের মধ্যেই তারা ওই ঘাঁটিতে আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করছিলেন। সে জন্য রাতের বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য সেখানে যান তারা। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন সালাহউদ্দিন মমতাজ (বীর উত্তম)। কিন্তু এক দুর্ঘটনা ঘটে। রাতের অন্ধকারে তারা ভুলক্রমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লিসনিং পোস্টের কাছে চলে যান। এক পাকিস্তানি সেনা তা দেখে চিৎকার করে ওঠে। খায়রুল বাশারের দলনেতা সালাহউদ্দীন চিৎকার করে ওঠা পাকিস্তানি সেনাকে পরবর্তী কার্যক্রমের সুযোগ না দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে জাপটে ধরে মাটিতে ধরাশায়ী করেন। তাদের এক সহযোদ্ধার গুলিতে ওই পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। সেখানে থাকা আরেক পাকিস্তানি সেনাকেও তারা হত্যা করেন। এরপর তারা ভারতে ফিরে যান। নিজেদের প্রতিরক্ষার ভেতর এমন ঘটনা পাকিস্তান সেনাবাহিনী কল্পনাও করেনি। পরদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান এ কে নিয়াজি ওই প্রতিরক্ষা পরিদর্শনে যান।

মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ পরিকল্পনা এতে থেমে যায়নি। নির্ধারিত দিন ৩০ জুলাই মুক্তিবাহিনীর দুটি দল সেখানে আক্রমণ করে। দুটি দলের নাম ছিলো ব্রাভো (বি) ও ডেল্টা (ডি) দল। ডি দলে ছিলেন খায়রুল বাশার। তারা কয়েকটি উপদলে বিভক্ত এবং তিনি একটি প্লাটুনের নেতৃত্বে ছিলেন। ‘ডি’ দলের নেতৃত্ব দেন সালাহউদ্দীন মমতাজ। অপর দলের (বি) নেতৃত্বে ছিলেন হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ (বীর বিক্রম)। তাদের নেতৃত্বে প্রচণ্ড বর্ষণমুখর রাতে খায়রুল বাশারসহ মুক্তিযোদ্ধারা ফর্মি আপ প্লেসে সমবেত হন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তাদের কিছুটা দেরি হয়ে যায়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ দল মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করে। নির্ধারিত সময় শুরু হয় গোলাবর্ষণ। কিন্তু সেগুলোর কয়েকটি মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে পড়ে। এতে হতাহত হন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। প্রাকৃতিক বাধা এবং নতুন এ বিপর্যয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। খায়রুল বাশারসহ তার সহযোদ্ধারা এতে দমে যাননি। মনের জোর ও অদম্য সাহসে উজ্জীবিত হয়ে তারা অধিনায়কের নেতৃত্বে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। সমন্বিত আক্রমণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অগ্রবর্তী প্রতিরক্ষায় ফাটল ধরে। পাকিস্তানিরা সামনের প্রতিরক্ষা অবস্থান ছেড়ে শেলপ্রুফ বাংকারে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ব্যাপক গুলিবর্ষণ শুরু করে। অদম্য সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা গুলিবৃষ্টির মধ্যেই সামনে এগিয়ে যান। বাংকার অতিক্রম করে তারা মূল প্রতিরক্ষা যেখানে সেই কমিউনিটি সেন্টারের মধ্যে ঢুকে পড়েন। বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেও তারা শেষ পর্যন্ত সফল হননি। আক্রমণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। [২]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৩-১১-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ২২৩। আইএসবিএন 9789849025375