সৈয়দ খান
সৈয়দ খান | |
|---|---|
| জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
| নাগরিকত্ব | |
| পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
সৈয়দ খান (জন্ম: অজানা ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]সৈয়দ খানের জন্ম দিনাজপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায়। তার বাবার নাম আহমেদ সরদার এবং মায়ের নাম মজিদন নেছা। তার স্ত্রীর নাম খাইরুন নেছা। এ দম্পতির দুই ছেলে, দুই মেয়ে।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]১৯৭১ সালে দেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘু অবাঙালিদের (বিহারী) একটি অংশ অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। তাদের একটি অংশ পাকিস্তানিদের সক্রিয় সহযোগী হিসেবে কাজ করে এবং পাকিস্তানীদের গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজে সাহায্য করে। তাও অবাঙালিদের অনেকে পশ্চিম পাকিস্তান হতে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পক্ষে ছিলেন। সৈয়দ খান ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে লড়াই করেছেন। তিনি ১৯৭১ সালে ইপিআরে কর্মরত ছিলেন কুড়িগ্রামের চিলমারীতে। কুড়িগ্রাম তখন রংপুর জেলার একটি মহকুমা। চিলমারী বিওপির বাঙালি ইপিআর সদস্যদের সঙ্গে তিনিও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পরে মুক্তিবাহিনীর একজন যোদ্ধা হিসেবে ৬ নং সেক্টরের সাহেবগঞ্জ সাব সেক্টরের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেন সৈয়দ খান। দুটি যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য তাকে বীর প্রতীক খেতাব দেওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
[সম্পাদনা]১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা নদীর ওপরে রেল সেতুর ওপর ওত পেতে বসে ছিলেন সৈয়দ খানসহ একদল বাঙালি প্রতিরোধযোদ্ধা। তারা বসে আছেন শত্রু পাকিস্তানি সেনাদের অপেক্ষায়। বিস্ময়কর হলো, সৈয়দ খান বাঙালি নন, অবাঙালি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এ এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। তারপর সেখানে আরও কয়েকটি দিন কেটে গেল। পরে ১ এপ্রিল আনুমানিক বেলা ১১টায় দূরে দেখা গেল একদল পাকিস্তানি সেনা। আসছে রংপুরের দিক থেকে। তারা কেউ বুঝতেই পারেনি, সেতুতে কেউ ওত পেতে আছে। তারা প্রতিরোধ যোদ্ধাদের গুলির আওতার মধ্যে আসামাত্র একসঙ্গে গর্জে উঠল সব অস্ত্র। পাকিস্তানি সেনাদের সামনে ছিল তাদের এক মেজর এবং এক বাঙালি পুলিশ কর্মকর্তা। তারা প্রতিরোধের কোনো সুযোগই পেল না। মেজর ও বাঙালি পুলিশ কর্মকর্তাসহ চার-পাঁচজন সঙ্গে সঙ্গে নিহত হলো। তারপর শুরু হলো ভয়াবহ যুদ্ধ। সৈয়দ খানসহ অন্য বাঙালি যোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দিলেন। [২]
যুদ্ধ পরবর্তী জীবন
[সম্পাদনা]সৈয়দ খানের বয়স এখন প্রায় ৮২। এখন তিনি অনেক কিছুই ঠিকমতো মনে করতে পারেন না। গুছিয়ে বলতেও পারেন না। যুদ্ধের পর তাঁর ওপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। কেবল বিহারী হয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার অপরাধে দোসর বিহারীরা সৈয়দপুরের বিখ্যাত গণহত্যায় অন্যান্য বাঙালিদের সাথে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানসন্ততিদের হত্যা করেছিল। সুবেদার সৈয়দ খানের বোন, বোন জামাই(বাঙালি), ভাগ্নেরাও এই তথ্যগুলো নিশ্চিৎ করেছেন। তিনি যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে পরিবারের আর কাউকে পাননি। সৈয়দপুর স্বাধীন হবার পরপরই মুক্তিযোদ্ধারা সেসকল গণহত্যাকারী বিহারীদের বিচারের আওতায় আনে। স্ত্রী-সন্তানদের হারানোর পর তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে বিয়ে দেওয়া হলেও আর্থিক অনটনের কারণে সেই স্ত্রীও তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁর কাছ থেকে চলে গেছেন। এখন তিনি পরিণত বয়সে একেবারে অসহায় অবস্থায় অন্যের আশ্রয়ে রয়েছেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২৪-০৫-২০১১[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃ. ৩১৩। আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৯০২৫৩৭৫।
{{বই উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতিতে খালি অজানা প্যারামিটার রয়েছে:|coauthors=(সাহায্য)উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বছর (লিঙ্ক)
পাদটীকা
[সম্পাদনা]- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।