আজিজুর রহমান (বীর প্রতীক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আজিজুর রহমান
মৃত্যু১৯৯০
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

আজিজুর রহমান (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৯০) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১][২]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

আজিজুর রহমানের পৈতৃক বাড়ি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার বনকোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল আলী মোল্লা এবং মায়ের নাম জাগিরননেছা।তার স্ত্রীর নাম লুৎফা বেগম। তাদের তিন মেয়ে ও পাঁচ ছেলে।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

আজিজুর রহমান চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে তিনি কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর সেক্টরের ৯ নম্বর উইংয়ে । মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার পর বীরগঞ্জ এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে তেঁতুলিয়ায় সমবেত হন। তেঁতুলিয়ায় তিনি কিছুদিন প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ৬ নম্বর সেক্টরের ভজনপুর সাব-সেক্টরে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। অমরখানায় এক সেতু ধ্বংসের অপারেশনে তিনি আহত হন। সুস্থ হওয়ার পর আবার ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। স্বাধীনতার পর বিজিবি থেকে নায়েব সুবেদার হিসেবে অবসর নেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের জুন-জুলাই মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার অন্তর্গত ময়নাগুড়ি, কামারপাড়া, বিলখাজুদ, ফকিরপাড়া, নয়াপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামসহ প্রায় সাত-আট মাইল এলাকাজুড়ে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়মিত টহল ও উপস্থিতি। কয়েক স্থানে ছিল তাদের পর্যবেক্ষণ পোস্ট। সেখানে পাকিস্তানি সেনারা সহযোগীদের নিয়ে অবস্থান করত।

আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওই সব পর্যবেক্ষণ পোস্টে একযোগে আক্রমণ চালায়। আজিজুর রহমান এই আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর একটি দলের নেতৃত্ব দেন । মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি পোস্টে আক্রমণ চালিয়ে তাদের পিছু হটতে বাধ্য করার পর ওই সব এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা সামনের আরও এক মাইল এলাকা দখল করতে সক্ষম হন। এই এলাকার মধ্যে ছিল জাবরীদোয়ার, গোয়ালঝাড়, বানিয়াপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, বামনগাঁও, কামাদা, ভেলুকাপাড়া গ্রাম। আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে তার সহযোদ্ধারা দখল করেন গোয়ালঝাড় গ্রাম। তারা ওই গ্রামে ক্যাম্প করে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। বিরাট এলাকা, বিশেষ করে ভেলুকাপাড়া, গোয়ালঝাড় ও জাবরীদোয়ার হাতছাড়া হওয়ায় তা পুনরুদ্ধারের জন্য পাকিস্তানিরা মরিয়া হয়ে ওঠে। কয়েক দিন পর বিপুল শক্তি নিয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে আক্রমণ চালায়। তাদের আক্রমণে ভেলুকাপাড়া ও জাবরীদোয়ারে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।

আজিজুর রহমান সহযোদ্ধাদের নিয়ে বীরত্ব ও সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিরোধ করেন। তাদের পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তানিদের অগ্রযাত্রা থেমে যায়। পাকিস্তানিরা ভেলুকাপাড়া ও জাবরীদোয়ার গ্রাম পুনর্দখল করতে সক্ষম হলেও গোয়ালঝাড় গ্রাম দখল করতে পারেনি। পাকিস্তানিরা গ্রাম দুটি দখল করার পর মুক্তিবাহিনীর ভজনপুর সাব-সেক্টর অধিনায়কের অনুরোধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর আর্টিলারি দল পাকিস্তানিদের ওপর বোমাবর্ষণ শুরু করে। এই সুযোগে সেখান থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় সংগঠিত হন। পরে তারা পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণ করেন। আর্টিলারি শেলিং ও মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন আক্রমণে পাকিস্তানিরা কাবু হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত পিছু হটে যায়। পরে পাকিস্তানিরা আরও কয়েকবার গোয়ালঝাড়ে আক্রমণ করে। আজিজুর রহমান প্রতিবারই সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিরোধ করেন। তার দলের নিয়ন্ত্রণে থাকা গোয়ালঝাড় পাকিস্তানিরা আর কখনই দখল করতে পারেনি। দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত গোয়ালঝাড় গ্রামসহ পাশের বিরাট এলাকা মুক্ত ছিল। স্বাধীনতার পর স্থানীয় জনসাধারণ গোয়ালঝাড় গ্রামের নাম তার নামে অর্থাৎ আজিজনগর নামে নামকরণ করে। গোয়ালঝাড় গ্রামের নাম এখনো আজিজনগর হিসেবে প্রচলিত আছে। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"দৈনিক প্রথম আলো। ২০১২-১১-২০। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৫১। আইএসবিএন 9789849025375