মোহাম্মদ নূরুল হক (বীর প্রতীক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মো. নূরুল হক
মৃত্যু১৯৯২
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক
একই নামের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের জন্য দেখুন নূরুল হক

মো. নূরুল হক (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৯২) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

মো. নূরুল হকের পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে। তার বাবার নাম সিরাজুল হক ভূঁইয়া এবং মায়ের নাম নূর বানু। তার স্ত্রীর নাম ছকিনা বেগম। তাঁদের তিন মেয়ে, তিন ছেলে।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

মো. নূরুল হক চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল জয়দেবপুরে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিদ্রোহ করে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তার ভূমিকা ছিল অনন্য। জয়দেবপুর থেকে সহযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি টাঙ্গাইল হয়ে ময়মনসিংহে সমবেত হন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনঃসংগঠিত হওয়ার পর তিনি ৩ নম্বর সেক্টরে, পরে এস ফোর্সের অধীনে নানা দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে একদল মুক্তিযোদ্ধা সমবেত হন আশুগঞ্জ ও ভৈরবে। মেঘনা নদীর এক পারে ভৈরব, আরেক পারে আশুগঞ্জ। মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, মুজাহিদ, আনসার, পুলিশ ও ছাত্র-যুবক সমন্বয়ে গঠিত। কয়েকটি উপদলে বিভক্ত। একটি উপদলের নেতৃত্বে ছিলেন মো. নূরুল হক। মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধ করা। এ জন্য মো. নূরুল হক সহযোদ্ধাদের নিয়ে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন আশুগঞ্জে। তাঁদের সঙ্গে ছিল আরও দু-তিনটি উপদল। সব দলের সার্বিক নেতৃত্বে ছিলেন এ এস এম নাসিম (বীর বিক্রম)। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত আশুগঞ্জ ও ভৈরব মুক্ত ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আশুগঞ্জ-ভৈরব দখলের জন্য ওই দিন থেকে ব্যাপক অভিযান শুরু করে। মো. নূরুল হক ও তার সহযোদ্ধারা ১৪ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হন। বিক্রমের সঙ্গে তারা পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিহত করেন। তাঁদের পাল্টা আক্রমণে নদীপথে আসা পাকিস্তানি সেনারা পিছে হটে যায়। কিন্তু এই সফলতা মো. নূরুল হকরা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেননি। কিছুক্ষণ পর থেকে যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ তাঁদের আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর কয়েকটি যুদ্ধবিমান তাঁদের ওপর বোমাবর্ষণ শুরু করে। এ আক্রমণ মোকাবিলা করার মতো অস্ত্র তাঁদের কাছে ছিল না। একনাগাড়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে বিমান আক্রমণ চলে। এ সময় তার দলসহ অন্যান্য দলের মুক্তিযোদ্ধারা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েন। এতে মো. নূরুল হক দমে যাননি। বিমান আক্রমণ শেষ হলে সহযোদ্ধাদের পুনঃসংগঠিত করে আবার তিনি আগের স্থানে অবস্থান নেন। পরদিন ভোরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাঁদের অবস্থানের অদূরে হেলিকপ্টারের সাহায্যে কমান্ডো নামায়। তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। একপর্যায়ে পাকিস্তানিরা তাঁদের চারদিক দিয়ে প্রায় ঘেরাও করে ফেলে। তখন দুই পক্ষে মুখোমুখি যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। পাকিস্তানিদের জল-স্থল-আকাশপথের ত্রিমুখী সাঁড়াশি আক্রমণে মো. নূরুল হকরা শেষ পর্যন্ত সেখানে টিকতে পারেননি। বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেও তারা ব্যর্থ হন। ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে তাঁদের পিছু হটে যেতে হয়। যুদ্ধে আহত হন তার অধিনায়ক এ এস এম নাসিমসহ অনেক সহযোদ্ধা। শহীদ হন কয়েকজন। [২]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০১-১০-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ২৯১। আইএসবিএন 9789849025375 

পাদটীকা[সম্পাদনা]