শহীদুল ইসলাম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শহীদুল ইসলাম
জন্ম
গোপালপুর-টাঙ্গাইল
মৃত্যু২০০৯
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

শহীদুল ইসলাম (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২৫ মে ২০০৯[১]) লালু নামে পরিচিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[২] তিনি বাংলাদেশে বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

শহীদুল ইসলামের জন্ম টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার সূতী পলাশ গ্রামে। তার বাবার নাম হেলাল উদ্দীন এবং মায়ের নাম সুধামণি। তার স্ত্রীর নাম মালা বেগম। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। [৩]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

বঙ্গবন্ধুর কোলে লালু (পাশে দাঁড়ানো বঙ্গবীর)

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বভূষণ খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ শহীদুল ইসলাম। ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। তিনি লালু নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিবাহিনী ছাড়াও দেশের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি সশস্ত্র আঞ্চলিক বাহিনী গড়ে ওঠে। এর মধ্যে কাদেরিয়া বাহিনী অন্যতম। এই বাহিনীর একটি দলের সঙ্গে ছিলেন তিনি। শুরুতে শহীদুল ইসলাম স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য-সহযোগিতা, অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ বহন, সংবাদ সংগ্রহ প্রভৃতি কাজ করতেন। পরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরায় অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে ফেরার পর তাকে গোপালপুর থানা সদরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের আদ্যপান্ত জানার জন্য সেখানে পাঠানো হয়। শহীদুল ইসলাম গোপালপুরে অবস্থান করে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাদেরিয়া বাহিনীর কয়েকটি দল গোপালপুরে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ করে। শহীদুল ইসলামও এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। তিনি পাকিস্তানি ক্যাম্পের ভেতরে দুঃসাহসিকতার সঙ্গে কয়েকটি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটান। এতে বেশ কজন পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী হতাহত হয়।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ৭ অক্টোবর গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করেন। শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। যুদ্ধ চলাকালে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল থেকে নতুন পাকিস্তানি সেনা এসে নিজেদের ঘাঁটির শক্তি বৃদ্ধি করে। কমান্ডার আবদুল হাকিম, হুমায়ুন, তারা ও বেনুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ৮ অক্টোবর বিকেল পর্যন্ত যুদ্ধ করলেন মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু থানার পতন ঘটাতে পারলেন না তারা। এ ঘটনা কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অসম্মানের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। মুক্তিযোদ্ধাদের মূল দলনেতা আবদুল হাকিম চিন্তা করতে থাকলেন পরবর্তী রণকৌশল নিয়ে। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের চারদিক থেকে অবরোধ করেন। এতে কিছুটা সাফল্য আসে। পাকিস্তানি সেনারা ঘাঁটির ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এই সময় একদিন শহীদুল ইসলাম কাজের ছেলের ছদ্মবেশে পাকিস্তানি সেনাদের ঘাঁটিতে যান। তাদের বিভিন্ন ফাই-ফরমাশ খেটে আস্থা অর্জন করেন। পরে গ্রেনেডসহ ঘাঁটিতে প্রবেশ করে সেখানে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিরাপদে ফিরে আসেন। তার এই দুঃসাহসিক অভিযানে পাকিস্তানি সেনা, তাদের সহযোগীসহ আটজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়। এই সফল গ্রেনেড হামলার পর শহীদুল ইসলাম আরও কয়েকবার দূর থেকে সেখানে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। এতে পাকিস্তানি সেনারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। নভেম্বরের শেষ দিকে মুক্তিযোদ্ধারা আবার গোপালপুর আক্রমণ করেন। দু-তিন দিন যুদ্ধ চলে। এরপর পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধেও শহীদুল ইসলাম অংশ নেন। গোপালপুরের যুদ্ধ ছাড়াও আরও কয়েকটি গেরিলা অপারেশনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। [৪]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

তিনি ২০০৯ সালের ২৫ মে ঢাকাস্থ মিরপুরে বাসভবনে মৃত্যবরণ করেন। তাকে মিরপুরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।[১]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "বঙ্গবন্ধুর বীর বিচ্ছু ও সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১০"। ২৭ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০২০ 
  2. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ:২৬-১০-২০১১"। ২০১৭-১১-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৫-২১ 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  4. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884 

পাদটীকা[সম্পাদনা]

বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]