গোলাম মোস্তফা (মুক্তিযোদ্ধা)
গোলাম মোস্তফা | |
---|---|
![]() | |
মৃত্যু | ২০০৫ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
গোলাম মোস্তফা (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২০০৫) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]গোলাম মোস্তফার জন্ম নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার বাঘপাছরা গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল রেজ্জাক এবং মায়ের নাম রমিলা বেগম। তার স্ত্রীর নাম কোহিনূর বেগম। তাদের তিন ছেলে ও চার মেয়ে। [২]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন গোলাম মোস্তফা। নবীন সৈনিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। ভারতে যাওয়ার পর পুনর্গঠিত হয়ে প্রথম যুদ্ধ করেন জামালপুর জেলার কামালপুরে। পরে জেড ফোর্সের প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের যোদ্ধা হিসেবে আটগ্রাম-চারগ্রামসহ আরও কয়েক স্থানে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
[সম্পাদনা]১৯৭১ সালের শেষ দিকে সিলেট জেলার অন্তর্গত কানাইঘাট উপজেলার অবস্থান ছিলো সুরমা নদীর তীরে, জৈন্তাপুর-জকিগঞ্জ সংযোগ সড়কে। এটি ছিলো সীমান্ত এলাকা। সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের শক্ত এক প্রতিরক্ষা অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের কয়েকটি দল সীমান্ত এলাকা থেকে বিভিন্ন দিক দিয়ে সিলেট অভিমুখে অগ্রসর হয়। জেড ফোর্সের প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট আসতে থাকে আটগ্রাম-চরঘাট-সিলেট অক্ষ ধরে। পথিমধ্যে কয়েক স্থান থেকে পাকিস্তানি সেনাদের বিতাড়িত করে ২৫-২৬ নভেম্বর তারা পৌঁছে যায় গৌরীপুরে। সেখান থেকে কানাইঘাটের দূরত্ব দুই মাইল। মুক্তিযোদ্ধারা সুরমা নদীর উত্তর ও দক্ষিণ তীরে অস্থায়ী প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। ২৬-২৭ নভেম্বর ভোরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দল তাদের মূল প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে এসে আকস্মিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের সামনের দুটি কোম্পানিকে প্রায় ঘেরাও করে ফেলে। তাদের অতর্কিত আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রবর্তী দল নাজুক অবস্থায় পড়ে যায়।
এমন অবস্থায় বিচলিত না হয়ে গোলাম মোস্তফাসহ মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকেন। এ রকম যুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ ছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা থাকে না। গোলাম মোস্তফা ও তার সহযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে তাই করতে থাকেন। ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলতে থাকে। প্রচণ্ড লড়াইয়ে মুক্তিবাহিনীর আলফা কোম্পানির অধিনায়ক মাহবুবুর রহমানসহ (বীর উত্তম) বেশ কয়েকজন শহীদ হন এবং আহত হন অনেক মুক্তিযোদ্ধা। গোলাম মোস্তফা নিজেও পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে আহত হন। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দল ওয়াকার হাসানের (বীর প্রতীক) নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর পাল্টা ঝটিকা আক্রমণ চালায়। তাদের আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তখন পাকিস্তানি সেনারা পশ্চাদপসরণ করে। আহত হন মোস্তফাসহ আরও কয়েকজন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর সারওয়ারসহ অসংখ্য সেনা নিহত হয়। মুক্তিযুদ্ধে কানাইঘাট যুদ্ধ অন্যতম এক যুদ্ধ। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]পাদটীকা
[সম্পাদনা]- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৯-১২-২০১১ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৯-১২-২০১১"। ২০১৯-১২-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০৬।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৭৭। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩১৭। আইএসবিএন 9789843338884।