মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মো. আবদুল কুদ্দুস
মৃত্যু২০০২
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

মো. আবদুল কুদ্দুস (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২০০২) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১][২]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

মো. আবদুল কুদ্দুসের জন্ম নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার দক্ষিণ লক্ষ্মণখোলা গ্রামে। তার বাবার নাম ইয়াদ আলী বেপারি এবং মায়ের নাম মহিতুন নেছা। তার স্ত্রীর নাম গোলেছা বেগম। তাদের ছয় ছেলে ও এক মেয়ে।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

মো. আবদুল কুদ্দুস চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা (এ) কোম্পানিতে। রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। মার্চ মাসে সম্ভাব্য ভারতীয় আগ্রাসনের কথা বলে তাদের সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন করা হয়। তিনি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে মোতায়েন ছিলেন। তাদের কোম্পানির অধিনায়ক ছিল অবাঙালি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তারা বাঙালী সিনিয়র জেসিওর নেতৃত্বে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। পার্বতীপুরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে তারা অ্যাম্বুশ করেন। তাদের আক্রমণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ৩১ জুলাই জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত বাহাদুরাবাদ ঘাটে ছিলো নৌবন্দর। অবস্থান যমুনা নদীর পূর্ব পারে। একসময় দেশের পূর্বাঞ্চল, বিশেষত ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ রক্ষায় ওই ঘাটের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। ১৯৭১ সালে সেখানে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাঁটি। প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল ৩১ বালুচ রেজিমেন্ট। এ ছাড়া সহযোগী হিসেবে ছিল ইপিসিএএফ। ঘাটে তখন পাঁচটি জেটি ছিল। এর মধ্যে দুটি যাত্রীবাহী স্টিমার, দুটি সামরিক যানবাহন-রেল ওয়াগন-তেলের ট্যাংকার এবং একটি সি-ট্রাক, লঞ্চ ও সামরিক (আর্টিলারিসহ) মালামাল পারাপারের কাজে ব্যবহূত হতো। এ ছাড়া সেখানে ছিল রেলওয়ের ওয়ার্কশপ, পাওয়ার হাউস ও অন্যান্য স্থাপনা। সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে বেশির ভাগ পাকিস্তানি সেনা ও ইপিসিএএফ নিহত হয়। জেটি, স্টিমার, কয়েকটি রেলবগি ও ওয়াগন এবং অন্যান্য স্থাপনা পুরোপুরি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মো. আবদুল কুদ্দুসসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা গোপনে এসেছেন বাংলাদেশের ভেতরে। তাদের অবস্থান ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় ২৫ মাইল দূরে। তারা বেশির ভাগ নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর (তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) সদস্য। কয়েকটি উপদলে (প্লাটুন) বিভক্ত। একটি উপদলের নেতৃত্বে তিনি। তাদের কাছে আছে রকেট লঞ্চার, আরআর (রিকোয়েললেস রাইফেল) ও অন্যান্য অস্ত্র। একদিন রাতে তারা সবাই গোপন অবস্থান থেকে বেরিয়ে পড়েন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, মো. আবদুল কুদ্দুস তার দল নিয়ে অবস্থান নেন আক্রমণস্থলের অদূরে একটি সেতুর কাছে। তার ওপর দায়িত্ব তাদের মূল আক্রমণকারী দলের নিরাপত্তা প্রদান এবং আক্রমণ চলাকালে আক্রান্ত পাকিস্তানি সেনাদের জন্য যাতে কোনো সাহায্য (রিইনফোর্সমেন্ট) যেতে না পারে তা নিশ্চিত করা। মুক্তিযোদ্ধাদের মূল আক্রমণকারী দল নির্ধারিত সময়েই আক্রমণ চালায়। তাদের প্রথম রকেটের নির্ভুল আঘাতেই সেখানকার জেনারেটর অকেজো এবং সঙ্গে সঙ্গে গোটা এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। আচমকা আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা হকচকিত। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজেদের গুছিয়ে পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। কিন্তু তাদের শেষরক্ষা হয়নি। প্রচণ্ড আক্রমণে ছিন্নভিন্ন পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা বাঁচার জন্য কয়েকজন সেতু এলাকা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন মো. আবদুল কুদ্দুসের দলের আক্রমণে তারা বেশির ভাগ নিহত হয়।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১৪-০৮-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 

পাদটীকা[সম্পাদনা]