মনির আহমেদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মনির আহমেদ
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

মনির আহমেদ (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

মনির আহমেদের জন্ম নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলার পশ্চিম নূরপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আলী আহমদ এবং মায়ের নাম মানাফা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম জাহান আফরোজ বেগম। তাদের দুই ছেলে, তিন মেয়ে। [২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে আলফা (এ) কোম্পানিতে চাকরি করতেন মনির আহমেদ। ১৯৭১ সালে এ রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল জয়দেবপুরে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে দেন। প্রথমে যুদ্ধ করেন ৩ নম্বর সেক্টরে। পরে তাকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর এস ফোর্সের ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভৈরব, আশুগঞ্জ, আখাউড়াসহ আরও কয়েক স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে যে সড়কটি সিলেট অভিমুখে গেছে, ওই সড়ক ধরে ১৮ মাইল দূরে অবস্থিত মাধবপুরে যেখান থেকেই হবিগঞ্জ জেলার শুরু সেখানে তুমুল যুদ্ধ হয়। ২৮ এপ্রিল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাধবপুরে সংঘটিত হয় সর্বাত্মক এক যুদ্ধ। রক্তক্ষয়ী এ সম্মুখ সমরে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের নৈপুণ্য, সাহস ও দেশপ্রেমের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এ যুদ্ধে মনির আহমেদ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্ষুদ্র দলের নেতৃত্ব দেন। সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করলেন মনির আহমেদ। প্রাণপণ লড়াই করেও নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে না পেরে পিছু হটতে বাধ্য হলেন তিনি। পেছনে নতুন স্থানে প্রতিরক্ষা অবস্থান নিয়ে আবার যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকলেন। কিছুক্ষণ পর পাকিস্তানি সেনারা তাদের ওপর আবার আক্রমণ চালাল। ২৮ এপ্রিল সকাল আটটার দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান লক্ষ্য করে প্রথমে ব্যাপক কামানের গোলা নিক্ষেপ করে। এরপর পাকিস্তানিরা তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বাংকার-ট্রেঞ্চের ভেতর থেকে রিকোয়েললেস রাইফেল, মেশিনগান, হালকা মেশিনগান, মর্টার, রাইফেল প্রভৃতি অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আক্রমণ মোকাবিলা করতে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধাদের মর্টার প্লাটুন পাকিস্তানিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। তার পরও পাকিস্তানি সেনারা প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি দলের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান দিয়ে সামনে এগিয়ে আসে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা চরম সংকটের মধ্যে পড়েন। তখন মনির আহমেদ সাহসিকতার সঙ্গে তার দলের সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। তাদের পাল্টা হামলায় পাকিস্তানিদের অগ্রযাত্রা থেমে যায়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলগত কারণে পেছনে হটে যান। পরে পাকিস্তানিরা সেখানেও আক্রমণ করে। এ যুদ্ধে পাকিস্তানিদের পক্ষে ন্যূনতম ২৭০ জন হতাহত হয়। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৩-০১-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৬০৪। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩১৮। আইএসবিএন 9789843338884 

পাদটীকা[সম্পাদনা]

বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]