নাগরিকত্ব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

নাগরিকত্ব বা নাগরিকতর হলো কোনো সার্বভৌম রাষ্ট্র বা জাতির একজন আইনস্বীকৃত সদস্য হিসেবে পাওয়া কোনো ব্যক্তির পদমর্যাদা। অন্যভাবে যেকোন অঞ্চলের অধিবাসীর সে অঞ্চলে বসবাস করার স্বীকৃতি ও তা স্বরূপ যেসব সুবিধা ও দায়িত্ব বর্তায় তার সামষ্টিকরূপকে নাগরিকতা বলে। একজন ব্যক্তির একাধিক নাগরিকত্ব থাকতে পারে। যদি কোনো ব্যক্তির কোনো দেশেরই নাগরিকত্ব না থাকে তবে তাকে রাষ্ট্রহীন বলা যায়। যখন কেউ রাষ্ট্রের সীমানায় অবস্থান করে এবং তার নাগরিকত্ব সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না তখন তাকে বলা হয় বর্ডার-ল্যান্ডার। [১]

অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব অনুষ্ঠানে পিটার ডুটন।

ইংরেজিতে জাতীয়তাকে প্রায়শই নাগরিকত্বের সমার্থক হিসেবে ধরা হয়, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক আইনে। যদিও কখনো কখনো এই শব্দটি দ্বারা কোনো একটি জাতির সদস্য হিসেবেও বোঝানো হয়ে থাকে। কিছু কিছু দেশ, যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব এবং জাতীয়তা ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে।

নাগরিকত্ব নির্ধারণ[সম্পাদনা]

প্রত্যেক দেশেরই নিজস্ব নীতি, বিধান এবং মানদন্ড রয়েছে যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে নাগরিক হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। একজন ব্যক্তিকে কয়েকটি বিষয়ের ভিত্তিতে নাগরিক হিসেবে অভিহিত করা যায় বা তাকে নাগরিকত্ব দেয়া যায়। সাধারণত একজন ব্যক্তি জন্মের মাধ্যমে সরাসরি একটি দেশের নাগরিক হয়ে যায়, আর অন্যান্য বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আবেদন করার প্রয়োজন পড়ে।

  • জন্মসুত্রে (jus sanguinis)- যদি কোনো ব্যক্তির পিতা-মাতার যে কোনো একজন বা উভয়ই যদি কোনো একটি দেশের নাগরিক হন, তবে সেই ব্যক্তির সেই দেশের নাগরিক হওয়ার অধিকার থাকতে পারে। পূর্বে এটি শুধুমাত্র পিতার দিক থেকে বিবেচনা করা হত, কিন্তু বিংশ শতকের লিঙ্গ সমতার ফলে এটি এখন সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। নাগরিকত্ব দেয়া হয় কোনো ব্যক্তির পূর্বপুরুষ বা তার জাতিগত পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে। এই বিষয়টি ইউরোপের জাতি-রাষ্টের ধারণার সাথে সম্পর্কিত। রক্তের সম্পর্ক থাকলে যদি কোনো ব্যক্তির পিতা-মাতার একটি দেশের নাগরিকত্ব থাকে এবং সে যদি সেই দেশের বাইরে জন্মগ্রহণ করে তবে সেও নাগরিক বলে গন্য হবে। কিছু দেশ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য) এই নাগরিকত্বের অধিকারকে কয়েকটি প্রজন্মের মাঝেই সিমাবদ্ধ করে দিয়েছে। আবার কিছু দেশ (জার্মানি, আয়ারল্যান্ড) শুধু মাত্র তাদেরকেই নাগরিকত্ব দেয় যারা প্রত্যেক প্রজন্মকে তার পররাষ্ট্র বিষয়ক দপ্তরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিবন্ধ করে রাখে। অন্য দিকে কয়েকটি দেশ (ফ্রান্স, ইতালি, সুইজারল্যান্ড) প্রজন্মের কোনো ধরনের সিমাবদ্ধতা রাখে না, পূর্বপুরুষ নাগরিক হলে যে কেউ নাগরিকত্বের দাবি করতে পারে। বেশিরভাগ দেশের দেওয়ানি আইনেই এই ধরনের নাগরিকত্বের অস্তিত্ব বিদ্যমান।
  • একটি দেশে জন্মগ্রহণের মাধ্যমে (jus soli)- কিছু ব্যক্তি যে দেশে জন্মগ্রহণ করেন, স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সেই দেশের নাগরিক হয়ে যান। ইংল্যান্ড থেকে এই ধরনের নাগরিকত্বের উৎপত্তি হয়েছিল। যারাই এ রাজ্যে জন্মগ্রহণ করতো তারা রাজ্যের নাগরিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হত এবং বেশির ভাগ দেশেই এটি একটি সাধারণ আইন। আমেরিকার বেশিরভাগ দেশ নিঃশর্তভাবে তাদের দেশে জন্মানোর কারণে নাগরিকত্ব দিয়ে থাকে, যদিও অন্যান্য সকল দেশে এটি প্রায় বিলুপ্তই হয়ে গেছে।
    • অনেক ক্ষেত্রে, ভূখণ্ড অথবা পিতামাতার সম্পর্ক কিংবা উভয়টির মাধ্যমেই দেশে জন্মানোর মাধ্যমে প্রাপ্ত (jus soli) এবং জন্মসূত্রে প্রাপ্ত(jus sanguinis) নাগরিকত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।
  • বিবাহসূত্রে (jus matrimonii)- অনেক দেশ একজন ব্যক্তিকে সে দেশের নাগরিককে বিয়ে করার কারণে দ্রুত নাগরিকত্ব দিয়ে থাকে। এই ধরনের নাগরিকত্ব দেওয়া দেশ গুলোতে ভুয়া বিবাহ সনাক্তের চেষ্টা করার নিয়ম আছে। এক্ষেত্রে একসাথে বসবাস করার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও একজন নাগরিক টাকার বিনিময়ে নাগরিক নন এমন ব্যক্তি বিয়ে করে। কিছু দেশ (যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, কানাডা) বিবাহের মাধ্যমে নাগরিকত্ব দিয়ে থাকে যদি বিদেশী পতি কিংবা পত্নী যে দেশের নাগরিকত্ব চায় সেই দেশের স্থায়ী বাসিন্দা হয়। অন্যান্য দেশ (সুইজারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ) একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে বিদেশী পতি বা পত্নীর নাগরিকত্ব দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কিছু কিছু সময় তাদের ভাষাগত দক্ষতা ও সে দেশের সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার বিষয়টিও যাচাই করা হয় (যেমন- পতি/পত্নী যে দেশের নাগরিক সেখানে নিয়মিত যাওয়া আসা)।
  • রাষ্ট্র প্রদত্ত নাগরিকত্ব- একটি দেশে আইনানুযায়ী প্রবেশকৃত এবং সে দেশে বসবাসের অনুমতি প্রাপ্ত অথবা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্ত ব্যক্তিকে রাষ্ট্র সাধারণত নাগরিকত্ব দিয়ে থাকে। তারা সাধারণত সেখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বসবয়াস করে। অনেক রাষ্ট্র এধরনের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য কিছু শর্তারোপ করে। যেমন, তার ভাষাজ্ঞান যাচাই, পূর্বের দেশের জীবনযাপন, ভাল আচারণ (কোনো গুরুতর অপরাধের দলিল না থাকা), নৈতিক চরিত্র (যেমন, মাতাল না হওয়া বা জুয়া না খেলা), নতুন রাষ্ট্র ও তার শাসকের প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ এবং পুর্বের দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করা।
  • বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব বা অর্থনৈতিক নাগরিকত্ব- বিত্তশালী লোকজন নাগরিকত্ব এবং একটি পাসপোর্টের বিনিময়ে সম্পত্তি বা ব্যবসায় বিনিয়োগ, সরকারী বন্ধক কেনা অথবা সরাসরি নগদ অর্থ দান করে। যদিও এটি বৈধ এবং সাধারণত এর সংখ্যা সিমিত, তবুও এই পদ্ধতিটি বিতর্কিত বলে বিবেচিত হয়। বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেতে সর্বনিম্ন ১০০,০০০ মার্কিন ডলার (৭৪,০০০ ব্রিটিশ পাউন্ড) থেকে সর্বোচ্চ ২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (২.১৯ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড) খরচ করতে হবে।
  • শ্রেণী বহির্ভূত- অতীতে কাউকে নাগরিক হিসেবে অবিহিত করার ক্ষেত্রে বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ এবং স্বাধীন অবস্থার (ক্রীতদাস না) ভিত্তিতে ব্যতিক্রম ছিল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই ব্যতিক্রম গুলো আর প্রয়োগ করা হয় না। আধুনিককালে উদাহরণ হিসেবে, কিছু আরব দেশ আছে যারা খুব কালেভদ্রে অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেয়। যেমন, কাতার বিদেশী খেলোয়াড়দের নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য খ্যাত, কিন্তু নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য সেই ব্যক্তিদের ইসলামে বিশ্বাসের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করতে হবে। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৩ সালের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রজনন প্রযুক্তির মাধ্যমে জন্ম নেয়া শিশু এবং আন্তর্জাতিকভাবে দত্তক নেওয়া শিশুদের নাগরিকত্ব প্রদান করে। পিতামাতা নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৩ সালের আগে দত্তক নেওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েই গেছে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

নগররাষ্ট্র[সম্পাদনা]

অনেক চিন্তাবিদ নাগরিকত্বের ধারণার উৎস হিসেবে প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রকে নির্দেশ করেন।অনেক

রোমান ধারণা[সম্পাদনা]

মধ্যযুগ[সম্পাদনা]

রেনেসাঁ[সম্পাদনা]

আধুনিক কাল[সম্পাদনা]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র[সম্পাদনা]

সোভিয়েত ইউনিয়ন[সম্পাদনা]

জাতীয় সমাজতন্ত্র[সম্পাদনা]

ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ[সম্পাদনা]

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন[সম্পাদনা]

কমনওয়েলথ[সম্পাদনা]

উপজাতিক[সম্পাদনা]

শিক্ষা[সম্পাদনা]

আয়ারল্যান্ড[সম্পাদনা]

যুক্তরাজ্য[সম্পাদনা]

বিদ্যালয়ের শিক্ষার সমালোচনা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Coplan, David (২০১০)। "Introduction: From empiricism to theory in African border studies."। Journal of Borderlands Studies