সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মাননীয় সংসদ সদস্য
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম
২০২৩ সালে মুহাম্মদ ইবরাহিম
কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
১০ জানুয়ারি ২০২৪
পূর্বসূরীজাফর আলম
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1949-10-04) ৪ অক্টোবর ১৯৪৯ (বয়স ৭৪)
উত্তর বুড়িশ্চর, চট্টগ্রাম, পূর্ব পাকিস্তান
জাতীয়তাবাংলাদেশী
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
দাম্পত্য সঙ্গীফোরকান ইবরাহিম
সন্তান১ পুত্র, ১ কন্যা
পিতামাতা
  • এস এম হাফেজ আহমেদ (বাবা)
  • সামসুন্নাহার (মা)
বাসস্থানডিওএইচএস মহাখালী, ঢাকা, বাংলাদেশ
প্রাক্তন শিক্ষার্থীফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ
পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশারাজনীতিবিদ
জীবিকাসামরিক কর্মকর্তা
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য পাকিস্তান (১৯৭১ এর পূর্বে)
 বাংলাদেশ
শাখা পাকিস্তান সেনাবাহিনী
 বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
পদ মেজর জেনারেল
ইউনিটইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট
যুদ্ধবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (জন্ম: ৪ অক্টোবর, ১৯৪৯) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ যিনি বর্তমানে কক্সবাজার-১ আসনের দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১][২] তিনি বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার উত্তর বুড়িশ্চর গ্রামে। তার বাবার নাম এস এম হাফেজ আহমেদ এবং মায়ের নাম মা শামসুন নাহার। তার স্ত্রীর নাম ফোরকান ইবরাহিম। তাদের এক মেয়ে, এক ছেলে।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম কর্মরত ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরিরত অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৯ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন।

১৬ ডিসেম্বর ২০১৫-তে, বিশেষ সুরক্ষা বাহিনী তাকে বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য বঙ্গভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে বাধা দেয় কারণ তার নামটি একটি বর্জন তালিকায় ছিল। ১৯৮০ সালের পর এই প্রথম তাকে রাষ্ট্রপতির বাস ভবনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

ইব্রাহিম একজন লেখক এবং বক্তা। তিনি ঢাকার সংবাদপত্র এবং প্রোব নামের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকাটির জন্য অনিয়মিত কলাম লেখেন।

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম অবসরের পর মওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশন নামের একটি অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হন। ২০০৬-০৮ সালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের সময় তিনি ডিসেম্বর ২০০৭ সালে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ৫ ডিসেম্বর ২০১৫ এ পুনরায় দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের সদস্য। ২০১৮ সালে তার দলটি কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন[সম্পাদনা]

২২ নভেম্বর ২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিবাংলাদেশ মুসলিম লীগের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক জোট 'যুক্তফ্রন্ট' থেকে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং নিজেই এই ফ্রন্টের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন।[৩] মুহাম্মদ ইবরাহিম চট্টগ্রাম-৫ আসনে মনোনয়ন নিলেও পরবর্তীতে তিনি ঐ আসন হতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।[৪] অতঃপর তিনি কক্সবাজার-১ আসন হতে প্রার্থীতা ঘোষণা করেন এবং তার প্রার্থীতা বৈধ ঘোষণা করা হয়।[৫][৬]

৭ জানুয়ারি ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুহাম্মদ ইবরাহিম ঐ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাফর আলমকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন।[৭] ১০ জানুয়ারি মুহাম্মদ ইবরাহিম সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।[৮][৯]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্তর্গত আখাউড়া ছিলো ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথে। এর পাশেই ছিলো ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা। সেখানে ১ ডিসেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। পরে ৪ ডিসেম্বর ভোরে আখাউড়া মুক্ত হয়। ‘সি’ কোম্পানির দলনেতা ইবরাহিমও সহযোদ্ধাদের নিয়ে সেই যুদ্ধে অংশ নেন। সেদিন যুদ্ধের রাতে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমসহ মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকজন দলনেতা তৈরী হন মুখোমুখি যুদ্ধের জন্য। লক্ষ্য আক্রমণ করবেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে। ভয়াবহ এ সম্মুখ যুদ্ধে বেশ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেও সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বিচলিত হননি। নির্ধারিত সময়ে আগেই ভারত থেকে শুরু হয় দূরপাল্লার গোলাবর্ষণ। একনাগাড়ে অনেকক্ষণ ধরে চলে তা। গোলাবর্ষণ শেষ হওয়া মাত্র ইবরাহিম সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর আর শুরু হয় মেশিনগান, রাইফেলসহ অন্যান্য অস্ত্রের অবিরাম গোলাগুলি। দুই পক্ষে সমানতালে যুদ্ধ চলে। যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণের তীব্রতা বেড়ে যায় তবে সে সময়েও মুহাম্মদ ইবরাহিম দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন এবং সহযোদ্ধাদের মধ্যে সাহস যোগান। প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্যেও নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে যান তিনি এবং সহযোদ্ধারা যাতে ছত্রভঙ্গ না হয়ে যাওয়া যায় সেদিকেও নজর রাখেন। তার প্রচেষ্টায় সহযোদ্ধারা অনুপ্রাণিত হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে পাল্টা আক্রমণ চালান। তাদের সাহসিকতায় থেমে যায় বেপরোয়া পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা।[১০]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২৪-১০-২০১২"। ২০১৮-১০-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. "মুহাম্মদ ইবরাহিমের কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেবে যুক্তফ্রন্ট"ডেইলি স্টার বাংলা। ২০২৩-১১-২২। 
  4. "প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেন দিলীপ বড়ুয়া ও সৈয়দ ইবরাহিম"আরটিভি। ২০২৩-১২-১৭। 
  5. "এবার কক্সবাজার থেকে মনোনয়নপত্র নিলেন ইবরাহিম"আরটিভি। ২০২৩-১১-২৯। 
  6. "আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল, বৈধ কল্যাণ পার্টির ইবরাহিমের"প্রথম আলো। ২০২৩-১২-০৩। 
  7. "কক্সবাজার-১ আসনে কল্যাণপার্টির ইবরাহিম জয়ী"দৈনিক ইনকিলাব। ২০২৪-০১-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-০৮ 
  8. "দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত প্রার্থীর নাম ঠিকানা সম্বলিত গেজেট বিজ্ঞপ্তি"বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ২০২৪-০১-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-১১ 
  9. "শপথ নিয়ে এমপি হওয়ার যে অনুভূতি জানালেন ইবরাহিম"যুগান্তর। ২০২৪-০১-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-১১ 
  10. মতিউর রহমান (২০১৫)। সম্মুখযুদ্ধ ১৯৭১: মুক্তিযোদ্ধাদের কলমে। ঢাকা, বাংলাদেশ: প্রথমা প্রকাশন। পৃষ্ঠা ২০৭। আইএসবিএন 9789849120216 

পাদটীকা[সম্পাদনা]