২০১৭–১৮ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ হলো উয়েফা কর্তৃক আয়োজিত ইউরোপীয় দলগুলোর ফুটবল প্রতিযোগিতার ৬৩তম আসর এবং ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস ক্লাব হতে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে নাম পরিবর্তন করার পর এটি ২৬তম আসর।
উয়েফার ৫৫টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ৫৪টি রাষ্ট্রের সর্বমোট ৭৯টি দল ২০১৭–১৮ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে অংশগ্রহণ করে (শুধু লিশটেনস্টাইন এর ব্যতিক্রম, কারণ তারা কোনো ঘরোয়া লিগ আয়োজন করে না)।[৪] দেশ গুণাঙ্ক নিয়ম অনুসারে উয়েফার এসোসিয়েশন র্যাঙ্কিং করা হয়, যার মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক এসোসিয়েশন হতে কতটি দল অংশগ্রহণ করবে তা নির্ধারণ করা হয়:[৫]
এসোসিয়েশন ১-৩ হতে ৪টি করে দল যোগ্যতা লাভ করে।
এসোসিয়েশন ৪-৬ হতে ৩টি করে দল যোগ্যতা লাভ করে।
এসোসিয়েশন ৭-১৫ হতে ২টি করে দল যোগ্যতা লাভ করে।
এসোসিয়েশন ১৬-৫৫ (ব্যতিক্রম লিশটেনস্টাইন) হতে ১টি করে দল যোগ্যতা লাভ করে।
২০১৬-১৭ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ২০১৬-১৭ উয়েফা ইউরোপা লিগের বিজয়ীদের এই আসরে খেলার একটি অতিরিক্ত প্রবেশাধিকার থাকে, যার মাধ্যমে তারা যদি তাদের ঘরোয়া লিগের মাধ্যমে ২০১৭–১৮ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন না করে তবুও এই আসরে খেলতে পারবে। কারণ একটি এসোসিয়েশন হতে সর্বোচ্চ ৫টি দল চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে পারে, যদি চ্যাম্পিয়নস লিগের বিজয়ী এবং ইউরোপা লিগের বিজয়ী উভয়ই উয়েফার শীর্ষ ৩ সদস্য রাষ্ট্রের যেকোনো একটির অন্তর্ভুক্ত হয় এবং তাদের নিজস্ব ঘরোয়া লিগে তারা শীর্ষ ৪ এর বাহিরে লিগ শেষ করে তবে উক্ত লিগে ৪র্থ স্থান অর্জনকারী দলটি ইউরোপা লিগে প্রবেশ করবে।[৬] এই আসরের জন্য:
২০১৬-১৭ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ বিজয়ী, রিয়াল মাদ্রিদ, তাদের ঘরোয়া লিগের মাধ্যমে এই আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে, এর অর্থ এই যে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার জন্য রিয়াল মাদ্রিদের অতিরিক্ত প্রবেশাধিকারটি প্রয়োজন হয়নি।
২০১৬-১৭ উয়েফা ইউরোপা লিগ বিজয়ী, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, তাদের ঘরোয়া লিগের মাধ্যমে এই আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেনি, এর অর্থ এই যে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার জন্য ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অতিরিক্ত প্রবেশাধিকারটি প্রয়োজন হয়েছে।
২০১৭–১৮ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের জন্য, ২০১৬ সালে উয়েফা দেশ গুণাঙ্ক অনুযায়ী প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্র হতে কতটি দল খেলবে তা বরাদ্দ করা হয়েছে, যেটি ২০১১-১২ হতে ২০১৫-১৬ পর্যন্ত ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় তাদের কর্মক্ষমতার অপর ভিত্তি করে নির্ধারিত।[৯][১০]
এই দেশ গুণাঙ্কের দল বরাদ্দ ছাড়াও, এসোসিয়েশন কর্তৃক চ্যাম্পিয়নস লিগে অতিরিক্ত দলও খেলতে পারে, নিম্নে উল্লিখিত:
(অ.প.) - উয়েফা ইউরোপা লিগ বিজয়ীর জন্য অতিরিক্ত প্রবেশাধিকার প্রযোজ্য
সাধারণ প্রবেশ তালিকায়, চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাধারী দল গ্রুপ পর্বে প্রবেশ করবে।[৮] যাহোক, যেহেতু রিয়াল মাদ্রিদ ইতিমধ্যেই গ্রুপ পর্বে খেলার জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে (২০১৬-১৭ লা লিগা বিজয়ী হিসেবে), তাই চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে খেলার জন্য সরাসরি প্রবেশাধিকার ইউরোপা লিগের শিরোপাধারী দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে প্রদান করা হয়।[১১][১২][১৩]
পর্বসমূহ
যেসকল দল এই পর্বে প্রবেশ করে
যেসকল দল পূর্ববর্তী পর্ব হতে প্রবেশ করে
প্রথম বাছাইপর্ব (১০টি দল)
এসোসিয়েশন ৪৬-৫৫ থেকে ১০টি চ্যাম্পিয়ন
দ্বিতীয় বাছাইপর্ব (৩৪টি দল)
এসোসিয়েশন ১৬-৪৫ থেকে ২৯টি চ্যাম্পিয়ন (ব্যতিক্রম লিশটেনস্টাইন)
প্রথম বাছাইপর্ব থেকে ৫টি বিজয়ী
তৃতীয় বাছাইপর্ব
চ্যাম্পিয়নস রুট (২০টি দল)
এসোসিয়েশন ১৩-১৫ থেকে ৩টি চ্যাম্পিয়ন
দ্বিতীয় বাছাইপর্ব থেকে ১৭টি বিজয়ী
লিগ রুট (১০টি দল)
এসোসিয়েশন ৭-১৫ থেকে ৯টি রানার্স-আপ
এসোসিয়েশন ৬ থেকে ১টি তৃতীয় স্থান অধিকারী
প্লে-অফ পর্ব
চ্যাম্পিয়নস রুট (১০টি দল)
তৃতীয় বাছাইপর্ব থেকে ১০টি বিজয়ী (চ্যাম্পিয়নস রুট)
^ফ্রান্স (FRA):এএস মোনাকো হলো মোনাকোর একটি ক্লাব (যারা উয়েফার সদস্য নয়), কিন্তু মোনাকো ফ্রান্সের একটি ক্লাব হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলে থাকে (তাদের দ্বারা অর্জিত যেকোনো গুণাঙ্ক ফ্রান্সের সর্বমোট গুনাঙ্কের সাথে যোগ হয়)।
এই আসরের সকল পর্বের সময়সূচী নিম্নে উল্লেখ করা হলো (সকল ড্র উয়েফার প্রধান সদরদপ্তর সুইজারল্যান্ডেরনিওঁয়ে অনুষ্ঠিত হয়, যদি না অন্যথায় হওয়ার জন্য বিবৃতি প্রদান করা হয়)।[৮][১৬][১৭]
বাছাইপর্বে এবং প্লে-অফ পর্বে, দলগুলোকে ২০১৭ উয়েফা ক্লাব গুণাঙ্কের ওপর ভিত্তি করে বাছাই এবং অ-বাছাই নামে দুইটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে,[১৮][১৯][২০] এবং তারপরে দুই লেগের হোম এবং অ্যাওয়ে সমতায় ভাগ করা হয়েছে। একই এসোসিয়েশনের দলগুলোকে কখনো একে অপরের বিপক্ষে ড্র করা হয় না।
২০১৭ সালে ১৯শে জুন, ১২টায় সিইএসটিউয়েফার প্রধান সদরদপ্তর সুইজারল্যান্ডেরনিওঁয়ে দ্বিতীয় বাছাইপর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে (প্রথম বাছাইপর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার পর)।[২১]
তৃতীয় বাছাইপর্বকে দুইটি আলাদা বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে: চ্যাম্পিয়নস রুট (লিগের চ্যাম্পিয়নদের জন্য) এবং লিগ রুট (লিগের অ-চ্যাম্পিয়নদের জন্য)। উভয় বিভাগের হেরে যাওয়া দলগুলো ২০১৭-১৮ উয়েফা ইউরোপা লিগের প্লে-অফ পর্বে প্রবেশ করেছে।
প্লে-অফ পর্বকে দুইটি আলাদা বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে: চ্যাম্পিয়নস রুট (লিগের চ্যাম্পিয়নদের জন্য) এবং লিগ রুট (লিগের অ-চ্যাম্পিয়নদের জন্য)। উভয় বিভাগের হেরে যাওয়া দলগুলো ২০১৭-১৮ উয়েফা ইউরোপা লিগের গ্রুপ পর্বে প্রবেশ করেছে।
২০১৭ সালে ২৪শে আগস্ট, ১৮টায় সিইএসটিউয়েফার প্রধান সদরদপ্তর মোনাকোরগ্রিলমালদি ফোরামে গ্রুপ পর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে।[২৪] সর্বমোট ৩২টি দলকে ৮টি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়েছে, যেখানে প্রতিটি গ্রুপে ৪টি করে দল রয়েছে। উক্ত ড্রয়ে নিয়ম ছিল যে একই এসোসিয়েশনের দলগুলোকে পরস্পরের বিপক্ষে ড্র করা যাবে না। ড্রয়ের জন্য, দলগুলোকে ৪টি পাত্রে নিম্নলিখিত নীতির উপর ভিত্তি করে ভাগ করা হয়েছে (২০১৫-১৬ মৌসুমের শুরু উপস্থাপিত):[২৫][২৬]
পাত্র ১-এ শিরোপাধারী দল এবং ২০১৬ উয়েফা দেশ গুণাঙ্কের উপর ভিত্তি করে শীর্ষ ৭টি এসোসিয়েশনের চ্যাম্পিয়নদের রাখা হয়েছে।[৯][১০] শিরোপাধারী দল হিসেবে, রিয়াল মাদ্রিদ, শীর্ষ ৭টি এসোসিয়েশনের একটির চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ৮ম এসোসিয়েশনের চ্যাম্পিয়নকে পাত্র ১-এ উন্নীত করা হয়েছে। (আইন নিবন্ধ ১৩.০৫)।[৫]
প্রত্যেক গ্রুপে, দলগুলো প্রত্যেক দলের সাথে রাউন্ড-রবিন নিয়মে নিজস্ব মাঠে এবং অ্যাওয়ে মাঠে ম্যাচ খেলবে। প্রত্যেক গ্রুপের বিজয়ী দল এবং রানার্স-আপ দল রাউন্ড অফ ১৬-এর জন্য উন্নীত হবে, যখন প্রত্যেক গ্রুপের তৃতীয় স্থান অধিকারী দলগুলো ২০১৭-১৮ উয়েফা ইউরোপা লিগের রাউন্ড অফ ১৬-এ প্রবেশ করবে। এই পর্বের ম্যাচডেগুলো হলো: ১২-১৩ সেপ্টেম্বর, ২৬-২৭ সেপ্টেম্বর, ১৭-১৮ অক্টোবর, ৩১ অক্টোবর - ১ নভেম্বর, ২১-২২ নভেম্বর এবং ৫-৬ ডিসেম্বর ২০১৭।
যেসকল ক্লাবগুলো গ্রুপ পর্বে খেলার জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে তাদের যুব দলগুলোও ২০১৭-১৮ উয়েফা যুব লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে, যেখানে তারা শীর্ষ ৩২ এসোসিয়েশনের চ্যাম্পিয়ন দলগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করবে।
সর্বমোট ১৭টি জাতীয় এসোসিয়েশন এইবারের আসরের গ্রুপ পর্বে প্রতিনিধিত্ব করছে। কারাবাগ এবং আরবি লিপজিগ এইবারের আসরের গ্রুপ পর্বে খেলার মাধ্যমে চ্যাম্পিয়নস লিগে অভিষেক করেছে। কারাবাগ হলো আজারবাইজানকে চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রতিনিধিত্ব করা প্রথম দল।[২৭]