মোহাম্মদ আব্দুল্লাহেল কাফী
মোহাম্মদ আব্দুল্লাহেল কাফী | |
---|---|
জন্ম | ১৯০০ |
মৃত্যু | ৪ জুন ১৯৬০ |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯০০-১৯৪৭) পাকিস্তান (১৯৪৭-১৯৬০) |
মাতৃশিক্ষায়তন | কলকাতা মাদ্রাসা, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ |
পেশা | রাজনীতিবিদ, লেখক |
প্রতিষ্ঠান | পূর্ব পাকিস্তান জমঈয়তে আহলে হাদিস |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | ইসলামী শাসনতন্ত্রের সূত্র, নবুওতে মোহাম্মদী আহলে হাদীস পরিচিতি, ধন বণ্টনের রকমারি ফর্মুলা, আল-ইসলাম ও কমিউনিজম |
রাজনৈতিক দল | ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুসলিম পার্টি, মুসলিম ন্যাশনাল পার্টি |
আন্দোলন | অসহযোগ আন্দোলন, খিলাফত আন্দোলন |
পিতা-মাতা | সৈয়দ আবদুল হাদি (বাবা) |
পুরস্কার | বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬০) |
মোহাম্মদ আব্দুল্লাহেল কাফী (১৯০০ - ৪ জুন ১৯৬০) ছিলেন একজন বাঙালি রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, লেখক। সমাজসেবক হিসেবে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসা ও ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রবন্ধ ও গবেষণার জন্য ১৯৬০ সালে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন।[১]
জন্ম[সম্পাদনা]
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ-হিল কাফি ১৯০০ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বর্ধমান জেলার টুবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ছিল দিনাজপুর জেলার বস্তিয়াড়া গ্রামে। তার বাবার নাম সৈয়দ আবদুল হাদি।[১]
শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]
শৈশবে বাড়িতে তার শিক্ষা শুরু হয়। বাবার কাছে তিনি আরবি এবং মায়ের কাছে উর্দু ও ফারসি শেখেন। ১৯০৬ সালে তিনি স্থানীয় নূরুল হুদা মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯০৯ সাল পর্যন্ত তিন বছর সেখানে লেখাপড়া করেন। এরপর রংপুরের কৈলাসরঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয় এবং হুগলি জেলা স্কুলে পড়ালেখা করেছেন।[১]
১৯১৭ সালে তিনি কলকাতা মাদ্রাসা থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। ১৯১৯ সালে তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। এরপর সেন্ট জেভিয়ার্সে তিনি বিএ শ্রেণীতে ভর্তি হন। এসময় অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন শুরু হলে তিনি ইংরেজি শিক্ষা ত্যাগ করেন।[১]
রাজনীতি[সম্পাদনা]
তিনি অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি ১৯২২ সালে জমঈয়তে উলামায়ে বাঙ্গালার সহকারী সম্পাদক হন। ১৯২৬ সালে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুসলিম পার্টির পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি দলের সেক্রেটারি এবং নির্বাচন বোর্ডের সদস্য ছিলেন। ১৯৩০ সালে মুসলিম ন্যাশনাল পার্টির নেতা হিসেবে তিনি আইন অমান্য আন্দোলনে দিনাজপুরে নেতৃত্বে দিয়েছেন। আন্দোলনের সমর্থনে বক্তব্য দেয়ার জন্য তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৩২ সালে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেন।[১]
ইসলামি কর্মকাণ্ড[সম্পাদনা]
রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে তিনি ইসলামি কর্মে নিয়োজিত হন। ১৯৩৫ সালে রংপুরের হারাগাছা বন্দরে অনুষ্ঠিত উত্তরবঙ্গ আহলে হাদিস সম্মেলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৪০ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত জাতীয়তাবাদি মুসলিম সম্মেলনে তিনি বাংলার প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৪৪ ও ১৯৪৫ সালে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত আহলে হাদিস সম্মেলনে তিনি বাংলার প্রতিনিধি ছিলেন। ১৯৪৬ সালে তিনি নিখিল বঙ্গ ও আসাম জমঈয়তে আহলে হাদিসের সভাপতি নির্বাচিত হন। আহলে হাদিস আন্দোলনকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনপ্রিয় করার জন্য এসময় তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।[১]
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সংগঠনের নাম বদলে পূর্ব পাকিস্তান জমঈয়তে আহলে হাদিস (বর্তমানে বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস) রাখা হয় এবং সংগঠনের সদরদপ্তর কলকাতা থেকে পাবনায় স্থানান্তর করা হয় (বর্তমানে সংগঠনটির প্রধান কার্যালয় ঢাকায়[২])। এসময় তিনি ইসলামি সংবিধান চালুর পক্ষে তিনি মতপ্রকাশ করেন।[১]
সংবাদপত্র[সম্পাদনা]
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ-হিল কাফি ১৯২১ সালে উর্দু দৈনিক জামানা পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছিলেন। ১৯২৪ সালে তিনি সাপ্তাহিক সত্যাগ্রহী পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি মাসিক তর্জমানুল হাদিস পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি সাপ্তাহিক আরাফাত পত্রিকা প্রকাশ করেন।[১]
রচনাবলি[সম্পাদনা]
লেখালেখি ও গবেষণার জন্য তার খ্যাতি ছিল। তিনি মোট ২৬টি বই লিখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে আল ইসলাম বনাম কমিউনিজম, আহলে হাদীস পরিচিতি, একটি পত্রের জবাব, কালেমা তাইয়েবা, তিন তালাক প্রসঙ্গ, নবুয়াতি মুহাম্মাদী, পীরদের ভ্রান্ত আকিদা, ফিরকাবন্দি বনাম অনুসরণীয় ইমামগণের নীতি, ইসলামী শাসনতন্ত্রের সূত্র,
, ধন বণ্টনের রকমারি ফর্মুলা ইত্যাদি।[১]
পুরস্কার[সম্পাদনা]
প্রবন্ধ ও গবেষণার জন্য ১৯৬০ সালে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন।[১]
মৃত্যু[সম্পাদনা]
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ-হিল কাফি ১৯৬০ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।[১]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর, সম্পাদকগণ (২০১২)। "কাফী, মুহম্মদ আবদুল্লাহ-হিল"। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ "বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস"। ২০১৯-১১-২৭। ২০১৮-১১-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১২।