আবুল কাসেম ফজলুল হক
আবুল কাসেম ফজলুল হক | |
---|---|
![]() আবুল কাসেম ফজলুল হক | |
জন্ম | আবুল কাসেম ফজলুল হক ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৪ সাল পাকুন্দিয়া উপজেলা, কিশোরগঞ্জ |
পেশা | অধ্যাপক |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() ![]() |
ধরন | সাহিত্য, প্রবন্ধ |
সাহিত্য আন্দোলন | মার্কসবাদী সাহিত্যতত্ত্ব |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | কালের যাত্রার ধ্বনি, আশা আকাঙ্ক্ষার সমর্থনে |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | বাংলা একাডেমী পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার |
দাম্পত্যসঙ্গী | ফরিদা প্রধান |
সন্তান | ফয়সল আরেফিন দীপন |
আবুল কাসেম ফজলুল হক (৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৪৪) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক, লেখক, গবেষক, ঐতিহাসিক, অনুবাদক, সমাজবিশ্লেষক, সাহিত্য সমালোচক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক।[১] তিনি নিরপেক্ষ রাজনৈতিক চিন্তা ও তত্ত্বের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তার রচনা স্বদেশ ভাবনা ও রাজনৈতিক চিন্তায় ঋদ্ধ। প্রগতিপ্রয়াসী মন নিয়ে তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে মত প্রকাশ করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]। তিনি ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।[২]
জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়[সম্পাদনা]
তিনি বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুহাম্মদ আবদুল হাকিম, মা জাহানারা খাতুন এবং তার স্ত্রী ফরিদা প্রধান।[৩] তার একমাত্র সন্তানের নাম ফয়সল আরেফিন দীপন; যিনি জাগৃতি প্রকাশণীর স্বত্বাধিকারি ছিলেন। ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর দীপনকে দুবৃত্তরা হত্যা করে।[৪]
শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]
আবুল কাসেম ফজলুল হক ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিজ্ঞানে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে তিনি স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৬৬ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন।[৩] শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুনির চৌধুরী, আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ, নীলিমা ইব্রাহিমের সংস্পর্শে আসেন এবং প্রগতিশীল ভাবধারায় নিজেকে যুক্ত করেন।
কর্মজীবন[সম্পাদনা]
আবুল কাসেম ফজলুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে দীর্ঘ চার দশক শিক্ষকতা করেছেন। তিনি তার লেখা ও কথায় জনগণের মাঝে সৎ চিন্তা উসকে দিতে চান। তিনি মানুষের মধ্যে শুভবোধের জাগরণ কামনা করেন। তিনি জনগণকে শ্রদ্ধা করেন এবং তাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন না। তিনি এরকম মতপ্রকাশ করেন যে, যেহেতু দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষই ধর্মানুগত, তাই তাদের বিশ্বাসে সরাসরি আঘাত দিলে তাদের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা হারাতে হয়, সমাজ পরিবর্তনের কাজ হয় বিঘ্নিত। তিনি সমাজ সংস্কারের ধারায় 'চার্বাক মতাবলম্বী' লোকায়ত নামক একটি মননশীল পত্রিকা ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সম্পাদনা করছেন।[৫] তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একজন অধ্যাপক এবং বাংলা বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একুশটিরও অধিক গ্রন্থের প্রণেতা ফজলুল হক নজরুল রচনাবলীর সম্পাদনা পরিষদের সদস্য হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।[৩] পত্র-পত্রিকায় তিনি নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। তিনি ২০০০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত স্বদেশ চিন্তা সংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সংগঠনটিকে সৃষ্টি করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধান মুক্তচিন্তক আহমদ শরীফ। এছাড়াও এ সংগঠনটি 'বাংলাদেশের মুক্তি ও উন্নতির কর্মনীতি আটাশ দফা' ১ জানুয়ারি, ২০০৫ থেকে প্রচার করে যেটির রচয়িতা ছিলেন তিনি।[৫] তিনি 'মানুষ' শিরোনামে একটি কবিতা লিখেছিলেন।[৬]
চিন্তাধারা[সম্পাদনা]
গবেষক আবুল কাসেম ফজলুল হকের কাজ পাঠকদের আশাবাদি করে। রাষ্ট্র, সমাজ, মানুষ, রাজনীতি, অর্থনীতি, দর্শন, মনোবিজ্ঞান, নীতিবিজ্ঞান, জ্ঞানতত্ত্ব, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে তার যুক্তিগ্রাহ্য বুদ্ধিদীপ্ত গবেষণামূলক রচনা আমাদের চেতনা ও বিবেচনাবোধকে শাণিত ও সমৃদ্ধ করছে। তিনি দেশের শ্রমিক-কৃষক, গরিব মেহনতি মধ্যবিত্ত সাধারণ জনগণের একজন বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য প্রথম সারির রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিত্ব।[৫] তিনি বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নতির জন্য লিখেন এবং তিনি দেশ ও সমাজের অগ্রগতির বিষয়ে চিন্তাশীল।
প্রকাশিত গ্রন্থাবলী[সম্পাদনা]
- মুক্তিসংগ্রাম (১৯৭২);
- কালের যাত্রার ধ্বনি (১৯৭৩);
- একুশে ফেব্রআরি আন্দোলন (১৯৭৬);
- উনিশশতকের মধ্যশ্রেণি ও বাঙলা সাহিত্য (১৯৭৯);
- নৈতিকতা : শ্রেয়োনীতি ও দুর্নীতি (১৯৮১) ;
- যুগসংক্রান্তি ও নীতিজিজ্ঞাসা (১৯৮৪);
- মাও সেতুঙের জ্ঞানতত্ত্ব (১৯৮৭);
- মানুষ ও তার পরিবেশ (১৯৮৮);
- রাজনীতি ও দর্শন (১৯৮৯);
- বাঙলাদেশের প্রবন্ধ সাহিত্য (১৯৮৯);
- আশা-আকাক্সক্ষার সমর্থনে (১৯৯৩);
- সাহিত্যচিন্তা (১৯৯৫);
- বাঙলাদেশের রাজনীতিতে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা (১৯৯৭);
- অবক্ষয় ও উত্তরণ (১৯৯৮);
- রাজনীতি ও সংস্কৃতি : সম্ভাবনার নবদিগণ্ত (২০০২);
- সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রসঙ্গে (২০০২);
- সংস্কৃতির সহজ কথা (২০০২);
- আধুনিকতাবাদ ও জীবনানন্দের জীবনোৎকণ্ঠা (২০০৪);
- মানুষের স্বরূপ (২০০৭);
- রাষ্ট্রচিন্তায় বাংলাদেশ (২০০৮);
- প্রাচুর্যে রিক্ততা (২০১০);
- শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ (২০১১)।[৩]
অনুবাদ গ্রন্থ
- বার্ন্ট্রান্ড রাসেল প্রণীত : রাজনৈতিক আদর্শ (১৯৭২);
- বার্ন্ট্রান্ড রাসেল প্রণীত : নবযুগের প্রত্যাশায় (১৯৮৯)।
সম্পাদিত গ্রন্থ
- ইতিহাসের আলোকে বাঙলাদেশের সংস্কৃতি (১৯৭৮);
- স্বদেশচিন্তা (১৯৮৫);
- বঙ্কিমচন্দ্র : সার্ধশত জন্মবর্শে (১৯৮৯);
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রণীত : সাম্য (২০০০);
- মোহাম্মদ এয়াকুব আলী চৌধুরী : মানবমুকুট (২০০০);
- এস ওয়াজেদ আলি প্রণীত : ভবিষ্যতের বাঙালি (২০০০);
- আকবরের রাষ্ট্রসাধনা (২০০২)।[৩]
সম্পাদিত সাময়িকপত্র
- সুন্দরম (১৯৬২-৬৩);
- লোকায়ত (১৯৮২ থেকে চলছে)।
পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]
- বাংলাদেশ লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৪)
- বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮১)
- আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৭)
- অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (২০০৬)[৩]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে আবুল কাসেম ফজলুল হক সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- ↑ "সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার দাবি"। প্রথম আলো। ট্রান্সকম গ্রুপ। ২৫ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০১৯।
- ↑ "পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক তালিকা – বাংলা একাডেমি"। বাংলা একাডেমি। ২০১৯-০৮-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২৬।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ সম্পাদিত বাংলা একাডেমী লেখক অভিধান; পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ, সেপ্টেম্বর, ২০০৮; পৃষ্ঠা-৪৮, আইএসবিএন 984-07-4725--8
- ↑ "দীপন হত্যা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক : আবুল কাশেম ফজলুল হক"। দৈনিক ইত্তেফাক। ৩১ অক্টোবর ২০১৫। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ ক খ গ হাসান ফকরী; এসো বিদ্রোহ করি; ঘাস ফুল নদী; ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০০৮; পৃষ্ঠা-১০০-০৪।
- ↑ লোকায়ত; বর্ষ ২৭; সংখ্যা-২; আগস্ট, ২০১০; ঢাকা, পৃষ্ঠা-৬৪-৬৮।
- ১৯৪৪-এ জন্ম
- জীবিত ব্যক্তি
- ২০শ শতাব্দীর প্রাবন্ধিক
- ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী ইতিহাসবিদ
- ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী দার্শনিক
- ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী প্রাবন্ধিক
- ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ
- কিশোরগঞ্জ জেলার ব্যক্তি
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
- বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী
- পুঁজিবাদ বিরোধী
- ফ্যাসিবাদ বিরোধী
- বাঙালি ব্যক্তি
- বাঙালি রাজনীতিবিদ
- বাংলাদেশী অনুবাদক
- বাংলাদেশী প্রাবন্ধিক
- বাংলাদেশী পুরুষ লেখক
- বাংলাদেশী মার্কসবাদী
- বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ
- বাংলাদেশী রাজনৈতিক দার্শনিক
- বাংলাদেশী রাজনৈতিক লেখক
- বাংলাদেশী সক্রিয় কর্মী
- বাংলাদেশী সমাজতন্ত্রী
- বাংলাদেশী সাম্যবাদী
- বাংলাদেশী সাহিত্যিক
- ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- মাওবাদী তাত্ত্বিক
- মার্কসবাদী তাত্ত্বিক
- মার্কসবাদী লেখক
- সংশোধনবাদ বিরোধী
- সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী
- আলাওল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী