আতিউর রহমান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আতিউর রহমান
আতিউর রহমান.jpg
জন্ম৩ই আগস্ট,১৯৫১[১]
পূর্বপাড় দিঘুলী গ্রামে, দিগপাইত ইউনিয়ন,সদর থানা,জামালপুর জেলা,বাংলাদেশ
মাতৃশিক্ষায়তনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাঅর্থনীতিবিদ

আতিউর রহমান খ্যাতনামা বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ। মে ১, ২০০৯ সালে তিনি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১৬ সালের মার্চে সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর ১৫ মার্চ তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন।[২] অর্থনীতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখার কারণে তিনি বেশ পরিচিত। বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই তার লেখা অসংখ্য বই রয়েছে। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।[৩][৪]

২০০১ সালে, তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন।[৩][৫] এছাড়াও বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজ এ একজন সিনিয়র গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।[৬]

জন্ম[সম্পাদনা]

আতিউর রহমান ১৯৫১ সালের বাংলাদেশের জামালপুর জেলার দিগপাইত ইউনিয়নের পূর্বপাড় দিঘুলী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৭০ সালে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। মাধ্যমিক পরীক্ষায় কলেজের সব ছাত্রদের মধ্যে প্রথম এবং ঢাকা বোর্ডের মেধা তালিকায় পঞ্চম হন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম এবং মেধা তালিকায় নবম স্থান অধিকার করেন। এরপর ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স এবং ১৯৭৬ সালে মাস্টার্স পাশ করার পর কমনওয়েলথ স্কলারশীপ নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৭৯ সালে আবার মাস্টার্স করার পর ভর্তি হলেন এমফিল-এ৷ মাস ছয়েকের মধ্যেই তাকে পিএইচডি-তে ট্রান্সফার করে দেয়া হলো৷ তিনি পি.এইচ.ডি শেষ করলেন ১৯৮৩ সালে৷

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৭৫ সালে মাস্টার্স পড়াকালীন সময়ে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে প্ল্যানিং অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৮৩ সালে পি.এইচ.ডি শেষ করে যোগ দেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে ( বিআইডিএস)৷ এ প্রতিষ্ঠানে ছিলেন প্রায় সাতাশ বছর। এছাড়াও তিনি জনতা ব্যাংক অফ ডিরেকটরসের চেয়ারম্যান, সোনালী ব্যাংকেরপরিচালনা পর্ষদের সদস্য, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন মিশনে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ এর মধ্যে রয়েছে ১৯৯৭ সালে দারিদ্র দূরীকরনে বিভিন্ন নির্দেশনার পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য মালদ্বীপে প্রেরিত জাতিসংঘের মিশনে নেতৃত্বদান, ১৯৯৪ সালে ইউ.এন.ডি.পি কান্ট্রি প্রোগ্রাম-ভি এর মিড-টার্ম রিভিউ এর সদস্য, ১৯৮৯; সালে এগ্রিকালচার সেক্টর রিভিউ এর অংশ হিসেবে ইউ.এন.ডি.পি ঢাকার জন্য 'ক্রেডিট ফর দির পুওর' নামে একটি স্টাডি করা ইত্যাদি কাজগুলো উল্লেখযোগ্য৷ এছাড়াও দেশে এবং দেশের বাইরের কয়েকটি ইউনিভার্সিটিতে তিনি ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷ তিনি ২০০০ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।[৭]

রচনাবলি[সম্পাদনা]

  • নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স, ২০১৯
  • সার্ক: রাজনৈতিক অর্থনীতি, ১ঌ৮৬
  • কৃষি প্রশ্ন: ঐতিহাসিক রুশ বিতর্ক এবং তৃতীয় বিশ্বতার প্রসঙ্গিকতা, ১ঌ৮ঌ
  • গরিবের বাজেট ভাবনা ও দারিদ্র বিমোচন, ১ঌঌ৬
  • মুক্তিযুদ্ধেও মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন, ১ঌঌ৭
  • বাঁশের লড়াই বাঁচার লড়াই, ১ঌঌ৭
  • অসহযোগের দিনগুলি: মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্ব, ১ঌঌ৮
  • আরেক বাংলাদেশ, ১ঌঌ৮
  • মানবিক উন্নয়ন, ২০০০
  • জনগণের বাজেট, ২০০০
  • ভাষা আন্দোলন: পরিপ্রেক্ষিত ও বিচার, ১ঌঌ০, ২য় সংস্করণ ২০০০
  • ভাষা আন্দোলন: অংশগ্রহণকারীদের শ্রেণী অবস্থা, ১ঌঌ০, ২য় সংস্করণ ২০০০
  • ভাষা আন্দোলন: অর্থনৈতিক পটভূমি, ১ঌঌ০, ২য় সংস্করণ ২০০০
  • আগামী দিনের বাংলাদেশ, ২০০১
  • বাংলাদেশ উন্নয়নের সংগ্রাম, ১ঌঌ১, ২য় সংস্করণ ২০০২
  • আলো আঁধারের বাংলাদেশ: মানব উন্নয়নের সম্ভবনা ও চ্যালেঞ্জ, ২০০৩
  • মুক্তিযুদ্ধ জনযুদ্ধ: মুক্তিযুদ্ধের আর্থসামাজিক পটভূমি, ২০০৩
  • সুশাসনের সন্ধানে, ২০০৩
  • উন্নয়ন আলাপ, ২০০৩
  • কেমন বাজেট চাই: তৃণমূল মানুষের ভাবনা, ২০০৩
  • অধিকার ভিত্তিক উন্নয়ন, ২০০৪
  • রবীন্দ্র চিন্তায় দারিদ্র ও প্রগতি, ২০০৪

সম্মাননা[সম্পাদনা]

মানবিক উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক তিনি ইন্দিরা গান্ধী স্বর্ণ স্মারক, ২০১১ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।[৮] এছাড়াও, ড. রহমান বাংলাদেশের আর্থিক খাতের উন্নয়নের অসামান্য অবদান রাখায় শেলটেক পুরস্কার, ২০১০-এ ভূষিত হয়েছিলেন। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ অবদানের জন্য ফিলিপাইনের দাতব্য প্রতিষ্ঠান 'গুসি পিস প্রাইজ ফাউন্ডেশন 'যে গুসি শান্তি পুরস্কার-২০১৪' ঘোষণা করে। এখানে তাকে 'পুওরম্যান ইকোনোমিস্ট' খেতাবে ভূষিত করা হয়। [৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Atiur Rahman - Google Search"www.google.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৬ 
  2. "আতিউরের পদত্যাগ, নতুন গভর্নর ফজলে কবির"প্রথম আলো। ১৫ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০১৬ 
  3. "Atiur Rahman new Chairman of Janata Bank"The Independent। ২০০০-০৭-০২। ২০১২-১০-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-১৪Dr Atiur Rahman recently taken over as Chairman of the Board of Directors of Janata Bank ... . A distinguished economist Dr Atiur Rahman was a director of Sonali Bank prior to this assignment. 
  4. "Overview of the Bank"Sonali Bank। ২০০৫। ২০০৭-০৭-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-১৪Sonali Bank, the largest & leading commercial bank of the country ... 
  5. "Overview of the Bank"Janata Bank। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-১৪Janata Bank, the second largest commercial bank in Bangladesh ... 
  6. "ঢাবি 'বঙ্গবন্ধু চেয়ার' পদে অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান"বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ৩১ অক্টোবর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  7. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৩০ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০১২ 
  8. দৈনিক কালের কণ্ঠ, মুদ্রিত সংস্করণ, শিল্প বাণিজ্য, পৃষ্ঠাঃ ৫, তারিখঃ ১৬ মার্চ, ২০১২ইং
  9. "বিতর্কে শেষ রাখাল বালকের উত্থান"। ১৯ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০১৬ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]