তালেবানের ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তালেবান কর্তৃক ব্যবহৃত পতাকা

এ নিবন্ধটি তালেবানের ইতিহাসের পটভূমির একটি সময়রেখা এবং এটি পশতুন জাতীয়তাবাদে তালেবান আন্দোলনের উৎপত্তির বিশদ বিবরণ দেয়। এছাড়া তা সংক্ষিপ্তভাবে বৃহত্তর আফগান সমাজের সাথে দলটির মতাদর্শগত ভিত্তিকে যুক্ত করে। এটি আফগানিস্তানে তার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা ও উত্তর জোটের সাথে এর যুদ্ধ উভয় সময়ে তালেবান কর্মকর্তাদের সক্রিয়তা তালিকাভুক্ত করে এবং তালেবানের কেন্দ্রীয় ক্ষমতা একীকরণেরও বর্ণনা করে। এটি আরও বর্ণনা করে: তালেবান ক্ষমতাসীন আফগানিস্তান, তারপর মার্কিন আগ্রাসনের ফলে এর পতন এবং পরবর্তীতে মার্কিন দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই, সেই সাথে তালেবানের পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসা[১][২]

পটভূমি[সম্পাদনা]

কিছু মুজাহিদিন প্রার্থনা করছেন, ১৯৮৭ সাল।

তালেবান নামের আক্ষরিক অর্থ হলো 'ইসলামের ছাত্র' বা 'জ্ঞানের সন্ধানকারী', যারা বিগত কয়েক শতাব্দী[৩] ধরে কান্দাহারের 'কুরআন শিক্ষা প্রচারের' অংশ এবং তারা ছিলেন প্রধানত শিক্ষক; বিতর্কের মধ্যস্থতাকারী ও সামাজিক সমস্যাবলীর ধর্ম-বিষয়ক সমাধানদাতা। [৪] তারা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতেন , যা স্থানীয়দের অনুদানে পরিচালিত হত। [৫] নিজেদের ধর্মীয় অধ্যয়ন শেষ করে তারা মোল্লা বা 'জ্ঞানদাতা' উপাধি পেতেন। [৫] এই উপাধি ইসলামি রাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে ইসলামী নাগরিক পরিষেবার একটি বিকল্প রূপ প্রদান করে। [৫]

১৯৭৮ সালে সৌর বিপ্লব আফগানিস্তানের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে এবং সোভিয়েতপন্থি নতুন শাসন পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনে ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মার্কসবাদী প্রচারণা চালায়। [৬] দেশে ইসলামি বিধিনিয়ম শীতল করা হয় এবং ধর্ম বিরোধী বিভিন্ন অনুশীলন সমর্থিত হয়। এদিকে ইরানি বিপ্লবের প্রভাবে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আফগানিস্থান একটি ধর্মীয় বিপ্লবের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে এবং ইরান থেকে সশস্ত্র ইসলামবাদ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়াস আশংকা সৃষ্টি হয়।[৬] বিপ্লবের সমর্থকরা মরুভূমি অঞ্চল জুড়ে তাদের ধারণাগুলি ছড়িয়ে দিতে শুরু করে; বিশেষ করে প্রবেশযোগ্য হেরাতে, যেখানে ইরানের মত অনেক শিয়া মুসলিম ছিল। [৭] তা সত্ত্বেও কমিউনিস্ট সরকার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রীতিনীতির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে যায়। [৭] ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে, মেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক সাক্ষরতা কর্মসূচি ঘোষণার প্রতিক্রিয়া হিসেবে হেরাত বিদ্রোহ শুরু হয়। [৬] কারণ এই কর্মসূচির আওতায় আফগান মেয়েদের পশ্চিমা সজ্জায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গমন করতে উৎসাহ প্রদান করা হয়, যা সহস্রাব্দ ধরে চলমান আফগান সংস্কৃতির বিপরীত হিসেবে বিবেচিত হয়। বিদ্রোহটি পরে পশ্চিমের গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া বিদ্রোহের জন্ম দেয়। [৬] অবশেষে মুজাহিদদের দ্বারা একটি বৃহত্তর বিদ্রোহ শুরু হয়ে যায়। [৮] ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপ করার পরপর ইসলামী মুজাহিদিন যোদ্ধারা সেই সোভিয়েত বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

বিদেশী প্রভাব[সম্পাদনা]

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) অতিশীঘ্রই পাকিস্তানের মাধ্যমে বিদ্রোহকে সমর্থন করতে শুরু করে দেয়। কারণ স্নায়ুযুদ্ধে তাদের প্রতিপক্ষ সোভিয়েত ইউনিয়নকে দমিয়ে রাখার কোন মাধ্যমই আমেরিকা হাতছাড়া করতে আগ্রহী ছিল না। [৯] যদিও সিআইএ সরাসরি আফগান বিদ্রোহ সমর্থন করেছিল এমন কোনো নথিপত্র সামনে আসেনি; তবুও যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে সামরিক সহায়তা পরোক্ষভাবে মুজাহিদদের দেওয়া হয়েছিল। এর কারণ হল, ১৯৮০-এর দশকে সিআইএ ও পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) সংস্থা মিলে আফগান মুজাহিদদের অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনকে প্রতিহত করা ও আইএসআই সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সারা বিশ্ব থেকে মুসলিম যোদ্ধাদের একত্র করার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছিল।[৩] পাকিস্তানি নেতা মুহাম্মদ জিয়া-উল-হক আফগানিস্তানে কিছু ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম অনুসরণ করেছিলেন।[১০] জিয়া কঠোরভাবে বিশ্বাস করতেন যে, মুসলিমদের রাজনৈতিক ইসলাম গ্রহণ করা উচিত এবং তিনি এ-ও বলেছিলেন যে, ধর্মআদর্শ দেশের শক্তির প্রধান উৎস [১১] এবং তিনি জিহাদকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবেও দেখেছিলেন। [১১] জিয়া জোর দিয়েছিলেন যে, মুজাহিদিনদের সমস্ত সিআইএ সমর্থন পাকিস্তানের হাত দিয়ে যায়। [১২] এছাড়া তাদের জন্য প্রেরিত পাকিস্তানি সমর্থন ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স দ্বারা তত্ত্বাবধান করা হয়। [১৩]

জিয়া এবং আইএসআইয়ের নেতা আখতার আবদুর রহমান তরুণ আফগান যোদ্ধাদের শিক্ষিত করার জন্য সীমান্তে মাদ্রাসা ইসলামি ধর্মীয় বিদ্যালয় নির্মাণে সমর্থন দেন। ১৯৭১ সালে গোটা পাকিস্তানে তাদের সংখ্যা ৯০০ থেকে ১৯৮৮ সালের মধ্যে প্রায় ৩৩,০০০ এ উন্নীত হয় [১১] [১৪] এবং এর মধ্যে অনেককে সৌদি আরব এবং পারস্য উপসাগরের অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকদের দ্বারা অর্থায়ন করা হয়। [১৪] এই সকল প্রতিষ্ঠান দেওবন্দীসৌদি ধর্মীয় মতাদর্শের মিশ্রণে পরিচালিত হয়েছিল।[৫] আফগান তালেবানের অনেক সিনিয়র নেতা পাকিস্তানের আকোরা খট্টকের দারুল উলূম হাক্কানিয়া সেমিনারিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং এটি তালেবানকে সমর্থন করেছিল। [১৫] সেমিনারিটি জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলামের মাওলানা সামি-উল-হক দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, যাকে প্রায়শই "তালেবানের পিতা" হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[১৬][১৭] এটি রক্ষণশীল দেওবন্দী আন্দোলনের শিক্ষার সাথে সাথে ইসলামী রাজনীতিকে মিশ্রিত করেছে। [৫]

১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত বাহিনী প্রত্যাহারের ফলে যে ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তার ফলে যুদ্ধরত মুজাহিদ গোষ্ঠীগুলির দ্বারা দেশটি প্রায় ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং দেশটির ক্ষমতায় কেন্দ্রীয় সরকার না থাকায় অঞ্চলভিত্তিক মুজাহিদিন নেতারা দেশ নিয়ন্ত্রণ করত। দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নজিবুল্লাহ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন যে "এখন আফগানিস্তানকে জিহাদিদের কেন্দ্রে পরিণত করা হবে"। [১৮] পাকিস্তানি গোয়েন্দারা প্রাথমিকভাবে গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের বাহিনীকে সমর্থন করেছিল; কারণ প্রাক্তন আফগান সামরিক কর্মকর্তারা সরাসরি তার কমান্ডের অধীনে ছিল।[১৯] যাহোক, তিনি ব্যর্থ হন যখন ১৯৯২ সালে আহমদ শাহ মাসউদ কাবুল দখল করেন। [২০] জাভেদ নাসির, যিনি আইএসআই এর তৎকালীন নতুন প্রধান ছিলেন, তিনি সেখানে ইসলামী মূল্যবোধের একজন মুক্ত প্রচারক এবং এক প্রজন্মের মধ্যে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের সবচেয়ে ধর্মীয় নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। [২১]

তৎকালীন নতুন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো মধ্য এশিয়ায় ওভারল্যান্ড ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে পাকিস্তানের অর্থনীতির উন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন। [২২] তার অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী নাসিরুল্লাহ বাবর ছিলেন একজন উল্লেখযোগ্য পশতুন, যিনি ১৯৭০ এর দশকে আফগানদের জন্য গেরিলা প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিলেন।[২৩] তিনি মধ্য এশীয় বাজারে পৌঁছানোর জন্য পশতুনিস্তান ব্যবহার সমর্থন করেছিলেন। [২৩] ১৯৯৪ সালের অক্টোবর মাসে বাবর তুর্কমেনিস্তানে পাকিস্তানি রপ্তানির একটি ট্রায়াল কনভয় আয়োজন করেন। [২৪] কনভয়টি পাকিস্তান সীমান্তে আসার সাথে সাথে তালেবানরা এলাকায় তৎপরতা শুরু করে। [২৪] আইএসআই পূর্বে অজানা একটি কান্দাহারী ছাত্র আন্দোলনকে উৎসাহিত করে এই অঞ্চলের ক্ষমতা দখলের সুযোগটি আঁকড়ে ধরেছিল।[২৫] ১৯৯০ এর দশকে আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তার করার জন্য তারা পাকিস্তানি মিত্র হিসেবে তালেবানদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছিল।[২৬]

আফগানিস্তানে উত্থান, ১৯৯৪-১৯৯৬[সম্পাদনা]

কান্দাহার ঐতিহ্যগতভাবেই পশতুন শক্তি ও সংস্কৃতির কেন্দ্র ছিল, সেইসাথে তা দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রধান কেন্দ্রগুলির একটি ছিল। কিন্তু ১৯৯৪ সালে তা বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে যায়।[২৭] হেকমতিয়ার বাহিনী, চোর-ছিনতাইকারী এবং স্থানীয় যুদ্ধবাজ নেতা; যেমন মোল্লা নকিব শহরটিতে আধিপত্য বিস্তার করে এবং গোটা শহরে তারা অবাধে যাতায়াত করত। এর প্রধান সড়কগুলিতে যাত্রীদের জন্য শত শত বাধা ছিল এবং একই সময়ে শহরের অভ্যন্তরে ব্যাপক সহিংসতা ও যৌন অপরাধ সংঘটিত হয়।[২৭] তালেবানের উত্থানকে পরবর্তীকালে অপরাধ ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে ইসলামি শৃঙ্খলা সৃষ্টি হিসাবে চিত্রিত করা হয়। [৪] এটি দুররানি পশতুনদের গৌরব পুনরুদ্ধারের সাথে সাথে জনপ্রিয় ইসলামী মূল্যবোধকে সংযুক্ত করেছে। [৪] এটি ঘটেছে যখন কান্দাহারের ধনী ও প্রভাবশালী পশতুন নেতারা বিরাজমান সংকট মোকাবিলায় একটি সাধারণ উপায় খুঁজছিলেন। [৪]

সামরিক প্রচারণা[সম্পাদনা]

প্রারম্ভ:[সম্পাদনা]

নাজিব উল্লাহর শাসনের পতনের পর, স্থানীয় মোল্লারা যারা কান্দাহারের আশেপাশেই বসবাস করতেন এবং একে অপরকে চিনতেন, তারা নিজেদের এলাকায় বিরাজমান খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতেন এবং[২৮] চলমান বিশৃঙ্খলা দমন করে শান্তি পুনরুদ্ধার, জনসংখ্যা নিরস্ত্রীকরণ, শরিয়া কার্যকর, গোটা দেশে শান্তি আনয়ন করা এবং আফগানিস্তানে ইসলামপন্থী রাজনীতির অগ্রগতি বিষয়ে সবাই ঐক্যমত্যে পৌঁছান। তাদের মধ্যে ছিলেন: মোল্লা মোহাম্মদ ওমর, মোহাম্মদ গৌস, হাসান আখুন্দ ও মোহাম্মদ রব্বানী, যারা একে অপরকে চিনতেন। কারণ তারা যুদ্ধে একসাথে লড়াই করেছিলেন এবং তারা সবাই একই প্রদেশের বাসিন্দা ছিলেন।[২৯] যেহেতু তারা বেশিরভাগ মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন, তাই তাদের দলীয় নাম হিসেবে তালিব শব্দটি উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়েছিল [২৯] এবং এই নামের মাধ্যমে মুজাহিদদের রাজনৈতিক কৌশল থেকে দূরে রাখার সুবিধাও ছিল। [২৯]

১৯৯৪ সালের বসন্ত ও গ্রীষ্ম কালে কান্দাহারের কাছে একটি ছোট তালেবান মিলিশিয়া প্রথম আবির্ভূত হয়, যারা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের থেকে প্রাপ্ত প্রায় ২৫০,০০০ মার্কিন ডলারের একটি তহবিল দিয়ে স্থানীয় ছোট ও তুলনামূলক কম শক্তিধর যুদ্ধবাজ নেতাদের বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক কাজ শুরু করে।[৩০] এতে তারা শীঘ্রই স্থানীয় দুররানি পশতুন নেতাদের কাছ থেকে সমর্থন পেতে শুরু করে।[৩১] তাদের মধ্যে ছিলেন হাশমত গনি আহমদজাই, হামিদ কারজাই এবং পোপালজাই। [৩২] তাদের সমর্থন প্রথম মুহূর্তে মিলিশিয়াকে বৈধতা দেয়। [৩১] তাদের উদ্দেশ্য ছিল নির্বাসিত সাবেক বাদশাহ মোহাম্মদ জহির শাহকে ফিরিয়ে আনা। [৩৩] মোহাম্মদ ওমর পশতুন প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করতে শুরু করেন এবং তাকে এ আন্দোলনের সর্বোচ্চ পরিষদের প্রধান করা হয়। [৩৪] তালেবানরা হেলমান্দ, কান্দাহার ও উরুজগান অঞ্চলে বসবাস করত এবং তারা ছিলেন অত্যধিক জাতিগত পশতুন; প্রধানত দুররানি পশতুন[৩৫] এভাবে তালেবানরা প্রাথমিকভাবে দুর্নীতি, বর্বরতা ও স্থানীয় যুদ্ধবাজদের বিরুদ্ধে অবিরাম লড়াইয়ে ক্লান্ত আফগানদের কাছ থেকে প্রচুর শুভেচ্ছা ও সহমর্মিতা উপভোগ করেছিল।[৩৬]

তালেবান আন্দোলনে একটি প্রসিদ্ধ প্রচলিত গল্প হল যে, কান্দাহারে ভ্রমণকারী একটি পরিবারের ছেলে ও মেয়েদের একটি স্থানীয় গোষ্ঠী ধর্ষণ এবং হত্যা করে। এই ক্ষোভ থেকে মোহাম্মদ ওমর (মোল্লা ওমর) ও তার ছাত্ররা আফগানিস্তানকে এই অপরাধীদের থেকে মুক্তি দেওয়ার শপথ নিয়েছিল এবং তারা নিজস্ব কিছু অস্ত্র ও বাহনযোগ্য মোটরসাইকেল নিয়ে এ আন্দোলন শুরু করেন।[৩৭] আরেকটি প্রেরণা ছিল যে "আফগানিস্তান ট্রান্জিট ট্রেড' নামে পরিচিত পাকিস্তান-ভিত্তিক একটি ট্রাক শিপিং কোম্পানি ও পাকিস্তান সরকারের তাদের সহযোগীরা মধ্য এশিয়ার আফগানিস্তান জুড়ে চলমান দক্ষিণের রাস্তাটি চাঁদাবাজ দস্যুদের থেকে মুক্ত করার জন্যও তারা তালেবানদের প্রশিক্ষণ, সশস্ত্র ও অর্থায়ন করেছিল। কারণ এ সকল চাঁদাবাজ নেতাদের কারণে পণ্য পরিবহনে তাদের দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করতে হত। [৩৮]

প্রথমদিকে প্রায় ২০,০০০ আফগান শিক্ষার্থী তালেবান আন্দোলনে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয়, যারা পাকিস্তানি শরণার্থী শিবিরে অবস্থিত মাদ্রাসাগুলি থেকে এসেছিল এবং তাদের পর আরও হাজার হাজার পথের মিছিলে তালেবানদের সাথে যোগ দেয়।[৩৯] আন্দোলনে যোগ দানকারী ছাত্রদের বয়স ছিল মূলত ১৪ থেকে চব্বিশ বছরের মধ্যে এবং তাদের অধিকাংশই ইসলামি বিষয় ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ে শিক্ষিত ছিল না। তারা সবাই পশতুসহ আরবি ভাষা ও ইসলামি শরিয়ায় কিছু জ্ঞান অর্জন করেছিল, যা তাদের শিক্ষকদের দ্বারা শেখানো হয়েছিল, যারা মোল্লা নামে পরিচিত ছিলেন।[৪০] তবে তৎকালীন আফগানিস্তানে ধর্মীয় শিক্ষার বাইরে অন্য জাগতিক বিষয়াবলীতে শিক্ষাদানের প্রচলন ছিল না। সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধসহ তাদের দেশের ইতিহাস সম্পর্কেও তাদের জ্ঞানের অভাব ছিল। এর কারণ হল, গৃহযুদ্ধে জর্জরিত দেশে দীর্ঘসময় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করার সুযোগ তাদের হয়নি।[৪১] তদুপরি, তারা তাদের দেশ ও সম্প্রদায়ের উপজাতীয় ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট, এর ঐতিহ্য ও জাতিগত গোষ্ঠী সম্পর্কিত সাধারণ ধারণা তাদের ছিল। এর বাইরে খুবই সামান্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, যুদ্ধ ও বিশুদ্ধতাবাদী ইসলামই তাদের একমাত্র উৎস ছিল, যার সাথে ক্রমাগত যুদ্ধের ফলে তারা অসহায় এবং মূলহীন হয়ে পড়েছিল। [৪১] ইসলামি স্কুলে বা ধর্ম প্রভাবিত বিচ্ছিন্ন কিছু শরণার্থী শিবিরে বেড়ে ওঠা এবং ইসলাম ধর্মীয় নিয়মের ফলে তালেবান মোল্লারা নারীরা বিষয়ে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে অবস্থান নেন এবং এতে তারা নিন্দিতও হন। [৪২] তালেবান যুবকরা ইসলামি জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ায় স্বভাবতই নারী বিষয়ে তারা আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণে সম্মত ছিলেন না। [৪২]

সামরিক অভিযান[সম্পাদনা]

প্রথম বড় সামরিক পদক্ষেপ, যা তালেবানদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল, তা ১৯৯৪ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে হয়েছিল, যখন তারা দক্ষিণ আফগানিস্তানের মাইওয়ান্দ থেকে কান্দাহার শহর ও এর আশেপাশের প্রদেশগুলি দখল করতে অগ্রসর হয়েছিল এবং তখন তারা মাত্র কয়েক ডজন লোক হারিয়েছিল।[৪৩] ধারণা করা হয় যে, ব্যক্তিগত পাকিস্তানি পরিবহণমূলক স্বার্থ অথবা ভিন্ন কোন কারণে পাকিস্তান সরকার তালেবান যোদ্ধাদের প্রথম সামরিক সাফল্যে সহায়তা করেছিল। [২৪] তালেবান যোদ্ধারা অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে আহমদ শাহ মাসউদের অনুগত একজন আফগান কমান্ডারের কাছ থেকে কিনে স্পিন বোল্ডাক সীমান্তে সৌদি ও পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের দ্বারা তৈরি সতেরটি টানেলে কয়েক হাজার সৈন্যের জন্য বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জামসহ একটি অস্ত্রের ডাম্প দখল করে। [২৪] পাকিস্তান সরকারের একটি কনভয় তালেবানদের চেকপয়েন্ট জুড়ে সাহায্য করেছিল বলে উল্লেখ করা হয়।[২৪] নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিমানবন্দর থেকে বন্দী ছয়টি মিকোয়ান–গুরেভিচ মিগ–২১ যুদ্ধ বিমান এবং চারটি মিল এমআই-১৭ হেলিকপ্টার নিয়ে তালেবান কান্দাহার শাসন শুরু করে। [২৪]

১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বরে হেরাতের পতনের পর সমগ্র দক্ষিণ আফগানিস্তান তালেবানদের দখলে চলে আসে [৪৪] এবং পরবর্তী মাত্র তিন মাসে এই 'অজানা বাহিনী' আফগানিস্তানের চৌত্রিশটি প্রদেশের মধ্যে প্রায় ১২টি প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। তালেবান যোদ্ধাদের তীব্র লড়াইয়ে স্থানীয় যুদ্ধবাজ নেতারা প্রায়শ বিনা লড়াইয়ে তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং তাদের 'ভারী ও সশস্ত্র লোকবল' নিজেদের অস্ত্র ছেড়ে দেয়।[৪৫] ১৯৯৬ সালের বসন্তে, মোল্লা ওমর কান্দাহারে দুই সপ্তাহ ধরে এক হাজারেরও বেশি পশতুন নেতার একটি বৈঠক করেন। [৪৬] আধুনিক আফগান ইতিহাসে এটি ছিল ধর্মীয় নেতাদের সবচেয়ে বড় সমাবেশ। [৪৭] পাকিস্তানি কর্মকর্তারাও সমাবেশ অংশ নেন বলে প্রচার করা হয়। [৪৮] সমাবেশে তাকে আমিরুল মুমিনিন হিসাবে ঘোষণা করা হয় এবং আহমদ মাসউদের বিরুদ্ধে জিহাদসহ আফগানিস্তানের ইসলামী আমিরাত ঘোষণা করা হয়। [৪৬] দোস্ত মোহাম্মদ খানের পর এই প্রথম কোনো আফগান নেতাকে এই উপাধি দেওয়া হয়। [৪৯] ওমর মুহাম্মদের পোশাক পরেছিলেন, যা ৬০ বছরের মধ্যে কারও জন্য প্রথম ছিল।[৪৮] তবে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভবিষ্যৎ নিয়ে সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সমাবেশটি কেবল একজন সর্বসম্মত নেতা নির্ধারণ করেছিল। [৪৯]

১৯৯৬ সালের আগস্ট মাসে তালেবান জালালাবাদের বিরুদ্ধে আকস্মিক আক্রমণ শুরু করে। [৫০] ওসামা বিন লাদেন বাকি কমান্ডারদের কাবুলের নেতৃত্বে নিয়ে আসার জন্য প্রায় তিন মিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত সহায়তা করেছিলেন অভিযোগ করা হয়। [৫০] তাদের অর্থায়নের অন্যান্য উৎসের মধ্যে সৌদি ও উপসাগরীয় ব্যক্তি, স্থানীয় ট্রাকিং কোম্পানি, স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং আইএসআই অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। [৫০] এরপর প্রযুক্তিতে সজ্জিত তালেবান যোদ্ধারা সুরোবি জেলা এবং কাবুলের দক্ষিণে সমভূমি থেকে অগ্রসর হতে থাকে।[৫০] ২৬ সেপ্টেম্বর মাসুদ রাজধানী থেকে পাঞ্জশির উপত্যকায় পলায়ন করে এবং পরের দিন তালেবানরা সেখানে প্রবেশ করে। [৫১] একদিনের মধ্যেই প্রতিটি সরকারি ভবন ও সামরিক ঘাঁটি দখল হয়ে যায়। [৫১] প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নজিবুল্লাহ ও তার দুর্নীতিপরায়ণ ভাইকে জনসম্মুখে হত্যা করা হয় এবং একটি ট্রাফিক সার্কেলের উপরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। [৫১] তাজিক শাসন থেকে আফগান রাজধানী দখল তালেবানদের প্রতিপত্তির এক নতুন উচ্চতা দেয়। [৫২] কাবুলের পতনের কয়েক সপ্তাহ পরে, মাসুদ পরাজিত উত্তরাঞ্চলের মিলিশিয়াদের সাথে মিলে উত্তরাঞ্চলীয় জোট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[৫৩] অন্যদিকে গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার দেশ ছেড়ে ইরানে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং তার অনেক সমর্থক তালেবানে চলে গিয়েছিল। [৫৪] এভাবে গোটা দেশ ক্রমশ তালেবান শাসনের অধীনে হয়ে যাচ্ছিল। [৫২]

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

সমর্থন[সম্পাদনা]

আইএসআই প্রাথমিকভাবে তালেবান সরকারের প্রতি আগ্রহী হয় এবং জাভেদ আশরাফ কাজী তাদের সাথে দেখা করে সমর্থন প্রদানে সম্মত হন এবং [৫৫] সমর্থন পরবর্তীতে জ্বালানি থেকে নগদ উপাদান পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। [৫৫] ১৯৯৫ সালের বসন্তের মধ্যে, আইএসআই তালেবানদের সাহায্য করার জন্য সামরিক অফিসার এবং গেরিলা নেতাদের পাঠায়। [৫৫] দেশের অভ্যন্তরে শাহনওয়াজ তনাইয়ের সৈন্যরা তাদের ট্যাঙ্কবিমান মেরামত ও পরিচালনা করেছিল। [৫৫] আইএসআই একটি চুক্তিতেও সাহায্য করেছিল, যেখানে আব্দুর রশিদ দোস্তম বাধ্য হয়ে তালেবানদের একটি বিমান বাহিনী প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছিল। [৫৬] পূর্ব আফগানিস্তানে, জালালুদ্দিন হাক্কানির মতো স্থানীয় নেতারা তালেবানের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেন। [৫৫] অর্থ ও জাগতিক বহু উপাদান এই জোট তৈরি করতে সাহায্য করেছিল বলে ধারণা করা হয়। [৫৫] এদিকে সীমান্তের মাদ্রাসাগুলো থেকে স্বেচ্ছাসেবক যোদ্ধারা আসতে থাকে। [৪৪] ধারণা করা হয় যে, পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল, অন্তত ইসলামাবাদের মিত্র ও ইসলামপন্থী পশতুন নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়া উল হকের লক্ষ্য সফল হওয়া এবং সীমান্তে একটি মিত্ররাষ্ট্রীয় সম্পর্ক বজায় থাকা। [৫৭]

সৌদি গোয়েন্দারা তালেবান নেতৃত্বের সাথে সাক্ষাত ও বৈঠক করেছিলেন, যারা একটি ইসলামি রাষ্ট্র গঠনে সমর্থন চেয়েছিলেন। [৫৮] সৌদি ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা; যেমন: আন্তর্জাতিক ইসলামি রিলিফ অর্গানাইজেশন তালেবানদের উত্থানের সময় অর্থায়ন করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।[৫৯] সৌদি কমিটি ফর দ্য প্রমোশন অফ ভার্চু অ্যান্ড দ্য প্রিভেনশন অফ ভাইস তার নতুন আফগান সম-চিন্তককে সমর্থন করেছে।[৫৯] সরাসরি ভর্তুকি ও প্রশিক্ষণ তালেবান সরকারের অন্যান্য অংশ ও বিষয়ের তুলনায় এটিকে অধিক শক্তিশালী করে। [৬০] সৌদিরা এই সমর্থনটিকে ইরানের বিরুদ্ধে তাদের একটি শক্তি ও ইসলামের রূপকে শক্ত করার একটি নতুন উপায় হিসাবে দেখেছিলেন বলে মনে করা হয়। [৬০]

যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে দক্ষিণমধ্য এশিয়া-বিষয়ক তৎকালীন সহকারী মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট রবিন রাফেল তালেবান আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকার প্রচেষ্টাকে জোরালোভাবে সমর্থন করেছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালের এপ্রিল ও আগস্টে আফগানিস্তানপাকিস্তান সফরে একটি তালেবান সরকার-সমর্থিত একটি পাইপলাইন প্রকল্পকে সমর্থন করেছিল এবং তালেবান নেতৃবৃন্দের সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করা প্রথম ঊর্ধ্বতন আমেরিকান কর্মকর্তাদের সে একজন ছিল।[৬১] রাফেল কাবুল দখলের পরপরই তালেবান সরকারের সাথে জড়িত থাকার জন্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।[৬২] ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি তালেবান দখলকৃত কাবুল শহরকে "ইতিবাচক পদক্ষেপ" হিসাবে স্বাগত জানান।[৬৩][৬৪] প্রথম দিন থেকেই তালেবানদের প্রতি তার ধারাবাহিক সমর্থনের জন্যে ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাকে "লেডি তালেবান" বলে ব্যাঙ্গ করা হয়েছিল।[৬৫]

পাকিস্তানে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ১৯৯৬ সালের নভেম্বর মাসে ইসলামাবাদে নতুন ভারপ্রাপ্ত আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ গাউসের সাথে দেখা করেন।[৬৬] যাহোক, তালেবান বিষয়ে মার্কিনদের পররাষ্ট্রনীতি সর্বদা অস্পষ্ট ছিল। মেডেলিন অলব্রাইট জাতিসংঘে তালেবানের নিন্দা করেছিলেন, যখন তিন সপ্তাহ পরে রবিন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নতুন সরকারের সাথে জড়িত থাকার পক্ষে যুক্তি পেশ করে। [৬৭] আমেরিকান নীতিনির্ধারকেরা তালেবানকে সৌদি আরব প্রভাবিত একটি রক্ষণশীল ইসলামপন্থী হিসেবে দেখেছিল, যারা বিপ্লবী ইরানের পাল্টা ওজন হিসেবে কাজ করতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল। [৬৭]

ওসামা বিন লাদেন ১৯৯৬ সালে দক্ষিণে তালেবানদের মূল ভূমির দিকে অগ্রসর হন [৬৮] এবং ধারণা করা হয়, পাকিস্তানি গোয়েন্দারা হয়তো দুইজনের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করেছিল।[৬৯] তালেবানরা তখন সৌদিদের কাছে বিন লাদেনকে হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব পায় এবং এর বিনিময়ে মোট অংকের আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, তখন কিন্তু তারা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। [৬৯] এরপরই কান্দাহারে বিন লাদেন খুতবা প্রদান করেন এবং তাতে মোল্লা ওমরের প্রশংসা করেন। [৭০] তালেবান সমর্থনের বিনিময়ে বিন লাদেন বিদেশী যোদ্ধাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন যারা অব্যাহত তালেবান অভিযান সমর্থন করবে। [৭১] এদিকে, তালেবান আশ্বস্ত করেছে যে, আফগানিস্তানকে "সন্ত্রাসী হামলা চালাতে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না"। [৫৩]

বিরোধী দল[সম্পাদনা]

ইরান, রাশিয়াভারত তালেবান এবং তার সরকারের বিরোধিতা করেছিল। ইরান তার প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান এবং সৌদি আরব দ্বারা সমর্থিত শিয়া বিরোধী পশতুন শক্তির বিরোধিতা শুরু করেছিল। [৭২] রাশিয়া সাবেক সোভিয়েত ও মধ্য এশীয় প্রজাতন্ত্রের উপর তার প্রভাব নিয়ে চিন্তিত ছিল; বিশেষ করে ইসলামপন্থী বিদ্রোহী ও জিহাদিদের সাথে জড়িত তাজিকিস্তানি গৃহযুদ্ধ নিয়ে দেশটি চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন ছিল। [৭২] ভারত তালেবানকে দেওয়া পাকিস্তানি সমর্থনের বিরোধিতা করেছিল। [৭২] তারা সবাই সম্মিলিতভাবে তালেবানের শত্রু–বিরোধী শক্তিকে সমর্থন দিয়েছিল। [৭৩] কাবুলের পতনের পর, ইরান, রাশিয়ামধ্য এশীয় প্রজাতন্ত্রগুলি তালেবান যোদ্ধাদের দেশের উত্তরে সরে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছিল; তাদের শত্রুদের সমর্থনের প্রস্তাব দিয়েছিল এবং এই অঞ্চলটিকে তালেবান গোষ্ঠীর সমর্থন এবং বিরোধিতার মধ্যে মেরুকরণ করেছিল। [৫২]

স্বীকৃতি[সম্পাদনা]

১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে আফগানিস্তানের বৈধ সরকার হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।[৭৪][৭৫] এরপরই সৌদি আরবসংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের অনুসরণ করে। [৭৪] এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। [৭৪] ওয়াশিংটন ডিসিতে আফগান দূতাবাস স্বীকৃতির ক্ষেত্রে দুই ধরণের দাবি প্রকাশ করে; বর্তমান রাষ্ট্রদূত তালেবানের বিরোধিতা করেছিলেন, যখন তার ডেপুটি তাদের প্রতি আনুগত্যের শপথ করেন।[৭৬] আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক মিশনের সময়ের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশেষে তার দূতাবাস বন্ধ করে দেয় এবং এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, তালেবানের আফগান সরকারকে স্থগিত করা উচিত। [৭৭]

ক্ষমতা একত্রীকরণ: ১৯৯৬-২০০১[সম্পাদনা]

নিজেদের শাসনাধীন এলাকায় তালেবানরা জনগণকে নিরস্ত্র করে, শরিয়া আইন জারি করে এবং শৃঙ্খলা ও শান্তি আনয়ন করে, সেই সাথে যান চলাচলের রাস্তা খুলে দেয় এবং খাবারের দাম কমিয়ে দেয়। [৭৮] এসব ব্যবস্থা জনগণ খুবই ভালভাবে গ্রহণ করেছিল। [৭৯] যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের লক্ষ্যে সবকিছু সামলে নিতে এবং শিক্ষা সিলেবাস পুনর্গঠনের জন্য সরকার স্কুল ও কলেজ সাময়িক বন্ধ করে রেখেছিল এবং মেয়েদের স্কুলে পড়াশোনা নিষিদ্ধ করেছিল। [৮০] কাবুল শাসন করার জন্যে তালেবানের সরকার শহরের আলেমদের সমন্বয়ে একটি ছয় সদস্যের শুরা গঠন করে, যাদের মধ্যে শহরের বাইরের দুররানি পশতুনদের আধিপত্য ছিল এবং মোহাম্মদ রব্বানীর নেতৃত্বে ছিল, সেইসাথে মোহাম্মদ গাউসকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এবং আমির খান মুত্তাকিকে তথ্যমন্ত্রী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। [৮১] তালেবানের নেতৃত্ব এর আগে কখনো বড় শহরে বাস করেননি; অনেকে আগে কখনো কাবুলও যাননি। [৮২] কারণ তাদের অধিকাংশই কান্দাহারের বাসিন্দা ছিল। এদিকে কাবুল শহরটি মূলত তাদের দখলের অধীনে ছিল এবং [৮২] উত্তরাঞ্চলে বিরোধীদের নিয়ে গঠিত উত্তর জোটের সঙ্গে গৃহযুদ্ধ চলতে থাকে।

ধর্মীয় বিধিবিধান[সম্পাদনা]

তালেবান সরকার শরিয়াভিত্তিক আইন জারির করার পাশাপাশি স্থান ও স্থাপনার নামের ক্ষেত্রেও ইসলামি ও সাংগঠনিক সংস্কৃতির প্রভাব ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালায়। রেডিও কাবুলের নাম পরিবর্তন করে ভয়েস অফ দ্য শরিয়া রাখা হয় এবং এতে নতুন ধর্মীয় বিধি ঘোষণা করা হয়। [৫১] এছাড়াও তালেবান শাসনামলে সোভিয়েত প্রভাবিত আফগানিস্তানে তখন পর্যন্ত বৈধ বিভিন্ন কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করার জন্য শরিয়া আইন ব্যাখ্যা করা হয়: নারীদের জন্য কর্মসংস্থান, (তালেবানি যুক্তি মতে, নারীদের যাবতীয় দায়িত্ব অভিভাবক বহন করে বিধায় তাদের কর্মসংস্থানে যাওয়ার সুযোগ নেই) জাগতিক শিক্ষাখেলাধুলা, সিনেমা, বিদেশি টিভি চ্যানেল, ভিডিও, নাচ, গান, বাড়িতে ছবি ঝুলানো, খেলাধুলার অনুষ্ঠানে হাততালি দেওয়া ও দাড়ি ছাঁটা ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়। নিষেধাজ্ঞার একটি তালেবান তালিকা নিচে অন্তর্ভুক্ত করা গেল:

শূকরের মাংস, শূকর, শূকরের চর্বি, মানুষের চুল থেকে তৈরি করা যে-কোনো কিছু বস্তু, স্যাটেলাইট টেলিভিশন, চলচ্চিত্রগ্রহণশিল্প ও সরঞ্জাম, যা সঙ্গীতের আনন্দ তৈরি করে, পুল টেবিল, টেলিভিশন, মুখোশ, অ্যালকোহল, ভিসিআর, দাবা, এমন কোন বস্তু, যা যৌনতা প্রচার করে, মিউজিক, ওয়াইন, লবস্টার, নেলপলিশ, আতশবাজি, মূর্তি, ছবি, গাঁজা, হিরোইন, আফিম ও ক্রিসমাস কার্ড।[৮৩]

পুরুষের দাড়ি সাধারণত চিবুকের গোড়ায় আটকানো মুষ্টির চেয়ে বেশি প্রসারিত হওয়া আবশ্যক ছিল এবং অন্যদিকে, তাদের মাথার চুল পর্যন্ত ছোট করে রাখতে অথবা একেবারে লম্বা করতে হয়েছিল।[৮৪] জীবন্ত বস্তুর চিত্রাঙ্কন, অঙ্কন, ছবি বা ফটোগ্রাফ, স্টাফ করা প্রাণী বা পুতুলই হোক না কেন; রাখা নিষিদ্ধ ছিল।[৮৪] সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং গানও নিষিদ্ধ করা হয়। বিভিন্ন প্রাচীন মূর্তি সম্বলিত একটি প্রধান যাদুঘর ও অগণিত ব্যক্তিগত শিল্প সংগ্রহসহ শত শত সাংস্কৃতিক নিদর্শনগুলিকেও ধ্বংস করা হয়েছিল, যা বহু-ঈশ্বরবাদী বলে বিবেচিত হয়েছিল।[৮৫] ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে কাবুল দখল করার পর জারি করা একটি নমুনা অনুসারে তালেবান সরকারের "আমর বিল মারুফ এবং নাহি আনিল মুনকার মন্ত্রণালয় (বা ধর্মীয় পুলিশ) দ্বারা বিভিন্ন ধরণের জিনিস ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে, যাদের মধ্য রয়েছে: গান, দাড়ি কামানো, ছবি বা প্রতিকৃতি প্রদর্শন, পশ্চিমা পদ্ধতিতে চুল কর্তন, বিয়েতে গান ও নাচ, জুয়া খেলা, জাদুবিদ্যা ও প্রার্থনার সময় অন্য কাজকর্মে ব্যস্ত হওয়া।[৮৬] ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তালেবানরা আফগানিস্তানের জাতীয় জাদুঘরে শিল্পের প্রতিনিধিত্বমূলক বিভিন্ন প্রাচীন মূর্তি ও প্রতিকৃতি ধ্বংস করার জন্য স্লেজহ্যামার ব্যবহার করে।[৮৭]

স্থানীয় অনেক উৎসবও নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত ছিল না এবং তালেবান ঐতিহ্যবাহী আফগান নববর্ষ উদযাপন নিষিদ্ধ করেছিল। একদা তারা শিয়া ইসলামি শোকের মাস আশুরাকেও সাময়িক নিষিদ্ধ করেছিল। এমনকি ঈদে শরিয়া-বিরোধী যে কোনো উৎসবের প্রদর্শনকেও নিষিদ্ধ করেছিল।[৮৮] সরাসরি নারীরা উপস্থিত থাকলে আফগান জনগণের কোনো সহ-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অনুমতি ছিল না এবং যদি উদযাপনে কেবল পুরুষরা থাকতো; তবে এটি অনুমোদিত হতো, যতক্ষণ না সেটি তাদের নির্ধারিত সময় সন্ধ্যা ৭:০০ টার মধ্যে শেষ হয়।অনেক তালেবান কর্মকর্তা বিনোদন না করার ধারণার সামান্য বিরোধিতা করেছিলেন এবং তারা চেয়েছিলেন যে, এসব বিনোদনে ধর্মীয় বিধিনিষেধের অনেকগুলিই অনুসরণ করা হোক। এই নিয়মগুলি মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা হয়েছিল, যা প্রমোশন অফ দ্যা ভার্চ্যু অ্যান্ড সাপ্রেশন অফ ভাইস (PVSV) এবং এর নিযুক্ত "ধর্মীয় পুলিশ" দ্বারা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। এমন ধারণা সৌদিদের কাছ থেকে ধার করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। তবে ইসলামের ইতিহাসে ধর্মীয় পুলিশ নিয়োগের ইতিহাস প্রচলিত ছিল। [৫১] নতুন বিজিত শহরগুলিতে শত শত ধর্মীয় পুলিশ অপরাধীদের (সাধারণত দাড়ি-বিহীন পুরুষ এবং মহিলারা যারা সঠিকভাবে বোরকা পরেনি) গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনে। [৮৯]

তালেবান শাসনে চুরির শাস্তি ছিল চোরের হাত কেটে ফেলা, ধর্ষণ ও হত্যাকারীকে প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া। বিবাহিত ব্যভিচারীদের পাথর মেরে হত্যা করা হতো এবং তাদের কাবুল শহরের প্রাক্তন ফুটবল স্টেডিয়ামে ভিড়ের সামনে শাস্তি দেওয়া হত। এইসব শাস্তির ভিত্তি অবশ্য ইসলামি শরিয়তে প্রোথিত আছে।[৯০][৯১]

নারীদের প্রতি আচরণ[সম্পাদনা]

তালেবান শাসনে বিশেষত নারীরা তাদের নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল। তাদের বাড়ির বাইরে কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছিল এবং ইরানি চাদরসহ "উদ্দীপক ও আকর্ষণীয়" হিসাবে বিবেচিত পোশাক পরা থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছিল। একান্ত ঘনিষ্ঠ পুরুষ আত্মীয় বা মাহরাম ছাড়া ট্যাক্সি নেওয়া; স্রোতে কাপড় ধোয়া; অথবা দর্জিদের দ্বারা তাদের পরিমাপ নেওয়াও নিষিদ্ধ ছিল।[৮৬]

নারীদের কর্মসংস্থান চিকিৎসা খাতে সীমাবদ্ধ ছিল। কারণ, পুরুষ চিকিৎসাকর্মীদের মহিলাদের পরীক্ষা করার অনুমতি ছিল না। মহিলা কর্মসংস্থানের উপর তালেবানের নিষেধাজ্ঞার একটি ফলাফল হয়েছিল যে, কাবুলের মত জায়গায় শুধুমাত্র মেয়েদের জন্যই নয়; বরং ছেলেদের জন্যও অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া; কারণ সেখানে প্রায় সব শিক্ষকই মহিলা ছিলেন। তালেবান জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার সাথে সাথে সকল প্রতিষ্ঠান সার্বিকভাবে সবার জন্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। [৯২]

মহিলাদের সহ-শিক্ষা পদ্ধতিতে চালিত স্কুলে যাওয়ার অনুমতিও ছিল না; বরং ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক পৃথক স্কুল–কলেজ নির্মাণের ওপর জোর দেওয়া হয়। বাস্তবে এটিই আফগানিস্তানের সিংহভাগ তরুণী এবং মেয়েকে মাধ্যমিক ও উচ্চা শিক্ষা গ্রহণ করতে বাধা প্রদান করে।[৯৩][৯৪]

নারীদের বোরকা পরার জন্য তৈরি একটি ঐতিহ্যবাহী পোশাক ব্যবহার করার জন্য তাকিদ দেওয়া হতো, যা পুরো শরীর ঢেকে রাখে এবং একটি ছোট পর্দা দিয়ে মুখও ঢেকে রাখে, যার ছিদ্রের মাধ্যমে পরিধানকারী দেখতে পায়। রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তাদের সরকারী বিধি নিষেধ আরো কঠোর হয়ে ওঠে। ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্মীয় পুলিশ সমস্ত মহিলাকে কাবুলের রাস্তাগুলি খালি করতে বাধ্য করে এবং নতুন একটি প্রবিধান জারি করে, যাতে "গৃহকর্তারা তাদের জানালা কালো করে দেয়, যাতে মহিলারা বাইরে থেকে দৃশ্যমান না হয়। [৯৫] মেয়েদের জন্য গৃহ–শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।[৯৬] ১৯৯৮ সালের জুনে তালেবান সরকার কাবুলে একটি সর্ব–মহিলা হাসপাতাল ব্যবহার করা শুরু করে [৯৭] এবং সাধারণ হাসপাতালে সমস্ত মহিলার ভর্তি করা বন্ধ করে দেয়। শরিয়া আইন লঙ্ঘন করার জন্য তালেবানদের দ্বারা অনেক মুসলিম মহিলার সাজার সম্মুখীন হওয়ার বহু খবর পাওয়া গিয়েছিল।

অব্যাহত যুদ্ধ[সম্পাদনা]

যদিও আফগানিস্তানের দক্ষিণে বেশিরভাগ জনসংখ্যা বসবাস করে; কিন্তু উত্তরে রয়েছে দেশের ৬০ শতাংশ কৃষি সমৃদ্ধ ভূমি এবং প্রায় ৮০ শতাংশ শিল্প, খনিজগ্যাসসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ। তাই তালেবানরা এর দখলকে উচ্চ অগ্রাধিকার হিসাবে দেখে।[৯৮] ফলে তালেবান দ্রুত উত্তর প্রদেশেগুলির দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং এতে আব্দুল রশিদ দোস্তম উজবেকিস্তানে পালিয়ে যায়।[৯৯] ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে মাজার-ই-শরীফের যুদ্ধে মাত্র ২,৫০০ তালেবান সৈন্য শহরটি দখল করেন এবং ঐতিহাসিকভাবে বৈচিত্র্যময় ও সহনশীল শহরের উপর তাদের শাসনের অধ্যায় শুরু হয়। [১০০] ২৮ মে, একটি রাস্তা নিয়ে দ্বন্দ্ব ক্রমান্বয়ে একটি যুদ্ধে পরিণত হয়, যাতে প্রায় ৬০০ জন তালেবান সৈন্যকে হত্যা করা হয় এবং দশজন শীর্ষ নেতাসহ ১০০০ জনকে বন্দী করা হয়। [১০১] আব্দুল মালিক পাহলাওয়ানের বাহিনী তাখার, ফারিয়াব, জোউজজানসার-ই পোল প্রদেশ পুনরুদ্ধার করে। [১০২] হাজার হাজার বন্দী তালেবান সদস্য এবং শত শত পাকিস্তানী নাগরিককে নির্বিচারে গণহত্যা করা হয়। [১০২]

তালেবানের ব্যাপারে মার্কিন ও অন্যান্য রাষ্ট্রের কঠোর নীতি দেখে দক্ষিণাঞ্চলে আহমদ শাহ মাসউদ পাল্টা আক্রমণ করে কাবুলের আশেপাশের অঞ্চল এবং শত শত তালেবান সদস্যকে হত্যা করার সুযোগ দেখেছিল। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র বিরোধীদের সামরিক এবং আর্থিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাসও দেয়।[১০২] এদিকে বিরোধী হাজারারাও সেই মুহূর্তটির সদ্ব্যবহার করে এবং তাদের ওপর চলমান ৯ মাসের শাসনের অবসান ঘটায়। [১০২] তখন তালেবান আন্দোলন তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছিল এবং দশ সপ্তাহে ৩০০০ জনেরও বেশি তালেবান সদস্য হতাহতের ঘটনা ঘটে সেইসাথে প্রায় ৩,৬০০ সৈন্য বন্দী হয়েছিল, যখন ২৫০ জনেরও বেশি পাকিস্তানি নাগরিককে হত্যা করা হয়েছিল এবং ৫৫০ বন্দী হয়েছিল। [১০২] মোল্লা ওমর পাকিস্তানি মাদ্রাসাসমূহে পড়তে যাওয়া পশতু ছাত্রদের নতুন করে আগমন করার আহ্বান জানান এবং ৫০০০ জন সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন। [১০২] গিলজি উপজাতিদের কাছ থেকেও সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। [১০৩] তালেবানের ভয়ে তাজিকিস্তানি গৃহযুদ্ধে লড়াই করা পক্ষগুলিকেও শান্তি আলোচনায় বসতে বাধ্য করারও কথা হয়েছিল উত্তরাঞ্চলের লড়াইয়ের সময়। [১০৪] এটি মাসুদকে আরও কার্যকরভাবে ইরানী এবং রুশ সমর্থন পেতে সাহায্য করে এবং উত্তর জোট ১৩ জুন, ১৯৯৭ সালে মাজার-ই-শরিফকে তার রাজধানী ঘোষণা করে। ইরানী এবং রুশ সহায়তার পাশাপাশি উত্তর জোটসহ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি মার্কিন সহায়তাও পেতে থাকে। [১০৪]

জাতিগত নিপীড়ণ ও তালেবান গণহত্যা[সম্পাদনা]

চলমান এই গৃহযুদ্ধের ফলে আফগানিস্তানে জাতিগত বিভাজন আরও খারাপ হয়েছিল। [১০৫] উজবেকহাজারারা বন্দী তালেবান যোদ্ধাদের গণহত্যা করে। [১০৫] শেবারঘান অঞ্চলে যে গণকবরে তালেবান বন্দী এবং সদস্যদের গণহত্যা করে কবর দেওয়া হয়েছিল সেখানে ২০০০ টিরও বেশি মৃতদেহ পাওয়া যায় বলে প্রকাশ করা হয়েছিল। জাতিসংঘ খুঁজে পেয়েছে যে, তাদের নির্যাতন করা হয়েছিল যখন তারা ক্ষুধার্ত ছিল। [১০৬] তালেবান বন্দীদের ১০ থেকে ১৫ মিটার গভীর পানির কূপে ফেলে দেওয়া হয়; তারপরে কূপগুলিকে বুলডোজার দিয়ে বন্ধ করার আগে সেগুলিতে গুলিহস্তনিক্ষেপিত গ্রেনেড দেওয়া হয়েছিল। [১০৫] এছাড়াও তাদের পাত্রে শ্বাসরোধ করা হয়েছিল। [১০৫] তালেবান যোদ্ধারা লড়াইয়ে পালাক্রমে হাজারা যোদ্ধাদের হত্যা করে এবং তাজিক কৃষকরা তাদের ভয়ে গ্রাম থেকেই পালিয়ে গিয়েছিল। [১০৫] পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ এনে তালেবান যোদ্ধারা জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের মতো মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলিকে জোর করে বের করে দেয়। [১০৭]

১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের গ্রীষ্মকালে বেসামরিক নাগরিকদের উপর সবচেয়ে খারাপ হামলা হয়েছিল যখন সাধারণ তালেবান যোদ্ধারা উত্তরাঞ্চলের হেরাত থেকে প্রধানত হাজারাউজবেক অধ্যুষিত শহর ও উত্তরের বৃহত্তম শহর মাজার-ই-শরীফ পর্যন্ত প্রবেশ করে। এই যোদ্ধারা পূর্ববর্তী তালেবান গণহত্যার কারণে প্রতিশোধপরায়ণ ছিল। ১৯৯৮ সালের ৮ই আগস্ট সকাল ১০ টায় তারা সেখানে প্রবেশ করে এবং পরবর্তী দুই দিন তালেবানরা তাদের পিকআপ ট্রাকগুলিকে "মাজার –ই–শরীফের সংকীর্ণ রাস্তায় উপরে চালিয়ো নীচে বাম ও ডানদিকে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় এবং এতে বেশ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে দোকানের মালিক, গাড়ি টেনে নিয়ে যাওয়া বেশ কিছু হাজারা, কিছু নারী ও শিশু এমনকি রাস্তায় থাকা ছাগলগাধাও নিহত হয়। [১০৮] মাজার -ই-শরীফে এবং পরে বামিয়ানে ৮,০০০ জনেরও বেশি বেসামরিক লোকজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায় এবং এসবের সাথে সাথে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতিও হয়। [১০৯] নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তকরণসহ বেশ কিছু জটিলতার কারণে, ইসলামি শরিয়তের বিপরীতে (যা অবিলম্বে দাফনের দাবি করে) তালেবানরা নিহতদের দাফনে বিলম্ব ঘটায় এবং প্রথম ৬ দিন মৃতদেহ দাফন করতে নিষেধ করেছিল। সে সময় গ্রীষ্মের প্রখর রোদে অনেক লাশ পঁচে যায় এবং কুকুর দ্বারা ভক্ষিত হয়। [১১০] এই ঘটনার পাশাপাশি, তালেবান যোদ্ধারা পরবর্তী কালে মাজার-ই-শরীফ নিয়ন্ত্রণ করার সময় লড়াইয়ে সরাসরি জড়িত বা এতে সাহায্যকারী বেশিরভাগ শিয়া জাতিগত গোষ্ঠী হাজারা সদস্যদের খুঁজে বের করে এবং হত্যা করে।

যদিও হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করা যেতে পারে বিভিন্ন বিষয়কে; জাতিগত পার্থক্য, ইরানে বাসকারী তাদের সহ-ধর্মীয়দের প্রতি শিয়া হাজারাদের অত্যাচার এবং পূর্বে মাজার-ই-শরীফ দখলে ব্যর্থ তালেবান প্রাণহানির কারণে তাদের পুঞ্জিত ক্ষোভ; তবে ধারণা করা হয় যে, এক্ষেত্রেতাকফির (ধর্মত্যাগ করার অভিযোগ) শিয়া মতাদর্শী হাজারাদের হত্যা সুন্নি মতাদর্শী তালেবানদের প্রধান প্রেরণা হতে পারে। কারণ ইসলামে ধর্মত্যাগের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। কিছু হাজারা মহিলাও শাস্তির সম্মুখীন হয়। কারণ, যুদ্ধে তাদের হেজবে ওয়াহদাতের নেতৃত্ব পরিষদের মহিলারা ছিলেন এবং কিছু পুরুষদের সাথে লড়াইও করেছিল; এমনকি তারা বেশ কিছু তালেবান যোদ্ধা হত্যাও করেছিলে।[১১১] এটি মাজারের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে দেওয়া ঘোষণায় হামলার কমান্ডার ও হামলার পর মাজারের গভর্নর মোল্লা নিয়াজি প্রকাশ করেছিলেন:

গত বছর তোমরা সকলেই আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে আমাদের হত্যা করেছিলে। তোমরা বাড়ি থেকে আমাদের উপর গুলি করেছ। এখন আমরা তোমাদের সাথে মোকাবিলা করতে এখানে এসেছি। হাজারারা মুসলমান নয়; তাই এখন আমাদের হাজারাদের হত্যা করতে হবে। হয়তো তোমরা খাঁটি ইসলাম মেনে মুসলমান হও; নয়তো আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাও। তোমরা যেখানেই যান আমরা তোমাদের ধরব। যদি তোমরা উপরে যাও আমরা তোমাদের পা ধরে টেনে নামিয়ে দেব; যদি তোমরা নীচে লুকাও, আমরা তোমাদের চুল ধরে টেনে তুলব।[১১২]

হাজারারা মধ্য আফগানিস্তানে নিজেদের হাজারাজাত মাতৃভূমিতে তালেবানদের দ্বারা অবরোধের শিকার হয় এবং তালেবান প্রশাসন কর্তৃক তাদের প্রত্যাখ্যানের কারণে জাতিসংঘকে বামিয়ান, ঘোর, ওয়ারদাক এবং গজনি প্রদেশে হাজারাদের খাদ্য সরবরাহের অনুমতি দেয়।[১১৩] মাজার-ই-শরীফ দখল করার এক মাস পর তালেবানরা হাজারা লাইন ভেঙ্গে হাজারাজাত দখল করে। দখলে নিহত বেসামরিক লোকের সংখ্যা মাজার শরীফের মত এত বেশি ছিল না, কিন্তু তা সত্ত্বেও এতে বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল। [১১৪]

পরবর্তী বছরগুলিতে, তালেবান বাহিনীর দ্বারা হাজারা শিয়া সদস্যদের হত্যা করার বিষয়টি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো মানবাধিকার সংগঠন দলগুলি কর্তৃক নথিভুক্ত করা হয়েছিল।[১১৫]

বামিয়ানের বুদ্ধ[সম্পাদনা]

২০০১ সালের মার্চ মাসে, তালেবানরা বামিয়ানে একটি ৩৮ মিটার (১২৫ ফুট) উঁচু পাহাড়ের ধারে খোদাই করা বুদ্ধের একটি মূর্তি ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়, যা আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫০৭ সালে খোদাই করা হয়। অন্য একটি প্রায় ৫৩ মিটার (১৭৪ ফুট) লম্বা এবং তা খ্রিস্টপূর্ব ৫৫৪ সালে খোদাই করা হয়। ইউনেস্কো এবং বিশ্বের অনেক দেশ এই কাজের নিন্দা জানায়।

তবে ধ্বংসের উদ্দেশ্য অস্পষ্ট থেকে যায়। মোল্লা ওমর প্রাথমিকভাবে আফগানিস্তানের ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করার বিষয়টি সমর্থন করেছিলেন এবং জাপান এসব মূর্তির সংরক্ষণের জন্য আর্থিক সাহায্যের সাথে যুক্তও ছিল।[১১৬] তবে এর কিছু দিন পরই একটি ডিক্রি জারি করা হয়, যাতে দাবি করা হয় যে, জাদুঘরসহ মানব ও মূর্তিগুলির সমস্ত প্রতিনিধিত্ব ইসলামী আইন অনুযায়ী ধ্বংস করতে হবে, যা যেকোন প্রকার মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।[১১৭][১১৮]

তৎকালীন তালেবানের মন্ত্রী আব্দুস সালাম জাঈফের বক্তব্য অনুযায়ী, ইউনেস্কো তালিবান সরকারকে ৩৬টি পত্রের মাধ্যমে এই ধ্বংসকার্যের বিরোধিতা করে। চীন, জাপানশ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিরা মূর্তিগুলি সংরক্ষণের ব্যাপারে অনুরোধ করেন। এমনকি জাপানের সরকার অর্থপ্রদান করে হলেও মূর্তিগুলিকে জাপানে স্থানান্তর করার আর্জি জানায়। কিন্তু, সমস্ত অনুরোধ উপেক্ষা করে তালিবানের ধর্মমন্ত্রক এই ধ্বংসকার্যকে ইসলামী আইনানুগ বলে শীলমোহর দেয়।[১১৯]

একজন শীর্ষ তালেবান কর্মকতা বলেন যে,

বিশ্ব যখন আমাদের যুদ্ধবিধ্বস্ত শিশুদের খাদ্য সরবাহে সহায়তা করার পরিবর্তে মূর্তি রক্ষায় আর্থিক সহায়তা প্রদানে উদগ্রীব হয়, তখনই প্রশাসন তা ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।[১২০]

পাকিস্তান সরকার (যে নিজেই বৌদ্ধ শিল্পের সবচেয়ে ধনী ও সবচেয়ে প্রাচীন সংগ্রহগুলির আয়োজক) এই মূর্তিগুলিকে রক্ষা করতে তালেবান সরকারের কাছে অনুরোধ করেছিল। পরবর্তীতে সৌদি আরবসংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের এ কাজটিকে বর্বর বলে নিন্দা জ্ঞাপন করে বলে উল্লেখ করা হয়।[১২১]

তালেবানের একজন সিনিয়র প্রতিনিধি, যিনি রোভিং অ্যাম্বাসেডর হিসাবেও মনোনীত হয়েছিলেন সাইয়েদ রহমত উল্লাহ হাশেমি ২০০১ সালের মার্চ মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। তিনি তালেবানের পদক্ষেপকে অযৌক্তিকতার কাজ হিসেবে নয়; বরং ইউনেস্কো এবং কিছু পশ্চিমা সরকারকে তালেবানদের যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত বুদ্ধের মূর্তিগুলোর মেরামতের জন্য অর্থের ব্যবহার অস্বীকার করার জন্য ক্রোধের কাজ হিসেবে চিত্রিত করেছেন। তিনি দাবি করেছিলেন যে, তালেবানরা খরা ত্রাণের জন্য অর্থ ব্যবহার করতে চেয়েছিল।[১২২]

২০০১ খ্রিস্টাব্দের ২ মার্চ থেকে পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ যাবত মূর্তিগুলিকে ডায়নাইটে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়।[১২৩] প্রথমদিকে বিমান-বিধ্ববংসী কামান দিয়ে তোপ দেগে মূর্তিগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। এভাবে মূর্তিগুলি ধ্বংস না হওয়ায় তালিবান তথ্য এবং সংস্কৃতি মন্ত্রী কুদরতউল্লা জামাল বিরক্ত প্রকাশ ব্যক্ত করেন। পরবর্তীতে মূর্তির নিচে ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মাইন লাগিয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষে পাহাড়ের গা বেয়ে মূর্তিগুলির মধ্যে ফুটা করে বিস্ফোরক লাগিয়ে দেওয়া হয়।[১২৪][১২৫]

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক[সম্পাদনা]

১৯৯৮ সালে তালেবান বিদেশী সাহায্য সংস্থাগুলিকেও আফগানিস্তানের মানবিক সহায়তার আড়ালে ইসলাম এবং আঞ্চলিক সংস্কৃতি-বিরোধী প্রচারণার অভিযোগ এনে দেশে তাদের সব কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য করে। [১২৬] সৌদি আরব তখনও পিক আপ ট্রাক এবং অর্থ সরবরাহ করে তাদের সমর্থন করছিল, যখন পাকিস্তান রসদ সমর্থন করেছিল এবং আক্রমণে সহায়তা করার জন্য অফিসার প্রেরণ করেছিল।[১২৭] ইরান, রাশিয়াউজবেকিস্তান সবাই উত্তর জোটকে সমর্থন করেছিল। [১২৭] তাদের প্রাক্তন দুটি থেকে সহায়তার মধ্যে রয়েছে যানবাহন ও হেলিকপ্টার[১২৮] ১৯৯৮ সালে মাজার ই শরীফের গণহত্যার সময়, তালেবানরা মোল্লা ওমরের সরাসরি নির্দেশে তালেবানবিরোধী এগার জন ইরানীয় কূটনীতিক, গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও একজন সাংবাদিক হত্যা করেছিল। [১২৯] ইরান যুদ্ধের হুমকি দিয়ে সীমান্তে ৭০,০০০ ইসলামি বিপ্লবী রক্ষী-বাহিনী সৈন্য পাঠায়। [১৩০] তবে তারা কোনো সামরিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেনি। পরবর্তীকালে আরো প্রায় ২০০,০০০ নিয়মিত সৈন্যকে সীমান্তে পাঠানো হয়েছিল, যখন তালেবানরা প্রতিক্রিয়া হিসাবে ৫,০০০ যোদ্ধাকে একত্র করে। [১৩০] যাহোক, আফগানিস্তান ইরানের সমস্ত ট্রাক চালককে মুক্তি দেওয়া ও ইরানি কূটনীতিকদের মৃতদেহ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে উত্তেজনা শান্ত হয়। [১৩০] ১৯৯৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে বোমা হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তরপূর্ব আফগানিস্তানে বিন লাদেনের প্রশিক্ষণ শিবিরে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত করে ২০ জনেরও বেশি বেসামরিক লোককে হত্যা করে। [১২৯] দেশজুড়ে জাতিসংঘের কার্যালয়গুলি জনতার তীব্র প্রতিক্রিয়ার ফলে আক্রমণের স্বীকার হয় এবং জাতিসংঘের একজন ইতালীয় সামরিক অফিসার নিহত হয়। তবে একজন ফরাসি কূটনীতিক আহত হয় এবং সংস্থাটি কাবুল ছেড়ে চলে যায়। [১২৯]

রাশিয়া, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তানতাজিকিস্তান ১৯৯৮ সালের ২৫ আগস্টে তাসখন্দে মিলিত হওয়ার সাথে সাথে তালেবানদের আরও অগ্রসর হওয়া বন্ধ করার জন্য যৌথ পরিকল্পনা গ্রহণ করার পর তাদের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরো বৃদ্ধি পায়।[১২৮] এসব বিষয়াদির সাথে সাথে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালেবানের লিঙ্গ নীতি এবং কূটনৈতিক নিয়ম-কানুন মানতে অস্বীকার করে বসে।[১২৮] সৌদি আরব কাবুল থেকে তার সকল প্রতিনিধি প্রত্যাহার করে নেয় এবং সৌদি তহবিল কমানোর পর পাকিস্তানই একমাত্র মিত্র হিসেবে থাকে। [১২৮] ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের সেনা অভ্যুত্থানের পরপর দেশটির সমর্থন আরো বৃদ্ধি পায়। [১৩১] জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ১৯৯৮ সালের ৮ ডিসেম্বর একটি প্রস্তাব পাস করে, যাতে তালেবান তার দেশে জিহাদিদের দেওয়াসহ তাদের আচরণ পরিবর্তন না করলে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেওয়া হয়। [১৩২] ১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর তালেবানের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি হিমায়িত করা হয়েছিল এবং নিরাপত্তা পরিষদ দ্বারা তাদের দেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে আন্তর্জাতিক বিমান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।[১৩৩] ২০০০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি আরিয়ানা আফগান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট হাইজ্যাক করা হয় এবং বিমানে আরোহণকারী আশ্রয় প্রার্থনাকারী যাত্রীদের দ্বারা সেটি লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। [১৩৩] ২০০০ সালের খরার পর, তালেবান সরকার তাদের আন্তর্জাতিক অনুদান দাতাদের কাছে আর্থিক সাহায্যের জন্য অনুরোধ করা ৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে মাত্র ৮ মিলিয়ন পেয়েছিল। [১৩৩] ২০০০ সালে চেচেন রিপাবলিক অফ ইচকেরিয়ার অস্বীকৃত বিচ্ছিন্ন রাজ্যের একটি দূতাবাস তালেবান সরকারের আফগানিস্তানে খোলা হয়েছিল, যা রাশিয়াকে আরো ক্ষুব্ধ করেছিল। [১৩১]

মার্কিন আগ্রাসন ও বিদ্রোহ: ২০০১ -২০২১[সম্পাদনা]

২০০১ সালে আল কায়েদাবিন লাদেনের ইস্যু নিয়ে আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনের পর দ্রুত তালেবান সরকারের পতন ঘটে। কারণ মার্কিন বিমান বাহিনীর নির্বিচ্ছিন্ন বোমা হামলা এবং মার্কিন সমর্থিত তালেবান বিরোধী বিশেষ বাহিনীর অভিযান মোকাবেলা করার মত সামর্থ্য তালেবান সরকারের ছিল না। এর ফলে সে বছরের নভেম্বরের মধ্যেই তারা সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হয়।[১৩৪] আগ্রাসনে আনুমানিক ৮,০০০ থেকে ১২,০০০ তালেবান নিহত হন, যা তার বাহিনীর মোট জনশক্তির ২০ শতাংশ ছিল।[১৩৪] এরপর আফগানিস্তান ইসলামি আমিরাতের অস্তিত্ব বন্ধ হয়ে যায় এবং মোল্লা ওমরসহ তালেবানের অধিকাংশ বড় বড় নেতাই আত্মগোপনে চলে যান।[১৩৪]

তালেবানের পুনর্গঠিত হওয়ার কারণগুলির মধ্যে দেশ থেকে বিদেশী দখলদারদের বিতাড়িত করার ইচ্ছার সাথে সাথে মার্কিন মদদপুষ্ট নতুন আফগান সরকারের সাবেক তালেবান সদস্যদের প্রতি অন্যায় আচরণও সম্পর্কিত ছিল। [১৩৫] নতুন সরকার ও মার্কিন বাহিনীর সাথে চরম খারাপ ও বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার পর কিছু অ-তালেবানও তাদের সমর্থন করতে শুরু করে। [১৩৬] যাহোক, প্রাথমিক সমর্থন খুবই সীমিত ছিল। কারণ এ পর্যায়ে অন্যদের তালেবানে অনুপ্রবেশ করার প্রচেষ্টা প্রায়শই ব্যর্থ হয়ে যায়। আফগান সরকার এবং মার্কিন ভাড়াটে গোয়েন্দাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তালেবানের কঠোর নীতির কারণে সাধারণ আফগান জনগণের তালেবান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া খুবই কঠিন ছিল। [১৩৭]

পুনঃসংগঠিত করার প্রাথমিক প্রচেষ্টা[সম্পাদনা]

আগ্রাসনের পর কেবল ২০০২ সালের মাঝামাঝি সময় পাকিস্তানে নির্বাসিত তালেবান নেতারা একে অপরের সাথে পুনরায় সংযোগ স্থাপন শুরু করে। [১৩৮] ২০০৩ সাল পর্যন্ত এমনকি পাকিস্তান সরকারও পরাজিত ও পলাতক তালেবান সদস্যদের আশ্রয় প্রত্যাখ্যান করে। [১৩৯] তখন তালেবানদের তহবিল এবং সরবরাহও কম ছিল, সেইসাথে এর লোকবলও সামর্থ্যানুযায়ী ছিল না। তাদের প্রথম অনুদান ২০০২ এবং ২০০৩ সালের প্রথম দিকে আসে, যা কিছু সহায়ক আফগান ব্যবসায়ী এবং কিছু আরব দাতাদের কাছ থেকে এসেছিল। [১৩৯] এছাড়া উপজাতীয় প্রবীণ নেতারাও নতুন করে যুদ্ধের সমর্থনে ছিল না। [১৩৯] এর ফলে কিছু তালেবান নেতা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যোগদানের কথা বিবেচনা করে এবং ২০০৪ সাল পর্যন্ত এই ইস্যুতে বৈঠক করে। যদিও এই বৈঠকের ফলে তা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।[১৩৯]

২০০২ সাল থেকে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে বিভিন্ন তালেবান গ্রুপগুলি পাকিস্তানের সহায়তা এবং সমর্থন ছাড়াই কাজ শুরু করে। [১৩৯] এই দলগুলি সাধারণত মাহাজে (ফ্রন্ট) সংগঠিত হত, যার প্রতিটিতে প্রায় দশ থেকে কয়েকশ সদস্য ছিল। [১৪০] পাকিস্তানে নেতারা তাদের পুরানো পরিচিতিগুলিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেছিলেন। [১৪০] প্রথমদিকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে প্রধানত সক্রিয় কয়েকজন সরকারী পদমর্যাদার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে নিঃশব্দ করা হয়েছিল। [১৪০] যদিও ২০০৩ সাল নাগাদ সরকারী সহযোগীদের বিরুদ্ধেও গুপ্তহত্যা এবং রাতের চিঠি শুরু হয়েছিল। [১৪১] স্থানীয় গোষ্ঠীগুলি সিনিয়র নেতাদের অধীনে একত্র হতে শুরু করে এবং কান্দাহার, হেলমান্দগজনিতে এ ধরনের সক্রিয় নেতাদের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ শুরু করে। [১৪২]

দেশের পূর্বাঞ্চলে স্থানীয় কমান্ডার এবং বিদেশী আল-কায়েদা জিহাদি দল, সেইসাথে ফেডারেল উপজাতীয় অঞ্চল এবং পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে তালেবানপন্থী নেটওয়ার্কগুলির মাধ্যমে তালেবানের কার্যকলাপ আবার শুরু হয়। [১৪৩] নানগারহার প্রদেশ এই অঞ্চলের প্রথম তালেবান কেন্দ্র হিসাবে আবির্ভূত হয়, যেখানে ২০০২ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে তিনটি স্বায়ত্তশাসিত গোষ্ঠী গঠিত হয়েছিল। [১৪৩] যাইহোক, লজিস্টিক সমস্যা পূর্ব আফগানিস্তানে তার কার্যক্রম সীমিত রাখে। [১৪৪] বেশিরভাগ হামলাই ছিল পাকিস্তান থেকে সীমান্তের ওপারে অভিযান। [১৪৪] ২০০৪ সালে নুরিস্তান প্রদেশকুনার প্রদেশের পার্বত্য অঞ্চলে গেরিলা অভিযানের মাধ্যমে কার্যকলাপের আরেকটি কেন্দ্র অস্তিত্ব লাভ করে। [১৪৪]

আফগানিস্তানের প্রদেশগুলি

কাবুলে, কয়েকটি বড় ফ্রন্টসহ অপারেশনগুলি খণ্ডিত ছিল। [১৪৫] উত্তর-পূর্ব ময়দান ওয়ার্দাক প্রদেশে স্থানীয় কমান্ডাররা ২০০৫ সালের মধ্যে তাদের ফ্রন্ট সংগঠিত করেছিল। [১৩৫] কাছাকাছি লোগার প্রদেশেও একই রকম পরিস্থিতি ঘটেছিল। [১৩৫] উত্তর-পূর্বের বৃহত্তম ফ্রন্টটি বাঘলান প্রদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এভাবেই গোটা দেশে তালেবানদের পুনর্ভব শুরু হয়। [১৩৫]

সংগঠিত প্রতিরোধের উত্থান[সম্পাদনা]

মার্কিন আগ্রাসনের পরে তালেবানদের একটি বৃহত্তর গোষ্ঠীর প্রথম প্রতিরোধ প্রচেষ্টা ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে সংঘটিত হয়েছিল। [১৩৭] হেলমান্দ সীমান্তের কাছে একটি আফগানি শরণার্থী শিবিরে গার্দি জাঙ্গালে প্রাক্তন মধ্য-স্তরের তালেবান কর্মকর্তারা একটি শুরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। [১৩৭] এটি কান্দাহার, হেলমান্দ, জাবুলওরুজগনের দক্ষিণ প্রদেশে পরিচালিত হয়েছিল এবং প্রতিটিতে একজন কমান্ডিং প্রতিনিধি ছিল। [১৪৬] যোদ্ধাদেরকে তালেবান বাহিনী বলে দাবি করা হয়েছিল, যারা কখনও ধ্বংস সাধনে উৎসাহ বোধ করেননি এবং আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে আমিরাতের রেখে যাওয়া পুরনো অস্ত্র এবং গোলাবারুদ ব্যবহার করেছিল। [১৪৬] এই দলটি মোট ১,১০০-১,২০০ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত ছিল এবং প্রায় ৫০ ব্যক্তি জন বা তার থেকেও কম ব্যক্তি নিয়ে ২৩টি উপদলে বিভক্ত ছিল।[১৪৬] যাহোক, এই গোষ্ঠীটি শূরা, প্রতিনিধি ও কমান্ডারদের বাইরে কোন শাসন কাঠামো ছাড়া ছায়া সরকার প্রতিষ্ঠা করেনি। [১৪৬] কমান্ডাররা স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল এবং তারা পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে যুদ্ধের সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছিল।[১৪৬] এটি ২০০৩ সালে সদস্য ও আর্থিক অক্ষমতায় বন্ধ হয়ে যায়। [১৪৭]

অপর দিকে পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলায়, জালালুদ্দিন হাক্কানি ২০০১ সালে সেখানে নির্বাসিত হওয়ার পর স্থানীয় ও নির্বাসিত তালেবান যোদ্ধাদের নিয়ে পুনরায় সংগঠিত হতে শুরু করেছিলেন। [১৪৭] ২০০২ সালের প্রথম দিকে তাদের জনবল প্রায় ১,৪০০ জন বলে অনুমান করা হয়েছিল। তাদের নিয়ে জালাল উদ্দীন নিজে হক্কানি নেটওয়ার্ক নামে একটি মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করেন।[১৪৮] হাক্কানি নেটওয়ার্কের বাহিনী ২০০২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে পাকতিয়া প্রদেশ এবং খোস্ত প্রদেশে সীমিত কার্যকলাপের সাথে উপস্থিত হয়েছিল। [১৪৮] প্রাক্তন সদস্যরা উত্তর ও দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের পাশাপাশি হাঙ্গু জেলায় দলেবলে ফিরে আসতে শুরু করে, যেখানে আল-কায়েদা ও স্থানীয় উপজাতিরাও যোগ দেয়। [১৪৮] বিদেশী যোদ্ধারা একটি বড় ভূমিকা পালন করেছিল এবং উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রচুর সমর্থন আসে। [১৪৮] সামরিক সক্ষমতা প্রমাণিত হওয়ার পর পরই পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সমর্থন দিতে শুরু করে। [১৪৯] দক্ষিণ-পূর্ব আফগানিস্তানে একটি প্রতিরোধী জিহাদ শুরু করার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের সমর্থনের পর, মিরামশাহ শুরাটি ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিরামশাহ জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে সিনিয়র পাকিস্তানি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়। [১৪৯] ২০০৩ সালে, শুরা ৪৬টি জেলা এবং চারটি প্রদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ করেছিল। [১৫০]

তালেবানের শীর্ষ নেতারা পুনরায় সংগঠিত হতে আরও বেশি সময় নিয়েছিলেন। আন্দোলনকে সহজ করতে এবং তহবিল বৃদ্ধি ও নতুন প্রতিরোধ আন্দোলনের সুবিধা নেওয়ার চাপের ফলে ২০০৩ সালের ১৪ মার্চ কোয়েটায় কোয়েটা শুরা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার মধ্যে আবদুল গনি বারাদার, দাদুল্লাহ, আখতার মনসুর ও গুল আগা ইশাকজাই উপস্থিত। [১৫০] লক্ষ্য ছিল মূলত নতুন সরকারকে উৎখাত করা নয়; বরং এদের সাথে একটি সহ-বাসস্থান অর্জন করে আন্দোলনকে পুনরায় জীবিত ও সতেজ করা।[১৫১] মোল্লা ওমর এটির অংশ ছিলেন না, কিন্তু পরে তিনি এই শুরাকে সমর্থন করেন। [১৫২] এটি দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্রোহকে আরও সংগঠিত করে এবং এর সমস্ত এলাকায় প্রাদেশিক এবং জেলা গভর্নর ছিল। [১৫২] ২০০৩ সালের মধ্যে কান্দাহার এবং হেলমান্দ এবং ২০০৪ সালের মধ্যে জাবুল, উরুজগান, গজনি, পাকতিয়াপাকতিকা অন্তর্ভুক্ত হয়। [১৫৩] ২০০৩-২০০৪ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে সমর্থন খুবই সামান্য ছিল, তখন তালেবানের মোট বহিরাগত অর্থায়ন ছিল ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। [১৫২] তবে ২০০৫ সালে পাকিস্তান তালেবানকে পূর্ণ সমর্থন করার কথা জানায়। [১৫৩] হাক্কানিরাও শুরায় যোগ দেয়। [১৫৪] ফলে ২০০৫ সাল থেকে শূরায় নীতিনির্ধারণের জন্যে তারা নতুন কাঠামো সংগঠিত করতে শুরু করে; যেমন একটি স্বাস্থ্য কমিশন এবং একটি অর্থ কমিশন। [১৫৫] গভর্নর ও সেনাপতি নিয়োগের জন্যেও একটি শূরা প্রতিষ্ঠিত হয়। [১৫৫]

বিদ্রোহী অভিযানের সূচনা[সম্পাদনা]

২০০১ সালে মার্কিন আগ্রাসনের পর কার্যত তালেবান আন্দোলন নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। মার্কিন হামলায় বেঁচে যাওয়া তালেবান সদস্যরা পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং অধিকাংশই লোকালয় ছেড়ে পাহাড়–পর্বত বা পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যায়। প্রায় ২ বছর যাবত তারা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছড়িয়ে ছটিয়ে থাকে। পরবর্তী ২০০৩ সালের মে এবং জুন মাসে উচ্চ তালেবান কর্মকর্তারা একত্র হতে সক্ষম হয় এবং তারা ঘোষণা করেন যে, তালেবান যোদ্ধারা পুনরায় সংগঠিত হয়েছে এবং তারা আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও তার অধিনস্ত ন্যাটোর বাহিনীকে বিতাড়িত করার জন্য গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।[১৫৬][১৫৭] মোল্লা ওমর মোল্লা দাদুল্লাহর মতো সিনিয়র ও দক্ষ তালেবান কমান্ডারদের পাঁচটি অপারেশনাল জোনে ভাগ করে দিয়েছিলেন। জাবুল প্রদেশে দায়িত্ব নেন দাদুল্লাহ[১৫৬] ২০০৩ এর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে এবং ২০০৪ এর মধ্যবর্তী সময়ে অপারেশনগুলি তীব্র থেকে তীব্রতর হতে শুরু করে। রাতে চিঠি প্রেরণ করার পরে সরকারী কর্মকর্তাদের অপহরণ এবং হত্যা এবং ২০০৫ সাল নাগাদ গ্রামের প্রবীণদের সহযোগিতা নিয়ে তালেবানবিরোধী সব সরকারী জনগণের ওপর ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হলে প্রাক্তনরা ভয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। [১৫৩] সরকারি কর্মকতাগণের জন্য নির্মিত বিশেষ স্কুল এবং ক্লিনিকও গুড়িয়ে দেওয়া হয়। [১৫৩] তালেবানদের প্রচার ও প্রচেষ্টার একটি অংশ হিসেবে মসজিদগুলিকে তার বার্তা প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হয় এবং তাদের লিখিত ধর্মীয় আবেগমিশ্রিত তারানাও (গীতিনাট্য) বাজানো হতো। [১৫৪]

যদিও প্রাথমিক তালেবান বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি অন্তত ছোট ছোট ছিল এবং তারা স্থানীয় কমান্ডারদের সাথে আবদ্ধ ছিল; তবে কোয়েটা শুরা তাদের প্রতি গোষ্ঠীর জন্য ২৫ জন বাধ্যতামূলক নির্দিষ্ট শক্তি দিয়ে ব্যবস্থা করেছিল (যাকে একটি সার গ্রুপ বলা হয়) যদিও এটি অনুশীলনে খুব কমই বাস্তবায়িত হয়েছে।[১৫৮] এগুলি একটি জনপ্রিয় কমান্ডারের অধীনে একটি ফ্রন্টে যোগ দিতে পারত। [১৫৯] গ্রুপ কমান্ডারদের উপরে ছিলেন জেলা গভর্নর এবং তাদের উপরে প্রাদেশিক গভর্নর। [১৫৯] ইউনিটগুলি সাধারণত জাতিগতভাবে সমজাতীয় ছিল, যাতে তাদের মাঝে কোনো ক্রমেই জাতিগত দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। [১৫৯] গোষ্ঠীগুলি তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে প্রশাসনিকভাবে যাকাতউশরসহ ইসলাম ধর্ম কর্তৃক নির্ধারিত আর্থিক উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ থেকে শুরু করে বুদ্ধিমত্তা ও বিশেষ অপারেশনে অংশ নিত। এসব ছাড়াও তারা অন্যান্য বিশেষত্বেও বিশেষিত হতে পারে। [১৫৯] অপারেশনের জন্য ৩০০-৩৫০ জন যোদ্ধাকে মোতায়েন করা হতো। [১৫৯] প্রায় ২০০০ যোদ্ধা নিয়ে দাদুল্লাহ ছিলেন সবচেয়ে শক্তিশালী কমান্ডার এবং অবশেষে দক্ষিণাঞ্চলের সমস্ত অপারেশনের কমান্ড তিনি লাভ করেন। [১৬০]

২০০৪ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে আত্মগোপনে থাকা তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন প্রধান তালেবান নেতা মোহাম্মদ ওমর "দেশের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার" করার জন্য আমেরিকা ও তার পুতুল (অন্তর্বর্তীকালীন আফগান সরকারী বাহিনী) বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।[১৬১] ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত আফগান রাষ্ট্রপতি নির্বাচন তার একটি প্রধান লক্ষ্য ছিল; যদিও কেবল ২০টি জেলা এবং অন্যত্র ২০০টি গ্রামকে ভোট দান থেকে সফলভাবে প্রতিরোধ করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছিল। দেশের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সেই নির্বাচনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা যায় নি।[১৬২] মার্কিন চাপের কারণে তখন পাকিস্তান সীমিত আকারে তালেবান আন্দোলনকে সহায়তা করে বলে অভিযোগ রয়েছে; যদিও সৌদি আরব পালাক্রমে সাহায্য করে গিয়েছিল। [১৬২]

তীব্র লড়াই[সম্পাদনা]

২০০৫ সালকে সাধারণত তালেবান বিদ্রোহের একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে দেখা হয়।[১৫৫] আমিরাতের দিন থেকেই ক্ষমতা সংকুচিত হওয়ার পরপর তালেবানরা তাদের পুরানো বৃত্তের বাইরে বিস্তৃত হতে শুরু করে। [১৫৫] ২০০৫ আফগান সংসদীয় নির্বাচন তালেবানদের হুমকিতে আরো সফলভাবে ব্যাহত হয়েছিল এবং প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি জেলায় জনগণকে ভোট দেওয়া থেকে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়। [১৬৩] অভিযোগ করা হয় যে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স এই প্রচেষ্টার জন্য প্রায় ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা দিয়েছে। [১৬৩] পাকিস্তান, বিশেষত তালেবান সর্বদা এসব অভিযোগ কঠোরভাবে প্রত্যাখান করে এবং তাদের পাকিস্তানি স্বার্থে কর্মরত সংগঠন হিসেবে তুলে ধরার তীব্র নিন্দা করে। তবে এসব সত্ত্বেও সহিংসতা হালকা ছিল। [১৬৩] তালেবান ২০০৬ সালে বিদ্রোহ অভিযান পুনঃপ্রসারণ শুরু করে।[১৬৪] সে বছর রাষ্ট্রীয় শিক্ষার বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত অভিযান শুরু হয়, যেখানে হামলার সংখ্যা ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং এই হামলায় কেবল সরকারি বাহিনী ও উচ্চপদস্থ কর্মকতাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়। [১৬৫]

ক্ষমতায় ফিরে আসা: ২০২১–বর্তমান[সম্পাদনা]

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কাবুলে তালেবান যোদ্ধাদের একটি দল।

২০২০ সালের ২৯ শে ফেব্রুয়ারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবান কাতারের দোহাতে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন,[১৬৬] যা আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানে শান্তি আনয়ন চুক্তি শিরোনামে পরিচিত হয় এবং এই চুক্তির বিধানগুলির মধ্যে রয়েছে; আফগানিস্তান থেকে সমস্ত মার্কিনন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহার; তালেবানের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলসমূহে আল-কায়েদাকে জিহাদি কার্যক্রম পরিচালনা করা থেকে বিরত রাখার প্রতিশ্রুতি এবং তালেবানআফগান সরকারের মধ্যে আলোচনা।[১৬৭] এই চুক্তির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ খ্রিস্টাব্দে জুলাই মাসের মধ্যে তার বাহিনী সংখ্যা ১৩,০০০ থেকে ৮,৬০০ সৈন্যে নামিয়ে আনতে সম্মত হয় এবং তারপর তালেবান তার প্রতিশ্রুতি মানলে ১৪ মাসের মধ্যে তার সৈন্যদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করবে।[১৬৮] এ চুক্তিটি চীন, রাশিয়া এবং পাকিস্তান সমর্থন করে; যদিও চুক্তিটিতে আফগানিস্তান সরকার জড়িত ছিল না।[১৬৯] ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রতালেবানের মধ্যে উল্লিখিত দোহা চুক্তির অংশ হিসাবে আমেরিকা ও ন্যাটো সমর্থিত তৎকালীন আফগান সরকার হত্যার মতো বড় অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত হওয়া ৪০০ জনসহ ৫,০০০ জনেরও অধিক তালেবান বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।[১৭০] আফগানিস্তানের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মতে, মুক্তি পাওয়া অনেক বন্দীই, যারা যুদ্ধে বিশেষজ্ঞ ছিল, তারা সবাই ময়দানে ফিরে এসে তালেবানের হাতকে শক্তিশালী করেছে।[১৭১]

২০২১ সালের প্রথম দিকে পেন্টাগন ও আফগানিস্তান সরকার উভয়ই বিশ্বাস করেছিলেন যে, যুদ্ধে কাবুলকে অবিচ্ছিন্ন মার্কিন সামরিক সহায়তা প্রদান করা অতীব প্রয়োজন রয়েছে। যাইহোক, আফগান সরকার মার্কিন জনশক্তি ও চলমান সামরিক সহায়তার উপর নির্ভর করা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও, রাষ্ট্রপতি বাইডেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি অন্ত ও ফলাফলবিহীন বিদেশী যুদ্ধ থেকে দূরে সরানোর জন্য রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের অবিচল নীতি অনুসরণ করে চলেন।[১৭২] জো বাইডেন প্রশাসন ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ঘোষণা করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারের প্রত্যাশিত সমাপ্তির তারিখসহ প্রাথমিক সময়সীমার পরেও প্রত্যাহার চালিয়ে যাবে[১৭৩] এরপর ৮ জুলাই, বাইডেন মার্কিন প্রত্যাহারের সময়সীমা ৩১ আগস্টে স্থানান্তরিত করেন।[১৭৪] আফগানিস্তান থেকে বেশিরভাগ মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহারের সাথে সাথে তালেবান ও তাদের সহযোগী জিহাদি গোষ্ঠীগুলি ২০২১ সালের ১ মে সারাদেশে ব্যাপক আক্রমণ শুরু করে। তালেবান আক্রমণের ফলে সারা দেশে দ্রুত পরাজয়ের পর আফগান ন্যাশনাল আর্মি বিশৃঙ্খল অবস্থায় পড়ে যায় এবং মাত্র দুটি ইউনিট আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত সক্রিয় ছিল: তা হল ২০১তম কর্পস ও ১১১ তম ডিভিশন এবং উভয়ই কাবুলে অবস্থিত। এভাবে তালেবান বাহিনী মিহতার্লাম, শারানা, গার্দেজ, আসাদাবাদ এবং অন্যান্য শহর ও পূর্বের জেলাগুলো দখল করার পর রাজধানী শহর কাবুলও ঘেরাও করে রেখেছিল। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট রাজধানী শহর কাবুল তালেবান বাহিনীর হাতে এসে পড়ে। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর কাবুল পতনের ঘটনা ঘটে এবং তখন থেকে তালেবান যোদ্ধারা সরকার গঠন করে আফগানিস্থান পরিচালনা করছে।

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

নারীদের ব্যাপারে[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জী[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "আফগানিস্তানের ইতিহাস (তিন খণ্ড)"Wafilife (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-১১-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-০২ 
  2. মাওলানা ইসমাইল রেহান: আফগানিস্তানের ইতিহাস 
  3. Fitchett, Joseph (২৬ সেপ্টেম্বর ২০০১)। "What About the Taliban's Stingers?"The International Herald Tribune। ১৭ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-১১ 
  4. Coll 2005, পৃ. 283।
  5. Coll 2005, পৃ. 284।
  6. Coll 2005, পৃ. 39।
  7. Coll 2005, পৃ. 40।
  8. Coll 2005, পৃ. 45।
  9. Coll 2005, পৃ. 46।
  10. Coll 2005, পৃ. 59।
  11. Coll 2005, পৃ. 61।
  12. Coll 2005, পৃ. 62।
  13. Coll 2005, পৃ. 65।
  14. Coll 2005, পৃ. 180।
  15. The 'university of holy war', Haroon Rashid, BBC Online, 2 October 2003
  16. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; jamestown নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  17. Inside Islam's "terror schools", William Dalrymple, New Statesman, 28 March 2005
  18. Coll 2005, পৃ. 234।
  19. Coll 2005, পৃ. 218।
  20. Coll 2005, পৃ. 237।
  21. Coll 2005, পৃ. 263।
  22. Coll 2005, পৃ. 289–290।
  23. Coll 2005, পৃ. 290।
  24. Coll 2005, পৃ. 291।
  25. Julian West (২৩ সেপ্টে ২০০১)। "Pakistan's godfathers of the Taliban hold the key to the hunt for Bin Laden"। London: Daily Telegraph। 
  26. Carlotta Gall (৩ মার্চ ২০১০)। "Former Pakistani officer embodies policy puzzle"New York Times 
  27. Coll 2005, পৃ. 282।
  28. Rashid 2010, পৃ. 45।
  29. Rashid 2010, পৃ. 46।
  30. Coll 2005, পৃ. 284–285।
  31. Coll 2005, পৃ. 285।
  32. Coll 2005, পৃ. 285–287।
  33. Coll 2005, পৃ. 287।
  34. Coll 2005, পৃ. 288।
  35. Rashid 2000, পৃ. 98।
  36. Encyclopedia of Islam and the Muslim world editor in chief, Richard C. Martin, Macmillan Reference : Thomson/Gale, 2004[পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
  37. Matinuddin, Kamal, The Taliban Phenomenon, Afghanistan 1994–1997, Oxford University Press, (1999), pp. 25–26 [আইএসবিএন অনুপস্থিত]
  38. Rashid 2000, পৃ. 25–29।
  39. Rashid 2010, পৃ. 57।
  40. Rashid 2010, পৃ. 57–58।
  41. Rashid 2010, পৃ. 58।
  42. Rashid 2010, পৃ. 59।
  43. Rashid 2000, পৃ. 27–29।
  44. Coll 2005, পৃ. 294।
  45. Rashid 2000, পৃ. 1।
  46. Coll 2005, পৃ. 328।
  47. Rashid 2010, পৃ. 70।
  48. Rashid 2010, পৃ. 71।
  49. Rashid 2010, পৃ. 72।
  50. Coll 2005, পৃ. 332।
  51. Coll 2005, পৃ. 333।
  52. Rashid 2010, পৃ. 87।
  53. Coll 2005, পৃ. 344।
  54. Coll 2005, পৃ. 346।
  55. Coll 2005, পৃ. 293।
  56. Rashid 2010, পৃ. 68।
  57. Coll 2005, পৃ. 331।
  58. Coll 2005, পৃ. 295।
  59. Coll 2005, পৃ. 296।
  60. Coll 2005, পৃ. 297।
  61. Sanchez, Raf (৭ নভেম্বর ২০১৪)। "FBI searches home of former envoy labelled 'Lady Taliban'"Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  62. Coll, Steve (২০০৪)। Ghost Wars: The Secret History of the CIA, Afghanistan, and Bin Laden, from the Soviet invasion to September 10, 2001Penguin Books। পৃষ্ঠা 334–335। আইএসবিএন 1594200076 
  63. Swami, Praveen (১৮ জানুয়ারি ২০১২)। "Lead West's romancing of the Taliban"The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  64. Dorronsoro, Gilles (জুন ২০০১)। "The World Isolates the Taliban"Global Policy Forum। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  65. Porter, Tom (২১ নভেম্বর ২০১৪)। "FBI Investigates US Diplomat Dubbed 'Lady Taliban' over Secrets Leak"International Business Times। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  66. Coll 2005, পৃ. 335।
  67. Coll 2005, পৃ. 338।
  68. Coll 2005, পৃ. 340।
  69. Coll 2005, পৃ. 341।
  70. Coll 2005, পৃ. 342।
  71. Coll 2005, পৃ. 343।
  72. Rashid 2010, পৃ. 74।
  73. Rashid 2010, পৃ. 74–75।
  74. Coll 2005, পৃ. 349।
  75. Burns, John F. (১৯৯৭-০৫-২৬)। "In Afghanistan, a Triumph of Fundamentalism"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-২৬ 
  76. Coll 2005, পৃ. 350।
  77. Coll 2005, পৃ. 351।
  78. Rashid 2010, পৃ. 62–63।
  79. Rashid 2010, পৃ. 63।
  80. Rashid 2010, পৃ. 67।
  81. Rashid 2010, পৃ. 82।
  82. Rashid 2010, পৃ. 83।
  83. Amy Waldman, `No TV, no Chess, No Kites: Taliban's Code, from A to Z,` New York Times, 22 November 2001
  84. "US Country Report on Human Rights Practices – Afghanistan 2001"। State.gov। ২০০২-০৩-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-৩১ 
  85. Wright, Looming Towers (2006), p. 231
  86. Rashid 2000 See the full edict here: The Taliban In Their Own Words
  87. Wright, Looming Towers (2006), p. 337.
  88. Rashid 2000, পৃ. 115–116।
  89. Rashid 2000, পৃ. 105।
  90. "ধর্ষণ ও ব্যভিচারের শাস্তির বিষয়ে ইসলাম কী বলে"Jugantor (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-০৯ 
  91. "ইসলামে চোরের শাস্তি" 
  92. Rashid 2000, পৃ. 106।
  93. "Taleban 'will kill school girls'"BBC News। ২৬ ডিসেম্বর ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১০ 
  94. "Taliban Threatening girls again"। YouTube। ২০০৯-০১-২৭। Archived from the original on ২০১৪-০৬-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-৩১ 
  95. Rashid 2000, পৃ. 70।
  96. Rashid 2000, পৃ. 114।
  97. Rashid 2000, পৃ. 71।
  98. Rashid 2010, পৃ. 88।
  99. Rashid 2010, পৃ. 91।
  100. Rashid 2010, পৃ. 92।
  101. Rashid 2010, পৃ. 92–93।
  102. Rashid 2010, পৃ. 93।
  103. Rashid 2010, পৃ. 94।
  104. Rashid 2010, পৃ. 96।
  105. Rashid 2010, পৃ. 99।
  106. Rashid 2010, পৃ. 98।
  107. Rashid 2010, পৃ. 101।
  108. Rashid 2000, পৃ. 73।
  109. Goodson 2001, পৃ. 79।
  110. "The Massacre in Mazar-i-Sharif"www.hrw.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৯ 
  111. Rashid 2010, পৃ. 106।
  112. "Human Rights Watch Report, 'Afghanistan, the massacre in Mazar-e-Sharif', November 1998. Incitement of Violence Against Hazaras by Governor Niazi"। Hrw.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-৩১ 
  113. Rashid 2000, পৃ. 68।
  114. Rashid 2000, পৃ. 76।
  115. "Afghanistan"। Hrw.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-০৫ 
  116. "Pakistan and Japan plead for Afghan statues"CNN.com। ২০০১-০৩-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০১-২০ 
  117. "Guardian Unlimited | Archive Search"web.archive.org। ২০০৬-০২-২৮। Archived from the original on ২০০৬-০২-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-০৯ 
  118. "Afghan..."। ৭ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ 
  119. Abdul Saalam Zayef: My life With Taliban 
  120. "Islam Online- News Section"web.archive.org। ২০০৮-০৪-০৩। Archived from the original on ২০০৮-০৪-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-০৯ 
  121. "বইয়ের উৎস - উইকিপিডিয়া"bn.wikipedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-০৯ 
  122. Hashimi, Syed Rahmatullah (১০ মার্চ ২০০১)। "Lecture: Taliban in Afghanistan"robert-fisk.com। ২৫ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  123. ""Taliban destroy ancient Buddhist relics – International pleas ignored by Afghanistan's Islamic fundamentalist leaders""। ৬ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৫ 
  124. "Destruction and Rebuilding of the Bamyan Buddhas"। Slate Magazine। 
  125. Bergen, Peter. "The Osama bin Laden I Know", 2006. p. 271
  126. Rashid 2010, পৃ. 110।
  127. Rashid 2010, পৃ. 111।
  128. Rashid 2010, পৃ. 117।
  129. Rashid 2010, পৃ. 114।
  130. Rashid 2010, পৃ. 116।
  131. Rashid 2010, পৃ. 121।
  132. Rashid 2010, পৃ. 117–118।
  133. Rashid 2010, পৃ. 119।
  134. Giustozzi, Antonio (২০১৯)। The Taliban at War: 2001–2018 (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 17–18। আইএসবিএন 978-0-19-009239-9 
  135. Giustozzi 2019, পৃ. 24।
  136. Giustozzi 2019, পৃ. 25।
  137. Giustozzi 2019, পৃ. 26।
  138. Giustozzi 2019, পৃ. 18।
  139. Giustozzi 2019, পৃ. 19।
  140. Giustozzi 2019, পৃ. 20।
  141. Giustozzi 2019, পৃ. 20–21।
  142. Giustozzi 2019, পৃ. 21।
  143. Giustozzi 2019, পৃ. 22।
  144. Giustozzi 2019, পৃ. 23।
  145. Giustozzi 2019, পৃ. 23–24।
  146. Giustozzi 2019, পৃ. 27।
  147. Giustozzi 2019, পৃ. 28।
  148. Giustozzi 2019, পৃ. 29।
  149. Giustozzi 2019, পৃ. 31।
  150. Giustozzi 2019, পৃ. 32।
  151. Giustozzi 2019, পৃ. 32–33।
  152. Giustozzi 2019, পৃ. 33।
  153. Giustozzi 2019, পৃ. 34।
  154. Giustozzi 2019, পৃ. 35।
  155. Giustozzi 2019, পৃ. 43।
  156. Tohid, Owias; Baldauf, Scott (৮ মে ২০০৩)। "Taliban appears to be regrouped and well-funded"Christian Science Monitor। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ 
  157. Tohid, Owias (২৭ জুন ২০০৩)। "Taliban regroups – on the road"Christian Science Monitor। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ 
  158. Giustozzi 2019, পৃ. 36।
  159. Giustozzi 2019, পৃ. 37।
  160. Giustozzi 2019, পৃ. 38।
  161. Gall, Carlotta (১৩ নভেম্বর ২০০৪)। "Asia: Afghanistan: Taliban Leader Vows Return"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  162. Giustozzi 2019, পৃ. 40।
  163. Giustozzi 2019, পৃ. 44।
  164. Barfield, Thomas (২০১২)। Afghanistan: A Cultural and Political History। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 327। আইএসবিএন 978-0-691-15441-1 
  165. Giustozzi 2019, পৃ. 45–46।
  166. Qazi, Shereena (২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০)। "Afghanistan's Taliban, US sign agreement aimed at ending war"Al-Jazeera। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০২০ 
  167. "US and Taliban sign deal to end 18-year Afghan war"BBC News। ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০২০ 
  168. Rai, Manish (২১ মার্চ ২০২০)। "U.S.-Taliban Deal: India should Chalk-out a New Strategy"OpedColumn.News.Blog 
  169. Basu, Nayanima (১২ সেপ্টেম্বর ২০২০)। "India asserts Afghanistan's 'national sovereignty' as peace talks with Taliban start in Qatar"ThePrint 
  170. Mashal, Mujib; Faizi, Fatima (৩ সেপ্টেম্বর ২০২০)। "Afghanistan to Release Last Taliban Prisoners, Removing Final Hurdle to Talks"The New York Times। ৮ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০২১ 
  171. George, Susannah (৮ আগস্ট ২০২১)। "'This is a big problem': The Taliban are storming prisons holding thousands of militants"The Independent। ৯ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০২১ 
  172. Sanger, David E.; Cooper, Helene (২০২১-০৮-১৪)। "Taliban Sweep in Afghanistan Follows Years of U.S. Miscalculations"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। ১৫ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৫ 
  173. "Biden plans to withdraw U.S. forces from Afghanistan by Sept. 11, missing May deadline, reports say"MSNBC। ১৩ এপ্রিল ২০২১। ১৩ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২১ 
  174. "Biden says US war in Afghanistan will end August 31"AP News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৭-০৮। ৮ জুলাই ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-০৮