রেডিও কাবুল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
১৯৫০ এর দশকে রেডিও কাবুল ট্রান্সমিটারে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্যানেল। এর সম্প্রচার দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত শোনা যায়।
১৯৬০ এর দশকে রেডিও কাবুল স্টুডিও

রেডিও কাবুল আফগানিস্তানের সরকারী রেডিও স্টেশন। ১৯২০ এর দশকে কাবুলে প্রথম রেডিও ট্রান্সমিটার স্থাপনের পর থেকে রাষ্ট্র পরিচালিত রেডিও স্টেশনটির নাম বিভিন্ন পরিবর্তনের পর রেডিও কাবুল দেওয়া হয়।

১৯২৫ সালে বাদশাহ আমানউল্লাহ খান কাবুল প্রাসাদে এএম ৮৩৩ কিলোহার্জে সম্প্রচারিত একটি ২০০ ওয়াটের রাশিয়ান ট্রান্সমিটার স্থাপন করেন। ১৯২৯ সালে বাদশাহর বিরুদ্ধে র বিদ্রোহের সময় এই ট্রান্সমিটারটি ধ্বংস করা হয়।[১] ১৯৩১ সালে নতুন বাদশাহ মোহাম্মদ নাদির শাহ ট্রান্সমিটারটি প্রতিস্থাপন করেন এবং ১৯৪০ সালে  নতুন ২০ কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার স্থাপন করে এর উন্নয়ন ঘটানো হয়, সেখানে ৬০০ কিলোহার্জে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হতো। এটিকেই সাধারণত রেডিও কাবুলের আনুষ্ঠানিক জন্ম হিসাবে বিবেচনা করা হয়। পশতু, দারি-ফার্সি, হিন্দি, ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়।

আফগানিস্তানের আধুনিক ইতিহাস জুড়ে রেডিওটি ক্ষমতাসীন দল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে (এবং নতুন নামকরণ করা হয়েছে)। বাদশাহ মোহাম্মদ জহির শাহ তার নিখিল-আফগান ঐক্যের লক্ষ্যকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করার সাথে সাথে স্টেশনটির নাম পরিবর্তন করে ১৯৫৩ সালে আফগান সম্প্রচার ব্যবস্থা এবং ১৯৬০ সালে আবার রেডিও আফগানিস্তানে পরিবর্তন করা হয়। ১৯৬০ এবং ৭০ এর দশকে অপেক্ষাকৃত শান্তিময় সময়ে রেডিও কাবুল ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেইন সারাহাং, ওস্তাদ ফরিদা মাহবাশ এবং ওস্তাদ মোহাম্মদ হাশেম চিশতির মতো ঐতিহ্যবাহী এবং আধুনিক আফগান শিল্পীদের একটি পুরো প্রজন্মকে উপস্থাপিত করেছিল। এই ওস্তাদ সঙ্গীতজ্ঞগণকে কেবল আফগানিস্তান নয় ভারত এবং অন্যান্য দেশেও শ্রদ্ধা করা হয়।

১৯৭০ এর দশকে বিভিন্ন সরকার পরিবর্তনের পর সকল নতুন নেতা রেডিও স্টেশন থেকে ঘোষণা করে। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা করার পর রেডিও কাবুল সোভিয়েত-সমর্থিত সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে সরাসরি সোভিয়েতপন্থী মত ও নীতি পুনঃপ্রচারের জন্য ব্যবহৃত হতো।

নব্বইয়ের দশকে গৃহযুদ্ধের সময়, যুদ্ধের কারণে রেডিও স্টেশনটি বেশ কয়েকবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিভিন্ন দলসমূহ কাবুলের নিয়ন্ত্রণ লাভ করার কারণে রেডিও স্টেশনটির হাত বদল হয়। ১৯৯৬ সালে তালেবানরা কাবুলের নিয়ন্ত্রণ লাভ করলে রেডিও স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে শরীয়ত গাঘ, যার অর্থ ভয়েস অফ শরিয়াহ বা শরিয়াহ কন্ঠ রাখা হয়। তালেবানরা দেশজুড়ে তাদের ক্ষমতা একীভূত করার কারণে, রেডিও স্টেশনটি তালেবান সমর্থকদের সমাবেশ করতে এবং ক্ষমতাসীন মোল্লাদের নতুন নতুন নির্দেশ প্রচার করতে ব্যবহৃত হতো। তালেবানরা নতুন স্টেশনে সঙ্গীত নিষিদ্ধ করে এবং রেডিও মহাফেজখানা ধ্বংস করার নির্দেশ দেয়, যার মধ্যে রেডিও কাবুলের সঙ্গীতের অপূরণীয় ফিতা ছিল এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি চল্লিশ বছরের বেশি পেছনে ফিরে যায়। ফিতাগুলো চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল, তবে ২০০২ সালে বিবিসি জানায় যে, অলৌকিকভাবে কেবল তালেবানদের হাত থেকেই নয়, ২০০১ সালের নভেম্বরে আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের সময় আমেরিকান বোমা দ্বারা রেডিও কাবুল সম্পূর্ণ ধ্বংস হলেও সংরক্ষণাগার বেঁচে গিয়েছিল। এই ফিতাগুলো তালেবানদের কাছ থেকে মহাফেজখানার দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ সিদ্দিক বা "মিঃ কম্পিউটার" লুকিয়ে রেখেছিলেন, তালেবাদের ধারণা ছিল তারা সংরক্ষণাগারটি ধ্বংস করেছে তবে তার পরিবর্তে ভারতীয় এবং ইরানের সঙ্গীতের ফিতা (টেপ) ছিল। সিদ্দিক দাবি করেন যে সেখানে ৫০,০০০ রেডিও ফিতা আছে।[২]

তালেবানরা ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর রেডিও কাবুল তার সঙ্গীত এবং রাজনৈতিক অনুষ্ঠান পুনরায় চালু করে। এটি দাবি করা হয় যে ২০০১ সালে রেডিও কাবুল থেকে প্রচারিত প্রথম গানটি ছিল আবদুল ওহাব মাদাদির বিখ্যাত দেশাত্মবোধক গান "ওয়াতান" (স্বদেশ)।[৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. John Baily (সেপ্টেম্বর ২০১৬)। War, Exile and the Music of Afghanistan: The Ethnographer’s Tale। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 25। আইএসবিএন 978-1-315-46692-7 
  2. Kabul's radio treasure trove BBC Online
  3. War, Exile and the Music of Afghanistan: The Ethnographer’s Tale by John Baily

আরও দেখুন[সম্পাদনা]