রিবা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

রিবা (আভিধানিক অর্থঃ বৃদ্ধি, আধিক্য, পরিবর্ধন, বেশি, স্ফীত, বিকাশ ইত্যাদি), যা উশুরি হিসেবেও পরিচিত, তা হল একটি আরবি শব্দ, যা ইসলামী পরিভাষায় সুদকে বোঝায়। ইসলামী শরীয়াহ মতে, লেনদেনের ক্ষেত্রে চুক্তির শর্তানুযায়ী শরীয়াহ সম্মত কোনোরুপ বিনিময় ব্যতীত মূলধনের উপর অতিরিক্ত যা কিছু গ্রহণ করা হয় তাকে সুদ বলে।

তাফসিরবিদ ইবনে জারীর মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন, জাহেলিয়াহ আমলে প্রচলিত ও কুরআনে নিষিদ্ধ 'রিবা' হল কাউকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণ দিয়ে মূলধনের অতিরিক্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করা। আরবেরা সে যুগে তা-ই করতো এবং নির্দিষ্ট মেয়াদে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে সুদ বাড়িয়ে দেবার শর্তে মেয়াদ বাড়িয়ে দিত।[১]

সংজ্ঞা[সম্পাদনা]

তাকাফুল বেসিক এক্সাম প্রিপারেশন ফর ইসলামিক ব্যাংকিং এ্যান্ড ফিন্যান্স ইন্সটিটিউট অফ মালয়েশিয়া এবং আনান হাসান দুই প্রকার রিবার বর্ণনা দেন, যার প্রতিটির আবার আলাদা শ্রেণিবিভাগ রয়েছে[২][৩] (এগুলোর রিবা নাসিয়াহর সংজ্ঞা অন্যান্যদের সংজ্ঞা হতে ভিন্ন):

রিবার ধরনসমূহ
রিবার ধরনসমূহ বিবরণ শ্রেণিবিভাগ বিবরণ
রিবা দুয়ুন অর্থের মূল পরিমাণের উপরে ও বাহিরে অন্যায্য উপরি গ্রহণ (যে কোনো প্রকার ঋণ কিংবা নগদ)। রিবা কার্জ ঋণের প্রধান অঙ্কের উপর বৃদ্ধি করা (সুদ নেওয়া), যা চুক্তিভিত্তিক ভাবে বোঝাপড়া করা হয়।
রিবা জাহিলিয়াহ ঋণগ্রহীতার বিলম্ব পরিশোধের অথবা ঋণ পরিশোধের ব্যর্থতার উপর অতিরিক্ত মূল্য আরোপ করা।
রিবা বুয়ু বাণিজ্য ও বিনিময় চুক্তিতে সংঘটিত হয় যাতে কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণীর পণ্যের (স্বর্ণ, রূপা, খেজুর, ইত্যাদি) ক্ষেত্রে একই জিনিসের ও একই প্রকারের মালামালের অসম বিনিময় ঘটে। রিবা ফজল অসম পরিমাণ বা মূল্য।
রিবা নাসিআহ্ পণ্য সরবরাহের সময় বর্ধিত হবার দরুন।[২]

রিবার উপর মৌলিক তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

কুরআন ও নিষেধাজ্ঞা[সম্পাদনা]

কুরআনে সর্বমোট ২০ টি আয়াত রয়েছে যাতে রিবার উল্লেখ রয়েছে।[৪] যদিও এই ২০ টি আয়াতের সবগুলোতেই শব্দগতভাবে সরাসরি এর উল্লেখ নেই। শব্দটি কুরআনে সরাসরি ৮ বার উল্লেখিত হয়েছে — তিনবার সূরা বাকারা (২): ২৭৫ নং আয়াতে ও একবার করে সূরা বাকারা (২): ২৭৬ নং আয়াত, সূরা বাকারা (২): ২৭৮ নং আয়াত, সূরা আল-ইমরান (৩): ১৩০ নং আয়াত, সূরা নিসা (৪): ১৬১ নং আয়াত এবং সূরা আর-রুম (৩০): ৩৯ নং আয়াতে।[৫]

যদিও ‘সুদ’ রিবার প্রধান প্রকার, কিন্তু রিবা বললে শুধু সুদ বুঝায় না, বরং রিবা একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ, যা দ্বারা যাবতীয় অসম বিনিময়কে বুঝায়।[৬]

সূরা আর-রুমের একটি মাক্কী আয়াতে সর্বপ্রথম বিষয়টি আবির্ভূত হয়:

মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে এই আশায় তোমরা সুদে যা কিছু দাও আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে, অতএব, তারাই দ্বিগুণ লাভ করে। (কুরআন ৩০:৩৯)[৭]

অন্যান্য মাদানী আয়াতগুলো হল:

বস্তুতঃ ইহুদীদের জন্য আমি হারাম করে দিয়েছি বহু পূত-পবিত্র বস্তু যা তাদের জন্য হালাল ছিল — তাদের পাপের কারণে এবং আল্লাহর পথে অধিক পরিমাণে বাধা দানের দরুন। আর এ কারণে যে, তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং এ কারণে যে, তারা অপরের সম্পদ ভোগ করতো অন্যায় ভাবে। বস্তুতঃ আমি কাফেরদের জন্য তৈরী করে রেখেছি বেদনাদায়ক শাস্তি। কিন্তু যারা তাদের মধ্যে জ্ঞানপক্ক ও ঈমানদার, তারা তাও মান্য করে যা আপনার উপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আপনার পূর্বে। আর যারা সালাতে অনুবর্তিতা পালনকারী, যারা যাকাত দানকারী এবং যারা আল্লাহ ও কিয়ামতে আস্থাশীল। বস্তুতঃ এমন লোকদেরকে আমি দান করবো মহাপুণ্য। (সূরা নিসা কুরআন ৪:১৬০-১৬২)[৮] হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাকো, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো। (সূরা আলে-ইমরান কুরআন ৩:১৩০)[৯][Note ১]

পরবর্তী পর্যায়ে সূরা বাকারায় বিস্তারিত আয়াত অবতীর্ণ হয়:

যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আছর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেওয়ারই মত। অথচ আল্লাহ তা'আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই জাহান্নামে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।

আল্লাহ তা'আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোনো অবিশ্বাসী পাপীকে। নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎ কাজ করেছে, সালাত প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং যাকাত দান করেছে, তাদের জন্যে তাদের পুরস্কার তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে। তাদের কোনো শঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাকো। অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না করো, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা করো, তবে তোমরা নিজেদের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারো প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না।

যদি খাতক অভাবগ্রস্থ হয়, তবে তাকে সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দেয়া উচিত। আর যদি ক্ষমা করে দাও, তবে তা খুবই উত্তম যদি তোমরা তা উপলব্ধি করো। (কুরআন ২:২৭৫-২৮০)[১০][Note ২]

হাদিস ও নিষেধাজ্ঞা[সম্পাদনা]

ফারহাদ নোমানি, আব্দুল কাদের থমাস[Note ৩] এবং এম. ও. ফারুকের ন্যায় পণ্ডিতগণ দাবি করেছেন যে, প্রাথমিক যুগের পণ্ডিতগণ এই বিশ্বাস করতেন যে রিবাকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য হাদিস খুবই প্রয়োজনীয় ছিল।

এম. ও. ফারুক বলেছেন যে, হাদিসে রিবার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই বক্তব্যটি খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রচলিত।[১২] তাই উক্ত বক্তব্য অনুসারে, সকল প্রকার সুদই 'রিবা' এবং তা ইসলামী আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ ― এই কথার লিখিত প্রমাণ হাদিসের উপর ভিত্তি করে বলা হয়।[১২][১৩]

উসমানী কর্তৃক উপস্থাপিত কিছু হাদিস, যেগুলো ঋণের মূল পরিমাণের উপর যে কোনো প্রকারের বর্ধিতকরণকে নিষিদ্ধ করেছে[১৪] সেগুলোর মধ্যে কিছু হাদিস হল নিম্নরূপঃ

  • "প্রত্যেক ঋণ যা লাভ প্রদান করে তা হল এক প্রকার 'রিবা'।"[১৫]
  • "যদি কেউ কাউকে ঋণ দেয় এবং ঋণ গ্রহীতা যদি ঋণদাতাকে এক গামলাপূর্ণ (খাবার) প্রস্তাব করে, তবে ঋণদাতার তা গ্রহণ করা উচিত নয়; অথবা ঋণ গ্রহীতা যদি ঋণদাতাকে তার পশুতে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর প্রস্তাব দেয়, ঋণদাতা যেন কখনোই সেই প্রস্তাব গ্রহণ না করে।..."[১৬]

ফরহাদ নোমানির মতে, ফিকহ পাঠশালা গুলোর মধ্যে, "... প্রাচীন হানাফি পণ্ডিত, কিছু বিখ্যাত শাফি পণ্ডিত (উদাহরণ, আল-রাযি) ও মালিকি (উদাহরণ, ইবনে রুশদ) মত ব্যক্ত করেন যে, রিবা বিষয়টি কুরআনে একটি অস্পষ্ট (মুজমাল) পরিভাষার ন্যায় ছিল, শাব্দিক অর্থের মাধ্যমে এর অর্থ পরিষ্কার হচ্ছিল না, এবং তাই সে সময় এর অস্পষ্টতা পরিষ্কার করবার জন্য প্রয়োজন ছিল 'প্রচলিত' ঐতিহ্যের (আরবি ভাষায় হাদিসের আরেক প্রতিশব্দ 'ঐতিহ্য')।"[১৭][Note ৪]

বিভিন্ন সূত্রে রিবা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকারের ও বিভিন্ন সংখ্যক হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে। ফরহাদ নোমানির মতানুযায়ী, রিবা সম্পর্কে প্রধানত তিন প্রকারের মৌলিক হাদিস রয়েছে।[১৯][Note ৫][২১]

  1. হাদিসের সংকলন হতে প্রাপ্ত সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সনদ অনুযায়ী, রিবা তখনই সংঘটিত হয় যখন একই প্রকারের ছয়টি নির্দিষ্ট পণ্য অসমভাবে বিনিময় করা হয় অথবা তাৎক্ষনিকভাবে সরবরাহ করা না হয়।[১৯] (দেখুন রিবা আল-ফজল)
  2. ইবনে আব্বাস হতে উদ্ধৃত ও বর্ণিত আরও এক গুচ্ছ হাদিসে বলা হয়েছে, যে সকল মজুরি বা পণ্য সরবরাহতে বিলম্ব হয় তার সবই রিবা।[১৯]
  3. তৃতীয় আরেক গুচ্ছ হাদিসে উদ্ধৃত হয়েছে যে, মুহাম্মাদ তার বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেছেন:[১৯]
"আল্লাহ তোমাদেরকে সুদ (রিবা) নিতে নিষেধ করেছেন, তাই রিবা সম্পর্কিত সকল বাধ্যবাধকতা বাতিল করা হল। এখন থেকে তোমাদের মূলধন তোমরাই রাখবে। তোমরা জুলুম করবে না, জুলুম ভোগও করবে না। আল্লাহ জারি করেছেন যে, আর কোনো সুদ থাকবে না এবং এ কারণে আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের সকল সুদ রহিত করা হল।"[Note ৬]

অনুরূপভাবে, এম. এ. খান বলেন যে, রিবা সম্পর্কিত তিন গুচ্ছ হাদিস রয়েছে, যার মধ্যে রিবা আল-ফজল ও বিদায় হজ্ব অনুষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত। [Note ৭] আরেকটি উৎসে, আব্দুল কাদের থমাস বলেন যে, ছয়টি বিশুদ্ধ হাদিস রয়েছে যার মাধ্যমে আমরা রিবাকে সংজ্ঞায়িত করতে পারব।[২৩][২৪] 'রিবা ইন হাদিস' নামক গ্রন্থে, গ্লোবাল ইসলামিক ফিন্যান্সের শারিক নিসার সাতটি সাধারণ হাদিস ও রিবা আল-নাসিয়াহ -এর উপর আরও ছয়টি হাদিসের তালিকা উদ্ধৃত করেন।[২৫]

জাবির,[২৬] আব্দুর রহমান ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মাস'উদ[২৭] সহ বহু বর্ণনাকারী বলেছেন —

মুহাম্মাদ সুদ গ্রহীতা, সুদ দাতা, এর হিসাবরক্ষক এবং এর সাক্ষী ― সকলের উপরই অভিসম্পাত করেছেন এই বলে যে, তারা সকলেই সমান।[২৬][২৮]

ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘সুদের অর্থ দিয়ে যা-ই বৃদ্ধি করুক না কেন অল্পই কিন্তু তার শেষ পরিণাম।’

— ইবনে মাজাহ : ২২৭৯। আলবানি সহি জামে সগিরে ৫/১২০ বলেছেন, এটি সহিহ হাদিস।

ফারুক এক জোড়া হাদিস হতে উদ্ধৃতি দিয়ে উদাহরণ দেন যে, কোনো নির্দিষ্ট স্থানে হাতে হাতে বিনিময় করা হলে,[২৯] অথবা অপেক্ষা (নাসি'আহ) না করা হলে[৩০][৩১] তা রিবা হবে না — যা "রিবা আল-ফজলও সুদ বা রিবা" — এই সম্পর্কিত প্রথাগত অবস্থানের সাথে সাংঘর্ষিক। উদাহরণঃ “হাতে হাতে” অসম পরিমাণে একই পণ্য বিনিময়।[Note ৮] (ফারুক টীকায় উদ্ধৃত করেন যে, একটি হাদিস যেখানে দুজন সাহাবা তর্ক করছেন, উবাদা বিন আল-সামিত বলছেন, মুহাম্মাদ রিবা আল-ফজল নিষিদ্ধ করেছেন... যেখানে আরেক সাহাবী প্রথম মুয়াবিয়া তার সঙ্গে মতবিরোধ করছেন এই বলে যে, তিনি কখনো মুহাম্মাদ -কে এমন ব্যবসা নিষেধ করতে শোনেন নি, “এমনকি যদিও, আমরা তাঁকে (মুহাম্মাদ -কে) দেখেছি ও তাঁর সঙ্গে থেকেছি, তবুও?”)[৩৬]


তাকি উসমানী দাবি করেন যে, রিবা সম্পর্কিত আয়াত ও হাদিসগুলো অস্পষ্ট হতে পারে না কারণ আল্লাহ এমন কোনো চর্চার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন না, যার প্রকৃত স্বরূপ মুসলমানদের জানা থাকবে না। তার মতে, একমাত্র সেই আয়াতগুলোই অস্পষ্ট হতে পারে, যেগুলোর জন্য কোনো ব্যবহারিক সমস্যা সেগুলোর জ্ঞানের উপর নির্ভর করে না।[৩৭]

মূলধারার মুসলিমগণ সুদ খাওয়ার পাপের ভয়াবহতা তুলে ধরার জন্য বেশ কিছু হাদিসকে নির্দেশ করেন। আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত হয়েছে যে —

রাসূল মুহাম্মাদ বলেন, “ছয়টি ধ্বংসাত্মক পাপ (কবিরা গুনাহ) থেকে বেঁচে থাকো।” সাহাবারা জিজ্ঞেস করলো, “হে আল্লাহর রাসুল ! কী সেগুলো?” তিনি বললেন, “আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ইবাদতে শরিক করা, জাদুবিদ্যার চর্চা করা, (ইসলামী আইন অনুযায়ী) সৎ কারণ ব্যতিরেকে কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, এতিমের সম্পদ খাওয়া, যুদ্ধের ময়দানে লড়াইয়ের সময় শত্রুর কাছ থেকে পিঠ দেখিয়ে পলায়ন করা, সতী-সাধ্বী নারী ― যারা কখনো অশ্লীল কোনো কিছু চিন্তাও করে না এবং উত্তম মুমিনদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনয়ন করা।" [Note ৯]

সুনান ইবনে মাজাহ অনুযায়ী, ইসলামের রাসূল মুহাম্মাদ রিবাকে নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচার করার চেয়েও নিকৃষ্ট বলে ঘোষণা করেন। উক্ত হাদিসে তিনি বলেন, রিবার ৭০ টি পাপ। তন্মধ্যে ন্যূনতম পাপ হল নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচার করা আর নিকৃষ্টতম রিবা হল কোন মুসলিমের সম্মান নষ্ট করা।[৩৮] আরেক হাদিসে মুহাম্মদ জেনেশুনে এক দিরহাম সুদ খাওয়াকে ৩৬ বার ব্যভিচার করার সমতুল্য বলেন।

রিবার শর্ত[সম্পাদনা]

১) লেনদেন ঋণ সংক্রান্ত বিষয় হওয়া। ২) মূলধনের পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকা। ৩) ঋণ পরিশোধের সময়সীমা নির্দিষ্ট থাকা। ৪) ঋণ দানের শর্ত হিসেবে মূলধনের অতিরিক্ত কোনো কিছু আদায় করা। ৫) অতিরিক্ত যা কিছু আদায় করা হয় তার শরীয়াহ সম্মত কোনো বিনিময় না থাকা। ৬) অতিরিক্ত অংশের পরিমাণ পূর্ব নির্ধারিত হারে আদায় করা। ৭) সময়ের অনুপাতে মূলধনের অতিরিক্ত অংশের পরিমাণ নির্ধারিত হওয়া। ৮) উপরের শর্তগুলোকে লেনদেনের শর্ত হিসেবে গণ্য করা।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. (তফসীরে ইবনে জরীর, ৩য় খন্ড,৬২ পৃষ্ঠা)
  2. "CHAPTER A1, INTRODUCTION TO ISLAMIC MUAMALAT" (পিডিএফ)Takaful Basic Examination, IBFIM। পৃষ্ঠা 9–10। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৭ 
  3. Aznan Hasan, Fundamentals of Shariah in Islamic Finance, pp. 33 – 34 as cited in "CHAPTER A1, INTRODUCTION TO ISLAMIC MUAMALAT" (পিডিএফ)Takaful Basic Examination, IBFIM। পৃষ্ঠা 9–10। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৭ 
  4. Khan, What Is Wrong with Islamic Economics?, 2013: p.132-3
  5. Siddiqi, Riba, Bank Interest, 2004: p.35
  6. শওকত জাওহার ও সাদিক মোহাম্মদ আলম, আল কুরআনের আলোকে রিবা, দি ইন্সটিটিউট ফর কুরআনিক রিসার্চ এন্ড এ্যাপ্লিকেশন, ২০২২
  7. Arberry, A. J. (translator)। "30:38"। The Koran Interpreted A Translation by A. J. Arberryarchive.org। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৬ 
  8. Arberry, A. J. (translator)। "4:159"। The Koran Interpreted A Translation by A. J. Arberryarchive.org। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৬ 
  9. Arberry, A. J. (translator)। "3:125"। The Koran Interpreted A Translation by A. J. Arberryarchive.org। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৬ 
  10. Arberry, A. J. (translator)। "2:275-280"। The Koran Interpreted A Translation by A. J. Arberryarchive.org। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৬ 
  11. Thomas, Abdulkader (ed.) (2006). Interest in Islamic Economics. London: Routledge, p.127.
  12. Farooq, Riba, Interest and Six Hadiths, 2009: p.105
  13. see also: "What is ربا (Riba) according to the Quran?"Islam Stack Exchange। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৬There is no clear-cut definition of what riba is in the Qur'an. The understanding based on the reading of verses is that, it is some form of an increase in a loan, that might end up doubling or quadrupling the debt, and that it is not to be confused with trade/sale. The ahadith are where you will find a more detailed explanation of the term. 
  14. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; MTUHJI1999:54 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  15. Usmani, Historic Judgment on Interest, 1999: para 101
  16. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; MTUHJI1999:99 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  17. Nomani, Farhad। "The Interpretative Debate of the Classical Islamic Jurists on Riba (Usury)"Loyola University Chicago। পৃষ্ঠা 2.2। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  18. Farooq, Riba, Interest and Six Hadiths, 2009: p.105-6
  19. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; FNIDCIJR2002:2.1 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  20. el-Bokhari, Les traditions islamiques, trans. O. Houdas and W. Marcais, vol.2 (Paris, 1977), 13-4, 56-59, 113-21, Qadri, Islamic, 332. For Shi`i compilation of the hadith see Muhammad Ibn al-Hasan al-Tusi, Tahdhib, trans. M.B. Behbudi, vol. 3 (Tehran, 1991), 279-81, 378-9.
  21. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; bukhari-282 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  22. Khan, What Is Wrong with Islamic Economics?, 2013: p.136-7
  23. Thomas, Abdulkader (ed.) (2006). Interest in Islamic Economics. London: Routledge.
  24. Farooq, Riba, Interest and Six Hadiths, 2009: p.107
  25. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; nisar নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  26. Sahih Muslim, Book 010, Number 3881
  27. (Sunan Abi Dawoud: 3543, hadith Hasan1)
  28. "The Book of Prescribed Punishments, no.4176"Sahihmuslim.com। ২০ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৬ 
  29. Sahih Muslim, Vol. III, #3878, Kitab al-Musaqat, Bab bay' al-ta'am mithlan bi-mithl).
  30. (Sahih Bukhari, Kitab al-Buyu', Bab Bay' al-dinar bi’l-dinar nasa’an, Vol. 3, #386
  31. Bukhari, Muhammad। "Sahih al-Bukhari. Volume 3, Book 034 "Sales and Trade" Number 386"। Usc.edu। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৮ 
  32. Bukhari, Muhammad। "Sahih al-Bukhari. Volume 3, Book 034 "Sales and Trade" Number 294"। Usc.edu। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৮ 
  33. See also Sahih al-Bukhari, number 405)
  34. See alsoBukhari, Muhammad। "Sahih al-Bukhari. Volume 3, Book 034 "Sales and Trade" Number 405"। Usc.edu। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৮ 
  35. See also Sahih Muslim, Vol. III, No. 3854
  36. Sahih Muslim, Vol. III, No. 3852
  37. Usmani, Historic Judgment on Interest, 1999: para 57
  38. Abod (Sheikh), Ghazali Sheikh; Omar (Syed.) (১৯৯২)। An Introduction to Islamic finance। Quill Publishers,। পৃষ্ঠা 381। আইএসবিএন 9789839640090। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০১৫ 

টীকা[সম্পাদনা]

  1. يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (কুরআন ৩:১২৯-১৩০)
  2. ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا ۗ وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا (from কুরআন ২:২৭৬)
  3. “The Qur’an does not explicitly define riba as one type of transaction or another. … The efforts of the fuqaha’ or judicial scholars like Sh. Zuhayli and the examples of the hadith allow us to determine a clear idea of what is riba”.[১১]
  4. Others agree. Non-orthodox scholar Mohammad Omar Farooq says, "it is broadly agreed that the Qur’an does not define riba", and quotes orthodox scholar Abdulkader Thomas, “the Qur’an does not explicitly define riba as one type of transaction or another. The efforts of the fuqaha’ or judicial scholars like Sheikh Zuhayli and the examples of the hadith allow us to determine a clear idea of what is riba”.[১১][১৮]
  5. According to Farhad Nomani, "There are also other reports recorded in the hadith texts on other commodities such as meats, fruits, and slaves that indirectly refer to illicit "increases"[২০] যাইহোক, সাধারণভাবে, নবীর বাণীর উপরিউক্ত তিন প্রকারের রিপোর্ট ব্যতীত, অন্যান্য রিপোর্ট সর্বসম্মত নয় এবং আইনবিদদের দ্বারা সমানভাবে নির্ভর করে না।"[১৯]
  6. Last Sermon of Muhammad given on 10 Dul-hajj 10 hijra, mentioned in all book of Hadith. Sahih Bukhari mentions parts of it. Musnad Imam Ahmed recorded the longest and complete speech.
    أَلَا إِنَّ كُلَّ رِبًا كَانَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ، مَوْضُوعٌ عَنْكُمْ كُلُّهُ، لَكُمْ رُؤُوسُ أَمْوَالِكُم لَا تَظْلِمُونَ وَلَاتُظْلَمُونَ، وَأَوَّلُ رِبًا مَوْضُوعٍ، رِبَا الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِالْمُطَّلِبِ مَوْضُوعٌ كُلُّه
    1. Those that deal with riba that arises in the exchange of commodities (riba al-fadl).
    2. those that define riba as something that accrues in loan or deferred payment transactions (riba al-nasi'ah);
    3. those including Muhammad's sermon during his Last Pilgrimage that condemn the giving and taking of riba;[২২]
  7. such as: "Narrated Abu Said: We used to be given mixed dates (from the booty) and used to sell (barter) two Sas (of those dates) for one Sa (of good dates). The Prophet said (to us), "No (bartering of) two Sas [about six liters] for one Sa nor two Dirhams for one Dirham is permissible", (as that is a kind of usury)".[৩২][৩৩][৩৪][৩৫]
  8. সহীহ মুসলিম: ২৭২, আরবিতে:
    أخرج البخاري ومسلم وأبو داود والنسائي عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال اجتنبوا السبع الموبقات , قيل يا رسول الله وما هن ؟ قال الشرك بالله , والسحر , وقتل النفس التي حرم الله إلا بالحق , وأكل مال اليتيم , وأكل الربا , والتولي يوم الزحف , وقذف المحصنات الغافلات المؤمنات