ফারুক
ফারুক | |
---|---|
ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ৩ জানুয়ারি ২০১৯ – ১৫ মে ২০২৩ | |
পূর্বসূরী | এস এম আবুল কালাম আজাদ |
উত্তরসূরী | মোহাম্মদ এ আরাফাত |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | আকবর হোসেন পাঠান দুলু ১৮ আগস্ট ১৯৪৮[১] কালীগঞ্জ উপজেলা, গাজীপুর |
মৃত্যু | ১৫ মে ২০২৩ সিঙ্গাপুর | (বয়স ৭৪)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
দাম্পত্য সঙ্গী | ফারজানা পাঠান |
পেশা | অভিনেতা, প্রযোজক, ব্যবসায়ী |
পুরস্কার | জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (২ বার) |
আকবর হোসেন পাঠান দুলু (১৮ আগস্ট ১৯৪৮ – ১৫ মে ২০২৩)[২] যিনি ফারুক নামে অধিক পরিচিত ছিলেন একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ।[৩] ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত জলছবি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। তিনি লাঠিয়াল (১৯৭৫) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তিনি আলোর মিছিল, সুজন সখী, নয়নমনি, সারেং বৌ, গোলাপী এখন ট্রেনে, দিন যায় কথা থাকে, নাগরদোলা, সাহেব, মিয়া ভাই-সহ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
তিনি ২০০৬ সালে বাচসাস পুরস্কারে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার এবং ২০১৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার অর্জন করেন।
তরুণ বয়স থেকেই তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]ফারুক ১৮ আগস্ট ১৯৪৮ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা, গাজীপুর জন্মগ্রহণ করেন।[৪][৫] তার বাবা আজগার হোসেন পাঠান। তার শৈশব-কৈশোর ও যৌবনকাল কেটেছে পুরান ঢাকায়। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট।[৬]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]অভিনয় ও প্রযোজনা
[সম্পাদনা]ফারুক ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত জলছবি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে আগমন করেন। তার বিপরীতে নায়িকা হিসেবে কবরী অভিনয় করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত আবার তোরা মানুষ হ ও ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত আলোর মিছিল দুটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৭৫ সালে গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মিত সুজন সখী ও লাঠিয়াল চলচ্চিত্র দুটি ব্যবসাসফল ও আলোচিত হয়। লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।[৭] পরের বছর তিনি ১৯৭৬ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত তিনটি ছায়াছবি সূর্যগ্রহণ, মাটির মায়া ও নয়নমনি। চলচ্চিত্র তিনটি বিভিন্ন বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। ১৯৭৮ সালে শহীদুল্লাহ কায়সার রচিত কালজয়ী উপন্যাস সারেং বৌ অবলম্বনে নির্মিত সারেং বৌ ও আমজাদ হোসেন পরিচালিত গোলাপী এখন ট্রেনে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্র দুটি নারীকেন্দ্রিক হলেও তার অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। ১৯৭৯ সালে তার অভিনীত দিন যায় কথা থাকে, নাগরদোলা, কথা দিলাম, মাটির পুতুল, সাহেব, ছোট মা, এতিম, ঘরজামাই চলচ্চিত্রগুলো ব্যবসাসফল হয়। ১৯৮০ সালে সখী তুমি কার ছায়াছবিতে শাবানার বিপরীতে শহুরে ধনী যুবকের চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করেন। ১৯৯০ সালে মিয়া ভাই চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে "মিয়া ভাই" হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।[৮]
ব্যবসায়িক জীবন
[সম্পাদনা]চলচ্চিত্রের বাইরে ফারুক ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনি গাজীপুরে অবস্থিত নিজের শিল্প প্রতিষ্ঠান ফারুক নিটিং ডাইং এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।[৯]
রাজনীতি
[সম্পাদনা]ফারুক স্কুল জীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি ছয় দফা আন্দোলনে যোগ দেন এবং এ সময়ে তার নামে প্রায় ৩৭টি মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।[১০] ফারুক ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন[১১] এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[১২]
ব্যক্তিগত জীবন
[সম্পাদনা]ফারুক ফারজানা পাঠানকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। তাদের দুটি সন্তান হয়। কন্যা ফারিহা তাবাসসুম পাঠান ও পুত্র রওশন হোসেন। উত্তরায় নিজ বাসভবনে ফারুক বাস করে আসছিলেন।
অসুস্থতা
[সম্পাদনা]২০১২ সালের জুলাইয়ে নায়ক ফারুক এক মাস ধরে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ফারুক দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত রোগে ভুগছিলেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০১৩ সালের ৩০শে আগস্ট সিঙ্গাপুরে যান ও সেখানকার মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে ভর্তি হন।[১৩] চিকিৎসা শেষে ২০১৪ সালের ৭ই জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরে আসেন।[১৪] ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট আবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভীষণ জ্বর নিয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন।[১৫]
২০২১ সালের ১৫ই মার্চ খিচুনি হওয়ার পরে তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়।[১৬] ১৮ মার্চ অবস্থার উন্নতি হলেও ২১ মার্চ আবার অচেতন হলে আইসিইউতে নেয়া হয়।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]তিনি দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২৩ সালের ১৫ মে সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় মৃত্যুবরণ করেন।[১৭][১৮] মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
চলচ্চিত্রের তালিকা
[সম্পাদনা]পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]বছর | পুরস্কার | বিভাগ | মনোনীত চলচ্চিত্র | ফলাফল |
---|---|---|---|---|
১৯৭৫ | জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার | শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা | লাঠিয়াল | বিজয়ী |
২০০৬ | বাচসাস পুরস্কার | আজীবন সম্মাননা | "চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব" | বিজয়ী |
২০১৬ | জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার | আজীবন সম্মাননা | "সামগ্রিক অবদান" | বিজয়ী |
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "আয়কর বিবরণী" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০২০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "প্রখ্যাত অভিনেতা ফারুকের জন্মদিন আজ"। দৈনিক কালের কণ্ঠ। ১৮ আগস্ট ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "চিত্রনায়ক ফারুক চলচ্চিত্রের সাহেব"। দৈনিক আমাদের সময়। ২৬ অক্টোবর ২০১৪। ১ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "গ্রামীণ ছবির প্রবাদপুরুষ ফারুক"। দৈনিক আমার দেশ। ১৬ জানুয়ারি ২০১১। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "প্রখ্যাত অভিনেতা ফারুকের জন্মদিন আজ"। কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০২০।
- ↑ "শুভ জন্মদিন চলচ্চিত্র অভিনেতা ফারুক"। জাগো নিউজ। ১৮ আগস্ট ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "সুস্থ হয়ে উঠুন ফারুক ভাই"। দৈনিক প্রথম আলো। ৭ জুলাই ২০১২। ১৩ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১৫।
- ↑ শান্তা মারিয়া (১৮ আগস্ট ২০১৬)। "বাংলার দামাল ছেলে ফারুক"। বিডিনিউজ। ২১ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "ব্যস্ততা আর অবসর সমানে সমান"। দৈনিক কালের কন্ঠ। ১৭ এপ্রিল ২০১০। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "সেই স্বপ্নের কাছাকাছি আমরা যেতে পারিনি: ফারুক"। দৈনিক প্রথম আলো। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "ভোটার কালীগঞ্জের, লড়বেন গুলশানে"। দৈনিক প্রথম আলো। ২৫ নভেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "সিনেমা নয়, মানুষের কাছে থাকতে চান ফারুক"। দৈনিক প্রথম আলো। ১৪ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "উন্নত চিকিত্সার জন্য সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন ফারুক"। দৈনিক ইত্তেফাক। ৩০ আগস্ট ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "সেরে উঠছেন ফারুক"। দৈনিক প্রথম আলো। ১০ মে ২০১২। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১৫।
- ↑ "হাসপাতালে ফারুক"। মানবজমিন। ১৮ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২০।
- ↑ "ফারুকের শারীরিক অবস্থার উন্নতি"। ইত্তেফাক। ২০২১-০৪-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-২৯।
- ↑ প্রতিবেদক, বিনোদন। "চিত্রনায়ক ফারুক মারা গেছেন"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-১৫।
- ↑ "চিত্রনায়ক ফারুক আর নেই"। দৈনিক জনকণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-১৫।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে ফারুক (ইংরেজি)
- বাংলা মুভি ডেটাবেজে ফারুক
- ১৯৪৮-এ জন্ম
- ২০২৩-এ মৃত্যু
- ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী অভিনেতা
- ২১শ শতাব্দীর বাংলাদেশী অভিনেতা
- ঢাকার অভিনেতা
- বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা
- বাঙালি মুসলিম
- বাঙালি অভিনেতা
- বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেতা
- বাংলাদেশী মুসলিম
- বাংলাদেশী ব্যবসায়ী
- একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য
- বাংলাদেশী অভিনয়শিল্পী-রাজনীতিবিদ
- শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (বাংলাদেশ) বিজয়ী
- বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আজীবন সম্মাননা বিজয়ী
- বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তি
- গাজীপুর জেলার ব্যক্তি
- বাংলাদেশী টেলিভিশন অভিনেতা